প্রেম তুমি পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
1845

#প্রেম_তুমি
#part :17,,, last part
#Mishmi_muntaha_moon

সকলে একসাথে বসে সকালের নাস্তা করছে।খাবার খাওয়ার মাঝেই অর্নব অর্নিল কে জিজ্ঞাস করল

–তুই এখনি চলে যাবি।

অর্নিল খাবার খাওয়া শেষ করে দাঁড়িয়ে বলল

–হুম এখনি বের হবো।আমার পেকিং ও শেষ আর তুলির দূরসম্পর্কের আত্নীয় কখন আসবে?

অর্নিলের কথা শুনে অর্পা বেগম মৃদু কন্ঠে বলল

–রাস্তায় আছে হয়তো।

–ওহ আচ্ছা।

অর্নিল রুমে গিয়ে মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে।বের হলো। অর্নিল কে বের হতে দেখে অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–এখনি চলে যাচ্ছিস আরেকটু পর যা।

–কেনো কোনো কাজ আছে।

অর্নিল গেট খুলতেই আয়রা দেখে ব্রু কুচকে তাকায়।

–তুমি এখানে?

আয়রা চুপ করে অর্নিল কে পাশ কাটিয়ে ভিতরে গেলো। তারপর সবাইকে সালাম দিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই একলা।

আয়রার কথা শুনে অর্পা বেগম মুচকি হেসে বলল

–অবশ্যই এই অর্নিল যা ওর সাথে।

অর্নিল আয়রার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে যায়।তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে

–হুম বলো কি বলবে?

আয়রা আড়চোখে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল

–আপনি এতো সহজে হার মেনে নিবেন আমি ভাবতেই পারি নি।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল অবাক হয়ে বলল

–কে বলেছে। আমি কখনো হার মানি না কোনো কাজে।বুঝে নাও ময়মনসিংহ যাওয়ার পিছেও কোনো প্লেন ছিলো।

আয়রা অর্নিলের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল

–মানে?

–কিছু না তুমি এখনো বাচ্চা বুঝবে এতোসব কথা।এখন বলো কি বলতে এসেছো?

আয়রা অর্নিলকে কিছু না বলে জরিয়ে ধরে আবার ছেড়ে দেয়।

অর্নিল আয়রার কাজ দেখে হেসে দিয়ে বলে

–লাইক সিরিয়াসলি। মুখ দিয়ে বলতে পারছো না।

অর্নিল কে হাসতে দেখে আয়রা ঠোঁট উল্টে বলে

–না,,, বুঝতে পারলে বুঝে নিন আর না বুঝলে আমি চললাম।

অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল

–ও তাহলে আমাদের বিয়ের জন্য এতো আয়োজন?

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মুখ গোমড়া করে বলল

–কিন্তু আমি আজ বিয়ে করতে পারবো না।

–মানে?

–মানে আমি আজ বিয়ে করবো না।একটু সময় প্রয়োজন আমার।২ বা ৩ দিন পর হোক তাতে কোনো প্রবলেম নেই।

–আচ্ছা তাহলে আমারও কোনো প্রবলেম।

–তাহলে এখন যাবেন না ময়মনসিংহ?

–এখন আর যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।আমার কাজ তো হয়েই গেছে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল

–আপনার কি ময়মনসিংহ যাওয়ার পিছে কোনো মাস্টার প্লেন ছিলো?

অর্নিল আয়রার গাল টিপে দিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলল

–তা নয় তো কি?

আয়রা মুচকি হেসে নিচে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে কাজি ও এসে বসে আছে।
আয়রা সবাইকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অর্নবের সামনে গিয়ে বলল

–ভাইয়া আমি আজ বিয়েটা করবো না।

আয়রার কথা শুনে অর্নব ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলল

–কিন্তু কেনো?তুমি কি অর্নিল কে বিয়ে করবে না?

–না তা না। বিয়ে করবো কিন্তু আজ না ২, ৩ দিন পর বিয়েটা হোক?

আয়রার কথার মাঝেই অর্পা বেগম বলল

–কিন্তু তোমার কোনো সমস্যা আছে নাকি?

অর্পা বেগমের কথা শুনে আয়রা বলল

–না আন্টি তা বলছি না আমি বলতে চাইছি আজ হুট করে এভাবে বিয়ে,,,তাই আরকি ২, ৩ দিন পর হলে ভালো হয়।

আয়রার কথা শুনে অর্পা বেগম মুচকি হেসে বলল

–আচ্ছা তা ঠিক আছে।কিন্তু আজ যেহেতু কাজি সাহেব এসে পরেছে তাহলে কাবিন টা করে ফেলা যাক।

আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর মা জুহি বেগম বলে উঠলো

–হ্যা আপনি ঠিক বলছেন।আয়রু তোর কি আপত্তি এতে চুপ করে থাক।

আয়রা ওর মার কথায় মুখ গোমড়া করে চুপ করে রইল। অর্নিল ও ওর মার কথার উপর আর কিছু বললো না।

কাবিন শেষে আয়রা আর ওর মা বাসায় ফিরে আসে।দুইদিন পর অনুষ্ঠান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বড়রা।

আয়রা ওর মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আর ওর মা চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।

–মা আমার না কিছুই ভালো লাগছে না তোমাদের একা রেখে যেতে হবে ভেবেই অস্থির লাগছে।

জুহি বেগম চোখের কোনের জল লুকিয়ে মুছে মুচকি হেসে বলল

–এতো ভাবিস না। আমরা ভালোই থাকবো।আর মেয়েদের তো যেতেই হবে স্বামীর বাড়ি তাই এতো ভাবিস না। আচ্ছা যা এখন ঘুমিয়ে থাক কাল আবার সকালে উঠতে ও তো হবে।অর্নিলের আম্মু বলেছে কাল শপিং এ যাবে।তাই আজ তারাতারি ঘুমিয়ে পর।

আয়রা ওর মার রুম থেকে বেড়িয়ে ওর রুমে যায়।লাইট অফ করে ঘুমাতে নিবে তখনই ফোনে অর্নিলের কল আসাতে আয়রা বারান্দায় গিয়ে কল রিসিভ করে।

–হ্যালো।

–ঘুমাও নি এখনো?

–না মাত্র ঘুমাতে গিয়েছিলাম আর আপনি কল দিলেন।

–ও আচ্ছা তাহলে ঘুমাও কাল দেখা হবে।

অর্নিল ফোন কেটে দিতেই আয়রা মৃদুস্বরে বলে

–কাল কি করে দেখা হবে আমিতো যাবোই না শপিং।

আয়রা বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

আয়রা খাটে চুপ করে বসে আছে।আয়শা তো শপিং করতে যাবে বলে খুশিতে রীতিমত লাফাচ্ছে।জুহি বেগম রেডি হয়ে আয়রার উদ্দেশ্যে বলল

–তুই কেনো যেতে চাচ্ছিস না?অর্নব কতো করে বলল তোকে যেতে।

–না মা তোমরাই যাও আমার ভালো লাগছে না যেতে।

জুহি বেগম আয়শা কে নিয়ে নিচে গেলো অর্নিলের মা আর অর্নব তুলি ওরা আয়রাদের বাড়ির নিচেই অপেক্ষা করছিলো। জুহি বেগম আর আয়শা যেতেই ওরা শপিং করতে গেলো।

আয়রা গেট আটকিয়ে ওর রুমে যায় তারপর টিভি ওন করে দেখতে লাগে। কিছুক্ষন বসে দেখতেই দরজার বেল বেজে উঠে।আয়রা কোলে থাকা বালিশটা রেখে উঠে দরজা খুলে দেয় অর্নিল কে দেখে ব্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আয়রাকে এড়িয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসে।অর্নিল কে এভাবে ঘরে ঢুকতে দেখে আয়রা দরজা অফ করে অর্নিলের সাথে গিয়ে বসে

–আপনি এখানে কেনো এসেছেন?

–ওয়াও রোমেন্টিক ফিল্ম।

অর্নিল কে এতো মন দিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়রা রিমোট দিয়ে গানের চ্যানেল দেয়।ধার্শান রাভাল এর গান দেখে চিল্লিয়ে ওঠে।

–ওয়াও ধার্শান। হায়,,,,

অর্নিল আয়রার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে

–আয়ু ওই ফিল্মটা দাও ফাস্ট।

অর্নিল বলার পর আয়রার দিকে তাকিয়ে দেখে একধ্যানে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আশেপাশে কেউ নেই।

–ওয়াও কত্তো কিউট লাগছে উফফ একদম অলস্কয়ার।মাই লাভ।

আয়রার কথা শুনে অর্নিল কিছুক্ষন ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে থেকে বলল

–আয়ু যাও আমার জন্য কিছু বানিয়ে নিয়ে আসো।

–উফ এখন না গান টা শেষ হোক।

–তুমি ঘরে আসা মেহমানদের সাথে এরূপ ব্যবহার করো?

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা রিমোট রেখে মুখ গোমড়া করে রান্নাঘরে যায় কিছু আছে কিনা দেখতে।
পাস্তা থাকায় আয়রা পাস্তা রান্না করার জন্য নিয়ে পিছে ফিরতেই অর্নিলের সাথে ধাক্কা খায়।

–আপনি এখানে কেনো এখন আপনার ফিল্ম দেখুন গিয়ে হুহ।

–স্ত্রী যেখানে স্বামী সেখানে।

–আবার,,,আগে গার্লফ্রেন্ড বলে আর এখন আবার স্ত্রী বলে আগে পিছে ঘুরা শুরু হইসে।

–হোয়াট! আমি কারো আগে পিছে ঘুরি না ওকে।যাই হোক একটা এনাউন্সমেন্ট করতে এসেছিলাম।

অর্নিলের কথায় আয়রা ভ্রু কুচকে বলল

–কিসের এনাউন্সমেন্ট?

–আজ থেকে ধার্শানের গান দেখা সম্পূর্ন বন্ধ।আর তোমার মুখ থেকেও।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা চোখ বড় বড় করে বলল

–মানে কি। আজব তো এটা কেমন কথা।আর আপনি ধার্শানের সাথে জালাস হচ্ছেন মানে,,,সত্যি?

–জাস্ট স্টপ আয়ু।ধার্শান যদি তোমার হার্ট জুরে থাকে তাহলে আমি কোথায় আছি?

–উফফ আপনিও না ধার্শান তো হেরো হিসেবে বাট রিয়েল লাইফ এ তো আপনি আমার ধার্শান।

আয়রার কথায় অর্নিল মুচকি হেসে আয়রার গালে কিস করে রান্নাঘর থেকে চলে যায়।
আয়রা গালে কিছুক্ষন হাত দিয়ে রেখে কাজে মনোযোগ দিলো।

২ দিন পর। আয়রা পার্লারে এসেছে সাজতে। সেজে সোজা অর্নিল দের নাড়ি যাবে সেখানেই অনুষ্ঠান হবে। একটু আগেই তুলি চলে গেলো। আয়রা একসাথে যাবে বলেছিলো কিন্তু ও বললো আয়রাকে পিক করতে গাড়ি আসবে সেটাইতেই যেতে বলেছে।আয়রা আর কিছু বলে নি।
আয়রার সাজ হতেই আয়রা বেরিয়ে দেখে গাড়ি। আস্তে করে গিয়ে গাড়িতে এসে বসে।কেমন যেনো ফিলিং হচ্ছে অন্যরকম।আয়রা কয়টা বাজে দেখে বাহিরে তাকাতেই চমকে উঠে।

–কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।এইটা তো অর্নিল দের বাড়ির রাস্তা না

–অর্নিল ভাই আপনাকে উনার প্রেকটিস করার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে।

ড্রাইভারের কথা শুনে আয়রা ভ্রু কুচকে বিরবির করে বলতে লাগল

–আজব তো উনি ওখানে নিয়ে যেতে বলল কেনো?

–মেম এসে পড়েছি।

আয়রা ধীর পায়ে হেটে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে যায়।সুন্দর করে ডেকোরেট করা। উপর থেকে গোলাপের পাপরি পরায় আয়রা উপরে তাকায়।অর্নিল ছোট একটা বারান্দার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর উপর পাপরি ফেলছে। আয়রা আগে এই বারান্দা টা খেয়াল করে নি।অর্নিল উপর থেকে নেমে আয়রার সামনে দারায়।

–এইসব কি?সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে।

অর্নিল কিছু না বলে আয়রার সামনে হাটু গেড়ে বসে বাম হাত নিয়ে রিং পরিয়ে দিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পরে।

–আই লাভ ইউ ভেরি ভেরি ভেরি মাচ আয়ু।

অর্নিল মুচকি হেসে আয়রার দিকে তাকিয়ে আবার বলল

–তোমার উইশ ছিলো না এভাবে কেউ তোমাকে প্রপোজ করুক নাও তোমার উইশ পূরন করে দিলো তোমার ডেয়ার হাসবেন্ড।

আয়রা কিছুক্ষন স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে মুচকি হেসে বাহিরের দিকে হাটা দেয়।
আয়রার কোনো রিএক্ট না দেখে অর্নিল অবাক হয়ে আয়রার পিছে পিছে গিয়ে গাড়িতে বসে।অর্নিল গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে।

–আয়ু তোমার ভালো লাগে নি এই সারপ্রাইস?

আয়রা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল

–হুম।

–তাহলে কিছুই তো বললে না দেখে?

আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল

–কিছু বলার খুজেই পাই নি।এতো ভালো লেগেছে যে প্রকাশ করার ভাষাই খুজে পাই নি।

–যাক ভালো এতো কষ্ট তাহলে কাজে লেগেছে।

বাড়িতে এসেই অর্নিল আয়রার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।আয়রা সাদা রঙের লেহেঙা পরেছে আর অর্নিল ও মেচিং কোট সুট পরেছে। ওদের দেখে অর্নব এসে বলে

–এতোক্ষন কোথায় ছিলি?

অর্নিল আয়রার হাত ধরে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলে

–তোর জেনে লাভ নেই। এইটা হাসবেন্ড ওয়াইফ এর মধ্যকার কথা।

আয়রা অর্নিলের রুমে বসে আছে আর অর্নিলের রুম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। সুন্দর রুমটা আর সুন্দর করে ডেকোরেট করা। একটু আগেই ওর মা আর আয়শা চলে গেছে সবাই অনেক করে থাকতে বলেছে কিন্তু উনারা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে ওরা যাওয়ার পর থেকেই কান্না শুরু হয়েছে এখন একটু থেমেছে। আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দার দিকে তাকালো। ছোট ছাদের মত বারান্দা দেখেই মন কিছুটা ভালো হয়।

একটু পর অর্নিল রুমে প্রবেশ করায় আয়রা চোখ তুলে তাকায়।অর্নিল এসেই আয়রার পা টেনে নিয়ে একজোরা নূপুর পরিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নিলো। অর্নিল এভাবে আয়রাকে কোলে তুলে নেওয়াতে আয়রা ভয় পেয়ে অর্নিলের গলা জরিয়ে ধরে বলে

–আজব কি করছেন।

–আমার উইশ পূরন করবে না?বাসর রাতে সারা রাত জেগে কথা বলবো আজ।

অর্নিল থেমে আয়রার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে আবার বলল

–এতোদিন যেহেতূ অপেক্ষা করলাম তাহলে একরাত আরও অপেক্ষা করি কি বল?আর তোমাকে কিন্তু আজকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে আর সাথে আবেদনময়ী।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মুচকি হেসে অর্নিলের বুকে মাথা এলিয়ে দেয় এই বুকই তো এখন থেকে ওর সবথেকে শান্তির জায়গা।

সমাপ্ত,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে