প্রেমময় আসক্তি পর্ব-০৯

0
1107

#প্রেমময়_আসক্তি
#পর্ব_৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

৯.
সকালে মুন রান্না ঘরে রান্না করতে এসেছে। আজকে তার খুব ইচ্ছে করছে রাফসানের জন্য কিছু রান্না করতে। মানুষটার সামনে তেমন একটা যাচ্ছেনা সে কিন্তু তাই বলে কি রান্না করা যায়না! মুন রাফসানের জন্য আলু পরাটা আলুর দম রান্না করছে। মুন জানে এগুলো রাফসানের খুব পছন্দের খাবার। মুন আলু কাঁটতে কাঁটতে হঠাৎ বেখেয়ালে তার আংগুলে চাকু চালিয়ে দেয়। সাথে সাথে মুন চিৎকার দিয়ে উঠে,

মুন: আহ্!

রাফসান সেই সময় কিচেনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রাফসানের রুমের আগে কিচেন। রাফসান উঠে বাহিরে গেছিলো। এখন বাসায় এসে রুমে যেতে নিলে মুনের আওয়াজ পেলো। রাফসান রান্না ঘরে এসে দেখে মুনের হাত থেকে রক্ত পরছে।।রাফসান ধমক দিলো মুনকে।

রাফসান: স্টুপিড মেয়ে রান্না ঘরে কি করতে আসছো তুমি?

বলেই রাফসান মুনের আংগুলটা নিজের মুখে নিয়ে নিলো। রক্ত গুলো সে শুষে নিচ্ছে। আর মুন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাফসান এক খেয়ালে শুষে নিচ্ছে ওর রক্ত গুলো। শুষে নেওয়া শেষ হলে রাফসান মুনের আংগুল ছেড়ে দিয়ে ওর পকেট থেকে রুমাল বের করে পেঁচিয়ে দিলো আর বললো,

রাফসান: আর কোনোদিন রান্না ঘরে আসার দরকার নেই। আজকে থেকে বাসায় মেইড আসবে। সেই সব কাজ করবে। এখন নিজের রুমে যাও আর কাঁটা যায়গায় একটা মলম লাগাও।

বলেই রাফসান নিজের রুমে চলে গেলো। আর মুনের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাঁসি ফুঁটে উঠলো।

মুন তাও সেই কাঁটা হাত দিয়েই রান্না করলো। রান্না শেষ করে রাফসানের রুমে উকি দিয়ে দেখলো রাফসান রুমে নেই শাওয়ারের শব্দ আসছে মানে রাফসান শাওয়ার নিচ্ছে। মুন আর কিছুনা করে ওর রুমে চলে আসলো। রোদেলা রুমে রেডি হচ্ছে। মুনকে দেখে রোদেলা বললো,

রোদেলা: কিরে সকাল সকাল কই ছিলি? আমি তো তোকে উঠে দেখলাম না।
মুন: রান্না করছিলাম সবার জন্য।
রোদেলা: ওহ আচ্ছা, তাহলে রেডি হয়ে নে।

মুন আলমারি থেকে জামা নিয়ে রেডি হতে গেলো। রেডি হয়ে হাতে কিছু দিলোনা শুধু রুমালটাই রাখলো। রেডি হয়ে ৫জনেই খাবার টেবিলে আসলো। রাফসান খাবার টেবিলে আলু পরাটা আলুরদম দেখে অবাক হলো। পরে বুজতে পারলো এটা মুনের কাজ। রোদেলাও এই ডিস দেখে অবাক হয়েছিলো। কিন্তু সেও বুজতে পেরেছে জিনিশটা। খাবার খেয়ে রাফসান ওদের কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলো। রোদেলাদের আজকে প্রেক্টিকাল আছে ল্যাবে আছে সবাই। আজকে ওদের মরা দেহো কেঁটে দেখানো হবে। স্যার ক্লাসে এসে ওদের কেঁটে দেখাচ্ছে আর কাশফিয়া এগুলো নিতে না পেরে বমি শুরু করে দেয়। স্যার ওকে রিলেক্স করতে বাহিরে পাঠায়। কাশফিয়া বাহিরে এসে বমি করে দুইবার। তখন পাশ থেকে কেউ একজন ওকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দেয়। কাশফিয়া লোকটাকে না দেখে পানির বোতল হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিলো। পানি খেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে কাউসার দাঁড়ানো। কাউসারকে দেখে কাশফিয়া মাথা নিচু করে বলে,

কাশফিয়া: সরি ভাইয়া বুজতে পারিনি আপনি। প্লিজ রাগ করবেন না। আমি বুজতে পারিনি।

কাশফিয়া কথা টুকু বলে চলে যেতে নিলো কাউসার ওকে একটান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কাউসারের গরম নিশ্বাস কাশফিয়ার মুখের উপর পরছে। কাশফিয়া ভয়ে একদম শক্ত হয়ে গেছে। কাউসার কাশফিয়ার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে,

কাউসার: I Love You.

কাউসারের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে একদম বরফ হয়ে গেলো কাশফিয়া। সব কেমন এলোমেলো লাগছে তার। কাশফিয়া কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,

কাশফিয়া: ককি বলছেন এসব!
কাউসার: Yes I Love You Mis kashfiya.

কাউসারের কথা শুনে কাশফিয়া কি বলবে বুজে উঠতে পারছেনা। কাশফিয়া আবার বললো,

কাশফিয়া: আপনি এগুলো কি বলছেন। নিশি আপু শুনলে আমাকে আবার বকা দেবে। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।

কাউসার কাশফিয়াকে ছেড়ে দিলো। আর কাশফিয়া এক ছুঁটে ল্যাবে চলে গেলো।

ল্যাবে ক্লাস শেষ করে রোদেলারা বাকি দুটো ক্লাস করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলো।

রোদেলা: এই শুন তোরা যা আমি আসছি আমি অই সামনের লাইব্রেরী থেকে দুইটা বই নেবো। তারপর আসছি।

মুন: আমরাও যাই সাথে তুই একা যাবি কেন!
রুবা: হ্যা আমরাও যাই।
রোদেলা: লাগবেনা তোরা যা আজকে নিউ মেড আসবে, এসে বাসায় কাউকে না পেলে সমস্যা হবে। আর বেশি সময় লাগবেনা তোরা যা আমি ১০মিনিটে আসছি।
মুন: পাক্কা?
রোদেলা: হ্যা মেরি মা পাক্কা।
কাশু: আমরা তাহলে যাচ্ছি তুই ১০মিনিটে আসবি।
রোদেলা: হ্যা ওকে।

রোদেলা লাইব্রেরীর দিকে যায়। আর বাকিরা বাসার দিকে।

রাফসানের সামনের বসে আছে আদ্রিয়ান। রাফসানের কম্পানির সাথে ডিল করতে এসেছে ও। রাফসান ও এই ডিলে অনেক খুশি। আদ্রিয়ানের মতো লোকের সাথে কাজ করতে পারবে এটার জন্য।

রাফসান আদ্রিয়ান কথা বলছে এর মাঝে রাফসানের ফোনে কল আসলো।

রাফসান ফোন রিসিভ করতেই মুন বললো,

মুন:রাফসান ভাইয়া রোদেলাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। রোদেলা আমাদের সাথে কলেজ থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরী গেছিলো বই আনতে। বলেছিলো ১০মিনিটে আসবে। সেখানে এখন পুরো ২ঘন্টা হয়েছে ও বাসায় ফেরেনি।

মুনের কথা শুনে রাফসান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো আর বললো,

রাফসান: কিহ!!এখনো বাসায় ফেরেনি। তোমরা আশে পাশে দেখছো?
মুন: রুবা কাশু দুইজনে গেছে কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি।

রাফসানঃ ওকে আমি আসছি এখোনি।

রাফসান ফোন রেখে আদ্রিয়ানকে বলে,

রাফসানঃ সরি স্যার। কিন্তু আনার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।আমাকে এখন যেতে হবে।

রাফসানের কথা শুনে আদ্রিয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান এখন রাফসানের সামনে কিছু বলতে পারছেনা শুধু এই টুকু বলছে,

আদ্রিয়ানঃওকে আপনি আসতে পারেন।

রাফসান চলে যেতেই আদ্রিয়ান সায়মনকে কল করে।সায়ম কল ধরতেই আদ্রিয়ান চিৎকার দিয়ে বলে,

আদ্রিয়ানঃ রোদেলা ২ঘন্টা ধরে মিসিং আর আমাকে তোমরা জানাও নি কেন? Why Anewer me?
সায়মনঃ স্যার আমরা আপনাকে কল দিয়েছিলাম আপনি কল ধরেননি। আমি জনকে কল দিছিলাম কিন্তু আপনি মিটিং থাকায় ও আপনাকে বলতে পারেনি। আমরা রোদেলা ম্যামকে খুঁজেতেছি স্যার।
আদ্রিয়ানঃ আমি কিছু জানিনা।বিকেলের মধ্য আমি রোদেলাকে ওর বাসায় দেখতে চাই।
সায়মনঃ জ্বি স্যার।

রাতে,,,,,
রাত হয়ে এসেছে কিন্তু রোদেলার কোনো খোঁজ এখোনো মেলেনি।আদ্রিয়ানের সকল লোক রোদেলাকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেনা।রাফসান পাগলের মতো বোনকে খুঁজে চলেছে। সেও খুঁজে পায়নি রোদেলাকে।

আদ্রিয়ান মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে তার।
চাপ দিতেই গ্লাসটা টুকরা টুকরা হয়ে গেলো। আর আদ্রিয়ানের হাত থেকে ছিটকে রক্ত পরা শুরু করলো।

আদ্রিয়ানঃকোথায় হারিয়ে গেলে তুমি নেশামই। আমাকে একা করে আবার কোথায় চলে গেলে। আমাকে কষ্ট দিতে অনেক মজা লাগে তাইনা। নেশামই ফিরে আসোনা প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনাতো।

আদ্রিয়ানের হাত থেকে রক্ত পরছে কিন্তু ওর তাতে কোনো খেয়াল নেই।

একটা বন্ধ রুমে আটকে আছে রোদেলা। হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে সে। মুখে লাল দাগ। হয়তো কেউ থাপ্পর মেরেছে অনেকগুলা। রোদেলার সামনে দাঁড়ানো লিজা। লিজার মুখের হাঁসি।

লিজাঃ তোর এতো বড় সাহস তুই আমার আদ্রিয়ানকে কেড়ে নিবি আমার থেকে আর আমি সেটা হতে দেবো? এটা তুই ভাবলি কেমন করে? তোর জন্য আমাকে আদ্রিয়ান ভালোবাসেনা। আমার আদ্রিয়ান আমাকে অপমান করে তোর জন্য। এখন আমি তোকে এই দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেবো। তারপর আদ্রিয়ান আমার হয়ে যাবে। তুই থাকলে আদ্রিয়ান কোনোদিন আমার হবেনা। তোকে আমি কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখবোনা।

লিজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো কথাগুলো বলে।

সকাল হয়ে গেছে,,,,
রাফসানরা কেউ কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি, রোদেলার চিন্তায় সবাই চুপ হয়ে আছে। মেয়েটার সাথে এমন কেন হচ্ছে বুজতে পারছেনা তারা। রাফসান বোনের জন্য একদম বেকুল হয়ে গেছে।

আদ্রিয়ান নিজের অফিসের কেবিনে বসা। সব জায়গা খোঁজা হয়েছে। কোভরা গ্যাং এর কেউ এর সাথে জরিতো নেই। তাহলে কে রোদেলাকে গায়েব করলো বুজতে পারছেনা আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান এসব ভাবছে তখন সায়মন ওর রুমে আসলো হাঁপাতে হাঁপাতে।সায়মন রুমে এসে বললো,

“স্যার রোদেলা ম্যাম এর খোঁজ পাওয়া গেছে।”

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে