প্রনয়ের দহন পর্ব-৩+৪+৫

0
448

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩

তীর বাড়িতে ডুকার সাথে সাথেই ওর মা আয়েশা সুলতানা বলে,

–কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?

তীর হালকা চিৎকার করে,

–সেটা তোমার আদরের ইশানকে জিঙ্গাস করো গিয়ে কেন তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে।

–তুই এভাবে কথা বলছিস কেন তীর?

–মা ভালো লাগছে না কথা বলতে আমার, আমি উপরে গেলাম।

–কিছু খাবি বানিয়ে দিবো।

–না খাবো না। যে বকা খেয়ে এসেছি সেই বকা খেয়ে পেট ভরে গেছে আমার।

আয়েশা সুলতানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিচ্চি অভি এসে বলে,

–আপু চকলেট খাবে।

তীর অভির হাতে চার-পাঁচ চকলেট দেখে কিছুটা খুশি হয়ে যায়। তীরর চকলেট ভীষন প্রিয়। কিন্তু পরক্ষনেই ভ্রু কুচকে বলে,

–এত চকলেট কে দিলো তকে বাবা তো কিনে দিবে না নিশ্চিত তাহলে কে দিলো তকে?

–ইশান ভাইয়া দিয়েছে।

ইশানের নামটা শুনে তীরর মেজাজটা আবার গেল গরম হয়ে রেগে অভিকে বলে,

–তর চকলেট তুই খা। ওই হিটলার বেডার দেওয়া কিছু জিনিস আমি খেতে চাই না।

বলে ধপধপ পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায় আর পিচ্চি অভি আবাক চোখে বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই চকলেটের জন্য কত ঝগড়া করে ও অভির সাথে আর আজকে অভি নিজে এসেছে বলেছে চকলেট খাবে কি না আর ওর আপু চকলেট না নিয়েই চলে গেলো। অভি ঠোট উল্টিয়ে মার উদ্দেশ্যে বলে,

–মা আপু কি রেগে আছে আমার উপর।

–কি জানি। হোমওর্য়াক শেষ করেছিস?

–না।

–তাড়াতাড়ি শেষ কর গিয়ে। আর সব চকলেট এক সাথে খাবি না বুঝলি।

–আচ্ছা।

অভি নাচতে নাচতে ঘরে চলে যায়। ভীষন খুশি ও আজকে চকলেট পেয়ে। ইশান ভাইয়া ওকে খুব আদর করে। ও যা চায় তাই দেয়। তার জন্য অভিও ইশান বলতে পাগল।

আয়েশা সুলতানা রান্না ঘরে ডুকতে যাবে তখনেই ওনার শাশুড়ি শাপলা বেগম বলে,

–বউ মা তোমার সাথে একটা কথা ছিলো!

শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে আয়েশা সুলতানা শাশুড়ি মায়ের সামনে গিয়ে বলে,

–কি কথা আম্মা?

–আসলে আমি ভাবতেছিলাম যদি তীর আর ই……

বলেই থেমে যান। শাশুড়ি মায়ের কথা মাঝ পথে থেমে যাওয়াতে আয়েশা সুলতানা বলেন,

–কি হলো আম্মা বলুন?

–আজ কথাটা বলা ঠিক হবে না সময় আসুক তখন বলবো।

–আচ্ছা আম্মা।

আয়েশা সুলতানা কথাটা বলেই রান্না ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ালেন। আয়েশা সুলতানা শাশুড়ি মায়ের কথা বুঝতে পারে নাই তেমনটা না। ওনি ঠিকেই বুঝতে পেরেছেন শাশুড়ি মা কি বলতে চেয়েছেন কিন্তু ওনি নিরুপায় কারন কারো কাছে যে আগে থেকেই ওয়াদাবদ্ধ হয়ে আছে অনেক বছর আগ থেকেই।

_____

–কখন থেকে তকে ফোন করছি কার সাথে এত কথা বলছিলি তুই?

ইশান রেগে কথাটা বলে ফোনের অপর পাশে থাকা রিফাতের সাথে। রিফাত ইশানের হুংকার শুনে কানের কাছ থেকে ফোনটা একটু দুরে সরিয়ে নেয়। ইশান রাগে আবারও বলে উঠে,

–কি হলো! কথা বলছিস না কেন?

–এত রেগে আছিস কেন দোস্ত?

–আগে এটা বল তুই এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলি? কখন থেকে ফোন করছি। তুই কি প্রেম করছিস রিফাত? ইদানিং তকে ফোন দিলে বিজি পাই।

–আজব তো এখন তকে কি কৌফত দিতে হবে নাকি। তুই কি আমার বউ লাগিস নাকি যে তকে সব কথা বলে বেড়াতে হবে আমাকে। আর প্রেম করতেই পারি আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে যেকোনো মেয়ে প্রেম করতে চাইবে।

–তর সাথে মেয়েরা শুধু প্রেমেই করবে। বিয়ে করবে কিনা আমার সন্দেহ আছে তর যেই স্বভাব।

–আমার বিয়ে নিয়ে তকে ভাবতে হবে না তুই তরটা নিয়ে ভাব। এখনও তো নিজের মনে কথা বলতে পারিস নাই একটা পুচকে মেয়েকে আবার নিজেকে সাহসী বলে দাবি করিস।

ইশান গলার স্বর নিচু করে বলে,

–ভয় হয় যদি রিজেক্ট করে দেয়। ওর রিজেক্ট আমি সহ্য করতে পারবো না রে। এমনেইতে ও আমাকে দু চোখে দেখতে পারে না।

–শুন তুই না ওর সাথে একটু ভালো ব্যবহার করিস তাহলে যদি তর জন্য ওর মনে একটু জায়গা হয়। সবসময় তো সিংহের ন্যায়ে আচরণ করিস মেয়েটার সাথে। পুচকে একটা মেয়ে কোথায় একটু আদর ভালোবাসা দিবি তা না করে বকাচকা করিস আনরোমান্টিক একটা।

–একদম আপমান করবি না আমাকে। আমি ওর কার্যকলাপের জন্যই এমন রুক্ষ আচরন করি। মানে এমন এমন সব কাজ করবে ও যেটার জন্য রাগ হয় আমার।

–শুন তকে একটা বুদ্ধি দেই…..

কথার মাঝখানেই রিফাতে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ফোনে কিছু একটা চেক করেই বিচলিত কন্ঠে ইশানকে বলে,

–ভাই তর সাথে আমি পরে কথা বলি। এখন যদি আমি তর সাথে কথা বলে যেতেই থাকি তাহলে কেউ আমাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে যাবে তুই তো আর আামকে ছ্যাকা দিবি না তাই তর কলটা কাটলাম পরে কথা হবে বাই।

–আরে শুন আমার কথাটা।

ইশান ফোন কানের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে বিরবির করে উঠে,

–মানেটা কি? এই ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।

_____

ইশা নাক ফুলিয়ে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। বার বার কেউ ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ইশা ধরছেই না। ও আজকে এই লোকের ফোন ধরবেই না যাই হয়ে যাক কেন এটাই ইশার পণ আজকে!

পাঁচটা কল কাটার পরে ফোনে একটা মেসেজ আসে। ইশা মেসেজটা চেক করে,

“প্লিজ জান! একবার কলটা ধরো এরপর থেকে তোমার সাথে কথা বলার সময় কারো ফোন ধরবো না প্রমিজ প্লিজ একবার ধরো ফোনটা”

ইশা ভেঙ্গছি কেটে বলে,

–হুম কত ডং।

এর কিছুক্ষন পরেই ফোনটা বেজে ওঠে। ইশাও চুপচাপ কলটা পিক করতেই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে,

–এত জেদ তোমার বাবা গো বাবা। তুমি যেমন তোমার ভাইটাও তেমন একে বারে কার্বন কপি।

–একদম আমার ভাইয়ের নামে বদনাম করবেন না।

–তোমার আর তোমার ভাইয়ের মাঝে পড়ে আমি একেবারে শেষ। একটু আগে তোমার ভাই ফোন করেছিলো।

–কিহ? আমি যখন কথা বলছিলাম তখন ইশান ভাইয়া কল করেছিলো।

–জি ম্যাডাম। আর সন্দেহও করেছে আমি প্রেম করি কি না তা নিয়ে। কিন্তু এখন তো ওর সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে হয়তো যেভাবে ওর কলটা কেটেছি। যদি একবার ধরা পড়ি তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো।

–সরি! আর এটা আগেই বলেই পারতেন যে ইশান ভাইয়া আপনাকে কল করেছে তাহলে তো আর আমি এমন করি না।

–ঠিক আছে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর হে পরের বার যেন এমন মেসেজ না আসে আমার ফোনে তোমার কাছ থেকে মনে থাকবে।

–সরি আর এমন মেসেজ দিবো না।

______

ফরাজি পরিবারের সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছে আর নেহা বেগম খাবার পরিবেশন করতে করতে চিৎকার করে ইশাকে ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটার কানে মায়ের কোনো‌ চিৎকারেই ডুকছে না, এই রাতের খাওয়া নিয়ে ইশা অনেক ডির্স্টাব করে যা বলার বাহিরে। ইশান মায়ের চিৎকারের মাঝেই বলে,

–মা তুমি আর ওকে ডেকো না আমি ডাকছি ওকে দাড়াও।

ইশান চিৎকার করে বলে উঠে,

–ইশা তুই যদি এক মিনিটের মাঝে নিচে না নামিস তাহলে আমি তর কান ধরে ডায়নিং টেবিলে নিয়ে আসবো।

ইশানের কথাটা কর্নপাত হওয়ার সাথে সাথে ইশা নিজের ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এসে ধপাস করে চেয়ারে বসে। ইশান ভ্রু-কুচকে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

–এতক্ষন কি করছিলি তুই? মা কখন থেকে তকে ডাকছিলো কথা কানে যায় না তর।

ইশা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। তা দেখে ইশান দাত দাতে চেপে বলে,

–কি হলো কথা বলিস না কেন?

ইশার ছোট জবাব,

–পড়ছিলাম।

–তুই পড়ছিলি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। তুই যে এতক্ষন ফোন টিপছিলি তা আমার অজানা নয়।

ইশান এবার ইশার কানটা বা হাত দিয়ে ধরে বলে,

–আজ থেকে তর ফোন চালানো বন্ধ। এই ফোন তর পড়ালেখার বারটা বাজিয়ে দিয়েছে।

এবার ইশা রেগে উঠে। ইশানের কাছ থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,

–ভাইয়া তুমি সবসময় আবার সাথে এমন করো কেন? তোমরা কেউ আমাকে একটু ভালোবাসো না সবসময় শুধু বকা দাও।

ইশা নাক ফুলিয়ে ঘরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই ইহান বোনের হাত ধরে ফেলে আর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বোনের চোখের পানি মুজে বলে,

–ইশু সোনা! আমার আদরের ছোট্টো বোনটা এভাবে কান্না করে না। তকে আমরা সবাই খুব আদর করি বুঝলি। তুই হলি আমাদের সকলের নয়নের মনি।

–ও সব তোমাদের মুখের কথা।

–মুখের কথা হলে কি আমি‌ তর পরীক্ষার জন্য আমার বিয়েটা পিছিয়ে দেই বল।

–পিছাতে কে বলল তোমাকে আমি বলেছি।

–না তুই বলিস নি। কিন্তু আমার বিয়ে আর আমার আদরের বোনটা আমার বিয়েতে মজা করতে পারবে না পরীক্ষার জন্য তা আমি বড় ভাই হয়ে কি করে‌ বসে দেখবো বল। তাই তো বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে দিয়েছি।

–থাক আর পাম দিতে হবে না।

বোনের নাক টেনে ইহান বলে,

–পাম দিচ্ছি না সত্যি বলছি আমি আমার ছোট্ট ইশুকে খুব ভালোবাসি।

ইশান ওদের দুজনের কথার মাঝে ফোড়ঁন কাটে,

–হয়েছে এবার খেতে বস চুপচাপ।

ইহান চোখের ইশারায় বোনকে চেয়ারে বসতে বলে। ইশাও বাধ্য মেয়ের মতো খেতে বসে পড়ে। নেহা বেগম আর সোহেল ফরাজি বসে বসে তিন ছেলে মেয়ের খুনশুটি দেখছিলো। এটা ওদের তিন ভাই বোনের দৈনন্দিন রুটিন। এক ভাই বোনকে বকাচকা করবে আরেক ভাই বোনকে সান্তনা দিবে।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪

বেলা সাড়ে এগারটা বাজতে চলল। ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে। কুয়াশা কেটে সূর্যের দেখা মিলেছে তাতে মানুষরা যেন একটু হাফ ছেড়ে বেচেঁছে। শীতের জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে নিজের কাজে ছুটে চলছে লোকজনরা।

তীর আর ইশা কোচিং পরীক্ষা দিয়ে সবে মাএ বের হয়েছে। তীর বের হয়েই ইশার উদ্দেশ্য বলল,

–এত কঠিন প্রশ্ন করার কোনো মানে আছে তুই বল।

–কি আর করার বল না পারলে যা হয় আর কি?

–স্যারটা ইচ্ছে করে এমন কঠিন প্রশ্ন করেছে আমি সিউর।

–পাশ করতে পারবি?

–হুমম।

এমন সময় ওদের পিছন থেকে দুজনের কাধ জড়িয়ে ধরে নীরা বলে।

–কিরে পরীক্ষা কেমন হলো?

তীর হতাশ চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,

–আর পরীক্ষা। তোর কেমন হলো সেটা বল?

–হুমম মোটামুটি।

ইশা নীরার কথা শুনার সাথে সাথে ছিটকে দুরে সরে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–তর পরীক্ষা মোটামুটি হলেও তো কিভাবে যেন হায়েস্ট মার্কা পেয়ে যাস প্রত্যেক পরীক্ষায়।

–বিশ্বাস কর আজকের পরীক্ষা আমার তেমন ভালো হয় নি। শীতে পুরা হাত বরফ হয়ে গেছে ভালো করে কলমটাই ধরতে পারি নাই।

–আমাদের বলদ পেয়েছিস না আর রুমে এসি ছিলো তাই উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। আর তুই পরীক্ষা দিস ভালো করে আর বলিস মোটামুটি। পরীক্ষার সময় আমার সিট যদি তর আশে পাশে হতো তাহলে আমি তর খাতা পুরা কপি করতাম। কিন্তু র্দুভাগ্য আমরা তিন জন তিন দেশে বসে পরীক্ষা দেই।

–আচ্ছা বাদ দে! চল আজকে তিন জন মিলে ফুচকা খাবো। ঝাল বেশি করে দিয়ে খাবো তাহলে শরীর পুরা গরম হয়ে যাবে।

তীরও খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,

–হুম চল অনেক দিন হলো ফুচকা খাই না। আজকে পুরা চার প্লেট ফুচকা খাবো।

–হুম।

_____

ইশান চিত হয়ে শুয়ে আছে আজকে ছুটির দিন অফিস নেই তাই শান্তি মতো লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। মাঝে একবার উঠে শুধু ব্রেকফাস্টটা করে নিয়েছে। কিন্তু ইশানের শান্তি আর রইলো না ফোনটা কখন থেকেই বেজেই যাচ্ছে। থামার কোনো নামেই নেই। এক প্রকার বিরক্ত হয়েই ফোনটা পিক করে। ফোনের ওপাশ থেকে ইশানের পিএ আবির বলে।

–সরি স্যার আজকে আপনাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু কিছু করার ছিলো না আমার তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফোন দিলাম আপনাকে।

ইশানের ভ্রুজোড়া কুঁচকে আসে আবির ছেলেটা এত কথা বলে‌ যা বলার বাহিরে। কাজের থেকে অকাজের কথা একটু বেশিই বলে ছেলেটা।

–মেইন পয়েন্টে আসো আবির এত কথা না বলে।

–আসলে স্যার গোডাউনে শ্রমিকদের মাঝে একটু ভেজাল হয়েছে।

–মানে। কখন থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

–দশটা থেকে শুরু হয়েছে এখন আমি আসার পর ওদের থামিয়েছি। কিন্তু আপনি আসলে ভালো হতো আর কি।

–আচ্ছা আসছি আমি বিশ মিনিটের ভেতরে।

–ওকে স্যার।

ইশান ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে আসে। আলোমেলো চুলগুলা হাতের আঙুল দ্বারা আছড়িয়ে নিয়ে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে গাড়ি চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ে।

_______

তিন বান্ধবী রাস্তার পাশে বড় একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাড়ায়। এখানে প্রচুর ভিড়। বলতে গেলে এই ফুচকার দোকানটা খুব ফেমাস। এক প্লেট ফুচকা পেতে হলে দশ পনেরো মিনিট তো অপেক্ষা করতেই হবে।

তিন বান্ধবী মিলে মোট ছয় প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে এসে বসে। নীরা জিভ দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে বলে।

–দোস্ত আর সহ্য হচ্ছে না কখন যে পাবো হাতের কাছে ফুচকার প্লেটটা। উফফ….

তীর ঠোট ভিজিয়ে বলে।

–আমরাও না। অনেক দিন পর ফুচকা খাবো আজ।

নীরা ইশার দিকে তাকিয়ে দেখে ও বা হাত দিয়ে পেট চেপে বসে আছে। আর মুখের আকৃতি কেমন যেন করুন করে রেখেছে।

–কি রে ইশু? তুই এমন করে পেট চেপে বসে আছিস কেন?

ইশা কাদো কদো চেহারা নিয়ে বলে।

–দোস্ত আমরা না ইয়ে পাচ্ছে।

–ইয়ে মানে।

–হুমম আমার এখনেই বাড়িতে যেতে হবে।

–সকালে পেট পরিস্কার করে আসিস নি?

–নাহ।

–এর জন্যই তো বলি আজকের পরিবেশ এত র্দুগন্ধ যুক্ত কেন?

–একটা দিবো তকে শয়তান মাইয়া।

–তো এখন কি করার বল?

তীর বলল,

–চল তাহলে বাসায় চলে যাই আমরা। আজকে আর ফুচকা খেতে হবে না।

–না না তরা থাক। তরা ফুচকা খা আর অর্ডারও দেওয়া হয়ে গেছে এখন চলে গেলে কি করে হবে? আমি একটা রিকশা করে ঠিক চলে যেতে পারবো।

তীর ঠোট ফুলিয়ে বলে।

–তকে ছাড়া একা একা কি করে ফুচকা খাবো ইশু।

ইশা তীরের মাথায় চটি মেরে বলে।

–উমমম এমন একটা ভাব ধরছিস যেন আমাকে ছাড়া তুই আর ফুচকা খাস নি জীবনে।

–তা খেয়েছি কিন্তু তর এই অবস্থা।

–আরে কিছু হবে না সবে পেট মোছর দিয়ে উঠছে। তরা ফুচকা খা মজা করে আমি বরং যাই। পাচ মিনিটের রাস্তা রিকশা করে গেলে।

–আচ্ছা সাবধানে যাবি।

–হুম।

ইশা একটা রিকশা করে চলে যায় বাসার দিকে। ইশা ওদের চোখের আড়াল হতেই নীরা মুখটা কালো করে বলে।

–ধুর মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।

–হুম।

–আচ্ছা এত গুলা ফুচকা কি করে খাবো এখন? মোট ছয় প্লেট মানে ষাটটা ফুচকা।

–চল ফুচকা চ্যালেন্জ করি।

–না রে বোন আর কয়েকসিন পর টেস্ট পরীক্ষা এখন যদি পেট খারাপ হয় তাহলে আর পরীক্ষা দিতে হবে না বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে।

–তাহলে এখন কি করার?

–দাড়া রাহুলকে ফোন করি। ওর বাসা তো এখানেই।

–এই না একদম না।

–কেন?

–আরে জানিস না তুই ওর স্বভাব কেমন। খালি গায়ে পড়ে কথা বলে।

–ধুর ও একটু ফান করে আমাদের সাথে।

–আর যাইহোক ইশা নেই ভালো হয়েছে। না হলে ওরা দুইডা এক সাথে হলেই সাপে নেউলে লেগে পড়ে।

এর মাঝে ফুচকার প্লেট এনে দোকানদার টেবিলে রেখে যায়। নীরার চোখ যায় রাস্তার ওপারে রাহুল আর তার বন্ধু মিলে কোথায় যেন যাচ্ছে। রাহুলক দেখার সাথে সাথে নীরা চিৎকার করে ডাকা শুরু করে ওদের। রাহুলরাও নীরার ডাক শুনে দোকানে আসে। রাহুল ওদের কাছে এসেই বলে।

–কি রে তরা এখানে?

–ফুচকা খেতে এসেছি। খাবি ফুচকা?

–উমম খাওয়া যায়।

–তাহলে বস।

রাহুল আর ওর বন্ধু বসে। রাহুল তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি রে ইশা কই? তুই এখানে আর ইশা তর সাথে নেই কারনটা কি ঝগড়া করেছিস নাকি তরা দুইডা।

–তর কি মনে হয় তর মতো আমি ওর সাথে ঝগড়া করি।

–ওই আমি ওর সাথে কখন ঝগড়া করলাম।

–সেটা তো ইশা থাকলে বুঝা যায় কে ঝগড়া করে।

–ওই একদম মিথ্যা কথা বলবি না তীর।

–এই দেখ এখন ঝগড়া কে লাগছে?

–তুই শুরু করেছিস আগে আমি না।

–যা তো এখান থেকে মেয়েদের চিপায় চিপায় থাকতে তর শরম করে না।

–ইয়া মাবুদ কত বড় আপমান।

তীরের মাথা চটি মেরে রাহুল বলল।

–ওই তরাই তো আমাদের এখানে ডেকেছিস। আমার কি নিজ থেকে এসেছি নাকি। তরা মেয়েরা আসলেই বেজাল।

তীরও রাহুলের পিঠে কিল দিয়ে বলে,

–তো এখন বলছি চলে যায়। আর একদম মাথায় হাত দিবি না রাহুল তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।।

নীরা ওদের দুইডার ঝগড়া দেখে বলে।

–উফফ থামবি তরা। ওই রাহুল তুই চুপ কর তুই মেয়েদের মতো এমন ঝগড়া করিস কেন বলতো।

রাহুল কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে নীরা রাহুলকে থামিয়ে বলে।

–চুপ আরেকটা কথা বললে স্টেপলার মেরে দিবে তদের মুখে চুপচাপ ফুচকা খা।

রাহুল ফুচকা খেতে খেতে বলে,

–ওই ফুচকা যে এভাবে ডেকে এনে খাওয়াছিস টাকা কে দিবি?

তীর বলে উঠে।

–তুই দিবি।

–কিহ? আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই আমরা টাকা দিতে পারবো না।

–কেন দিবি না নিজের মুখে খাচ্ছিস তাহলে টাকা দিতে পারবি না কেন??

নীরা চিৎকার করে বলে উঠে।

–ওই টাকা আমি দিবো খা তরা। আমার ভুল হয়েছে রাহুলকে ডেকে এখানে আনা।

–তাহলে এখন তুই টাকা দিয়ে ভুলের মাশুল দে।

_____

এদিকে ইশা একটা পার্কের সামনে আসে। রিকশা থেকে নেমে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুজছে। কিন্তু যাকে খুজছে তাকে পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই ইশার পেছন থেকে কেউ “ভোঁও” করে উঠে। বেচারি ইশা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। বুকে থুতুঁ দিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিফাত সাদা হুডি আর মুখে মাক্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কিছুটা রাগি মুড নিয়ে বলে।

–এভাবে তাড়াতাড়ি আসতে বলার মানে কি। জানেন আমি ওদের সাথে কতগুলা মিথ্যা কথা বলে এসেছি।

–প্রেম করলে একটু আধটু মিথ্যা বললে কিছু হয় না। আর আমি তো বলেছিলাম আমি আসি তোমার কাছে কিন্তু তুমিই তো না করলে।

–না করেছি কি আর সাধে। ওখানে আমাদের ক্লাসমেটরা ছিলো ওরা যদি দেখতো তাহলে কি ভাবতো।

–কি ভাবতো? কেউ যদি কিছু ভাবতোও তাহলে বলতে আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু।

–বন্ধু বন্ধুর সাথে দেখা করতে না এসে বন্ধুর বোনের সাথে দেখা করতে এসেছে সেটা মানুষ খুব ভালো চোখে দেখতো। সবাই তো বলদ কেউ কিছু বুঝবে না।

–আচ্ছা বাদ দাও বুঝতে পারছি তোমরা যুক্তি। বাট কি মিথ্যা বলেছো ওদের।

–সেটা আপনার না জানলেও চলবে আগে বলুন কেন এভাবে ডেকেছেন।

–ওয়েট করো! আসছি আমি।

রিফাত গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে মাঝারি সাইজের একটা গোলাপ ফুলের তোঁরা আর এক বক্স চকলেট এনে ইশার হাতে দেয়। ইশা আবাক হয়ে রিফাতকে বলে।

–হঠাৎ এসব?

–এমনেই ইচ্ছে হলো দিতে।

ইশা ফুলের তোঁরা আর চকলেট বক্সটা ব্যাগে ডুকাতে ডুকাতে বলে।

–ঠিক আছে তাহলে আমি এখন আসি।

–চলে যাবে।

–হুম।

রিফাত ইশার আরেকটু কাছে এসে ইশার ছোটছোট চুল গুলা কানে গুজে দিয়ে বলে।

–কোথায় যাবে এখন?

–বাসায় চলে যাবো ওদের কাছে গেলে ওরা সন্দেহ করবে।

–ঠিক আছে সাবধান যাও। জানি আমি দিয়ে আসতে বললে না করবে তাই বললাম না কথাটা।

–হুম! ঠিক আছে আসি তাহলে।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫

ইশান গোডাউনের সব ঝামেলা মিটিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে রাওয়ানা হয়। মাঝ রাস্তায় এসে জ্যামে আটকে পড়ে। রাস্তার আশেপাশে দেখাতেই নজর যায় রাস্তার ওপাশে একটা ফুচকার দোকানে একটা মেয়ের দিকে, পাশে আরও তিন জন ছেলেমেয়ে আছে। মেয়েটার চুল গুলা ছুটি করা, বেবি চুল গুলা কপালের সাইডে পড়ে আছে, মুখের এক সাইড দেখা যাচ্ছে তাও এতটা ভালো করে না। তাই ইশান ঠিক ভালো করে চিনতে পারছে না মেয়েটাকে তবে তার খুব চেনা চেনা লাগছে। ভ্রু-কুচকে ইশান ভালো করে মেয়েটাকে দেখার প্রয়াস করছে। হঠাৎ করেই মেয়েটা ঘুড়ে তাকায় আর মেয়েটাকে দেখে ইশান আবাক হয় সাথে রাগও হয়। দাতে দাত চেপে বলল।

–তীর এখানে কি করছে? এসময় তো ওর এখানে থাকার কথা নয়।

ইশান চারিপাশে আরও ভালো করে চেক করে ইশাকে খুজার চেষ্টা করে কিন্তু ইশার কোনো চিহ্ন খুজে পায় না। তাই ফোন হাতে নিয়ে ইশার নাম্বারে কল করে। দুই তিন বার রিং হওয়ার পরপরেই ইশা ফোনটা ধরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বাজখাই কন্ঠে বলে উঠে।

–কোথায় তুই?

ইশানের এমন কন্ঠ শুনে ইশা কিছু ভড়কে যায়। কাপাকাপা গলায় বলে।

–ভাইয়া আমি তো বাসায়।

–তীর কোথায়?

ভাইয়ের মুখে তীর কোথায় কথাটা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে যায় ইশার। ইশা এতক্ষন বসে বসে যা ভেবেছে তার মানে তাই হলো। বাড়িতে এসে যখন জানতে পারে ইশান বাড়িতে নেই তখন থেকেই ও চিন্তায় পড়ে গেছে। আর সমানে উপরওয়ালার কাছে দোয়া করে গেছে তীর যেন ইশানের সামনে পড়ার আগে বাড়ি ফিরে আসে। ইশানের কন্ঠ পুনরায় শুনা গেল।

–কি হলো কথা বলিস না কেন?

–ভাইয়া আসলে হয়েছে কি তীর তো….

–বুঝতে পেরেছি আমি আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলতে হবে না।

বলেই ফোনটা টাস করে কেটে দেয় ইশান। ইশা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। চিন্তায় দাত দিয়ে নুখ কাটা শুরু করে দিয়েছে। অতিতে একবার ফুচকা আর চটপটি খেয়ে পেটের অবস্থা বারটা বাজিয়ে ফেলেছিলো ইশা আর তীর যার জন্য তিন দিন হাসপাতালে পর্যন্ত থাকতে হয়ে ছিলো। এরপর থেকে বাইরের এসব খাবার খাওয়া বন্ধ। কিন্তু ওরা দুজন লুকিয়ে চুকিয়ে ঠিকেই খেতো। আর আজ তো বন্ধের দিন ছিলো সবাই বাড়িতেই থাকবে। তাই আরও সাহস করে ফুচকা খেতে চেয়েছিলো ওরা। কিন্তু কে জানত ইশা খেতে পারবে না আর ইশানও যে বাড়ি থেকে বের হবে।

ইশা বার বার তীরকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কল ধরার কোন নামেই নেই। নীরার ফোনেও কল করচ্ছে কিন্তু নীরাও ধরছে না। ইশার মন চাইছে ওই দুইডারে পানিতে চুবাতে। ফুচকা খাওয়ার নেশায় এমন ভাবে পড়েছে যে ফোনটাও ধরতে পারছে না একটু। বেয়াদব দুইটা ফোন ইউজ করে কিন্তু দরকারের সময় ফোন ধরে না। ইশা এক প্রকার বিরক্ত নিয়ে বলে।

–জাহান্নামে যা তুই তীর তাতে আমার কি?

______

এদিকে তীররা ছয় প্লেট ফুচকা শেষ করেও আরও তিন প্লেট ফুচকা আর সাথে তিন বাটি চটপটিও অর্ডার দিয়েছে। টাকা তো নীরা দিবে তাই নো চিন্তা। ফ্রিতে খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু নীরা বেচারি যে এভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনাও করতে পারে নি। এখনতো রাহুল আর তীরও এক পক্ষ হয়ে নীরার গলা এক প্রকার চেপে ধরছে ওর কাছে পাচঁশ টাকার নোট দেখে। নীরা না পারছে সইতে আর না পারছে কিছু বলতে কারন আপাতত ওর পাচঁশ টাকার নোটটা রাহুলের কাছে। এই পাচঁশ টাকার নোটটা নীরার হাতে দেখা মাএই রাহুল ঈগল পাখির মতো “ছু” মেরে নিয়ে নেয়। নীরা অসহায় ভাবে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে আর মনে মনে ফন্দি আটছে কি করে পাচঁশ টাকার নোটটা উদ্ধার করা যায়। কিন্তু রাহুল এমন জায়গাতে টাকাটা রেখেছে যেখান থেকে টাকা উদ্ধার করা নীরার কাছে অসম্ভব হয়ে দাড়িছে। তাই আর কি করার নীরা বেচারি চুপচাপ বসে ওদের হাসি হাসি মুখে দেখে যাচ্ছে আর রাগে ফুসছে। তীর নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

–রাগ করিস না দোস্ত আমাদেরকেই তো খাওয়াচ্ছিস আর জানিস এতে তর কত সাওয়াব হবে।

–সময় আমারও আসবে এক মাঘে শীত যায় না বলে দিলাম।

রাহুল বলে।

–আপাতত এই বছরের মাঘ মাসটা আমাদের তাই আমরা একটু চিল করি। আর তুই আগামী বছরের মাঘ মাসের জন্য অপেক্ষা কর দোস্ত।

নীরা রাহুলের কথা শুনে আরও রেগে যায় রাহুল যেই চেয়ারটাতে বসেছে সেই চেয়ারটাতে লাথি মেরে বলে।

–তুই হচ্ছিস মেইন কার্লপিট। তকে যে আমি কোন দুঃখে এখানে ডেকে আনতে গেলাম সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এখন নিজের উপরে রাগ উঠছে। মানুষ হয়তো এর জন্যেই বলে খাল কেটে নিজে থেকে কুমির ডেকে আনে।

নীরার তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–আর তীর তুইও এভাবে পল্টি খেয়ে গেলি। তরা সবগুলা এক একটা পল্টিবাজ। আমার রাগে ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে ফেলতাম।

রাহুল তীরকে ইশারা করে কথা বলতে না করে। নীরা এখন আইটেম বোম হয়ে আছে বেশি কিছু বললে হয়তো ফেটে যাবে এখন আর সব ছাড়খার করে দেবে।

____

জ্যামে ছুটার সাথে সাথে ইশান গাড়ি ঘুড়িয়ে নিয়ে ফুচকার দোকানটার সামনে আসে। তীর এখনও লক্ষ্য করে নি ইশানের গাড়ি লক্ষ্য করবে কি করে ও তো খেতে ব্যস্ত। ইশান গাড়ি থেকে নেমে তীরের পেছনে এসে দাড়ায়। কিন্তু তীরর কোনো হেলদোল নেই ও ওর মতোই চটপটি খেয়েই যাচ্ছে। কিন্তু রাহুল আর নীরার চাওনি দেখে ভ্রু-কুচকে আসে তীরর। ওদের চাওনি দেখে তীর বুঝতে পারলো ওর পেছন নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। তাই তীর সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকাতেই আপনাআপনি মুখটা হা হয়ে যায় আর হাত থেকে টাস করে চামচটা নিচে পড়ে যায়। ইশান শীতল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টি তীরের কাছে খুব ভয়ংকর লাগছে বুঝতে পারছে না মানুষটা রেগে আছে নাকি রেগে নেই। তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে।

–ইশান ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন?

ইশান তীরের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–সাহসটা খুব বেড়ে গেছে না।‌ ইশা ঠিকেই কোচিং শেষে বাড়ি চলে গেছে আর তুই এখানে বসে বসে এসব আনহেলদি খাবার খাচ্ছিস। যে খাবার গুলা খেলে অসুস্থ্য হয়ে পরিস ঠিক সে গুলাই খেতে ইচ্ছে করে না।

তীর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।

–না মানে আমি আসলে।

–আর কোনো কথা নয় বাড়ি চল।

তীর বাধ্য মেয়ের মতো মাথায় দুলিয়ে উঠে দাড়িয়ে গাড়ির দিকে অগ্রসর হতে যাবে তখনেই নীরা বলে উঠে।

–তীর যাওয়ার আগে বিলটা তো দিয়ে যা প্লিজ।

নীরা এতক্ষন ধরে সুযোগের সৎ ব্যবহার খুজছিলো কি করে ওর টাকাটা বাচানো যায় আর তা পেয়েও গেলে এখন নিজের পকেট থেকে টাকা খরচা হবে না ইশান ভাইয়াই সব দিয়ে দিবে ভেবেই নীরার মন খুশিতে নাচছে। তীর পিছন ফিরে নীরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনেই ইশান বলে।

–কত টাকা বিল এসেছে।

–ভাইয়া সব মিলিয়ে তিনশো দশটা।

–কিহ? তিনশো দশটা বিল এসেছে। কয় প্লেট ফুচকা আর চটপটি খেয়েছো তোমরা।

–ভাইয়া আমরা বেশি খাই‌নি তীরেই‌ বেশি খেয়েছে।

ইশান তীরের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই তীর মুখটা নিচু করে ফেলে। ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–সেটা আমি ভালো করেই জানি।

ইশান পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে পাচঁশ টাকার একটা নোট নীরার হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে।

–বাকি টাকাটা তুমি রেখে দিও।

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–চল।

ইশানের পিছন পিছন তীরও ধীর পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আজকে ওর কপালে দুঃখ আছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। আর ওর মা যদি জানতে পারে তাহলে পিঠের চামড়া আর চামড়া থাকবে না।

____

নীরা চোখ পাকিয়ে রাহুল দিকে তাকিয়ে বলে।

–আমার টাকা ফেরত দে রাহুল।

রাহুল চটপটি খেতে খেতে বলে।

–কিসের টাকা?

–মেজাজ গরম করাবি না রাহুল টাকাটা ভালোও ভালো ফেরত দে।

–আমার কাছে টাকা থাকলে তো তকে টাকা দিবো।

–তার মানে তুই টাকাটা দিবি না।

–উফফ! তুই চুপ করবি কানের কাছে এত বকবক করবি না তো। শান্তি মতো একটু খেতে দে।

–রাহুলের বাচ্চা আমার টাকাটা ফেরত দে না হলে কিন্তু ভালো হনে না।

রাহুল এবার বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে।

–ওই টাকার আশা তুই বাদ দিয়ে নীরা। ওই টাকা তুই আর পাবি না।

বলেই দৌড় মারে রাহুল।

–আমি তকে অভিশাপ দিলাম তুই ‘আব্বা’ ডাক কোনো দিন শুনতে পাবি না দেখে নিস।

–শুকুনের দোয়ায় গরু মরে না।

#চলবে_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে