প্রয়োজন পর্বঃ ১৯

0
806

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৯
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে।আবার ঝড় যেন সহযোগে এসে হানা দিয়েছে এই দেশে। বার বার আকাশ গর্জে ওঠায় আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠিছে। বৃষ্টির গতিবেগ দক্ষিণ দিকে হওয়ায় জানালা দিয়ে তেড়ে এসে পড়ছে। তাই জানালার কপাট লাগাতে গেলে এক পশলা বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে দিয়েছে আমায়। শিউরে উঠলাম। ঠিক যেমনভাবে নিয়িনের ভাইয়ের ছোঁয়ায় উঠেছিলাম।

“আপা, তুই তো ভিজে যাচ্ছিস!
সম্বিত ফিরে এলো বেবলির কথায়। উড়না দিয়ে পুরো মুখ মুছে বসলাম বিছানায়।এই ঘুটঘুটে অন্ধাকরময় পরিবেশে বন্ধ ঘরে বসে আছি বেবলি ও আমি। দুইজনই অপেক্ষায় আছি মোমবাতি নিয়ে মা কখন আসবে? বাবাও এখনো আসেননি। সেই দুপুরে বের হয়েছিলেম। বৃষ্টির কারণে এখন মনে হয় এই রাত্রেই কোনো ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

“আমার হয়েছে এক মরণ জ্বালা। কবে যে মরবো তার ঠিক ঠিকানা নেই।”
আচমকা মায়ের আগমণ আর কথায় নজর পড়ে মায়ের দিকে। তিনি মোমবাতি টেবিলে রেখে বিরক্তিকরভাব নিয়ে কথাগুলো বলছেন। কিন্তু পূর্বে তো ভালোই ছিলেন। হঠাৎ করে কী হলো।

“কে কী করেছে? কিছু হয়েছে কী?”
আমি প্রশ্ন করার পূর্বে বেবলি আমার বলতে চাওয়া কথাটাই বললো।
বেবলির এমন প্রশ্ন শুনে বিরক্তি আর রাগ নিয়ে মা বললেন,
“যা করবার আছে সে তো তো তোদের বুইড়া বাপই করছে।”

“কেন? বাবা কী করেছে?”
“এই ঝড়মুখো বৃষ্টির দিনে তোদের বাপ এক দল অসুখ নিয়ে এসেছে। জ্বর তো মাঝরাত্রে আইবো। এখন দেখ, বুকে নাকি ব্যথা। আবার মাঝে কয়েকটা কাশিও দিচ্ছে। এই নতুন বর্ষায় ভিজলে তো জ্বর আইবোই। ”

মায়ের কথা শুনেই দুই বোন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। উদ্বিগ্নের ভাঁজ দুজনের কপালে।

“বুকে তেল মালিশ করার জন্যই তো এত্ত দেরী অইলো। শুন,মোমবাতি তো একটাই। শেষ অইবার আগে খাইয়ালো তোরা।”
“এখন না পরে খাবো।”
“বাতি শেষ অইলে। দেখবনে কেমনে খাছ তোরা।” এই কথা বলেই রাগ করে।চলে গেলেন। কিছুটা ক্ষোভও মিশ্রিত ছিলো।

ঝরঝর বৃষ্টিতে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় সারা দেহে প্রানের সঞ্চার করে। তাই তো মুগ্ধ হয়ে শব্দ শুনার জন্য কান পেতে আছি।

“আপা, আয়, খেয়ে ফেলি।” বেবলির কথায় মনে হলো ও খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু আমার তো এখন খেতে ভালোই লাগছে না। তাই বললাম,
“তুই গিয়ে খেয়ে আয়। আমি পরে খাবো।”
“আপা আয় না। দেখ,বাতিও তো ফুরিয়ে যাচ্ছে”
“বললাম তো পরে খাবো। তুই যা।”
রাগ নিয়ে সেও হনহন করে ছুটলো রান্নাঘরের দিকে।

খানিক পর বেবলি খেয়ে এসে সটান গা বিছানায় এলিয়ে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। কিন্তু আমি সেই এক ধ্যানে বৃষ্টিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছি। তবে এখন আর বৃষ্টি প্রবল নয়। তাই জানালা খুলে দৃষ্টি দিলাম নীলক্ষা নীল আকাশে। অন্ধকারময় আকাশে মাঝে বিজলির দাগ কাটা আলোয় এক ধরণের ভয় সৃষ্টি করছে। আকাশ দেখে মনে হলো আকাশের আজো মন খারাপ। আকাশ মন খারাপেই সুন্দর। কিন্তু রাত্রের অন্ধকারে তার সৌন্দর্য্য দেখতে পারছি না। মেঘাচ্ছন্ন আকাশকে পারছি না দৃষ্টিপাত করতে। মেঘের মন খারাপ মনে হতেই বাতি নিয়ে চলে গেলাম আয়নার কাছে। নিজের মুখে বাতির আলো দিয়ে দেখতে লাগলাম পুরো মুখ। আমায় নাকি মেঘের মতো মন খারাপেই সুন্দর লাগে। কিন্তু আয়নার নিজের সৌন্দর্য ঠাওর করতে পারলাম না। যদি তুলনা করার জন্য পাশে কেউ থাকতো তবে বেশ পারতাম। ওর মন খারাপের সাথে আমার মন খারাপের তুলনা করতাম। নিয়নের ভাইয়ের বলা আরেকটা কথা মনে হলো। আমার হাসি বুঝি ভারি সুন্দর? তাই এই অন্ধকারময় ক্ষীন আলোর পরিবেশে না চাইতেও জোর করে একটা হাসি দিলাম। দেখতে চাইলাম কেমন সুন্দর সে। কিন্তু আমার কাছে নিচক বিদঘুটে হাসি ছাড়া কিছুই বোধগম্য হলো না। আচমকা নিজের অজান্তে হাত চলে গেল গালে। এই গালেই তো সেদিন উনি,,! ইশ ভাবতে পারছি না। ভাবলেই কষ্ট হয়। তাই মন খারাপের গল্প নিয়ে আবারো জানালায় মাথা রাখলাম। এক চিন্তায় চিন্তিত হলে আরো হাজার চিন্তা ভিড় জমায়। তেমনি সেদিনের ঘটনা খুব করে মনে পড়ছে স্মৃতি নামক হৃদয়পটে।

আমি ফাঁদের কথা বলার পর উনি আর কিছুই বলেননি। বার বার এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন। বুঝলাম না এদিক সেদিক তাকানোর কী আছে! আমি যেটা ভাবছি সেটা নয় তো! ইয়া আল্লাহ! রক্ষা করো তোমার এই পাপী বান্দীকে!

আচমকা গাড়ির ছাড়ার শব্দ শুনলাম। ছাদ থেকে নিচে তাকিয়ে দেখলাম বরযাত্রী চলে যাচ্ছে। হায় কপাল! নিলাও তাহলে চলে গেল। একবারও কী আমার খোঁজ নেয়নি। খুব কষ্ট হচ্ছে। একমাত্র বান্ধুবিকেও বুকে জড়িয়ে কেঁদে বিদায় দিতে পারিনি। ভাবলেই কষ্টগুলো কান্নায় পরিণত হচ্ছে।

“দীপ্তি, আমি কেন তোমায় ফাঁদে ফেলবো? বলতে পারো?

কথার মালা উনি যেন খুঁজে পেলেন। তাই আচমকা আর এই কষ্টের সময়ই এই কথাটা উনি বললেন। কিন্তু একদিকে বান্ধুবি চলে যাওয়ায় কষ্ট আর অন্যদিকে এতক্ষণ বন্ধী থাকায় বিরক্তিভাব। দুটোর সংমিশ্রণে আমার ভিতরে ক্রোধ জন্মালো। ক্রোধের সহিত বললাম,

“কিসের জন্য বুঝতে পারছেন না? এত পিচ্চি সাজেন কেন?”

“সরি?”
সরি বলায় ক্রাধের আগুনে যেন ঘি ঢালা হলো। তাই তেজও বাড়লো। সেই পূর্ণ তেজ নিয়েই বললাম
“ফাঁদে পেলে আপনি যে আমাকে ভোগ করতে চাইছেন। এটা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু কান খুলে শুনে রাখুন, আমি কখনোই আপনার পাতানো ফাঁদে পা দিবো না। আর ভালোবাসা তো তিনশ হাত দূরে। পথ ছাড়ুন।”

আবারো আটকালে পুরো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। উনি বার বার বলছেন যে আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু এগুলো শুনতে ইচ্ছুক নই। তাই চলে যেতে চাইছি।কিন্তু উনিও আমাকে যেতে দিবেন না। আর আমিও এই মূহুর্তেই চাওয়ায় জন্য ইচ্ছুক। দম বন্ধ হয়ে আসছে। যতই খোলা আকাশের নিচে হোক। বিরক্তিভাব যেখানে থাকে সেখানে শ্বাসরুদ্ধ একটা ভাবও থাকে। উনি আমাকে দুই হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা চালালে চিল্লিয়ে বললাম,
“এত ভালোবাসা ভালোবাসা কেন করছেন? আমার মতো মধ্যবিত্ত মেয়ের কাছে কী এমন আছে?শুধুমাত্র এই শরীর ছাড়া। সেটাই তো আপনি চাইছেন। তো এত ভালোবাসার অভিনয় কেন করছেন? প্রেমের অভিনয় করে আমার সম্পদ নষ্ট করে বিয়ে না করলেও আমি কিছুই করতে পারবো না। কারণ আপনি পুলিশ। আপনার ক্ষমতা অনেক। তো এখানেই শুরু করুন না। ভোগই যখন মূল।

আচমকা মাথা যেন ঘুরে গেল। প্রচন্ড জ্বালা অনুভব করলাম গালে। নিচে পড়ে আছি আমি। তাও গালে হাত দিয়ে। বুঝতে পারলাম পুরুষালী হাতে আমার গালে চড় পড়েছে।

“তুই না ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না। শুধু আমার নয়। কোনো পুরুষজাতির ভালোবাসার যোগ্য তুই না। আর হ্যাঁ, তোর ভাবনা চিন্তা যে এত নিম্নমানের তা পূর্বে জানলে কখনোই ভালোবাসতাম না। চিন্তা দ্বারা পালটা নয়তো ছেলে পাবি না।”

উনার এমন ব্যবহারে আমি যারপরনাই অবাক। এত অপমান! অঝোরে মেঘ জমানো চোখ থেকে বৃষ্ট পড়ছে। কিন্তু তাতে উনার ভ্রুক্ষেপ নেই। উনি তো তুই তুকারি করতেই আছে।

“আর হ্যাঁ, তুই বলছিলি না দুদিনের ভালোবাসা। এটা দুদিনের ছিলো না। চার চারটা বছরের জমানো সমস্ত ভালোবাসা ছিলো। ভেবেছিলাম নিলার বিয়ে হয়ে গেলে তোকেও বিয়ের প্রস্তাব দিবো। আমার জমানো সমস্ত ভালোবাসা তোকে উজার করে দিবো। কিন্তু আফসোস! তুই আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই হলি না।”

“চার বছরের ভালোবাসা মানে? কীভাবে চিনেন আমায়? আমি তো আপনাকে কোনোদিন দেখি নাই?

চলবে,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে