প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
334

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১৫ এবং শেষ
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“কিন্তু নুহাশ আমার মনে হয় সাব্বির ভাইয়া নিজে এটা দিলে বেশি ভালো হয়।আর আজ তো গায়ে হলুদ নুর যে শাড়ি এনেছে সবার জন্য ওটাই তো পরবে সবাই।

” তাহলে বলবে আগামী কাল পরতে সিম্পল। আর সাব্বির নিজে দিচ্ছে না কারন তোমার এসিস্ট্যান্টকে ও জমের মতো ভয় পায়।দেখা গেলো প্রপোজ করার অপরাধে চড় দিয়ে ওর গালের বারোটা বাজিয়ে দিলো।

“মিলি এতোটাও খারাপ নয়।একটু ছটফটে এই যা।ঠিক আছে আমি না হয় দিয়ে দিলাম তবে বিয়ের কথাটা আমি বলতে পারবো না বলে দিলাম।

” হ্যাঁ এতেই হবে বাকিটা ও বুঝে নিবে।

গায়ে হলুদের প্রোগ্রামের আয়োজন ছাদে করা হয়েছে।যেহেতু ছাদের রেলিং যথেষ্ট বড় তাই বাচ্চা কাচ্চাদের কোনো সমস্যা হবে না।তাছাড়া ছাদের যে বিশাল বাগান তা হলুদের প্রোগ্রামকে আরো সুন্দর করে তুলবে।হলুদের ফুল সব নুহাশের বাগান থেকেই নেয়া।যথেষ্ট পরিমাণে ফুল ও গাছ থাকায় আর বাইরে থেকে কিনতে হয়নি।ন্যাচারাল লুকেই নুর হলুদের সাজ সেজেছে। গয়না বলতে ফুলের গয়না।এতেই যেন অপরুপ লাগছে।ছোয়াকে কোনো কাজই করতে দেয়া হচ্ছে না।বেচারি একা একা বোরিং হচ্ছে বলে মিলিও পাশে বসে এটা ওটা বলছে।

নুরকে প্রথম হলুদ নুহাশই দিয়েছে।যতই বোনের সাথে ঝগড়া হোক, মান অভিমান হোক দিন শেষে ভাইয়ের চেয়ে আপন আর কে আছে।নুরকে হলুদ দেয়ার সময় নুহাশের চোখদুটো ছলছল করছিলো নুর সেটা লক্ষ্য করে ভাইকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে।

“এই পাগলি কান্না করছিস কেন।ইশ আমি কোথায় ভেবেছিলাম তোর জামাইকে ঘরজামাই করে রাখবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা করবো না।তোকে বিদাই না করলে আমার কপালে ভাত জুটবে না।

” ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আজকেও তুমি এমন মজা করবে?

“মজা না সত্যি বলছি।ইশ বেচারা রোহিত কি ভেবে তোকে যে বিয়ে করছে কে জানে।তুই যে কি সেটা তো আমি জানি।হার মাংস জালিয়ে খাস।

” বেশ করি। আরো করবো।তোমাকে জালিয়ে পুরিয়ে ছাই বানাবো তবেই আমার নাম নুর হুহ।আই লাভ ইউ ভাইয়া।

“লাভ ইউ টু মাই প্রিন্সেস।

” তোরা এখানে হলুদ দিচ্ছিস নাকি ইমশোনালের সাগরে ভাসাতে এসেছিস।সর তো নুহাশ আমরা হলুদ দিবো তো নাকি।দেখেছো আপা তোমার ছেলে মেয়ের কান্ড?

“আমি প্রতিদিনই এসব দেখি ছোট ভাবি।এবার তোমরাও দেখো এই অসভ্য গুলোকে আমি কিভাবে সহ্য করি।

” আমি মোটেই অসভ্য নই মা তোমার ছেলে অসভ্য।

“আমি অসভ্য নাকি তুই অসভ্য?

” উফ আপনারা থামুন না।নুহাশ কিছুদিন বাদে আপনি বাবুর বাবা হবেন এখনো এমন করলে আমার বাচ্চা তো পাগল হয়ে যাবে।

“তাতে তোমার কি? আমার বাচ্চা পাগল হোক আর যাই হোক আমারই হবে বুঝলে।

” আম্মা!

“নুহাশ আব্বা যাও তো এখান থেকে কেন আমার মেয়ে দুটোকে জালাচ্ছো।সাব্বির একে এখান থেকে নিয়ে যাও তো বাবা।

” হ্যাঁ আন্টি।এই নুহাশ চল আমরা খাবারের দিকটা দেখে আসি সব ঠিকঠাক আছে কি না।

নুহাশ আর সাব্বির পাশাপাশি হাটছে আর খাবারের আয়োজন কতটা এগিয়েছে সেটাই পর্যবেক্ষণ করছে।

“তুই মাঝে মাঝে এমন বাচ্চামি করিস না নুহাশ আমি ভেবে পাই না রাজনীতি কিভাবে করিস তুই।আর তোর যে ভয়ংকর একটা দিক আছে সেটা তো এখনকার তোর সাথে আমি মিলাতেই পারি না।আচ্ছা তুই নুরের পিছনে এতো লাগিস কেন বলতো?

” আসলে নুরটাকে আমি এতো ভালোবাসি না যখন মনে হয় ও আমাকে আম্মাকে ছেড়ে অন্য বাড়িতে চলে যাবে আমার ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যায়।সম্পর্ক কেমন একটা টান তাই না।এই দেখনা ওদের সাথে আমার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই অথচ ওরা আমাকে কখনোই সেটা বুঝতে দেয় নি।আর নুর ও যে আমার কাছে কি সেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।আম্মার মুখে শুনেছি ছোট বেলায় আমি নাকি কোথাও গেলে নুরের হাত ধরে রাখতাম।বাড়িতে না আসা পর্যন্ত নাকি সেই হাত ছাড়তাম না।আমরা নাকি কখনো কেউ কারো সাথে মারামারি পর্যন্ত করতাম না।বাবা কিছু এনে দিলে দুজনের কেউই একা খেতাম না।নুরটা ছোট বেলা থেকেই নরম মনের মানুষ ।কোনো খেলনা এনে দিলে যদি সেটা একটা হতো সবার আগে নুর সেটা আমাকে দিতো।যদিও পরে নুরই তার ভাগিদার হতো।কিন্তু আমি কখনোই দেখিনি আমার আগে নুর কোনো জিনিস নিয়েছে বা নিতে চেয়েছে।আর আমার সেই ছোট্ট পরিটা কতো বড় হয়ে গেছে।আজ বাদে কাল অন্য কারো ঘরে যাবে তার ঘর আলো করতে।এই সময়টা একটা ভাইয়ের কাছে কতটা কষ্টের তোকে বলে বুঝাতে পারবো না রে।তখন ওকে হলুদ লাগানোর সময় ওর কান্নাভেজা চোখ দেখে আমি আর চুপ থাকতে পারিনি তাই তো এমনটা করলাম একটু হাসানোর জন্য।

“ইশ আমার যদি একটা বোন থাকতো। মা বেঁচে থাকলে হয়তো হতো।যাই হোক চল প্রোগ্রামের দিকটাও তো দেখতে হবে।

” একটা কথা বলি?

“অনুমতি কেন নিচ্ছিস বলে ফেল না ভাই।

” তুই মিলিকে বলে দে না। আমার মনে হয় ও রাজি হবে।

“আমি আসলে রিলেশন করতে চাইছি না নুহাশ।আমি চাই মিলিকে বিয়ে করতে।কিন্তু ও রাজি হবে না।তাছাড়া আমার এই জীবনে ওকে এনে বিষাদ দিতে চাই না।

” কেন তুই কি স্মাগলার নাকি কোনো জেল পলাতক আসামি?

“তা হয়তো না।কিন্তু আমার আছে কি বলতো।একটা বাড়ি তাও বাবার রেখে যাওয়া।আমি তো কোনো কোটিপতি নই আর না আমার তেমন কোনো সেভিংস আছে।যা আছে সবকিছুই বাবার আর তোর বাবার । এছাড়াও আমি একা মানুষ। কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। যে প্রফেশন এ আছি যখন তখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে।হ্যাঁ এটা ঠিক আমি পুলিশের যব করছি দুই বছর কিন্তু এর আগে যেহেতু স্পেশাল ক্রাইম গ্রুপে কাজ করেছি সেখানে জানাশোনা শত্রুর অভাব নেই।আমার এই অনিশ্চিত জীবনে ওকে কি করে আগলে রাখবো?

” পুরো সিনেমার ডায়লগ। কেন আমরা কি তোর কেউ না।তাছাড়া সব মেয়েরা টাকা পয়সা, অর্থ সম্পদ চায় না।মিলিও তেমন মেয়ে না।আমি তো বলবো তোর জন্য মিলির মতো মেয়েই পারফেক্ট। তাই বলছি পাখি অন্য খাচায় বন্দী হওয়ার আগে নিজের খাচায় বন্দী কর।আমি বলছি তুই হারবি না।

“বলছিস?

” হ্যাঁ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।

হলুদে সবার অবস্থা যা তা।কেউ কেউ তো হলুদ দিয়ে ভুত সেজেছে এমন।নুহাশ তখন থেকে ছোয়াকে খুজে যাচ্ছে।ছোয়ার এই অবস্থায় নুহাশ বেশিক্ষণ ছাদে থাকতে দেয় নি।সবাই আনন্দ করেছে ছোয়া করতে পারেনি বলে নুহাশের ওপর অভিমান জমেছে তার মনে।তাই তো মায়ের ঘরে চুপটি করে বসে আচার খাচ্ছিলো।এদিকে নুহাশ সব যায়গা খুজেও যখন ছোয়াকে পেলো না তখন মায়ের ঘরের কথা মনে হলো।যা ভেবেছিলো তাই।এদিকে তাকে খুজে পাগলপ্রায় নুহাশ আর তিনি মনের সুখে আচার খাচ্ছে।

“কতবার বলেছি ছোয়া আচার খাও তবে লিমিটেড। এখন এটা রাখো।

” কি সমস্যা কথা কেন বলছো না?

“কেন বলবো সবাই কতো মজা আনন্দ করলো আর আমি কি করলাম ঘরে এসে সঙের মতো বসে আছি।আমাকে একা রেখে নিজেও চলে গেলেন।এখন কেন এসেছেন শুনি যান তো এখান থেকে।

” অযথা রাগ দেখাবে না তো।তুমি খুব ভালো করেই জানো সেখানে কেন থাকতে দেই নি।তুমি আসার পর বাকিরাও সব চলে এসেছে তুমি নেই বলে।

“সত্যি!

” হ্যাঁ এবার চলো।সবাই অপেক্ষা করছে তো।

হলুদের পরে সবাই নিচে নেমে গেছে অনেক আগেই।ছোয়া মিলিকে একটা শাড়ির প্যাকেট দিয়েছে এবং বলেছে এটা সাব্বির ওর জন্য কিনেছে।সাথে এও বলেছে যে সাব্বির ওকে ভালোবাসে বিয়ে করতে চায়।এটা নিয়েই ভাবছে মিলি।
মিলির মা নেই। ছোট বেলা থেকে বাবাই তার সবকিছু।মিলির এক্স বয়ফ্রেন্ড এর কথা তিনি সবই জানতেন।তার বিয়ে ঠিক হয়েছে এটাও তিনি জানেন।তিনি শুধু মিলিকে বলেছিলো তুই যেটাতে খুশি থাকিস তাই করিস মা।তুই যাকে ভালোবাসিস তাকেই বিয়ে করিস।মিলি শহরে একা থাকে তার পেছনেও যথেষ্ট কারণ আছে। মিলির মা মারা যাওয়ার পর চাচা ফুপুরা জোর করে অন্য যায়গায় বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।মিলির বয়স তখন মাত্র পনেরো বছর ।মিলির বাবা মেয়েকে নিয়ে শহরে চলে আসেন যাতে মিলি নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়ে নিতে পারে।মেয়ে যেন কোনো দিক থেকেই অবহেলিত না হয় তাই তিনি তার গ্রামের কিছু জমি বিক্রি করে এখানে একটা ফ্ল্যাট কিনেন।বিগত দুই বছর ধরে তিনি গ্রামে গেছেন।নিজের জমি চাষাবাদের জন্য।তাই মিলি এখানে একাই থাকেন।ছোয়ার সাথে মিলি শুরু থেকেই আছে।কিন্তু সাব্বির কি মিলিকে সত্যি ভালোবাসে? যদি ভালোই বাসে আগে কেন বলেনি?
ভাবনার সুতো কাটলো সাব্বিরের কাপা কাপা কন্ঠে বিয়ের কথা শুনে।

“আ…আমাকে বিয়ে করবে মিলি?

” আপনি জানেন না আমার বয়ফ্রেন্ড আছে?

“ছিলো কিন্তু এখন তো নেই তাই না।

” আপনি আমায় কবে থেকে পছন্দ করেন?

“গুনে দেখিনি তো।তবে অনেকদিন হলো।কেন বলো তো?

” এমনি।কিন্তু আমি তো আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।

” কেন!

” আপনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়।

“এটা কোনো কারন হতেই পারে না।তাছাড়া খুব বেশি বড় ও নই আমি।

” সে আপনি যাই বলুন আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

“দেখো আমি খুব ভালো করেই জানি তোমার আপাতত কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।আর আমি তো প্রেম করবো না বিয়ে করবো।আজ যদি তুমি বিয়ে করতে না চাও তাহলে কিন্তু।

” কি।
ভ্রু কুচকে জানতে চাইলো মিলি।

“তাহলে এই যে আমি মাটিতে বসে পরলাম যতক্ষন তুমি রাজি না হবে আমি এখানেই বসে থাকবো।

“কিন্তু এটা মাটি নয় ছাদ।

” একই তো।উফ এখানে উকিল গিরি দেখিও না তো।

সাব্বির বসে বসে মশা মারছে আর বির বির করছে।এদিকে সাব্বিরের অবস্থা দেখে মিলি পারছে না দমফাটা হাসি দিতে।কেউ বিয়ে করতে চাইলেও এভাবে বলে।বিয়ে বাড়ি আশেপাশে লোকজন এদিক সেদিক ছুটে বেরাচ্ছে।এবার মিলির খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।

“আপনি এভাবে কেন নিচে বসে আছেন সাব্বির ভাই?উঠুন।

” না আগে বলো তুমি আমায় বিয়ে করবে কি না।

“আশ্চর্য আমি যদি রাজি না হই আপনি কি এভাবেই বসে থাকবেন।তাছাড়া কেউ দেখলে কি ভাববে?

” সেটা তো আমি ভাববো না তুমি ভাববে।তুমি হ্যাঁ না বললে আমি উঠছি না দ্যাটস ফাইনাল।

“ঠিক আছে তাহলে আপনি বসে বসে মশার কামড় খান। আমি গেলাম কেমন।

” যা সত্যি সত্যিই চলে গেলো? কি পাষাণীর প্রেমে পরলি রে সাব্বির ধুর।

রাত প্রায় ১২টা ছুই ছুই।নুহাশ সবে মাত্র ঘরে এলো।বাইরের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা সব দেখে নিশ্চিত হয়ে তবেই ঘরে এসেছে।পরিবারের এক ছেলে হলে যা হয় তাও আবার বড়। ভাগ্যিস সাব্বিরের মতো কিছু বন্দু ছিলো নইলে নুহাশের একার অবস্থা হতো ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি।একটা বিয়েতে যে কতো ঝামেলা।হঠাৎ করেই বাবার কথা মনে পরে গেলো নুহাশের।বাবা বেঁচে থাকলে কি নুহাশের এতো কষ্ট করতে হতো?

ছোয়া ঘুমিয়ে আছে গুটিশুটি হয়ে।হালকা শীত শীত আমেজ।পাতলা কম্বল টা জরিয়ে দিলো প্রান প্রিয় স্ত্রীর গায়ে।কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুম হালকা হয় ছোয়ার।নুহাশকে দেখে এক গাল হেসে ওঠে।

“কখন এলেন?

” মাত্রই। উঠছো কেন শুয়ে থাকো।

“আপনার খাবার দিতে হবে তো।

” খেয়েছি।তুমি খেয়েছিলে?

“হ্যাঁ স্যুপ খেয়েছিলাম।

” মানে কি ছোয়া স্যুপ এ কারো পেট ভরে?দাঁড়াও আমি ফল কেটে আনছি সবগুলো খেতে হবে।

“আরে আমি এখন কিছুই খাবো না।আপনি একটু আমার পাশে বসুন না প্লিজ।

” আচ্ছা শুয়ে পরো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

নুর এখনো ঘুমোয়নি।তার চোখে ঘুম নেই।কাল ভাই মাকে ছেড়ে চলে যাবে বলেই আজ তার মন খারাপ।যতই ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে যাক না কেন এই মানুষ টাকে পেতেও তো নুরের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।

নাহার বেগম আজ মেয়ের সাথেই ঘুমিয়েছেন।পানি তৃষ্ণা পাওয়ায় উঠে নুরকে না দেখে একটু ঘাবড়ে যান তিনি।পরে দেখলেন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মেয়ে।

“কি রে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছিস।ঠান্ডা পরেছে আয় ঘুমোবি।

” একটু থাকো না মা।আমার কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না।কেমন যেন একটা কষ্ট হচ্ছে।

“সেকি কি হয়েছে তোর।কষ্ট লাগছে কেন? শরীর ঠিক আছে তো।দাঁড়া আমি নুহাশকে ডাকছি।

” মা আমার কিছু হয়নি এতো হাইপার কেন হচ্ছো।আর ভাইয়া সবে মাত্র ঘরে গেলো ডাকাডাকি করো না তো।

“তাহলে বললি কেন কষ্ট হচ্ছে?

” আসলে তোমাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।তাই ভালো লাগছে না।কি অদ্ভুত তাই না মা।ছোট থেকে যেখানে থাকলাম,যাদের খেয়ে পরে বড় হলাম এখন নাকি সেটাই আমার আসল যায়গা নয়।আসল যায়গা কোথায় শশুর বাড়ি।আমি বিয়ে কিরবো না মা।

“পাগলি।সব মেয়েদেরই এই ত্যাগ টা করতে হয়।আর বিয়ে করবি না মানে কি? এভাবে কেউ বলে বিয়ে তো একদিন করতেই হবে এটাই তো নিয়ম রে।

ঘড়ির কাটায় রাত দুটো বেজে পনেরো মিনিট। নুহাশ খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ছোয়া নুহাশের বুকে মাথা দিয়ে।মুলত ছোয়ার জন্যই এভাবে আধশোয়া হয়ে আছে নুহাশ নয়তো ছোয়ার অসুবিধা হবে।

” দুটো বাজে তুমি এখনো কেন জেগে আছো বলতো?

“ঘুম আসছে না তো আমি কি করবো!

” এভাবে থাকলে কি ঘুম হবে তার জন্য তো ভালো করে শুতে হবে নাকি।

“আপনার কি খারাপ লাগছে এভাবে আমাকে রেখে।ঠিক আছে উঠে যাচ্ছি আমি।

” আমি কি সেটা বলেছি? তুমি যত ইচ্ছে এভাবে থাকো আমার একটুও খারাপ লাগবে না।

“আচ্ছা আপনি ছেলে হলে খুশি হবেন নাকি মেয়ে?

” আল্লাহ যা দিবেন আমি তাতেই খুশি।

“বলুন না। অনেকেই তো আছে ছেলে চায় আপনার এমন কোনো ইচ্ছে নেই?

” না। আমার একটাই চাওয়া যেই আসুক সে এবং তুমি দুজনেই যেন সুস্থ থাকো।আর কিচ্ছু চাই না।

“আর যদি আমি মারা যাই।যদি ডক্টর বলে হয় বাচ্ছা না হয় মা আপনি কোনটা বেছে নিবেন?

” ছোয়া!

“আরে আমি তো মজা করছি এভাবে কেউ ধাক্কা দেয় যদি পরে যেতাম।ধুর মেজাজ টাই খারাপ করে দিলো।আমার ঘুম পেয়েছে গুড নাইট।

নুহাশ আর কিছুই বললো না।ছোয়া কথাটা মজা করে বললেও নুহাশই জানে তার বুকে কথাটা তীরের মতো বিধেছে।নুহাশ দেখলো ছোয়া ঘুমিয়ে গেছে।

” কেন এসব বলো ছোয়া।যদি এমন পরিস্থিতি আসে আমি সত্যিই জানি না তখন কি করবো।না আমি আমার সন্তানকে মারতে পারবো আর না তোমাকে। আমি দুজনকেই চাই।আমি ভালো বাবা হতে চাই।ভালো স্বামী হতে চাই।দ্বিতীয় কোনো নুহাশ হোক সেটা আমি চাই না। আল্লাহ যেন এমন সিচুয়েশন আমাকে না দেন।

সকাল থেকে নুহাশের ব্যাস্ততা বেড়ে গেলো।ছোয়ার কোনো কাজ নেই সে শুধু বসে বসে এদিক সেদিক লক্ষ্য করে যাচ্ছে।এদিকে নুরকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে।সাথে বাকি মেয়েদেরও সাজিয়ে দিবে।

মিলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাল ছাদ থেকে আসার পর সে সাব্বিরকে আর দেখেনি।তাহলে লোকটা কষ্ট পেয়েছে? নাকি রাগ করে চলে গেছে। কাউকে তো বলতেও পারবে না এই কথা।

“কি ব্যাপার মিলি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে?

” কিছু না ম্যাম এমনিতেই।

কথা এড়াতেই সেখান থেকে চলে গেলো মিলি।ছোয়া সবটাই জানে।নুহাশ বলেছে সাব্বিরের থেকে শুনে।সে নিয়ে দুজনেই খুব হেসেছে।আপাতত সাব্বির গেছে মিলির বাবাকে আনতে।ছোয়া বিশেষ ভাবে ইনভাইট করেছে তাকে।সাব্বিরের ব্যাপারেও সব বলেছে।এতে তিনি অমত করেন নি।মেয়ে একা থাকে বিধায় তারও খুব চিন্তা হয়।বয়স হয়েছে মেয়ের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখার ইচ্ছা সব বাবা মায়েরই।তিনিও সেদিক থেকে ব্যাতিক্রম না।সবাই মিলে প্ল্যান করেছে নুরের সাথে মিলির বিয়েটাও দিয়ে দেবে।কিন্তু এ বিষয়ে মিলিকে কিছুই জানানো হয়নি।

বর যাত্রী এসে গেছে।অনেকদিন পর বাবাকে পেয়ে মিলি তার থেকে সরছেই না।বাবা মেয়ে মিলে অনেক গল্প করলো।

কাজি নুরের বিয়ে পরানোর আগে নুহাশ সাব্বির এবং মিলির বিয়ের কথাও ঘোষণা করে দিলো।এটা শুনে মিলির কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। শেষে যখন মিলির বাবা সবটা বুঝিয়ে বললো তারপর মিলিও রাজি হয়ে গেলো।বিদায়ের সময় আবারও কান্নার রোল পরে গেলো।নুরের পর মিলিরও বিদায়ের পালা এলো।মিলির কান্না যখন কিছুতেই থামছিলো না সাব্বির এক প্রকার বিরক্ত হয়ে গেলো।এতো কান্না করার কি আছে সেটাই বুঝতে পারছে না।

“এভাবে কাঁদছো কেন? আমি কি মারা গেছি?

কথাটা শুনে কটমট চোকে সাব্বিরের দিকে তাকালো মিলি।
” ম্যাম আমি এই ছেলের সংসার করবো না।বিয়ের দিনই আকে এভাবে বলছে না জানি এখান থেকে যাওয়ার পর কি ব্যাবহার টাই করবে।

“আমি আবার কি বললাম আজব তো!

” তোমার ম্যাম ও শুরুতে এটাই বলেছিলো বুঝলে মিলি।কিন্তু দেখো এখন সে আর বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে।যাই হোক অনেক ঝগড়া করেছিস।পারলে মারামারি কর কিন্তু এখান থেকে বিদায় হ আগে।

নুহাশের কথায় বাকিরাও এবার শব্দ করে হেসে দিলো।অত:পর মিলিও চলে গেলো।মিলিরা চলে যাওয়ার পর কাছাকাছি যারা আত্নীয় ছিলেন এবার তারাও একে একে যার যার বাড়ি চলে গেলেন।রইলো মিলির বাবা,লুবনা বেগম আর নুহাশের চাচা চাচি এবং বাকি কাজিনরা।

ছোয়া ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে নুরের বিয়ের সব ছবি দেখছিলো।হঠাৎ করেই হাতের ফোনটা নিচে ফেলে দেয়।কিছু পরার শব্দে নুহাশ ফিরে তাকায়।ছোয়ার চোখমুখ দেখেই সে বুঝে গেলো প্রসবের সময় হয়েছে।বিপুলকে গাড়ি বের করতে বলে ছোয়াকে কোলে তুলে নেয়।বিপুল গাড়ি বের করে নাহার বেগম,লুবনা বেগমকে ডাকে।ততক্ষণে নুহাশ ছোয়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছে সাবধানে।বিপুলকে বলে বাকিরা যারা আসবে তাদের নিয়ে আসতে।

ছোয়াকে ওটিতে নেয়া হয়েছে।নুহাশ পায়চারি করেই যাচ্ছে তখন থেকে।সাব্বির বা রোহিত কাউকেই খবর দেয়া হয়নি।আজ ওদের বিশেষ রাত এখন বিরক্ত করাটা ঠিক মনে হয়নি নুহাশের।
নাহার বেগম ছেলেকে সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।

“চিন্তা করো না আব্বা সব ঠিক হবে।ছোয়া আর বাচ্চা সবাই ভালোই থাকবে দেখো।

” দোয়া করুন আম্মা তাই যেন হয়।

একটু পর কেবিন থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো।নার্স বাইরে এসে খবর দিলো তাদের একটি মেয়ে হয়েছে।মা এবং বাচ্চা দুজনেই ভালো আছে।একটু পর কেবিনে শিফট করা হবে তখন সবাই দেখা করতে পারবে।সবকিছু শুনে নুহাশ যেন স্বস্তি পেলো।

রাতে সেখানে শুধু লুবনা বেগম,নাহার বেগম এবং নুহাশ রইলো।বাইরে অবশ্য গার্ড আছে দুজন। বিপুলকে সবাইকে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হলো।

নাহার বেগম আর লুবনা বেগম বাইরে বসে আছে।নুহাশ মেয়েকে কোলে নিয়ে বার বার চুমু খাচ্ছে।সাথে ছোয়াকেও বাদ রাখেনি।

“আপনি খুশি হয়েছেন নুহাশ?

” অনেক।ধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়ার জন্য।

সকালে নুর এবং মিলি এলো।ফজরের নামাজ পরে ওদের খবর দিয়েছে নুহাশ।

“তুমি এমন কেন ভাইয়া আমাকে আগে কেন বলনি?

” বললেই কি তখন আসতে পারতি।তাছাড়া ওবাড়িতে এতো লোকজন ছিলো সবাইকে রেখে এখানে আসাটা ঠিক হতো না তাই বলিনি।

ছোয়ার শারীরিক ককন্ডিশন ভালো থাকায় পরদিনই ওকে বাড়িতে নিয়ে গেছে নুহাশ।বাড়িতে বেশ রমরমা পরিবেশে। সবকিছু দেখে নুহাশের এটাই মনে হলো এইতো আমার পরিবার। আমার পুর্নতা।এই জীবনে আর কিইবা চাওয়ার থাকতে পারে।

“আপিনি ভুল বলছেন নুহাশ আমার নয় আমাদের পুর্নতা।

” আচ্ছা ওর ডাক নাম পুর্নতা রাখলে কেমন হয় ম্যাম?

“বাহঃ ভালো কথা বলেছো তো।আমি এই নামেই ডাকবো।

” ঠিক আছে আমরা সবাই এই নামেই ডাকবো।” নুহাশ ছোয়ার পুর্নতা”।

সমাপ্তি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে