“বখাটে বউ”(পর্ব-৮)

0
2391

“বখাটে বউ”(পর্ব-৮)

যুথীর চিৎকার শুনে আম্মুসহ খালামনি আর ফুপীও দৌড়ে এলো। ওরা সবাই আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আম্মু যুথীকে বললো-
__”কি হয়েছে রে যুথী?”
যুথী এমন ভাবে হাপাতে শুরু করলো যেনো আমি তাকে খুন করছিলাম আর সে কোনো মতে বেঁচে গেছে। সে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে বললো-
__”খালাম্মা বন্ন আফায় পাগল হই গেছে।”
আম্মু অবাক হয়ে বললো-
__”কি করে বুঝলি?”
__”আফায় আমারে খুন করতি লাগছিল।”
আম্মু চোখ কপালে তুলে বললো-
__”কেনো?”
__”আফায় পেছনের দজ্জা দিয়া পলাইতে আছিল আমি ধইরালাইছি তাই।”
আম্মু বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমিও বড় বড় চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম-
__”এখন সামনের দরজা দিয়ে পালাবো। দেখি আমাকে কে আটকায়?”
তারপর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম-
__”কে আটকাবি আমাকে, সামনে আয়।”
আম্মু আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। রুমে ঢুকে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো-
__”আজ অব্দি একটা প্রেম ভালোবাসা করার মুরদ হয়নি তোর, পালিয়ে কোথায় যাবি আর কার সাথে যাবি পাজি মেয়ে?”
আমি চিৎকার করে বললাম-
__”একাই পালাবো। পালানোর জন্য আবার কামলা লাগে নাকি? রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো। দরকার হলে বনে জঙ্গলে বা মরুভূমিতে ঘুরবো তাও বিয়ে করবো না।”
__”আশে পাশে জঙ্গল আছে?”
__”যেখানে আছে সেখানেই যাবো।”
__”আর মরুভূমিতে ঘুরার জন্য তো তোকে আরব দেশে যেতে হবে তাহলে।”
__”দরকার হলে আরব দেশেই যাবো তাও আমি বিয়ে করবো না।”
__”চুপচাপ ঘরে বসে থাক। যদি বেশি তেড়িবেড়ি করিস তাহলে তার ফলাফল খুব খারাপ হবে কিন্তু বর্ণ।”
আমি চিৎকার করে বললাম-
__”ঘরে বসে থাকবো না। আমি পালিয়ে যাবো, সরো সামনে থেকে।”
__”বেশি কথা বললে তোকে ঝাটা থেরাপি দেবো। চুপ করে ঘরে থাক। বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন, তারা এসব শুনলে না জানি কি সব ভাববে! কোনো আওয়াজ করবি না বলে দিলাম।”
কথাটা বলেই আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো। হায়রে জীবনটা আমার বাংলা সিনেমা হয়ে গেছে রে! সেই সিনেমার ভিলেন আমার আম্মু আর যুথী। যুথী ঠিকই বলেছে, এখন আমার শাবনুরের হাল হয়েছে। যদি সিনেমা হতো তাহলে এখন একটা ভীষণ দুঃখের গান হতো।

পালানোর সুযোগ না পেয়ে আমি ফাঁসির আসামী হয়ে বিয়ে নামক ফাঁসি হবার জন্য রেডি হলাম। কি আর করা! বাধ্য হলাম ঐ ধেড়ে বাবুকে বিয়ে করতে, তবে এর শোধ বর্ণিতা নিয়েই ছাড়বে। কাউকে শান্তি দেবো না আমি। আজ থেকে সবার শান্তিকে ছুটি দিয়ে দিলাম।
বরযাত্রী এলো হেটে হেটে, এই ছিল বর্ণিতার কপালে খোদা তায়ালা! ভেউ ভেউ করে কেঁদেও কুল কিনারা না পেয়ে কবুল বলতেই হলো আমাকে। আমার মতো একটা মুক্তার গলায় ঐ বাবু বান্দরটাকে ঝুলিয়ে দিলো সবাই মিলে। আমি তো লুট গেয়া, বরবাদ হো গেয়া খোদা! দুই জন মানুষকে তারা জোর করে ধরে ফাঁসি দিয়ে দিলো। পাশের বাসাটা আমার শ্বশুরবাড়ি। এই দুঃখ কোথায় রাখবো আমি!

বিদায় লগ্নে আব্বুকে খুঁজে পেলাম না। আম্মুও আমার থেকে দূরে দূরে বিষণ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ যুথী দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__”ও বন্ন আফা গো, আপ্নে আমারে মাফ কইরা দিয়েন। কি করুম কন, আমি তো আপ্নেরে না দেইখা থাকতি পারি না। তাই পাশের বাড়িত বিয়া হইবো শুইনা আমি সেরাম খুশি হই ছিলাম। ভাবছিলাম দৈনিক আপ্নেরে দ্যাখতে তো পামু। তাই সবডির লগে হাত মিলাই ছিলাম।”
যুথীর কথা শুনে অবাক হলাম। মানুষের ভালোবাসার রং নির্যাস সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন হয়। একাক জনের ভালোবাসা প্রকাশের ধরন একাক রকমের, এর ভেতর থেকে ভালোবাসা নিংড়িয়ে বের করাটা খুব কঠিণ। যারা বের করতে পারে তারাই জিতে যায়। আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম-
__”আমার রুমে যতো কসমেটিকস আছে সব তুই নিস।”
সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__”আমার ওগ্লা কিচ্ছু লাগবো না আফা। আমি চাই আপ্নে সুখে থাকেন।”
__”পাগলি একটা।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমার বর বাবুর পিছু পিছু হেটে হেটে শ্বশুরবাড়ি গেলাম। কতটা হতভাগীনি আমি!
শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেই একটা মেয়ে আমার হাত ধরে আমাকে বাসর ঘরের বিছানায় বসিয়ে গেলো। সে চলে যাবার আগেই একদল মেয়ে এসে আমাকে ঘিরে বিছানার চার পাশে দাড়িয়ে হিহি শুরু করলো। শাড়ি গহনা পরে আমি আধমরা। এরা সবাই কখন যাবে কে জানে! চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। বেড সাজিয়েছে বেলি ফুল দিয়ে। এসব দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এমন ঘোড়ার ডিমের মূলা মার্কা বিয়েতে এত আয়োজনের কি দরকার ছিল? এখন আমাকে সিনেমা স্টাইলে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে হবে নাকি? থাকবো না বসে আর ঘোমটাও দেবো না। কে যেনো বললো, বর আসছে। এটা শুনে ওরা সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ওরা বের হয়ে যেতেই আমি আগে টান দিয়ে ঘোমটা খুললাম তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হলাম। কিসের বাসর টাসর হুম! মানি না আমি এ বিয়ে। আর মানি না ঐ বুড়ো বাবুকে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি বাবু রুমে দাড়িয়ে আছে। ঘোমটা ওয়ালা বউ বিছানায় খুঁজে ছিল কি না কে জানে! আমার এমন পোষাক দেখে সে একটু অবাক হলো মনে হয়। কিছু না বলে সে একটা বই হাতে সোফায় শুয়ে পড়লো। তাকে দেখে আমার মেজাজ ডাবল গরম হয়ে গেলো। ঢং দেখিয়ে বই পড়া হচ্ছে। যতো সব ঢংগি, না না মেল ভার্সনে ঢংগা। বললাম-
__”আমি এখন ঘুমাবো।”
কোনো জবাব নেই। মনে হচ্ছে আমার কথা সে শুনতেই পায়নি। গায়ে আগুন ধরে গেলো। এখন তো বিয়ে করেই ফেলেছি, এখনো কি আমাকে সবার আত্মা ভাবতে হবে নাকি? ঘাড় মোটকে সবাইকে আত্মাগিরি দেখাতে ইচ্ছে করছে। চিৎকার করে বললাম-
__”শুনতে পাচ্ছেন? আমি এখন ঘুমাবো।”
সে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হবার ভান করে বললো-
__”আমাকে বলছেন?”
__”না, আকাশ বাতাসকে বলছি।”
__”আচ্ছা বলতে থাকেন, যদি তারা শোনে।”
__”একদম ন্যাকামী করবেন না। এটা আমার সহ্য হয় না।”
__”আমি নই আপনি ন্যাকামী করছেন। ঘুমাবেন ঘুমান, কে বারণ করেছে?”
__”লাইট জ্বালনো থাকলে ঘুমাবো কি করে?”
__”এভাবেই ঘুমানোর অভ্যেস করেন। আমি অনেক রাত জেগে বই পড়ি।”
__”অতীত ইতিহাস বাদ দিন। বর্তমান হলো নাচতে নাচতে বিয়ে করেছেন তাই মাশুল তো দিতেই হবে আপনাকে।”
__”কে নাচতে নাচতে বিয়ে করেছে? আপনার মতো বখাটে মেয়েকে কোনো ছেলে নাচতে নাচতে বিয়ে করবে না আর আমিও করিনি।”
__”কিহ আমি বখাটে মেয়ে?”
__”সন্দেহ আছে?”
আমি কিছু না বলে বেড থেকে নেমে টেবিল থেকে পানির বোতল হাতে নিলাম তারপর সব পানি ওর গায়ে ঢাললাম। সে লাফ দিয়ে উঠে বললো-
__”এই এই আপনি এটা কি করলেন?”
__”ভিজিয়ে দিলাম।”
__”আপনি যে বখাটে সেটা তো দারুণ ভাবে প্রমান করে দিলেন। ফাজিল বখাটে বদ মেয়ে একটা।”
__”বখাটের দেখেছেন কি? আপনার জীবনটা কয়লা তেজপাতা নিম পাতা আর কচু পাতা করবো। দেখি আপনি কি করেন।”
লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। সে ওয়াশরুমে গেলো চেঞ্জ করতে। রুমে এসে সে আবার লাইট অন করে বললো-
__”এটা আমার রুম তাই আমার ইচ্ছেই শেষ কথা। মাইন্ড ইট।”
__”খ্যাতা পোড়াই মাইন্ডের। লাইট অফ না করলে লাইট ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম।”
__”সাহস থাকলে ভাঙুন। এই বাড়িতে বখাটে গিরি চলবে না বলে দিলাম।”
আমি বেড থেকে নেম বেলকোণ বারান্দায় দাড়িয়ে চিৎকার করে আব্বুকে ডাকলাম। বেশ কয়েকবার ডাকার পরে আব্বু দৌড়ে এলো ওবাড়ির আমার রুমের বেলকোণ বারান্দায়। এসে হতবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন-
__”কি হয়েছে ?”
__”আব্বু লাঠি দাও তো।”
__”কেনো মা?
__”দরকার আছে। কুইক লাঠি আনো।”
__”মা মারামারি করলে সবাই তোকে খারাপ ভাববে।”
__”ভাবুকগে।”
__”স্বামীকে মারতে নেই মা।”
__”কে স্বামী? এ বিয়ে আমি মানি না।”
__”এসব বলতে নেই।”
__”জোর করে বিয়ে দিয়েছো এবার লাঠি দাও বলছি। না হলে আজ আইলা নার্গিস তিতলিসহ নাম না জানা সব সাইক্লোন হবে।”
__”শান্ত হ মা। ছেলেটাকে মারলে তো মরে যাবে সে।”
__”কখন বললাম যে আমি তাকে মারবো?”
__”তাহলে কাকে মারবি?”
__”আমি রুমের লাইট ভাংবো।”
__”কেনো?”
আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-
__”এত রাতে সে লাইট অন করে বই পড়ছে। আলোতে আমি ঘুমাতে পারছি না আব্বু। আমার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে। এ তুমি কার সাথে আমাকে বিয়ে দিলে গো!”
বলতে বলতে আমি কেঁদেই ফেললাম।আব্বু অসহায় মুখ করে বললেন-
__”ঠিক আছে আমি এখনই লাঠি এনে দিচ্ছি।”
আমি দাড়িয়ে রইলাম। কয়েক মিনিট পর আব্বু লাঠি নিয়ে এলেন তারপর করুণ মুখ করে ঐ বারান্দা থেকে লাঠি এগিয়ে দিয়ে বললেন-
__”তুই লাইট ভেঙে ঘুমিয়ে পড়িস মা!”
__”আচ্ছা, গুড নাইট আব্বু।”
__”গুড নাইট।”
আমি লাঠি নিয়ে রুমে এসে ডানে বামে আগে পিছে না তাকিয়ে লাইটটা ভেঙে ফেললাম। তারপর ঘুমাতে গেলাম। বাবু অন্ধকারে তাকিয়ে আছে কি না বুঝতে পারছি না। তাকিয়ে থাক বা ঘুমিয়ে থাক, আই ডোন্ট কেয়ার। লাইট ভেঙে শান্তি পাচ্ছি এটাই বড় কথা।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-৭
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=914699355627451

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে