প্রাপ্তির শহরে পর্ব-১৩ সিজন ০২

0
803

#প্রাপ্তির শহরে সিজন ০২
#পর্ব-১৩
#তাহরীমা

প্রিয়া বাসায় গিয়ে নিজের রুমে বিছানায় বসে।তার খুব মাথা ব্যাথা করছে।প্রিয়ার মা সাথে সাথে আসেন।একমাত্র আদরের মেয়ে মাথা চেপে ধরে আছে কেন জানতে চাইলেন?
–“পিয়ু অসুস্থ লাগছে?”

প্রিয়া মুখ তুলে তাকায়।
–“আম্মু আমার কি যেন মনে পড়েও পড়ছে না।অস্থির লাগছে।কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?
প্রিয়ার মা চুপ থাকেন।প্রিয়া আবারো বলে,
–“আয়াতদের বাড়ি গিয়েছিলাম।তারপর যে কি হলো আমি কিছুই বুঝছি না।কেন এমন অস্থির লাগবে?”

প্রিয়ার মা তবুও চুপ থাকে।প্রিয়া একজন ডাক্তার তার এসব বুঝবার ক্ষমতা রাখে।তাই তিনি প্রসঙ্গ দ্রুত পাল্টান।
–“ও কিছু না ইন্টার্নি করছো রেস্ট নিচ্ছো না।তাই এমন হচ্ছে হয়ত।”
প্রিয়া ‘হুম’ বলে নিজেকে স্বাভাবিক করে।প্রিয়ার মা ফ্রেশ হতে বলে ই সেখান থেকে চলে আসেন।
____
আলো বাসায় আসতেই আদ্রর মা প্রিয়ার ব্যপারে বলে,আলো একপ্রকার খুশি হয়ে বলে,
–“সত্যি তাহুর মতো একেবারে দেখতে?”
–“হ্যা শুধু মেয়েটি ফর্সা আর একটু মোটা।”
–“তাহলে আমি দেখা করবো মেয়েটির সাথে।আমার মনে হচ্ছে ওটা তাহু ই।”

আদ্র রুম থেকে বের হয়।আলোর কথা শুনে বলে,
–“তাহু হলে কেন আমাদের চিনতেছে না?তাছাড়া আমি মেয়েটাকে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন ই ওকে ফলো করি।আর বাসার সামনে লোকজন থেকে জানতে পারি ওরা নতুন ভাড়াটে।আর অই দম্পতির ই মেয়ে ডাক্তার প্রিয়া।”

আলোর তারপর ও মন মানে না।দরকার হলে মেয়েটির বাসায় যাবে।ওর বাবা মার থেকে সত্যি টা জানতেই হবে।হুবহু এক কি দুইজন মানুষ হতে পারে?

আলোর জুড়াজুড়িতে আদ্র রাজি হয় প্রিয়াদের বাসায় যাওয়ার জন্য।আয়াত ও খুব খুশি।

এর পরেরদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় প্রিয়া যখন আয়াতের সাথে দেখা করতে আসে তখনি আয়াত জানায় যে তারা কাল সকালে তাদের বাসায় বেড়াতে আসবে।প্রিয়া খুব খুশি হয় এটা শুনে।তার পছন্দের মানুষ (আদ্র) তাদের বাড়ি আসবে।কিন্তু কি ব্যপারে আসবে সেটা কিছুতেই বুঝলো না।তারপর ও খুশি ই হলো।

প্রিয়া মা কে গিয়ে সব জানালো।মেহমান আসবে সেটা শুনেই প্রিয়ার বাবা মা খুশি হয়।এই অচেনা শহরে এমনিতেও তাদের কোনো আত্মীয় নেই।মেহমান আসা তো দূর।
______
পরেরদিন সকালে আলো নাস্তা বানিয়ে সবাইকে খাইয়ে সব কাজ সেরে নেয়।আহিতা ও স্কুলে চলে যায়।আর আয়াতের ক্লাসের একটু আগে করে আদ্র আলো বের হয়।কথা ছিল আয়াত যাবেনা।কিন্তু সে বায়না ধরলো সে ও আন্টির বাসায় যাবে তাই তাকে ও নিতে হলো।

আদ্র যেদিন প্রিয়ালে ফলো করে বাসায় এসেছিল আলোকে নিয়ে সেই বাসার সামনে দাঁড়ায়।তারপর ওখানে লোকজন থেকে জিজ্ঞেস করে প্রিয়াদের বাসার নাম্বার জেনে নেয়।
.
সকাল সকাল কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে প্রিয়ার মা অবাক হন।তিনি দরজা খুলে দেখে তিনজন অচেনা মানুষ।আদ্র সালাম দেয়।আদ্র এত সুন্দর মনে হয় এখনো অবিবাহিত।
আলো এগিয়ে এসে পরিচয় দেয় আর কেন ই বা এত সকালে এসেছে তা জানায়।প্রিয়ার মা মিষ্টি হেসে তাদের ভিতরে বসায়।

আদ্র চুপচাপ বসে থাকে।আর আলো এটা সেটা বলে।প্রিয়া এসে সালাম দেয়।আলো ও প্রথম ভুল টা করে এটা তাহু ই।সেই চোখ হাসি কিভাবে অন্য কারোর হতে পারে?পারেনা কাকতালীয় ভাবে এটা তাহু ই হতে?

আলোকে ভাবতে দেখে প্রিয়া বলে,
–“কেমন আছেন আপনারা?”
–“আলহামদুলিল্লাহ ভাল,আপনি?”
–“আমি ও ভালো।আমি আপনার ছোট ই হবো মে বি, তুমি করে বলিয়েন।”

আলো হাসে।আর বলে ‘ঠিক আছে’
প্রিয়ার মা নাস্তা পানিয় সব নিয়ে আসে।আদ্র কিছুই খেতে চায়না।তারপর আত্মীয়তার ধরনে সে আর না করেনা।প্রিয়ার বাবা ও এসে বসে।আদ্রর সাথে পরিচিত হয়ে উনার ভাল ই লাগছে।

আলো কথার প্রসঙ্গ পালটে বলে,
–“প্রিয়া যদি একটু অন্য রুমে যায় কিছু কথা বলতাম?”

প্রিয়া তখন আয়াতকে নিয়ে অন্যখানে চলে যায়।প্রিয়া নিজের রুমে যায় তারপর আয়াতকে বিছানায় বসায়।প্রিয়া খেয়াল করে আয়াতের চেহারা টা প্রায় তার মতো ই দেখতে।অনেক কিউট একটা বাচ্চা।আয়াত প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোমাদের বাসা টা খুব সুন্দর।”
–“তাই।থ্যাংক্স।”
–“ওয়েলকাম।”
–“চলো আমরা পুরা বাড়িটা ঘুরে আসি।’

তারপর প্রিয়া আয়াতকে নিয়ে পুরাবাড়ি ঘুরে দেখালো।তারপর আবারো রুমে এসে বসলো।
প্রিয়া তখন আয়াতকে বলে,
–“আমি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরবো?”
আয়াত তখন মাথা নাড়ায়।প্রিয়া আয়াতকে জড়িয়ে ধরে। কেমন যেন মায়া।কেমন যেন শান্তি অনুভব করছে।কেন?এই কেনর উত্তর সে কোথায় পাবে?

প্রিয়ার মা ধারণা করেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আদ্র আলো।এরকম যদি হয়ে থাকে প্রিয়া মা কখনো রাজি না।প্রিয়া আগে কোথাও জব করুক।তাছাড়া একমাত্র মেয়েকে শশুড় বাড়ি পাঠাতে হবে এটা ভেবে ই তিনি কষ্ট পান।কিভাবে আদরের মেয়ে থেকে দূরে থাকবেন।কোথাও গিয়ে উনার যেন খুব আঘাত লাগে এসব ভাবলে।তিনি মনে মনে এসব ভাবেন।

কিন্তু হঠাৎ আলো যে প্রশ্ন করে উনারা হতবাক।আলো বলে,
–“প্রিয়া কি সত্যি আপনাদের সন্তান?”
প্রিয়ার মা বলে,
–“কি মনে হয়?এটা কেমন প্রশ্ন হ্যা আমাদের সন্তান।”

আদ্র তখন মন খারাপ করে বসে থাকে।আলো ভাইয়ের দিকে অসহায় হয়ে তাকায়।আদ্রর মন খারাপ দেখে প্রিয়ার মা বলে,
–“এ প্রশ্ন কেন?”

তখন আলো সব বুঝিয়ে বলে।তাহুর কথা বলে, আদ্রর কথা বলে।
প্রিয়ার বাবা মা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“প্রিয়া আমাদের ই মেয়ে।”

আলো হতাশ হয়।আদ্র চুপ করে থাকে।বের হওয়ার সময় প্রিয়া বলে,
–“আমি ও মেডিকেলে যাব একসাথে ই যাই।”

আয়াত প্রিয়া একসাথে হাটে।কথা বলতে বলতে দুজনেই হাসে।আলো এসব দেখে চুপচাপ থাকে।তাহুর কথা মনে পড়ে।আদ্র ও তাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তাহু বেচে থাকলে এভাবেই যে হাটতো।

আদ্র আলোকে বলে,
–“আগেই বলেছিলাম তোকে এখানে না আসতে।”
আলো বলে,
–“মন মানতে চায়না।শুধু মনে হয় এটাই আমাদের তাহু।”
আদ্র ও মনে মনে বলে,
–“আমার ও যে মন মানে না বোন। কিন্তু আমি যে নিজ হাতে তাহুকে কবরে রেখে এসেছিলাম।’
___

রাস্তার ধারে চারজন ই দাঁড়ায়।হঠাৎ প্রিয়ার চোখ যায় একজন বৃদ্ধ লোক আর একজন মধ্যবয়স্ক লোকের দিকে, তারা কথাকাটাকাটি করছে।

আয়াতকে আলোর হাতে ধরিয়ে প্রিয়া এগিয়ে যায়।আদ্র চুপচাপ দেখে মেয়েটি কি করতে চাইছে?
প্রিয়া এগিয়ে তাদের সামনে যায়,
–“কি হচ্ছে এখানে,ঝগড়া করছেন কেন?”

মধ্যবয়স্ক লোকটি বলেন,
–“আমি এনার থেকে বড়ই কিনেছিলাম,ভাংতি নেই বলে দশটাকা বেশি নিয়েছে।টাকা কি গাছে ধরে।এরা এত লোভী?”

বৃদ্ধ লোকটি বলে,
–“আমার ভাংতি নেই।পরে নিয়ে যেতে বলেছি দশ টাকা বেশি নিয়ে কি বড়লোক হবো?”

প্রিয়া মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে।তারপর মধ্যবয়স্ক লোককে জিজ্ঞেস করে,
–‘আংকেল এক্ষুনি আপনি যখন বাড়ি যাবেন আপনার মেয়ে যদি চিপস খেতে চায় আপনি কি তাকে দশটাকা দিবেন?”
–“দশ টাকা কেন পঞ্চাশ টাকা দিবো,আমার মেয়ে বলে কথা তাকে দশ টাকা দিলে পুষাবে?”

প্রিয়া তখন বলে,
–“অথচ আপনি এই বৃদ্ধ লোকটি, যে কিনা আপনার বাবার বয়সী উনি পরিস্থিতির কাছে হার মেনে রাস্তায় নেমেছেন।ভিক্ষা নয় খেটে খেতে চাইছেন তাকে যদি দশটাকা বেশি দেন খুব কি ক্ষতি হতো?আচ্ছা মানলাম আপনার অত দানের টাকা নেই অথবা গাছে টাকা ধরেনি কিন্তু আপনাকে তো উনি পরে নিয়ে যেতে বলছেন ই।যেখানে আপনার মেয়েকে পঞ্চাশ টাকা দিতে ও আপনার টাকা গাছে ধরছে,কিন্তু এসব মানুষদের আপনারা এক টাকা দিতে ও হিসেব করেন।কেন?এর সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই বলে?কিন্তু মানুষ হিসেবে মানুষের সম্পর্ক তো আমাদের তাই নয়কি?আপনাদের মত বড়লোকেদের দশ একশ টাকা কোনো ব্যপার ই না।আপনারা চাইলে প্রতিদিন এনাদের সাহায্য করতে পারতেন।সেই আপনারা এনাদের দিকে ফিরে ও তাকান না।সাহায্য ত দূর।”

প্রিয়া আবারো বলে।
–“আপনাদের উচিৎ উনাদের থেকে কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে কিছু নেয়া।কারণ এ বয়সটা অসহায়ের বয়স।নিজেকে সে জায়গায় নিয়ে একবার ভাবুন।কতটা অসহায় হলে এ বয়সে ও রাস্তার ধারে বসে থাকতে হয়।অথচ আমরা তা কখনো ই ভেবে দেখিনা।”

প্রিয়া দম নিয়ে বলে,
–“আমার কাছ থেকে দশ টাকা নিন।উনি আমার দাদুর বয়সী আমার দাদু ই।বুঝলেন?

মধ্যবয়স্ক লোকটি এবার বিনীত হয়ে বলে,
–“আমি দুঃখিত।আমি আসলেই লজ্জিত।কখনো এমন টা ভেবে দেখিনি।”

তারপর বৃদ্ধ লোকটির হাত ধরে বলে,
–“দুঃখিত চাচা আমার ব্যবহারের জন্য।দয়া করে আয়ার ক্ষমা করে দিবেন।”
প্রিয়া হেসে বলে,
–“আমি অন্যায় সহ্য করিনা।প্রিয়া অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে শিখেছে।”

বৃদ্ধ লোকটি ছলছল চোখে প্রিয়ার দিকে তাকায়।প্রিয়া একটা সালাম দিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।
আদ্র আলো একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।মানবতাটা তাহুর মতো ঠিক কিন্তু তাহু তো ভীতু ছিল। আর এই মেয়ের চোখে সাহসীকতা।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চোখে যেন আগুন জ্বলছে মেয়েটার।

তবে কি সত্যি এ মেয়ে তাহু নয়?

প্রিয়া হেসে আদ্রদের সামনে আসে..

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে