বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-১৬+১৭

0
1858

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

১৬.

সময় নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। যেটা সময়ের স্বাভাবিক নিয়ম। আর সেই সময়ের বদলের সাথে সাথেই সবকিছু বদলে যাচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে অনিমা আদ্রিয়ানের সাথে আদ্রিয়ানের বাড়ির সাথে ততটাই মিশে যাচ্ছে। ওর এখন আদ্রিয়ানের বাড়িটা নিজের বাড়িই মনে হয়। আর বাড়ির সার্ভেন্টগুলোর সাথেও খুব ভালোভাবে মিশে গেছে ও। জাবিন আর অনিমাকে দেখলে এখন আর কেউ বলবেই না ওরা অল্পদিনের পরিচিত। বোনের মতই বন্ডিং হয়ে গেছে ওদের। আর আদ্রিয়ানের ব্যাপারটা আরও ভয়ানক। অনিমা এখন ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। রোজ বেড় হওয়ার আগে, আর বাড়ি ফেরার পর অনিমার মুখ না দেখলে ওর আর ভালো লাগেনা একদম ভালোলাগেনা। কিন্তু মেয়েটা বোঝেইনা এসব। সবসময় ওর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। এত লজ্জার কী আছে? সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা।
জাবিন আসার পর থেকে তো সাপের পাঁচপা দেখেছে। দরকার ছাড়া ওর কাছে আসেই না। শুধু কফি দিয়ে যায়, আর প্রয়োজনীয় টুকটাক কথা বলে। যেটা আদ্রিয়ানের মোটেই পছন্দ হচ্ছেনা। বিছানায় হেলান দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে সেই ভাবনাই ভেবে চলেছে আদ্রিয়ান।

” আপনার খাবার।”

কথাটা শুনে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এল আদ্রিয়ান। তাকিয়ে দেখল অনিমা ওর জন্যে বিকেলের স্কাকস পাস্তা আর কফি নিয়ে এসছে। আদ্রিয়ান ইশারা করে রাখতে বলল। অনিমা রেখে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলল,

” কোথায় যাচ্ছো?”

” জাবিনের রুমে।”

” বসো।”

অনিমা বেশ অবাক হয়েই বসল। ওর মনে হল আদ্রিয়ান হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে। কিন্তু অনিমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,

” জাবিনের রুমে যাচ্ছিলে কেন?”

” এমনিই ওর সাথে একটু গল্প করতাম।”

আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে বলল,

” সবসময় জাবিনের সাথে গল্প করতে হবে কেন? আমাকে চোখে পরেনা?”

অনিমা অবাক হয়ে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ওর সাথে কথা বলতে চায় সেটা আবার এভাবে বলছে। কিন্তু কেন? অনিমা অবাক ভঙ্গিতেই বলল,

” না আসলে..”

আদ্রিয়ান এবার একটু জেদি স্বরে বলল,

” এসব আসলে নকলে বাদ দাও। এখন তুমি এখান থেকে কোথাও যাবেনা।”

অনিমা অবাকের ওপর দিয়ে অবাক হচ্ছে আদ্রিয়ানের ব্যবহারে। তবুও বলল,

” জাবিন অপেক্ষা করছে। ওকে বলেছি আপনাকে খাবারটা দিয়েই আমি ওর কাছে যাবো। আমারটাও ওর রুমেই রাখা।”

আদ্রিয়ান অনেকটা চোখ রাঙিয়ে বলল,

” বললাম তো এখানে বসো। এতো কথা কীসের?”

আদ্রিয়ানের চোখ রাঙানিতে অনিমা বেশ অনেকটাই ভয় পেল। তাই ইতস্তত করে নিচু গলায় বলল,

” এখানে বসে কী করব সেটাতো বলবেন?”

আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

” কিচ্ছু করতে হবেনা, বলতেও হবেনা। চুপচাপ বসে থাকো এখানে।”

অনিমা কিছু বলতে নিলেই আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকাল। বেচারী অনিমাও কিছুই বুঝতে না পেরে বোকার মত ওখানেই বসে রইল। আদ্রিয়ান পাস্তা নিয়ে খেতে শুরু করে দিল। অনিমা কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। এভাবে মূর্তির স্টাইলে বসে থাকা যায়? এসব ভাবতে ভাবতেই জাবিন দুহাতে দুটো প্লেট নিয়ে দরজার সামনে এসে বলল,

” অনি আপু আমি তোমার জন্যে কখন থেকে বসে আছি। আর তুমি এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছো।”

অনিমা কিছু বলবে তার আগেই অাদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

” কেন? অনি আপুকে কী দিয়ে এত কী কাজ?”

জাবিন অবাক হয়ে বলল,

” কেন? গল্প করব।”

” গল্প করতে হবেনা যা অভ্রর কাছে যা।”

জাবিন চরম অবাক হয়ে বলল,

” কী?”

আদ্রিয়ান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইতস্তত করে বলল,

“অব আই মিন গিয়ে দেখ ওকে স্নাকস দেওয়া হয়েছে কী না? আর কিছূ লাগবে কী না। যা।”

জাবিনও বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান আবারও ধমক দিয়ে বলল,

” কী হল যা?”

আদ্রিয়ানের ধমকি শুনে জাবিন ভয় পেয়ে দ্রুতপদে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” ওর প্লেটটা রেখে যা।”

জাবিন দ্রুতপদে এসে প্লেটটা অনিমার সামনে রেখে একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। অনিমা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। ইশ! মেয়েটা কী ভাবল? নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে এখন। ও এবার একটু বিরক্তি নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল। আদ্রিয়ান বাঁকা টাইপের একটা হাসি দিয়ে বলল,

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? মারবে আমাকে?”

‘ইচ্ছে তো সেটাই করছে’ মনে মনে কথাটা আওরালেও মুখে বলতে পারলনা অনিমা। তাই ভ্রু কুচকে রেখেই চোখ নামিয়ে নিল ও। আদ্রিয়ানের খুব মজা লাগছে অনিমাকে জ্বালাতে। অনিমা যখন বিরক্তি নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে সেটা খুব বেশি এনজয় করে ও। তাইতো সবসময় ইচ্ছে করেই বিরক্ত করে।খাওয়া শেষ করে প্লেটটা রেখে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু এগিয়ে বসল। কোলে বালিশ নিয়ে গালে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছে অনিমাকে। অনিমা চোখ ছোট ছোট করে দেখছে আদ্রিয়ানকে। এসবের মানে হয়? আদ্রিয়ান ভ্রু নাচালো। অনিমা সাথেসাথেই আবার চোখ সরিয়ে নিল। একেতো আদ্রিয়ান ওকে এরকম অদ্ভুতভাবে দেখে যাচ্ছে, তারওপর ওকে এখান থেকে নরতেও দিচ্ছেনা। কী শান্তি পায় এই লোকটা ওকে এরকম অস্বস্তিতে ফেলে ও সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা ও।

অভ্র নিজের জন্যে বরাদ্দকৃত রুমে বসে বই পড়ছিল। অবসর সময় এটাই ভালোলাগে ওর ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বই পড়াটা। তাই এখনও নিজের এই অবসর সময়টা এভাবেই কাটাচ্ছে। আসলে এতদিন ও আদ্রিয়ানের দেওয়া একটা ফ্লাটেই থাকত। কিন্তু এখন ফ্লাটটায় কিছু কাজ চলছে তাই আদ্রিয়ানের কথায় আজ সকালেই এই বাড়িতে শিফট করেছে। কতদিন থাকা লাগবে সেটা এখন ও বলা যাচ্ছেনা। আদ্রিয়ানের কথামত খবর নিতে মনে মনে একগাদা বকবক করতে করতে জাবিন চলে এল অভ্রর রুমে। এসে দেখে অভ্র কফি খাচ্ছে আর বই পড়ছে। আজকে ইনফরমাল ভাবে দেখল ও অভ্রকে। একটা পাতলা টিশার্ট, হাটু অবধি প্যান্ট, এলোমেলো চুল। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের এক সুপুরুষ বটে। নিজেকে সামলে নিয়ে জাবিন একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আসবো?”

অভ্র অবাক চোখে তাকাল দরজার দিকে। জাবিন হঠাৎ ওর রুমে আসবে ও ভাবেনি। অবাক কন্ঠেই বলল,

” হ্যাঁ আসুন।”

জাবিন গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এসে বলল,

” অাপনার স্নাকস, কফি দিয়ে গেছে?”

অভ্র ভ্রু কুচকে তাকাতেই জাবিন একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” নাহ আসলে ভাইয়া পাঠাল তাই..”

” জি দিয়ে গেছে।”

কথাটা বলে আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিল ও। জাবিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও তাকাল না। জাবিন বিরক্তি নিয়ে বেড়িয়ে গেল।জাবিনের মেজাজটা এবার অত্যধিক মাত্রায় খারাপ হল। করণ ও চিরকাল অন্যের মুখে নিজেকে সুন্দরী বলেই জেনে এসছে। ছেলেদের এটেনশন, আর ফার্ল্ট করা এসব দেখেই অভ্যস্ত ও। কিন্তু এই ছেলেটা ওকে পাত্তাই দিল না? হাউ রুড! নিজেকে কী শাহ রুক খান ভাবে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল জাবিন।

_____________

রিক আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। একয়দিন রুম থেকেই বেড় হয়নি। যদিও অনিমাকে খুঁজতে নিজের সব লোক লাগিয়েছে। কিন্তু এতো মানুষের ভীরে একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া কী এতোটা সহজ? তারওপর আদোও এই শহরেই আছে কীনা তাও তো জানেনা। একটা রিস্টুরেন্টে খালি টেবিলে বসে আছে ও। কাচের গ্লাসটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরছে। অনিমাকে খুঁজে পেতে হবে। যেকরেই হোক। আর পাবেনাই বা কেন। যেটা ওর সেটাতো ওরই। সেটাতে তো অন্যকারো কোন অধিকার নেই, থাকতে পারেনা। ওর এখানে আসার মূল কারণটা হল আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলেছে আজ এখানে আসবে ওর সাথে দেখা করতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুপুর একটা বিশ বাজে। আদ্রিয়ানতো বলেছে সেই সকালে বেড়িয়েছে। কোন জায়গায় ব্রেক না করে গাড়ি চালিয়ে এলে পাঁচ ঘন্টার বেশি লাগবেনা। এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান চলে এলো। দুই ভাই কুশল বিনিময় করার পর আদ্রিয়ান রিকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

” চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কিছু হয়েছে?”

রিক মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল,

” নাহ আমি ঠিকই আছি।”

এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ স্বাভাবিক কথোপকথন চলল ওদের মধ্যে। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান বলল,

” তো বিয়ে কবে করছিস?”

” নীলপরীকে পেলেই করে ফেলব এবার আর অপেক্ষা করব না।”

” পেলে মানে। এস পার আই নো ও তোদের বাড়িতেই থাকে।”

” এখন নেই।”

” ওহ নিজের বাড়ি গেছে? এইজন্যই বাবু এতো আপসেট?”

রিক কিছু বলল না। এখন আদ্রিয়ানকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে পারবেনা। সবটা শুনলে আদ্রিয়ান যে ওর কিছু কাজ সাপোর্ট করবে না সেটা ও জানে। কিন্তু ওই বা কী করবে ও ওর নীলপরীকে নিজের করে রাখতে সবকিছু করতে পারে। সবকিছুই। তাই কথা ঘুরিয়ে অন্যসব আলোচনায় মনোযোগ দিল।

____________

ভার্সিটির লাস্ট ক্লাস শেষ করে অনিমা, তীব্র আর অরুমিতা বেড় হল। আপাতত স্নেহার আসার জন্যে ওয়েট করছে। স্নেহা তীব্রর গার্লফ্রেন্ড। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকেই তীব্র আর অরুমিতার সাথে পরিচয় ওদের।ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পরেই আস্তে আস্তে প্রেম। তবে একে ওপরকে তুই করে বলার অভ্যেসটা যায়নি এখনও। অনিমা স্নেহাকে চিনতো না এখানে এসেই আলাপ। অপেক্ষা করছে কারণ স্নেহার ডিপার্টমেন্ট আলাদা। অনিমারা জার্নালিস্ম পড়ছে আর স্নেহা ইংলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্নেহা চলে এলো। আজ ওরা সবাই খুব এক্সাইটেড কারণ আজ আদ্রিয়ানের বাড়িতে ওদের সবার ইনভেটেশন আছে। বিকেল থেকে রাত অবধি থাকবে ওখানে। আদ্রিয়ানই সব করেছে কারণ অনিমার বন্ধুদের সাথে ওর এখনও আলাপ হয়নি তাই, আলাপটা সেড়ে নেওয়া জরুরী। এমনিতেই ওরা তিনজনেই আদ্রিয়ানের বেশ ভালো রকমের ফ্যান, বিশেষ করে স্নেহা। ওরা ভাবতেই পারছেনা এরকম একটা সেলিব্রিটির বাড়িতে ওরা ইনভাইটেড। যেখানে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়াটাও বেশ কঠিন। তীব্র বলল,

” এই লেটকুমারী এত দেরী করলি কেন?”

স্নেহা বিরক্ত হয়ে বলল,

” অদ্ভুত! ক্লাস শেষ হতে লেট হলেও আমার দোষ!”

” তোকে আমি চিনিনা? নিশ্চয়ই ওয়াশরুমে গিয়ে আটাময়দা মেখে এসছিস। আফটার ওল সেলিব্রিটি ক্রাশের বাড়ি যাচ্ছিস।”

” কেন? তোর জ্বলছে?”

” বয়েই গেছে।”

অনিমা এবার বিরক্তি হয়ে চেঁচিয়ে বলল,

” চুপ!”

ওরা দুজনেই থেমে গেল। অনিমা একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” আস্ত টম এন্ড জেরী। যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায়। এবার চল ড্রাইভার কাকু সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছেন হয়ত।”

অরুমিতাও বলল,

” হ্যাঁ সেই চল।”

ওরা সবাই মিলে একসাথে হাটা দিল। একটু এগিয়েই তীব্র বলল,

” ওয়েট ওয়েট! দুটো কোকাকোলা কিনে নেই। যেতে যেতে খাওয়া যাবে।”

বলে তীব্র দৌড়ে চলে গেল। অনিমা ডেকেও থামাতে পারল না। বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এই ছেলেটাও না। চল আমরা এগোই।”

বলে ওরা একটু এগোতেই কিছূ ছেলে ওদের পথ আকড়ে দাঁড়াল। বোঝাই যাচ্ছে এরা ভার্সিটির সিনিয়র ভাইরা। যারা একেকদিন একেকজনের ক্লাস নেয়, আজ ওদের পেয়েছে। স্নেহা বিড়বিড় করে বলল,

” শিট, আজকেই ওদের আসতে হল?”

অনিমা একটু বিরক্ত হল তবুও ভদ্রভাবে বলল,

” ভাইয়া পথ ছাড়ুন যাবো আমরা।”

ওদের মধ্যে একজন বলল,

” এত তাড়া কীসের? আমরা তোমাদের সিনিয়র ভাই। আমরা ডাকলে মন দিয়ে কথা শুনবে বুঝলে?”

অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

” কী বলবেন বলুন।”

” নাম কী?”

” অনিমা।”

” কোথায় থাকো?”

অনিমার এবার একটু রাগ হল। এসব উদ্ভট প্রশ্নের মানে কী? তাই অনেকটা রেগে গিয়েই বলল,

” কেন? বিয়ের ইনভেটেশন কার্ড পাঠাবেন? এসব উট্কো ঝামেলা না করে পথ ছাড়ুন।”

ছেলেগুলো হাসল। মাঝের জন বলল,

” বাবা তেজ আছে দেখছি? তাও রবিনকে দেখাচ্ছে? আমিও দেখি কতটা তেজ আছে।”

এটা বলে অনিমার দিকে এগোতে নিলেই অরুমিতা বলল,

” ভাইয়া প্লিজ যেতে দিন না। ও আর এভাবে বলবে না।”

অরুমিতার কথায় পাত্তা না দিয়ে রবিন নামের ছেলেটা একদম অনিমার সামনে এসে দাঁড়াল। হাতের জলন্ত সিগারেটটায় একটা টান মেরে পুরো ধোঁয়াটা অনিমার মুখের ওপর ছাড়ল। অনিমা এমনিই এসব সহ্য করতে পারেনা। তাই কাশি শুরু হয়ে গেল ওর সাথে মেজাজটাও খারাপ হল। কোনমতে কাশি থামিয়ে রেগে গিয়ে থাপ্পড় মেরে দিল রবিনকে। রবিন হিংস্র চোখে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা নিজেও এবার খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। অরুমিতা আর স্নেহা বেশ ঘাবড়ে গেছে। রবিন ক্ষিপ্ত হয়ে অনিমা গায়ে হাত দিতে নিলেই কেউ হাত ধরে ফেলল। ওরা তাকিয়ে দেখল তীব্র। রবিন একই দৃষ্টিতে তীব্রর দিকে তাকাল। তীব্র মেকী হেসে বলল,

” সিনিয়র ভাইয়ারা জুনিয়রদের স্নেহ করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জুনিয়রদের এভাবে হ্যারাস করাটা আপনাদের মত সিনিয়রদের ঠিক মানায় না। তাই এরকম না করাই বেটার।”

রবিন ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” দেখ এসবের থেকে দূরে থাক।”

” পারবোনা ভাইয়া। এটাই ভালো হয় যদি আপনারা ওদের থেকে একটু দূরে থাকুন। কারণ আমি কম্প্লেইন করলে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে।”

এরপর গেঞ্জির হাত ফোল্ড করতে করতে বলল,

” এমনিতেই জুনিয়র একটা মেয়ের হাতে চড় খেলেন আবার যদি জুনিয়র ছেলের হাতে মার খান সেটা খুব বেশি সম্মানের হবেনা।”

” তোর এত জ্বলছে কেন? তোর আইটেমকে তো আর কিছু করিনি।”

অনিমার সাথে এরকম বিহেভ করায় এমনিতেই রেগে ছিল তীব্র। স্নেহাকে আইটেম বলায় রাগটা এবার কন্ট্রোললেস হয়ে গেল। রেগে তেড়ে যেতে নিলে অনিমা বাঁধা দিয়ে বলল,

” তীব্র ছেড়ে দে। ঝামেলা বাড়াস না চল এখন।”

স্নেহাও একই কথা বলল। এরমধ্যেই ওখান দিয়ে একজন প্রফেসর আসছিল তাই রবিনরা চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে রবিন অনিমার দিকে একটা হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেছে। পরিস্থিতি সামলে অনিমারাও বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হল।

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

১৭.

বিকেল পেরিয়ে যাবার পথে। সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় আছে। যেকোন মুহূর্তে সে ডুব দেবে আর পৃথিবীর এ-প্রান্তে ধীরে ধীরে অন্ধকার ছেয়ে যাবে। আদ্রিয়ান বারবার ঘড়ি দেখছে আর অনিমাদের আসার অপেক্ষা করছে। আদিব আর আশিস কিছুক্ষণ আগেই চলে এসছে। এখন দুজনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। জাবিন ফল খেতে খেতে রাইমার সাথে গল্প করছে। রাইমা হল আদিবের বাগদত্তা। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে ওদের। এমনিতে সবরকমের আয়োজন করে রেখে দিয়েছে ও অনিমা ওর বন্ধুদের আজ নিয়ে আসছে তাই। কিন্তু হিসেব মত তো ওদের চলে আসার কথা এখনও আসছেনা কেন? এসব ভাবতে ভাবতে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে আদ্রিয়ান। জাবিন রাইমার সাথে কথা বলছে আর আড়চোখে দেখছে সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করতে থাকা অভ্রকে। অভ্রর প্রতি খুবই বিরক্তি ও। ওর দিকে ঠিক করে তাকায়ও না ছেলেটা। এই বিরক্তির কারণটা যে অবান্তর সেটাও ভালোকরে জানে জাবিন। তবুও মনে এই প্রশ্নটা ওঠে যে একটা সুন্দর মেয়ে আশেপাশে থাকলে কোন ছেলে এত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কীকরে থাকে? দূর! এই ছেলে যা ইচ্ছে করুক তাতে ওর কী? এসব কথা ভেবে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে রাইমার সাথে কথা বলায় মনোযোগ দিল জাবিন। আশিস উঠে একটু ওয়াশরুমে গেল তাই আদিব এসে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলতে শুরু করল। এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। সবাই এবার একটু সক্রিয় হয়ে উঠল। কারণ কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিদের আগমন ঘটেছে। আদ্রিয়ান নিজেই গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে মুখে হাসি ফুটল ওর। ফুটবে না কেন? মায়াবিনীকে যখনই দেখে ওর মুখে এমনিই হাসি ফুটে উঠে। মেয়েটা যেন ওর মন ভালো করার খুবই কার্যকারি এক ঔষধ।আদ্রিয়ান দেখল অনিমার পেছনে আরো তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা পেছনে তাকিয়ে দেখল তীব্র, অরুমিতা, স্নেহা তিনজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্নেহাতো একপ্রকার ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। তীব্র নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” হাই আমি…”

তীব্রকে থামিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,

” ওয়েট!”

বলে অনিমাকে সাইড করে দিয়ে একটু এগোলো ওরা তিনজনেই হালকা ঘাবড়ে গেল। ওরা ভাবল হয়ত কোন ভূল করে ফেলেছে। কিন্তু ওদের অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” তোমাদের নামগুলো আমি বলব। ভুল হলে ধরিয়ে দিও কিন্তু।”

আদ্রিয়ান তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি তীব্র রাইট?”

তীব্র নিজেও এবার একটু হেসে বলল,

” জি ভাইয়া।”

আদ্রিয়ান হাত বাড়াতেই তীব্র হেসে এগিয়ে এসে সাদরে আলিঙ্গন করল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ানের এরকম বিনয়ী স্বভাব মুগ্ধ করল ওকে। আদ্রিয়ান তীব্রকে ছেড়ে একে একে অরুমিতা আর স্নেহা দুজনের নাম বলতেই সক্ষম হল। আর ওদের সাথেই খুব ভালোভাবে পরিচিত হল। ওরা আদ্রিয়ানের মত একজন সেলিব্রিটির এরকম ব্যাবহারে অবাক তো হয়েছেই আরও অবাক হল এত ভালোভাবে চিনতে পারায়। রাখার মত অবস্থাতে নেই অরুমিতা অবাক হয়ে বলল,

” স্যার আপনি আমাদের এত ভালো করে কীকরে চিনলেন? মানে এর আগেতো আমাদের..”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে চোখের ইশারা করে বলল,

” এইযে ইনি। যতক্ষণ আমার সাথে কথা বলে তোমাদের কথাই বলে। এতো এতো ডেসক্রিপশন দিয়েছে যে দেখেই চিনে ফেলেছি।”

স্নেহাতো এক্সাইটমেন্টে পাগল পাগল হয়ে গেছে কী বলবে কী না বলবে বুঝতে পারছে না। তীব্র, অরুমিতা নিজের উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলেও স্নেহা উত্তেজনাবশত বলে ফেলল,

” স্যার একটা সেলফি প্লিজ?”

অনিমা চোখ বড় বড় করে তাকাল স্নেহার দিকে। মেয়েটাকে এতো করে বুঝিয়ে এসছে যে উত্তেজনায় উল্টোপাল্টা কিছু করবি না কিন্তু মেয়েটাতো সেটাই করল। অনিমার নিজেরই এখন লজ্জা লাগছে, সাথে তীব্র অরুমিতারও।আদ্রিয়ান হয়ত ওদের অবস্থা বুঝতে পারল তাই হেসে বলল,

” অবশ্যই তুলবে। আমিতো পালিয়ে যাচ্ছিনা। রাত পর্যন্ত আছি তোমাদের সাথে। অনেক ছবি তুলবো।”

আদ্রিয়ান এর কথাতেই স্নেহা বুঝতে পারল বেশি বেশি করে ফেলেছে। সবার মধ্যেই এখন চরম অস্বস্তি। ওদের নরমাল করতে আদ্রিয়ান বলল,

” সব কথা কী এখানে দাঁড়িয়েই বলবে নাকি? এসো ভেতরে এসো। আর এসব ‘স্যার’ ‘ট্যার’ বলে ডেকোনা। ভাইয়া বলে ডাকবে, তিনজনকেই বলছি।”

ওরাও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ভেতর আসল। ওরা ভেতরে যেতে সবাই সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। আদ্রিয়ান একে একে আদিব, অভ্র, জাবিনের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। রাইমাকে দেখে অনিমা অবাক হল কারণ এর আগে দেখেনি। অনিমার চাহনী বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান বলল,

” অনি ওই হচ্ছে রাইমা। তোমাকে বলেছিলাম না আদিবের উডবি?”

এবার অনিমা চিনতে পারল এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

” ভালো আছো অাপু?”

রাইমাও হেসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমার কথা কিন্তু অনেক বলে ওরা। শুনেই বুঝেছিলাম তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে আজ দেখেও নিলাম। সত্যিই তুমি খুব মিষ্টি।”

” তুমিও।”

রাইমার সাথে বাকিদের আলাপ করিয়ে দেওয়ার পর আদ্রিয়ান চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,

” আশিস কোথায়?”

‘আশিস’ নামটা শুনে অরুমিতার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। অস্হির লাগতে শুরু করল ওর। কিন্তু এক নামে তো আর একটা মানুষ থাকেনা পৃথিবীতে। আশিস নামের তো অনেক মানুষই থাকতে পারে। এসব ভেবে নিজের মনটাকে সান্ত্বনা দিতে নিচ্ছিল ঠিক পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

” আমি এখানে।”

কন্ঠস্বর শুনে দ্বিতীয়বারের মত অবাক হল অরুমিতা। ও দ্রুত পেছন ঘুরল। আর যাকে দেখল তাকে দেখার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা ও। এখানে আশিসকে দেখতে পাবে সেটা ভাবেনি ও। আশিসের চোখ অরুমিতার দিকে পরতে ওর হাসিমুখে অন্ধকার নেমে এলো। স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা ওও আশা করেনি। অরুমিতা ঠোঁট কামড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তীব্র আর স্নেহার দিকে তাকাল ওরাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বলল,

” কীরে তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে আয়।”

আদ্রিয়ানের ডাকে আশিসের হুস এলো ও নিজেকে সামলে নিয়ে নিচে নেমে এলো। অরুমিতাও লম্বা দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। তীব্র একটু রেগে আসতে নিলেই স্নেহা হাত ধরে ফেলে মাথা নেড়ে না বলল। আদ্রিয়ান আশিসের সাথেও ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। তিনজনেই এমন ভাব করল যেন চেনেই না আশিসকে। অরুমিতার এরকম ব্যবহারে অবাক হল আশিস। এভাবে পুরোপুরি না চেনার ভান করতে পারল?

সকলের মিলে আড্ডা দিয়েই গোটা সন্ধ্যা পার করল। অরুমিতা ভালো একটা মুডে এখানে এসেছিল ঠিকই কিন্তু এখন আর সেই মুড বা মানসিকতা নেই ওর। তবুও বাইরে দিয়ে সবার সাথেই হেসে কথা বলছে। অনিমা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও এখন কিছু বলল না পরে জিজ্ঞেস করে নেবে তাই। এদিকে আশিসও এখন আর ঐরকম হৈ হুল্লোড় এর মুডে নেই। অরুমিতা যে এভাবে ওকে না চেনার ভান করবে ও ভাবেনি। কথায় কথায় তীব্র বলল,

” ভাইয়া আপনার ফ্যানস রা তো আপনার বিয়ের জন্যে অপেক্ষায় আছে। বিয়ে কবে করবেন?”

জাবিন বলল,

” আরে ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে সে বিয়ের জন্যে রাজি। এখন শুধু স্বয়ম্বরার বরমালা পরানো বাকি।”

স্নেহা এক্সাইটেড হয়ে বলল,

” তাই নাকি কে সেই স্বয়ম্বারা। ফিক্সট আছে নাকি আমরা খুঁজে দেব।”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেখো খুঁজে পাও কি-না। স্বয়ম্বরার রাজকুমারের ওপর দয়া হোক, রাজকুমারও কুমার উপাধি থেকে মুক্তি পাক।”

সবাই হেসে দিলো আদ্রিয়ানের কথায়। আর অনিমাতো লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতেও পারছেনা। এভাবে বলতে আছে বুঝি? ছেলেটা সবসময় এতো লজ্জায় কেন ফেলে ওকে?

বেশ অনেকটা সময় আড্ডা দেওয়ার পর ডিনারের পরে ওদের বিদায় দেওয়া হল। আদ্রিয়ানের ড্রাইভার ওদের পৌছে দিয়েছে যার যার বাড়িতে।

____________

চৌধুরী বাড়িতে সকালবেলা রঞ্জিত চৌধুরী রোজকার মতই খবর দেখতে দেখতে চা খাচ্ছিলেন। চা খেতে খেতে স্ত্রীকে হাক দিয়ে দ্রুত নাস্তা বানাতে বলল কারণ ওনাকে পার্টি অফিসে যেতে হবে। এরমধ্যেই কবির শেখ এসে হাজির হলেন ঐ বাড়িতে। এসে সোফায় বসতেই রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,

” কী ব্যাপার? এতো সকাল সকাল?”

” দরকারি কথা ছিল।”

চিন্তিত গলায় বললেন কবির শেখ। এদিকে চোখ ডলতে ডলতে নিচে নেমে এলো রিক। অনেকরাত অবধি ড্রিংক করেছে। নেশা এখনও কাটেনি ওর। অনিমা ছাড়া সবটাই ওর কাছে অর্থহীন লাগছে। টলমলে পায়ে কিচেনে গিয়ে দেখে মিসেস লিমা রান্না করছে আর স্নিগ্ধা হেল্প করছে। রিক গিয়ে ভাঙা গলায় বলল,

” সিগ্ধু কফি নিয়ে আয় তো।”

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” পারবোনা। এত কষ্ট করে কফি বানিয়ে নিয়ে যাবো তারপর তুমি সেই কফিরই নিন্দা করবে। তোমার নীলপরি এলে তারপর খেও। আর না হলে নিজে বানিয়ে খাও।”

” এত বেশি কথা বলিস কেন? চুপচাপ নিয়ে আয়।”

বলে বেড়িয়ে এল কিচেন থেকে কারণ ও জানে স্নিগ্ধা নিয়ে আসবে। রিক ওপরে উঠতে নিলেই রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

” রিক বস কথা আছে।”

রিক ভ্রু কুচকে পেছন দিকে তাকাল, তারপর সিঙ্গেল সোফায় বসল। রঞ্জিত চৌধুরী বলল,

” পার্টি জয়েন কবে করছ?”

রিক ভ্রু কুচকে রেখেই বলল,

” কীসের পার্টি?”

” আমাদের পার্টি।”

রিক অবাক হয়ে বলল,

” কিন্তু ড্যাড আমিতো হসপিটাল জয়েন করব। ইউ নো দ্যাট।”

রঞ্জিত চৌধুরী এবার একটু রাগী কন্ঠে বললেন,

” দেখো জেদ দেখিয়ে ডাক্তারি পড়তে চেয়েছো পড়িয়েছি। এখন আমি যা বলব তাই হবে। হসপিটাল জয়েনের দিন পেরিয়ে যাচ্ছেনা আপাতত তুমি পার্টি জয়েন করছ এটাই ফাইনাল।”

” ড্যাড অনি..”

” লোক খুঁজছেতো? পেয়ে যাবে। কথা বাড়িওনা।”

রিকের মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। রিক দাঁতে দাঁত চেপে মামার দিকে তাকাল। কবির শেখ এমন একটা মুখ করলেন যেন কিছুই জানেন না। রিক উঠে চলে গেল। কবির শেখ রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ওই মেয়েটাকে যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে মেরে ফেলতে হবে, এবার আর ওসব পাচার-টাচার এর ঝামেলায় জড়াবেন না। কোনভাবে যদি বাবাই ওকে পেয়ে যায় আর ও সব সত্যি যদি বাবাই কে বলে দেয়। সেদিন কিন্তু রিক বাবা বা মামা বলে আমাদের ছেড়ে দেবেনা। আর ও ওর আসল রুপে আসলে কী করতে পারে আমাদের চেয়ে ভালো কে জানে?”

রঞ্জিত চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। কবির যা বলেছে তা ঠিক। দ্রুতই কিছু একটা করতে হবে।

____________

অনিমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুখের ওপর কারো গরম নিশ্বাস পরতেই নড়ে উঠল ঘুমের ঘোরে। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বোধগম্য হতে চমকে তাকালো। সামনে তাকিয়ে চেঁচাতে গেলে লোকটা ওর মুখ চেপে ধরে বলল,

” চুপ! আমি! চেঁচাচ্ছো কেন? সবাই চলে আসলে মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত।”

অনিমা বুঝল এটা আদ্রিয়ান তাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল, সাথে বিরক্তও হল। আদ্রিয়ান মুখ ছাড়তেই ও উঠে বসে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলল,

” আপনি একদিন আমাকে হার্ট অ‍্যাটাক করিয়ে মারবেন। এমন করে কেউ?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে অনিমাকে কোলে তুলে নিল। অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাটতে লাগল। অনিমা এতো করে এতকিছু জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আদ্রিয়ানের কোন উত্তর নেই। ও অনিমাকে সোজা ছাদে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পরল। অনিমা দেখল মাদুর পাতা, গিটারও আছে তারমানে বাবু সব প্লান করেই রেখেছিল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এসব কী?”

আদ্রিয়ান একটু বাচ্চামো টাইপ আচরণ করে বলল,

” তো কী করব? সারাদিন তুমি ভার্সিটি, জাবিন, স্টাডি এসব নিয়ে কাটিয়ে দাও। সার্ভেন্টদের সাথেও কত সময় কাটাও তুমি। অথচ আমার সাথে? হাহ্। জানো আমি এই বাড়ির সবচেয়ে অবহেলিত একটা প্রাণী? তাইতো রাতের বেলা তুলে নিয়ে এলাম। এইসময়টাই তোমাকে একা পাই। আর এখন সবাই ঘুমিয়ে আছে। তাই তুমি বাহানা দিয়ে যেতেও পারবেনা।”

অনিমা ঠোঁট চেপে একটু হাসল। তারপর বলল,

” আমি আসার আগেও তো অাপনি একা থাকতেন। তখন কীভাবে চলত?”

আদ্রিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” ছোটবেলা থেকে একা থাকতে আমার ভালোলাগত। একদম বাচ্চা বয়সে আলাদা রুমে থাকা শুরু করি। একা একা বসে বসে গান প্রাকটিজ করাতেই আমার শান্তি ছিল। গান সাথে থাকলে আমার আর কিচ্ছু দরকার ছিলোনা কাউকে না। কিন্তু তুমি আসার পর আমি একাকিত্বকে ভয় পেতে শুরু করেছি। এখন আমার শুধু গান দিয়ে হয় না, সাথে তোমাকেও চাই। তুমি ছাড়া আমিটাকে আমার কেমন যেন সুর ছাড়া গানের মত লাগে। একদম পানসে।”

অনিমা অাদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হেসে চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিয়ান কিছু বলল না। অনেকটা সময় নিরবতার পর অনিমা বলল,

” একটা গান শোনাবেন?”

আদ্রিয়ান হেসে তাকাল অনিমার দিকে। এতোদিনে আজ প্রথম অনিমা ওর কাছে গান শুনতে চাইছে তাই। যদিও আদ্রিয়ান যখন প্রাকটিজ করে অনিমা লুকিয়ে লুকিয়ে শোনে যেটা আদ্রিয়ান জানেনা। আদ্রিয়ান গিটারটা নিজের কোলে নিয়ে অনিমার দিকে তাকাল। অনিমা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গিটারে টুংটাং করে সুর তোলার পর আদ্রিয়ান গাইতে শুরু করল

ক্রমশ এ গল্পে আরো পাতা জুড়ে নিচ্ছি
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি

তোমায় ছোঁবে বলে, আদর করবে বলে
উড়ে উড়ে আসে এলোমেলো কিছু গান
ডেকে যায় তোমার আঁচল ধরে

তুমি ছুঁলে জল আমি বৃত্ত হয়ে থাকছি
দু’মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি

তোমার নিশানাতে আমার এ হওয়াতে
উড়ে উড়ে আসে গুঁড়ো গুঁড়ো কিছু নীল
ডেকে যায় তোমার আকাশ জুড়ে

ক্রমশ এ গল্পে আরো পাতা জুড়ে নিচ্ছি
দু মুঠো বিকেল যদি চাও ছুঁড়ে দিচ্ছি
আরো কিছুক্ষণ যোগাযোগ ধরে রাখছি
আঙুলে আঙুল যেন ভুল করে ডাকছি
এ ছেলেমানুষী তুলি দিয়ে আঁকছি..

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে