প্রিয় ভুল পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫+৩৬

0
176

প্রিয় ভুল
লোখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব: ৩৩
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

অবশেষে বাড়ি পৌছায় সবাই। শোকেসে তুলে রাখা সব বাসন বের করে ডাইনিং স্পেসে সবাই একসাথে খেতে বসে৷ খাওয়া শেষ সুতা কাটে যে ছটফটে ছেলেটা সে জিজ্ঞেস করে –
: ” কি উপলক্ষে হঠাৎ খাওয়াইলেন আফা তা তো কইলেন না? কি দুয়া করমু? ”
মলিন হাসি হাসে মীরা বলে-
: ” আমার বাবা মারা গেছেন আজ চারদিন, আমাদের পরিবারে চারদিনর দিন আত্মীয় স্বজনদেরকে খাওয়ানোর নিয়ম আছে। আমার আত্নীয় বলতে তো তোমরাই, এটাকে আমার বাবার চারদিনের খরচ ভাবতে পারো ”

মাজেদা খালার হাতে থাকা পানির জগটা পরে গেলো মীরার কথা শুনে। এ মেয়েটা কি হ্যা, বাপ ম’রছে চারদিন আর এ কথা এখন কয়?

টুম্পাও মীরার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর মীরা ব্যাস্ত সবার থেকে নিজের চোখ লুকাতে। সবার সামনে আবার শেষবারের মতো বাবাকে না দেখতে পারার কষ্টটা পানি হয়ে গড়িয়ে পরে সেই ভয়ে…

কথাটা শুনে পুরো ঘরে যেন নিঃস্তব্ধতা নেমে এলো।
সেখান থেকে মীরা সবাইকে কোক দিতে বলে কি এক বাহানায় বারান্দায় চলে যায়। মাজেদা খালাও ভাঙা জগের টুকরো না পরিষ্কার করেই মীরার পিছু পিছু যায় । গিয়ে দেখে মীরা চোখ মুছছে, মাজেদা খালাকে দেখে হাসার চেষ্টা করে ও। মাজেদা খালা মুখ গম্ভীর করে বলেন-
: ” খালা আপনে কি কন তো?
হাসার চেষ্টা করে মীরা বলে-
: ” কেন খালা?”
: ” আমি তো ভাবি আমরা আপানর অনেক আপন, কিন্তু এত বড় কথাডা লুকায়া গেলেন আমাগোরতে? ক্যান খালা?”
মীরা মুখে হাসি বিস্তৃত করে বলে-
: ” আর কত বলতাম নিজের দুঃখের কথা খালা? কষ্ট তো পিছুই ছাড়ছে না আমার। সুখ কি জিনিস তা আমি ভুলেই গেছি। দুঃখ ভাগ করার যে ব্যাপারটা তা আমার কাছে অন্যকে শাস্তি দেয়া মনে হয়, মানে হয় যাকে বলছি, আমি আমার যন্ত্রণার ভাগ তাকে দিচ্ছি। তাই সব কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। তাছাড়া আর কি-ই বা বলতাম বলেন। বলার মতো কিছু থাকলে তো?
: ” আপনের বাপে মরছে, আর কিছু না পারতাম নামাযে দোয়া তো করতে পারতাম।
: ” খালা কি বলতাম আমি বলেন? বলতাম যে – ” জানেন খালা আজ না আমার বাবা মা’রা গেছেন, সেদিন দুপুরে খবরটা শুনে আমি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম এতদিন পর। সেই যে তপ্ত দুপুরে বেরিয়েছিলাম আমি, রাজিবের হাত ধরে। এত বছর পরে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বাবাকে শেষ বারের মতো দেখতে গিয়েছিলাম আমি। কেও আমার সাথে কথা বলে নি, কেও না। সবাই আমাকে ঐখানে দেখে বিরক্ত হয়েছিল, এমনকি আমার মা-ও আমাকে দেখা দেননি, আমি আসার খবর শুনে লম্বা একটা ঘোমটা টেনেছেন, পরপুরুষ দেখলে যেমন মা চাচীরা ঘোমটা টানেন তেমন। দৌড়ে ঘর থেকে এসে লা’শে’র খাট আগলে বসে ছিলেন তিনি, আমি যাতে বাবাকে দেখতে না পারি। সকলে আমার সাথে এমন দুর্ব্যাবহার করলো খালা বলার মতো না, তবুও বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে যদি পাই। কিন্তু কেও আমাকে আমার বাবা যে আমার জন্মের খবরে আনন্দে কেঁদে ছিলো, আমাকে যত্ন করে লালন পালন করেছিলো, যে আমাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেছিলো তাকে দেখতে দিলো না। আমার মা চিৎকার করে সবাইকে বলেছেন আমি নাকি আমার বাবাকে খুন করেছি, আমার জন্যই নাকি তার এ পরিণতি। সবাই আমাকে চলে যেতে বলছিলো কিন্তু আমি তবুও দাঁড়িয়ে ছিলাম একটা বার বাবাকে দেখার আশায়। বাড়িওয়ালী আন্টি মাকে বললেন- ” আপা বড় মেয়ে এসেছে, যা হয়েছে হয়েছে, শেষ বারের মতো বাপটারে দেখতে দিন আপা”
উত্তরে মা বললো-
বাবাকে দেখলে নাকি তার আত্না কষ্ট পাবে, তিনি নাকি সুস্থ থাকতেই বলে গেছেন – “ও যেন আমার লা’শ না দেখতে পায় “। এরপর আমার মা এমন পাগলামি শুরু করলো যে আমার খালামনি আমার হাত টেনে ঘর থেকে বের করে দিলেন। দড়জার ওপাশে দাঁড়িয়ে আমি শুনছিলাম আমার মায়ের আর্তনাদ। আমাকে দেখে তিনি স্বামীর শোক ভুলে আমার দেয়া কষ্টের ফিরিস্তি শুরু করলেন। লাশ আগলে বসেই রইলেন, নিশ্চিত করলেন আমার বাবাকে না দেখতে পারাটা । মা আমার এমনি শোকাতুর যে আমাকে বের করে দেওয়ার পরও বাবার লাশ আগলে বসেই ছিলেন। সবাই বলছে যে চলে গেছে মীরা, এখন ছাড়েন, চলে গেছে ও। কিন্তু তিনি যেন কাওকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
আমি সেদিন বাবাকে দাফন করা পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম, যদি কারো একটু মায়া হয়, দেখতে দেয় আমাকে। কিন্তু না আমার সামনে আমার বাবার কবর খোড়া হলো, সাদা কাপড়ে পেঁচিয়ে শরিয়তের সমস্ত বিধান সম্পন্ন করে কবরে নামানো হলো। কবরের প্রথম মাটি দিলো আমার ছোট ভাই।
কবর দেয়া শেষ হলে আমার ছোট ভাই বোন দুজন কবরে কান্নায় লুটিয়ে পরে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আমি এসব। নিজেকে তখন অস্পৃশ্য মনে হচ্ছিল। তা না হলে আমি কেন যেতে পারছি না। ওদের মতো আমিও কেন কবরের উপর আছরে পরতে পারছি না। নিজেকে ভীষণ পাপী মনে হচ্ছিল। তা না হলে কেন আমার সাথে এমন হবে”

বলতে বলতে বারান্দার মেঝেতে বসে পরে মীরা। টুম্পা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে। মাজেদা খালা মাথায় হাত বুলায়৷ কিন্তু তিনিও জানেন এ যন্ত্রণা মুছবার শক্তি কারো নেই। তবুও মিছে চেষ্টা করেন তিনি।

দুপুরের খাবারের পর নিজ হাতে সবাইকে পায়েস বেড়ে দেয় মীরা। পায়েস খেয়ে বাড়ি চলে যায় সবাই। আজ ওদেরকে ছুটি দিয়েছে মীরা। সবাই চলে গেলে মীরাকে ঘরে যেতে বলেন মাজেদা খালা। এসব না ভেবে শুয়ে রেস্ট নিতে বলেন ওকে। মীরা খাটে শোয়া অবস্থায় বলে- ” খালা এমন কোন সুইচ থাকতো যদি, যা টিপে ভাবনার স্রোত বন্ধ করে দেয়া যেতো, যত দামই হতো, আমি কিনতাম”
টুম্পা মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে-
: ” এখন একটু ঘুমান, আপনার অনেক কাজ সামনে, বাবাহীন পরিবারে আপনার কাঁধেই এখন তাদের দায়িত্ব, এ কথা ভুললে চলবে?”
: ” এসব ভেবেই তো চুপ করে আছি আমি, তোর কি মনে হয় আমার এত সাহস যে -রাজিবকে অন্য কারো সাথে যাওয়ার জন্য আমি নিজে ওকে তৈরি করে দিতে পারতাম ? আমি চেয়েছি ও দূরে থাক আমার কাছে, তা না হলে ও আমাকে এই ক্ষতবিক্ষত অবস্থাতেই খুবলে খেতো। আমার বাবা মা’রা গেছেন, তাকে শেষ বারের মতে না দেখতে পারা আমি আমার সামনেই তাকে মাটি দিতে দেখেছি, কতটুকু কষ্ট, শোক আমার ভিতরে? ও কিচ্ছু টের পায় নি আমার দুঃখ কষ্টের। ভিতরে ভিতরে আমি বিধ্বস্ত, ভঙ্গুর, এরি মধ্যে ও আমাকে সেই রাতে ও ঘুমের ঘোরে বিছানায়…..”

টুম্পা ধমকের সুরে চুপ করতে বলে ওকে। মীরা ওর চোখের পাতা বন্ধ করলো টুম্পার আদেশে। কিন্তু ওর চোখ দুটো? সোজা শুয়ে থাকা মীরার দু চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। চোখ দুটোর কাওকে ভয় ডর নেই, ও কাওকেই শুনে না, কারোরই মানে না।

এত কষ্ট একটা মানুষ কিভাবে সইতে পারে? প্রতিষ্ঠিত একজনের সাথে বিয়ে ভেঙে বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করলো রাজিবকে,
অসুস্থতা ভুগেছিলো যখন, মীরা জমের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছিলো রাজিবকে।
শূন্য পকেটে শুরু করা সংসারের ঘানি একাই বয়েছে মীরা, যার দায়িত্ব ছিলো রাজিবের।
পরিশ্রম, মেধা আর ধৈর্য গুনে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। স্বনামধন্য ব্র্যান্ড তৈরী করেছে, যার পরতে পরতে মীরার ঘাম, পরিশ্রম, মেধা, নির্ঘুম রাত মিশে আছে। এত এতসব অবদান যার তাকে রাজিব পুরস্কৃত করেছে সতীন উপহার দিয়ে৷ হায়রে জীবণ। একটা ভুল সিদ্ধান্ত যে মানুষকে কোন জায়গা থেকে কোথায় নিয়ে যায় তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ হচ্ছে মীরা। একমাত্র খোদা ছাড়া ওট উঠে দাঁড়ানোর সব পথই বন্ধ। নামাযের বিছানায় বসে তাই ভাবে টুম্পা। আল্লাহ সুবাহানাতাআলার কাছে প্রার্থনা – আল্লাহ যেন তার সহায় হন, তাকে এ ঝড় মোকাবেলা শক্তি দেন- আমীন….

রাত তখন একটা, একটু আগে ফোন রেখেছে রাজিব। বেশ সময় নিয়ে কথা বলেছে আজ ও মীরার সাথে। ওর গদগদ ভাব দেখে মীরা মনে মনে ভাবে সামনে হয়তো কোন কাজ হাসিল করার পায়তারা করছে ও। সবকিছু ভেবে কান্না পায় ওর কি করলো ও, মা, বাবা, আবীর, সবার চেহারা এক এক করে ভাসতে থাকে মানসপটে। তারা আজ নীরার এমন দূর্দশা দেখে হাসছে৷ শোয়া থেকে উঠে বসে ও। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে। সোজা চলে যায় বারান্দায়। সেখানে বিছিয়ে রাখা শতরঞ্জিতে বসে ও। বসেই আনমনে তাকিয়ে থাকে ও, আকাশে আজ চাঁদ তারাদের দেখা নেই, মেঘেদের দৌরাত্ম্যে লুকিয়ে পরেছে যেন। ঘন কালো, সাদা মেঘেদের ছুটে ছুটিতে পৃথিবীর আবর্তন বোঝা যাচ্ছে। কতক্ষণ সময় গেলো বোঝা গেলো না। চোখজোড়া আকাশে নিবদ্ধ হলেও মনটা চল গেছে সেই ক’ব’র’স্থানে। যেখানে ওর বাবাকে শুইয়ে রেখে এসেছে সবাই। বাবাকে খুব মনে পরছে মীরার। বাবা মায়ের প্রতি করা অন্যায়, তাদেরকে দেয়া কষ্টের কথা এতদিন ভুলে ছিলো মীরা। নতুন করে মায়ের দেয়া সেসব ফিরিস্তি আবার মনে করিয়ে দিলো সেসব। হঠাৎ একটা কল আসে ওর ফোনে। সাইড থেকে ফোনটা নিয়ে কথা শেষ করে ঘড়িতে তাকায় ও। রাত তখন পৌণে দুইটা। ঘরের দরজা লক করে পার্কিং থেকে ওর স্কুটিটা নিয়ে বেরিয়ে পরে মীরা। সিকিউরিটি ওকে জিজ্ঞেস করলো-
: ” এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম?”
: ” আমার বাবাকে দেখতে?”
: ” উনি কি অসুস্থ? ”
না শোনার ভান করে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পরে মীরা। লোডশেডিং চলছিলো তখন। অন্ধকার কেটে কেটে এগিয়ে যাচ্ছে মীরা সামনের দিকে। চারদিকে অন্ধকার হওয়ায় দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটি আলোক বিন্দু ধীরে ধীরে গলির মোড় পেরিয়ে নেমে গেলো বড় রাস্তাটায়।

চলবে..

প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব: ৩৪
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

মেইন রোড ধরে স্কুটি চালিয়ে ঠিক ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মীরা পৌঁছে সেই ক’ব’র’স্থানে যেখানে ওর বাবাকে দা’ফ’ন করা হয়েছিলো চারদিন আগে। স্কুটি থেকে নেমে মীরা দেখে পাভেল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। সেই পাভেল যে ওর বন্ধু লিপির কাজিন, যে রাজিবের অসুখের সময়
দাতব্য সংস্থা হতে অর্থ যোগাড় করে দিয়েছিলো। পাভেল মীরাকে স্কুটি থেকে নামতে দেখে ইশারায় কি একটা বলে ভিতরে ঢুকে পরে । মীরা স্কুটিটা সাইড করে ধীর পায়ে যায় ওর পিছু পিছু। মীরা যখন মেইন ফটক পেরিয়ে ক’ব’র’স্থান প্রবেশ করে
দূর থেকে ও দেখে রাস্তার শেষ প্রান্তে একটা ঘরে ঢুকলো পাভেল, মীরাও ধীর গতিতে হেঁটে কিছু সময় পর ঢুকলো সে ঘরটায়। বিশেষত্বহীন একটা ঘর ছিলো সেটা। পুরো ঘরটাতে গোলাপজল আর আগরবাতির সুভাসে ম-ম করছে। মীরা ঘরে ঢুকতেই গন্ধটা নাকে ধাক্কা লাগে। একটু পর মাথাটা কেমন চক্কর দেয় ওর। কত ভয়ানক কাজ করতে এসেছে ওরা তা হয়তো আগে থেকে হিসেব করে আসে নি এখানে। আবেগের উপর ভর দিয়ে যে কাজটা করেছে তা এখানে এসে টের পেয়েছে মীরা, এতক্ষণ যেন ও জ্ঞান হারা ছিলো। পাভেল বেচারা বাছবিচার না করে আজ্ঞাবহের মতো ওকে সিকিউরিটি দিয়ে নিয়ে এসেছে এখানে।

ঘরের এক কোণে নিচু চৌকিতে একজন মহিলা নামায পড়ছেন। খুব সম্ভবতঃ তাহাজ্জুদর নামাজ পড়ছেন তিনি। মহিলাকে নামায পড়তে দেখে পাভেল বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। মীরা এ ফাঁকে ঘরটার চারদিকে চোখ বুলায়৷ ঘরটার একপাশের দেয়ালে বেতের একটা রেক রাখা। সেখানে মুর্দা গোসল করাবার বিভিন্ন উপকরণ সাজানো। উপরের তাকে সারি করে রাখা আছে প্যাকেট করা সাবান, আতরের বোতল আর আগরবাতির বাক্স। আরেকটা তাকে কাফনের কাপড়। রেকের পাশের দেয়ালে কিছু প্লাস্টিকের বালতি, মগ, বেলচা আর ঝাড়ু রাখা। বেওয়ারিশ লাশগুলো যখন আসে এখানে সেগুলোকে গোসল করানোর জন্য এ ব্যাবস্থা।

কিছুক্ষণ পর দুজনের কথপোকথন শুনে মীরা। একজন পাভেল তা বুঝলেও অপরজন কে তা বুঝতে পারে না মীরা। কৌতুহলী মীরা উঁকি দিয়ে দেখে বাইরে এক লোকের সাথে কথা বলছে পাভেল। ভদ্রলোক ঢুকে ভিতরের ঘরে গেলেন।ওদেরকে দেখে মহিলা জায়নামাজ ভাঁজ করে রেখে দিলেন। একটু পরে ভদ্রলোক ফিরে এসে বললেন-
: “এদিকে আসুন”
লোকটা ভিতরের বারান্দায় নিয়ে গেলো ওদেরকে। সেখানে দাঁড়িয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললেন-
: ” দেখুন, আপনি আহমেদ সাহেবের ছোট ভাই তাই আপনাকে আসতে বলেছি, অন্য কেও হলে ফোনেই না করে দিতাম। আপনারা কি আর্জি নিয়ে এসেছেন তা কি জানেন ? ”
মীরার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে পাভেল, যার অর্থ এর উত্তর আমি জানিনা, তুমি দাও। লোকটা কোন সন্তুষ্ট উত্তর না পেয়ে বলেন-
: ” দেখুন ক’ব’রস্থ করার সাথে সাথেই মৃ’তে’র শরীরে পচন শুরু হয়ে যায়, আপনারা জোর করলে ক’ব’র খুঁড়ে লা’শ দেখাতে বাধ্য আমি, কিন্তু ধর্মীয় বিধিনিষেধ বলে তো কিছু আছে নাকি? এখন যদি এটা করেন আপনারা, কি লাভ হবে তাতে? শুধু শুধু মুর্দাটাকে পেরেশানি করা হবে। তার উপর পচনশীল দেহটাকে দেখে বাজে একটা স্মৃতি বয়ে যাবেন জীবণ ভর। সেটা কি ভালো হবে? মীরার দিকে মুখ ঘুরিয়ে দৃষ্টি অবনত রেখে কথাগুলো বললেন তিনি”
মীরা কি বলবে, কিছুই বুঝতে পারছে না। গত দিনটা পুরোটাই আশায় কেটেছে বাবাকে দেখতে পাবার। সেই আশাটায়ও জল পরলো?” ভেতর থেকে ভদ্রমহিলা এসে বলেন-
: ” মা, ম’র’তে তো একদিন হবেই সবাইকে, যদি শোনেন তো একটা কথা বলি?”
মহিলার দিকে ছলছল চোখে নিরুত্তর তাকিয়ে থাকে মীরা, সেই চুপ থাকায় কিছু একটা উত্তর খুঁজে নিলেন তিনি। তারপর বললেন-
: ” মৃ’ত লোকটাকে নিয়ে এমন নাড়াঘাঁটা করিয়েন না, তার জন্য দোয়া করেন, নেক-কার সন্তান হন, আল্লাহ যেন তারে বেহেশত নসীব করেন সে প্রার্থনা করেন। এসব করে কি হবে বলেন?”

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে মীরা। ভেতর থেকে লোকটা এসে ওদের চুপ থাকা দেখে কবরের সামনে নিয়ে যায় ওদেরকে। মীরা এই প্রথম একক ভাবে কবরটার দখল পেয়ে কান্নায় ভেঙে পরে। পাগলের মতো কাঁদতে থাকে ও বাবার সব স্মৃতি মনে করে। ভদ্রমহিলা মীরাকে শান্ত হতে বলে। ভিতরে যার এত অশান্তি তাকে শান্ত হতে বলা?

কাঁদতে কাঁদতে কবর থেকে এক মুঠো মাটি বেঁধে নেয় ওর হাতের রুমালে । তারপর বসে থাকা মীরা লোকটার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে-
: ” আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন”
লোকটা টাকাগুলো না নিয়ে বলে-
: ” প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজ হয় ওই মসজিদে, প্রতিবার নামাজে সকল মু’র্দা’র জন্য দোয়া করা হয়, এর জন্য আলাদা করে টাকা দেওয়া লাগবে না, একান্তই যদি ইচ্ছে হয় ফিরবার পথে মসজিদের সামনে দানবাক্স পাবেন সেখানে দিয়েন” – বলে লোকটা সালাম দিয়ে চলে যায়।

মীরার কাঁধে হাত রেখে পাভেল বলে সাড়ে তিনটা বাজে মীরা চলো বাড়ি ফিরে যাই। মীরা ধীরে ধীরে উঠে বসে। থুম মেরে বসে থাকে কিছু সময়। তারপর উঠে সোজা ফিরার পথ ধরে। পাভেল এবার পিছু পিছু যায় ওর। এসে দেখে স্কুটির লক খুলছে মীরা। পাভেল বলে-
: ” স্কুটিটা আমিই চালাই, তুমি পেছনে বসো ” পাভেলের গলায় অনুরোধ না আদেশের সুর।

কোন উত্তর না দিয়ে চাবিটা এগিয়ে দেয় পাভেলের দিকে। একটু দূরত্ব রেখে বসে মীরা। কেও কোন কথাই বলে না চলতি পথে, বাড়ি থেকে একটু দূরে স্কুটি থামিয়ে নেমে পরে পাভেল৷ কে দেখলে কি ভাববে এ ভেবে। নেমে গেলেও হেঁটে হেঁটে ওর পিছু যায় পাভেল। দূর থেকে মীরার স্কুটিটাকে ওদের বাড়ির পার্কিং এ ঢুকতে দেখে উল্টো হাঁটা দেয় ও। পকেট থেকে ফোনটা বের করে টেক্সট করে বাড়ির পথে রওনা হয় পাভেল।

চাবি দিয়ে মেইন গেইট খুলে ও যখন ওর ফ্ল্যাটে ঢুকে, চারদিকে তখন ফজরের আজানের ধ্বনি ওঠে। রুমে ঢুকে গোসল করে ফজরের নামায পড়ে মীরা৷ নামাজের বিছানায় বসে দোয়া করতে থাকে বাবার আত্নার শান্তির। আর খোদার কাছে ফরিয়াদ করে এ যন্ত্রণাময় জীবণের অবসানের, আর রাজিবকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার শক্তিটুকু খোদা যেন ওকে দেয়। নিরবে চোখের পানি ফেলে মীরা। কেঁদে সেজদায় লুটিয়ে পরে ও, কেন এমন হলো, কেন ও সবার কথা শুনলোনা, এত অবাধ্য কেন হলো বাবা-মায়ের।

নামাজ শেষ হলেও বেশ কিছু সময় বসে থাকে জায়নামাজে। সেখানে বসা অবস্থাই মেয়ের শরীরে হাত বুলিয়ে মীরা ভাবে-
: “মেয়েটা না থাকলে এক্ষুনি খু’ন করতাম শু’য়’রে’র বাচ্চা রাজিবকে। আজকের আমার যত দুঃখ কষ্ট, তারজন্য দায়ী একমাত্র রাজিব। যার জন্য শুধু সেক্রিফাইজই করে গেলাম সংসার জীবণের বিনিময়ে পেয়েছি ধোঁকা, প্রতারণা, আর যন্ত্রণা।

সারারাত জেগে মীরা, এখন যেন টলতে চুরু করেছে ও। ঘুম যেন ঘিরে ধরে ওকে চারপাশ থেকে। অন্ধকার ঘরে পা টিপে টিপে বিছানায় শোয় ও, পাছে মেয়েটা না জেগে উঠে। বিছনায় শুয়ে সময় দেখতে ফোনটা হাতে নিলে সেখানে ভেসে থাকা ম্যাসেজটা চোখে পরে ও। পাভেলের ম্যাসেজ চল্লিশ মিনিট আগে এসেছে। সেখানে লেখা-
: ” এত দেরি হলো কেন মেইন গেইট খুলতে?
” সিকিউরিটি কি ঘুমিয়ে ছিলো? ”
“আমি গেলাম মীরু ”
পরপর আসা তিনটি ম্যাসেজ। তার মানে মীরার বাড়ি পৌঁছান অব্দি দাঁড়িয়ে ছিলো পাভেল । মীরা ভেবেছিলো স্কুটি থেকে নেমেই চলে গেছে ও । কিন্তু দেরী হয়েছে গেইট খুলতে তা দেখেছে ও, মুচকি হাসে মীরা। যার এমন ক্রেজি বন্ধু থাকে তার জীবনের ষোলো আনাই মিছে এ কথা বলাটা অন্যায়। এই দুনিয়ায় ওই একমাত্র লোক যাকে আঁধার রাতে যে কেন সমস্যায় ডাকা মাত্র এসে হাজির হয়। জীবণ আমার এতটাও মন্দ নয়।

মীরা রিপ্লে ম্যাসেজে লিখা-.
: ” এভাবেই পাশে থাকবে সবসময়, কেমন?”

কি প্রেম প্রেম গন্ধ খুঁজছেন আপনারা?
না ওদের মধ্যে এমন কিছু নেই। পাভেল বিবাহিত, ও বিয়ে করেছে লিপিকে। তিন বন্ধুর এই সার্কেলটি এখনো টিকে আছে মিথ্যে দুনিয়ায়। লিপির তো কিছুই অজানা না, সেই বাড়ি পালানো থেকে শুরু করে রাজিব, রাহাত, টুম্পা তারপর সাথী। মীরা মনে রেখেছে ওরা ওর দুর্দিনে পাশে ছিলো। তাই তো পাভেল যখন বিয়ে করলো মীরা নিজ দায়িত্বে সংসার গুছিয়ে দিয়েছে ওদের। দাতব্য সংস্থার কাজে তো আর সংসার চলবে না, তাই টাকা দিয়ে না বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করে ছোটখাটো একটা ব্যাবসাও ধরিয়ে দিয়েছে ও পাভেলকে। সেই কৃতজ্ঞতা তো আছে। ওরা ভালো বন্ধু এবং এত রাতে ও যে মীরাকে নিয়ে এক জায়গায় গিয়েছে তা লিপিরও অজানা না। মিথ্যে মায়ার দুনিয়ায় এই বন্ধু গুলো ভালো থাকুক। প্রচলিত একটা কথা আছে না – “Do good for others. It will come back to you in unexpected ways ” – কথাটা সত্যি।

চলবে…

প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব: ৩৫
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙে মীরার। চোখটা মাত্র লেগে এসেছে এমন সময়ই বেল! চারদিকে আলো এখনো ফুটে নি। গায়ের চাদর সরিয়ে সাইড টেবিলে রাখা মোবাইলে দেখে ঘড়িতে সময় এখন ছয়টা পঞ্চাশ। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে গেইটের কাছে গিয়ে ডোর হোলে চোখ রাখে ও। দেখে দরজার ঐ প্রান্তে রাজিব দাঁড়িয়ে। হাতে লাগেজ আর নতুন একটা ব্যাগ কাঁধে। ওকে এত সকালে এখানে দেখে মাথাটাই গরম হয়ে যায় মীরার। গত রাতের বাবার সাথে দেখা শেষ বাড়ি ফিরেছিলো চারটায়, নামায পড়ে বিছানায় গিয়েছিল পাঁচটা দশে। বিছানায় গেলেই কি ঘুম আসে? বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে মেয়েটাও উঠে গেলো। ওকে ফিডিং করিয়ে, ডায়াপার চেঞ্জ করে একটু আগে ঘুমিয়ে ছিলো ও, এই তো একটু আগে আর এখনি উনি এসে হাজির।
এত সকালে আসার কি দরকার ছিলো? সাথীর বাসায় গিয়ে উঠলেই তো হতো। বিরক্তি চেপে দরজা খুলে মীরা । মুখে কপট হাসি এঁকে স্বাগত জানায় রাজিবকে। যেন এতদিন পরে স্বামীর প্রত্যাবর্তনে আহ্লাদিত ও। মীরা অনুযোগের গলায় বললো-
: ” কাল রাতেও তো কথা বললাম, তখন তো বললা না সকালে যে আসছো, এয়ারে এসেছো?”

ঘরে ঢুকে জুতা খুলতে খুলতে বলে-

: ” এয়ারে আসবো না তো কি? ওখান থেকে বাই রোড আসার কি কোন সিস্টেম আছে?” – কথাটা বলও থতমত খেয়ে যায় রাজিব, যেন নিজের কর্মকান্ড নিজেই এক্সপোজ করে দিলো এমন একটা ভীত ভাব ওর চোখেমুখে। নাটুকে মীরাও কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে রাজিবের দিকে, যদিও মনে মনে বলে – ” তা তো আমি জানি সোনা, মালদ্বীপ থেকে এয়ারেই আসা লাগে” মীরা মুখে কিন্তু বললো ভিন্ন কথা, অবাক ভঙ্গিতে বললো-
: ” মানে? আমরা তো বাই রোডেই গেলাম গতবার, বাই রোড যাওয়া কি বন্ধ করে দিলো ইন্ডিয়া? খবরে তো কিছুই বললো না”
: ” আরেহ্ কত কথা বলে, আমার জরুরি কাজ আছে তাই এয়ারে এলাম” চোখ না পড়ে ফেলে সে ভয়ে চোখ সরিয়ে নেয় রাজিব। মীরা পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে-
: ” ওহ্, তাই বলো, আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি ঝটপট কিছু একটা তৈরি করে দিই, পরে নাশতা খেয়ো” – বলেই ঘর থেকে বের হতে নেয় মীরা। রাজিব তখনি বলে-
: “না, না কিছু খাবো না, তুমি শুধু এককাপ চা করে দেও”
: ” কেন? বাইরে নাশতা করেছো তোমরা?” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মীরা তাকিয়ে যেন জেরা করছে ও
: ” তোমরা মানে?” চোখেমুখে বিষ্ময় রাজিবের।
: ” আরেহ্ মালেক সাহেব না গেলো তোমার সাথে? ”
: ” ওহ্” – দেহে প্রাণ ফিরে যেন ওর এ কথা শুন, ও যে মালেক সাহেবকে নিয়ে গিয়েছিলো ইন্ডিয়ায় তা মীরার মনে থাকলেও নিজেই ভুলে গেছে । মীরা ওর জিনিসপত্র গুছিয়ে একপাশে রেখে চা করতে রান্নাঘরে গেলো। দুধ, চিনি আর চা-পাতা একসাথে দিয়ে চট জলদি চা তৈরী করে নিলো ও। কারন ও জানে ঢং করে, সময় নিয়ে চা তৈরী করার সময় রাজিব দিবে না। গোসল শেষ হতে যদি দেখে চা নিয়ে হাজির হয় নি তাহলে হয়তো ওকে খুঁজতে (পড়ুন চা খুঁজতে) রান্নাঘর অবধি এসে পরবে।

দ্রুত চায়ের কাপ নিয়ে রুমে এসে দেখে রাজিবের গোসল শেষ। ওকে চা দিয়ে মীরা লাগেজ খুলে ময়লা কাপড় বের করতে। কাজের আপা প্রচুর সাবান খরচ করে। তাই ও নিজে কাপড়ে সাবান মেখে রাখে। তাতে সবানও বাঁচে, কাপড়টাও কিছু সময় ভিজে থাকার কারনে ভিতর থেকে ময়লা পরিষ্কার হয়। তাই ওর ময়লা কাপড়গুলো আলাদা করতে লাগেজ খোলে মীরা।

স্বামীর ভাগ নিলেও স্বামীর কাপড় ধোয়া আর পরিচর্যার (যেমন সপ্তাহে একদিন ফেসপ্যাক লাগানো, পেডিকিওর ম্যানিকিওর করা) দায়িত্ব কিন্তু সাথী নেয় নি। এসব করে ধরা খাবে নাকি মীরার হাতে। ভাবতেই লাগেজের ডালা খুলে মীরা। কত কি করতে হয় মানুষকে, অপ্রিয় মানুষকে ভালোবাসার অভিনয়, তার সঙ্গে আহ্লাদিত হওয়ার নাটক, বিছানা ভাগ করে নেয়া আরো কত কি? ময়লা কাপড় গুলো আলাদা করতেই একটা প্যাকেট হাতে পড়ে ওর। কাগজের শক্ত ব্যাগটা খুলে দেখে সেখানে সরু ফিতার কিছু একটা, পরে ব্যাগ হাতিয়ে দেখে নাইট গাউন রাখা, নিচে আরেকটা প্যাকেট। মীরা ব্যাগটা উপুড় করে ধরে ফ্লোরে। মেরুন আর গাঢ় নীল রঙের দুটি নাইট গাউন ছিটকে পরে একসাথে, অন্যপাশে একটা টপস টাইপ ড্রেস। ড্রেসটা খুবই সুন্দর। নাইট গাউনটা হাতে নিয়ে পুলকিত ভঙ্গিতে মীরা বলে
: ” আমার জন্য বুঝি?” – বলেই ট্রায়াল দিতে আয়নার সামনে দাঁড়ায় মীরা, দেখে সাইজে কেমন হয়। রাজিব তড়িৎ গতিতে ওর কাছে বলে –
: “এখানে তোমার কিছু নেই। এগুলো মালেক সাহেব তার স্ত্রীর জন্য এনেছেন”
রাগান্বিত কন্ঠে মীরা বলে-
: ” মালেক সাহেব তার স্ত্রীর জন্য এনেছেন, তো এটা এখানে কেন? আর বুড়ো লোক তার বৌর জন্য এমন হট জিনিস এনেছেন, তুমি তোমার স্ত্রীর জন্য কি এনেছো?”
: ” আরেহ্ ভুলে এসেছে মনে হয় ” হাত থেকে থাবা দিয়ে সেটা নিয়ে ব্যাগে ভরে ওর কাবার্ডে তুলে রাখলো ব্যাগটা। এসে খাটের সামনে বসে দেখে ওটাতে থাকা টপসটা ফ্লোরে পরে আছে। সেটা তখন দেখে নি ও, সেটা দেখে হাতে তুলে রাজিব। আবার আলমারি খুলে সেখানে রাখা ব্যাগে টপসটা ভরে রাখে সে । মীরার মনটা ছোট হয়ে গেলো ওর এমন আচরণ দেখে। ও খুব ভালো করেই জানে এগুলো সাথীর জন্য আনা, এবং এ-ও জানে এক স্ত্রীর সাথে গিয়ে অন্য জনের জন্য গিফট আনার কথা ভাবাও অন্যায়। তাই হয়তো রাজিবের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মীরার জন্য কিছুই আনা হয় নি। মীরা কাপ হাতে রুম থেকে বেরুতে মনে মনে ভাবে –
: ” আমি না হয় বাদ, মেয়েটার জন্য… ” – পরক্ষণে ভাবে পুরুষরা যখন অন্য নারীর কাছে যায় তখন সে তার পরিবার, সন্তান এদেরকে মনের ঘর থেকে বের করে তার কাছে যায়। মনের ঘরে এদের বাস থাকলে একজন পুরুষ কখনো অন্য নারীতে মজে না।
নিজের প্রতি অবজ্ঞা, অবহলো মেনে নেয়া যায়, কিন্তু সন্তানের প্রতি ? নূহা তো ওরই মেয়ে। ওকে যদি ভালোবাসতো রাজিব! তাহলে অন্ততঃ নিজেকে অবজ্ঞা করার কষ্ট ভুলে থাকতো। কিন্তু নূহাকেও তেমন একটা ভালোবাসে না ও। জন্মের পর পর আলাদা ঘরে থাকতে শুরু করলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বলে। মীরাও মেনে নিয়েছিলো কারন সকল দায়িত্ব যখন ও মাথায় তুলে নিয়েছে। তাহলে ওর মাথাটা ঠান্ডা রাখাটাকে মীরা কর্তব্য ভেবেছে ও। কিন্তু ঘর আলাদা হওয়ার সাথে সাথে মেয়ে-বাবার বন্ধন ও যেন আলাদা হয়ে গেলো। মেয়ের অসুখ বিসুখের খবর নেওয়ার খেয়াল থাকে না রাজিবের, সন্ধ্যায় ডায়াপার আনার কথা বললে রাতের বোল ফেরার সময় ভুলে যায় ও, জামাকাপড় কিংবা সস্তা কোন খেলনাও নিজ থেকে হাতে উঠে নি ওর। মীরা ওর বেখেয়ালি ভাবটাকে জানে তাই গায়ে মাখে নি এতদিন। কিন্তু নতুন একজনকে যখন অন্বেষণ করলো ও দেখলো তার প্রতি রাজিবের যত্নের শেষ নেই। তাকে শপিং এ নিয়ে যাচ্ছে, মুভি দেখছে, দেশ ঘুরছে, ব্যাবসার কথা বলে বিদেশে যাচ্ছে। তখন ওর ইচ্ছার, সময়ের, এনার্জির কোন ঘাটতি পরে না। যত টান পড়ার মীরার কাছে এলেই পড়ে । মীরা কাপ টা সিংকে রেখে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। একটা দীর্ঘশ্বাস নাকে বাড়ি খেয়ে মিলিয়ে যায় শূন্য। কানে বাজতে থাকে আত্নীয়দের ঐ কথা –
” কি ভুল যে করলি, একদিন ঠিক বুঝবি”
সত্যি কি ভুল যে করেছে ও তার প্রমাণ দিতে রাজিবের এতটুকু ক্লান্তি নেই। চোয়ালটা আকড়ে আসে। যা কান্নার পূর্বলক্ষণ। কল ছেড়ে গতরাতের বাসন পরিষ্কারে মন দেয় মীরা৷ এটেনশন ডায়ভার্ট যাকে বে। কাঁদবে না ও আর। কাল রাতে নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছে ও আর কাঁদবে না ও রাজিবের কোন প্রসঙ্গ নিয়ে।

রাজিব এগারেটা নাগাদ বেরিয়ে গেলে মাজেদা খালা আর টুম্পা নাশতার টেবিলে বসে আলাপ করে মীরা সম্পর্কে। টুম্পা মীরাকে জিজ্ঞেস করে –
: ” আপনার জন্য কি আনলো আপনার প্রাণের স্বামী মালদ্বীপ থেকে? ”
: ” মজা নিস না টুম্পা”
: ” মজা নিবো না আবার, কি একটা সুযোগ গেলো হাত থেকে, বললাম কাজটা উনি আসার আগেই করে ফলি, আর উনি দিন কাটালেন কেঁদে বুক ভাসিয়ে। শায়েস্তা করবে তো দূরের কথা রাজিবকে তো ঘৃণাই করতে পারলো না এত কিছু জানার পরও। কি বললেন সেদিন-
: “খু’ন করবো, মে’রে ফেলবো ওকে” – এসব যে কেবলি ফাঁকা বুলি, তা আর বুঝতে বাকী নেই আমার”

শান্ত চোখে তাকায় মীরা টুম্পার দিকে, বলে-
: ” সব কিছুর উত্তর না হয় সময়ের কাছেই তোলা রইলো” বলে উঠে পরলো মীরা।

টুম্পা মীরার কাথা আর চাহনির মর্ম উদ্ধার করতে পারলো না। রেডি হয়ে প্রতিদিনের মতো কারখানায় চল গেলো। আর মীরা একটা কাগজপত্রের ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো একটু পর।

চলবে…

প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব – ৩৬
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

রাজিব সকাল সকাল বাড়ি ফিরেই চা খেয়েই ফাইলপত্র ঘাটাঘাটি করে। সব মেইন পেপারস্ একটা ফাইলে বেঁধে নিয়ে বেরিয়ে পরে । মীরার তখন মন ভালো ছিলো না, তাই এসব দেখা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করেনি অসময় পেপারস্ ঘাঁটাঘাঁটির কারন। কিন্তু হঠাৎ-ই মীরার কেমন অস্বস্তি হয়। ফাইল ঘেঁটে দেখে মেইন পেপারস গুলো সেখানে নেই। তারমানে সাথে করে সেগুলো নিয়ে গেছে ও। মীরা তাই সবগুলো কাগজের জেরক্স কপি একটা ফাইলে নেয়। নাশতা খাওয়া শেষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাগজপত্র যাচাই করতে ওর পরিচিত এক উকিলকে দেখাতে যায়। হঠাৎ করে রাজিবের সাকলে কাগজপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করায় টনক নড়ে ও।

যদিও ও জানে যে প্রোপার্টি যা আছে তার ফিফটি-ফিফটি পার্টনার ওরা দুজনে। আসলে সত্যতা কতটুকু তা জানতেই ওর এই যাচাই। মাথায় কাঁঠাল ভেঙে তো কম খেলো না রাজিব। এখন দেখতে গেলো মাথাটা আছে নাকি এটাও খেয়ে ফেলেছে। কাগজপত্র দেখানোর পর সারাদিন ব্যাস্ততায় দরুন বেশ রাতে বাড়ি ফিরলো মীরা। বাসায় ফিরে দেখে রাজিব ইতিমধ্যে এসে পরেছে বাড়িতে। ওকে দেখে মীরা হতভম্ব, ঘড়িতে চোখ বুলায় মীরা। আসলে সময় কত তার হদিস নেই ওর। ঘড়িতে সময় এখন ন’টা। রাত ন’টা ওর বাড়ি ফিরার জন্য বেশ রাত। এত জলদি তো রাজিব বাড়ি ফিরে না সচরাচর, মনে মনে এসব ভাবছে ও। রাজিব টিভিতে খেলা ক্রিকেট দেখছিলো, সোফাতে বসেই মাথা ঘুরিয়ে মীরাকে দেখে রাজিব। দ্রুতই আবার চোখ ফিরায় টিভির পর্দায়৷ সেখানে চেয়েই
গম্ভীর গালয় রাজিব প্রশ্ন করে-
: ” কি ব্যাপার? কোথায় ছিলে তুমি? ”
হাতের ফাইলটা সু-কাবার্ডের পেছনে চালান করে মীরা বলে-
: ” পিয়াসার শরীর অসুস্থ ওকে দেখতে গিয়েছিলাম, তুমি এত জলদি এসে পরলে?”
: ” কেন সমস্যা হয়ে গেলো?”
হেঁটে ওর সামনে এসে মীরা বলে-
: ” এসব কেমন কথা রাজিব? আমার কি বাইরে কোন কাজ থাকতে পারে না? তুমি যে প্রতিদিন আটটায় কারখানা বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও এত দেরি করে বাসায় ফিরো আমি কখনো তোমাকে এভাবে বলি ? হঠাৎ মীরার এমন কড়া কথায় কাজ হয়, তখন রিমোট দিয়ে চ্যানেল পরিবর্তন করতে করতে রাজিব নরম সুরে বলে-
: “জরুরি কাজ ছিলো বললামই তো সেটা শেষ করেই ফিরে এলাম, এসে দেখি তুমি বাসায় নেই”
: ” ফোন করলে না কেন?”
: ” এমনিই ”

মনে মন মীরা বলে- ” এমনিই? হা’রা’মি একটা”

মীরা ব্যাগপত্র সোফার উপরে রেখে ফ্রেশ হয়। ফ্রেশ হয়ে নূহাকে ফিডিং করায়। তার আগে খালাকে খাবার গুলো গরম করে টেবিলে দিতে বলে। নূহা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলো। ও যেন ওর মাকে দেখার অপেক্ষায়ই এতক্ষণ জেগে ছিলো।

রাতের খাবার টুম্পা আর খালা আগেই সেরে ফেলে। আগে মীরা সবসময় রাতের খাবারটা রাজিবের সাথে খেতো । ইদানীং সাথীর যেদিন মর্জি হয় সেদিন একসাথে খায় ওরা। খেতে বসে মীরা জিজ্ঞেস করে-
: “কি জরুরী কাজ ছিলো বললে?”
: ” কিছু টাকার দরকার বুঝলে মীরা, ভাবছি আমাদের বাড়িটা মর্টগেজ রেখে ব্যাংক থেকে লোন নিবো”
: “টাকার দরকার! কেন? সিজনের জন্য তো মালপত্র স্টক করা হয়ে গেছে। কারখানা ভাড়া, স্টাফদের বেতন সবই তো ক্লিয়ার, তার উপর মার্কেটে কত টাকা ডিউ আছে আমাদের। তাহলে? ”
এতকিছুর খবর জানে মীরা তা দেখে একটু অবাকই হয় রাজিব। সেটাকে চেপে রেখে তরল গলায় বলে-
: ” আছে একটা কাজ পরে বলবো তোমায় ”
অন্য সময় হলে কোন উচ্চবাচ্য করতো না মীরা, কিন্তু এখন সময়টা বড় কঠিন। মীরা ফুলকপি আর শিং মাছের তারকরিটা প্লেটে নিতে নিতে বলে-
: ” কি কাজ না বললে আমি লোনের পেপার সাবমিট করতে যাবো না” ঐ জমিটা মীরার নামে সত্যিই রেজিস্ট্রি করা আজ দুপুরেই সেটা নিশ্চিত হয়েছে মীরা। সেই জোড়েই ও কথাটা বলতে পারলো। কারন ওর নামে জমি, লোন নিতে হলে ওকে লাগবে। মীরার এমন কন্ঠের সাথে রাজিবের দেখাদেখি হয় না অনেকদিন। সেই যে সংসার শুরুর দিনগুলোতে কর্তৃত্ব ছিলো ওর, মীরা যেন ক্ষুরধার ছুড়ি ছিলো। তারপর রাজিবের ভালেবাসায় মজে দিনে দিনে তার ধার কমে এসেছে ক্রমশ। ওর দিকে তাকিয়ে রাজিব যেন মূর্তি হয়ে গেছে। তারপর রাজিব আগের চেয়ে আরো তরল সুরে বলে-
: ” টাকাটা খুব দরকার, ঈদের পর তাগাদা তুলে লোন পরিশোধ করে দিবো”
মীরা এবার কিছুটা নরম হয়, ও বলে –
: ” কি এমন দরকার যে আমাকে বলা যাচ্ছে না?”
: ” মালেক সাহেব সস্তায় একটা ফ্ল্যাট পেয়েছে কলাবাগানে। নগদ টাকায় কিনলে বড় এমাউন্টের ডিসকাউন্ট পাবে। তার টাকা কিছু শর্ট পরেছে। কত সময় তার কাছ থেকে নিয়ে চলেছি, এখন বড় মুখ করে চাইলন?”
: ” কত টাকা?”
: ” এই ধরো লাখ বিশেক ”
: ” বিশ লাখ ! ফ্ল্যাটের দাম কত?”
: ” সত্তর লাখ ”
: ” তাদের না নিজের বাড়ি বলেছিলে তুমি?”
এবার বাছাধন থতমত খেতে শুরু করে, খানিক বাদে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-
: ” আরে তার স্ত্রী যৌথ পরিবারে আর থাকতে চাচ্ছে না, তাই…”
: ” এই বয়সে তাদেরকে ভীমরতিতে ধরেছে নাকি, দুদিন পর মেয়ে বিয়ে দিবে”
: ” আরেহ্ কি বলো, তাদের মেয়ে তো ছোট, মাত্র ষোলো বছর বয়স”
: ” আমরা যখন বিয়ে করি, আমার বিয়ে তখন ষোলো বছর ছিলে, সে হিসেবে বললাম ”
অনেক আবেগ নিয়ে কথাটা বললো মীরা। কিন্তু রাজিব আবেগের ধার ধারলো না, বললো-
: ” আমি সব কাগজপত্র তৈরী করে রেখেছি, তুমি শুধু কাল সকালে গেলেই হবে”
: ” শেনো রাজিব, পরের উপকার করা ভালে কিন্তু নিজের সব বিলিন করে না, কারখানা ছাড়া সম্পদ বলতে এই বাড়িটাই রয়েছে আমাদের। তার ফ্ল্যাট কিনাটা বিলাসিতা, এমন যদি হতো তার ব্যাবসার লেকসান কিংবা শারিরীক অসুস্থতার জন্য টাকা লাগবে। আমি না বলতাম না, নিজে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতাম তাকে৷ কিন্তু বিলাসিতার জন্য আমাদের একমাত্র সম্পদ মর্টগেজ রাখতে দিবো না আমি”
: ” বড় মুখ করে চেয়েছিলেন টাকাটা”
: ” পারলে দাও অন্য ব্যাবস্থা করে, রাখো তার বড় মুখ” – বলেই প্লেট হাতে রান্নাঘরে চলে যায় মীরা। মীরা এসে দেখে রাজিব পাতে ভাত রেখেই হাত ধুচ্ছে বেসিনে। মীরা দেখে বলে-
: ” খাবার ফেলে উঠে পরলে যে? ”
কোন কিছু না বলেবই আহত চেহারায় রুমে চলে যায় রাজিব। এর বেশি কিছু করার নেই ওর। কারন এসব যে মীরার পরিশ্রম আর রক্ত পানি করা টাকায় কেনা তা এখনো মনে আছে ওর। মীরা হেসে মনে মনে ভীষণ বলে- ” মালেক সাহেবের স্ত্রী, না? তারমানে ফ্ল্যাট কিনবার পায়তারা হচ্ছে নতুন করে? কিন্তু বিকেলে যে ছক তৈরী করে এসেছি তাতে তো তাহলে কিছুটা বদল আনা দরকার” টেবিল পরিস্কার করতে করতে এসব ভাবে মীরা।

রুমে এসে দেখে রাজিব উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। মীরা ঘরের বাতি অফ করে ড্রইং রুমে এসে বসে৷ কি যেন ভাবে ও, তারপর টুম্পার ঘরে গিয়ে নক করে আস্তে করে। টুম্পা দরজা ফাঁক করে মীরাকে দেখে দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়। টুম্পা দরজাটা লক করে দেয়। ভিতরে বসে দুজনের কথা হয় অল্প কিছু সময়। আজ বিকেলে পাভেল, টুম্পা, আর মীরা একটা কফি শপে বসেছিলো, লিপি প্রেগন্যান্ট হওয়ায় ওকে আসতে মানা করে মীরা। সেখানে পরবর্তী করনীয় হিসেবে একটা ছক করে ওরা৷ রাজিবের সাথে এখন কথা বলে মনে হচ্ছে ছকটাতে একটু বদল আনতে হবে। মিনিট সাতেক পর রুমে ফিরে যায় মীরা। গিয়ে চুল আঁচড়ায়, হাতে-পায়ে লোশন দিতে দিতে বলে-

: ” রাজিব ঘুমিয়ে গিয়েছো? ”
পাশ ফেরা অবস্থাতেই ও একটা শব্দ করে জানান দেয় ওর জেগে থাকাটাকে। ঘুরে তাকানোটাকেও অপ্রয়েজন মনে করলো ।

: শোন, কাল ব্যাংকে যেতে পারবো না, কাল আমার একটা কাজ আছে ”

কথাটা শুনে তাড়াক করে ঘুরে রাজিব, মীরা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সেটা দেখতে পেলো ঘুরে না তাকিয়েও । রাজিবের চোখে-মুখে হঠাৎ খুশির বান। রাজিব বিছানা থেকে নেমে ওর কাছে এসে বলে-
: ” বাঁচালে আমায়, লজ্জায় পরে যেতাম একেবারে”
মীরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে, একটু আগেও রাজিব ঘুরে কথা বলাটা দরকার মনে করে নি, আর এখন মিনিটের ব্যবধানে ওর আচরন বদেলে গেলো। ও এমনি, মীরার চোখে তা ধরা পরে নি এতদিন। কারন অন্ধ বিশ্বাস নামের একটা পট্টি বাঁধা ছিলো ওর চোখে। যা খসে পরেছে এখন।

মীরা ওকে ছাড়িয়ে বলে-
: “হইছে আর ঢং করা লাগবে না ”
বলেই বিছানায় চলে যায় ও। রাজিবও ওর সাথে ইন্টিমেট হতে চেষ্টা করে। শারিরীক অসুখের বাহানায় রাজিবকে দূরে সরিয়ে দেয় ও। রাজিবও বাধ্য ছেলের মতো দূরত্ব রেখে শোয়। কিন্তু এই-সেই গল্প ফাঁদে ফ্লাটের বিবরণ নিয়ে। ফ্ল্যাট যে মালিক সাহেব না ও নিজেই কিনছে তা বেঝা যাচ্ছে ওর কথাবার্তায়।

মীরার ভালো লাগেনা এসব আলাপ। রাজিবকে বলে-
: ” তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, মালিক সাহেব না, ফ্ল্যাট কিনছো তুমি”
কাচুমাচু করে রাজিব বলে-
: ” আরেহ আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো কি-না.. ”
: ” রাজিব মাথা ব্যাথা করছে আমার, কাল শুনি ফ্ল্যাটের গল্প? ”
: “মাথা টিপে দিবো?”
: “নাহ্ থাক, এসবে অভ্যস্ত হতে চাই না”
চাপা কষ্ট নিয়ে মীরা কথাটা বললো তা খেয়াল ই করলো না রাজিব। সরে গিয়ে শুয়ে পরলো।

পরদিন দুপুরে আবার দেখা করে ওরা। পাভেল জিজ্ঞেস করে –
: ” কাজটা তাহলে কবে শুরু করতে চাও? ”
: ” যতদ্রুত সম্ভব, এই নাও টাকা টুম্পাকে নিয়ে সব কেনাকাটা শেষ করে ফেলো। আমি ওদের প্রত্যেকের সাথে কথা বলে এসেছি গতকাল, ওরা যখন ডাকবো তখনি আসতে প্রস্তুত”
: ” তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে কি?” – উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে টুম্পা।
: ” আর দেরি করলে এ বছরে আর সুযোগ হবে না, শুরুতেই ধাক্কা খাবে প্ল্যানটা” – বলে পাভেল।
: ” টাকা পয়সাও তো তেমন নেই আমাদের হাতে” বলে টুম্পা, কারন ও জানে মীরার ক্যাশ ক্যাপিট্যালের খবর।
: ” আল্লাহ ভরসা , তোমরা শুরু করো” – বলে মীরা। এরপর কফি শেষ করে বেরিয়ে পরে ওরা যে যার গন্তব্যে। মীরা এই দুপুরে রিকশা যোগে পৌঁছে যায় বাবার সাথে দেখা করতে…

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে