প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১৩

0
280

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১৩
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

আজ নুহাশকে কোর্টে নেয়া হবে।সকাল থেকেই ছোয়া খুব ব্যাস্ত। বার বার সবকিছু দেখে নিচ্ছে ঠিকঠাক আছে কি না।আজ নাহার বেগম একটু বেশিই অসুস্থ তাই নুর থেকে গেলো মায়ের কাছে।রোহিত ছোয়ার সাথে গেলো এবং বিপুলকে রেখে গেলো নুরদের দেখে রাখতে।

এর মধ্যে লুবনা বেগম টিভির নিউজ দেখে বায়না ধরেছে সে ঢাকায় আসবে।ছোয়ার মামা কিছুতেই বোনকে আটকে রাখতে পারছিলো না।উপায় না পেয়ে ছোয়ার সাথে কথা বলে তবেই ক্ষান্ত হয় লুবনা বেগম।

মেয়ের এতো বড় বিপদ অথচ মা হয়ে একমাত্র মেয়ের পাশে থাকতে পারছেন না তিনি।তাই রেগে মেগে ছোয়ার সাথে আর একটা কথা না বলে ফোন রেখে দিলেন খট করে।
ছোয়াও বিষয় টা বুঝে কিন্তু মাকে তো এখানে এখন আনাই যাবে না এটা মাকে বলতেও পারবে না তাই ছোয়া আর ফোন করেনি।

মিলিও তারাতাড়ি চলে এসেছে।ছোয়া মিলিকে বললো সবকিছু চেক করেছে কি না।

“ম্যাম কাল থেকে চেক করছি।আপনি না বললেও।আজ অব্দি এতো কেস জিতেছেন।কতো জটিল কেস সলভ করেছেন আপনাকে এতোটা নার্ভাস আমি দেখিনি যতটা আজ দেখছি।

” আমিও জানি না মিলি এমন কেন হচ্ছে।সত্যি বলতে যতই কোর্ট এর দিকে এগোচ্ছি ততই আমার হাত পা কেমন পাথর হয়ে আসছে।হয়তো নুহাশ আমার আপনজন বলেই এমন হচ্ছে।

“এতো চিন্তা কেন করছেন ম্যাম সব ঠিক হবে দেখবেন।

” ঠিক তো হতেই হবে মিলি তা না হলে আমি আমার শাশুড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না।আর না নুরের সামনে।সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার সন্তানকে কি জবাব দিবো?

“আরে মিস ছোয়া যে।সরি মিস বলে ফেললাম আপনি তো এখন মিসেস।আপনিই তো নুহাশ চৌধুরীর কেস নিয়ে লরছেন তাই না?

” হাই মিঃ শামিম। আপনি ঠিকই শুনেছেন।

“আপনার জন্য বড্ড খারাপ আলছে আমার।

” কেন বলুন তো?

“এই যে জীবনের প্রথম হার তাও আমার কাছে।আপনি জানেন তো আপনার বিপক্ষে আমি থাকছি?

” তা জানি। তবে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।দেখুন এখনই তো বলা যাচ্ছে না যে আমি হারবো কি না তবে আপনাকে একটা কথা দিতে পারি।আর তা হলো আজ কোর্টে বিশাল এক ধামাকা হবে।

“ধামাকা মানে!হারার আগেই পাগল হয়ে গেছেন নাকি?

” সেটা না হয় তোলা থাক ঠিক সময়ে খেলা শুরু হয়ে যাবে আপনি বরং তখনই দেখতে পাবেন।
চলো মিলি আমাদের যেতে হবে কিছুক্ষণ পরই তো কোর্টের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

“এতো তেজ তোমার ছোয়া আমিও দেখবো এই তেজ আজকের পর কোথায় থাকে।

ছোয়া মিলিকে নিয়ে চলে গেলো।শামিম তখনও ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।শামিমকে ছোয়ার পছন্দ নয় শুরু থেকেই। বউ থাকা সত্ত্বেও ছোয়ার পিছনে পরে ছিলো দুটো বছর। এছাড়াও শামিম ছোয়ার থেকে গুনে গুনে ১৪ বছরের বড়। একদিন তো ছোয়াকে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিলো।সেদিন ছোয়া তার উপযুক্ত যবাবও দিয়েছিলো। চাইলেই অনেক কিছু করতে পারতো ছোয়া তবে শামিমের ৫ বছরের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুই বলেনি।তা না হলে ওই বাচ্চাটার মনে এর বাজে একটা প্রভাব পরতো।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো।তবে এটা সত্যি সেদিনের পর শামিম আর ছোয়কে কোনো ভাবেই বিরক্ত করেনি।

” দেখেছেন ম্যাম এই লোকটা ধরেই নিয়েছে আমরা আজ হেরে যাবো।একবার কেসটা জিতি ওই শাইম্মাকে আমি দেখে নিবো।

“বাদ দাও মিলি।এসব নিয়ে আমাদের না ভাবলেও হবে।তবে আমি ভাবতেও পারিনি আমার প্রতিপক্ষ এই লোকটা হবে।

” আমার মনে হয় অনেক মোটা অংকের টাকা খেয়েছে। কিন্তু ম্যাম একটা জিনিস খেয়াল করেছেন এই শামিম লোকটা এখনো আপনাকে বাজে নজরে দেখে।

“হুম বুঝেছি।আমি এখন এটা নিয়ে ভাবছি না।

” ম্যাম নুহাশ স্যার!

“কোথায়?

” ওইতো গাড়ি থেকে নামছে।

নুহাশ গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে কাউকে খুজছে, হয়তো ছোয়াকেই।পেয়েও গেছে।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হলো।নুহাশ চমৎকার ভাবে একটা মুচকি হাসি দিলো।ছোয়ার বুকটা ধক করে উঠলো। নুহাশের চোখের নিচে কালি পরে গেছে।চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে ঠিক মতো খায়নি।হয়তো কালও রিমান্ডে নেয়া হয়েছিলো।তার প্রমান নুহাশের কালশিটে চেহারায়। কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারলো না। তার আগেই নুহাশকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো।তবে এই না বলাতেও যেন অনেক কথা হলো।

“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?

” কি করে ঠিক থাকবো বলতে পারো মিলি।ওরা ওনাকে কিভাবে টানতে টানতে নিয়ে গেলো দেখেছো।আর শরীরে ওই দাগ সেতো এমনি এমনি হয়নি।নিশ্চয়ই অনেক টর্চার করা হয়েছে।

“আচ্ছা মিস ছোয়া আমি যতদূর সুনলাম আপনি এবং আপনার ক্লায়েন্ট সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী। তাই আপনি তো চাইবেনই যে আপনার স্বামী ছাড়া পাক এবং নির্দোষ প্রমাণিত হোক। আর তার জন্য আপনি যে কোনো পথ অবলম্বন করতে পারেন তাই না?

কথাটা শামিম বলেছে ছোয়াকে।যখন ছোয়া একের পর এক প্রমান আদালতে পেশ করছিলো আর তা সবকিছুই এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে তখন মোড় পাল্টাতে এই কথা বলে শামিম।তবে তার আশায় এক বালতি পানি ঢালে ছোয়া।

” আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন মিঃ শামিম?

“না মানে আমি বলতে চাইছি না, জানতে চাইছি আর কি।আপনি আবার কোনো অসত উপায় এই প্রমাণ গুলো জোগার বা এমনও হতে পারে এগুলো সব মিথ্যা।আজকাল তো সবই সম্ভব।

” মি’লর্ড আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু হয়তো ভুলে যাচ্ছে যে এটা কোর্ট।আর এখানে জালিয়াতি চলে না।আমি যেই প্রমাণ গুলো পেশ করেছি এটা তো সামান্য কিছু ডকুমেন্টস মাত্র।এগুলো মিথ্যে নয় এটাও আমি প্রমাণ করে দিবো।
মি’লর্ড এখন একটা ভিডিও পেশ করতে চাই যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে।

“অনুমতি দেয়া হলো।

তারপর ছোয়া সেই পার্সেল এ পাওয়া ফোনের ভিডিও পেশ গুলো জর্জ সাহেবকে দিলো।সবটা দেখে তিনি বললেন-
“এখানে স্পষ্ট ভাবে মিঃ শিকদারের নাম বলে গেলো।

“মিথ্যে এসব মিথ্যে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে মি’লর্ড।

এরশাদ শিকদারের আওয়াজে সবাই এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।শামিম চেষ্টা করছে তাকে থামানোর।

” আপনি দয়া করে চুপ করুন।এভাবে চিৎকার করলে উল্টো আপনি ফেঁসে যাবেন মিঃ শিকদার।

“আপনার যা বলার সামনে এসে বলুন।

” মি’লর্ড আমি শিকদার সাহেবকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

“অনুমতি দিলাম।

” ধন্যবাদ মি’লর্ড। আচ্ছা মিঃ শিকদার দেখুন তো এই স্বাক্ষর টা আপনার কিনা?

“হ্যাঁ আমার।

” আনি শিওর তো?

“কি আশ্চর্য আমার স্বাক্ষর আমি চিনবো না?

” ঠিকি তো।মি’লর্ড এটা একটা ডকুমেন্টস যেখানে গত সপ্তাহে প্রায় ১লাখ টাকার ই*য়া*বা এবং ১০ জন মেয়েকে জোর করে এদেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হয়েছিলো। যেখানে শিকদার সাহেবের স্বাক্ষর রয়েছে।এটা তারই ডকুমেন্টস। আর সেই ই*য়া*বা এবং মেয়ে গুলো এখন পুলিশের হেফাজতে আছে।আর
এই হচ্ছে আজ থেকে ১৮ বছর আগে সরকারি পক্ষের উকিল সোলাইমান এবং ৬ মাস আগে আলহাজ্ব চৌধুরীর খুন এই দুটোই মিঃ শিকদার করিয়েছেন।সোলাইমানের খুনের বিষয় ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি বিদেশে পারি জমান।শুধু তাই নয় আলহাজ্ব চৌধুরীর খুনের আগের দিন তিনি গোপনে দেশে আসেন এবং তাকে খুন করে খুব গোপনেই আবারও বিদেশে ফিরে যান।এই হচ্ছে এয়ারপোর্টের সমস্ত তথ্য।এবং শহরে যে খুন গুলো হয়েছে তার সবকিছুর পিছনে রয়েছে এরশাদ শিকদার। এখানে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে।আপনি দেখে নিতে পারেন।

“না এসব মিথ্যে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

” তাই নাকি! তাহলে একটু অপেক্ষা করুন।মি’লর্ড আমি আমার তরফ থেকে এই কেসের শেষ প্রমাণ টা পেশ করতে চাই।যেখানে কাল ওনাদের বাংলোতে নিজ মুখে শিকার করেছে এই খুনের কথা।আর শুধু তাই না এরশাদ শিকদার এবং শামসুল রহমান অরুফে শামসুল শিকদার দুজনে মিলে মিঃ নুহাশ কে নিজেদের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য এই নোংরা চক্রান্ত করেছে।যাতে শামসুল এমপির পদে বসতে পারে আর ভাইয়ের দাপট নিয়ে শিকদার সাহেব তার সমস্ত কালো বিজনেস করে যেতে পারে।কি তাই তো শিকদার সাহেব?

“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই।আমার আরো বড় ভুল হচ্ছে নিজের ভাইকে বাচিয়ে রাখা।ওর জন্য শুধু মাত্র ওর জন্য আজ আমাকে ধরা পরতে হলো।

” মিঃশামিম আপনি বলছিলেন না নুহাশ আমার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর?

“হ্যাঁ।

” আপনার তো ছেলে আছে তাই না?

“হ্যাঁ আছে।

” আপনি তাকে ভালোবাসেন নিশ্চয়ই?

“অবশ্যই বাসি।

” এক্সাক্টলি। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে চাই এটা সত্য তবে এর থেকেও বড় সত্যি আমি শুধু আমার স্বামীকেই বাঁচাতে আসিনি। আমার অনাগত সন্তানের বাবাকে বাঁচাতে এসেছি।আর যেখানে সে কোনো অপরাধই করেনি সেখানে সে কেনই বা শাস্তি ভোগ করবে? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, আইন সম্পর্কে না প্রমাণে বিশ্বাসী। আর আমি প্রমাণ দিয়েছি।আমার আর কিছু বলার নেই মি’লর্ড।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে