বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৭

0
1750

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৭

হাতের তালুতে একের পর এক আঘাত করায় হাতটা লাল বর্ণ ধারণ করে ফেলেছে আরশির। শীতের রাত্রি, এই ঠান্ডায় প্রতিটা আঘাত যেনো আঘাত স্কয়ারে পরিনত হয়ে আছড়ে পরছে হাতের তালুতে। ঘুমের মাঝে তুলে আচমকাই এমন হওয়ায় একেবারে জ্ঞান শুন্য হয়ে পরে আরশি। লোকটার মুখে মাস্ক। আবছা আলোয় ঠিক মতো দেখাও যাচ্ছেনা মুখটাকে।
লোকটা কে তা আরশির অজানা। কে এমন করে তার সাথে? লোকটার পরিচয় জানতে পারলোনা আরশি। হুট করেই একটা চিরেকুট রেখে চলে যায় লোকটা।
ব্যাথায় চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে আরশির। লাইট অন করে চিরেকুট টা হাতে নিলো আরশি,,,
“” লজ্জা করেনা ছেলেদের হাতে হাত রেখে কথা বলতে? তাদের চোখে চোখ রেখে হাসতে? ওই হাত ধরার অধিকার শুধু আমার, ওই চোখে চোখ রেখে হাসার অধিকারটাও শুধু আমার। নেক্সট টাইম এমন ভুল হলে পরিনাম টা এর চাইতেও ভয়ঙ্কর হবে।

ভয়ে আরশির শরির থর থর করে কাপছে। বাম হাতের তালু টা রক্ত জমাট বাধা লাল হয়ে আছে। কান্নাও করতে পারছেনা নিচের ঠোটটা প্রচন্ড গতিতে কাপছে তার। কারণ সে লাইফে কখনো এমন আঘাত প্রাপ্ত হয়নি। আর এমন কোনো ভয়ঙ্কর সিচুয়েশনেও পরেনি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হাতের তালুটা লাল হয়ে ফুলে আছে। ব্যাথাও করছে খুব। হাতটা সবার চোখ থেকে আড়াল করে রাখছে আরশি। আরশি চায় না এই ব্যাপারে কেউ জানুক। জানলে হয়তো অনেক জবাবদিহি করতে হবে তাকে। বিষেশ করে রিদের কাছে।
সকালের খাবার শেষে রিদ আরশিকে বললো,
– আজ আমার সাথেই যাবি কলেজে। যা চটফট রেডি হয়ে নে।
পাশ থেকে রিদের মা হাটতে হাটতে তার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠে,
– দু,দিন হলো মেয়েটা এখানে এসেছে। থাকুক না মজা করবে সব করবে। এই দু,এক দিন না হয় কলেজে না গেলো সে।
– আম্মু, কয়েকমাস পর ওর ফাইনাল এক্সাম। এখন কোনো ফাকি দেওয়া চলবে না।
আরশি করুন শুরে বলে উঠে,
– আজ না গেলে হয় না?
– আমি তোকে জিগ্গেস করেছি? চুপ চাপ রেডি হয়ে নে।
আরশি জোড় গলায় বলে উঠে,
– ভাইয়া ই তো আমাকে পতিদিন দিয়ে আসে। আমি ভাইয়ার সাথে যাবো।
রাত বলে উঠে,
– রিদ নিতে চাইছে সমস্যা কি? আমি নিয়ে যাওয়া আর রিদ নিয়ে যাওয়াতো একই কথা?
– না এক না।
– যাই হোক আমি আজ তের সাথে যেতে পারবো না, রিদের সাথেই যা তুই।
ঠোট ফুলিয়ে মনে মনে রিদকে একশ টা গালি দিতে দিতে রুমের দিকে হাটা ধরলো আরশি। রিদও গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। দুজন ই দুজনের রুম থেকে এক সাথে বের হলো। আরশিকে দেখেই রিতিমতো অবাক হলো রিদ। কারণ রিদের গায়ে একটা কালো শার্ট ও পড়া কালো পেন্ট, আর আরশির গায়েও একটা কালো জামা।
– আমার সাথে ম্যাচিং করে পড়ার কারণ? যাতে লোকজন ভাবে আমরা,,,,,,,,?
আরশি রাগি ভাব নিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।
– আবার কোথায় যাচ্ছিস?
– জামা চেন্জ করতে।
– বাপরে ত্যাড়ামি তো দেখি এখনো কমেনি। কানের নিচে দু,টু দিলে ঠিকই কথা শুনবি। চল……….

আরশি বাইরে গিয়ে দেখে একটি নতুন বাইক।
রিদ উঠে স্টার্ট দিয়ে বলে, উঠ,,,,,
– বাইক কেনো গাড়ি দিয়ে যাবো আমি।
– কথা বারাস না আরশি, এমনিই মাথা গরম করে ফেলছিস তুই। উঠতে বলছি উঠ,,,
– এই বাইক কার? আমি তো প্রথম দিন কোনো বাইক দেখিনি এই বাড়িতে।
– এটা চুরি করে এনেছি তোর কোনো প্রব্লেম?
– চুরি করা বাইকে আমি চড়তে যাবো কেনো?
– ওরে মাবুদ রে, দড়ি ফালাও আমি উঠে যাই, বইন এটা কাল কিনছি আজ সকালে দিয়ে গেছে। এবার চল।

আরশি রিদের পিছনে বসলো। রিদ বাইক নিয়ে নেমে গেলো রাস্তায়। আরশি রিদের থেকে হালকা দুরুত্ব বজায় রেখে বসে আছে। ইদানিং কেমন জানি রিদকে ভয় লাগে তার।
– আস্তে চালাও আমার ভয় করছে।
– এভাবে করোনা সতর্কতার মতো তিন চার ফিট দুরুত্ব বজায় রেখে বসলে তো ভয় লাববেই। ধরে বস।
– কি ধরবো?
– আমার মাথা।
– তোমার মাথায় তো হেলমেট। তাহলে কিভাবে ধরবো?
রিদ এবার বাইক থামিয়ে বলে উঠে,
– নাম।
– আরশি।
– তোকে নামতে বলছি নাম জিগ্গেস করিনি।
– এই মাঝ রাস্তায় কেনো নামবো?
– তুই যেভাবে বসলি, তাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নব্বই (%) এর ও অধিক। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।
– তুমিই তো কাল সকালে বলেছো যাতে তোমার গায়ে হাত না দিই। আর এই মাঝ রাস্তা থেকে কিভাবে যাবো? আচ্ছা তুমি অনুমতি দিলে আমি ধরে বসছি, শক্ত করে ধরে বসবো।
– গুড বয় থুক্কু গার্ল।
রিদ আবারও চালাতে শুরু করলো। আরশি পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখলো রিদের। রিদ আবারও থামলো।
– আবার কি হলো?
– তোর কি লজ্জা শরম সব গেছে? এই খোলা রাস্তায় কেও এভাবে ধরে। তোকে আমি শুধু ধরে বসার অনুমতি দিয়েছি, জড়িয়ে ধরতে বলিনি।
আরশি মুখটা গোমড়া করে বলে উঠে,
– আমার ভয় করছিলো তাই। আচ্ছা রিদ ভাই আমি নেমে যাচ্ছি, তুমি চলে যাও। গাড়ি পেলে উঠে চলে যেতে পারবো আমি।
আরশির অভিমানি চোখ দেখে রিদ শান্ত গলায় বলে উঠে,
– উঠ, কাধে হাত রেখে ধরে বস। আস্তে আস্তে চালাবো আমি।

কলেজে পৌছে ব্রেক করতেই আরশির বাম হাত গিয়ে পরে রিদের ঘারে। হুট করে ব্যাথা লাগায় “আউ” করে উঠে আরশি।
আরশি নেমে কলেজের গেটের দিকে হাটা ধরতেই রিদ আবার ডেকে উঠে,
– আরশি।
– হুম,
– এদিকে আয়।
আরশি আবার হেটে রিদের কাছে গেলো। রিদ আরশির বাম হাতটা টেনে বলে উঠে,
– হাতে কি হয়েছে?
– আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে, একটু চোট লেগেছিলো হাতে।
রিদ হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– তখন ব্যাথা পেয়েছিলি খুব তাই না?
– হুম।
– কেনো এমন করিস তুই? আচ্ছা যা ভেতরে যা। দেড়ি হয়ে গেছে এমনিতেই।
আরশি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। রিদ ততোক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো যতক্ষন আরশিকে দেখতে পাচ্ছিলো সে।

ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। এখন ম্যাথ ক্লাস। মকবুল স্যারের। স্যারের রাগে থর থর করে কাপতে থাকে ক্লাসের মেয়েগুলো। ছেলেরাও অনেকে ভয় পায় স্যারকে। বাইরে দাড়িয়ে দোয়া দুরুত পরে বলেই দিলো,
– ম্যা আই কামিং স্যার?
ভেতর থেকে একটা ছেলে কন্ঠ বলে উঠলো।
– ইয়েস কামিং।
ভেতরে গিয়েই অবাক হয় আরশি। একটা ছেলে বয়সি লোক ক্লাস করাচ্ছে। আদ্রিতার পাশে গিয়ে বসে আরশি। তাকে জিগ্গেস করতেই জানতে পারে। মুকবুল স্যারের স্ত্রী নাকি প্র্যাগনেট ছিলো এই কয়দিন ধরে জটিল অবস্থা, তাই তিনি কয়েক দিনের ছুটিতে গেছেন। তাই মুকবুল স্যারের ক্লসটা এই ছেলেটাই করাবে।
আরশির কাছে গিয়ে কিছু জিগ্গাসাবাদ করলো ছেলেটা। মাথা নিচু করে উত্তর দিলো আরশি।
– নেক্সট টাইম ঠিক সময় আমার ক্লাসে আসবেন।
– ওকে স্যার।
ক্লাস চলা কালিন বাকি সময়টা আরশি খেয়াল করলো ক্লাস করানোর ফাকে মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছিলো ছেলেটা। এতে একটু অস্থি লাগছিলো আরশির। তাই ক্লাসে আর তেমন মনোযোগি হতে পারেনি সে। তার চোখ শুধু টেবিলের খাতার দিকেই স্থির ছিলো।

ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো আরশি। রিদ অথবা ভাইয়া আসলেই চলে যাবে সে। আরশির পাশে এসে দাড়ালো তখন ক্লাস করানো ছেলেটা।
– হাই, আরশি, দাড়িয়ে আছো যে, যাবেনা? ওহ্ সরি তুমি করে বলে ফেললাম।
– ইটস ওকে স্যার।
– তুমি বয়সে আমার কয়েক বছরের ছোটই হবে। তাই তুমি করেই সম্মোধন করলাম। প্রব্লেম নেই তো?
– নো প্রব্লেম স্যার।
– চলো যাই,,,,,
– আসলে স্যার ভাইয়া আসবে আমায় নিয়ে যেতে।
– ওহ্ আচ্ছা।
তখনই রিদ এসে দাড়ালো তার সামনে।
– এটাই তোমার ভাই? আচ্ছা যাও তাহলে। গুড বাই।
এটা বলেই আরশির দিকে হাত বাড়ালো ছেলেটা। আরশিও যেনো এই সুজুগটা হাত ছারা করতে চায় না। রিদকে জেলাস করার ছোট খাটো সুজুগ গুলোর মাঝে এটাও একটা। আরশিও হাত মিলিয়ে বলে উঠে,
– সাবধানে যাবেন স্যার।
রিদ কিছু না বলে ছোট্ট করে বলে উঠে,
– উঠ।
আরশি উঠে বসলো। আর রিদ টান দিয়ে চলে গেলো। সারা পথ আরশির সাথে কোনো কথা বললোনা রিদ। চুপচাপ বাইক নিয়ে বাড়ি পৌছে গেলো সে।
,
,
বৃষ্টি ও আরশি বসে আছে এক সাথে। বৃষ্টির ফোলা পেট দিখে আরশি কৌতুহলি ভাবে বলে উঠে,
– আচ্ছা ভাবি, এই সময়টায় অনুভুতিটা কেমন হয়?
– অন্য রকম একটা অনুভুতি। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
– শুনলাম নাকি অনেক কষ্ট হয়?
– যখন সন্তান কোলে আসবে, তার কান্নার শব্দ কানে আসবে তখন সব কষ্ট তখন সার্থক হয়ে যাবে। তখন মনে হবে এসব কষ্ট কিছুই না।
– আমার ও না ছোট ছোট বাবু বেবি এদেরকে খুব ভালো লাগে। কারো কাছে দেখলে ইচ্ছে করে চুরি করে নিয়ে চলে আসি। খুব আদর করতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কখনো একটা বেবি পেলাম না। তোমার বেবির জন্য তো আর তরই সইছে না আমার।
– তাই না? আচ্ছা বাবাকে বলবো তোমাকে যেনো তারাতারি কারো গলায় ঝুলিয়ে দেয়। এমনিতেই তো প্রতিবার পাত্র পক্ষকে ভাগিয়ে দাও। কারন কিরে?
আরশি একটু অভিমানি ভাবে বলে উঠে,
– ঘরে পাত্র রেখে বাড়িরের কালেকশনের কি দরকার?
– মানে?
আরশি বৃষ্টিকে ইশারা করে কানে কানে বললো। বৃষ্টি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে বলে উঠে,
– সে কিরে আরশি। এক সময় তো তুমি তাকে সহ্যই করতে পারতে না। আর এখন তার প্রমে হাবুডুবু খাচ্ছো?
– তুমি প্রমিস করো, আমি না বলা অব্দি তুমি এই কথা কাওকে বলবে না?
– আচ্ছা বলবো না। আগে বলো, কবে থেকে তুমি তার ফাদে পরে গেলে?
– জানিনা।

ওইদিন রাতে অচেনা লোকটা আবার এসেছিলো আরশির ঘরে। এবার আর আঘাত করেনি। কপালে একটা চুমু খেয়ে একটা কাগজ রেখে চলে গেলো। কাগজে ছিলো একটা ছোট্ট ম্যাসেজ।
“” তোমার বেবি খুব ভালো লাগে তাই না? আমি সেটাই করবো যা তোমার ভালো লাগবে। অপেক্ষা করো, বিয়ের পর প্রতি বছর তোমার জন্মদিনে উপহার থাকবে একটা করে বেবি।”””
,
,
হাতে আপেল নিয়ে তা ছুরি দিয়ে কেটে কেটে বৃষ্টির মুখে তুলে দিচ্ছে রাত। এসব ফল টল খেতে একধম ভালো লাগেনা তার। একটা খাইয়ে এখন আরেকটা কাটছে রাত।
– আপনি কি আমার পেট টাকে ফলের গোডাউন বানিয়ে ছারবেন?
– কেনো?
– আমার এসব ফল টল খেতে ভালো লাগেনা। তার চেয়ে দুটু আপেলের চেয়ে দুই প্লেট ফুচকা এনে দিলেও, রাগ করবো না।
– আচ্ছা আনবো। ওসব ভাজা পোড়া পরে, এখন ফল খেতে হবে বেশি বেশি। দেখলেনা, ডাক্তার কি বললো? তোমার এখন প্রচুর ভিটামিন ও শক্তির দরকার। আর তার জন্য ফল খেতে হবে বেশি বেশি।
বৃষ্টি মুখ বাকিয়ে বলে উঠে,
– হুম, ওগুলো সব অটো পাস করা ডাক্তারদের কথাবার্তা। অটো পাশ করে ঔষধের নাম হয়তো ঠিক ঠাক মতো জানেনা তাই ফল ফল করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। সব অটো পাশ করা ডাক্তার।
– আচ্ছা তারা যখন পরিক্ষা দিচ্ছিলো তখন তুমি মনে হয় দেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলে তাই না?
বৃষ্টি রাগি লুক নিয়ে রাতের দিকে তাকালো।
– আপনি কি আমায় ইনডিরেক্টলি অপমান করছেন?

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 💖💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে