“বখাটে বউ”(পর্ব-৬)

0
2100

“বখাটে বউ”(পর্ব-৬)

ইদানিং আমার আম্মু পাশের বাসার বাবুর প্রশংসার গীত শোনায়। এমন ছেলে নাকি পৃথিবীতে আর দুটো নেই। আম্মু তো এমনিতেই সব কিছু বেশি বেশি বলে তারপর উপরে এটা তার সদ্য নতুন বান্ধবীর ছেলে। সব মিলেই ঐ বাবুর গীত শুনতে শুনতে আমার কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হয়েছে। সন্ধ্যার কফির সাথে আজকাল অন্য খাবারের দরকার হয় না। পাশের বাসার বাবুর প্রশংসা কফিতে চুবিয়ে খেয়েই আমার পেট ভরে যায়। আব্বুকে তো তাও চোখ পাকিয়ে থামাতে পারি কিন্তু আম্মুকে চোখ পাকালে সেও উল্টা ডাবল চোখ পাকায়। কি যে জ্বালায় পড়েছি খোদা! বাড়িতে থাকাই যেনো দুষ্কর হয়ে গেছে। আমার তো রোজ আম্মুর সাথে ঝগড়া হচ্ছে ঐ বুইড়া বাবুকে নিয়ে।
সন্ধ্যায় কফি নিয়ে বসে টিভি অন করে সদ্য বসেছি ওমনি আম্মু জুড়ে দিলেন রেডিও।
__”জানিস বর্ণ ছেলেটা আসলেই খুব ভদ্র। সবাইকে কত্তো সম্মান করে।”
__”না তো জানি না। সে তো কখনো আমাকে সালাম টালাম করেনি তো তাই জানি না।”
__”তোকে সালাম করবে কেনো? তুই কি মুরব্বী নাকি?”
__”ভাবলাম অতি ভালো ছেলেরা হয়তো ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরও সালাম করে। সেখানে আমি তো খুব ছোট না।”
__”তোর সব কথাই আসলে ত্যাড়া ব্যাকা। একটু সোজা ভাবেও তো কথা বলা যায়।”
__”আর ঐ বাবুটার সব কিছুই সোজা তাই না? ওর প্রশংসা তুমি পানিতে গুলিয়ে খাও, খবরদার তার প্রশংসা আমার কফিতে চুবাতে আসবে না।”
__”নিজের তো কোনো গুণ নেই, অন্যের গুণ শুনলে তো গায়ে জ্বালা করবেই। সবই বুঝি।”
__”বুঝেই যখন ফেলেছো যে আমার গায়ে জ্বালা করছে তাহলে জ্বালা দিচ্ছো কেনো?”
__”আর কত কাল এমন ছন্ন ছাড়া বখাটে জীবন নিয়ে থাকবি? এবার অন্তত বিয়ে থা করে আমাকে উদ্ধার কর।”
__”ঐ ছেলের গুণকীর্তনের সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক?”
__”সম্পর্ক থাক বা না থাক, বিয়ে তো তোর করা উচিত। কত ভালো ভালো বিয়ের সমন্ধ এলো, তুই সব রিজেক্ট করেছিস। কখনো বিয়ে করবি না বলে গো ধরে বসে আছিস। পাড়ায় কত জন কত কি বলে, সব তো আমাকেই শুনতে হয়।”
__”আমাকে বসিয়ে খাওয়াতে যদি তোমাদের সব টাকা ফুরিয়ে যায় তাহলে টেনশন নিও না, আমি চাকরির চেষ্টা করবো। চাকরি হলেই তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু বিয়ের কথা বলবে না। মাইন্ড ইট।”
ওখান থেকে উঠে রুমে চলে এলাম। মেয়েদের জীবনটা কেনো এমন? এদের ইচ্ছের দাম নেই কেনো? মেয়েদের সব পরাধীনতার মূলেই কেনো আরেকটা মেয়ে থাকে? কেনো একটা মেয়ে বিয়ে করতে বাধ্য?

আন্টি যে আমাকে পছন্দ করেন সেটা তার হাব ভাবএ প্রকাশ পায়।
আব্বু যে ঐ বাবুকে খুব পছন্দ করেন তা তার কথাতেই বোঝা যায়। আম্মুরও বাবুর প্রশংসা নিয়ে গীত শোনায়। সব মিলেই বিয়ের কথা শুরু। কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাই না। যাকে আমি ভালোই বাসি না তার সাথে ঘর বেঁধে কি করবো? আর যতো দূর জানি সেও আমাকে ভালোবাসে না। আমার মাঝে এমন প্রেম ভালোবাসা কাজ করে না। আমি সেভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারি না। এমন মজা আমি অনেক ছেলের সাথেই করেছি। জ্বালিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি। ঐ খোকা বাবুকেও জ্বালিয়ে আমি পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি। এখানে কোনো ভিন্নতা নেই। যদি ভিন্নতা না-ই থাকে তাহলে বিয়ের কথা কেনো উঠবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


আন্টি আব্বু আম্মুকে ডেকে বিয়ের কথা বলে গেছেন সন্ধ্যায়। আমি ওরুমে ঢুকার সময় বিয়ের কথা শুনে আর ঢুকিনি, বাহির থেকে সব শুনেছি। কাউকে বুঝতে দিইনি যে আমি সব জেনে গেছি। আমি কাউকে বোঝাতেই পারলাম না যে আমি বন্দী জীবন চাই না, আমি কোনো বন্ধনের দায় নিতে চাই না।
রাতে আব্বু রুমে এসে আমার পাশে বসলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-
__”আর কত বখাটে মেয়ে হয়ে থাকবি? এবার অন্তত বিয়ে করে সংসারি হ মা।”
আমি মাথা নিচু করে বললাম-
__”না আব্বু। আমি এসব পারবো না।”
__”সে খুবই ভালো ছেলে।”
__”তবুও না আব্বু।”
__”তোর আন্টি নিজে তোকে বউমা বানাতে চাইছেন, তার মনে কষ্ট দিবি?”
__”আব্বু তুমি অন্তত আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ! আমি তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো বিয়েটা করবো কিন্তু ভালোবাসাহীন একটা সম্পর্কের দায় কত দিন বহন করতে পারবো বলো? ভালোবাসাহীন বিয়েটা কি আসলেই বিয়ে বলো?”
আব্বু আর কিছু না বলে মুখ ভার করে উঠে চলে গেলেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আমি নিজের ইচ্ছের বাইরে যেতে যে পারছি না। ছেলে যতোই রাজকুমার হোক না কেনো আমি বিয়ে করে কারো হুকুমে উঠাবসা করার পক্ষপাতী নই। তাই বিয়ে কখনো করবো না এটাই আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

কেউ আমাকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারলো না। বিয়ের কথা শুরু হবার পর থেকেই আমি ছাদে যাই না, বেলকোণ বারান্দাতেও যাই না। এমনকি বেলকোণ বারান্দার দরজাও খুলি না। সেদিন বাতাসে বেলকোণের জানালার পর্দা সরতেই দেখি বাবু দাড়িয়ে আছে। এই প্রথম আমি তাকে অকারণে এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। জানি না কেনো সেও বদলে গেছে। আব্বু বললেন সে নাকি সারা বিকেল ছাদে বসে থাকে। আব্বু মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলেন। ওর মন জুড়ে নাকি বিষণ্নতা ছেয়ে আছে যা আব্বুর অন্তর কাঁদায়।

সন্ধ্যায় আমি পায়ে নেইল পলিশ লাগাচ্ছি আর গান শুনছি। আব্বু রুমে এলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। মুখ দেখে বুঝলাম ভয়ানক মন খারাপ তার। বুঝতে আর বাকী নেই যে, আমার বিয়ে নিয়েই তার মন খারাপ।
__”কিছু বলবে আব্বু?”
__ “তোর কি অন্তর্দেশ কাঁদে না বর্ণ?”
হঠাৎ আব্বুর মুখে এমন কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। বিয়ে করতে চাইছি না বলে অন্তর্দেশ কাঁদতে হবে? আজব সব কথা বার্তা!
__”অন্তর্দেশ কেনো কাঁদবে?”
__”ছেলেটার বিষণ্নতা দেখে আমার হৃদয় কাঁদে। কিন্তু তোর অন্তর্দেশ কাঁদে না কেনো?”
সত্যিই আমার অন্তর্দেশ কাঁদে না। কেনো কাঁদে না তা আমি জানি না। আর জানতেও চাই না। আমি শুধু জানি এই ভালোবাসা-বাসি আমার আসে না। কিছুতেই না। যেদিন অন্তরের গভীরে ভালোবাসা অনুভব করবো সেদিন বিয়ের কথা ভাববো।

যুথী রুম ঝাড়ু দিতে আমার রুমে এসে বললো-
__”বন্ন আফা দুলাভাই কেমন দুখী দুখী মুখ কইরা দাড়াইয়া থাকে। সে মন কয় আপ্নেরে ভালোবাসে। দ্যাখলে সেরাম মায়া লাগে।”
আমি ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম সে মুখটা করুণ করে কথা গুলো বলছে। কিন্তু ওর তো দুলাভাই আছে বলে আমার জানা নেই। আর যদিও বা থাকে সে আমাকে ভালোবাসবে কেনো? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
__”দুলাভাই কে? আর সে আমাকে ভালোবাসবে কেনো?”
সে লাজুক মুখ করে বললো-
__”দুলাভাই হইলো সীমান্ত ভাইজান।”
__”সীমান্ত কে?”
__”আরে আফা পাশের বাসার ঐ পোলাডা। যারে আপনে কা কা শোনাইতেন।”
__”কা কা শোনাতাম মানে?”
__”কা কা মানে আসলে গান।”
ও তাহলে ঐ বুড়ো বাবুর নাম সীমান্ত! আমি রেগে উঠে বললাম-
__”ভাষা ঠিক করে কথা বলবি। আর ঐ ছেলে কবে থেকে তোর দুলাভাই হলো?”

সে লাজুক মুচকি হেসে বললো-
__”হ্যার লগে যে আপ্নের বিয়ার কথা চলতাছে হেডাই আমি জানি।”
ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে সীমান্ত নামের বাবুর সাথে যেনো ওর বিয়ের কথা চলছে। সে যাই হাব ভাব করুক তাই বলে সে সীমান্তকে আমার বর মীন করে দুলাভাই কেনো ডাকবে? রেগে উঠে বললাম-
__”বিয়ের কথা হলেই বিয়ে হয় নাকি? খবরদার তাকে আর দুলাভাই বলে ডাকবি না! তাহলে কিন্তু আমি তোর দাঁত ভেঙে দেবো।”
আমার কথা শুনে সে ডোন্ট কেয়ার মুখ করে বললো-
__”আইচ্ছ্যা ভাইঙ্গেন। তাও ডাকুম।”
কথাটা বলেই সে রুম ঝাড়ু না দিয়েই বেরিয়ে গেলো। আজকাল দেখছি যুথীও আমার বিরোধী দল হয়ে গেছে। মেজাজটা সাত সকালে গরম করে দিয়ে গেলো।

আমিও পণ করেছি, কিছুতেই আমি ঐ খোকা বাবুকে বিয়ে করবো না। ঘোষণা দিলাম যে আমি চিরকুমারী থাকবো। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হলো কেউ আমার ঘোষণাকে পাত্তাই দিলো না। ইভেন আব্বুও না। সন্ধ্যায় এক সাথে নাস্তা করার সময় আমি বললাম-
__”আমার একটা কথা ছিল।”
কারো কোনো জবাব পেলাম না। তাই আবার কথা শুরু করলাম।
__”আমি চিরকুমারী থাকতে চাই আর এটাই আমার জীবনের একমাত্র ইচ্ছে। আশা করি তোমারা আমার এই ইচ্ছেটাকে সম্মান করবে।”
আব্বু আম্মু যুথী কেউ আমার দিকে না তাকালো, না কথার জবাব দিলো। মনে হলো কেউ কিছু শুনতেই পায়নি। তাদের অদ্ভুত আচরণ দেখে আমি হতবাক হলাম।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল…
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-৫
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=911853379245382

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে