“বখাটে বউ”(পর্ব-১৪)

0
1910

“বখাটে বউ”(পর্ব-১৪)

অনেক রাত ধরেই ওয়াশরুমের সাথে খোকাবাবুতার প্রণয় অভিসার চললো। প্রথম দিকে মনে মনে আমার হাসি পেলেও পরে কেনো জানি মায়া লাগলো। এমন করে অসুস্থ হোক এটা তো চাইনি। হালকা আত্মগ্লানি অনুভব হলো। আত্মগ্লানি কেনো হচ্ছে সেটাও বুঝতে পারছি না। বাধ্য হয়ে বিছানা থেকে নেমে স্যালাইন বানিয়ে আনলাম আর সাথে ঔষধও। গ্লাস সামনে ধরতেই সে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
__”কি মিশিয়ে এনেছেন?”
এ ছেলে তো দেখছি আমাকে চরম অবিশ্বাস করে। বউকে এমন অবিশ্বাস করা একদম উচিত নয়। মেজাজ গরম হয়ে গেলো। রাগ করে বললাম-
__”বিষ মিশিয়ে এনেছি। খেয়ে ঘুমিয়ে যান তো। আপনার এই ওয়াশরুম মুখি অভিযান আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”
সে রোমান্টিক চোখে আমার দিকে তাকালো। ওমাগো! এই ছেলে এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো? কাউকে বিষ খেতে বললে মনে মনে আনন্দ লাগে নাকি? নাকি বিষ খেতে বললে মানুষ রোমান্টিক সাগরে পতিত হয়? আগে জানলে তো মধু খাওয়ার কথা বলতাম। না জানি মধু খাওয়ার কথা বললে সে কি কি করতো! ওর তাকানো দেখে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে গলা ভিজাতে এ স্যালাইন আমাকেই খেতে হবে। আমার কপালে এত বিপদ কেনো মাবুদ? অন্যের ভালো করতে গিয়ে নিজের চরম খারাপ হবে নাকি? সে আমার মুখ বরাবর তার মাথা ঝুকিয়ে রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রেম প্রেম স্বরে মানে হালকা ফিসফিস স্বরে বললো-
__”বিষ খেলে ঘুম আসে নাকি? আগে তো জানতাম না ম্যাম।”
এই রে এই ছেলে এমন ইন্টু মিন্টু ভাব নিয়ে কথা বলছে কেনো? আর আমাকে বখাটে মেয়ে না বলে ম্যাম কেনো বলছে? এমন অসুস্থ শরীরেও সিনেমার নায়কদের মতো তার এমন প্রেমঝরা দৃষ্টি দেখে আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে। এ ছেলেকে তো কোনো বিশ্বাস নেই। কখন যেনো সে আমার উপর ঠাস করে পড়ে বেহুশ হবার নাটক করবে। এই অভিনেতা লাট সাহেবকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। আমি শান্ত স্বরে বললাম-
__”হ্যাঁ বিষ খেলে ঘুম আসবে। কথা না বাড়িয়ে বিষ টুকু খেয়ে নিন।”
সে আরো তীব্র রোমান্টিক চোখে তাকিয়ে বললো-
__”যদি ঘুম না এসে মাতাল হয়ে যাই?”
ওহ নো! এই বান্দরটা এসব কি আবোল তাবোল বলছে? কেনো যে বিষ খাওয়ার কথা বললাম! সবাই আমাকে বখাটে বলে, এই লাট সাহেব কম যায় নাকি? এ তো দেখছি আসল বখাটে। আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললাম-
__”কি সব পাগলের মতো আবোল তাবোল বলছেন? মাথা কি আপনার পুরাই গেছে নাকি? বিষ খেলে কেউ মাতাল হয় নাকি?”
__”বিষ খেলে যদি ঘুম আসতে পারে তাহলে তো মাতালও হতে পারে।”
কথা তো ঠিকই বলেছে। বিষ খেলে যদি ঘুম আসে তাহলে মাতাল তো হতেও পারে। কি সব গাধীর মতো বলে ফেঁসে গেছি আমি! এখন যদি এই বান্দর মাতাল মাতাল ভাব নেয়, মানে অভিনয় করে তাহলে আমার কি হবে? কে বাঁচাবে আমাকে? নাহ, এ ছেলে একদম সুবিধার না। ম্যানেজ করার জন্য বললাম-
__”মাতাল হবেন না, ঘুম আসবে গ্যারান্টি। এখন খেয়ে নিন তো।”
সে অভিমানী মুখভঙ্গিমায় বললো-
__”না খাবো না।”
ওরে ছেলে! এমন ঢং করছে যেনো আমি তার প্রেমিকা। সে খেতে চাইবে না আর আমি বলবো, “ওলে বাবুতা এসব বলতে হয় না তো! খাও সোনাপাখিতা আমার। এই তো এখন আমার বাবু স্যালাইন আর ডায়রিয়ার ওষুধ খাবে। খাও খাও বাবুতা খাও।” আর এসব শুনে সে আহ্লাদে আঠারোখান হয়ে স্যালাইন আর ওষুধ খাবে। হুহ, বর্ণিতা এসব জীবনেও করবে না বান্দর ছেলে।
আমি আর কোনো কথা না বলে ওর মুখে ঔষধ গুজে দিয়ে স্যালাইনের গ্লাসটা মুখে ঠেসে ধরলাম। নিরুপায় হয়ে সে ঔষধসহ ঢকঢক করে স্যালাইন খেলো। আমি প্রশান্তির শ্বাস নিয়ে বললাম-
__”এখন লক্ষী ছেলের মতো ঘুমিয়ে যান।”
আমার কথা শুনে সে কিছু না বলে হা করে আমার দিকে চেয়ে রইলো। “লক্ষী ছেলে মতো” এই তিনটা শব্দতে সে আর আমি দু’জনই অবাক হয়েছি। আমার সাথে যে আমার কথা ম্যাচিং হয়নি সেটা আমিও বুঝতে পেরেছি। আমি নিজেও বুঝলাম না যে আমি তাকে লক্ষী ছেলে কেনো বললাম আর কেনোই বা তাকে স্যালাইন খাওয়ালাম!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

সে আমার পাশে শুয়ে আমার হাত ধরতেই আমি চমকে উঠলাম। ওমাগো! এই ছেলে হাত কেনো ধরলো? স্যালাইন খেয়ে সত্যিই মাতাল হলো নাকি? এখন আমার কি হবে রে? আমি এক রকম ভয় পেয়েই বললাম-
__”এই আপনি হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন বলছি। নইলে কিন্তু আমি চেচিয়ে মাকে ডেকে আনবো।”
আমার হুমকি শুনেও সে কোনো রকম ভয় না পেয়ে শান্ত স্বরে বললো-
__”আম্মু রুমে এলে কি বলবেন শুনি?”
তাই তো! কি বলবো? যা ঘটেছে তাই বলবো। বললাম-
__”বলবো, মা দেখো তোমার ছেলে আমার হাত ধরেছে।”
সে খুব জোরে শব্দ করে হেসে বললো-
__”বখাটে মেয়েটা অনেকটাই অবুঝ দেখছি।”
__”কিহ?”
সে আমার হাতটা তার বুকের উপর রেখে বললো-
__”মাইন্ড করো না প্লিজ! আমার শরীর খারাপ হলে আমি আম্মুর হাত ধরে ঘুমাই। এখন তো বিয়ে করেছি তাই বউয়ের হাত ধরে থাকবো।”
এই রে এই ছেলেকে তো অসুস্থ হতে দেয়া যাবে না। অসুস্থ হলেই তো সে আমার হাত তার বুকে চেপে ধরে শুয়ে থাকবে দেখছি। অসুস্থ মানুষ, কিছু তো বলতেও পারছি না। ধুর কি যে করলাম! বার বার নিজের জালে নিজেই আটকে যাই। আর সে আমাকে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ সম্বধন করলো কেনো? এ ছেলের তো মতলব অশ্লীল মনে হচ্ছে। হুট করে সে বললো-
__”তুমি বরং আরেকটা হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”
যা ভেবেছি তাই ঠিক হচ্ছে। আসলেই তো দেখছি এই ছেলে মহাফাজিল আর রিয়্যাল বখাটে। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম-
__”এই কেনো কেনো?”
কষ্ট পাচ্ছি এই টাইপের মুখ করে সে বললো-
__”আমার কেমন যেনো লাগছে। আর আমি অসুস্থ হলে আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।”
ওহ নো! আমি এসব পারবো না। এমনি কি আর ধেড়ে বুড়ো বাবু বলি! ধাইড়া বুইড়া বান্দর একটা। আমাকে ফাঁসাচ্ছে। এর হাত থেকে আমাকে কে উদ্ধার করবে এখন? প্লিজ হেল্প মী আল্লাহ!
__”কি হলো দাও!”
আমি মুখ ভেংচিয়ে বললাম-
__”আমি এসব পারি না।”
সে দুখী দুখী মুখভঙ্গিমায় বললো-
__”আজ তোমার কারণেই আমি অসুস্থ। আজ আমার ভালোমন্দ কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তুমি?”
সত্যিই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কিছু তো করার নেই। বাধ্য হলাম বান্দরের মাথায় হাত বুলাতে।
__”আচ্ছা দিচ্ছি।”
__”চুলে একটু চাপ দিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাও।”
কেমন বান্দর ছেলে! আমাকে চাকরানী পেয়েছে। রাগে আমার মাথায় আগুন ধরেছে। তওবা করছি আর জীবনেও এমন কিছু করবো না যেটাতে লাট সাহেব অসুস্থ হবে।
__”বার বার থামছো কেনো? কি ভাবছো নিশ্চুপ ভাবে?”
কি আর ভাববো খোকা? তোমার খোকাগিরি দেখে ঠাডা মার্কা টাস্কি খেয়ে নিশ্চুপ আছি। আমাকে তো দারুণ ফাঁদে ফেলে মজা নিচ্ছো তুমি। তোমার ডায়রিয়া না ছাই হয়েছে। সব আমি বুঝে গেছি। আবার ফাঙ্গা নিলে বর্ণিতার সাথে। সব শোধ নেবো আমি, শুধু সকালটা হতে দাও। সে বললো-
__”কি হলো? হাত আর মুখ দুটোই চুপ কেনো? আমি ঘুমাবো না?”
__”আচ্ছা চুল টানছি।”
__”চুল তো টানতে বলিনি। বলেছি হালকা চাপতে।”
__”আমি হালকা টালকা পারি না।”
আমি জোরে জোরে চুল টানতে শুরু করলাম। চুল সব ছিড়ে যায় যাক। তার হাউস তো মিটুক। ফাজিল বান্দর ছেলে একটা!
__”আরে কি করছো? লাগছে তো! সব চুল ছিড়ে ফেলবে নাকি?”
__”হ্যাঁ সব চুল ছিড়ে ফেলবো।”
__”এমন করে না মেয়ে। স্বামীর সাথে কেউ এমন করে বলো?”
ওরে ছেলে… এসব বলে আমাকে পটানো হচ্ছে? আমি পটবো না, কিছুতেই না।
__”কিসের স্বামী? এই বিয়েটাই তো আমি মানি না।”
__”দেখো তুমি কিন্তু আমাকে বিষ খাইয়ে মাতাল করেছো। এখন যদি এসব বলো তাহলে কিন্তু মাতাল মাতলামি শুরু করবে।”
ওর কথাতে শুনে আমি শক খেয়ে স্তব্ধ হয়ে চুল টানাটানি বাদ দিয়ে বললাম-
__”ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। মাতলামি করতে হবে না।”
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সে ঘুমিয়ে গেলো। বান্দরটা আমার এক হাত বুকে চেপে ধরে ঘুমাচ্ছে আর আরেক হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। সে তো ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু মাতলামির টেনশনে আমার চোখে ঘুম নেই। আব্বু কেনো তুমি এমন একটা বান্দর আমার মতো একটা মুক্তার গলায় ঝুলিয়ে দিলে? তোমার বর্ণিতার হাল ভীষণ করুণ।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১৩
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=920280258402694

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে