প্রেমের অগ্নি পর্ব-০৩

0
1066

#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

প্রীতিনকোন রকম রান্না করে।সারাদিন কিছু না খাওয়ার জন্য ভীষণ ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে প্রীতি রান্নার পর পরই খেয়ে নেয়৷ প্রেমের জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসে৷ এসে দেখে প্রেম রুমে নেই। বেলকনিতে নেই। কোথায় যেতে পারে। ঝর্নার জলের শব্দে প্রীতি বুঝতে পারে প্রেম শাওয়ার নিচ্ছে।প্রীতি ওয়াসরুমের দ্বার বাহিরে থেকে বন্ধ করে দেয়৷

প্রেমের ফোন নিয়ে অনেকক্ষণ থেকে ঘাটাঘাটি করে যাচ্ছে৷ কিন্তু কোন প্রমাণ পাচ্ছে না৷ সন্দেহ জনক কোন ফোন নাম্বারও পাচ্ছে না৷ প্রেমের মা বাবা ফোন নাম্বার খুঁজেই চলছে৷ কোন প্রমাণ না পেয়ে প্রীতি ফোন গ্যালারিতে যায়৷ কিন্তু ফোন গ্যালারি লক করা৷ অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়৷ ফোন যথাস্থানে রেখে প্রীতি ওয়াসরুমের দরজা খুলে দেয়৷

প্রেম ওয়াসরুম থেকে এসে দেখতে পাই প্রীতি সোফায় ঘুমিয়ে আছে৷ একদম নিষ্পাপ মেয়ের মতো। প্রীতিকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছিল৷ কিন্তু প্রীতির দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রীতি ঘুম থেকে উঠে রাতের আঁধারে অফিসে চলে আসে৷ দারোয়ানের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকার জন্য প্রীতিকে কোন কষ্ট করতে হয়নি৷ শুধু প্রীতি আসেনি। প্রীতিকে সাহায্য করার জন্য প্রীতির এক ফ্রেন্ড তার সাথে এসেছে। প্রীতি দারোয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷
.
দাড়ানোন কাকা সান্ত্বনা দিয়ে,
“মামুনি কান্না করো না৷ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি৷ তুমি কখনও এমন কাজ করতে পারো না৷ এসব ভিডিও এডিট করে বানিয়েছে৷ তুমি কখনো কাউকে বিয়ে করার জন্য জোর করবে না৷ ”
.
প্রীতি নিজেকে সামলিয়ে,
“কাকা আপনাকে আমার হয়ে একটা কাজ করে দিতে হবে৷ আপনি তো এই অফিসের জন্য সব কিছু করতে পারেন৷ ড্যাড আপনাকে খুব বিশ্বাস করতো।”
.
মামুনি তোমার কি সাহায্য লাগবে? আমাকে নির্ধিদ্বায় বলতে পারো ৷ আমি জানি তোমার পিছনে অনেক শত্রু উঠে পড়ে লেগেছে৷ তোমাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে৷ বিশেষ করে প্রেমের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে হবে৷
.
হ্যাঁ কাকাই। এর পিছনে শুধু প্রেম দায়ী নয়। প্রেম ছাড়া আরও একজন আছে। যে আমাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে৷ প্রেম কাদের সাথে হাত মিলিয়েছে তা আমাকে জানতে হবে৷
.
মামুনি তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। যা তোমাকে তোমার শত্রুদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে৷
.
হুম বলেন।
.
মামুনি আমাদের পিছনের গেইট দিয়ে বর্তমানে প্রায় বিভিন্ন মাল পাচার করা হয়৷ আমাদের পিছনের দারোয়ান দেখেলে খুব সমস্যা হবে৷ ভিতরে চলো৷ তোমাকে সব খুলে বলছি৷
.
প্রীতি অবাক হয়ে,
“কি বলছেন কাকাই! কে এসব কাজ করছে৷ কে রাতের আঁধারে গোডাউন থেকে মাল বের করে নিয়ে যাচ্ছে৷”
.
মামুনি তোমার কাছের মানুষই তোমার শত্রু৷ তুমি কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে৷
.
কাকাই আমার কাছের বলতে আমার মা বাবা ছিল৷ তারা কার এক্সিডেন গত হয়েছেন৷ বর্তামানে আমার কাছের মানুষ বলতে কিছুই নেই৷
.
মামুনি চারপাশে চোখ রাখো তাহলে সব জানতে পারবে৷
.
কাকাই আমার হাতে একদম সময় নেই৷ আমাকে এখনই স্টোর রুমে যেতে হবে৷ আমি দেখতে চাই কে আমার শত্রু৷ আমি সব শত্রুদের গোড়া থেকে তুলে ফেলবো। নাকি এই শত্রু আমার ড্যাডের সময় থেকে।
.
প্রীতি সময় নষ্ট না করে স্টোর রুমে চলে যায়৷ পুরোনো সব ফাইল বের করে একে একে দেখতে থাকে। কিন্তু কোন কিছুইতেই সন্দেহ জনক কিছু পাইনি৷ হতাশ হয়ে ফিরে আসতে নিলেই প্রীতি পায়ে চোট পায়৷ পায়ে হাত দিয়ে নিচে বসতেই একটা ফাইলে প্রীতির চোখ আটকে যায়৷ ফাইল বেশ কিছুটা নতুন৷ প্রীতি ফাইল খোলে দেখতে পাই বিভিন্ন ডিজাইন৷ সেসব ডিজাইন তার ড্যাড রিজেক্ট করেছে। সব থেকে বড় বিষয় হলো ফাইলের মাঝে অনেক টাকা৷ প্রীতি কিছু না ভেবে ফাইলটা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷
_______

সকালে মুখে জল পড়তেই প্রীতি উঠে জেগে৷ চোখ নেলে তাকিয়ে দেখে প্রেম তার সামনে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
.
প্রতি ভয়ে ভয়ে বলে,
“দেখন আমার সাথে কিছু করবেন না৷ এভারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেন৷”
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো। এখন সকাল ছয়টা বাজে। আমি কি অফিসে হাওয়া খেয়ে যাব৷”
.
প্রীতি কিছু একটা ভেবে,
“প্লিজ রাগ করবেন না। আমি আপনার জন্য খাবার এখনই বানিয়ে দিচ্ছি৷”
.
প্রীতি প্রেমের সামনে এমন ভাব দেখালো যেন প্রীতি প্রেমকে খুব ভয় পাই৷ প্রীতির সামনে প্রেম নয় বরং যমরাজ দাঁড়িয়ে ছিল।
প্রীতি রান্না ঘরে এসে কাকে যেন ফোন দেয়৷ প্রীতি ফিসফিস করে বলে,
প্রেম একটু পর বাড়ি থেকে বের হবে। আমি প্রেমের প্রতিটি কাজ কর্মের হিসাব চাই৷’
.
অপর পাশ থেকে বলল,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না৷ আমি তোমার পাশে সব সময় আছি৷ এখন শুধু তোমার যুদ্ধ নয়৷ বর্তমানে আমার যুদ্ধেও পরিণত হয়েছে৷”
.
প্রেম অফিসের জন্য বের হবে৷ কিন্তু প্রেম কিছুতেই ট্রাই ঠিক করে বাঁধতে পারছে না৷ প্রীতি বসে বসে সব দেখছিল৷ প্রীতি প্রেমের ট্রাইয়ে হাত দিয়ে প্রেমের ট্রাই বাঁধতে সাহায্য করে৷
.
আচমকা প্রীতি প্রেমকে সাহায্য করতে আসায় প্রেম অনেকটা ঘাবড়ে যায়৷ প্রেম প্রীতিকে আজ প্রথম থেকে দেখছে৷ মনের মাঝে এক অজানা ভালোবাসার অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে৷ পরিবেশটা পাল্টে দিচ্ছে৷ প্রেম প্রীতিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। প্রীতির মায়া ভরা চোখে প্রেমের ঘোর লেগে যায়৷
.
ট্রাই বাঁধা শেষ হলেই প্রীতি প্রেমের কাছ থেকে সরে আসতে নিয়েই প্রীতি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু তার আগেই প্রেম প্রীতিকে ধরে ফেলে৷ প্রেম প্রীতির নরম কোমল উদরে হাত রেখে প্রীতিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ প্রীতির সারা দেহে বিদ্যুৎ বয়ে যায়৷ প্রেম অপলক দৃষ্টিতে প্রীতির দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রীতি আমতা আমতা করে,
.

“কি করছেন টা কি? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার অস্বস্তি হচ্ছে৷”
.
প্রীতির কথাতে প্রেমের ঘোর কাটে৷ প্রেম প্রীতিকে দাঁড় না করিয়েই প্রীতির কোমর থেকে হাত সরিয়ে দেয়৷ প্রীতি ফ্লোরে পড়ে যায়৷ প্রেমের পায়ের সাথে প্রীতির পা লাগতেই প্রেম নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রীতির উপর পড়ে যায়৷ প্রেমের ঠোঁট জোড়া প্রীতির ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷
.
প্রেম নেশা ভরা কন্ঠে,
“এখানেই যদি সময় থমকে যেত৷ এভাবে সারাজীবন তোনার পাশে থাকতে পারলে৷ মায়া পরী তোমার মাঝে কি আছে? যা আমাকে তোমার কাছে চৌম্বকের মতো টানে।”
.
প্রীতি নীচে পড়ার কারণে সে কিছুটা ব্যথা পায়৷ প্রীতি প্রেমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“ব্যাস! আপনার মুখ থেকে আর একটা কথা শুনতে চাই না৷ লজ্জা করে না একটা মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে। তাকে একা পেয়ে তার সাথে ফ্লট করতে ।”
.
প্রেম ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ,
“মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল প্রীতি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই তোমার সাথে ফ্লট করার৷”
.
মি. প্রেম নিশাঙ্ক। তাহলে এসব কথা কোন এলিয়েন এসে বলে গেল। কে বললো ভালোবাসার কথা৷ আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে ভালোবাসি৷ তাহলে ভুল ভেবেছেন৷ আমার মনে আপনার জন্য কোন ভালোবাসা নেই৷ আমার মনে আপনার জন্য আছে শুধু ঘৃণা৷
.
আমিও তোমার মতো দুই টাকার থ্রাড ক্লাস মেয়েকে ভালোবাসবো কোনদিনও ভেবো না।
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘দুই দিনের বৈরাগী ভারেকে বলে অন্না৷’ আপনি দুর্নীতি করে এসব তাশের ঘর নিজের করে নিয়েছেন৷ সবকিছু যেদিন হারাবেন সেদিন বুঝবেন৷”
.
প্রেম অট্টহাসি দিয়ে,
“আমাকে হারাতে পারবে এমন কারোর এখনো জন্ম হয়নি৷ আমাকে হারাতে সুইটহার্ট তোমাকে আরও সাত বার জন্ম নিতে হবে৷”
.
আপনি এখন পড়লে ব্যথা কম পাবেন৷ আরও উঁচুতে উঠেন৷ আপনাকে উঁচু থেকে ফেলে দিতে কেউ এসে গেছে৷ যখন উচু থেকে পড়বেন তখন এসব কোন কথা খাটবে না৷
.
প্রীতির কথায় প্রেম অনেকটা রেগে যায়। প্রেম রাগে গজগজ করতে থাকে৷ প্রীতিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমি প্রেম নিশাঙ্ক৷ আমাকে কেউ হারাতে পারবে না৷ আমার পথে যে আসবে আমি তাকেই এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব৷”
.
প্রীতি প্রেমের এমন রুপ দেখে ভীষণ ভয় পায়৷ চোখ দু’টো রক্ত বর্ণ ডাগর হয়ে আছে৷ চোখ থেকে লাভা বেরিয়ে আসছে৷ সেই লাভায় প্রীতিকে পুড়িয়ে দিবে৷ প্রীতি নিজের ভয়কে জয় করে,
.
“আপনার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে৷ আপনি অফিসে যান। আমি কখনো এমন কথা বলবো না৷”
.
প্রেম অফিসে যাওয়ার সময় বাহির থেকে মেইন গেটের দরজা লক করে যায়৷ যেন প্রীতি বাহিরে বের হতে না পারে৷ প্রীতি নিজের মা বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“তোমাদের প্রীতিকে এভাবে কেউ বন্দী করে রাখতে পারবে না৷ প্রীতি আর থেমে নেই৷ আমি তোমাদের হারানো সব ফিরিয়ে আনবো।”

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে