আমার বিষাদীনি পর্ব-১৬

0
72

#আমার_বিষাদীনি
#উম্মে_হাফসা
#পর্ব_১৬

দুজনে যখন বাসায় ফিরলাম তখন চারদিকে ফজরের আজান দিচ্ছে। রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে আবার ফুফিদের বাড়িতে যেতে হবে। সকালে আম্মুর ডাকাডাকি তে ঘুম ভাঙলো। দেরি করে ঘুমানোর ফলে ঘুমের জন্য চোখ মেলতে পারছি না। তবুও উঠতে হলো। ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। সবাই বলতে আব্বুরে জেঠু রা বাদে আর বাকিরা। আব্বুরা অফিস থেকে ফুফিদের বাড়িতে চলে যাবে। বসে বসে ঘুমে ঢুলছি আমি কিন্তু রাদিফ ভাই কে দেখ কিভাবে স্ট্রেইট আছে মনে হয় উনি সারারাত ঘুমিয়ে কিছুক্ষণ আগেই উঠলো। সাবিহার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও জহুরি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চুপিসারে ও আমাকে বললো,,

“কিরে কি ব্যাপার? রাতে ঘুমোস নাই নাকি। ঘুমে ঢুলছিস যে। নাকি রাদিফ ভাই ঘুমোতে দেয় নি” বলে ও দুষ্ট হাসি দিলো।

আমি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমতাআমতা করে বললাম,,

“আরে না। এমনি তে এলার্জির কারণে মনে হয় চোখ লাল হয়ে আছে। কিন্তু তুইও না কি উল্টো পালটা ভাবিস”

তখন বড় মা বললো সবাই খেয়ে দেয়ে যার যার মতো রেডি হতে শুরু করো। আমি রুমে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। ঘুম যেন পিছু ছাড়ছেই না।মাত্র চোখ লেগে আসছিলো তখনি সাবিহা আসলো,,

“কিরে!! তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস। রেডি হচ্ছিস না??”

“হবো তো। তুই যা”

উঠে ফ্রেস হয়ে বাইরে আসলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঝাড়ছিলাম। হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাদিফ ভাই কার সাথে যেন ফোনে চিল্লাপাল্লা করছে।চোখমুখ একদম শক্ত করে কথা বলছে। কে বলবে এটা সেই রাদিফ ভাই যাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি। রাদিফ ভাই উপরের দিকে যখনি তাকালো আমি দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এসে আলমারি থেকে হালকা নীল রঙের থ্রি পিস বের করে পড়লাম। চুলগুলো খোপা করে কাঠি দিয়ে বাধলাম। হালকা লিপস্টিক আর কাজল লাগিয়ে নিলাম। ব্যাস আমি রেডি।

______________________

নিচে এসে দেখলাম যে যার মতো গাড়িতে উঠে গেছে। আমিও সাবিহার সাথে বসে পড়লাম। সামনে রাদিফ ভাই ড্রাইভ করবে আর পাশে নেকি সিনথিয়া আপু। আমি দেখেও না দেখার ভান করে আছি। ফোন টিপছি বসে বসে। আমাদের বাড়ি থেকে ছোট ফুফিদের বাড়ি প্রায় আধা ঘন্টার পথ। আমি জানি সিনথিয়া আপু আমাকে এসব করবে জালাবার জন্য। কিন্তু লাভ নেই। রাদিফ ভাই আমার স্বামী। তারচেয়ে বড় কথা উনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমি ওনাকে। এক্ষেত্রে উনি আমাদের মধ্যে একটা আগাছা মাত্র। তাই এসব করে উনি শুধু নিজের সম্মান কমাচ্ছে।

কাজিন গ্রুপে দেখলাম ইরা একটা ছবি শেয়ার দিলো আনাস ভাইয়ের। উনি ঘর মুছতেছে। আমি আর সাবিহা তো হাসতে হাসতে শেষ।

এদিকে রাদিফ লুকিং গ্লাস এ দেখছে তুবা আর সাবিহা হাসাহাসি করছে। রাদিফ তো ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়ছে। তুবা ফোনে কি দেখে এত হাসছে। কই আমার সামনে তো এত হাসি পায় না। মুখে কুলুপ এটে বসে থাকে। কালকে রাতে যখন রাদিফ তুবার গলায় মুখ গুজিয়ে দিলো কাপা স্বরে রাদিফ কে বললো,,

“রাদিফ ভাই, আপনি এই ভাবে থাকলে আমার সুড়সুড়ি পায় আর কেমন কেমন যেন লাগে। প্লিজ এভাবে করবেন না।”

রাদিফ বিরক্ত স্বরে বললো,,

“উপ বিরক্ত করিস না। একটু রোমান্টিক মুডে আসলেই তুই এমন করস। ভাই ভাই ডেকে রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাই দিস। একটু এইভাবে থাক বউ।”

কই তখন তো ও মুখে কুলুপ এটে বসে ছিলো। এখন তো ঠিকি হাসাহাসি করতেছে। নিজের রাগ কমানোর জন্য রাদিফ ধমকের সুরে ওদের কে বললো,,

” তোরা এত হাসাহাসি করছিস কেন?? মনে হয় কানের পর্দা ফেটে যাবে। এরপর এক্সিডেন্ট করলে তোদের দোষ”।

__________________

ছোট ফুফিদের বাসায় গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলাম। বড় ফুফিরা এখনো আসে নি।তমাল ভাই তো একেবারে অগিস শেষে তারপর আসবে। ছোট ফুফি তো আমাদের কে জড়িয়ে ধরে রীতিমতো কান্না শুরু করে দিলো। কতদিন পর আমরা সবাই ছোট ফুফিদের বাড়িতে আসলাম তাই ঊনি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছেন। আনাস ভাই এসে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে আমি আর সাবিহা বললাম,,

“আরে ইরা, এটা তোদের বাসার ঘর মুছার সেই ছেলেটা না” বলে দুজনে আনাস ভাইয়ের দিকে তাকালাম।

আনাস ভাই আমাদের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,,

“এসেই দুজন আমার পেছনে লেগে গেছিস। দেখছিস এইখানে একটা সুন্দরী মেয়ে (সিনথিয়া আপুকে মিন করে) বসে আছে ওমনি তোরা আমাকে পচানি শুরু করেছিস। এবার কিন্তু আমি তোদের সিক্রেট গুলো প্রকাশ করে দেবো”।

এদিকে সিনথিয়া আপুকে সুন্দরী বলায় উনি যেন একটু অহংকার বোধ করলো। আর যেভাবে রাদিফ ভাইয়ের সাথে চিপকে আছে যেন আমি আমি না উনি নিজেই রাদিফ ভাইয়ের বউ। আর রাদিফ ভাই ও এইসব সহ্য করছে। উনিও যেইভাবে বসে আছেন মনে হচ্ছে সিনথিয়া আপু ওনার প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী। এই আচরণ গুলো অনেক সহ্য করছি আর না। আজকে রাদিফ ভাই এর সাথে এগুলো নিয়ে বিহিত করতেই হবে। আমার বেলায় ওনার যত শাসন, অধিকারবোধ। এসব ভেবে নিজের মন খারাপ করতে চাই না,, তাই ওনাদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। ওরা সবাই গল্প করছে,আমি উঠে কিচেনের দিকে গেলাম।

গিয়ে দেখলাম আম্মুরা ফুফি কে সাহায্য করছে।ফুফি বারণ করছে কিন্তু ওনারা শুনছে। এ একটা দৃশ্য দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। আমাকে দেখে ছোট ফুফি বললেন,,

” কি মা, ঐখানে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?? দেখ না তোর মা দের কান্ড বলছি আসছো তোমরা একটু রেস্ট করো কিন্তু না এসেই কাজে লেগে গেলো”

আমি বললাম, “তোমাদের কে দেখলে কে বলবে ভাবি আর ননদ। তোমাদের এই ভালোবাসা গুলো আমি দারুণ এনজয় করি। ফুফি আমার জন্য বেগুন ভর্তা টা করেছো তো??”

ফিফি বললো হ্যাঁ করেছি। আমার মা টার জন্য। আচ্ছা আমি ইরা কে ডেকে দি। তোরা আমার চাচি শাশুড়ীর বাড়িতে খাবারগুলো দিয়ে আয়। বলে ফুফি ইরা কে ডেকে আনলো। ফুফির চাচি শাশুড়ী এটার তিন ছেলে কোনো মেয়ে নেই। ছেলেরা বউদের নিয়ে আলাদা থাকে মায়ের তেমন খোজ নেয় না। শুধু মাসে মাসে টাকা পাঠায় ব্যাস এটা।
আমি ইরা আর সাবিহা তিনজন যাচ্ছি দাদু এটার কাছে। ড্রয়িংরুম দিয়ে যেতে ইরা সিনথিয়া আপু কে জিজ্ঞেস করলো,,

“আপু আমরা পাশের বাড়িতে যাচ্ছি। তুমি যাবে আমাদের সাথে?? বাইরে গেলে ভালো লাগবে।”

“না তোমরা যাও। আমি রাদিফের সাথে এখানে বসে থাকবো। তোমরা যাও। আমার এরকম কারো বাড়িতে যাওয়ার অভ্যাস নেই। একটু অড ফিল করি” বলে আমার দিকে কোনা চোখে চাইলো।

“তুবা, তুই কেন যাচ্ছিস। তোর কি কাজ ওখানে??” রাদিফ ভাই ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে আমাকে বললো।

আমি শুনেও না শুনার ভান করে ওদের কে বললাম তোরা আয় আমি বাইরে আছি। যেতে যেতে ইরা বললো,,

“এই সিনথিয়া আপু কে আমার একদম ভালো লাগে না। কেমন যেন ভাব নিয়ে থাকে”
_________________

ঐ বাড়ি থেকে এসে দেখলাম বড় ফুফিরা আসছে। গিয়ে বড় ফুফি কে জড়িয়ে ধরলাম। তানিশা আপু, অনামিকা তানহা ওদের সাথেও দেখা করলাম। এরপর সাবা আপু আর তানিশা আপু ওদের মতো গল্প করছে আর আমরা আমরা আমাদের মতো গল্প করছি। এরপর ওদের কে আমি একটা সিক্রেট বললাম,,

“আচ্ছা তোরা খেয়াল করেছিস কিনা জানিনা! কিন্তু আমার মনে হয় সাবা আপু আর ইরহাম ভাই এর মধ্যে কিছু চলছে। একজন আরেকজন এর দিকে কোনা চোখে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ আগেও তোরা ড্রয়িংরুমে খেয়াল করেছিস??”

ইরা বললো, “হ্যাঁ আমারো আগে থেকে এটা মনে হতো। আমাদের বাসায় কোনো সময় কাজিন দের কথা উঠলে সাবা আপুর কথা বলতেই ইরহাম ভাইয়ের মতো গম্ভীর মানুষ ও হেসে উঠে। আমিও তোদের সাথে বলবো বলবো করে বলা হয় নি”।

খাবার টেবিলে খেতে বসে ফুফি শুধু বলছে,,

” এই তুবা তুই রাদিফ এর পাশের চেয়ারে বোস। এখনের জন্য তুই আমার ভাইপোর বউ। ওর পাশে বোস”।

আমি বললাম,, “না ফুফি আমি একগানে আনাস ভাইয়ের পাশে বসি। তুমি তোমার এইসব আবেগি কথা বাদ দাও। আরেকটু পরে যখন খাবো তখন তোমার কথা শুনবো”

তখন সিনথিয়া আপু গিয়ে ওনার পাশের চেয়ারে বসলো। রাদিফ ভাই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি ওনার দিকে তাকাচ্ছি। ওনার এই নাটক অনেক হইছে,, আর না। হঠাৎ করে তমাল ভাই আমাকে আর সাবিহা কে জিজ্ঞেস করলো,,

“এই তুবা, তোরা যে আমাকে কলেজে যাওয়ার সময়ের সমস্যাটার কথা বললি ওটার কি হলো?? ঐ ছেলেটার কোনো খোজ পেলি”

_________________
রাদিফ ভাই আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে। ওনার হাতের জন্য বের হতে পারছিনা। অস্থির কন্ঠে আমাকে বললো,,

“কি সমস্যা তোর?? এমন করছিস কেন?? সকাল থ্রকে দেখছি আমাকে ইগ্নোর করে যাচ্ছিস। আর তমাল কোন ছেলের কথা বললো?? কে তোদের ডিস্টার্ব করে? আমাকে তো কখনো বললি নাহ।”

আমি কিছু বলছিনা। শুধু বললাম, ছাড়ুন। ব্যাথা পাচ্ছি।”

“না ছাড়বো না। কি হয়েছে তোর? আমার সাথে কথা বলছিস না কেন। কালকে তো সব ঠিক ছিল,,তাহলে??”

তখন সাবিহা দের আসার আওয়াজ শুনে রাদিফ ছেড়ে দেয় আমাকে। সবাই বসে নিচে গল্প করছি। ফুফিরা, আব্বুরা, আম্মুরা সবাই মিলে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। আর ওনাদের এক একজনের কথা শুনে আমরা রীতিমতো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। তখন উপর থেকে রাদিফ এসে বললো,,

“আম্মু আমি বাড়িতে চলে যাচ্ছি। তোমরা পরে চলে এসো। আমার আর্জেন্ট দরকার বাড়িতে যাওয়া। ফুফি যাচ্ছি আমি” বলে আমার দিকে একপলক ফিরে চাইলেন। আমি দেখেও অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে