প্রেমের অগ্নি পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1609

#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_১০ (শেষ)
#অধির_রায়

প্রেম পুলিশ নিয়ে দ্বীপের পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে৷ প্রেম ভিতরে প্রবেশ করে দেখে প্রীতিকে সোফার কোণায় বসিয়ে রেখেছে৷ প্রীতির মাথার উপর রিভলভার তাক করে রেখেছে৷ প্রেমকে দেখে প্রীতির বাবা কথা বলতে নিলেই প্রেম ইশারা করে কথা বলতে মানা করে৷ প্রেম ধীরে ধীরে পিছন দিক থেকে দ্বীপের কাছে যায়৷
.
প্রেম প্রীতির গাল চেপে ধরে,
“তোর প্রাণপ্রিয় প্রেমকে এখানে আসতে বল। যদি বাঁচতে চাস তাহলে প্রেমকে বলবি সমস্ত প্রোপার্টি আমার নামে লিখে দিতে৷”
.
প্রীতি ঘৃণার সাথে বলে,
“আমি মরে গেলেও প্রেমকে এমন কথা বলবো না৷”
.
দ্বীপ আফসোসের সাথে,
“আমি কত বড় গাধা৷ আমি তোকে কেন মারতে যাবো? আমি তোর প্রাণ ভ্রুমরা মামা, মামীকে স্বর্গে পাঠাবো। তোদের আর কোন কষ্ট করতে হবে না৷”
.
প্রীতি দ্বীপের পা ধরে,
“প্লিজ তুই মা বাবর কোন ক্ষতি করিস না৷ তুই যা বলবি তাই হবে। আমি এখনই প্রেমকে ফোন করছি৷”
.
প্রেম পিছন থেকে বলে,
“তার আর কোন দরকার পারবে না৷ আমি এসে গেছি৷ আমি দ্বীপের কাল হয়ে এসেছে৷ সারা বাড়ি পুলিশ ঘিরে রেখেছে৷ কারোর কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷”
.
দ্বীপ মুচকি হেঁসে,
এতক্ষণ খেলা জমেনি৷ এদের ভ্যা ভ্যা কান্না শুনতে শুনতে আমার কান জ্বালা পোড়া হয়ে গেছে।”
.
হ্যাঁ খেলা জমে গেছে (প্রেম)
.
দ্বীপে প্রীতির চুলের মুড়ি ধরে,
“প্রেম ভালো ছেলের মতো দলিলে সাইন করে এদের নিয়ে চলে যা। নাহলে তোর সামনে তিন তিনটা লাশ দেখতে পারবি৷”
.
প্রেম হন্তদন্ত হয়ে,
“স্যার আপনার কি হলো? আপনি ঠিক আছেন তো?’
.
প্রেমের কথার মায়াজালে পা বাড়িয়ে দেয় দ্বীপ৷ প্রেমের কথা সত্য যাচাই করার জন্য দ্বীপ তার মামার দিকে তাকাতেই প্রেম এই সুযোগকে কাজে লাগায়৷ দ্বীপের মাথায় পর পর দুইবার লাঠি দিয়ে আঘাত করে। দ্বীপ মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটে পড়ে৷
.
দ্বীপ হন্তদন্ত হয়ে,
প্রীতি সবাইকে বাহিরে নিয়ে যাও৷ আমি দ্বীপকে দেখছি৷
.
ওকে। আমি মা বাবাকে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছি৷ আমি এখনই পুলিশ নিয়ে আসছি৷
.
প্রীতি তার মা বাবাকে বাহিরে রেখে এসে পুলিশ নিয়ে আসে৷ দ্বীপ মাথায় আঘাত পাওয়ার জন্য তেমন নড়াচড়া করতে পারছে না৷ দুইজন পুলিশ দ্বীপের শার্টের কলার ধরে দাঁড় করায়৷ দ্বীপকে দরজার কাছে নিয়ে আসতেই নিজের পকেট থেকে রিভলভার বের করে পর পর দুইটা সুট করে৷ একটা প্রেমের হাতে লাগে৷ অন্যটা প্রেমের পেটে লাগে। পুলিশ নিজেদের রক্ষা করার জন্য দ্বীপের দিকেও গুলি ছুঁড়ে দেয়৷ দ্বীপকে একাধিক গুলি করাতে সাথে সাথে দ্বীপ মাটিতে লুটে পড়ে। সেখানেই দ্বীপ মারা যায়৷
.
প্রীতি চিৎকার করে দৌড়ে এসে প্রেমকে ধরে ফেলে৷ কান্না করতে করতে,
“প্রেম আপনি মরতে পারেন না৷ আমি আপনাকে মরতে দিব না৷ আপনি আপনার ভালোবাসাকে রেখে চলে যেতে পারেন না৷ প্লিজ চোখ মেলে তাকান! আমিও আপনাকে খুব ভলোবাসি৷”
__________

হসপিটালের করিডরে বসে আছে প্রীতি৷ কেঁদে কেঁদে নাজেহাল করেছে নিজের অবস্থা। প্রীতিকে দেখে মনে হচ্ছে প্রেমের অপারেশন চলছে না প্রীতির অপারেশন চলছে। প্রায় দুই ঘন্টা পর ডক্টর অপারেশন রুম থেকে বের হয়৷

প্রীতি হন্তদন্ত হয়ে,
“ডক্টর প্রেম ঠিক আছে তো৷ তার কোন ক্ষতি হয়নি তো৷ সে ঠিক আছে তো!”
.
ডক্টর মুখ কালো করে বলে,
“একটুও জন্য প্রেম বেঁচে ফিরেছে। তাকে কেউ বিরক্ত করবেন না৷ বিরক্ত করলে বিপরীত হতে পারে৷”
.
ওকে ডক্টর। আপনি যেমনটা বলবেন তেমনই হবে৷ আমি কি প্রেমের সাথে দেখা করতে পারবো৷
.
হ্যাঁ দেখা করতে পারবে। আমরা একটু পর প্রেমকে কেবিনে শিফট করবো তখন দেখা করে নিবে৷
.
থ্যাংকস ডক্টর। আপনার কাছে আমি সারা জীবন ঋণি থাকবো।
.
আমার কাজ হলো মানুষকে সাহায্য করা৷ যা করার সব উপর ওয়ালা করেছে। তাকে ধন্যবাদ জানাও৷
____________

এক মাস পর প্রেম পুরোপুরি সুস্থ। প্রেম আজ কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে৷ ডাইনিং রুমের ট্রি টেবিলে একটা চিরকুট রেখে আসে৷

প্রীতি প্রেমকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়ায়৷ কিন্তু কোথাও প্রেমকে খুঁজে পায় না৷ হঠাৎ চোখ পড়ে ডাইনিং রুমের ট্রি টেবিলের উপর রাখা চিরকুটের উপর৷ প্রীতি চিরকুট নিয়ে পড়তে শুরু করে।
.
প্রিয় প্রীতি,
আমি তোমার জীবনে আর কাটা হয়ে থাকতে চাইনা৷ আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি৷ তোমার কাছ থেকে আমি সবিছু কেঁড়ে নিয়েছিলাম। তোমাকে অমায়িকভাবে নির্যাতন করেছি৷ তোমার লাইফে নিজেকে জোর করে বেঁধে রেখেছিলাম৷ আজ থেকে তুমি মুক্ত। তোমাকে আর প্রেম নামে কেউ বিরক্ত করবে না৷ কেউ ভালোবাসার দাবী নিয়ে সামনে আসবে না৷ জানি আমার অপরাধের কোন ক্ষমা হবে না৷ যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ আমি সেই বেনারেসে চলে যাচ্ছি। মায়ের জায়গা টুকু আগলে ধরে বেঁচে থাকবো৷
ইতি
ঘৃণার পাত্র
প্রেম৷

প্রীতি চিরকুট পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ চিৎকার করে বলতে থাকে,
“প্লিজ প্রেম ফিরে আসো৷ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না৷”
.
প্রীতির কাঁধে তার বাবা হাত রেখে,
“এখন কান্না করে কি লাভ? যখন ভালোবাসার মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলে তখন সে কতটা কষ্ট পেয়েছে। পারলে তুমি তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।”
.
বাবাকে জড়িয়ে ধরে,
“হ্যাঁ বাবা আমি প্রেমকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।”

প্রীতি সময় নষ্ট না করে বেনারেসের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে৷ বেনারেস পৌঁছতে সন্ধ্যা লেগে যায়৷ প্রীতি প্রেমের খুঁজ জানে না৷ প্রীতির সামনে মন্দির দেখতে পেয়ে সেই মন্দিরে নামে৷ ধীরে ধীরে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে৷ মনে মনে বলে যাচ্ছে,
“হ্যাঁ ইশ্বর, আপনি আমাকে প্রেমের সন্ধান দেন৷ আমি প্রেমকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমার জীবন শূণ্য৷
.
ইশ্বরের কৃপায় প্রেম ঠিক তখনই মন্দির থেকে বের হচ্ছিল। প্রীতি দেখে চলে যেতে নিলেই প্রীতি প্রেমের সামনে এসো দাঁড়ায়৷
.
প্লিজ প্রীতি এমন করো না৷ এখানে সবাই দেখছে। কলকাতার মতো এই শহর নয়৷ মানুষ অনেক কিছু মনে করতে পারে৷
.
প্রীতি টলমল চোখে,
“প্লিজ প্রেম কলকাতা ফিরে চল। আমি তোমাকে আর ভুল বুঝবো না৷”
.
প্রেম মলিন হাসি দিয়ে,
“প্রীতি আমার কাজ যা ছিল সব শেষ। প্লিজ প্রীতি তুমি কলকাতায় ফিরে যাও৷ রাত হলে ফিরতে অসুবিধা হবে।”
.
প্রীতি প্রেমের হাত ধরে,
“তুমি কি আমায় ভালোবাসাে আজও?”
.
হ্যাঁ তোমায় আজও ভালোবাসি৷ আর সারা জীবন তোমায় ভালোবেসে যাবো৷
.
কেন কাছে টেনে নিচ্ছো না?
.
সকল ভালোবাসা পরিপূর্ণ পায় না৷ কিছু কিছু ভালোবাসা সকল ভালোবাসা কাছে হার মানে৷
.
প্রেমকে জড়িয়ে ধরে,
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি৷ তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ প্লিক আমার থেকে দূরে সরে যেও না৷”
.
প্রীতিকে ছাড়িয়ে,
কাছে আসলেই কি ভালোবাসা বেড়ে যায়? কাছে আসলে মনের দূরত্ব বেড়ে যায়৷ কিন্তু ভালোবাসা বাড়ে না৷
ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকলে, দূর থেকেও ভালোবাসার স্বাদ উপভোগ করা যায়। কিন্তু তুমি আমায় কোনদিন বিশ্বাস করো নি৷ ভালোবাসা টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর৷
.
প্রীতি কান্না করতে করতে,
“আপনি আমাকে যত পারেন শাস্তি দেন৷ আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নিব৷ কোন অভিযোগ করবো না আর৷
.
প্রেম মলিন হেঁসে,
“না পাওয়ার কষ্টগুলো তোমায় একদিন পরিপূর্ণ করে তুলবে৷ যে ভালোবাসায় কষ্ট নেই, সে ভালোবাসায় গভীরতা নেই৷”
তুমি এখান থেকে চলে যাও।
.
হ্যাঁ আমি তো চলে যাবই৷ আজ যদি এখান থেকে চলে যেতে হয় যাবে আমার মৃত দেহ৷ তোমাকে ছাড়া আমার জীবন মরুভূমি৷
.
মরুভূমির উত্তপ্ত বালির মাঝে আমি তোমাকে আর হারাতে চাইনা৷ আমি চাই তুমি তোমার জীবনকে আবার নতুন করে রাঙিয়ে তুল।
.
আপনি আমার জীবনের রং। আপনি ছাড়া আমার জীবন রংহীন৷
.
আমাকে তোমার জীবনে আর জড়াতে চাইনা৷ তুমি চলে যাও৷
.
প্রীতি দৌড়ে গাড়ি থেকে ছুরি বের করে নিয়ে আসে৷ ছুরি হাতে নিয়ে বলে উঠে,
“প্রেম আপনি ছাড়া আমার জীবন চাইনা৷ আমি আপনার সামনে নিজের জীবন উৎসর্গ করবো।”
.
প্রীতি আমার কথাটা প্লিজ শুনো।
.
আমি আপনার কোন কথা শুনবো না৷ আপনি এগিয়ে আসছেন কেন? এগিয়ে আসলে কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিব৷
.
প্রেম বুদ্ধি খাটয়ি,
“স্যার আপনি এখানে আসলেন কখন?”
.
প্রীতি পিছনে ঘুরতেই প্রীতির হাত থেকে ছুরি নিয়ে প্রীতির গালে কষিয়ে চর বসিয়ে দেয়৷
.
পাগল হলে? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিবে কেন?
.
আপনি ছাড়া বেঁচে থেকে লাভ কি?
.
প্রীতি জড়িয়ে ধরে,
“আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি৷ তুমি আমার নিঃশ্বাস৷ তুমি না থাকলে আমিও বেঁচে থাকবো না৷”

সমাপ্ত….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে