প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১০+১১

0
259

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১০
,
রাতে এতোটা জার্নি করে এসে ওভাবেই গাড়ি থেকে নেমে এক রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এখন ঠিক কয়টা বাজে সেটা শশীর অজানা তবে জানালার ফাঁক গলে আসা তীব্র সূর্যের আলোয় বলে দিচ্ছে সকাল অনেক আগেই হয়ে গেছে। কোনো রকমে শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। অতিরিক্ত কান্নার করার ফলে প্রচন্ড মাথা বেথ্যা করছে। হাঁটু সমান চুলগুলো বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাতে বেথ্যার জন্য সেগুলোকে খোঁপায় বাঁধতেও পারছে নাহ৷ তখনি দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো। শশী বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওমনি জয় ভিতরে ঢুকে শশীকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিয়ে বলল,

যদিও তুমি একটু দুষ্টু তবুও আমি মানিয়ে নিতাম। কালকে যখন আম্মু বড় ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ের কথা বলল তখন তো বড় ভাইয়া না করে দিলো তবে আমাকে বললে আমি না করতাম নাহ। তুমি দেখতে সুন্দরী আর আমিও দেখতে সুন্দর যদিও তোমার বোন আমায় ছোটো হাতি বলে তবে আমি কিছু মনে করিনি ছোটো মানুষ বলতেই পারে। তবে তুমি কোনো চিন্তা করো নাহ তোমাকে বিয়ে আমিই করবো শুধু একটু অপেক্ষা করো।

জয়ের পাঁকা পাঁকা কথাশুনে শশী অবাক হয়ে তাকালো তবে হাসলো নাহ। জয়ের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জয় হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল, বোকা মেয়ে আমার স্টাইল করা চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো এখন আবার আয়নার সামনে গিয়ে ঠিক করতে হবে। উফফ আমার হয়েছে যত জ্বালা সত্যি মেয়েদের মন পাওয়া খুবি শক্ত কাজ।
,,,,,,,
সিঁড়ি বেঁয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে নামছে আর চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে শশী। বাড়িটা বড় ঠিকি কিন্তু মানুষ কম। এই বদ্ধ বাড়িতে থাকবে কীভাবে ও যে মেয়ে মুক্ত পাখির মতো খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়াল দেওয়ার অভ্যাস। মন খারাপ থাকলে পুকুর পাড়ে বসে গাছ পাখি ফুলদের কাছে মনের সব জমানো কথা বলার অভ্যাস সে কীভাবে এই চার দেওয়ালের মাঝে থাকবে। আদেও মানিয়ে নিতে পারবে কি এই ইট পাথুরে যান্ত্রিক শহরে। শেষ সিঁড়িতে পা দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল সমুদ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর খবরের কাগজ পড়ছে৷ চোখ মুখ ভীষণ রকমের গম্ভীর যেনো খবরের কাগজের পাতায় থাকা খবরগুলো তার মনের মতো হয়নি। শশী বেশ কিছুক্ষণ তার সামনে থাকা সুঠাম দেহের গম্ভীর সুদর্শন পুরুষটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কালকে সে সময়মত না আসলে আজকে সত্যি ওর গলায় কলসি বেঁধে পুকুরে ডুব দেওয়া লাগতো৷ শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে যেতে ডাইনিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো। যার দরুন টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে শব্দ করে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো। শশী চমকে উঠে ভয়ে ভয়ে ভাঙ্গা গ্লাসটার দিকে তাকালো। শব্দ পেয়ে সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকালো হঠাৎ শশীকে দেখে ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ যেনো সে মনে করার চেষ্টা করছে এই মেয়েটা এখানে কীভাবে আসলো মাথায় খানিক চাপ প্রয়োগ করতেই মনে পড়ল কালকের কথা। চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার কাগজের পাতায় মনযোগ দিলো। রান্নাঘর থেকে শাহানারা দ্রুত বেরিয়ে বলতে বলতে আসলেন।

আবার কি ভাঙলি জয় এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি নাহ সব সময় কিছুনা কিছু খেতে থাকবে আর সাথে জিনিসও ভাঙ্গতে থাকবে।

কথাগুলো বলতে বলতে ডয়িং রুমে এসে শশীকে দেখতেই মুচকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই শশী আমতা আমতা করে ভাঙা গলায় বলল, জয় নয় ওই আমি আসলে বুঝতে পারিনি কিভাবে।

আরে মা তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো আমার বাড়িতে এসব ভাঙাচোরা নিত্যদিনের ব্যাপার। বড় ছেলে রাগ উঠলে ভাঙ্গে আর ছোটো ছেলে খেতে গিয়ে ভাঙে তবে রোদ্রটা আবার এমন না ও আমার মতো ঠান্ডা মেজাজের। আচ্ছা তুই হাতমুখ ধুয়ে নে অনেক বেলা হয়েছে খেতে হবে তো।

আমি আব্বার সাথে কথা বলবো।

ওহ হ্যাঁ জামশেদ ভাই সকালে ফোন করেছিলো তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় তোকে ডাকা হয়নি তুই বস আমি রুম থেকে ফোনটা নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে শাহানারার উপরে চলে গেলো শশী সেদিকে তাকিয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। মাথার চুলগুলো দু ভাগ হয়ে একভাগ সামনে আরেক ভাগ পিছনে পড়ে আছে। শশী মাথা বাঁকিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো এই লোকটাকে ওর কেমন জানি ভয় লাগে৷ ঠিক বুঝে উঠতে পারে নাহ, সেদিন কেমন গলা চেপে ধরেছিলো। কথাটা মনে হতেই হাত আপনা আপনি গলায় চলে গেলো। সমুদ্র সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ে থাকা টির্শাট টা নিচের দিকে একটু টেনে সিঁড়ির দিকে গেলো। শশীকে এমন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো বাড়িতে কি বসার কোনো জিনিস নাই?

সমুদ্রের কথায় শশী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ তাই চুপ করে আছে। সমুদ্র শশীর চুপ থাকা দেখে একটু ধমকে বলল, এই মেয়ে কথা বলতে পারো নাহ? গ্রামে তো দেখলাম সব সময় মুখ চলতেই থাকে এখন চুপ কেন?

রোদ্র ভাইয়া কোথায়?

তোমাকে জিগাস করলাম কি আর তুমি বলছো কি বড়ই বিয়াদপ মেয়ে তুমি। আর চুলগুলো এমন করে রেখেছো কেনো? দেখো মেয়ে আমি অপরিষ্কার কিছু পছন্দ করি নাহ। তাই আমার বাড়িতে থাকতে হলে পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে থাকবে আর সরো সামনে থেকে।

কথাগুলো বলে সমুদ্র গটগট করে উপরে চলে গেলো৷ শাহানারা ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে ফোনটা শশীর কাছে দিতেই শশী ফোনটা কানে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

আব্বা আমাকে নিয়ে যান আমি এখানে থাকবো নাহ। এখানে আমার একটুও ভালো লাগছে নাহ কেমন দম বন্ধ বন্ধ লাগছে।
,,,,,,,,,,,,
দুপুরে বেলা সবাই খাওয়া শেষ করে ভাতঘুম দিয়েছে। শাহানারা শশীর চুল গুলো আঁচড়ে বেণী করে দিয়েছে। রোদ্রের সাথে তেমন একটা কথা হয়নি শুধু একবার একটু কথা হয়েছিলো। রোদ্র অনেক তাড়ায় আছে একটু ও বসার সময়ও নেই ওর। জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। কিছুই ভালো লাগছে নাহ এভাবে একটা রুমে বসে থাকা যায় নাকি। শশী ভাবলো একবার পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখা যাক তাহলে সময়টা যদি একটু কাটে। যেই ভাবা সেই কাজ শশী আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে ডান দিকে গেলো। কোনটা কার রুম সেটা এখনো জানা হয়নি তাই কোনো রুমে ঢোকাও ঠিক হবে নাহ। শশী হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে গেলো একদম এক কোণায় একটা আধখোলা রুম দেখতে পেলো। বাইরে থেকেই রুমের মধ্যে বইয়ের তাক দেখা যাচ্ছে। তাহলে এটা হয়ত কারো রুম নয় কোনো লাইব্রেরি হবে হয়ত। শশী আস্তে আস্তে রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো আর্মি পোশাক পড়া একজন ব্যাক্তি খুবি সম্মানের সহিত আরেকজন এর হাত থেকে পুরুষ্কার নিচ্ছে। লোকটাকে শশী চিনতে পারলো নাহ ঘরে লোকটার আরো অনেক গুলো ছবি টাঙ্গানো ছিলো। হয়ত এই ঘরটা ওই ছবিতে থাকা লোকটার শশী তাঁক থেকে একটা বই বের করে হাতে নিতেই দরজায় শব্দ হলো। শশী দরজার দিকে তাকিয়ে ভয়ে হরবরিয়ে পিছনের দিকে যেতে গেলে বইয়ের তাঁকে বেঁধে গেলো। ওমনি উপর থেকে কয়েকটা বই শশীর মাথার উপর টুপ করে পড়লো। শশী বেথ্যায় মাথায় হাত দিয়ে ডলতে লাগল। সমুদ্র এই সময় শশীকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো। বাবার এই ছোট্ট লাইব্রেরি তে কেউ তেমন আসে না। মাঝেমধ্যে রোদ্র আসে সমুদ্র তেমন একটা আসে নাহ তবে যখন বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ে তখন বাবার রেখে যাওয়া এই ঘরটাতে এসে কিছু একান্ত সময় কাটায়। সমুদ্র শশীর দিকে এদিকে গেলো শশী মাথা ডলা বাদ দিয়ে আবার পিছাতে গেলে সমুদ্র ধমকে বলল,

এই মেয়ে আমাকে দেখলে এতো ভয় পাও কেনো আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো নাকি। চুপচাপ এখানে দাঁড়াও কথা আছে আমার তোমার সাথে।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১১
,
তুমি শাহিন কে ছোটো বেলা থেকে চেনো তাই তো? ওর আর ওর বাবা সম্পর্কে যা যা জানো আমাকে সবটা বলো।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী হা করে তাকিয়ে আছে। মানে সমুদ্র ওকে এমন ভাবে প্রশ্ন করছে যেনো শাহিন কোনো অপরাধ করেছে আর শশী তার একমাত্র সাক্ষী। শশী একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে নিয়ে ভাবতে লাগলো। আসলে সে কি বলবে শাহিন কে চিনলেও তেমন ভাবেও ওর সম্পর্কে কিছু জানে নাহ। ওকে বিরক্ত করতো তাই আব্বাকে বলার পর আব্বা বলেছিলো ওর থেকে দূরে থাকতে ও নাকি অনেক খারাপ ছেলে। আর ওর আব্বাও তেমন একটা ভালো নয় সেটা গ্রামের সবাই জানে কিন্তু চেয়ারম্যান বলে কেউ কিছু বলার সাহস পায় নাহ। এখন শশী ঠিক কি বলবে সেইটাই বুঝতে পারছে নাহ এই জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।

কি বলবো?

শশীর কথা শুনে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, কি বলবে মানে আমি কি তোমার সাথে অন্য কোনো ভাষায় কথা বলছি? বাংলায়ই তো কথা বলছি যেটা জিগাস করেছি শুধু সেটাই বলবে। সময় কম জলদি বলো শাহিন কেমন ছেলে আর ওর বাবা কেমন।

আব্বার থেকে শুনেছি শাহিন নাকি ছেলেটা ভালো নয় নেশা করে আর মেয়েদের বিরক্ত করে। আর চেয়ারম্যান চাচাও তেমন ভালো নয় শাহিন ওনার বড় বউয়ের ছেলে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর নাকি চুপিচুপি আবার বিয়ে করেছিলো তবে সেই বউকে বাড়ি আনতে পারেনি। আমি তেমন জানি না সেই বউকে কেউ কখনো দেখেনি তবে শুনেছি ওনি নাকি শহরের কোনো একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। আর ওনার শহরেও বেশ ভালো যাতায়াত।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র কিছু একটা ভাবলো তারপর কিছু বলল নাহ। শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে কোনো কাজ আছে?

শশী মাথা নাড়িয়ে না বলতেই সমুদ্র বলল, তাহলে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও এখান থেকে। শশী কিছু না বলে চলে যেতে গেলে ওর চুলের বেণী বইয়ের তাকের সাথে একটা কাটার সাথে আটকে গেলো। চুলে টান পেয়ে পিছন ঘুরে দেখে চুল আটকে গেছে ওটা ছাড়াতে গেলে টান লেগে উপর থেকে আরো কয়েকটা বই নিচে পড়ে গেলো। শশী হতবুদ্ধি হয়ে একবার সমুদ্রের দিকে তাকালো সমুদ্র বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল,

শুধু গাছে চড়ে বেড়ানো আর লোকজন কে বিরক্ত করা ছাড়া আর কিছু পারো নাহ? থাক তোমাকে আর যাওয়া লাগবে নাহ আমিই চলে যাচ্ছি।

কথাটা বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শশী নিচে পড়ে যাওয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে তার মাথায় পড়ে থাকা বইটা হাতে নিয়ে তাকে রাখে আবার চুল ছাড়ানোই মন দিলো। প্রথমবার তার লম্বা চুল হওয়াই বেশ আফসোস হলো আজকে যদি ওর চুল এতো লম্বা না হতো তাহলে এখানে আটকাতো নাহ আর ওই লোকটর সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হতো নাহ। ওনি বলেছে অগোছালো কিছু পছন্দ করে নাহ আর বারবার শুধু ওনার সামনেই আমি সবকিছু অগোছালো করে ফেলি কি কপাল আমার।
,,,,,,,
কাউকে পরাস্ত করতে হলে যদি তার শক্তির সাথে না পারো তাহলে বুদ্ধি দিয়ে তাকে হারাও। বুদ্ধি দিয়েও যদি তাকে হারাতে না পারো তাহলে তার দুর্বলতা কে কাজে লাগাও। তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করো তাহলে তাকে একদম শেষ করে দেওয়া সম্ভব। ওফ ফুপি তুমি সত্যি একটা জিনিস তোমার মাথা থেকে যে কীভাবে এমন ক্রিমিনালি বুদ্ধি বের হয় আমি বুঝি নাহ।

ভাইয়ের ছেলের কথাশুনে মালবিকা বাঁকা হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আমার জায়গায় আসতে হলে তোকে আরো চারবার জন্ম নেওয়া লাগবে। আচ্ছা এবার কাজের কথায় আসি তোকে বলেছিলাম আমাদের নেটওয়ার্ক পুরো বাংলাদেশ এর প্রতিটি জেলায় যেনো ছড়ানো থাকে তার কী অবস্থা?

জোসেফ তার ফুপির কথা শুনে সামনে থাকা সোফায় বসে বলল, সেটা আর হতে দিচ্ছে কোথায় ওই সমুদ্র। তবে এখন ও চুপ আছে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একদম চুপসে গেছে ভাবে ওর জন্যই ওর বাবা মারা গেছে। তবে তুমি চিন্তা করো না সব ব্যাবস্হা হয়ে যাবে, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি প্রতিটা ইয়াং জেনারেশন এর কাছে আমাদের ড্রাগস পৌঁছে যাবে। কেউ কিছুই করতে পারবে নাহ আমি মাঁকড়সা জালের মতো সবটা বিছিয়েছি সমুদ্র কিছু করতে আসলেও সেই জ্বালে আটকা পরবে।

এই না হলে ছেলের মতো কথা শোন তোর বাপকে এই পজিশনে এনেছি নিজেদের সুবিধার জন্য। তোর বাপের পাওয়ার কে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবি। আর, মালবিকার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাতে থাকা মুঠোফোন টা বেজে উঠল। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোনটা কানে ধরে বলল, কী খবর কমিশনার সাহেব এতোদিনে মনে পড়লো তবে।

জোসেফ আর কিছু বলল না আলগোছে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার এখন অনেক কাজ বাইরের দেশ থেকে কিছু স্পেশাল আর্মস আসবে সেগুলো কে সাবধানে রিসিভ করতে হবে।
,,,,,,,,,,,
ডয়িং রুমের আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েই সোফায় বসে পড়ল শশী। পুরো বাসায় আলো জ্বালিয়েছে ও মা বলতো মাগরিবের আযান হওয়ার সাথে সাথে নাকি ঘরে সন্ধ্যা দিতে হয়। এতোবড় বাড়িতে সিঁড়ি বেঁয়ে উঠে নেমে আলো দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আপাতত বাড়িতে শাহানারা জয় আর শশী বাদে কেউই নেয়। রোদ্র পরশো চলে যাবে এই জন্য আজকে সব বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আর সমুদ্র কোথায় গিয়েছে সেটা অজানা যাওয়ার আগে শাহানারাকে বলে গিয়েছে রাতে ফিরবো। শাহানারা নিচে নামতে নামতে শশী কে দেখে মুচকি হেসে বলল।

ঘরে সব আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিস?

হ্যাঁ আন্টি আমি সব আলো জ্বালিয়ে দিয়েছি।

আচ্ছা এখন জয় এর কাছে গিয়ে দুজনে পড়তে বস আমি তোদের জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।

না না আন্টি আপনাকে কষ্ট করে এখন আর কিছু বানাতে হবে নাহ আমি কিছু খাবো নাহ।

এটা আমার রোজকার অভ্যাস আর তোকে যা বললাম কর।

শশী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে উপরে চলে গেলো। জয় এর রুমে ঢুকতে যাবে তখনি চোখ পড়ল সমুদ্রের অন্ধকার রুমের দিকে। বাড়ির সব রুমে আলো জ্বালালেও এই রুমটাই আলো জ্বালানোর সাহস হয়নি। শশী একবার ভাবলো গিয়ে আলোটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে। যেহেতু সমুদ্র এখন বাড়িতে নেই তাই ভয়ের ও কোনো কারণ নেই। যেই ভাবা সেই কাজ শশী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলো। ব্যালকণির দরজাটা খোলা সেইটা দিয়েই বাইরের বিল্ডিং এর আলো রুমে এসে পড়ছে। শশী সেই আলোয় হাতড়ে সুইচ টা জ্বালালো এই বাড়িতে ও আসছে আজ তিনদিন হতে চললো এতোদিনেও এই রুমটায় আসা হয়নি। শশী পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো সমুদ্র বাড়ি এসে বেশি দিন থাকে নাহ। তাই শাহানারা প্রতিদিন রুমটা যত্নে গুছিয়ে রাখে। এইবার সমুদ্র অসুস্থ হওয়াই এতোদিন থাকা পড়ছে তবুও রুমটা কতটা গোছানো। শশী বিছানায় দিকে এগিয়ে গেলো খাটের মাথার দিকে সমুদ্রের বড় একটা ছবি টাঙানো। যেখানে সমুদ্রের গায়ে আর্মি পোশাক পড়া হয়ত কোনো ক্যাম্পে গিয়ে ছবিটা তোলা। পিছনে তাবু গাঁড়া সামনে ছোট পাথরের উপর বসে হাতের বড় রাইফেল টা পরিষ্কার করছে। শশী ছবিটার দিকে তাকিয়ে সমুদ্র কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এমন আরো কয়েকটা ছবি দেওয়ালে টাঙানো। আরেকটা ছবি দেখলো যেটাতে সমুদ্র বেশ গর্বের সাথে পুরুষ্কার নিচ্ছে তবে তখনো মুখে হাসি নেই। শশী নিজে নিজেই বলল,

এই লোকটা হাসে না কেনো হাসলে কি কেউ ওনাকে জরিমানা করবে?

শশীর হঠাৎ মনে হলো সমুদ্রের এই ছবির সাথে লাইব্রেরি তে থাকা লোকটার ছবির বেশ মিল আছে। দুজনেই দেখতে একি রকম যেনো জমজ ভাই ওটা ওনার বাবা তো হবে নাহ কারণ ওনার বাবার ছবি শশী দেখেছে তাহলে কে হতে পারে। শশী নিজের মনে অনেকক্ষণ ভাবলো তবে কিছুই বের করতে পারলো নাহ। হঠাৎ করে তার মাথায় আসলো সে এই রুমে শুধু আলো জ্বালাতে এসেছিলো তবে এখন ওর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেনো ও এ রুমে থাকতে এসেছে। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরোতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো শশী ভয়ে ভয়ে মাথা উঁচু করলো কেননা ও শিওর এটা সমুদ্র। আমাদের বাড়িতেই ওনার রুমে গিয়েছিলাম বলে মারার হুমকি দিয়েছিলো আর আজকে তো ওনাদের বাড়ি আজকে বোধহয় আর কোনো হুমকি নয় সোটা স্যুট করে দিবে। শশী কাঁদো কাঁদো মুখ করে সামনে তাকিয়ে দেখে রোদ্র ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্রকে দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো জোরে শ্বাস নিয়ে বলল।

আরে আপনি তো আমায় ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন একটুর জন্য হার্টফেল করিনি।

তুমি ভাইয়ার রুমে কি করছিলে?

এইতো আলো জ্বালাতে এসেছিলাম।

ওহ তাই বলো আচ্ছা এসো আমার সাথে এতোদিন তোমাকে সময় দিতে পারিনি পরশোদিন তো চলেই যাবো। তাই ভেবেছি আজকের রাতটা তোমার জন্য বরাদ্দ দুজনে জোছনা বিলাস করবো।

রোদ্রের কথাশুনে শশী মুচকি হেসে রোদ্রের সাথে সাথে চলল, কিছু একটা মনে পড়ায় শশী থেমে গিয়ে বলল, আচ্ছা তাহলে আন্টিকেও ডেকে নিই কি বলেন তিনজনে গল্প করা যাবে।

বাহ তাহলে তো আরো ভালো হয়। তুমি বরং মা কে ডেকে আনো আমি ছাঁদের দিকে যাচ্ছি।

শশী মাথা নাড়ি হ্যাঁ বলে শাহানারা কে ডাকার উদ্দেশ্য গেলো তবে আবার ফিরে এসে রোদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আপনাকে একটা কথা জিগাস করতে পারি?

হ্যাঁ বলো।

আচ্ছা আপনাদের যেই ঘরে বই রাখা ওইঘরে দেওয়ালে একজনের ছবি দেখলাম। আমি ঠিক চিনতে পারিনি ওনাকে আপনার বাবার ছবি আমি আন্টির রুমে দেখেছি কিন্তু ওই ছবিতে থাকা লোকটা কে আমি চিনতে পারলাম নাহ। যদি কোনো সম্যসা না থাকে তাহলে আমাকে বলবেন ওনি কে।

শশীর কথাশুনে রোদ্রের মুখের হাসিটা যেনো ধপ করে নিভে গেলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলল, ছবিতে যাকে দেখেছো ওনি হলেন ক্যাপ্টেন অভিক ইকবাল।
,,,,,,,,,,,
দেওয়াল ঘড়ির ঠিক ঠিক শব্দটা বলে দিচ্ছে ঘড়ির কাটা রাত আটটার ঘরে পৌঁছালো। আভিজাত্যপূর্ণ একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে সমুদ্র আর মালবিকা মির্জা। নীরবতা কাটিয়ে সমুদ্র তার গম্ভীর স্বরে বলল, হঠাৎ আমার সাথে দেখা করার কারণ টা কি।

সমুদ্রের কথায় মাঝ বয়সী নারীটি সমুদ্রের দিকে গভীর নয়নে তাকালো। বয়স বাড়লেও বয়সের ছাপ যেনো ওনাকে ছুঁতে পারেনি এখনো নিজের রূপটা বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছে। টেবিলে ফোনটা রেখে পিছনে হেলান দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে বলল, কেনো আমার কথা শুনছো না সমুদ্র। তোমাকে আগেও সাবধান করেছিলাম কিন্তু তুমি শুনলে নাহ তারপর কি হলো তোমার বাবাকে হারালে। তাই আমার কথা মানো এসবে না জড়িয়ে শান্তিতে জবটা করো আর ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে সংসার করো।

মালবিকা যেনো ঠান্ডা সূরে সমুদ্র কে হুমকি দিলো। কিন্তু সমুদ্রের কোনো হেলদুল নেই ও বেশ আরাম করে বসে বাঁকা হেসে বলল, সাবধান করার জন্য ধন্যবাদ। আর রইল আমার পিছিয়ে যাওয়ার কথা সেটা আপনি ভুলে যান সমুদ্র যে পথে পা বাড়ায় সে পথ থেকে আগাছা গোড়া থেকে নিমূল করেই বের হয়।

সমুদ্রের এহেন কথায় মালবিকা রেগে টেবিলে হাত মুঠো করে বাড়ি মেরে বলল, কথাশোনো ছেলে নয়তো তোমার ভালো হবে নাহ। তোমাকে ভালোভাবে বললাম শুনলে তোমারি ভালো আর না শুনলে আমাকে অন্য ভাষায় কথা বলতে হবে। নিজের আপনজনদের অবশ্যই হারাতে চাও নাহ। তাই বলছি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকো আর আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও।

পরিবার এর কথা ভালো থাকার কথা আপনার মত মহিলার মুখে মানায় না যে কিনা পরিবার এর মানেটাই বোঝে নাহ। আর তাছাড়া আপনার থেকে ঙ্গান চাইছে কে যে কিনা নিজেই বিয়ের আগে পেগনেন্ট হয়ে যায়।

সমুদ্রের এমন অপমান সূচক কথাশুনে মালবিকা মোটেও রাগলো না উল্টো ব্যাঙ্গ করে হেসে বলল, পেগনেন্ট যে হয়েছিলাম আমার পেটে যে ছিলো সেও কিন্তু তোমাদের বংশেরই রক্ত ছিলো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে