প্রেমময় আসক্তি পর্ব-০৮

0
1162

#প্রেমময়_আসক্তি ❣️
#পর্ব_৮
#নন্দিনী চৌধুরী

৮.
জানালার পাশে বসে আছে মুন। দৃষ্টি তার আকাশে ওঠা আজকের বড় গোল চাঁদটার দিকে।এই চাঁদের মতো সেও একা। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা আরেকটা বিয়ে করে সৎ মা ঘরে আনে। সেই সৎ মায়ের অত্যাচারেই বড় হয়েছে সে। একটা বড় ভাই ছিলো কিন্তু সেই বড় ভাই থাকা না থাকা সমান ছিলো। মুন যখন ক্লাস টেনে উঠে তখন ওর পড়াশুনার খরচ বহন ওর নিজেকে করতে হতো। ক্লাস টেন থেকেই নিজে নিজের পড়াশুনার খরচ বহন করছে। রোদেলার সাথে ওর পরিচয় স্কুল লাইফ থেকেই। দুজনে খুব ক্লোজ ছিলো। রোদেলাদের বাসায় প্রায় মুন যেতো। রোদেলার মা-বাবা মুনকে অনেক ভালোবাসতো। রোদেলার মা, মুনকে নিজের মেয়ের মতো আদর করতো। সে জানতো মুনের সৎ মা মুনকে কত অত্যাচার করে। মুন এভাবেই রোদেলাদের বাসায় আসা যাওয়া করতে করতে রাফসানকে দেখতে সেই দশম শ্রেণীতে পড়া কিশোরীর মনে জায়গা করে নিয়েছিলো রাফসান নামক যুবকটি। মুন প্রথমে তার এই অনুভূতিগুলো অতো পাত্তা দিতোনা। কিন্তু সময় যত যেতে লাগলো তার অনুভূতি গুলো খুব বেশি প্রখর হতে লাগলো।
কিন্তু সে তার মনের কথাগুলো কোনোদিন রাফসানকে বলেনি, ভয় হতো যদি রাফসান তাকে ভুল বুঝে। তাই সে তার মনের কথা আজও বলেনি রাফসানকে। এই না বলার কারনেই আজ তার রাফসান তার থেকে দূরে চলে গেলো। আজ তার রাফসান অন্য কারো হয়ে যাবে। অন্য কারো স্বামী হয়ে যাবে। অন্য কেউ রাফসানকের নিজের বলে দাবী করবে। এই কথাগুলো ভাবতেই মুনের চোখ জোড়া আবার পানিতে ভোরে এলো। আসলে সেতো রাফসানকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। ভাগ্য এতো নিষ্ঠুর কেন। কেন তার সাথেই এমন হয়। মুন চোখের কোণে পানি মুছে নিলো। এই কান্না কাকে দেখাবে সে? কেউ নেই দেখানোর মতো!
মন চোখ বুঝে শুয়ে পড়ে। মুনের পাশে থাকা রোদেলা এতক্ষন দেখছিলো মুনকে ঘুমের নাটক করে। রোদেলার নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে, সেতো জানে মুন কতটা ভালোবাসে রাফসানকে! রোদেলা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে রাফসান আসলে তাকে সে জানাবে, মুনের কথা।আর এখন সবার আগে তাকে তার মাকে জানাতে হবে। মা যদি পারে তার বাবাকে জানাতে তাহলে এই বিয়েটা হবেনা।

সকালে,,,,,

কাউসার আর ওর বন্ধুরা বসে আছে ক্লাসে। আড্ডা দিচ্ছে ক্লাসে বসে ওরা। তখন ওর বন্ধু জুনায়েদ ওকে বললো,

জুনায়েদ: কিরে মামা তুই বলে নিশির লোগে প্রেম করতাছোস? আর আমাগো জানাইলিনা।
কাউসার: মানে নিশির সাথে কিসের প্রেম করতেছি আমি?
জুনায়েদ: ওমা নিশি দেখি পুরা কলেজ ঘোষনা দিতাছে তুই ওর বয়ফ্রেন্ড আর ও তোর গার্লফ্রেন্ড। আর তুই বলতাছোস কিসের প্রেম!
কাউসার: কি? নিশি সবাইকে এগুলা বলে বেড়াচ্ছে?
জুনায়েদ: হ্যাঁ।

ওদের কথার মাঝে নিশি আর ওর বান্ধুবিরা ক্লাসে আসলো। কাউসার নিশিকে দেখে রেগে ওর কাছে গেলো।নিশি কাউসারকে দেখে খুশি হলো কিন্তু কাউসার নিশিকে একটা থাপ্পড় মারলো সবার সামনে আর চিৎকার করে বললো,

কাউসার: ইউ স্টুপিড গার্ল! তোমার সাহস হয় কিভাবে পুরো ক্যাম্পাসে মিথ্যা বলার? যে আমি আর তুমি বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড! তোমার মতো ফালতু মেয়েকে আমি কাউসার নিজের বাসার কাজের মেয়েও মনে করিনা আর তুমি সবাইকে বলতেছো আমি আর তুমি প্রেমিক ও প্রেমিকা! লাইক সিরিয়াসলি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখো নাকি? লিসেন এরপর এরকম করলে একদম সোজা প্রিন্সিপালের কাছে তোমার নামে রিপোর্ট করবো। আর এই মেডিকেল কলেজ থেকে তোমাকে টাটা বাই বাই করে দেবো। মাইন্ড ইট।

আশেপাশের সবাই মুখ টিপে হাসছে নিশিকে দেখে। কলেজের সব থেকে অহংকারী আর বিশ্রি কেরেক্টারের মেয়েকে কাউসার এভাবে অপমান করবে কেউ ভাবতে পারেনি। নিশি অপমানে লজ্জায় দৌড়ে চলে যায় ক্লাস থেকে।

ক্যান্টিনে বসে আছে কাশফিয়া। রোদেলা আর রুবা গেছে খাবার আনতে। মুন আজকে আসেনি। ওর নাকি ভালোলাগছেনা তাই আসবেনা। কাশফিয়া বসে ছিলো তখন নজর গেলো সামনের টেবিলে এসে বসা কাউসারের দিকে। কাউসার রেগে ক্যান্টিনে চলে আসছে জুনায়েদ আর সায়েমকে নিয়ে।

জুনায়েদ: একদম ঠিক করছিস, এই নিশি এতো বেড়ে গেছে ভাবনার বাহিরে।
কাউসার: ওর মতো ফালতু মেয়েকে আমি পাত্তা দেইনা আর ও আমাকে ওর বয়ফ্রেন্ড বানায়।

কাশফিয়া আর কাউসার একদম বরাবর বসা।কাউসার কথা বলার মাঝে কাশফিয়াকে দেখলো। কাশফিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। কাউসার জিনিশটা খেয়াল করেছে। রোদেলা আর রুবা খাবার নিয়ে আসতেই কাশফিয়া ওদের বললো,

কাশফিয়া: দোস্ত চল, এখানে খাবোনা। ক্লাসে যেয়ে খাই।
রুবা: কেন তুইতো বললি তুই এখানে খাবি।
কাশফিয়া: বলছিলাম কিন্তু এখন খাবোনা। চল না চল প্লিজ।
রোদেলা: আচ্ছা চল।

কাশফিয়া কাউসারকে এপ প্রকার এড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। কাউসার জিনিশটা বুজতে পারলো।

কাউসার: মেয়েটা আমাকে এভাবে এড়িয়ে গেলো কেনো। অন্য সময়তো আমার দিক থেকে নজরই সরায় না আজকে কি হলো?

ক্লাস শেষে রোদেলারা হোস্টেলে চলে আসলো। রাফসান কল দিয়েছিলো আর কিছুক্ষনের মাঝে সে পৌছে যাবে। ওদের রেডি থাকতে বলেছে। মুন প্রথমে রাজী হচ্ছিলোনা কিন্তু রোদেলার জেদের কাছে হার মানতে হয় ওকে। কিছু সময়ের মাঝে রাফসান চলে আসে রোদেলাদের হোস্টেলে।

রাফসান: রেডি তোরা?
রোদেলা: হ্যাঁ, আমরা রেডি।
রাফসান: তাহলে চল যাওয়া যাক।

তারপর রাফসান রোদেলাদের নিয়ে ওর নিউ ফ্লাটে আসলো।:যেটা রোদেলাদের কলেজের উল্টো সাইডে। রাফসান অনেকটা পথ জার্নি করে আসায় ক্লান্ত থাকায় শাওয়ার নিতে যায়। রাফসান বাহিরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছে। মুন এখনো রাফসানের সামনে তেমন যায়নি। আড়ালে আড়ালে থাকছে। রাফসান ফ্রেশ হয়ে এসে সবাইকে নিয়ে খেতে বসলো। এই পুরো ফ্লাটে চারটা রুম আছে। একটা রুম রাফসানের, আরেকটায় রোদেলা আর মুন থাকবে। একটায় কাশু আর রুবা থাকবে, অন্যটা ড্রইং রুম। খাওয়া শেষে রাফসান নিজের রুমে চলে আসলো। রোদেলা আর মুন সব গুছিয়ে ওদের রুমে আসলো। রোদেলা ফোন হাতে নিয়ে ওর মাকে কল দিলো।

রোদেলা: আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
রোদেলা মা: ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছিস মা?
রোদেলা: ভালো আম্মু। তুমি কেমন আছো?
রোদেলার মা: আমিও আলহামদুলিল্লাহ। তোর ভাইয়ার সাথে না তুই?
রোদেলা: হ্যা ভাইয়ার সাথে ফ্লাটে আসছি।
রোদেলার মা: মুন,রুবা,কাশু কেমন আছে?
রোদেলা: আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা মা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!
রোদেলার মা: বল মা কি কথা।
রোদেলা: মা, তোমরা ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করছো অথচ আমাকে জানালাও না!
রোদেলার মা: তোর বাবাই হুট করে রাফসানের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলো আর রাফসানের বিয়ের বয়স তো হয়েছে তাই আরকি। তোর ভাই তোকে মেয়ের ছবি দেখায়নি এখনো।
রোদেলা: দেখাবে বলছে। ভাইয়া এখন ঘুমাচ্ছে কিন্তু মা তুমি কি ভাইয়াকে জিজ্ঞেশ করছিলা তার কোনো পছন্দ আছে কিনা?
রোদেলার মা: হ্যাঁ, করেছিলামতো। ও বলেছে ওর কোনো পছন্দ নেই। তাইতো তোর বাবা তার বন্ধুর মেয়ে রিয়ার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। আর তোর ভাইয়েরও রিয়াকে পছন্দ হয়েছে। রিয়াও তো ঢাকা যাচ্ছে।
রোদেলা: রিয়া ঢাকা আসছে।
রোদেলার মা: হ্যাঁ, যাচ্ছে শুনলাম এই শনিবার।
রোদেলা: ওহ আচ্ছা। আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে থেকো বাবার খেয়াল রেখো। আমি আবার রাতে কল দিবো।
রোদেলার মা: আচ্ছা ঠিক আছে।

রোদেলা ফোন কেটে ভাবতে লাগলো।

রোদেলা: বাবাকে বলে লাভ হবেনা। বাবার বন্ধুর মেয়ে যেহুতু বাবা বিয়ে ভাঙ্গবেনা। আমাকে রিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। ওকে বলতে হবে। আর তার আগে ভাইয়াকে আমাকে জানাতে হবে।

রোদেলা ফোন রেখে বারান্দায় চলে গেলো মুনের কাছে।

এদিকে,,,,,,,,

আদ্রিয়ানের সামনে সায়মন দাঁড়ানো। আদ্রিয়ান আজকে কোভরা গ্যাংএর আরেকজনকে মেরেছে। অবশ্য ওরাই আগে আদ্রিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়েছিলো। আদ্রিয়ান কাজ শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ল্যাপটপ অন করতেই রোদেলা আর মুনকে এক সাথে গল্প করতে দেখতে পেলো। আদ্রিয়ান রোদেলার বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান জানতো রাফসান আসবে ওদের নিউ ফ্লাটে তাই আদ্রিয়ান আগেই সব ফিট করে এসেছে ওই ফ্লাটে।

আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলছে,

“বিড়ালের বাচ্চা আমার। একদম বিড়ালের মতো। সারাদিন টইটই করে আর এদিকে কেউ তার জন্য হাহাকার করে সেটা বুজেনা।”

“এই প্রেমের উত্তপ্ত নেশা আমাকে দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। না পারছি তোমাকে কাছে আনতে আর না পারছি ছেড়ে থাকতে। তোমার নেশায় নিজেকে গুম করে ফেলতে ইচ্ছা করে নেশামই। আসক্তি আমি তোমাতে।”

আরাভ আজকে ডিউটি শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। যাওয়ার সময় জুঁইয়ের জন্য কিছু জিনিশ কিনে নিলো। আরাভ আজকাল একটু মিস করছে রুবাকে। লাস্ট সেই হাসপাতালে দেখা হয়েছিলো তার সাথে। আরাভ মনে মনে বলছে,

মিস চেইন খুলা আপনার সাথে আবার কবে দেখা হবে কে জানে! ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই দেখা হবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে