বউ Part- 9

0
1331

Story: বউ
Part- 9
writer: #Nur_Nafisa
.
.
বাবা ছেলে দুজনেই রিজোয়ান আহমেদ এর কাছে জানতে পারলো…
বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে এসেছিলো তারা। নাফিসাও কনের সাথে পার্লারে যেতে ও বউ সাজতে বায়না করে। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান, মেয়ের যে কোন ইচ্ছে পূরণ করতে তারা বাধ্য। কিন্তু পার্লার থেকে ফেরার পথে কনে এক গাড়িতে ছিল আর নাফিসা এক গাড়িতে ছিল অই বাড়ির ই অন্যান্য মেয়েদের সাথে। কনের বাবার সাথে পুরোনো শত্রুতার কারনে কিডন্যাপাররা কনেকে কিডন্যাপ করতে এসে ভুল করে নাফিসাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর কিডন্যাপারদের পুলিশ ধরতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু নাফিসার কোন সন্ধান তারা দিতে পারেনি!
তারপর রিজোয়ান আহমেদ রেহানের খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন নাফিসাকে বাসায় ঠাই দেয়ার জন্য । মেয়েকে দেখার জন্য তিনি ব্যকুল হয়ে পড়লেন। দুপুরের দিকেই রেহানসহ তারা সবাই বাসায় এসে পড়লো।)
.
(নাফিসা রুবিনার সাথে টিভি দেখছিল ড্রয়িং রুমে। রুবিনা দরজা খুলার পর নাফিসা রিজোয়ান আহমেদ কে দেখে “আব্বু…… ” বলে জোরে চিৎকার দিয়ে হাত থেকে রিমোট ফেলে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আয়েশা আহমেদ ও রিজোয়ান আহমেদ মেয়েকে পেয়ে খুশিতে আর ক্ষোভে নিরবে চোখের পানি ফেললো। যেন তাদের কলিজাটা ফিরে পেয়েছে আজ। বাকিরা ও তাদের দেখে খুব খুশি। রেহান অপরাধবোধ করছে খুব। সে নিউজ না দিয়ে, খুব বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো। বাবা-মা, আর মেয়েটার খুশি কেড়ে নিতে যাচ্ছিলো। সে আর এখানে দাড়িয়ে না থেকে তার রুমে চলে গেলো। রুবিনা চৌধুরী মেহমানের আপ্যায়ন করছে। আর মি. & মিসেস আহমেদ বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে চৌধুরী পরিবারের। তারপর বেশ কিছুক্ষণ তারা কথা বললো। রেহান ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শুনতে পেলো আগামীকালের ফ্লাইটে তারা লন্ডন ফিরে যাবে। নাফিসা ও বেশ খুশি লন্ডন ফিরে যাবার কথা শুনে। সে রেহানের সামনে দিয়ে দৌড়ে ব্যাগ গুছাতে চলে গেলো, কারো বলার অপেক্ষায় থাকেনি। রুবিনা ও রায়হান চৌধুরী রিজোয়ান আহমেদ কে বললেন কাল যেহেতু চলেই যাবে আজ নাফিসা তাদের কাছেই থাকুক। রিজোয়ান আহমেদ আর মানা করতে পারলো না। কয়েক মিনিটে ব্যাগ গুছিয়ে চলে এলো আবার। সবাই নাফিসার কান্ড দেখে অবাক! রেহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে আর দেখছে। কাউকে কিছু বলতে পারছে না।)
.
রুবিনা- শাশুড়ী আম্মুকে ছেড়ে এতো দ্রুত চলে যাওয়া হচ্ছে! আমার তো ছাড়তে ইচ্ছে করছে না, তোমার কষ্ট হচ্ছে না একটুও?
.
নাফিসা- তোমরাও আমাদের বাসায় যেও?
.
রুবিনা- আচ্ছা! কিন্তু আজ যে আপনি যেতে পারবেন না।
.
নাফিসা- কেন!
.
রায়হান- আর এক দিন ই তো আছো বাংলাদেশে, কাল এখান থেকে এয়ারপোর্টে যাবে।
.
নাফিসা- আব্বু, আমাকে রেখে আবার চলে যাবে না তো!
.
রিজোয়ান- ইম্পসিবল! আমার পাগলী মেয়েকে রেখে আমি কোথায় যাবো! তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো!
.
নাফিসা- ওকে।
.
আয়েশা- আমার মেয়েটা একটু পাগলী টাইপের। নিশ্চয়ই পাগলামি করে খুব জালিয়েছে আপনাদের।
.
রায়হান- ওর পাগলামী গুলোইতো আমাদের আনন্দে মাতিয়ে রেখেছে। খুব মিস করবো পাগলীটাকে।
.
(বিকেলে নাফিসাকে এ বাড়িতে রেখে মেহমানরা চলে গেলো। তাদের থাকার জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু কাল চলে যাবে তাই বন্দোবস্ত করতে তারা বন্ধুর বাসায় চলে গেলো। সন্ধ্যায় নাফিসা রিয়াদকে পড়িয়েছে, রায়হান চৌধুরীর সাথে দাবা খেলেছে। সবাই একসাথে ডিনার করে তারপর ঘুমাতে চলে গেছে। এর মাঝে রেহানের সাথে নাফিসার কোন কথা হয়নি।
সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর রেহান রিয়াদের রুমে এলো। নাফিসা ও রিয়াদ দুজনেই ঘুমিয়ে আছে। রেহান নাফিসার পাশে খাটে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই চেহারা দেখে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে তার। নেহার সাথে ৩মাসের রিলেশন রেখে ব্রেকাপের সময়ও এতোটা কষ্ট হয়নি।)
.
(বুকে চাপা কষ্ট রেখে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো)
রেহান- এসেছিলে কেন! আবার চলেই বা যাচ্ছো কেন! কি প্রয়োজন ছিলো এতো অল্প সময়ে এমন মায়ায় জড়ানোর! কিভাবে আজ নিশ্চিন্তে এখানে ঘুমাতে পারছো তুমি! ভয় পাচ্ছো না আজ! আমার সাথে কি ঘুমানোর বায়না আর করবে না! বারবার আমার সামনে এসে বলবে না, তুমি আমার #বউ। এই পাগলী #বউ, একটু কথা বলো না তোমার বরের সাথে।
.
(নাফিসা গভীর ঘুমে মগ্ন। রেহান আরও কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর নাফিসার কপালে গভীরভাবে একটা চুমু খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ঘুম আসছে না তার চোখে। )
.
(ছুটির দিন হওয়ায় সবাই আজ বাসায় আছে। রুবিনা সকাল থেকেই অনেক খাবার বানিয়েছেন নাফিসাকে দেয়ার জন্য। সকাল ৮টার দিকে নাফিসার বাবা-মা চলে এসেছে। ১১ টায় ফ্লাইট। নাফিসাও সব কিছু গুছিয়ে তৈরি। রেহান আজ তার রুম থেকে বের হচ্ছে না। শুধু ব্রেকফাস্ট করার জন্য একবার বেরিয়েছিল। নাফিসা তার আম্মুর কাছ থেকে পার্স নিয়ে রিয়াদকে কিছু গিফট দিয়েছে। ৯টার দিকে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে, রিয়াদ কান্না করছিলো তার ভাবি চলে যাচ্ছে। রুবিনা চৌধুরী অনেক্ক্ষণ বুকে জড়িয়ে রেখেছে নাফিসাকে। রায়হান ও রুবিনা চৌধুরীর ও খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। মেয়েটা বাসায় এসে তাদের মেয়ের অভাব পূরণ করে দিয়েছিলো। আজ আবার সেই মেয়ের অভাব টা তারা অনুভব করছে। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বের হতে যাবে তখন নাফিসা বললো..)
.
নাফিসা- আব্বু আম্মু তোমরা গাড়িতে যাও আমি আসছি…
.
রিজোয়ান- ok, hurry up…
.
নাফিসা- ওকে
.
(নাফিসা দৌড়ে রেহানের রুমে এলো। রেহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। নাফিসা রেহানের পাশে এসে দাড়ালো। রেহান তাকে একবার দেখে আবার বাইরে তাকিয়ে আছে।)
.
নাফিসা- hey, handsome boy… Look at me.
.
(রেহান কোন রেসপন্স করলো না। নাফিসা জোর করেই তাকে ঘুরিয়ে দিলো তার দিকে।)
.
নাফিসা- Wanna hug me….plz…
.
(রেহান কয়েক সেকেন্ড পলকবিহীন তাকিয়ে এক ঝটকায় নাফিসাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো, যতটা শক্ত করে ধরা যায়। ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবে রেখে দিতে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। আটকাতে পারছে না কেন সে! আচ্ছা, এটা কি ভালোবাসা! তাহলে নেহার সাথে কি সম্পর্ক ছিলো! রেহান ভেবে পাচ্ছে না কিছু! ২/৩ মিনিট পর নাফিসা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে রেহান তাকে ছেড়ে দিলো। নাফিসা রেহানের গালে আলতো করে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
রেহান স্তব্ধ হয়ে গেল নাফিসার কর্মে! সে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে…. দোতলা থেকে দেখতে পেল তারা গাড়ি দিয়ে চলে গেছে।
নাফিসার গিফট যে আর দেয়া হলো না! আজই তো লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা ছিলো, নাফিসা তো রেহানকে ছেড়ে দেশ ছেড়েই একা একা চলে গেলো। বারবার তার সাথে কেন এমন হয়! যাকে ভালোবাসে সে ই কেন দূরে চলে যায়! তাকে কি বুঝার মতো কেউ নেই! সবাই ধোকা দেয় কেন তাকে! ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ছেলেরা চাইলেও সেটা পারে না কেন!
সারাদিন বাসায় এক প্রকার নিরবতা কেটে গেলো। যেন কত দিনের সম্পর্ক এই মেয়েটার সাথে। আজ সবার আনন্দ কেড়ে নিয়ে তাদের থেকে দূরে চলে গেছে! রেহানও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গেছে, আর কাউকে ভালোবাসবে না, কারো জন্য তার মনে জায়গা নেই। খুব কঠিন বানিয়ে ফেলবে নিজেকে।
.
.
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে