প্রাপ্তির শহরে পর্ব-০৭ সিজন০২

0
811

#প্রাপ্তির শহরে সিজন০২
#পর্ব-০৭
#তাহরীমা
.
আলোকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।মেয়ের নাম রাখে আহিতা।
আলোর হাসবেন্ড শাশুড়িকে বলে,
–“আম্মু এবার আমি আলোকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাই।এভাবে শশুড় বাড়ি থাকা দেখতে আমার ভাল লাগছেনা।

তখন আলো ও বলে,
–“হ্যা আম্মু আমি চাই আমার সংসার আমি নিজ হাতে সাজাই।মেয়েদের বিয়ের পরে বাপের বাড়ি থাকাটা মানায় নাহ।এটা এখন আমি বুঝি।”

আলোর মা তখন অনুমতি দেয়।আলোর হাসবেন্ড সুন্দর বাসা দেখে।আদ্রদের বাসার কাছাকাছি ই নেয় বাসা।যাতে বিপদে আপদে আসতে যেতে পারে।
আলোর মেয়ে আলোর মতো সুন্দরী হয়েছে।আদ্র,আকাশ,তাহু একবার একবার করে কোলে নেওয়ার জন্য বসে থাকে।বাচ্চা পেয়ে সবাই খুব খুশি।তবে মেঘার এসব ভাল লাগছেনা।বাচ্চা তার ও পছন্দ।তবে আলোর মেয়েকে তার কেন জানিনা পছন্দ হচ্ছে না।সে রুমে গিয়ে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে।
.
কিছুদিন পর আলোরা চলে যায়।আদ্রর মা সে কি কান্না।মনে হচ্ছে আজকেই আলোর বিয়ে হয়েছে।আর শশুড় বাড়ি যাচ্ছে।


তাহু ভাল পাশ করে সেকেন্ড ইয়ারে উঠে।প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ক্লাসে তেমন যায়না।বাড়িতেই পড়া সব কমপ্লিট করছে।সেক্ষেত্রে আদ্র গাইড দিচ্ছে।যেহেতু আদ্র ও ছিল সাইন্সের স্টুডেন্ট।

মেঘা স্কুলের জব নেয়।সকালে বের হয় বিকেলের দিকে ফিরে।তাহু রান্নাবান্না করে সবাইকে খেতে দিয়ে রুমে চলে যায়।আবার মেঘা ফিরলে তাকেও খেতে দিতে আসতে হয়।

বিয়ের পরে মেঘা একদিন রান্নাঘরে ডুকেছিলো।আর ডুকেই গরম হাড়ি থেকে ভাত নিতেই হাড়িতে হাত লেগে পুড়ে যায় হাত।তারপর কি চিৎকার করে কান্না।
কেঁদে কেঁদে মেঘা বলল–“আমি আমার মমকে বলবো এ কোন শশুড় বাড়ি আমায় পাঠিয়েছে?এরা বউকে অত্যাচার করে।”

আদ্রর মা সেটা শুনে ভয় পেয়ে যান।সেদিন থেকে আদ্রর মা বলেছে,
‘তাহু যেন ভাত বেড়ে দেয়।’
_________

দেখতে দেখতে তাহুর ও বাচ্চা হওয়ার সময় চলে আসে।আলো কষ্ট পেয়েছিলো যে সেটা আদ্রর মনে আছে।তাই তাহুকে আগে থেকেই হসপিটালে ভর্তি করে।

তাহুর চাচি ও ছুটে আসে তাহুকে দেখার জন্য।চাচি তাহুর মাথার কাছে বসে থাকে,আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।তাহু চাচিকে দেখে কেঁদে উঠে।অনেকদিন পর মনে হচ্ছে এটা তার চাচি নয় তার নিজের মা ই।

চাচি তাহুর কান্না লক্ষ্য করতে বলে,
–“কি রে পাগলি?কাঁদছিস কেন?
–“আমার খুব আম্মুকে মনে পড়ছে।আজ যদি আম্মু থাকতো।”

চাচি হাসে,
–“তোর আম্মু একদম তোর মতো ই ছিলো।আমাকে অনেক ভালবাসত।আফসোস আমি তখন এতটাই হিংসুটে ছিলাম তোর মায়ের ভালবাসার দাম দিই নি।আর ক্ষমা চাওয়ার ও সুযোগ পায়নি।তুই হলেও আমায় ক্ষমা করিস।”

–“কি বলছো মেজাম্মু আমি ছোট মানুষ আমি কি ক্ষমা করবো?”
–“এই দেখ তুই মেজাম্মু বলছিস।আবার বলিস তোর মা নেই।মা কে মনে পড়ছে।”

মেজাম্মুর মেকি রাগ দেখে তাহু কান্নারত অবস্থায় হাসে।তাহুর হাসি দেখে তিনি বলেন,
–“শুন প্রত্যেক মেয়ের মা হওয়ার আগে এরকম পরিস্থিতি আসে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস।”
–“ইনশাল্লাহ মেজাম্মু।”

আদ্র এতক্ষন ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলো।কথা শেষে তাহুর পাশে এসে বসে।মেজাম্মু উঠে বাইরে যান।তাহুর দিকে তাকিয়েই আদ্র বলে,
–“আমার বউটা।”

তাহু তখন বলে,
–“হয়েছে আর বউ বউ করতে হবেনা।”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
–“কেন?”
–“আমায় ফেলে কোথায় গেছিলেন?”
–“ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।”

তাহু ছোট করে ‘হুউ’ বলে উঠে।
আদ্র তখন তাহুর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
–“একদম ভয় পেয়োনা।আমি আছি তো।আল্লাহ ভরসা।”

তাহু অপলক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
–“এই একটা মানুষকে দেখলে বুঝা যায় বউকে কিভাবে ভালবাসা যায়।উনার ভালবাসা এত সুন্দর আর নিখুঁত।ইসস আমি কত ভাগ্যবতী।”

এসব ভাবতে ভাবতে তাহুর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়।তাহু চিৎকার করে উঠে।আদ্র হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায়।আর বলে,
-“তাহু! কোথায় কষ্ট হচ্ছে।এই তাহু?”

আদ্র তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ডাকে।তারপর ডাক্তার আদ্রকে বের হয়ে যেতে বলে।আদ্র যাওয়ার পানে তাহু তাকিয়ে থাকে।

কেবিনের বাইরে আদ্রর মা বাবা আলো তাহুর চাচি বসে থাকে।আর আদ্র কিছুতেই স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেনা।এদিক সেদিক হাটছে।
খালি তাহুর কান্নারত চোখ টা ভেসে উঠছে।কি ভয়।ইসস হারানোর ভয়।
.
অনেক্ষন পর নার্স একটা বাচ্চা নিয়ে বের হয়।
আদ্রকে দেখে বলে,
–“আলহামদুলিল্লাহ আপনার ছেলে হয়েছে।”

ছেলে হয়েছে এটা শুনে আদ্রর মা খুব খুশি হয়। পরিবারের সবার মুখে খুশির রেখা ভেসে উঠে।
_____________

আদ্র তাহুর ছেলের নাম রাখা হয় আয়াত।আয়াত আদ্রর বাবার চোখের মনি।আয়াতকে কোলে নেয়া ছাড়া উনার চলে না।বংশের প্রথম ছেলের প্রথম ছেলে।আনন্দ তো হবেই।আয়াত হয়েছে আদ্রর মতো ফর্সা তবে তাহুর চেহারার মতো আদুরে।
.
কয়েকদিন পর আয়াত হওয়ার খুশিতে আদ্র তাহুর জন্য একটা গিফট নিয়ে আসে।

তাহু আয়াতকে ঘুম পাড়াচ্ছিল।অমনি আদ্র তাহুর চোখ ধরে বসে।

এভাবে হঠাৎ চোখ ধরায় তাহু ভয় পেয়ে যায়।
তাহুকে ভয় পেতে দেখে আদ্র বলে,
–“উঁহু সবসময় এত ভয়ে থাকো কেন?জীবনে বাচতে হলে সংগ্রাম করে,ভয় না পেয়ে চলতে হবে।”

তাহু তখন বলে,
–“এভাবে কেউ চোখ ধরে?আমি তো ভুত ভেবেছিলাম।”

আদ্র হু হু করে হেসে উঠে।
–“তুমি বড় কবে হবে তাহু?”
–“কিহ আমি কি বাচ্চা?দেখুন বাচ্চা বলবেন না একদিম.”
–“বড়রা যে ভুতে ভয় পায়না।”

তাহু বলে,
–“কিন্তু তবুও আমি বাচ্চা না।এবার চোখ ছাড়ুন।”
–“ছাড়বো তবে আমি একটা গিফট এনেছি তোমার জন্য।তোমাকে চোখ খুলতে বললেই খুলবে যে,তার আগে না।”

তাহু বাধ্য মেয়ের মত চোখ বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে।আদ্র চেইন টা খুলে তাহুর গলায় পড়িয়ে দেয়।

তারপর বলে,
–“চোখ খুলো?”

তাহু চোখ খুলে অবাক হয়।সাথে খুশি ও হয় খুব।
লকেটে লিখা ‘আদ্র+তাহু’।

–“পছন্দ হয়েছে?”
–“অনেক সুন্দর।এটা আমার জন্য?”

তাহুর এমন বোকা প্রশ্ন আদ্র হতাশ।
–“না আমার বউয়ের জন্য।”
তাহুর খুশিমুখ হঠাৎ কালো মেঘে ছেয়ে যায়।
–“কি হলো আবার?”
–“আম্মু যদি বকে তখন?”

আদ্র কিছুক্ষণ ভাবলো।
–“বকবে কেন?আমি বলবো তোমার নাতি হওয়ার খুশিতে ওকে গিফট করেছি।”

তবুও তাহু মন খারাপ করে বলে,
–“নাহ আপনি চেইনটা নিয়ে নিন।আমার এসব কিছুই লাগবে না।”
–“জীবনে কত কি না পেয়েই কাটিয়ে দিলে দিন।এভাবে ও কি সন্তুষ্ট থাকা যায়?”
–“যায়।আমার না পাওয়ার চেয়ে পাওয়া সব হিসেব করলেই মন ভাল হয়ে যায়।আপনি এটা খুলে নিন।”

আদ্র এবার রেগে যায়।তাহুকে টেনে নিয়ে গিয়ে মায়ের রুমের সামনে দাড় করায়।আদ্রর এমন কান্ডে তাহু ভয় পেয়ে যায়।
___________

আলো কল করেছে মা কে।আজ আলোর হাসবেন্ড তার জন্য একটা সুন্দর জামদানি শাড়ি নিয়ে এসেছে।সেটা পেয়ে সে খুব খুশি তার খুব পছন্দ হয়েছে।তাই খুশি হয়ে মাকে কল করে জানিয়েছে এ কথা।আদ্রর মা ও খুব খুশি তার মেয়েকে জামাই এত ভালবাসে সেটা দেখে।
–“আম্মু শাড়িটা পড়ে কেমন লাগছে একদিন তোমাকে দেখাবো?”
–“আচ্ছা দেখাইস।আহিতা কি করছে আমার নানুমনি টা।”
–“ঘুমাচ্ছে আম্মু।আব্বু কই?”
–“আছে পাশেই।”

আলো বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো।
আদ্রর মা বলে,
–“ছেলেটা আলোকে এত ভালবাসে এটা দেখেই আমার খুব ভালো লাগে।মাঝেমাঝে এরকম গিফট দিলে বউরা খুশি ই হয়।”

আদ্র তাহু একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিলো।তারপর তাহুর হাত ধরে আদ্র বাবা মার রুমে ডুকলো।দুজনকে এভাবে ডুকতে দেখাই বাবা মা দুজনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

আদ্র তখন মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“এই চেইন টা আমি তাহুর জন্য কিনেছি।সুন্দর তাইনা?”
–“হ্যা কিন্তু এসব দেয়ার..?”

প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই আদ্র বলে,
–“আলোর হাসবেন্ড তার বউকে ভালবাসে এটা দেখতে যেমন ভাল লাগে।তাহুর চাচির ও সেটা দেখতে ভাল লাগে।কারণ তাহু তোমার বউমা হলেও কারোর না কারোর মেয়ে ই।তাছাড়া আলোর হাসবেন্ড যদি বউকে গিফট দিয়ে খুশি করাতে পারে, আমার বেলায় উলটা কেন?নিয়ম সব এক হওয়া কি উচিৎ নয়?”

আদ্রর মা বলে,
–“তাহু আর আমার মেয়ে কি এক?আকাশ পাতাল তফাৎ।”
–“এত কিছু বুঝিনা।তাহু যেমন মেয়ে আলো ও মেয়ে।তাহু যেমন বউ আলো ও বউ।”

আদ্রর মা আবারো কিছু বলতে নিলে,মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগে আদ্র আবারো বলে,
–“আমার আব্বু যেমন উনার টাকায় উনার বউকে গিফট দিত তোমার আপত্তি থাকত?কারণ তোমার স্বামী ই দিয়েছে।তাহলে আমার বউকে ও আমি গিফট দিয়ে আমার বউয়ের কেন আপত্তি থাকবে?কেন এত ভয় থাকবে তার?”

আদ্রর বাবা মুচকি হাসে।আদ্রর মা কিছুই বলেনা।কিছু যে বলার নেই।ছেলের এমন যুক্তি আসে কোথা থেকে?

তাহুকে নিয়ে আদ্র বের হয়ে যায়।আদ্র দুষ্টু হেসে বলে,
–“কই আম্মু তো দেখি কিছু ই বলেনি।”

তাহু হাসবে না কাঁদবে।এ মানুষটা কখন কি করে।এই মানুষ টাকে ভালবেসে সে মরতে ও রাজি।এত সুন্দর কেন মানুষ টা?

আদ্র তাহুকে নিয়ে রুমে নিয়ে যায়।
–“শুনো আম্মুরা যদি অন্যায় করে তাদের সব কথা মানতে হবে এমন কথা নেই।তাদের বুঝাতে হবে এসব অন্যায় হচ্ছে।সবসময় এভাবে ভয় পেয়ে বসে থাকলে কি জীবন চলবে?”
–“আপনি আছেন এতেই যতেষ্ট।”
–“হ্যা।তুমি আমার বউ তোমার ভাল মন্দ সবদিক দেখার দায়িত্ব আমি নিয়েছি তাই আমি তোমাকে আগলে রাখবো।কিন্তু তোমাকে ও আমার দেয়া ভালবাসার সব চিহ্ন আগলে রাখতে হবে”।
তাহু তখন মজা করে বল,
–“শুনেছি ভালবাসা দিলে বউ মরে যায়।”
–“মানে?”
–“যারা বউকে বেশি ভালবাসে,তাদের বউ বেশিদিন বাচে না।”

তাহু যদিও হেসে কথাটা বলেছিল।কিন্তু আদ্র মুহুর্তে রেগে গিয়ে তাহুকে থাপ্পড় দিতে গিয়ে ও দিলো না।অন্য পরিস্থিতির সময় তাহু কেঁদে দিত।কিন্তু আদ্রর দিকে তাকিয়ে তাহু খিলখিল করে হাসে।তাহুর হাসি দেখেই রাগ গলে পানি…….

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে