প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-১২+১৩

0
236

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১২
,
তাহলে তো বলতে হয় তোমাদের বংশই খারাপ। যে বংশের ছেলেরা বিয়ের আগেই কোনো মেয়েকে পেগনেন্ট করে দেয় সেই বংশের ছেলে হয়ে এতো বড় বড় কথা কীভাবে বলো তুমি।

কি বলুন তো যে যেমন সে সবাইকেই তার মতোই ভাবে।

সমুদ্রের কথায় মালবিকা রাগলো নাহ বরং একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, এতো যে বংশের বড়াই করছো তাহলে বিয়ের আগেই একটা যুবতি মেয়েকে কীভাবে ঘরে রাখো? এতোবড় একজন অফিসার এর কি এহেন কাজ মানায়? ভাবছি কথাটা বাইরে লিক হলে তোমার এই সম্মান বংশ ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। বড্ড আফসোস হচ্ছে তোমাকে এভাবে দেখে যতই হোক তোমার সাথে আমার কোন সময় তো একটা সম্পর্ক ছিলো মায়া তো লাগবেই।

মালবিকার কথাশুনে সমুদ্র রেগে দাঁড়িয়ে গেলো তবে রাগের প্রকাশ করলো নাহ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আপনার ভাইয়ের ছেলেকেও একি কথা বলেছি। তাই সাবধান লিমিট ক্রস করবেন নাহ তাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কি হন।

কথাটা বলে সমুদ্র বেরিয়ে গেলো মালবিকা সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে টেবিল থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,
সমুদ্রের আসতে বেশ দেরি হয়ে গেলো নিজের কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। ডয়িং রুমের আলো না জ্বালিয়ে সোজা সিঁড়ি বেঁয়ে বইঘরের দিকে চলে গেলো। দরজাটা খোলায় ছিলো ওঘরে তখনো আলো জ্বলছে হয়ত কারো বন্ধ করতে মনে ছিলো নাহ। দেওয়ালের সাথে টাঙ্গানো বড় একটা ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সমুদ্র যেখানে ওর বাবার সাথে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে ছবিতে থাকা মানুষগুলোকে গভীর নয়নে দেখলো তারপর হাতটা বাড়িয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো।

সরি।

ব্যাস তারপর পুরো ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা এই একটা শব্দের মধ্যে যেনো লুকিয়ে আছে কষ্ট অভিমান ব্যার্থতা। হঠাৎ পিছন থেকে আসা শব্দে সমুদ্রের ধ্যান ভাঙ্গলো ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ শব্দটা শুনে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে শব্দটা কীসের। পিছন ফিরে আশে পাশে তাকালো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো নাহ। বইয়ের তাঁক পাড় হয়ে সামনের দিকে যেতেই দেখলো কোনায় রাখা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর দুইহাত ভাঁজ করে তাতে মাথা দিয়ে শশী ঘুমিয়ে আছে। সামনে হাঁট করে খুলে রাখা বই সমুদ্র শশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। ছোট করে কেটে রাখা এক গোঁছা চুল একপাশে পড়ে বন্ধ চোখ আর ঠোঁট টাকে আংশিক ঢেকে রেখেছে। সমুদ্র বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শশীকে দেখছে যেনো সে চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে নাহ। নিজের এমন কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে, মাথা নাড়িয়ে যথা সম্ভব গলার স্বরটাকে কঠিন করে শশীকে ডাকলো।

এই মেয়ে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? উঠো আর সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।

সমুদ্রের কথায় শশীর কিছুই হলো নাহ শুধু একটু নড়েচড়ে আবার আগের মতো ঘুমিয়ে গেলো। সমুদ্র বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু শশী তবুও উঠলো নাহ। শেষে সমুদ্র উপায় না পেয়ে ওর এক আঙুল শশীর মাথায় ঠেকিয়ে ধাক্কা দিলো এবার শশী মাথা না তুলেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, আব্বা আমি রাতে খাইছি এখন আর খাবো নাহ এখন ঘুমাবো।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকালো। মেয়েটা কি পাগল আমাকে ওর আব্বা ভাবছে কথাটা ভাবতেই সমুদ্রের মুখটা তেঁতো হয়ে গেলো। এবার বেশ জোরেই শশীকে ডাক দিতে শশী চমকে উঠে বসলো, কাঁচা ঘুম ভাঙ্গায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে অনেক্ক্ষণ যাবত হাত মাথার নিচে থাকায় হাতটাও কেমন বেথ্যা হয়ে আছে। শশী ঘুম ঘুম চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর তাকানো দেখে ধমকে বলল, এভাবে এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? যাও রুমে যাও।

শশী ঢুলুঢুলু চোখে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু ওমনেই আবার চেয়ারে বসে পড়লো। এতো ঘুম নিয়ে কি এভাবে হাঁটা যায় নাকি এই লোকটার উপর বেশ বিরক্ত লাগছে মন চাইছে মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিই তাহলে যদি মাথাটা ঠান্ডা হয়। শশী কোনো রকমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সমুদ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,,,
হাতে একটা খাম নিয়ে শশী সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। বাড়িতে আপাতত সে ছাড়া কেউ নেই রোদ্র আজকে চলে যাচ্ছে এই জন্য সবাই এয়ারপোর্টে গেছে। শশীকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু শশী যায়নি, রোদ্র যাওয়ার আগে শশীর হাতে এই কাগজটা দিয়ে বলেছে ও চলে যাওয়ার পর এটা পড়তে। শশী বিছানায় বসে কাগজটা মিলে ধরতেই দেখলো ওখানে অল্প কয়েকটা শব্দ লেখা শশী পড়তে শুরু করলো। আজ থেকে আগামী এক বছর আমি আমার খুব ভালো বন্ধুর থেকে দূরে থাকবো। তবে আমি সব সময় তোমাকে অনুভব করবো, নিজের খেয়াল রাখবে আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। আমি আসতে আসতে তো তুমি অনেকখানি বড় হয়ে যাবে আর তখন আমি তোমাকে একটা কথা বলবো। যেই কথা আজ পযন্ত কাউকে বলিনি আমি জানি কথাটা শোনার পর তুমি অবশ্যই অবাক হবে আর তখন তোমার মুখটা দেখতে যা লাগবে নাহ। সেই সময়টর জন্য আমাকে এখন একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে, আচ্ছা যাই হোক অনেক অনেক ভালো থেকে আর নিজের যত্ন নিও।
পুরো চিঠিটা পড়ে শশী ভাজ করে পাশের ছোট টেবিলটাই রেখে দিলো। ও ভেবেই পাচ্ছে নাহ এই কথাগুলো তো সামনাসামনি বলা যেতো তাহলে এতো ঘটা করে চিঠি লেখার কি দরকার। শশী বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠল। শশী উঠে বসে ভাবছে খুলবে কি না কারণ এখন বাড়িতে কেউ নাই আর সমুদ্ররা একটু আগে বেরিয়েছে তাহলে এই সময় কে আসতে পারে আর দরজা খোলা কি ঠিক হবে? এতোক্ষণে বেশ কয়েকবার কলিং বেলটা বেজেছে এবার না খুললে হয়ত নষ্টই হয়ে যাবে। শশী উড়নাটা মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো, সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে আস্তে করে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই শশী দেখলো ওপাশে একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর কালার করা চুলগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে পিঠ ছুঁই ছুঁই শশী ওনাকে দেখে কিছু বলবে তার আগেই মহিলাটা শশীকে বলল,

আচ্ছা তাহলে তুমিই সেই মেয়ে হুম সমুদ্রের পছন্দ আছে বলতে হবে। সামনে থেকে সরো আমাকে ভিতরে যেতে দেও।

কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই আর আমি আপনাকে চিনিও নাহ আন্টি আসুক তারপর না হয়।

এই মেয়ে তুমি আমাকে এসব বলার কে তুমি জানো আমি কে? এসব কথা তুমি আমায় বলো কোন অধিকারে সমুদ্র আসলে ওকে জিগাস করে নিও আমি কে আর এই বাড়ির সাথে আমার কি সম্পর্ক এখন সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।

কথাগুলো বলে মালবিকা শশীকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো। শশী দরজাটা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ওর জীবনে এমন মেয়ে মানুষ কখনো দেখেনি , মালবিকা সোজা গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো তারপর হাতের আঙুল দিয়ে শশীকে ডাকলো। শশী গুটি গুটি পায়ে মালবিকার সামনে এসে দাঁড়ালো, শশীকে পা থেকে মাথা অবধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে মালবিকা বাঁকা হেসে বলল, তুমি তো দেখছি ফুটন্ত কড়ি এখনো ফুল হতে অনেক দেরি। বুঝলাম না সমুদ্রের মতো দায়িত্ববান ছেলে এমন গোলাপের কড়িতে মজলো কীভাবে। তোমাকে তো সমুদ্র ছুঁতেই তুমি মূর্ছা যাবে আচ্ছা যাকগে এখন যাও আমার জন্য এককাপ কফি বানিয়ে আনো।

শশী ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে নাহ একে তো এই মহিলাকে চেনে নাহ তার উপর এভাবে একা বাড়িতে কি সব কথা বলছে। হয়ত ওনাদের কোনো আত্মীয় হবে এই জন্য শশী কিছু বললো নাহ সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।

#চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৩
,
শাহানারা মালবিকার পাশে কান্না করছে, এই একটা মানুষ কে দেখলে তার আরেকটা প্রিয় মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। অভিক, শাহানারা যখন বিয়ে হয়ে প্রথম শশুর বাড়ি আসে তখন অভিককে পেয়েছিলো জয় এর বয়সী। তাদের তখন এই বাড়ি ছিলো নাহ তারা তখন গ্রামে শশুরের ভিটের উপর বিশাল বাড়িতে ছিলো, গোলা ভরা ধান ছিলো, গোয়াল ভরা গরু ছিলো যাকে বলে গেরস্তোর সংসার। ইকবালরা ছিলো দুই ভাই অভিক ছিলো ছোট। বিয়ের এক মাসের মাথায় ইকবাল চলে গেলো তার কাজের জায়গায় একা বড়িতে শশুর শাশুড়ি আর ছোট অভিককে নিয়েই তার সংসার। অভিক ছিলো শাহানারার নেওটা সারাটাদিন ভাবির পিছে পিছে বেড়াতো যেনো ভাবিই তার দ্বিতীয় মা। সময় গড়ালো ছোট্ট অভিক বড় হলো আর শাহানার কোল জুড়ে আসলো সমুদ্র। সমুদ্রের বয়স যখন আটমাস তখন ওর শশুর মারা যায়, তারপর পুরো সংসার এর দায়িত্ব পরে ইকবাল এর উপর। অভিক যেমন শাহানারার নেওটা ছিলো তেমনি সমুদ্র অভিক বলতে পাগল ছিলো। বয়সের ব্যাবধান হলেও দুজনের মাঝে ভালোবাসার কমতি ছিলো নাহ। একদম বন্ধুর মতোই গলায় গলায় ভাব, ইকবাল এর ইচ্ছে ছিলো তার ভাইকেও আর্মিতে নেবে সেই অনুযায়ী অভিক যখন ট্রেনিং এর জন্য চলে গেলো সমুদ্র তখন পুরো একা। হাসিখুশি ছেলেটা সারাদিন মনমরা হয়ে থাকতো, সমুদ্র সব সময় বলতো সে বড় হয়ে অভিক এর মতো হবে। মাস বছর চলে গেলো সেই সাথে সমুদ্র বড় হতে লাগল সময়ের সাথে সাথে যেনো অভিক আর সমুদ্রের বন্ধন আরো মজবুত হচ্ছিল। একদিন অভিক বেশ খুশি মনে শাহানারারা কে বলল, এবার ছুটিতে বাড়ি আসলে তাকে একজনের সাথে পরিচয় করায়ে দেবে। ছেলেটা বেশ খুশি ছিলো তবে অভিক এর জীবনে মালবিকা আসার পর সমুদ্রের সাথে দুরত্ব বাড়লো। কেনো এই দুরত্ব সেটা শাহানারার অজানা সমুদ্র মালবিকাকে মোটেও পছন্দ করতো নাহ। কেনো করতো নাহ সেটা সমুদ্র ভালো জানে। সেদিন ছিলো শুক্রবার অভিক বাড়িতে আসার সাতদিন হয়েছিলো, ওইদিন অভিক চলে যাবে বিধায় বাড়িতে বেশ আয়োজন করা হলো। অভিক আর সমুদ্রের মাঝে তখনো মনমালিন্য, ঠিক কি কারণে এই মনমালিন্য সেটাও শাহানারার অজানা। তবে সেদিন শাহানারা অভিক এর চোখে ভয় দেখেছিলো কিছু হারানোর ভয় প্রিয় কারো থেকে ঠকে যাওয়ার ভয়। অভিক যাওয়ার আগে শাহানারার হাত ধরে শেষ বারের মতো একটা কথা বলেছিলো।

ভাবি সমুদ্র কে দেখে রাখবে ওকে আমার এই পথে কখনোই পা বাড়াতে দেবে নাহ। এই পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর আর তার থেকেও অনেক নিকৃষ্ট পৃথিবী তে থাকা কিছু মানুষ নামের পশু। যারা ওকে ভালো থাকতে দেবে নাহ, শেষ করে দেবে ওকে তাই আমার কথাশোনো ওকে ডাক্তার নয়ত ইন্জিনিয়ার বানিও। জানিনা আবার দেখা হবে কিনা তবে একটা কথা আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি। আর মালবিকা কেও।

এই ছিলো অভিকের শেষ কথা তারপর ছেলেটা চলে গেলো ঠিক তার দুইদিন পর মরা খবর আসে। জানা যায় রাতে ঘুমিয়ে ছিলো হঠাৎই মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গোঙাতে থাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগেই মারা যায়। রোদ্র তখন শাহানারার কোলে বৃদ্ধা শাশুড়ী ছোটো ছেলের এমন অকাল মৃত্যুর কথা শুনে ভেঙে পড়েন। সমুদ্র ও কেমন একগুঁয়ে বদরাগী বেপরোয়া হয়ে উঠে। পাখির মতো উড়ে বেড়ানো ছেলেটা অভিকের মৃত্যুর পর হঠাৎই কেমন বদলে যায়। অভিকের মৃত্যুর আট মাসের মাথায় শাহানারার শাশুড়ী মারা যায়, পুরো সংসার টা কেমন হঠাৎই এলোমেলো হয়ে যায়। তবে মালবিকা শাহানারার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো, শাহানারা জানতো অভিক যখন মারা যায় মালবিকা তখন দুই মাসের পেগনেন্ট ছিলো। মেয়েটা চেয়েছিলো বাচ্চাটা রাখতে কিন্তু অবিবাহিত মেয়ে এভাবে একা কি করে সবার বিরুদ্ধে নিজেকে আর নিজের মধ্যে থাকা ছোট্ট প্রাণটাকে রক্ষা করতো। এই জন্য অভিকের শেষ চিন্হটুকু মুছে ফেলতে হয়েছিলো।

কথাগুলো মনে পড়লেই বুকের মধ্যে কেমন চিনচিনে বেথ্যা হয়। শশী একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো এই মহিলাটাকে একদম পছন্দ নাহ ওর তখন কফি দেওয়ার সময় ইচ্ছে করে ওর হাতে ফেলে দিয়েছে। হাতের উপরটায় কেমন লাল হয়ে আছে, সমুদ্র এখনো বাসায় ফেরনি শাহানারা আর জয় একায় ফিরেছে। মালবিকা সোফা থেকে উঠে বাঁকা চোখে শশীকে দেখে নিয়ে শাহানারাকে বলল,

ভাবি তাহলে যেটা বললাম মনে থাকে যেনো আশা করি আপনি আমার কথাটা রাখবেন। আমি চাই জারার সাথে সমুদ্রের বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে।

মালবিকার কথা শুনে শশী চমকে সামনে তাকালো সমুদ্রের বিয়ে? এই মহিলা তাহলে এই জন্যই এখানে এসেছিলো। কিন্তু ওই রাগী গম্ভীর লোকটাকে বিয়ে করবে এমন সাহস কার? মেয়েটাকে দেখার বড্ড লোভ জাগলো শশীর। মালবিকার কথা শুনে শাহানারা হতাশ গলায় বলল, আমিতো সমুদ্র কে বলেছি কিন্তু ও না করে দিয়েছে তুমি তো জানোই সমুদ্র কেমন আমি কি করবো বলো।

এখন বিয়ের জন্য না করছে আর মিলামেশা করার সময় মনে ছিলো নাহ? জারা তো নিজে ইচ্ছাই সমুদ্রের কাছে যায়নি তোমার ওই ধূর্ত ছেলে আমার ভাইয়ের মেয়ের কাছে এসেছিলো। এখন ইউজ করা শেষ হয়ে গেছে বলে ফেলে দিতে চাইছে। তোমাদের বংশের সব ছেলেরায় কি এমন? একজন তো পেগনেন্ট করে ভয়ে পালিয়ে যায় আর এখন তোমার ছেলেও সেই একি পথে হাঁটছে। ওকে সাবধান করে দিও আমি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে তোমাকে পাঠিয়ে দেবো নিজের ছেলেকে ভালো করে বোঝাও।

কথাগুলো বলে মালবিকা শশীর দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। শাহানারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন, নরম মনের মানুষ ওনি এসব ঘোর প্যাঁচ তার মথায় কমই ঢোকে। অভিক বলেছিলো সমুদ্র কে এসব থেকে দূরে রাখতে কিন্তু সে পারলো কোথায় সমুদ্রের জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো। অভিক যে পথে হেঁটেছিলো সমুদ্র ঠিক সেই একি পথে হাঁটছে তাহলে কি অভিকের মতো শেষে সমুদ্র কেউ? কথাটা ভাবতেই বুকের মধ্যে কেমন ব্যাথা করে উঠল। বুকে হাত দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো শশী দৌড়ে শাহানারার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পানি খাইয়ে আস্তে আস্তে ওনার রুমে দিয়ে আসলো।
,,,,,,,,,
একদম চিন্তা করিস নাহ আমি তোর বিয়ে সমুদ্রের সাথেই দেবো। ওই সমুদ্র কে আমি কিছুতেই ছাড়বো নাহ, ও ভেবেছে তোর সর্বনাশ করে ও পাড় পেয়ে যাবে এটা আমি থাকতে কখনোই সম্ভব নয়।

মালবিকার কথাশুনে জারা শোয়া থেকে উঠে বসে চোখের পানি মুছে মালবিকার কমর জড়িয়ে ধরে বলল, ফুপি তুমি সমুদ্র কে শুধু এনে দাও আমি আর কিছু চাই নাহ।

ধৈর্য ধর সব হবে শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা গুটি সাজিয়েছি এখন শুধু সময় বুঝে চাল দেওয়ার পালা। আগেও আমার জিত হয়েছে এখনো আমারই জিত হবে, অভিক এর মতো সমুদ্র ও আস্তে করে রাস্তা থেকে সরে যাবে।
,,,,,,,,,,
সত্যি করে বলো মা অসুস্থ হলো কীভাবে, বাড়িতে কেউ এসেছিলো? কে এসেছিলো? আর কি কথা বলেছে মায়ের সাথে? সবটা আমায় বলবে, একটা কথাও যদি বাদ পড়ে তাহলে তোমার গাল আর আমার হাত।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী ভয়ে ঢোক গিললো, পিছাতে পিছাতে সে দেওয়ালের সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওর সামনে সমুদ্র ঠান্ডা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগে সমুদ্র বাড়ি আসতেই দেখলো ওর মা ঘুমিয়ে আছে, সমুদ্র প্রথমে ভেবেছিলো এমনিতেই কিন্তু পরক্ষণেই ওদের পারিবারিক ডাক্তার সমুদ্র কে ফোন দিয়ে বলল, এই অবস্থায় যেনো ওনি এতো বেশি দুশ্চিন্তা না করেন তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সমুদ্রের কাছে ব্যাপারটা সন্দেহজনক লাগলে জয় এসে বলে তারা আসার পর নাকি দেখে বাড়িতে একজন মহিলা এসেছিলো আর সে মাকে কি কি বলল আর মা এমন অসুস্থ হয়ে পড়ল। ছোটো মানুষ সবটা গুছিয়ে বলতে না পারলেও যেটুকু বলেছে ওতেই সমুদ্রের যা বোঝার বুঝে গেছে। এই জন্য সোজা শশীর রুমে এসে শশীকে প্রশ্ন করেছে, শশী ভয়ে ভয়ে মালবিকার আসার কথা বলল আর বলল সমুদ্রের সাথে জারার বিয়ের কথা বলার পরই শাহানারা এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবটা শোনার পর সমুদ্র কোনো রকম রিয়েক্ট করলো নাহ, ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো তারপর ঘর থেকে বের হবে তখনি শশী ভয়ে ভয়ে বলল,

আচ্ছা আপনি কি সত্যিই করেছেন?

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল, কি?

ওই মেয়ের সর্বনাশ।

শশীর কথাশুনে সমুদ্র প্রথমে রেগে গেলেও কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে শশীর দিকে এগিয়ে এসে ঠান্ডা সূরে ফিসফিস করে বলল, আর একটা বেশি কথা বললে এই মুহুর্তে তোমার সর্বনাশ হবে। তাও সেটা আমার দ্বারা তখন বুঝবে সর্বনাশ কি কত প্রকার।

কথাটা বলেই সমুদ্র বেরিয়ে গেলো, শশী সমুদ্রের যাওয়া দেখে দৌড়ে এসে টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। তড়িঘড়ি তে জামার গলার কিছু অংশ ভিজিয়েও ফেলেছে। জগটা টেবিলে রেখে ডানহাতে মুখ মুছে বলল, কি সাংঘাতিক লোক রে বাবা দিনে দুপুরে সর্বনাশ করার হুমকি দেয়।
,,,,,,,,,
সমুদ্র রুমে এসে নিজের ফোনটা খাটে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, গায়ের থেকে শার্টটা খুলে বিছানায় ফেলে উদাম শরীলে বাথরুমে চলে গেলো। শাওয়ার অন করে শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে থাকলো,যতক্ষণ না মাথা ঠান্ডা হচ্ছে। বুক পিঠ বেঁয়ে পানির স্রোত নিচে পড়ছে, প্রায় অনেকটা সময় এভাবে থাকার পর শাওয়ার বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো। পরনে টাওয়াল জড়ানো মাথা আর শরীল না মুছার কারণে এখনো চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। ফর্সা দাগযুক্ত শরীলে পানির বিন্দু গুলো চিকচিক করছে। সমুদ্র সেভাবেই নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিলো, ইমেইল চেক করতেই দেখলো সেখানে বেশ কয়েকটা ইমেইল এসে জমা হয়ে আছে। একটায় ক্লিক করতেই ওটা ওপেন হয়ে গেলো।

“সমুদ্র সময় হয়েছে তোমার ফিরে আসার, অসমাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করার। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে ”

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে