বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৬

0
1822

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৬

আরশির মাথায় চিন্তার ভাজ। কে হতে পারে এই লোক? রিদ ভাইয়া নয় তো? না না সে তো সন্ধা বেলায় এসে এখন রেস্ট নিচ্ছে। চারদিকে তাকিয়ে তেমন কোনো চিহ্ন পেলোনা আরশি। আরশি রাগে কাগজটা হাত দিয়ে মুচড়িয়ে বল বানিয়ে বাইরে ফেলে দিলো।
সবাই খাওয়ার টেবিলে আজ কতো বছর পর সবাই এক টেবিলে। নিচে না গিয়ে রুমে বসে আছে আরশি। বৃষ্টি ও তার মা ডাকতে আসলে প্রতিউত্তর খাবেনা সে, ক্ষিদে নেই। কয়েকবার বলেও কোনো লাভ হলোনা।

প্রায় ১২ টা অব্দি আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে সবাই। গভির ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই, রিদ বেড়িয়ে রান্না ঘরে গেলো ওখানে খাবার রাখা আছে কিনা দেখতে। কিন্তু রান্না ঘরে তেমন কিছু পেলোনা সে। ফ্রিজ খুলে দেখে খাবার ওখানেই তুলে রাখা হয়েছে। কিছু খাবার বের করে রান্না ঘরে গিয়ে ওগুলো গরম করে নেয় রিদ। প্লেটে খাবার নিয়ে হাটা ধরে সে। আরশি যে রুমে ঘুমাচ্ছে ওই রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে সে।
পাশে খাবারগুলো রেখে ডেকে তোলে আরশিকে।
– কি হলো এতো রাতে এভাবে ডাকছো কেনো? আমার ঘুমও বুঝি সহ্য হচ্ছেনা তোমার? (কথাটা একটু রেগেই বলে উঠে আরশি)
– না আপাততো সহ্য হচ্ছেনা। খাবার গুলো খেয়ে নে তার পর তার পর আবার ঘুমাস।
আরশি হাই তুলতে তুলতে বলে উঠে,
– খাবোনা আমি তুমি যাওতো রিদ ভাই। আমি ঘুমাবো।
– হুম যাবো তো তার আগে লক্ষি মেয়ের মতো খাবার গুলো শেষ করো। নাহলে তো পরে আবার বাড়ি গিয়ে খোটা দিবি। রিদ ভাইদের বাড়ি গেলাম, রাত্রে না খাইয়ে উপাস রেখেছে। আমি কারো খোটার পাত্র হতে চাই না তাই লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নে।
আরশি আবারও হাই তুলতে তুলতে বললো,
– খাইয়ে দাও।
আরশির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা হা কর।
রিদ একে একে প্লেটের সব খাবার তুলে দিলো আরশির মুখে। ঘুমু ঘুমু চোখে খেয়ে নিলো আরশি।
– তুই তো দেখছি সেই লেভেলের পেটুক রে আরশি। একটিবারও বললিনা যে আর খাবোনা। এতোই যদি ক্ষুদা থাকে তাহলে তখন এমন ঢং করার কি দরকার ছিলো?
বলেই মুচকি হাসলো রিদ।
– ওপ, যাওতো এখন আমি ঘুমাবো।

সকাল আট টা সবাই উঠে গেছে প্রায়। শীত কালে সকাল আট টায়ও মনে হয় এখনো ভোর কাটেনি। গোলাফি কালারের হাতলা লোম ওয়ালা একটা সুয়েটার পড়া আরশির গায়ে। পেছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে, একটা টেডি পুতুল।
রিদের ঘরে উকি দিয়ে দেখে বাহ্ কম্বল মুড়িয়ে সুয়ে আছে সে। কয়েকবার ডাক দিলো রিদকে, কিন্তু রিদের কোনো সাড়া না পেয়ে টেনে উঠানোর চেষ্ট করে আরশি। এবার একটু বেশিই রেগে যায় রিদ।
– সমস্যা কি তোর হ্যা? আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর? সকাল সকাল একটা অবিবাহিত ছেলের গায়ে এসে হমলা দিলি। বেশরম মেয়ে কোথাকার।
– এমন করছো কেনো রিদ ভাই। আমি আরশি তোমার পর কেও না।
– তো কোন দেশের প্রেসিডেন্ট আপনি? আমি তোর কে হই যে এভাবে টেনে তুলছিস আমায়। একজন মেয়ে হয়ে নুন্যতম লজ্জাটুকু তো থাকা দরকার তোর। যা বের হ রুম থেকে।
– তুমি আমার সাথে এমন করো কেনো রিদ ভাই। সেদিনের ভুলের জন্য শাস্থি দিচ্ছো আমায়? আমার উপর এখনো রাগ করে আছো তুমি?
– এই আম্মু,,,,,
রিদের ডাক শুনে রুমে আসলো তার মা।
– কিরে কি হয়েছে? এভাবে ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো সকাল সকাল?
– নিজের বাড়িতেও কি একটু শান্তিতে ঘুমানোর অধিকার টুকু নেই আমার? এই সকাল সকাল কেনো এসব উস্কো ঝামেলা এনে হাজির করলে আমার সামনে। যত্তসব ফাউল কার্যকলাপ।
রিদের মা একটু শান্ত ভাবে বলে উঠলো,
– আরশি তুই যা তো আমি দেখছি।
আরশি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রিদের দিকে।

সারাদিন আর রিদের সাথে কোনো কথা বলেনি আরশি।
আজ সন্ধায় রিদের বাবার বন্ধুরা আসবে এ বাড়িতে। এতো বছর পর দেশে আসলো তারা।
সন্ধার সময় মেহমানরা আসতে শুরু করলো একে একে। রিদ ও রাত মিলে সামলাচ্ছে সব। দু,একজন স্মার্ট ছেলেও আসছে দেখছি। আরশি আর বৃষ্টি তখন শিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো। রিদ হুট করে আরশির পাশ দিয়ে যেতেই কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে,
– পার্টির কোনো ছেলের দিকে নজর দিয়েছিস তো সারে ১৩টার চায়না নিউজে খবর আসবে আরশি নামক এক মহিলাকে হত্যার দায়ে রিদ নামক এক মোহা মানব গ্রেফতার।
বলেই সেখান থেকে সরে গেলো রিদ।
পার্টির চক্কারে রিদের কথা ডান কান দিয়ে ঢুকে বাম কান দিয়ে বেড়িয়ে গেলো আরশির।
একটা ছেকে এসে আরশির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই,,,
আরশিও হাত মিলিয়ে বলে উঠে,
– হ্যালো,,,,
– আমি মাহিম খান। খান ইন্ডাস্ট্রির মালিকের এক মাত্র ছেলে।
– ওয়াও।
আরশি পাশে ফিরতেই দেখে রিদ তার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে।
এবার যেনো একটা উত্তম সুজুগ খুজে পেলো আরশি। রিদের রাগি লুক কে পাত্তা না দিয়ে এবার অন্য একটা ছেলের সামনে গিয়ে নিজেই হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই আমি আরশি।
– আমি জিসান। নাইস টু মিট ইউ।
রিদ এবার নিচের ঠোট টা দাত দিয়ে চেপে ধরে চার পাশটায় তাকায়। না সবাই ব্যাস্ত দেখছি। দ্রুত পায়ে আরশির কাছে গিয়ে হাত ধরে হেচকা টানে সেখান থেকে সরিয়ে আনে তাকে। টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে সোজা উপরে নিয়ে যায় তাকে। রুমে নিয়ে গিয়ে ছেরে দেয় রিদ।
– ত্যারামি তো এখনো দেখি সই আগের মতোই আছে। কিন্তু বদলে গেছি আমি। আগের মতো তোর সব মেনে নিবোনা আমি। পার্টি শেষ হওয়া অব্দি চুপ চাপ রুমে বসে থাকবি। যদি তোকে আরেকবার নিচে দেখেছি তো ওখানেই হাত পা ভেঙে ফেলে রাখবো।
– ভাইয়া প্লিজ এমন কোরো না। আমি যাষ্ট তোমায় একটু ক্ষেপাতে চেয়েছিলাম। আর কিছু না। প্লিজ এই কানে ধরছি আর কোনো ছেলের সাথে কথা অব্দি বলবো না।
আরশির কথার পাত্তা না দিয়ে প্রস্থান করলো রিদ। যাওয়ার আগে বাইরে থেকে দরজাও লক করে দিয়ে গেছে।

রিদের বাবার বন্ধু ফাহিম সাহেব রিদকে বলে উঠে,
– তো বাবা তোমার স্ত্রীকে তো দেখছিনা। তোমার বাবাকেও এই ব্যাপারে জিগ্গেস করলাম মনে হয় সে যেনো আকাশ থেকে পরলো। হা হা।
রিদ একটু অবাক হয়ে বলে উঠে,
– কার স্ত্রী আঙ্কেল?
– কি আজব, আরে ওই যে তোমার জম্মদিন পার্টিতে যার সাথে স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দিলে। কি যেনো নাম তার?
পাশ থেকে রাত রিদের কানে কানে বলে উঠে,
– বিয়ে করার আগে কার বৌকে নেয়ে হাজির হয়েছিলি তার সামনে?
– আরে ধুর আজব, অন্যেক বৌকে নিয়ে আমি কেনো টানাটানি করবো? আমি কি ওরকম ছেলে নাকি? আমার চরিত্র হলো ফুলের মতো পবিত্র।
রাত এবার আগ্রহ দৃষ্টিতে বলে উঠে,
– কাহিনি টা কি আঙ্কেল একটু খুলে বলুন তো।
– তোমরা আমার সাথে মজা করছো নাকি বুঝতে পারছি না। আরে রিদ ওই যে জম্মদিন পার্টিতে একটা মেয়ের সাথে আমাদের সামনে আসছিলে। বললে, হুট করেই বিয়েটা করে ফেলেছো তোমরা। তোমাদের জন্য দোয়া করতে। ওহ্ মনে পরেছে মেয়েটার নাম। আর…….
মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে রিদ বলে উঠে,
– ও আঙ্কেল মনে পরেছে, একটু সাইডে আসুন আমি সব বলছি।
– পেছন থেকে রাত বলে উঠে, কিরে রিদ তোর বৌ আসলো কোথা থেকে?

রাত তখন প্রায় ১ টা। কন কনে ঠান্ডায় কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো আরশি। রুম টাও খুটখুটে অন্ধকার। নিঝুম পরিবেশ।

হাতের তালুতে একের পর আঘাতে হাতটা লাল বর্ণ ধরন করে ফেলেছে। ঠান্ডায় প্রতিটা আঘাত যেনো আঘাত স্কয়ারে পরিনত হচ্ছে। আচমকাই এমন হওয়ায়, জ্ঞান শুন্য হয়ে যায় আরশি। লোকটার মুখে মাস্ক। অন্ধকারে মুখটাও দেখা যাচ্ছেনা তার। যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে মাস্ক পড়া তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কে এই লোকটা চিনতে সক্ষম হলোনা আরশি। একটা কাগজ রেখে হুট করে চলে যায় সে।
“” লজ্জা করেনা পর পুরুষের হাতে হাত রেখে কথা বলতে? এক পর কোনো ছেলের সাথে এমন ঘেসাঘেসি করতে দেখলে পরিনামটা আরো ভয়ঙ্কর হবে।

To be continue……

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে