প্রযুক্তির অপব্যবহার

0
2067

#প্রযুক্তির_অপব্যবহার
#আবুল_বাশার_পিয়াস

আমি ডিপ্লোমা শেষ করে BSC তে ভর্তি হয়েছি। আর আমার গার্লফ্রেন্ড শ্রাবণী তখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদিন শ্রাবণীর ডিপার্টমেন্টের এক স্যার শ্রাবণীকে ডেকে বললো উনার ছেলেকে যেন শ্রাবণী পড়ায়। আর শ্রাবণীও এতকিছু না ভেবে রাজি হয়ে গিয়েছিলো যেহেতু শ্রাবণীর হোস্টেলের পাশেই স্যারের বাসা ছিলো

ছেলেটার নাম তুষার আর ও ক্লাস সেভেনে পড়ে। প্রথমদিন ছেলেটাকে পড়িয়ে শ্রাবণী আমায় ফোন দিয়ে বললো,
-“জানো পিয়াস, আমায় যদি কোন টাকা না দেয় তবুও আমি এই ছেলেকে টিউশানি করাবো”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
— কেন?

শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
– ” প্রথমত ছেলেটা দেখতে অনেক কিউট আর নাতুস নুতুস( মোটা টাইপের) আর দ্বিতীয়ত ও দেখতে অনেকটা আবিদের( শ্রাবণীর ছোট ভাই) মত”

শ্রাবণী প্রতিবার যখন তুষারকে পড়াতে যেতো তখন ওর জন্য হয় চকলেট নয়তো চিপস কিছু না কিছু একটা কিনে নিয়ে যেত। আমি প্রায় সময় শ্রাবণীকে মজা করে বলতাম,
— প্রতিদিন একসব চকলেট কিনে নিয়ে গেলে দেখা যাবে তোমার টিউশানির অর্ধেক টাকা চলে গেছে

শ্রাবণী তখন হেসে বলতো,
-“অর্ধেক টাকা গেলেও সমস্যা নেই। নিজের ভাইয়ের মতই তো কাউকে দিচ্ছি”

তুষার পড়ায় ফাঁকি দিলে শ্রাবণী ওকে যেমন কানমলা দিতো তেমনি পড়া পারলে শ্রাবণী ওর গাল টেনে আদরও করতো

একদিন বিকালের দিকে শ্রাবণী আমায় ফোন দিলো। আর ফোন দিয়ে এত পরিমাণে কান্না করছিলো ওর মুখ দিয়ে তখন কান্নাবাদে কিছু বের হচ্ছিলো না। আমি বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কি হয়েছে আমায় বলো কিন্তু ও শুধু বলে ওর কিছু হয় নি ও এমনিতেই কাঁদছে

পরদিন সকালে আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যায়। শ্রাবণীর সাথে দেখা করে ওর হাতটা ধরে বলি কি হয়েছে আমায় সবটা খুলে বলো। প্রথম প্রথম শ্রাবণী কিছু বলতে চাচ্ছিলো না কিন্তু আমি যখন খুব জোর করছিলাম তখন ও ওর ব্যাগ থেকে একটা কাগজ আমার হাতে দিলো। আমি যখন কাগজটা হাতে নিয়ে পড়ছিলাম শ্রাবণী তখন মাথা নিচু করে নিরবে চোখের জল ফেলছিলো

লেখাটা শ্রাবণীর স্টুডেন্ট তুষার শ্রাবণীকে নিয়ে লিখেছে। এই লেখাতে ওর স্টুডেন্ট শ্রাবণীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গার বর্ণনা দিয়েছে। শ্রাবণীকে দেখলে শ্রাবণী ওর মাথায় হাত রাখলে ওর কেমন লাগে সেটা লেখা। আর একটা মেয়ের উলঙ্গ ছবি আঁকা। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো ছবিটার নিচে লেখা শ্রাবণী ম্যাডাম

লেখাটা পড়ে আমি যখন ওর হাতটা ধরলাম ওর বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-” যে ছেলেকে নিজের ছোট ভাইয়ের চোখে দেখেছি সেই ছেলে আমায় নিয়ে এতটা নোংরা ধারণা করে।গতকাল ভুল করে আমার খাতাটা রেখে ওর খাতাটা নিয়ে এসে পড়েছিলাম। তাই তো এইসব জানতে পেরেছি”

এমন সময় শ্রাবণীর ফোনটা বেজে উঠলো। শ্রাবণী তখন চোখের জলটা মুছতে মুছতে আমায় বললো,
-“স্যার( তুষারের বাবা) ফোন দিয়েছে। কি বলি বলো তো? আমি তো স্যারকে কাল বলেছি উনার ছেলেকে আর পড়াতে পারবো না। কাল থেকে বারবার স্যার আমায় ফোন দিয়ে জানতে চাইছে আমি কেন পড়াতে পারবো না”

আমি তখন শ্রাবণীকে সাথে নিয়ে ওর স্যারের বাসায় গেলাম। ওর স্যার ওর সাথে আমাকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলো তারপর আমি যখন বললাম আমি শ্রাবণীর বাগদাতা তখন তিনি আমাকে ভিতরে আসতে বললেন। আমি ভিতরে গিয়ে শ্রাবণীকে বললাম, তুমি একটু অন্য রুমে যাও আমি স্যারের সাথে কথা বলছি

শ্রাবণী অন্য রুমে চলে গেলো আর ওর স্যার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ” কি হয়েছে বলো তো? হুট করেই শ্রাবণী বলছে ও আমার ছেলেকে আর পড়াবে না ”

আমি তখন একটু হেসে স্যারকে বললাম,
— আপনাদের বাসায় দেখলাম ওয়াইফাই আছে কিন্তু কম্পিউটার কোথাও দেখছি না

স্যার তখন বললো,
-” আজকাল স্মার্ট ফোন থাকলে কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে না। তারপরও কম্পিউটার কিনবো তুষার এসএসসি পাশ করলে। এখন কম্পিউটার কিনে দিলে সারাক্ষণ ও গেইম খেলবে”

আমি বললাম,
— তুষারও কি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে?

স্যার হেসে বললো,
-” দিলাম কিনে। কি আর করবো, ছেলেকেও তো প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে”

আমি তখন মুচকি হেসে স্যারকে বললাম,
— আপনার কি চটি বইয়ের কথা মনে আছে?

স্যার কিছুটা বিব্রত হয়ে বললো,
-“মানে!”
আমি তখন বললাম,
— আমাদের সময় চটি বই ছিলো। ক্লাসের কিছু ছেলে সেই বই গুলো সংগ্রহ করতো আর দলবেঁধে পড়তো। সেইসব বইয়ে এমন কিছু গল্প থাকতো যা দেখে মাথা ঘুরতো। ভাই-বোনকে নিয়ে নোংরা কাহিনি, চাচা- ভাতিজিকে নিয়ে, শালী- দুলাভাই, ম্যাডাম- ছাত্র এমন কি আরো কিছু নিচু পর্যায়ের কাহিনী লিখা থাকতো যা আমার মুখ দিয়ে বের হবে না। আপনার আমাদের সময়ে সেই বই গুলো সংগ্রহ করা অনেক দুষ্কর ছিলো। তাই যেকেউ সংগ্রহ করতে পারতো না। কিন্তু বর্তমান স্মার্ট ফোনের যুগে এইগল্প গুলো খুঁজে বের করা কোন বিষয় না। ৫ সেকেন্ডের ভিতরেই সেইসব গল্পগুলো খুজে বের করা যায়। শুধু গল্প না porn ওয়েবসাইটে ঢুকে অনেক কিছু দেখা যায়

স্যার অবাক হয়ে বললো,
-“এইসব কথা তুমি আমায় বলছো কেন?”

আমি বললাম,
— আমি বলছি তার কারণ হলো আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও অল্প বয়সে ছেলের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিয়েছেন। অল্প বয়সী ছেলে থাকার পরেও বাসায় লাগিয়েছেন ওয়াইফাই আর যে কারণে আপনার ছেলে যেকোন সময় চাইলেই বিভিন্ন ১৮+ ওয়েবসাইটে সহজেই ঘুরে বেড়াতে পারে। আমি মানছি সন্তান যেন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেজন্য অবিভাবকের সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে তারমানে এই না যে ক্লাস সেভেনে পড়ে বাচ্চার হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিবেন। আপনার উচিত ছিলো ফোন না দিয়ে ছেলের হাতে কম্পিউটার তুলে দেওয়া। গেইমস খেলবে বলে ছেলেকে কম্পিউটার কিনে দেন না অথচ আজকাল ছেলে মেয়েরা কম্পিউটারের চেয়ে ফোনেই গেইমস খেলে বেশি। কম্পিউটারে গেইমস খেলে তবুও উপকারিতা আছে কি-বোর্ডে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কিন্তু মোবাইলে গেইমস খেলে কোন উপকারিতা নেই

আমার কথাতে স্যার কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
-” এইসব জ্ঞান মূলক কথা আমায় বলছো কেন?”

আমি বললাম,
— বলছি তার কারণ হলো আপনি একজন অসচেতন বাবা। আর আপনার ভুলের কারণেই আপনার ছেলে প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে..

আমি আমার পেকেটে রাখা কাগজটা স্যারের হাতে দিলাম। উনি কাগজটা ভালো করে দেখলে আমি উনার থেকে কাগজটা নিয়ে উনাকে বললাম,
— এটা আপনার ছেলে ওর ম্যাডামের সম্পর্কে লিখেছে। আপনার ছেলে যদি ১৮+ সাইডে ঘুরাঘুরি না করতো তাহলে সে ম্যাডামকে বোনের চোখেই দেখতো। তাকে নিয়ে এইসব ভাবনা আসতো না। এর জন্য আপনার সন্তানের দোষ নেই আপনি দায়ী। এক কাজ করবেন আপনার ছেলেকে পড়ানোর জন্য কোন ছেলে স্টুডেন্ট রাখবেন কারণ আপনার ছেলে দৈহিক ভাবে ছোট থাকলেও প্রযুক্তির অপব্যবহারে মানসিক ভাবে বড় হয়ে গেছে…

—–

স্যারের বাসা থেকে বের হয়ে যখন আমি আর শ্রাবণী রাস্তায় হাটছি তখন খেয়াল করি শ্রাবণী আনমনে কি যেন ভাবছে। আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— কি হলো! কি ভাবছো?
শ্রাবণী বললো,
-” ভাবছি আমাদের সন্তান হলে ওর আশে পাশে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে দিবো না”
আমি তখন মুচকি হেসে বললাম,
— প্রযুক্তির ছোঁয়া না পেলে আমাদের সন্তান একটা রাম ছাগলে পরিণত হবে

সন্তানের শরীরে প্রযুক্তি ছোঁয়া লাগুক কিন্তু সেই ছোঁয়ার অপব্যবহার যেন কোন সন্তান না করে সেদিকে প্রতিটা অবিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে