বিবাহ বন্ধন পর্ব-১৯+২০

0
566

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_১৯
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি স্বর্ণাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে আসে।স্বর্ণা তখনো রাজের কথাই ভাবছিল।বৃষ্টি স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“এভাবে কি দেখছ? কেউ তো নেই এখানে।”

স্বর্ণা আনমনে বলে দেয়,
-“রাজ…”

বৃষ্টি ভীষণ অবাক হয়ে যায়। সে বলে,
-“কি বললে তুমি রাজ?”

স্বর্ণা কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“চলো এখন যেতে হবে আমাদের।আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।”

স্বর্ণা কথাটা বলেই হাটা শুরু করে।বৃষ্টির খুবই অদ্ভুত লাগে স্বর্ণার ব্যবহার।তার মনে হয় স্বর্ণা কিছু লুকাতে চাইছে।এদিকে সূর্য বৃষ্টিকে ডাকতে থাকে।তাই বৃষ্টি আর বেশি না ভেবে গাড়ির কাছে চলে আসে।
_____________
বৃষ্টি বাড়িতে ফিরে স্বর্ণার কথাই ভাবছিল।তখন সূর্য রুমে চলে আসে।সূর্যর উপস্থিতি বৃষ্টি উপলব্ধি করে।বৃষ্টির মনে হয় স্বর্ণার ব্যাপারে সূর্যর সাথে কথা বলা উচিৎ।তাই বৃষ্টি সূর্যকে বলে,
-“শুনুন আপনার সাথে খুব জরুরি একটা কথা আছে।”

সূর্য চুল আ*ছড়াতে আ*ছড়াতে বলে,
-“কি কথা বলো? আমার সাথে সময় কা*টাতে চাও?”

-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? ভালো কিছু ভাবতে পারেন না বোধহয়।আমি স্বর্ণার ব্যাপারে বলতে চাই।”

সূর্য উৎকন্ঠার সাথে বলে,
-“স্বর্ণার আবার কি সমস্যা হলো?”

-“কিছুই হয়নি।ওর ব্যবহার আমার কেমন জানি অস্বাভাবিক লাগছে।”

সূর্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।বৃষ্টিকে বলে,
-“জানোই তো ওর সাথে কত কি হয়েছে তাই একটু অস্বাভাবিক আচরণ করাই স্বাভাবিক।তুমি এই নিয়ে ভেবোনা একটু সময় যাক ও ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”

বৃষ্টি সূর্যর কথায় কোন ভরসা পায়না।তার মনে হয় স্বর্ণার ব্যাপারটা এতও সহজ নয় যতটা ভাবা হচ্ছে।

বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়ে।সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়।এরপর আবার একটু শুয়ে পড়ে।

সকাল ৭ টার দিকে চিত্রার ফোন আসে।বৃষ্টি তো খুবই অবাক হয়ে যায়।চিত্রা এত সকালে ফোন করেছে! অথচ এই মেয়েটা তাদের বান্ধবীমহলে সবচেয়ে অলস বলে খ্যাত।বৃষ্টি ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে চিত্রা কাদো কাদো গলায় বলে,
-“আমায় বাঁচা বৃষ্টি।আমি মাই*নকার চি*পায় পড়ে গেছি।”

-“কি হয়েছে চিত্রা? তোকে গলাটা এরকম লাগছে কেন কোন বিপদে পড়লি নাকি?”

-“তোর মতো আমারও কপালে বিয়ে নামক বিপদ অপেক্ষা করছে।সব তো ঠিকঠাকই ছিল।জানি না আমার মা বাবার মাথায় হঠাৎ করে কিভাবে বিয়ের ভূত চাপলো এখন আমি কি করব বল দোস্ত?”

-“কি বললি তোর মা বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে! আলহামদুলিল্লাহ।”

-“এদিকে আমার জীবনে সর্ব*না*শ হতে যাচ্ছে আর তুই কিনা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলছিস! তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রুনি?”

-“আমি বান্ধবী জন্যই তো খুশি হয়েছি চিত্রা।বিবাহবন্ধন একটা পবিত্র বন্ধন।বিয়ে করে নে দেখ সুখী থাকবি।”

-“তুই হঠাৎ করে এরকম বড়দের মতো কথা বলছিস কেন রে? বিয়ে করে খুব পাকা হয়েছিস তাইনা? আমি কিছু শুনতে চাইনা, আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।আমি প্ল্যান করছি যেভাবেই হোক বিয়েটা ভা*ঙ্গার।তুই আমাকে সাহায্য করবি বুঝেছিস?”

-“আমাকে দিয়ে এমন কাজ করাবি!”

-“আমি জীবনে তোর কত উপকার করেছি আর তুই আমার এই সামান্য একটু উপকার করতে পারবি না।কেমন বান্ধবী তুই?”

-“আচ্ছা হয়েছে এত রাগ দেখাতে হবে না।আমি দেখছি কি করতে পারি তোর জন্য।”
_________________
বৃষ্টির ভার্সিটির পাশে দাড়িয়ে ছিল চিত্রার অপেক্ষায়।পাশেই একটি কফিশপে নাকি আজ চিত্রা সেই ছেলেটিকে দেখেছে যার সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।বৃষ্টির রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।চিত্রা যে ভীষণ আনপাংচুয়াল সেটা বৃষ্টি জানে।কিন্তু তাই বলে আজকেও লেট করবে?

হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাকে পেছনে ঘুরে তাকায় বৃষ্টি।আরশি বৃষ্টির কাছে এসে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি ভার্সিটিতে কি করছ কোন দরকার আছে?”

-“হুম দরকার আছে।তুমি কেমন আছে এখন?”

-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।বৃষ্টি জানো এখানে পাশেই একটি কফিশপ আছে।চলো সেখানে।”

-“হুম চলো।”

বৃষ্টি এবং আরশি একসাথে কফিশপে যায়।কফিশপে নিজের ভাই আদনানকে দেখে আরশি অবাক হয়ে বলে,
-“ভাইয়া তুমি এখানে?”

আদনান এতদিন পর নিজের বোনকে দেখে খুশি হয়।মুচকি হেসে বলে,
-“দরকারেই এসেছিলাম আরশি।অনেকদিন পর তোকে দেখলাম একটু খোঁজ খবরও নিসনা আমাদের।কেমন আছিস তুই?”

চিত্রা তখনই হাফাতে হাফাতে সেখানে চাপ আসে আর বলে,
-“বৃষ্টি তুই কখন এলি? আমি সারা ভার্সিটিতে তোকে খুঁজলাম।শোন যে করেই হোক বিয়েটা কিন্তু আমাদের…..”

কথা বলতে বলতে চিত্রার নজর যায় আদনানের দিকে।কালো রঙের টিশার্ট, হাতে স্মার্ট ওয়াচ পরিহিত ছেলেটাকে দেখে মুহূর্তেই সে ক্রাশ খায়।অন্য সব কথা ভুলে সে বলে ওঠে,
-“ওয়াও কি হ্যান্ডসাম!”

আদনান চিত্রাকে দেখে বলে,
-“আপনি চিত্রা রাইট? হাই আমি আদনান।আপনার হবু স্বামী।”

চিত্রা কিছু বলে না শুধু অবাক চাহনিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে।চিত্রাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদনান বিব্রতবোধ করে।তবুও মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
-“নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনাকে চিনতে পারলাম কিভাবে? আপনার ছবি আমি দেখেছি তাই সহজেই চিনে গেছি।”

বৃষ্টি তখন বলে,
-“চিত্রা তুই চুপ আছিস কেন? ওনাকে বল তুই বিয়েটা করতে চাস না।”

বৃষ্টির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় চিত্রা।তার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টিকে খে*য়েই ফেলবে।

-“ও আপনি বিয়েটা করতে চাননা।কোন ব্যাপার না আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলব।”(আদনান)

চিত্রা বলে,
-“আরে না না।বৃষ্টি তুইও না এরকম প্যাংক করিস কেন? আমি কখন বললাম বিয়ে করবোনা 🙄 আমি তো বিয়েটা করবোই।”

চিত্রার হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বৃষ্টি চরমভাবে অবাক হয়।চিত্রা সেদিকে লক্ষ্য না করে বলে,
-“আপনি বসুন মিস্টার আদনান।আমরা একটু কফি খাই।”

বৃষ্টির ইচ্ছে করছিল এক্ষুনি চিত্রার মাথায় গা*ট্টি মা*রতে।তাকে সাঝ সকালে বিয়ে বাতিল করতে ডেকে এনে এখন বলছে বিয়ে করতে চায়না।আরশি চিত্রাকে বলে,
-“আমার সাথে পরিচয় হয়ে নাও আমি আরশি।তোমার হবু ননদ।শুনেছিলাম পৃথিবীটা গোল।এখন তার প্রমাণও পাচ্ছি।বৃষ্টির বান্ধবী আমার ভাইয়ের বউ হতে চলেছে।খুব ভালো লাগছে আমার।তুমিও নিশ্চয়ই খুশি হয়েছ তাইনা বৃষ্টি?”

-“হুম খুশি তো হয়েছি।কিন্তু তোমরা কি জানো চিত্রা তো বিয়েটা করতেই চাইছিল না।বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আমায় ডেকেছিল।ওর তো বয়ফ্রেন্ডও আছে।”

চরম মিথ্যা কথাটা শুনে চিত্রা বৃষ্টির দিকে রাগি চোখে তাকায়।এটা ঠিক যে সে প্রথমে বিয়েটা করতে চায়নি।কিন্তু বয়ফ্রেন্ডের ব্যাপারটা তো পুরোপুরি মিথ্যা।বৃষ্টি চোখের ইশারায় চিত্রাকে বোঝায়,
-“কেমন লাগল? এটা আমাকে একঘন্টা ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে রাখার শাস্তি।”

চিত্রা বিড়বিড় করে বলে,
-“তোর মতো বান্ধবী থাকলে শত্রুনীর আবার কি প্রয়োজন।”

আদনানের মনটা খারাপ হয়ে যায়।চিত্রাকে এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছিল আদনান।তাই মন খারাপ করে বলে,
-“আচ্ছা আপনি বিয়েটা করতে চান না।কোন ব্যাপার না সোজাসুজি বলে দিলেই হতো।”

চিত্রা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।বৃষ্টির তো খুব মজা লাগছিল চিত্রাকে এভাবে ফাসিয়ে।

চিত্রার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে কেঁদেই দেবে।বৃষ্টি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে হেসেই ফেলে।তাকে এভাবে হাসতে দেখে আদনান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে,
-“এভাবে হাসছেন কেন আপনি?”

বৃষ্টি তখন পুরো ঘটনা বলে।সব শুনে চিত্রা বাদে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে।বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে বাইরে চলে আসে চিত্রা আর আদনানকে একান্ত সময় কা*টানোর সুযোগ করে দিতে।আরশি ঠাট্টা করে বলে,
-“বৃষ্টি তুমি তো মহাপা*জী।চিত্রা ভাবি তো আরেকটু হলে কেঁদেই দিত।”

-“বাবা! এখন থেকেই ভাবি।”

ঐদিকে আদনান আর চিত্রা একসাথে কথা বলছিল।আদনান চিত্রাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনার কি আমাকে সত্যিই পছন্দ হয়েছে? বিয়ে করতে কোন প্রবলেন নেই তো? প্রবলেম থাকলে বলতে পারেন আমি কিছু মাইন্ড করবো না।”

চিত্রা অধৈর্য হয়ে জোর গলায় বলে,
-“নেই কোন কোন কোন প্রব্লেম নেই।”

চিত্রা এত জোরে কথাটা বলে যে কফিশপের সবার দৃষ্টি পড়ে চিত্রার উপর।চিত্রা খুবই লজ্জা পায়।আদনান হেসে ফেলে।
(চলবে)

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_২০
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল।সূর্য খেয়াল করছে বৃষ্টি দু একদিন সাথে কারো সাথে চুপি চুপি কি যেন বলে।সূর্য খুবই জেলাস ফিল করে।তার মনে হয় বৃষ্টি কোন ছেলের সাথে কথা বলছে নাতো?

সূর্য বৃষ্টির কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে,
-“তুমি এভাবে কার সাথে কথা বলো বৃষ্টি?”

বৃষ্টি তড়িঘড়ি ফোনটা কে*টে দিয়ে বলে,
-“কই নাতো।কারো সাথে কথা বলছিলাম না।”

-“মিথ্যা বলবেনা।আমি বেশ অনেকদিন থেকে ব্যাপারটা খেয়াল করছি।সত্য করে বলো তো বৃষ্টি তোমার কি কারো সাথে রিলেশন চলছে?”

-“এসব কি বাজে কথা বলছেন আপনি? রিলেশন তাও আবার আমার! আমি সিদরাতুল মুনতাহা বৃষ্টি জীবনে প্রেম ভালোবাসার আশপাশ দিয়ে যাইনি।তার নামে এত বড় অপবাদ!”

-“আমার কেন জানিনা তোমাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।”

বৃষ্টি মন খারাপ করে বলে,
-“বিশ্বাস করতে না চাইলে করবেন না।আমার তাতে কি।”

সূর্য খুব রেগে যায় এবং রাগ দেখিয়ে রুম থেকে চলে যায়।বৃষ্টি মনে মনে বলে,
-“খুব শীঘ্রই সবাই সবটা জানতে পারবে।”
_________
স্বর্ণাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিয়ে তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় বৃষ্টি।স্বর্ণা বারংবার তাকে জিজ্ঞাসা করে কি কারণে স্বর্ণাকে এভাবে সাজানো হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টি কিছুই বলে না।স্বর্ণাকে যখনই শাড়ি পড়াতে চায় বৃষ্টি তখনই স্বর্ণার মনে সন্দেহ তৈরি হয়।সে বৃষ্টিকে বলে,
-“সত্যি করে বলো বৃষ্টি ভাবি আমাকে কেন সাজানো হচ্ছে।”

বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“একটু ওয়েট কর মাই ডিয়ার স্বর্ণা সব জানতে পারবে।”

-“তুমি এমন ভাবে আমাকে সাজাচ্ছো যেন দেখে মনে হচ্ছে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে… এক মিনিট এক মিনিট…সত্যিই আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে নাতো?”

-“তুমি তো অনেক চালাক স্বর্ণা।এত তাড়াতাড়ি বুঝে গেলে।”

-“এটা কিন্তু ঠিক না।আমি তোমাকে আগেও বলেছি যে আমি বিয়ে করতে চাইনা।”

-“আগে পাত্রকে দেখো তারপর কথা বলবে।বুঝেছ?”

-“পাত্র এমন কে যাকে দেখে আমার সিদ্ধান্ত বদলে যেতে পারে?”

-“সেটা তো পাত্রকে দেখলেই বুঝতে পারবে।”

বৃষ্টি স্বর্ণাকে আর কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।নীল শাড়িতে স্বর্ণাকে খুব সুন্দর লাগছিল।বৃষ্টি স্বর্ণাকে বলে,
-“শাড়ি পড়লে তোমায় কত ভালো লাগে।আর তুমি শাড়ি পড়তেই চাওনা। তোমাকে আজ যেই দেখবে সেই ক্রাশ খাবে।”

স্বর্ণা বৃষ্টিকে কিছু বলবে তার আগেই বৃষ্টি নিচে চলে যায় কাজের বাহানায়।অগত্যা স্বর্ণা অপেক্ষা করতে থাকে।
__________
স্বর্ণা নিজের রুমের মধ্যেই বসে ছিল।তার মনে বিভিন্ন ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল।কে তাকে দেখতে আচ্ছে কেনই বা দেখতে আচ্ছে স্বর্ণার কাছে সেটা অনেক বড় প্রশ্ন।বৃষ্টি কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে এসে বলে,
-“চলো স্বর্ণা নিচে চলো।ওনারা তোমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

-“কারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে বৃষ্টি ভাবি? প্লিজ তুমি আমায় বলো।”

-“নিচে ড্রয়িংরুমে চলো সেখনে গেলেই সব জানতে পারবে।”

স্বর্ণার যদিও কোন ইচ্ছে ছিলনা এখন ড্রয়িংরুমে যাওয়ার তবুও নিজের মনে জন্ম নেওয়া কৌতুহলকে দমন করার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে ড্রয়িংরুমে যেতেই হয়।

ড্রয়িংরুমে গিয়ে স্বর্ণা দেখে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ, দুজন মহিলা আর সাথে তারই বয়সী একটি মেয়ে বসে আছে।

স্বর্ণা তাদের সামনে এসে বসে।বৃষ্টি চিত্রাকে বলে,
-“কেমন লাগলো আমার ননদকে? এই কিন্তু তোর ভাবি হতে চলেছে।”

-“হুম বেশ ভালো বৃষ্টি।ভাইয়ার পাশে খুব ভালো মানাবে।আমি চলে গেলে বাড়িতে যে অভাব তৈরি হবে সেটা তো আমার ভাবি পূরণ করবে।”

বৃষ্টি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
-“ও হলো আমার ফ্রেন্ড চিত্রা।ওর সাথে ওর আব্বু,আম্মু আর ফুফু এসেছে।চিত্রার চাচাতো ভাইয়ের জন্যই স্বর্ণাকে দেখতে এসেছেন এনারা।”

আলামিন ইসলাম আর সালমা আক্তারও সাথে বসে ছিলেন।সূর্য,সোহেল কাজের জন্য বাড়িতে ছিলনা।প্রিয়া এত সকালে ঘুম থেকেই ওঠেনি।আলামিন ইসলাম বলেন,
-“আপনাদের কাছে কিছু লুকাবো না আমার মেয়ের ব্যাপারে আসলে কিছু বদনাম আছে।মাঝখানে ও বিগড়ে গিয়েছিল আমরা ভাবিও নি ওকে আবার ফিরে পাবো।আপনারা যদি সব জেনেও ওকে বাড়ির বউ করতে চান তাহলে আমাদের কোন অসুবিধা নেই।”

চিত্রার বাবা বলে,
-“আমার ভাইয়ের ছেলেই তো স্বর্ণাকে পছন্দ করেছে।আমাদের আর অমত থাকবে কেন? ও আমেরিকায় ছিল এতদিন বেশ আধুনিকমনস্ক তাই এসব নিয়ে ওর কোন মাথাব্যাথা নেই।আমরাও এসব ব্যাপার নিয়ে কিছু ভাবি না।”

আলামিন ইসলাম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।সালমা আক্তারকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি বিষয়টা নিয়ে ততটাও খুশি নন।অবশ্য তার খুশি না হওয়াই স্বাভাবিক।এতদিন পর নিজের মেয়েটাকে ফেরত পেল।এখন যদি আবার এসব কারণে তার মেয়েটা রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে কি হবে? কত দিন পর মেয়েটাকে ফেরত পেয়েছেন তিনি।এখন আর কোনভাবেই মেয়েকে হারাতে চান না।

স্বর্ণা কোন কথা বলছিল না তবে তার দুঃশ্চিন্তা শেষ হচ্ছিল না।সালমা আক্তার স্বর্ণার পাশে এসে বসেন।তারপর স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“তুই এই বিয়েতে খুশি তো স্বর্ণা? তুই না চাইলে আমরা আর কথা বাড়াবো না।তোর বাবা যাই বলুক আমি জোর করে কোন সিদ্ধান্ত তোর উপর চাপিয়ে দিতে চাইনা।”

স্বর্ণা চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করে।কারণ বৃষ্টির কথাই তাকে ভাবাচ্ছিল।হঠাৎ করে রাজ সেখানে চলে আসে এবং বলে,
-“আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেল সরি।”

স্বর্ণার চোখ যায় রাজের দিকে।রাজ আজ হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছে।পাঞ্জাবীতে রাজকে কি সুন্দর টাই না লাগছে।স্বর্ণা অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।রাজও স্বর্ণাকে দেখে বিমোহিত হয়।

বৃষ্টি স্বর্ণার কানে কানে বলে,
-“এই ছেলেটা বর হলেও কি তুমি বিয়ে করবে না?”

বৃষ্টির কথায় স্বর্ণার ঘোর কা*টে।স্বর্ণা আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

বৃষ্টিও ছুটে যায় স্বর্ণার পেছনে।স্বর্ণা দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকে।তার মন আর মস্তিকের ল*ড়াই আবার শুরু হয়।স্বর্ণার মন চাইছে রাজের কাছে যেতে কিন্তু তার মস্তিষ্ক তাকে নিষেধ করছে।

বৃষ্টি স্বর্ণার দরজায় নক করতে থাকে।স্বর্ণা দরজাটা কিছুতেই খুলতেই চায়না।বৃষ্টি এবার খুব রেগে যায়।রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আর কতদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াবে তুমি স্বর্ণা? এবার অন্তত নিজের মনের সব দেয়াল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করো।মনের মধ্যে কষ্টের দেয়াল তৈরি করে রেখেছ তুমি।সেই দেয়ালটা তো তোমাকেই ভাঙ্গতে হবে।রাজ ছেলেটা কতবছর তোমার জন্য অপেক্ষা করেছে।এরকম ছেলে লাখে একটা মেলে।আর তুমি কিনা তাকেই এভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছ? দরজাটা খোলো বলছি।”

স্বর্ণা এবার নিজের মস্তিকের না মনের কথা শুনে।দরজাটা খুলে দেয় সে।বৃষ্টি ভেতরে আসে।স্বর্ণা বৃষ্টিকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি রাজের খোঁজ কিভাবে পেলে বৃষ্টি ভাবি?”

বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি কি মনে করো আমি এতটাই বোকা? আমি সেদিন তোমাকে রাজের সাথে কথা বলতে দেখে নিয়েছিলাম।পরে যখন তুমি চলে আসো তারপর আমি রাজের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝতে পারি উনি রাজ।আমি রাজের থেকে ওনার ফোন নম্বরটা নেই।তারপর চলে আসি।উদ্দ্যেশ্য ছিল যোগাযোগ করা।বাড়িতে ফিরে আমি রাজের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি সে এখনও তোকে ভালোবাসে।পরে কাল যখন আমি চিত্রার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করে চিত্রার জোরাজুরিতে ওর বাড়িতে যাই তখন রাজকে আবার দেখি।তখনই জানতে পারি রাজ চিত্রার চাচাতো ভাই।সেদিন আমি সবাইকে তোমার আর রাজের ব্যাপারটা বলি।আমি এটাও বলি তুমি এখনো মনে মনে রাজকে ভালোবাসো কিন্তু প্রকাশ করোনা।তখন ওনারাই বললেন তোমাকে দেখতে আসতে চান।কাল আমি তোমার বাবা মা মানে আমার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে কথা বলে তাদেরকে জানাই সবটা।তারা রাজি হলে আমি রাজকে ফোন করে জানাই সবটা।তখন রাজ বলল চলে আসতে।”

স্বর্ণা বলে,
-“সব ঠিক আছে কিন্তু আমাকেও তো জানালে পারতে।আমার মতামতের কি কোন প্রয়োজন নেই?”

-“তা নয় কিন্তু…”

-“কোন কিন্তু নয় আমি এই বিয়েটা করতে পারব না।ব্যাস আর কোন কথা না।”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে