প্রিয় অভিমান পর্ব ৭

0
1110

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৭

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
গাড়িতে বসে আছি নববধূর সাঁজ নিয়ে,
কাব্য ভাইয়া একমনে গাড়ী চালাচ্ছেন,
কোনো কথা বলছেন কিন্তু কিছুক্ষন পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছেন ,
আর মুচকি মুচকি হাসছেন,
উনার এমনভাবে তাকানো আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে,
উনি যে কি মতলব করছেন তা উনিই ভালো জানেন,
প্রথমে তো উনার কথায় কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেছি কিন্তু এখন ভীষন ভয় করছে ,
কেন জানি না শুধু এ কথাই বার বার মনে হচ্ছে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,
কেমন একটা অশান্তি কাজ করছে মনের মাঝে,
বৌ সাজার পর থেকে মনের মাঝে অদ্ভুত একটা ফিলিং হচ্ছে যেন আজই আমার বিয়ে,
কিন্তু এটা তো মিথ্যে আমি শুধু অভিনয় করার জন্য এমন সেঁজেছি।
তাহলে এমন কেন হচ্ছে সব কিছু সত্যি মনে হচ্ছে কেন?
বৌ সেঁজে বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না ভীষন কান্না পাচ্ছে ,
কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় নেই কাব্য ভাইয়াকে কথা দিয়ে ফেলেছি উনি কিছুতেই এখন আমায় ছেড়ে দিবেন না।
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে আবার তাকাতেই আমি একটু উচ্চ সুরে বলে উঠতে লাগলাম,
গাড়ী থামাও ! গাড়ী থামাও!!!
আমার এমন কথা শুনে কাব্য ভাইয়া সাথে সাথে গাড়ী থামিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোঁখে আমার দিকে তাকালেন,
আমি উনার দিকে কিঞ্চিৎ ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
তুমি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন??
আর এইভাবে হাসছোই বা কেন?
আমাকে কি তোমার জোকার মনে হচ্ছে??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয় দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠলেন ,
তোমার দিকে কি আর সাধে তাকাচ্ছি এতো পয়সা করচ করে তোমার মতো পেত্নিকে পরি সাঁজিয়েছি নিজের জন্য , সেটা
ঠিকঠাক মতো আছে কি না দেখতে হবে না ,তা না হলে আমার বয়েই গেছে তোমার দিকে তাকাতে।
উনার কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে উঠল,
যেখানে আমার রূপের প্রশংসা করতে সবাই পরি ,অপ্সরি উপাধী দিয়ে থাকে সেখানে উনি আমাকে পেত্নি বলছেন,
আমি রাগে জ্বলে উঠে বললাম,
আমি যখন পেত্নি তখন আমাকে দিয়ে নিজের নাটকে অভিনয় করাচ্ছেন কেন??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন,
কপাল বুঝলে সবই কপাল তা নাহলে আমার চারিপাশে এতো এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে শেষে কিনা তোমাকে আমার প্রয়োজন পরল,
কি আর করা বলো ফেঁসে গেছিতো এখন তোমাকেই তো উদ্ধার করতে হবে আমাকে।
উনার এমন জবাবে আমি আর কিছু খুঁজে পেলাম না বলার ,রাগী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি আমার এমন তাকানো দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবার গাড়ী স্টার্ট দিলেন,
আমিও আর কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম ,
.
গাড়ী থামার শব্দে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম,
উনি গাড়ী থেকে নামতে নামতে আমাকেও নামতে বললেন,
ভাবলাম হয়তো উনার কাজের জায়গায় এসে গেছি তাই আমিও নেমে পরলাম।
গাড়ী থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে উঠল ,
এটা তো কাজি অফিস !!!
এখানে উনার কি কাজ থাকতে পারে?
কাব্য ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন??
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে চোঁখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে ??এটা নিশ্চই তোমার কাজের জায়গা নয়,,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-এসেছি যখন নিশ্চই কাজে এসেছি,
এতো বেশী প্রশ্ন করো কেন ,বকবক না করে আমার সঙ্গে এসো,
বলেই উনি হাঁটতে লাগলেন,
ভাবলাম হয়তো এখন থেকেও কাউকে নাটকের জন্য নিবেন তাই আমি আর কোনো প্রশ্ন না করে ,একরাশ কৌতূহল নিয়ে উনার পিঁছন পিঁছন ভিতরে যেতে লাগলাম,
.

ভিতরে গিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া দু জন ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন,
তাদের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে ছেলে দুটি কাব্য ভাইয়ার বন্ধু,
আমি ভিতরে এক কোনে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছি কি হচ্ছে বা কি ঘটছে কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না ,
কি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে রে বাবা!!নিশ্চই তাদের নাটক নিয়ে,
কিন্তু আমাকে সাঁজিয়ে এখানে এভাবে সঙ এর মতো দাঁড় করিয়ে রেখেছে কেন কে জানে,
উফ!অসহ্য।মনের মাঝে এক তিক্ত অনুভুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
হঠাৎ করে কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলে উঠলেন,
আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনো ,
আমি উনার এমন আচমকা কান্ডে হতবিহ্বল হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,
কাব্য থেমে আবার বলে উঠলেন,
তোমাকে কোনো নাটকের জন্য সাঁজানো হয়নি ,আজ এখানে এই মুহূর্তে আমাদের বিয়ে হবে।
কাব্য ভাইয়া কথা শুনে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল,
আমি এক জটকায় উনার হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলাম,
-কি সব আবোল তাবোল বলছো আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে যাবো?
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া শয়তানি হাসি হেসে বলে উঠলেন,
-সত্যি তো তুমি কেন আমাকে বিয়ে করবে?
বিয়ে তো করবো আমি তোমাকে ,আর সেটা যে ভাবেই হোক।
উনার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বলে উঠলাম,
তার মানে তুমি আমাকে এখানে মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছো??
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ব্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন,
এভরি থিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার,
আমি তোমাকে সত্য বললে তুমি নিশ্চই নাচতে নাচতে এভাবে সেঁজেগুজে বিয়ে করতে চলে আসতে না।
তাই এই অভিনয়টা করতে হলো,দেখো তোমার বর কতো বুদ্ধিমান নিজের বরের এমন ট্যালেন্ট দেখে নিশ্চই তোমার গর্ম হচ্ছে,
উনার কথা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর জ্বলে উঠল,বুদ্ধি না ছাই মাথাটা আস্ত একটা শয়তানের কারখানা।হাতের কাছে একটা লাঠি থাকলে সেটা দিয়ে উনার মাথাটা ফাটিয়ে তারপর শান্তি পেতাম।
নিজের বোকামির জন্য যে ভালো ভাবে ফেঁসে গেছি সেটা হারে হারে টের পাচ্ছি,এখন রেগে গেলে চলবে না ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে।
উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
প্লিজ ভাইয়া আমার এতো বড় সর্বনাশ করো না,
আমি তো তোমার ছোট বোনের মতো নিজের বোনের এত বড় ক্ষতি কেউ করে ,প্লিজ ভাইয়া আমার সাথে এমন করো না ,বোন হই তো আমি তোমার।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
-লিসেন সুহা প্রথমত তুমি আমার নিজের বোন নও এন্ড দ্বিতীয়ত ছেলেরা নিজের থেকে বয়সে ছোট মেয়েদেরই বিয়ে করে বড়দের নয় ওকে।
তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোনো বাঁধা নেই সো এসব লেইম এক্সকিউজ দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
বিয়ে তো তোমার আমাকেই করতে হবে।
এবং সেটা আজই।
উনার এমন কথা শুনে আমি রেগে বলে উঠলাম,
আমি কখনই তোমাকে বিয়ে করবো না,
এভাবে লুকিয়ে তো করবই না বরং সবাই ও যদি চায় আমি তোমাকে বিয়ে করি তখনও করবো না।
আমার কথাগুলো শুনে কাব্য ভাইয়া ভয়ংকর রেগে গেলেন,রেগে গিয়ে উনি আমার হাত ধরে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
যা বলছি ভালোয় ভালোয় মেনে নাও না হলে বিয়ের পরের কাজ বিয়ে আগে করতে বাধ্য হবো ।
আর এটা নিশ্চই তোমার ভালো লাগবে না।
আমি যা বলি তাই করে ছাড়ি সেটা নিশ্চই তোমার অজানা নয় ।
কাব্য ভাইয়ার এমন ভয়ানক আচরনে ভয়ে আমি কেঁদে দিলাম ,
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না,মাথা কাজ করছে না।
কিন্তু আমার যে আজ আর রক্ষা নেই এইটুকু বুঝতে পারছি।
আমি কিছু বলছি না দেখে কাব্য ভাইয়া আবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন,
আজ হোক বা কাল হোক বিয়ে কিন্তু তোমার আমাকেই করতে হবে ,এখন যদি তুমি আমার কথা না মানো পরের ঘটনাটা কিন্তু না তোমার জন্য সুখকর হবে না তোমার পরিবারের জন্য।
বলেই উনি আমাকে ছেড়ে আমার এক হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এসে কাজির সামনে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিলেন,আর উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।দেখলাম উনার দুই বন্ধুও সেখানে উপস্থিত ,এতক্ষনে বুঝতে পারলাম এদের দুজনের কাজ কাব্য ভাইয়া বিয়ে সাক্ষির জন্য এদের এখানে এনেছেন,
কাজি সাহেব আমাকে কবুল বলতে বলছেন কিন্তু আমি কিছু না বলে ,মাথা নিচু করে অজোর ধারায় কেঁদে চলছি ,এই রকম একটা বাজে দিন যে আমার জীবনে আসবে আমি কোনো দিন কল্পনাই করি নি,
নিজেকে ভীষন অসহায় লাগছে,
কাজি সাহেব আমাকে তাড়া দিতে লাগলেন কবুল বলার জন্য ,কিন্তু আমি কিছুই বলছি না কেঁদেই যাচ্ছি,
হঠাৎ কাব্য ভাইয়া এক চিৎকার করে বলে উঠলেন ,
-তুমি কবুল বলবে কি না বলেই সজোরে টেবিলে একটা ঘুষি মারলেন,
উনার এমন কান্ডে আমি কেঁপে উঠলাম ,
এবং ভয়ে কেঁপে কেঁপে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
-ক ক কবুল।
এটা শুনে কাব্য ভাইয়া শান্ত হয়ে এসে আমার পাশে বসলেন তখন ও আমি মাথা নিচু করে কেঁদে চলছি,
কাজি সাহেব আমার বলা কবুল শুনে আলহামদুল্লিলাহ বলে আবার বলতে বললেন আমি ঠিক আগের বারের
মতো বলে উঠলাম উনি আমাকে আবার বলতে বললেন আমি
ঠিক একি ভাবে উচ্চারন করলাম।
তারপর কাব্য ভাইয়া কবুল বললেন।
কবিননামায় সই করে আমাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন,
বাইরে এসে আমি মূর্তির মতো দাড়িয়ে কেঁদে চলছি ,
কাব্য ভাইয়া আমার কাছে এসে উনার সঙ্গে যাবার জন্য বললেন কিন্তু উনার কোনো কথাই আমার কান দিয়ে যাচ্ছে না আমি দাঁড়িয়েই রইলাম,
অবশেষে কাব্য ভাইয়া এসে আমাকে পাজো কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন ,
আমি কোনো রিয়েক্ট করলাম না আমি শুধু কেঁদেই যাচ্ছি ।
আমাকে গাড়িতে বসিয়ে কাব্য ভাইয়া গাড়ী স্টার্ট দিলেন,আমি শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে ভাবতে লাগলাম ,
একটি রাত আর একটি দিনের ভিতরে আমার জীবন সম্পূর্ন
উলট পালট হয়ে গেল,
কি থেকে কি যে হয়ে গেল,সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে বিরাট বড় দু:স্বপ্ন।
যে মানুষটাকে আমি এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারিনা তাকে আমি সারা জীবন কি ভাবে সহ্য করবো।
কখনই না এ বিয়ে কিছুতেই আমি মেনে নিবো না।
পরিবারের সবাই নিশ্চই সবটা শুনলে আমাকে উনার হাত থেকে রক্ষা করবে,
এই রাক্ষসটার হাতে নিশ্চই আমাকে ওরা ছেড়ে দিবে না।
এক বুক আশা নিয়ে গাড়িতে বসে রইলাম।
.
কাব্য ভাইয়া গাড়ী চালাচ্ছেন উনার মুখে বিজয়ের হাসি ,
যে হাসিটা দেখে আমার সমস্ত গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে,
উনার দিকে তাকাতেই মন চাইছে না।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলাম।
.
বাড়িতে এসে উনার সঙ্গে ভিতরে ঢুকলাম,
আমাকে এভাবে কনের সাঁজে দেখে আপু আর আন্টি অবাক হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন,
বিস্ময় নিয়ে তারা একবার আমার দিকে একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছেন,
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাব্য ভাইয়া সবাইকে যা বললেন সেটা শুনার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে