প্রেমপ্রলয় পর্ব-২১

0
957

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২১

জিমির ঘুম ভাঙ্গলো লিলির ডাকে। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো লিলি হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিমি আস্তে আস্তে উঠে বসলো। লিলি বলল

-‘ যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি’

জিমি টলমল পায়ে ওয়াসরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাঁপটা দিতেই মনে পড়লো লিলি তো তার সাথে রাগ করেছিলো তাহলে এখন স্বাভাবিক তারমানে রাগ পড়ে গেছে। জিমি চটপট ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে লিলির সামনে বসে বলল

-‘ আম্মু তুমি আর আমার ওপরে রাগ করে নাই তো?’

লিলি ভাত মেখে এক লোকমা জিমির মুখে দিয়ে বলল

-‘ তোর সাথে রাগ করে থাকা যায়? না তুই থাকতে দিস?’

-‘ আপুও কি রাগ করে আছে?’

-‘ তুই গিয়ে শোন ওদের নাস্তা দিয়েছি নাস্তা করছে একটু পরে চলে যাবে’

-‘ সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো আজ রাতটা থাকতে বলো’

-‘ বল থাকবে না তুই গিয়ে বলে দেখ কি বলে’

জিমি ছুটলো বোনের কাছে। লিলি বলল

-‘ আরে কই যাচ্ছিস খেয়ে নে আগে ওফ্ফ এই মেয়েটাও না’

লিলিও প্লেট হাতে নিয়ে গেলো জিমির পিছনে পিছনে। মিলি সামি আর জাকিকে পরোটা দিচ্ছিল জিমি টেবিলে চেয়ারে বসে বলল

-‘ ভাইয়া আজ না গেলে হয় না?’

জাকি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মিলি বলে উঠলো

-‘ নাহ্’

জিমি উঠে মিলির পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ সরি আপু রাগ করে আছিস না আমার ওপরে?’

-‘ না সর আমার রাগ টাগ নাই। আর কার ওপরেই বা রাগ করবো কেউ আছে আমার’

পাশ থেকে জাকি বলে উঠলো

-‘ আমি আছি বউ তোমার জামাই এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে’

লিলি তখনই এসে উপস্থিত হলো জাকির কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে কিচেনের দিকে চলে গেলো। জিমি, সামি আর লিমন মুখ টিপে হাসলো। মিলি জাকির দিকে চোখ মোটা মোটা করে তাকালো জাকি মাথা চুলকে খাওয়ায় মন দিলো।

-‘ আপু আজ প্লিজ থাক না দেখ সন্ধ্যাও হয়ে আসছে’

-‘ না মা বাসায় একা বাবা আজ কাজের জন্য রংপুর গিয়েছে থাকা যাবে না’

-‘ আন্টিকে আনিস নি কেনো?’

-‘ মা আসে নাই’

-‘ আপু তুই কি এখনো আমার ওপরে রাগ করে আছিস?’

-‘ না’

-‘ এমন করে বলছিস কেনো একটু ভালো করে বল’

মিলি জিমির দিকে তাকিয়ে জিমির কানটা জোরে মুলে দিয়ে বলল

-‘ এর চেয়ে ভালো করে বলতে পারি না আমি’

-‘ আহ কত ব্যাথা পাইছি’

-‘ ভালো হইছে’

____________________________________________

সময় বহমান দেখতে দেখতে একমাস হতে চলল।আগের মত যে-যার মত নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। সামির সাথে জিমির দেখা হলে এক দাফা ঝগড়া হবেই হবে। লিমনের পরিক্ষা শেষ হয়েছে কাল মিলি কালই লিমনকে সাথে করে নিয়ে গেছে নিজের সাথে করে।

আজ আকাশটা মেঘলা সূর্যের দেখা মেলেনি সকাল থেকে। চারিদিকে শীতল বাতাস বইছে। শীতের আগমন ঘটছে সেটাই জানান দিচ্ছে প্রকৃতি। জিমি রাস্তার চায়ের দোকানে সামনের বেঞ্চে বসে। চা খাচ্ছে এই নিয়ে যে কত কাপ শেষ করলো জিমির নিজেরই ঠিক নাই। হঠাৎ সামি এসে বলে উঠলো

-‘ এতো চা খাচ্ছেন কেনো?’

জিমি চা খেতে খেতে বলল

-‘ ইট’স মাই ফেভারিট’

-‘ ওহ রিয়েলি তো আমাকেও এক কাপ খাওয়ান’

জিমি এবার সামির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনি কোথা থেকে টপকে পড়েন বলেন তো? আবার এখন যেচে এসে চায়ের অফার নিচ্ছেন। আপনি একটা মানুষ ভাই’

-‘ এই একদম ভাই বলবা না’

-‘ তো কি জামাই বলবো?’

-‘ বলতেই পারো আই ডোন্ট মাইন্ড’

-‘ সাট আপ। আপনি আপনি করে কথা বলেন আবার তুমি তে চলে গেছেন কেনো? মে/রে আলুভাজি বানিয়ে দিবো’

-‘ না বাবাহ থাক আমার আবার ওতো সিআইডির হাতে মা*র খাওয়ার ইচ্ছে নাই’

-‘ আপনি আমার সাথে মজা করছেন?’

-‘ ছিঃ ছিঃ কি বলেন এগুলা আমার কি ওতো সাহস আছে না-কি? ‘

-‘ আপনি……’

জিমির কথা শেষ হওয়ার আগে পলাশ এসে উপস্থিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কি হচ্ছে এখানে? কে এটা?’

জিমিও পলাশের মতো ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কি হবে?’

-‘ আমার লগে ফাইজলামি করিস?’

জিমি কাত হয়ে পলাশের পিছনে শায়লাকে দেখে বলল

-‘ এতোক্ষণ কি করছিলি ভাই?’

পলাশ মুখে হাত দিয়ে হালকা কেশে বলল

-‘ এহম যায় করি তোর কি?’

-‘ আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে তুমি প্রেম করতে গেছো? তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি সাইট প্লিজ ‘

কথাটা বলে পলাশকে ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে জিমি শায়লার কাছে গেলো। পলাশ মাথা চুলকে বলল

-‘ দূর তা-রি-কা-র’

তারপর সামির দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ আপনি কে?’

-‘ আমি সামি। মিলি ভাবির দেবর’

-‘ ওহ! আমি পলাশ মিলির মামাতো ভাই। আসলে তোমাকে চিনি না মিলির বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারি নাই তো তাই’

-‘ ওহ নাইস টু মিট ইউ’

-‘ সেম টু’

পলাশ এবার শায়লা আর জিমির দিকে তাকালো সাথে সাথে জিমি পলাশের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো।

-‘ ভাইয়া বিয়ে আগে এসব কি?’

পলাশ ভরকে গেলো। আমতা-আমতা করে বলল

-‘ মানে তুই কি বলতে চাইছিস?’

-‘ তোকে আমি জে/লে পুরে দিবো’

-‘ মা মানে?’

-‘ কিছু না। যা ভাবিকে পৌঁছে দিয়ে আয় আমি অফিসে যাচ্ছি। ‘

পলাশ আর কিছু না বলে শায়লাকে বাইকে পিছনে উঠিয়ে জিমিকে বলল

-‘ তুই সাবধানে যাস আমি ওকে পৌঁছে দিয়ে আসতেছি’

-‘ হ্যাঁ তুই আই আমি তোর ব্যবস্থা করতেছি তার আগে ঝটপট আমাকে একহাজার টাকা দে’

-‘ আমাকে কি তোর টাকার গাছ মনে হয় তোর?’

-‘ অবশ্যই হ্যাঁ তোর প্রমোশন হয়েছে তুই এখন বড়লোক্স’

-‘ তোর প্রমোশন হয় নি?’

-‘ হয়েছে তো কি হয়েছে? তোর জন্য এতক্ষণ এখানে বসে থাকলাম কতগুলো চা খেলাম তার জন্য তুই দায়ী তাই এখন টাকা দে’

-‘ ওফ্ফ তোরে নিয়ে বড় জ্বালায় পড়লাম আমি’

সামি বলল

-‘ আমি দিয়ে দিচ্ছি সমস্যা নাই ‘

জিমি সামিকে ধ’ম’ক দিয়ে বলল

-‘ এই আপনি একদম চুপ থাকেন আপনাকে কে কথা বলতে বলেছে?’

পলাশ উল্টো জিমিকে ধ’ম’ক বলল

-‘ জিমি। তুই সামির সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো? চ*ড়ি*য়ে তোমার গাল লা’ল করে দিবো ‘

কথাটা বলে জিমির হাতে একহাজার টাকা দিয়ে বলল

-‘ আর যেনো কখনো এমন না দেখি’

জিমি একটা মুখ ভেংচি কেটলো। পলাশ চলে যেতেই। জিমি বলল

-‘ আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান নিজের কাজে যান। আপনার জন্য বকা খেতে হলো’

-‘ মজা পাইছি’

-‘ হ্যাঁ তা তো আমি বকা খেলে তো আপনি মজা পাবেনই আমি আপনার শ*ত্রু তো’

-‘ না আপনি আমার বউ’

-‘ বেশি বেশি কথা না বলে এখান থেকে ফটেন’

জিমি চায়ের দোকানের গিয়ে বলল

-‘ মামা এই নেন চা-টা অনেক মজা ছিলো’

-‘ আমার কাছে তো এতো টাকা ভাংটি নাই গো মা’

-‘ আরে আপনি রেখে দেন আপনাকে এতোক্ষণ অনেক জ্বালিয়েছি’

-‘ না না এতো টাকা তো বিল না মা’

-‘ মনে করেন আপনার মেয়ে দিচ্ছে’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে