বন্ধন পর্ব-৮(শেষ)

0
1516

#বন্ধন
পর্ব-৮(শেষ)
#tani_tass_ritt

অভ্র সোফায় বসে বসে বিকেলের কথা ভাবছে।তার মাথাই কাজ করছেনা।
ফ্ল্যাশব্যাক
খামটাতে মাহাদির নাম দেখে অভ্র বেশ অবাকই হলো।যেই ছেলের সাথে দেখা করতে সে উঠে পরে লেগেছিলো সে নিজ থেকেই তাকে চিঠি পাঠিয়েছে।ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার।অভ্র চিঠিটা খুললো।
অভ্র,
আমি তোমাকে কোনো সম্বধন করতে চাচ্ছিনা।আমি জানি তোমার আমার থেকে অনেক কিছুই জানার আছে।তোমার জীবনটা এলোমেলো করায় একটা বড় ভূমিকা আমারও আছে।যদি পারো আমাকে মাফ করে দিও।সেদিন বিয়েটা আমি ই ভেঙে ছিলাম।এখানে রাইমার কোনো দোষ নেই।বিয়ে না করার পিছের কারণ টা আমি তোমায় বলতে পারবোনা।কিছু কথা না জানাই ভালো।
আমি তোমাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই।বিয়েটা যখন হয়ে গিয়েছে প্লিজ মেনে নাও।রাইমা তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে এটাও সত্যি। ভেবোনা এটা আমার বিয়ে ভাঙার কারণ।জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে নাকি উপরওয়ালা আগে থেকেই ঠিক করে রাখে।ধরে নাও তোমার ভাগ্যেও রাইমা ছিলো।আমি তো শুধু মাত্র উছিলা।
আমাকে কোনোদিন খোঁজার চেষ্টা করোনা।আমি তোমাদের কারো সামনেই আসতে চাইনা।দূর থেকে দুয়া করি তোমরা অনেক সুখী হও।
ইতি
মাহাদি।

বর্তমানে,
মাহাদির চিঠির কথা গুলো অভ্রের মাথার থেকে যাচ্ছেইনা।বারবার শুধু এটাই মনে হচ্ছে এর বাহিরেও যেনো অনেক কিছু আছে যা তার অজানা।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই সে তিতলির চিৎকার শুনতে পায়।অভ্র তাড়াতড়ি তিতলির রুমে যেয়ে দেখে তিতলি রাইমার উপর চিল্লাচ্ছে।তিতলি চিৎকার করার মেয়ে না।অভ্র ভেবে পায় না কি এমন হলো যে তিতলি এতোটা চিৎকার করছে।
অভ্র তিতলির কাছে যেয়ে বলে, “তিতলি প্লিজ শান্ত হও।কি হয়েছে তোমার?”
তিতলি চিৎকার করে বললো,”তুমি তোমার বউকে বলো আমার পাসপোর্ট ভিসা ফেরত দিতে।কিছু বলি না দেখে একদম মাথায় উঠে গিয়েছে।”
রাইমা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।
তিতলির কথার আগা মাথা অভ্র কিছুই বুঝছে না।
রাগে তিতলির হাত পা কাঁপছে।এতোক্ষনে সালমা বেগম এবং আফজাল সাহেবও এসে পরেছে। তারাও চেষ্টা করছে তিতলিকে শান্ত করতে। কিন্তু পারছেনা।এর আগে কোনোদিনো তারা তিতলির এমন অগ্নি রূপ দেখেনি।
“তোমার বউকে পারলে পাগলের ডাক্তার দেখাও।মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গিয়েছে।আমার পাসপোর্ট ভিসা লুকিয়ে আমাকে বলে নাকি তোমাকে বিয়ে করতে।আমরা দুজন নাকি বোনের মতো থাকবো।”
তিতলির কথা শুনে অভ্র শক খায়।
তিতলি রাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,”দেখো আমি তোমার মতো এমন আজাইরা নাটক পারিনা।তোমার এইসব নাটক আমার সাথে দেখাতে আসবেনা।তোমার যা চাওয়া ছিলো তা পেয়েছো তো।প্লিজ আমাকে এখন মুক্তি দাও।তোমার এই লোক দেখানো দরদের আমার দরকার নেই।কি ভেবেছো সব তোমার মন মর্জি মতো হবে? আমরা কি তোমার খেলার পুতুল? পাপেট শো করাচ্ছো আমাদের দিয়ে?”
তিতলি এবার কান্না করে দিলো। এইদিকে রাইমা একটা কথাও বলছে না।হয়তোবা নিজের পাপের বোঝা সে আর নিতে পারছেনা।দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তার।

“অভ্রদা ওকে বলো এখান থেকে চলে যেতে।আমার থেকে সব তো নিয়েই গিয়েছে।আমার সব থেকে পছন্দের মানুষটাকেই তো আমি ওকে দিয়েছি।এখন আমাকে একটু শান্তি দিতে বলো। আমি আর পারছিনা।এই বাসায় আসার পর থেকে ও আমায় কম কথা শুনায় নি।আমি তো সব ছেড়ে চলেই যেতে চাচ্ছি।তাহলে কেনো ও এখন এই নোংরা নাটক করছে? কেনো তোমাকে পাওয়ার লোভ দেখাচ্ছে?ওকে বলে দাও আমার মাথায় একবার যদি তোমাকে পাওয়ার ভুত চেপে বসে আমি কিন্তু সব উলোটপালোট করে দিবো।প্লিজ ওকে যেতে বলো এখান থেকে।”
তিতলি কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলো।মেয়েটার কষ্ট দেখে উপস্থিত সবাই কাঁদছে।আফজাল সাহেবের মনে হচ্ছে সে যে বড় পাপ টা করেছে এর কোনো ক্ষমা নেই।

অভ্র সবাইকে ইশারা করলো চলে যেতে।সবাই চলে গেলেও রাইমা দরজার সামনে যেয়ে থেমে গেলো।পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো তিতলি অভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।রাইমা আর এক মূহুর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

অভ্র তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেয়েটার কান্না যেনো থামছেইনা।এতোদিনের চাপা কষ্ট ব্লাস্ট হয়েছে আজকে।
“তুমি আমার ভাগ্যে যখন ছিলেই না তাহলে আল্লাহ কেন তোমার সাথে আমার দেখা করালো? ”
অভ্র স্তব্ধ হয়ে গেলো।এর উত্তর যে সে নিজেও খুঁজছে।
“আমি তো আল্লাহর কাছে শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম। আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো যে তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে ঐ রাইমাকে দিয়ে দিলো।আচ্ছা রাইমা কি তোমায় বেশি ভালোবাসে আমার থেকে?ও তোমায় কিভাবে ভালোবাসে যে ঐটা আমি পারলামনা?”
তিতলি কি আবোলতাবোল বকছে সে নিজেও জানেনা।মেয়েটার প্রতিটা কথায় অভ্রের বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
“প্লিজ শান্ত হও তিতলি।”
“কেন শান্ত হবো?শান্ত হয়ে আমি পেয়েছিটা কি?বাবা মাকে হাড়িয়েছি। তোমাকে হাড়িয়েছি।আমি কি হাড়ানোর খাতায় নাম লিখিয়েছি নাকি?”
অভ্র কোনো কথা বলছেনা।মেয়েটাকে বলার সুযোগ দিচ্ছে।
“বিয়ে কি ছেলে খেলা নাকি? আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভেঙে কিভাবে নিজের সংসার সাজাতে পারি? আমি এতোটাও সেল্ফিস নউ অভ্র।আমি তো মেনেই নিয়েছি তুমি আমার ভাগ্যে কোনোদিন ছিলে না। তাহকে কেন ও এখন নাটক করছে? তোমাকে পাওয়ার লোভ যে বড্ড বেশি আমার।”

“প্লিজ পুতুল চুপ কর।আর কিছু বলিসনা।আমি এবার মরে যাবো।”
বহুদিন পর অভ্রের মুখে পুতুল ডাক শুনে তিতলির কেমন যেনো একটা শান্তি লাগছে।
অভ্র তিতলিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তিতলির ঘুমের প্রয়োজন।তা না হলে মেয়েটা অসুস্থ হয়ে যাবে।
অভ্র তিতলির পাশেই বসে আছে।মেয়েটাকে ঘুম পারানোর চেষ্টা করছে।
“জানোতো আমি সবসময় আমাদের বিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।দেখতাম আমি বউ সেজে বসে আছি।কিন্তু তোমাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা।এখন বুঝতে পারি এটা কেন দেখতাম।তুমি তো আমার কপালেই ছিলেনা।” বলেই তিতলি খিলখিল করে হাসতে লাগলো।আবার মূহুর্তেই কেঁদে ফেললো।
তিতলির কষ্ট দেখে অভ্রের ভেতরটা হাহাকার করছে।
“তুমি ঘুমাও।”
“তোমরা সবাই খারাপ, তোমরা সবাই খারাপ। ” বকে প্রলাপ বকতে লাগলো।একটা সময় ঘুমিয়ে পরলো।মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতে পেরে অভ্র তিতলির পাশ থেকে উঠে গেলো।দরজা অব্দি গিয়ে আবার ফিরে এলো।তিতলির কপালে চুমু দিয়ে ধীরে ধীরে বললো,”আমাকে মাফ করে দিস।আমি তোর কষ্টের কারণ।তুই আমার থেকে অনেক দূরে চলে যা রে।আমি তোর জন্য একটা অভিশাপ। ”
অভ্র এক ধ্যানে তার ঘুমন্ত পুতুল্টার দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ সে মন ভরে দেখবে।হয়তো কখনো আর এভাবে দেখা হবেনা।

এইদিকে অনেক্ষন ধরে মাহাদির ফোন বেজে যাচ্ছে।মাহাদি ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।মহারানী নামটা ভেসে উঠছে বারবার।কিন্তু সে রিসিভ করবেনা।আর কোনো কথাই যে তার বাকি নেই।মাহাদি মনে মনে বললো,”তুমি জিতেও হেরে গেলে রাইমা।আমি কোনোদিনো তোমার খারাপ কামনা করতে পারবোনা।আমার ভালোবাসা আমাকে তোমার খারাপ চাওয়ার পারমিশন দেয়না।তাই হয়তো তোমার মিথ্যেটা আমি অভ্রকে বলতে পারিনি।আর আমি জানি তুমি নিজেও কোনোদিন পারবেনা বলতে।এই সাহসটুকু তোমার কোনোদিনো হবে না।এইসব কিছুর মাঝে সব থেকে মজার ব্যাপার জানো কি, তোমার মনে যতই অভ্র থাকুক না কেনো! তোমার মস্তিষ্কে সব সময় আমি ই থাকবো।তুমি কখনো চাইলেও আমাকে ভুলতে পারবেনা।দিন শেষে তোমার আমার কথা মনে পরবেই।যে কেউ একজন ছিলো যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো।তুমি নিজের অজান্তেই আমার সাথে এমন এক #বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছো যেখান থেকে বের হওয়ার সাধ্য তোমার নেই।”

এইদিকে অভ্র ঘরে ঢুকে দেখলো রাইমা ফ্লোরে বসে আছে দু হাটুর মাঝে মুখ গুজে।অভ্র ভেবে পাচ্ছেনা ভাগ্য তার সাথে এমন খেলা কেন খেললো।সব কিছুর মাঝে সে অসহায়।না পারছে এদিক যেতে।আর না পারছে ওদিক যেতে।অভ্র রাইমার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলো।কিছু একটা ভেবে বললো,”তুমি কি চাও আমাকে একটু বলবে? ”
রাইমা এখনো আগের মতোই বসে আছে।
“আজ তিতিলিকে ওগুলো বলার মানে কি? তোমার কি কোনো সেন্স নেই?কিসব বলছিলে এগুলো?”
রাইমা মুখ তুলে অভ্রের দিকে তাকালো।রাইমার মুখ খানা দেখে অভ্রের মায়া হলো।কান্নাকাটি করে কি হাল করেছে নিজের। অভ্র কাকে দোষ দিবে আর কাকে দিবেনা বুঝতে পারছেনা।অভ্র ভাবছে মাহাদির কথা যদি সত্যি হয় তাহলে এখানে রাইমারও তো দোষ নেই। মেয়েটাও তো পরিস্থিতির স্বীকার।একদিকে তার ভালোবাসার মানুষ।অন্যদিকে রাইমা।যতই হোক অভ্র তো রাইমার সাথে তার বিয়েটাকে অস্বীকার করতে পারবেনা।এইসব ভাবতে গিয়ে অভ্রের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।
হুট করেই রাইমা অভ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো।আচমকা হওয়ায় অভ্র কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো।
“আমি জানি আমি অনেক খারাপ।কিন্তু আমিও যে ভালোবাসার কাঙাল।তোমার থেকে ভালোবাসা আমি কোনোদিন পাবোনা এটা আমার বুঝতে বাকি নেই।কিন্তু আমার থেকে এমন মুখ ফিরিয়ে নিও না।তোমাকে ছাড়া থাকা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।তুমি চাইলে তিতলিকে বিয়ে করতে পারো।আমি কিছু বলবোনা।কোনোদিন ঝামেলাও করবোনা।কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেয়ার কথা মাথায় এনো না প্লিজ।আমি তোমাদের মতো মহান হতে পারবোনা।তোমরা তোমাদের ভালোবাসা বিসর্জন দিলেও আমি পারবোনা।আমি তো তোমার বউ তাইনা।অনেক দয়া করেছো তোমরা আরেকটু করো প্লিজ।”রাইমা বাচ্চাদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে।রাইমা সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা অভ্রের নেই।তাই অভ্র মিথ্যে সান্ত্বনাও দিতে পারবেনা।

এর মাঝে বেশ কিছু দিন কেটে গিয়েছে।তিতলি পুরোপুরি প্রস্তুত কানাডা যাওয়ার জন্য। এখন শুধু সে প্রহর গুনছে।আর কদিন বাদেই তার ফ্লাইট।সেদিনের পর থেকে তিতলি একবারের জন্যও অভ্রের সাথে কথা বলেনি।অভ্র ও বলার চেষ্টা করেনি।রাইমাও এখন চুপচাপ থাকে।

একদিন রাতে অভ্র লেপটপে কাজ করছিলো।তখনি তিতলি অভ্রের রুমে আসে।অভ্রকে তিতলিকে দেখে বেশ অবাক হয়।তিতলি কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই বলে, ” আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”
রুমে রাইমাও উপস্থিত ছিলো।তিতলির কথা শুনে রাইমা নিজ থেকেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।তিতলি অভ্রের পাশে বসতে বসতে বলে,”কেমন আছো?”
অভ্র লেপটপ টা অফ করে বলে,”যেমনটা দেখছো।”
তিতলি মুচকি হাসে।আজ তার অভ্রের পাশে বসতেও কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে। সময়ের সাথে অনেক কিছুই পালটে গিয়েছে।
তিতলি মুচকি হেসে বললো,”আর দুদিন পর আমার ফ্লাইট।”
“হুম জানি।”
“কিছু কথা বলি?”
“আমার থেকে পারমিশন চাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
“তুমি রাইমাকে একটা সুযোগ দাও।”
অভ্র চুপ।
“আমি জানি আমি বলার কেউ না।তবুও বলছি।আমরা যতযাই বলি তুমি এবং রাইমা স্বামী স্ত্রী।এর উপর কোনো সত্যি নেই।বিয়েটা যেভাবেই হোক। এটা কিন্তু পবিত্র সম্পর্ক।এই বন্ধন সকল বন্ধন কে হার মানায়।তা না হলে দেখো এখনো তোমরা কিন্তু একসাথেই আছো।কেউ কিন্তু তোমাদের বলবেনা আলাদা হতে।আর বিয়েটা তো ছেলে খেলা নয় ।চাইলেই কি আমরা এই বন্ধন উপেক্ষা করে বের হতে পারবো! কখনোই না।আমার তোমার যে সম্পর্ক ছিলো ঐটা ভাঙার কথাই ছিলো বলে ভেঙেছে ধরে নাও।এক জীবনে সব চাওয়া যে পাওয়া যায়না।তুমি তোমাদের সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দাও।”
অভ্র তিতলির দিকে তাকিয়ে বললো,”খুব বড় হয়ে গিয়েছিস তুই।”
“বড় যে আমায় হতেই হবে।”
দুজনের কেউই কোনো কথা বলতে পারেনা।দুজনেই ব্যস্ত নিজেদের ফিলিংস লুকাতে।

★★★
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে নুহাশ তিতলি।নুহাশের মন আজ বড্ড খারাপ।
“তুমি আমায় এমন ছ্যাকা দিয়ে চলে যেতে পারলে?”
তিতলি হেসে দিলো।
“দুয়া করি তুমি একটা সুন্দরী বউ পাও।”
নুহাশ গাল ফুলিয়ে বললো,”তুমি বউ হলেই তো হতো।”
“আমার থেকে ভালো বউ পাবে তুমি।”
“যদি না পাই তাহলে ঐ কানাডা যেয়েই তোমাকে বিয়ে করে আনবো কিন্তু। ”
তিতলি হেসে বললো,”আচ্ছা করিও।”
“ধন্যবাদ। তুমি আমাকে জীবনের মানে বুঝিয়েছো।নিজের জন্য ভাবতে শিখিয়েছো।তুমি না হলে হয়তো আমি আবার বড় ভুল করে বসতাম।”
নুহাশ মুখ বাকিয়ে বললো,”থাক আর বলতে হবেনা।বেশি উপকার করতে গিয়ে নিজেই বাশ খেয়ে গেলাম।”
তিতলি নুহাশকে জড়িয়ে ধরলো।নুহাশের ছোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।
নুহাশের থেকে বিদায় নিয়ে তিতলি তার খালা খালুর কাছ থেকে বিদায় নিলো।
দূরে অভ্র দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।সে তিতলির সামনে আসার সাহস পাচ্ছেনা।কিন্তু অভ্র তিতলির চোখকে ফাকি দিতে পারেনি।তিতলি দৌড়ে অভ্রের সামনে যেয়ে দাড়ালো।অভ্র কিছু না বলেই তিতলিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। এয়ারপোর্টের সব মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা।
“এই ছেলে কান্না থামাও।সবাই দেখছে তো।”
অভ্র কান্না থামিয়ে হাসার চেষ্টা করলো।কিন্তু সে খুব বাজে ভাবে ব্যার্থ হলো। হঠাৎ তিতলির কি হলো সে অভ্রকে বললো টিশার্ট খুলতে।অভ্র পুরোই ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
“উফ জলদি খুলো।”
অভ্র বোকার মতো সবার সামনে টিশার্ট টা খুলে দিলো।তিতলি টিশার্ট টা নিয়ে আর এক মূহুর্ত দেড়ি করলোনা।দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।দেড়ি করলে যে সে আর আসতে পারবেনা।অভ্রের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানো যে বেশ কঠিন তিতলির জন্য।
★★★★★★★
কেটে গিয়েছে প্রায় ৩ টি বছর।এর মাঝে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে আবার অনেক কিছু আগের জায়গায়ই রয়ে গিয়েছে।
ইদানিং রাইমার শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছে।। চোখের নিচেও কালি পরেছে।নিজের প্রতি যত্ন নিতে তার প্রচন্ড অনিহা।অভ্র যদি যত্ন না নেয় তাহলে হয়তো তার অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে যেতো।
অভ্র ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রাইমা আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।অভ্র রাইমার পাশে গিয়ে দাড়ালো।
“কি দেখছো ওমোন করে?”
“দেখো আমি কেমন মোটা হয়ে গিয়েছি।”
“আরে বাবা তুমি প্রেগন্যান্ট।৮ মাস হতে চললো।এখন তো একটু মোটা হবেই।আর তোমাকে কিন্তু বেশ কিউট লাগে।”
রাইমা উঠতে উঠতে বললো,”কিউট না ছাই।”
অভ্র মুচকি হাসলো।
“অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তো। এখন শুয়ে পরো।”
রাইমা এখন রাতে ঘুমোতে পারেনা। বেবি কন্সিভ করার পর থেকেই তার মাঝে অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিয়েছে।রাতে ঘুম হয়না।মেজাজ খিটখিটে থাকে।
“তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
রাইমা চোখ বন্ধ করে আছে।কিন্তু তার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে।তার কেন যেনো মনে হয় বেশি সময় নেই আর। নিজের পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে বেড়াতে বড্ড হাপিয়ে উঠেছে সে।সবাইকে ঠকিয়ে যে ভালো থাকা যায় না এটা রাইমা হারে হারে টের পাচ্ছে।অভ্র তাকে কাছে টেনে নিলেও কোথাও না কোথাও খুব বড় একটা ফাঁকা আছে।হয়তো অভ্রের শুধু মায়া কাজ করে তার প্রতি।একসাথে থাকলে তো কুকুর বিড়ালের উপরও মানুষের মায়া হয়।আর সে তো একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ।তাই হয়তো অভ্র তার থেকে মুখ ফেরাতে পারেনি। এইসব ভাবতে ভাবতেই রাইমা ঘুমিয়ে পরলো।
অভ্র বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো।মাঝে মাঝে তার মনে হয় জীবনটা এমন না হলেও পারতো।তিতলি যাওয়ার পর থেলে সে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে রাইমাকে মেনে নিতে।রাইমার সাথে সংসার করতে।অনেকাংশে সে সফল ও হয়েছে।কিন্তু দিন শেষে যে কোথাও একটা শুন্যতা রয়েই গিয়েছে।তা চাইলেও কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।কিন্তু তার মনে রাইমার জন্য যে বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে সেটাও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
তিতলির সাথে এখন অভ্রের যোগাযোগ খুব কম হয়।শেষ বার কথা হয়েছিলো যখন অভ্র জানতে পেরেছিলো সে বাবা হতে চলেছে।সর্বপ্রথম খবর টা তিতলিকেই দিয়েছিলো।তিতলি সেদিন কি খুশিটাইনা হয়েছিলো।মেয়েটার খুশি দেখে অভ্র নিজেও কিছুটা অবাক হয়।একটা মানুষ এতোটা ভালো কিভাবে হতে পারে সে নিজেও জানেনা।

★★★★★
কমাস হলো তিতলি খুব ভালো একটা জব পেয়েছে। সকালে অফিস থাকে।বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়।এভাবেই তার জীবন চলছে।অনেকটা যান্ত্রিক জীবন হয়ে গিয়েছে তার।তবুও সে বেশ সুখী বলেই নিজেকে মনে করে।বিয়ে নিয়ে আপাতত সে ভাবছে না।তিতলি এখন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে জীবনে কোনো কিছুই প্ল্যান করে হয়না। জীবন পুরোই আনপ্রেডিক্টেবল।
এইদিকে নুহাশও বিয়ে করেছে দুবছর হলো।নিজের মনের মতো মেয়ে পেয়েছে।তিতলির সাথে এখনো তার যোগাযোগ আছে।নুহাশের স্ত্রী নিম্মি সব টা জানে তিতলি এবং নুহাশের ব্যাপারে।কিন্তু এটা নিয়ে তার বিশেষ কোনো মাথা ব্যাথা নেই।বরং নুহাশের থেকে নিম্মির সাথে তিতলির সম্পর্কই বেশ ভালো।
★★★★★★
আজ সকাল থেকেই রাইমার কেমন যেনো অশান্তি লাগছে।অভ্রকে আজ অফিসও যেতে দেয়নি।এক মূহুর্তের জন্যও অভ্রকে কাছ ছাড়া করছে না রাইমা।
“মাহাদির সাথে তোমার যোগাযোগ আছে?”
তাদের বিয়ের পর হয়তো এই প্রথম রাইমা মাহাদির কথা নিজ থেকে জিজ্ঞেস করেছে অভ্রকে।অভ্র কিছুটা অবাক হয়ে বললো,”আজ হঠাৎ মাহাদির কথা জিজ্ঞেস করলে?শুনেছি বিয়ে করে দেশের বাহিরে স্যাটেল।”
।মাহাদি বিয়ের আগের দিন তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিলো সে বিয়ে করছে।ঐদিনের পর থেকে আর কখনো যোগাযোগ হয়নি।মাঝে মাঝে রাইমার খুব মনে পরে মাহাদিকে।তার ঠকানোর লিস্টে ছেলেটার নাম ও আছে।ভাবতেই রাইমা মলিন হাসি দিলো।
“অভ্র আমাকে একবার ভালোবাসি বলবে?”
অভ্র চুপ করে আছে।
“তুমি কোনোদিন আমাকে বলোনি।আজ একটু বলোনা।মিথ্যে হলেও বলো। ”
অভ্রের এখন মায়া লাগছে রাইমার এমন আবদার শুনে। অভ্র রাইমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ভালোবাসি।”
রাইমা চোখ বন্ধ করে অভ্রের ভালোবাসা অনুভব করার চেষ্টা করছে।

এইদিকে তিতলির মন টা কেমন যেনো আনচান করছে। তার মনে হচ্ছে খুব বড় কিছু একটা হবে।তাকে বাংলাদেশে যেতে হবে।কানাডা আসার পর থেকে কখনো এমন ফিল হয়নি তার।এই ফিলিংস বলে বুঝানোর মতো না।কেমন যেনো ছটফট করছে তার মন। চাইলেও শান্ত করতে পারছেনা।
তিতলি আর থাকতে না পেরে তার এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বললো, “যে করেই হোক তার জন্য টিকেট ম্যানেজ করতে।পারলে আজকেই সে দেশে যাবে।”এমন টা কেন করছে তিতলি এই ব্যাখ্যাও তার কাছে নেই।

রাত ২ টা বেজে ১৫ মিনিট।অভ্র ওটির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করেই রাইমার প্রচন্ড লেভার পেইন উঠেছে।অভ্র কোনো রকমে রাইমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।রাইমার এই অবস্থা দেখে সে নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছে।
ডাক্তার কে বের হতে দেখেই অভ্র দৌড়ে গেলো।
” ডাক্তার সব ঠিক আছে তো? রাইমা কেমন আছে? আর আমার বাচ্চা?”
“আপনার বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ।রাইমার এখনো অনেক উইক।তবে আমরা অবজারভেশনে রেখেছি।কিছুক্ষন পর মা মেয়ে দুজনকেই কেবিনে দেওয়া হবে।”
অভ্র মনে শান্তি পেলো।তার আর তর সইছেনা।

এইদিকে তিতলি প্লেনে বসে আছে।আর কিছুক্ষন পর ফ্লাই করবে।এতোবছর পর নিজের চিরচেনা দেশে যাচ্ছে কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে তার।তিতলির বারবার মনে হচ্ছে তার যাওয়াটা খুব দরকার।তার খুব কাছের কারো তাকে প্রয়োজন।এইসব ভাবতে ভাবতেই প্লেন ফ্লাই করলো।

অভ্র রাইমার পাশে তার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।
রাইমা বললো,”দেখেছো আমাদের মেয়ে হয়েছে।আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের মেয়ে হবে!”
অভ্র রাইমার কপালে চুমু খেয়ে বললো,”দেখো আমার আর তোমার মেয়ে।তুমি আমাকে আমার জীবনের সব থেকে বড় খুশি দিয়েছো।”
রাইমা মুচকি হাসলো।মনে মনে বললো,”একদিন আমি ই তোমার জীবন থেকে সব খুশি কেরে নিয়েছিলাম।”
রাইমা কেমন যেনো সব ঝাপসা দেখছে।তার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।কেমন যেনো শান্তির ঘুম। মনে হচ্ছে সে তার পাপের বোঝা থেকে মুক্ত হচ্ছে।রাইমা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অভ্র তিতলি এবং তাদের মেয়েটা খেলা করছে।বাহ! কি সুন্দর। এটা হয়তো তার অবচেতন মনের ভাবনা।ইশ! সত্যি ই যদি এমন হতো! নাহ আর তাকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।রাইমা তলিয়ে যাচ্ছে ঘুমের রাজ্যে।সকল বন্ধন ছিন্ন করে আজ সে মুক্ত হচ্ছে।

সমাপ্ত

(শেষটা কেমন লেগেছে জানাবেন।গঠন মূলক মন্তব্য করবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে