প্রেম তুমি পর্ব-১০

0
1205

#প্রেম_তুমি
#part:10
#Mishmi_muntaha_moon

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব ব্রু কুচকে বলে

–চলে গেছে মানে কোথায় চলে গেছে।

অর্নিল কপাল চেপে ধরে বলল

–জানি না আমি।আমার ভালো লাগছে না তুই এখন যা।

অর্নব অর্নিলের কাধে হাল্কা চাপর দিয়ে চলে যায়।অর্নিল পাঞ্জাবি খুলে ব্লু কালারের শার্ট পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অনেক অস্থির লাগছে সাথে ক্লান্ত। একদিনে দুইবার জার্নি করার পর আবার আয়রাকে খুজতে হলো তাই এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। অর্নিল চোখ বুজতেই ঘুমিয়ে গেলো।

বাহিরে মহিলাদের কথার আওয়াজে আয়রা নিচ থেকে উঠে দারালো। নিচে বসে ঘুমিয়ে যাওয়াতে শরীরটা খুব ব্যাথা করছে। আয়রা হাত পা ঝেরে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গেলো। জুহি বেগম চুপ করে খাটে বসে আছে আর ৩, ৪ টা মহিলা দারিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে। আয়রা আরেকটু এগিয়ে যেতেই একটা মহিলার কথা শুনতে পেল।

–শুনলাম আপনার নেয়ে আয়রা ফিরে এসেছে।জানতে পারলেন কেনো পালিয়েছিলো। আমার তো মনে হয় ওই ঢাকায় কোনো ছেলের জন্য পালিয়েছিলো।এখন দেখলেন তো তার ফল।মাঝে দিয়ে বেচারা ভাই সাহেব মরে গেলো।

উনাদের কথা শুনে অনেক রাগ লাগছে মানে কি!বাড়িতে একজন মারা গেছে তা না ভেবে এসে পরেছে নিচু কথাবার্তা বলতে।
আয়রা উনাদের সামনে গিয়ে বলল

–জ্বী কিছু বলছিলেন আপনারা? ভালো কথা বলতে না পারলে দয়া করে বাজে কথা বলবেন না।

আয়রার কথা শুনে একটা মহিলা বলল

–আরে দেখো যার মুখ দিয়ে কোনো বুলি বের হতো না ঢাকায় গিয়ে কথাও শিখে গেছে।

আয়রার মেজাজ আরও চটে গেলো। আয়রা রাগ নিয়ে বলল

–ঠিক বলেছেন।আগে চুপ ছিলাম কিন্তু আপনাদের মতো মানুষদের কথার জবাবে চুপ থাকা উচিত না।কিন্তু আমি কাওকে অসম্মান করতে চাই না।বড় রা যেমনই হোক বড় উনাদের অসম্মান করা উচিত না তাই আমি চাইছি আপনারা চলে যান এখান থেকে।

আয়রার কথা শুনে সবাই চলে গেলো। আয়রা রান্নাঘর থেকে টুকটাক খাবার বানিয়ে এবে ওর মা এবং ছোট বোন কে খাইয়ে দিলো। নিজেও কিছু খেয়ে নিলো কাল
থেকে কিছু খায় নি তাই খুব খিদে ও পেয়েছিল।
আয়রা রুমে যেতে নিতেই জুহি বেগম আয়রাকে উনার পাশে বসতে বলে। আয়রা ওর মার সাথে বসে।

–তুই এতোদিন কোথায় ছিলি আয়ু?

জুহি বেগমের কথায় আয়রা সব বলল। আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

–তাই তো আমি তোকে বলি সব সময় প্রয়োজনের সময় বুঝা যায় কে কতটা আপন।

জুহি বেগমের কথায় আয়রা বলল

–হুম মা কিন্তু আমি অর্নিল নামের একটা ভাইয়ার কথা বললাম না উনি খুব ভালো।যখনই আমি বিপদে পরেছি অথবা মন খারাপ ছিলো তখন উনি আমার পাশে ছিলো। শুধু তখন না উনি অলঅয়েস আমার পাশে ছিলো।

আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম মুচকি হাসলেন।
আয়রার এতোক্ষণে অর্নিলের কথা মনে পরে। আয়রার মুখ টা মুহুর্তেই চুপসে যায়।আয়রার অবস্থা দেখে জুহি বেগম বললো

–কি হলো?

আয়রা জুহি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল

–আমি যে তারাহুরোর মধ্যে গ্রামে আসলাম উনি জানেই না। কাল ভার্সিটি থেকে ট্রিপে যাওয়ার কথা ছিলো উনি হয়তো অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য।

সকাল হতেই অর্নিল রেডি হয়ে বেরিয়ে পরে। অর্নিলের মা অর্পা বেগম অর্নিল কে এমন তারাহুরো করে বেরিয়ে যেতে দেখে অর্নবের দিকে তাকিয়ে ব্রু কুচকে বলল

–অর্নব অর্নিলের কি হয়েছে কাল থেকেই কেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে।

অর্পা বেগমের কথা শুনে অর্নব শ্বাস নিয়ে বলল

–জানি না আমি।

.
অর্নিল আয়রার থাকার ফ্লাটের পাশে গাড়ি পার্ক করে। তারপর গাড়ি থেকে বেরিয়ে ফ্লাটে গিয়ে নক করতেই মহিলা টা দরজা খুলে অর্নিল কে দেখে বলে

–আপনি?

অর্নিল অনুরোধের স্বরে বলে

–আসলে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতাম।আয়রা কি একেবারে চলে গেছে না মানে আপনি কিছু জানেন কি না?যাওয়ার আগে কিছু বলেছে?

অর্নিলের কথায় মহিলাটি বিরক্ত হয়ে বলল

–দেখুন আমি কালকেও বলেছি আমি জানি না উনি আমায় কিছু বলে নি।

মহিলাটির কথায় অর্নিল ঠোঁট কামড়ে বলে

–আপনাকে বিরক্ত করার জন্য সরি এন্ড অলসো থেংক ইউ।

অর্নিল গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি তে যায়।তারপর ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গিয়ে রিমুর কাছে যায়।রিমু অর্নিল কে দেখে দারিয়ে পরে।অর্নিল রিমুর দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিয়ে বলে

–কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন ছিলো। আয়রা কোথায় গিয়েছে জানো?

অর্নিলের কথা শুনে রিমু চোখ নামিয়ে বলল

–না আমি জানি না কিছু এই ব্যাপারে।

অর্নিল রিমুর অবস্থা দেখে কপাল চেপে ধরে বলল

–স্টপ রিমু মিথ্যা বলা বন্ধ কর।ইউ নো রাইট।

অর্নিলের কথা শুনে রিমু বিরক্ত নিয়ে বলল

–আমি বলতে চাইছি না আপনাকে ফোর্স করবেন না।

রিমু ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। রিমুর কথা সব মাথার উপর দিয়ে গেল অর্নিলের বলতে চায়ছে না মানে কি?
অর্নিল ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আবারও আয়রাকে ফোন দিলো ফোন ঢুকছে না।অর্নিল রাগে মোবাইলটা ছুরে মারল।রোহানের কথায় অর্নিলের হুশ এলো। রোহান অর্নিলের সামনে দারিয়ে বলল

–কি হয়েছে তোর?

অর্নিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শ্বান্ত করল।ফারহা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলল

–অর্নিল তুমি ওই আয়রার জন্যই এতো এগ্রেসিভ হচ্ছো এম আই রাইট?হাহ ওই আয়রা ওর গ্রামে চলে গেছে নিজের আসল জায়গায় আর কখনো ফিরে আসবে না ওকে।তাই বলছি ওকে খুজা বন্ধ করে দাও।

জেবা নিচের থেকে অর্নিলের মোবাইল তুলে অর্নিলের কাছে দেয়।অর্নিল মোবাইল নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায় ওদের সাথে কোনো কথা না বলেই। অর্নিল বাসায় যেতেই অর্পা বেগম চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন

–অর্নি তোর কি হয়েছে বল আমায়।অর্নব ও সব জানে কিন্তু আমায় বলছে না।তুই বল।

অর্নিল অর্পা বেগমের গালে হাত রেখে বলল

–কিছুই হয় নি।তুমি এভাবে চিন্তা করো না প্লিজ।আই এম ওকে।

আয়রা ঘুম থেকে উঠে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আয়রা তারাতারি উঠে ওর মার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেলো। জুহি বেগম এতোদিনের কথা বলছিলেন আয়রাও ভালোই শুনছিলো কখন ঘুমাল টেরই পায় নি। আয়রা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখে অর্নিলের মিসড কল দিয়ে ভরা।আয়রা মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে পরল।

–শিট!এতোবার ফোন দিয়েছে।উফ।

আয়রা অর্নিলকে ফোন দিতেই ফোন বন্ধ বলে। আয়রা একবার ফোন দিয়েই ফোন বিছানায় রেখে দেয়।

–ধুর কল তো ঢুকছেই না।থাক কি করার এখন।

আয়রা রুম থেকে বেরিয়ে ওর মা কে খুজতে লাগে। সোফার রুমে যেতেই দেখে আয়শা মোবাইলে গেম খেলছে।

–আয়শু আম্মু কোথায়?

আয়শা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে আয়রার দিকে তাকায়।তারপর বলে

–জানি না তো মনে হয় ছাদে।

আয়রা ছাদে যেতে নিয়েও আবার ফিরে এসে আয়শার সাথে বসে।কতদিন ধরে কোনো কথা বলা হয় নি। আয়শা আয়রা কে ওর সাথে বসতে দেখে মোবাইল রেখে আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।আয়রা আয়শার গাল টিপে দিয়ে বলে

–কিরে এতোদিন পরেছিস ঠিক মতো?

–হুম পরেছি তো।জানো আপু কাল রাতে আমি স্বপ্নে বাবাকে দেখেছি।দেখি বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে আয়শু মা তুই তো অনেক ছোট সব সময় মার পাশে পাশে থাকবি।তারপর আমি কিছু বলার আগেই বাবা চলে গেলো।

আয়শার কথা শুনে আয়রা চোখের কিনারায় জমা পানিটুকু মুছে আয়শার মাথায় হাত রাখল। তারপর বলল

–ঠিকই বলেছে।আমি তো পারলাম না। কিন্তু তুই সবসময় মার পাশে থাকবি কখনো কাদতে দিবি না বুঝলি?

আয়রার কথা শুনে আয়শা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
আয়রা মুচকি হেসে উঠে ছাদে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখে কেউ নেই।আয়রা পূর্নদৃষ্টি মেলে আশেপাশে দেখতে লাগে। আয়রার লাগানো ফুল গাছের ছিটেফোঁটা নেই। আয়রা মনে মনে বলল

–কতদিন পর আবার ছাদে পা রাখলাম।

আয়রা রেলিং ধরে দারাতেই দেখল নিচে আয়রার সমবয়সী কতগুলো মেয়ে দারিয়ে কথা বলছে আয়রাকে দেখে ফিসফিস করে কি যেনো বলছে আয়রা ঠোঁট কামড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।

৫ দিন হতে চলল। রিমুকে এতো জিজ্ঞাসা করার পরও কিছুই বলে নি।
অর্নিল গিটার হাতে নিয় ছাদে বসে আছে অর্নবও সাথেই বসে আছে।অর্নিল কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অর্নব বলল

–কি হলো তোকে গিটার হাতে বসে থাকতে বলি নি।

অর্নিল গম্ভীর হয়ে বলল

–আমার গান গাওয়ার মুড নেই এখন তাই আমি গান গাইতে পারবো না।

অর্নিলের কথা শুনে অর্নব বিরক্ত হয়ে বলল

–আজব তো তুই আয়রার জন্য দেবদাস হয়ে যাচ্ছিস
কেনো?

অর্নবের কথা শুনে অর্নিল গিটার রেখে বলল

–আমি কি করলাম।আমি তো নরমাল আছি একদম।

অর্নব ব্রু কুচকে বলল

–তুই একদমই নরমাল না।তুশার ফোন করেছিলো কাল ও বলল তুই ওদের সাথে একদমই টাইম স্পেন্ড করছিস না ওরা তোকে খুজেই পায় না।তোকে আমি লাস্ট বার বলছি ওকে ভুলে যা।আর ফ্রেন্ড দের টাইম দে।

অর্নব কথা শেষ করে চলে যায়। অর্নিল অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভেবে সাইড থেকে গিটার নিয়ে মৃদু সুরে বাজাতে লাগে।

চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই 🥰🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে