প্রেমপ্রলয় পর্ব-১৯

0
937

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৯

জিমি চেয়ারে বসে আছে পাশের চেয়ারে বসে আছে পলাশ জিমির মামাতো ভাই মুখোমুখি বসে আছে হেডঅফিস্যার জিমির চোখ মুখে উপচে পড়া তৃপ্তির হাসি। আজ তার খুশির শেষ নেই এতো দিনের প্লান আজ সাকসেসফুল পাখি নিজে এসেই ধরা দিয়েছে। বিশেষ কোনো কষ্ট করা লাগলো না। জিমি হাসি মুখে বলে উঠলো

-‘ স্যার আপনি তো বলেছিলেন এই কেসটা স্লভ হয়ে গেলে প্রমোশন দিবেন কই কখন কবে দিবেন?’

পলাশ জিমির কথা শুনে সেও সাথে সাথে বলে উঠলো

-‘ স্যার ওর প্রোমোশন দিলে আমি কি দোষ করলাম’

পলাশের অ’গো*চ’রে জিমি মুখ ভেংচি দিলো। হেডঅফিস্যার মুশফিকুর রহমান ওদের বাচ্চামো দেখে হেসে উঠলেন। তিনি অন্য অফিস্যারদের মতো গম্ভীর নয় বেশ রসিক মানুষ। কিন্তু কাজের ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক। কাজে ভুল করলে তার আর র’ক্ষে নেই।

-‘ তোমরা কি কেস সামলাতে গিয়েও মা-র-পি-ট করো না-কি?’

-‘ এসব কি বলেন স্যার। আমরা তো গুড গার্ল এন্ড বয় আমরা কি ওসব পচা কাজ করতে পারি?’

জিমির কথা শুনে পলাশ জিমিকে ভ্যাংঙ্গালো। জিমি রাগি চোখে তাকালো পলাশের দিকে পলাশ সেটাকে পাত্তা দিলো না। একেবারে দুজন দুজনের শ-ত্রু-র মতো বিহেভিয়ার করে। মুশফিকুর রহমান এদের দেখে হাসি কন্ট্রোল করতে পারে না। তিনি হাসতে হাসতে বলল

-‘ সো ফানি, সো ফানি তোমরা টম এন্ড জেরির মতো সবসময় লেগেই থাকো। তো চলো কাজের কথায় আসা যাক। পলাশ তুমি আগে বলো তোমার প্রমোশন কেনো দরকার?’

-‘ এটা কেমন প্রশ্ন স্যার? প্রমোশন সবাই চাই আমিও চায়’

-‘ কোনো ইনপন্টেন রিজন নাই?’

-‘ না স্যার’

-‘ স্যার আমি জানি একটা ইনপটেন কারণ আছে বলবো?’

-‘ বলো’

পলাশ চোখ বড়বড় করে ইশারায় জিমিকে কারণটা বলতে বারণ করলো। কিন্তু জিমি তো জিমি পলাশকে পাত্তায় দিলো না। জিমি বলতে লাগলো

-‘ স্যার পলাশের গার্লফ্রেন্ড শায়লার বিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাবা-মা ভালো ছেলে খুঁজছে এদিকে পলাশের ও অবস্থা খারাপ প্রমোশন না হলে বিয়ের পর বউকে খাওয়াবে কি? কোন মুখ নিয়ে-ই বা নিজের বাসায় বলবে শায়লাকে বিয়ে করতে চাই?’

-‘ হোয়াট? পলাশ তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমাদের কে জানালেও না দ্যাস গ্রেট’

পলাশ বড্ড লজ্জা পেলো। পলাশ বলল

-‘ না মানে আসলে স্যার… ‘

-‘ ওকে ওকে এতো হেজিটেড হয়েও না। জিমি নাউ ইউর টার্ন…’

জিমি মলিন হেসে বলল

-‘ স্যার তেমন কোনো রিজন নাই আ’ম জাস্ট কিডিং আমি যে আমার বাবার খু-নি দের শাস্তি দিতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক’

-‘ ইউ নো জিমি তুমি যখন একবছর আগে আসছিলে সিআইডি তে জয়েন হতে। তখন তোমার ফেসের সাথে তোমার বাবার ফেস মিল পাই আমি তোমার সব ডিটেইলস চেক করি সবে তুমি তখন উনিশে পা দিয়েছো। ভেবেছিলাম এতো পিচ্চি মেয়ে এখানে টিকতে পারবে না কিন্তু না সেই তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি সবগুলোতে একে একে পার হয়ে গেলে তুমি সিলেক্ট ও হয়ে গেলে। আমার অবাকের শেষ ছিলো না। বেছে বেছে তোমাকেই আমি তোমার বাবার খু*নি দের খুঁজে বেড় করার কেসটাই তোমাকে দি আমি জানতাম অন্য কারোর কাছে কেসটা দিলে তারা তোমার মতো করে এতো সফটলি করতো না এন্ড এটাও আমি জানতাম তোমার তারগের্ট এটাই ছিলো বাবার খু*নি দের খুঁজে বের করা। কিন্তু আজ আমার নিজেকে খুব হালকা ফিল হচ্ছে আজ আমি ও খুশি জামান আমার কলেজ লাইফের ফেন্ড সাথে বেস্ট ফেন্ড হয়ে উঠেছিলাম আমরা হঠাৎ ক্যারিয়ারে ফোকাস করার জন্য আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেলো’

জিমি হেসে বলল

-‘ জী স্যার। কিন্তু কি জানেন স্যার আমার পাশে বসে থাকা বাঁদর ভাইটার জন্য আমি এতদূর আসতে পারছি। এছাড়াও আমার ফেন্ডরা আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। এদেরকে ছাড়া আমি সত্যি অসম্পূর্ণ এদিকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না।’

পলাশ জিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে বলল

-‘ বাবাহ বড় হয়ে গেছিস তো আই থিংক তোকে বিয়ে দেওয়া উচিত কি বলেন স্যার আমাদেরও বিয়ে খাওয়া হোক’

-‘ গুড আইডিয়া তো আমি বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি কবে?’

-‘ স্যার আমাদের আগে পলাশ স্যারের বিয়ে খাওয়া উচিত না হলে তাহার গফ পগার পা হয়ে যাবে’

জিমি কথা শুনে মুশফিকুর রহমান আর পলাশ হেসে উঠলো।

____________________________________________

জিমি আজ প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে কাল রাত থেকে ঘুমাতে পারি নাই। তার দরুন মাথা, চোখ, ঘাড় ব্যাথা করছে। জিমি সব ঠিকঠাক করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। মাথায় হাজারো চিন্তারা বাসা বেঁধেছে বাসার সবাই কিভাবে নিবে এটা কিভাবে রিয়াক্ট করবে? এতোক্ষণে তো সবার জেনে যাবার কথা। মিলি আপু কি তার ওপরে অভিমান করে বসে আছে তাকে না জানিয়ে এতো কিছু করাতে নিশ্চয়। দাদির-ই বা কি অবস্থা এক ছেলের খু*নের জন্য আরেক ছেলে জে/লে? চাচিদেরই বা কি অবস্থা এখন তারা কি কান্নাকাটি করছে? খুব বেশি-ই কি ভেঙ্গে পড়েছে তারা এখন তো ফোনে চার্জও নাই তার কিভাবে একটা খবর নিবে তাদের। চাচার দু-ছেলে কি কাঁদছে না-কি বাবাকে ঘৃণ্য করে দূরে ঠেলে দিবে ভাবছে।

জিমি আর ভাবতে পারছে না। কিছু দূর আসতেই ~’চা চলবে?’~ এটা কি ক্যাফে না-কি চা’র দোকান বুজলো না জিমি। জিমির মনে প্রশ্ন আসলো এটা কি নতুন করেছে আগে তো এটা কখনো দেখে নি। জিমি সেখানে নামলো এক কাপ চা খাওয়ার উদ্দেশ্য। চা টা তার বড্ড প্রিয় চা না খেলে তার একটা দিন ও চলে না। আজ না হয় এখানেই চা টেস্ট করা যাক। বাসায় গিয়ে তো আবার নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে নিজেকে তো ফিট রাখা প্রয়োজন তার জন্য চা ই বেস্ট। জিমি চা খেলো কিন্তু টেস্ট বুঝতে পারলো না তার মুখ থেকে কি স্বাদ চলে গেছে না-কি ম*রে গেছে? জিমি সে-সব নিয়ে আর মাথা ঘামালো না বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো আবার।

জিমি বাড়ির মেনডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাত কাঁপছে তার ভয় করছে কেন জানি না হঠাৎ। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কলিং বেল বাজালো কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে দিলো লিলি তার মুখ গম্ভীর তার মন মস্তিষ্কে কি চলছে জিমি বুঝতে পারলো না। দরজা সামনে দাঁড়িয়ে জিমি বলতে লাগলো

-‘ আম্মু আমি…. ‘

লিলি জিমিকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল

-‘ ফ্রেস হয়ে খেতে আসো’

কথাটা বলে লিলি জায়গা থেকে প্রস্থান করলো। জিমি অবাক হলো। লিলি তাকে কোনো প্রশ্ন করলো না কেনো? পরিবেশ ঠান্ডা মানে ঝড়ের লক্ষণ! জিমি চুপচাপ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে খেতে বসলো। লিলি, লিমন, দাদি কারোর টিকিটাও দেখতে পেলো না। জিমির পেটে খুদা থাকার সত্ত্বেও খাওয়া ইচ্ছেটাও ম-রে গেলো। মন ম’রা হয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো জিমি।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে