প্রেম তুমি পর্ব-১২

0
1173

#প্রেম_তুমি
#part :12
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিল বারান্দায় বসে হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে।গিটার সাথেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে মাঝে মাঝে নিজেও গেয়ে উঠছে।গান শুনার মাঝেই ধার্শানের এক তারফা গান টা বেজে উঠতেই অর্নিল থেমে গেলো। অবসর সময় আয়রার সাথে কাটালেই ও ধার্শানের গান শুনতো।মাথায় আবারও আয়রার কথা তাড়া দিয়ে উঠলো।অর্নিল মনে মনে বলে উঠলো

–আয়রা কি আর ফিরে আসবে না।

আয়রার কথা মাথায় আসতেই আরেকটা কথা মাথায় নাড়া দিয়ে উঠলো।
-আয়রাকে এতোবার ফোন দিলো একের পর এক দিয়েই গেলো কিন্তু তার পরিবর্তে একটা কল ও করলো না।এতো তারাতারি ভুলে গেলো এতোদিনে কি এক বিন্দু জুরেও জায়গা বানাতে পারে নি।

অর্নিল গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষন বসে থেকে হেডফোন খুলে উঠে রুমে গেলো। মাথায় বেশি চাপ পরলেই ঘুম পায় কেনো যেনো।অর্নিল ভেঙে যাওয়া ফোনটা ড্রয়ার থেকে বের করে খুলল।সাথে সাথেই নোটিফিকেশনে আয়রার কল দেখতে পেল।আয়রার কল দেখে অর্নিল মুহূর্তেই উত্তেজিত হয়ে পরল।আয়রাকে ফোন করতে নিবে তখনই অর্পা বেগম অর্নিলের রুমে আসে।

–এই অর্নিল আমার সাথে আয় তো।

অর্নিল মোবাইলের দিকে তাকিয়েই ব্রু কুচকে বলল

–এখন না একটু পর আসছি কাজ আছে।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিলের হাত থেকে মোবাইল টা ছিনিয়ে নিয়ে অর্নিলের হাত ধরে উনার রুমে নিয়ে গিয়ে নিজের মোবাইল হাতে ধরিয়ে বলল

–নে এইবার তোর ফুপ্পি,চাচা,আংকেল উনাদের ফোন করে কালকেই আসতে বল।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নিল বিরক্ত নিয়ে বলল

–আজব তো আমি কেনো এই সব কাজ করবো আব্বু কে বলো।

অর্পা বেগম অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল

–তোর বাবার শরীর অনেক ব্যাথা করছে বললো তাই উনি ঘুমিয়ে পরেছে। তাই তো আমি তোকে বললাম।প্লিজ বলে দে ওদের ফোন করে।

অর্পা বেগম বলে অর্নিলের মোবাইল নিয়েই চলে যায়। তারপর অর্নবের রুমে যায়।নক করতেই অর্নব দরজা খুলে দিয়ে ওর মা কে দেখে ভিতরে ঢুকতে বলে। অর্পা বেগম ভিতরে ঢুকে অর্নব কে বলে

–অর্নব এই মোবাইলটা তুই তোর কাছে রাখ নে।

অর্নব অর্নিলের ভেঙে যাওয়া মোবাইল ওর মার কাছে দেখে অবাক হয়ে বলে

–এই মোবাইল আমাকে দিচ্ছো কেনো?

–অর্নিল আমার কথা শুনছে না এই মোবাইলের জন্য যতক্ষণ আমার কাজ শেষ না হবে এই মোবাইল তোর কাছেই রাখবি।

অর্নব ব্রু কুচকে আবারও বলে

–কিন্তু ও এই মোবাইল নিয়ে বসে থাকবে কেনো ও তো নিউ মোবাইল কিনেছে ওটা তো ওর কাছেই।

অর্নবের একের পর এক প্রশ্ন করায় অর্পা বেগম বিরক্ত নিয়ে বলল

–চুপ কর যা বলেছি তা কর বেশি কথা না বলে।

অর্পা বেগম চলে যেতেই অর্নব মোবাইলটা ওর ড্রয়ারের ভিতর রেখে দেয়।

অর্নিল সবাইকে ফোন করা শেষ হতেই অর্পা বেগমের কাছে যায়।অর্পা বেগম উনার খাটে বসে কারো সাথে কথা বলছে। অর্নিল সামনে দারিয়ে ওর মার দিকে তাকিয়ে বলল

–আম্মু আমার মোবাইল দাও।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম কানের থেকে মোবাইলটা একটু দূরে সরিয়ে বলল

–তুই ওই ভাঙা মোবাইল দিয়ে কি করবি।আর এখন ওই মোবাইল দিতে পারবো না কাল নিস।

অর্পা বেগম আবারও মোবাইলে কথা বলতে লাগল। অর্নিল রেগে ওর রুমে চলে যায়।অনেক চিন্তা ভাবনার পর ভার্সিটির স্যারের কাছে আয়রার গ্রামের ঠিকানা জানবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

ফোনের রিং এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো অর্নিলের। রোহানের কল। অর্নিল উঠে বসে ফোন রিসিভ করতে রোহানের কন্ঠ ভেসে আসে।

–অর্নিল কয়টা বাজে খেয়াল আছে।আজ আমাদের কি প্লেন ছিলো ভুলে গেলি?

–ফোন রাখ আমি আসছি।

অর্নিল মোবাইল বিছানায় রেখে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যেতেই হল ভর্তি মানুষের দৃষ্টি ওর দিকে দেখে অর্নিল ব্রু কুচকে তাকায়। কাল রাতে ফোন করে আসতে বলেছে তাই বলে এতো সকাল সকালে এসে সবাই হাজির হয়ে গেলো দেখে বিরক্ত হয়ে বাইকের চাবি নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে নিতেই ওর মা ডাক দিলো। অর্নিল ঘাড় ফিরিয়ে অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–হোয়াট?

অর্নিলের মা অর্নিলের কাছে এসে বলল

–কোথায় যাচ্ছিস? কেমন ভাই তুই কাল তোর ভাইয়ের বিয়ে আর সব কাজ ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিস?

অর্নিল বিরক্ত নিয়ে বলল

–আরে তুমি আমায় বিরক্ত কেনো করছো।

অর্পা বেগম জিদ ধরে বলল

–না তুই আজ বাহিরে যেতে পারবি না।ভিতরে আস তোর ফুপ্পি,চাচা রা এসেছে সকলের সাথে কথা বল গিয়ে।

অর্নিল বিরক্ত চেপে রেখে শান্ত হয়ে বলল

–আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু আমার এখন যেতেই হবে আমি কিছুক্ষন পরেই এসে পরবো।প্রমিস।

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম অর্নিল যে যেতে দেয়।

অর্নিল ভার্সিটি তে গিয়ে দেখে রোহান তুশার ফারহা জেবা সকলে গ্রাউন্ড এর কর্নারে চেয়ারে বসে আছে।অর্নিল কে দেখে ফারহা বলল

–অর্নিল তুমি এতো লেট কেনো করলে? চলো এখন।

ফারহার কথায় অর্নিল ওদের সামনে গিয়ে বলল

–সরি গাইস।আজ গান গাইতে পারবো না। তোদের তো বললাম কাল অর্নবের বিয়ে।আর আজকে আমার একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।অন্য একদিন ওকে?

অর্নিল জেবাকে নিয়ে অফিস রুমে আসতেই জেবা ব্রু কুচকে বলল

–এখানে কেনো নিয়ে এলি?

অর্নিল জেবার দিকে তাকিয়ে বলল

-একটা হেল্প লাগবে।তুই প্লিজ স্যারের থেকে আয়রার গ্রামের ঠিকানা টা জেনে আয়।

–আবার আয়রা।

–প্লিজ।

–তোকে প্লিজ বলতে হবে না আমি যাচ্ছি।

জেবা স্যারের থেকে ঠিকানা জেনে অর্নিলের কাছে দিতেই অর্নিল জেবাকে জরিয়ে ধরে বলে

–থেংক্স।

জেবা অর্নিল কে ছাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে

–তাহলে কি আজই যাবি আয়রাকে খুজতে?

অর্নিল ঠোঁট কামড়ে জেবার দিকে তাকিয়ে বলে

–নাহ আজ যেতে পারবো না।অর্নবের বিয়ে কাল বাড়িতে অনেক কাজ আছে।

ঘর মুছে পুরো পরিষ্কার করে ক্লান্ত হয়ে নিচেই বসে পরে।

বিকেলে ঢাকায় এসেছে।আয়রা যেখানে থাকতো সেই বিল্ডিং এরই একটা ফ্লাট ভাড়া নেয়।
সব জিনিসপত্র ফ্লেটে এনে আর পরিষ্কার করতে করতে রাত ৮ টা বেজে গেছে।আয়রাকে এতো কাজ করে নিচে বসে পরে।আয়িরাকে এভাবে অস্থির হয়ে নিচে বসে পরতে দেখে জুহি বেগম বলে

–তুই এখন বিশ্রাম কর আমরা বাকি কাজ কাল করে নিবো।

আয়রা ওর মার কথায় একমত প্রকাশ করে ঘুমিয়ে পরে।হাত পা ব্যাথা করছে আজ অনেক ধকল গেলো সকলের উপর। জুহি বেগম ও কোনোরকম করে নিচেই ঘুমিয়ে পরে।

অর্নিল আর অর্নব ছাদে বসে কথা বলছিলো নিচ থেকে আওয়াজ পেয়ে দুজনেই নিচে যায়।
ফারহা আর ওর মা বাবাকে এই রাতে নিজেদের বাসায় দেখে অর্নিলের ব্রু জোড়া কুচকে যায়।অর্পা বেগম অর্নিল কে দেখে হাসি মুখে অর্নিলের হাত ধরে ফারহার পাশে বসিয়ে দেয়।তখনই ফারহার মা বলে উঠে

–দেখেছেন ফারহা আর অর্নিল কে একসাথে কি সুন্দর দেখাচ্ছে।

ফারহার মার কথায় অর্পা বেগম মুচকি হাসি দিলো।অর্নিলের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।অর্নিল ফারহার পাশ থেকে উঠে ফারহার উদ্দেশ্যে বলে

–ফারহা এই সব কি?

ফারহা কিছু বলার আগেই অর্পা বেগম বলে

–অর্নি তুই আমাকে বললেই পারতি।আমার তো ফারহা কে প্রথম থেকেই খুব ভালো লাগে। আমার তোর আর ফারহার সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই।

অর্নিলের এতোক্ষনে সকল বিষয় ক্লিয়ার হয়।অর্নিল ফারহার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে

–তোকে আমি কিছু বলি না তাই বলে এতো সাহস পাচ্ছিস তাই না। যা এক্ষুনি চলে যা এখান থেকে।

–কিন্তু অর্নিল আমার কথা তো শুনো।

–আই সেইড গেট লস্ট।

ফারহা ওর মা বাবাকে নিয়ে চলে যায় ফারহা ভেবেছিলো অর্নিলের মা কে রাজি করিয়ে অর্নবের বিয়ের সাথে ওর আর অর্নিলের বিয়েটাও যেনো হয়ে এই প্লেন করেই এতো রাতেই এসেছিলো। কিন্তু অর্নিলের এমন অপমানে অর্নিলদের বাড়ি থেকে চলে গেলো ।ফারহারা যেতেই অর্পা বেগম রেগে অর্নিলের সামনে এসে দারিয়ে বলল

–অর্নিল এইসব কেমন আচরণ করলি তুই।আর হলো টা কি?

অর্নিল বিরক্ত হয়ে বলল

–আমার ভালো লাগছে না আমি রুমে গেলাম।

অর্পা বেগম অর্নিল কে এভাবে রেগে যেতে দেখে অর্নব কে নিয়ে উনার রুমে যায়।তারপর বলে

–অর্নব তুই আজ সত্যি করে বল তো কি হয়েছে অর্নিলের।

অর্পা বেগমের প্রশ্নে অর্নব আয়রার কথা বলে দেয়।অর্পা বেগম অর্নবের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল

–এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে কিছুই বলিস নি।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে