প্রেমপ্রলয় পর্ব-১২

0
927

#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১২

আজ সকালে জিমি অনেক দেরিতে উঠেছে তাও ওর এখনো ঘুম পূরণ হয়নি। এখনো ঘুমতে মন চাইছে কিন্তু এদিকে জিমির মা বারবার জিমিকে বাজারে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে। জিমি ফ্রেশ হয়ে ঘুম চোখে ডুলুডুলু পায়ে হেলতে দুলতে ড্রাইংরুমে আসতেই বাহুতে বারি খেলো ঘুমু চোখে মাথা উঠাতেই সামির মুখ দেখতে পেলো। সামিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো কিচেনে বিরবির করে বলল ‘আজ দিন টা-ই খারাপ যাবে’

কিচেনের দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল ‘আম্মু কও কি আনতে হইবো? শান্তিতে ঘুমাইতেও দাও না। কাল রাতে বললে সব এনে রাইখা দিতাম তাও এভাবে অত্যাচার না করতে হইতো না তোমার?’

লিলি চাপা স্বরে বলল ‘ভালোভাবে কথা বল জিমি বাড়িতে জামায় আছে, তার ভাই আছে এভাবে কথা বলতে শুনলে তারাই বা কি মনে করবে বলতো’

জিমি চোখ খুলে লিলির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল ‘কি লাগবে তারাতাড়ি বলো আমার ঘুম পাচ্ছে’

-‘এসে ঘুমাবি মানে কি মা-র-বো টেনে এক চ*ড় এসে কোনো কাজ না পেলে পড়তে বসবি পড়াশোনা তো সব লাটে উঠিয়েছিস’

জিমি চুপ থাকলো লিলি কি কি আনতে হবে তার একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো জিমির হাতে। জিমি ড্রাইংরুম ক্রস করে যাচ্ছিল তখন জাকি বলে উঠলো ‘কোথায় যাও গো শালিকা?’

জিমি জুতার ফিতা লাগাতে লাগাতে বলল

-‘প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গো ভাইয়া’

-‘প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রেমিকা বুঝি বাজারের প্যাকেট নিয়ে যায়’

-‘আমি হচ্ছে সব থেকে আলাদা প্রেমিকা বুজলে তাই প্যাকেট নিয়ে যায়’

-‘তাহলে চলো আমি যায় তোমার সাথে বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছে না বেড়িয়ে আছি তোমার সাথে’

-‘আমার সাথে কেনো আপু আছে তো? আর আমার মেলা কাজ বুঝলে’

-‘বুঝলাম’

জিমি জুতার ফিতা লাগিয়ে উঠে দাঁড়াতেই জাকিকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। জাকি বলল

-‘চল এখন তোমার সাথে যায় পরে না হয় তোমার আপুর সাথে যাবো’

লিলি বেগম এগিয়ে এসে বলল ‘সে-কি বাবা তোমাকে ওর সাথে কষ্ট করে যেতে হবে না তোমাকে বরং লিমন ঘুড়িয়ে আনবে নাহলে জিমি বাইরে থেকে এসে তোমাদেরকে বেড়াতে নিয়ে যাবি’

-‘না আম্মু আমি জিমির সাথে বাজারে যেতে চায় জিমি পারবে না বাচ্চামেয়ে’

-‘জিমি পারবে বাবা ও-কে নিয়ে টেনশন করো না’

জিমির কিছু মনে হতেই হাতের বাজারের প্যাকেটটা জাকির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ‘দাঁড়াও আসছি’

কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না। নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো। লিলি বেগম জিমির যাওয়ার পানে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জাকি মুচকি হেসে বলল ‘আমি যাচ্ছি আম্মু জিমির সাথে আমিও তো আপনার ছেলে না-কি এইটুকু করলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না মেবি’

লিলি হেসে চলে গেলো রান্না ঘরে। জিমির প্রতি লিলির প্রচন্ড রাগ লাগছে বিরবির করে জিমিকে বকতে বকতে বলল ‘বাড়ির বড় জামাইকে দিয়ে না-কি বাজার করাবে? মিলির বাবা থাকলে কখনো এটা হতে দিতো? এই মেয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি সব গেলো না-কি?’

জিমি রুমে গিয়ে বাইকের চাবিটা হাতে ঘুরাতে এসে জাকির হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলল ‘থ্যাংকস এতোক্ষণ ব্যাগটা ক্যারি করার জন্য আসি’

জাকি ভ্রু কুচকে বলল ‘মানে কি আমি যাবো তোমার সাথে’

জিমি থেমে পিছনে ফিরে বলল ‘তুমি কেনো যাবে ভাইয়া?’

জাকি রাগি দৃষ্টিতে তাকালো জিমির দিকে জিমি হেসে বলল ‘তুমি এবাড়ির বড় জামাই মিলি আপুর বর আব্বু থাকলে কখনোই যেতে দিতো না তোমাকে আমিই বা তোমাকে কিভাবে নিয়ে যায় বলো না? আর তাই তোমাকে নিয়ে যেতে পারলাম না তুমি যাবে বলেছ এটাই অনেক এটাই বা কইজন বলে বলতো? আর তুমি জামাই মানুষ তাও আবার এবাড়ির বড় জামাই বলে কথা একটু ভাবটাব নিয়ে থাকবে তা না উনি বাজারে যাবেন হাহ্ আইসে বাড়িতে তো বাজার করো না এদিকে শশুর বাড়িতে এসে বাজার করবে ব্যাপারটা কেমন গন্ডোগোল না আন্টি জানলে কি হবে ভাবতে পারছো? তার আদরের বড়ছেলেকে দিয়ে বাজার ও-মাই-খাট! বাসায় গিয়ে বাজার করবে বুঝলে’

জাকি হেসে বলল ‘বা বাহ্ তুমি তো দেখছি পাকাবুড়ি!’

জিমি পুষ্পা মুভির ডায়লগ বলল ‘জিমি কাভি ঝুঁকে গা নেহি’

জিমির বলার স্টাইল দেখে না চাইতেও হেসে ফেললো সবাই। সামি এতোক্ষণ নিবর দর্শন ছিলো জিমির কান্ড দেখে হাসে চাপতে না পেরে হেসে দিলো। লিলি রান্নাঘর থেকে এসব দেখে হেসে নিজের নিজেই বলল ‘যাক মেয়েটার মাথা যায়নি তাহলে’

_____________________________

দুপুরের ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। আর টুকটাক কথা বলছে। জিমি সকালে না খাওয়ায় প্রচন্ড খুদা লাগছিলো তাই তাড়াতাড়ি খাচ্ছিল সামি জিমির পাশে বসে জিমির খাওয়া দেখে জিমির কানের কাছে গিয়ে চাপা স্বরে বলল

-‘এমন রা*ক্ষ*সী*দে*র মতো করে খাচ্ছেন কোনো?’

সামির কথা জিমির কানের পৌঁছাতেই মাথায় দপ করে আ’গু’ন জ্বলে উঠলো। রাগি চোখে সামির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘আমার খাবারের লোভ না দিয়ে নিজের খাবারের দিকে নজর দেন। ছুঁ*চা কোথাকার!’

জিমিকে কথাটা বলে সামি মনের সুখে খাচ্ছিল জিমির মুখে ‘ছুঁ*চা’ শুনে ওর ফুরফুরে মেজাজটায় অগ্নিকুন্ডলে পরিনত হলো। দুজন দুজনের রক্তিম দৃষ্টি মিললো। এখনি যেনো ভস্য করে দিবে। তখনি জিমির ফোনের রিংটোনটা তীব্র কালবৈশাখির ন্যায় বেজে উঠলো। জিমি সামির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে ধ’ম’কা-ধ’ক’মি’র উল্কা ন্যায় ছুটে আসলো। জিমির বিরক্ত, রাগি দৃষ্টি আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো। জিমি বোঝানোর চেষ্টা করে বলল

-‘স্যার আপনি আমাকে ভুল বুঝে….’

-‘…………’

জিমি ফোন কেটে ভাত রেখে উঠে দাঁড়ালো। মিলি প্রশ্ন করলো

-‘কি হয়েছে? কে ফোন করেছিলো?’

লিলি বলল

-‘ভাত রেখে উঠলি কেনো? যেখানে যাবি আগে খেয়ে যাবি’

জিমি বেসিং থেকে হাত ধুয়ে পাশে থাকা তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে বলল

-‘শোনো আম্মু যদি শোনো তোমার মেয়ে খু*নে’র দায়ে জেলে দেওয়া হয়েছে তাহলে ঘাবড়ানো কিছু না-ই শুধু মনে রাখবে যা করেছি ঠিক করেছি তোমার মেয়ে কখনো অন্যায় কাজ করে না’

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে