প্রনয়ের দহন পর্ব-৫৭+৫৮

0
566

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৭(পূর্ণতা)

অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত সাড়ে দশটার দিকে। বাসায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এগারোটা বেজে গেছে। বাড়ির সব মহিলারা চলে এসেছে শুধু রয়ে গেছে পুরুষ সদস্যরা তারা পরে আসবে সব কিছু সামলে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে এসেই যে যার ঘরে চলে গেছে। তবে তীর ঘরে যাওয়ার আগে রেহেলা খালাকে বলে গেছে তাকে কিছু খেতে দেওয়ার জন্য। ভীষণ খুদা পেয়েছে তার অনুষ্টানে ঠিক মতো খেতে পারে নাই তাই এখন না খেলে নিশ্চিত মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। তবে তীর এটা ভেবে পাচ্ছে না তার অল্পতেই এই‌ অবস্থা ইশান এতো স্ট্রং কিভাবে আছে তাকে কিছু খেতেও দেখি নি। তীরের খুব অস্বস্তি লাগছে হাসফাস করছে গরমে তাই ইশানের কথা মাথা থেকে নামিয়ে নিজেকে এখন রিলেক্স করতে হবে তার জন্য এক মাত্র উপায় শাওয়ার নেওয়া। তীর কোন দিক বেদিক না ভেবেই ঢুকে পড়লো ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ার জন্য। শরীরের ঠান্ডা পানি ছুঁতেই চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে মনে হচ্ছে যেন স্বর্গে আছে।

আধ ঘন্টা পর তীর শাওয়ার নিয়ে বের হয়। ভেজা চুল টাওয়ালে পেছাতে পেছাতে সামনের দিকে তাকাতেই থমকে যায় ইশানকে দেখে। ইশান কখন আসলো বলেছে তো আসতে অনেক লেইট হবে তাহলে।

ইশান সবেই ঘরে এসেছে এসেই হাতে রাখা ব্লেজারটা সোফায় রেখে শার্টের দুটো বোতাম খুলে তৃতীয় বোতাম খুলতে উদ্যত হতে নিলে দরজার খুলার শব্দ শুনে সামনের দিকে তাকাতেই নজর আটকে যায়। থেমে যায় শার্টের বোতাম খুলতে থাকা হাতটা। ঘরের মাঝে বিরাজ করছে পিনপিন নিরবতা তবে শুনা যাচ্ছে শুধু দুটো মানব মানবীর ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। ইশানের না চাওয়া সত্বেও একটা ঘোরের মাঝে চলে যায় সদ্য স্নান করা তীরকে দেখে। ঘরের বাতি নিভানো শুধু বাহারি রঙের মরিচ বাতি গুলা জ্বলছে। তীর সাদার মাঝে একটা সিল্কের শাড়ী পড়েছে। শাড়ির পুরো‌ আচঁল কাঁধে রাখাতে তীরের ফর্সা পেট দৃশ্যমান‌ রুপে বেরিয়ে আছে। ইশান শুকনো ঢোক গিলে তীরের এমন আবেদনময়ী রুপে দেখে।

ইশান ধীর পায়ে‌ এগিয়ে যায় তীরের দিকে। ইশানকে এগিয়ে আসতে দেখে ভড়কে যায় তীর। নিজের জায়গা পরির্তন করার আগেই ইশান দ্রুত পায়ে তীরের সামনে এসে হাজির হয়। তীর না চাইতেও পিছিয়ে যায় ইশানের এগোনো দেখে এক পর্যায়ে পিছাতে পিছাতে পিট ঠেকে যায় দেয়ালে। তীর ভয় ভয় চোখে ইশানের দিকে তাকায় ইশান এবার কি করবে তার সাথে ভাবতেই তল পেট মোচরে উঠে। তীরের সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে বড্ড অন্য রকম লাগছে। মনে হচ্ছে স্বজ্ঞানে নেই। উস্কুখুস্কু চুল গুলা সারা কপাল জুঁড়ে পড়ে আছে।

মাঝে মাঝে কয়েকটা চুল বাতাসে উড়ছে। ইশানের শীতল চাওনি দেখে তীরের বুকটা ধ্বক করে উঠে। তীরের ভাবনার মাঝেই অনুভব করে ইশানের গরম হাতের ছোঁয়া নিজের কোমড়ে। অনেকটা সময় শাওয়ার নেওয়াতে তীরের সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। ইশানের ছোঁয়া পাওয়ার সাথে সাথে তীর ইশানের দিকে তাকাতেই তীরকে হেচকা টেনে কাছে টেনে নেয়। এভাবে টান দেওয়াতে চুলে বেঁধে‌ রাখা টাওয়ালটা নিচে পড়ে যায়।

তীরের আজ‌‌‌ কি‌ হলো কে জেনে নিজেও চেয়ে রইলো বেহায়ার মতো ইশানের নেশাতুর চোখে। ডুবে যেত চাইছে এই গভীর নেশাতুর চোখে। ইশান হাত বাড়িয়ে তীরের মুখে পড়ে থাকা ভেজা চুল গুলা আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। ইশানের ছোঁয়া পেয়ে তীর আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। পরপর অনুভব করে এক উষ্ণ নরম ছোঁয়া কপালের মধ্য স্থানে। থরথর করে কাঁপতে থাকা হাত দুটো দ্বারা চেপে ধরে শাড়ি। তীরের বন্ধ করে থাকা চোখ জোড়ায় ইশান নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ধীরে ধীরে তীরের সারা মুখে ইশান চুমুতে ভরিয়ে দেয়। তীরের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে। ইশানের প্রত্যেকটা ছোঁয়া যেন সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। গলা দিয়ে স্বরেই বের হচ্ছে না। ইশানের চোখ যায় তীরের কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে। নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো হাতে স্পর্শ করে করে তীরের ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে তীরের কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতেই দরজায় টোকা পড়ে। রেহেলা খালা এসেছেন। দরজার বাইরে থেকে বলছেন।

–ছোট ভাই জান তীর আপার খাওন আনছি।

ইশান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।

–তুমি দাঁড়া আসছি আমি।

ইশান তীরের দিকে তাকায় তীর এখনও চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেছে। আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। ইশান মুচকি হেসে দরজা খুলে খাবারের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকে টেবিলের উপরে রেখে তীরকে বলে।

–খেয়ে নে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

ইশান টি শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। ইশান চলে যেতেই তীর জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। মনে হচ্ছিলো এতোক্ষন ধম আটকে ম’রেই যাবে বাপরে ইশানের কাছে আর যাওয়া যাবে না। তীরের পেটের খুদা মিলিয়ে গেছে আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ফ্লোরে পড়ে থাকা টাওয়ালটা তুলে চুল গুলো ভালো করে মুজে বারান্দায় চলে যায়।

ইশান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তীর ঘরের ভেতরে নেই। ঘরের লাইট ওন করে খাবার গুলার দিকে নজর দিলো যেভাবে রেহালা খালা দিয়ে গেছে সেভাবেই রয়ে গেছে তীর কিচ্ছু খায় নি। মেয়েটা গেলো কোথায় এতো রাতে? ইশান দরজার দিকে তাকালো দরজা ভেতর থেকেই লক করাই তাহলে ঘরেই আছে তীর। ইশান বেলকনিতে গিয়ে দেখে তীর দোলনাতে বসে ঝিমুচ্ছে। মেজাজটা গরম হয়ে যায় ইশানের ওখানে কিচ্ছু খায় নি আর এখন না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার ধান্দা তা কিছুতেই ইশান হতে দিবে। ইশান তীরের কাছে এসে তীরকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে তীর ভয় পেয়ে চিৎকার করে ইশান তা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–একদম চুপ এভাবে রাত বিরাতে চিৎকার করচ্ছিস কেন? মানুষ জন শুনলে কি ভাববে?

–আমার কি দোষ হঠাৎ করে এমন হওয়াতে ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম।

–ওরে আমার ভয়ের রাণী রে! না খেয়ে কিসের ঘুম?

–খেতে ইচ্ছে করছে না।

–ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে।

ইশান তীরকে নিয়ে ঘরে এসে সোফায় বসিয়ে দিয়ে খাবার পরিবেশন করে বলে।

–নে খা।

তীর অসহায় মুখ নিয়ে বলে।

–বিশ্বাস করুন আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।

–ঠিক আছে তোর নিজের হাতে খেতে হবে না আমিই খাইয়ে দিছে।

ইশান নিজের হাতে তীরকে খাইয়ে দেয়। তীরের খাওয়া শেষ হলে ইশান বলে।

–এতোগুলা ভাত এখন কে খেয়েছে আমি নাকি তুই।

তীর কোনো কথা বলছে না এখন কথা বললেই উল্টে আরো বকা খাবে ইশানের কাছ থেকে। ইশান পুনরায় বলে।

–আমি এগুলো নিচে রেখে আসছিস।

ইশান যেতেই তীর শব্দ করে ঢেকুর তুলে‌ এতক্ষণ ইশানের সামনে এই ঢেকুরটা আটকে রেখেছে লজ্জায়। এবার একটু শান্তি লাগছে শরীরেরও বল পাচ্ছে খেয়ে ভালোই করেছে। ইশানের আসতে একটু লেইট হচ্ছে দেখে তীর ঘরের বাতি নিভিয়ে মরচি বাতির লাইট গুলা জ্বালিয়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

আজকে আকাশে মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেখে যাবে কিন্তু তা তো আর নয় চাঁদ যে বহু দুরে। দুরের জিনিস দুর থেকেই সুন্দর লাগে দেখতে লাগে কাছে আসলেই হয়তো তা বিলিন হয়ে যাবে।

–একা একা কি করচ্ছিস এখানে?

কারোর কন্ঠস্বর শুনে তীর পেছনে তাকিয়ে দেখে ইশান দরজার সাথে হেলান দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। তীর এক পলক ইশানের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো চাঁদের দিকে নজর দিয়ে বলে।

–আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না।

ইশান মুচকি হেসে তীরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।

–হুম আকাশের চাঁদটা অনেক সুন্দর কিন্তু আমার পাশে দাঁড়ানো চাঁদটা থেকে ওই দুর আকাশের চাঁদটা এতোটাও সুন্দর না।

তীর নিঃশব্দে হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।

–আমি এতোটাও সুন্দর না আপনি একটু বেশি বেশি বলছেন।

ইশান কিছুক্ষণ তীরের দিকে তাকিয়ে তীরের বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে।

–জানি না কোন মেয়েটা কেমন সুন্দরী কিন্তু তুই আমার চোখে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী নারী বুঝলি।

তীর এবার লজ্জা পেলো প্রিয় মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগে। ইশান শুকনো ঢোক গিলল নিজেকে আজকে বড্ড দিশেহারা লাগছে গতকালকে নিজেকে সংযত করতে পারলেও আজকে পারবে না মনে হচ্ছে। ইশান ধীরে ধীরে তীরের কপালে নিজের কপাল ঠেকায়। ইশানের তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তীরের সারা মুখে। তীর চোখ বন্ধ করে রেখেছে নিজের।

–তীর!

ইশানের এমন গভীর স্বর শুনে ধ্বক করে উঠে তীরের বুকটা। অদ্ভুত শোনাছে ইশানের কন্ঠ মনে হচ্ছে এক রাশ মাদকতা মিশিয়ে তাকে ডাকছে। তীর মিনমিন করে বলে।

–হুম।

–আমি….. আমি আসলে…

তীরও আনমনে বলে উঠে।

–আপনি?

–তুই যদি সম্মতি দিস তাহলে…. আমি… আমি..

তীরের বুঝতে বাকি রইলো না ইশান কি বুঝাতে চাইছে কিন্তু তীর মুখে কিভাবে বলবে ইশানকে তার যে লজ্জা লাগছে। ইশানের ব্যাকুল স্বরে আবারো শুনা গেলো।

–মুখে বুঝাতে হবে না শুধু ছোট্ট করে ইশারা করে বুঝিয়ে দেয়।

তীর বুক ভরে শ্বাস নিলো। নিজেকে শান্ত করে এবার অশান্ত ইশানকে শান্ত করার জন্য তীরের গালের উপরে ইশানের রাখা হাতে নিজের হাত রাখলো। তীরের সম্মতি বুঝতে পেরে ঝড়ের বেগে তীরকে কোলে তুলে নিয়ে অগ্রসর হয় ঘরের ভেতরে। তীরকে অতি সাবধানে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও আধশোয়া হয়ে নিজের ঠোঁট দ্বারা আকঁড়ে ধরে তীরের ঠোঁট। পাগল হয়ে গেছে যেন ইশান। ধীরে ধীরে ইশানের ঠোঁট নেমে এলো তীরের গলায়। তীরের সর্বাঙ্গ জুড়ে লাজ। কি করবে না করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তীরের হাত অজান্তেই ইশানের মাথার পেছনে চলে গেছে। আস্তে আস্তে দুজনের মাঝ থেকে সরে গেল সকল আবরণ। পারি দিলো এক নতুন ভালোবাসার জগতে। এত বছরের ভালোবাসাযাবে পূর্নতা পেলো।

_______

কেটে গেছে তিন তিনটে দিন। এর মাঝে লিনা জানতে পারলো ইশানের বিয়ের কথা। প্রথমে রাগ হলেও পরে যখন মস্তিষ্ক ঠান্ডা করে ব্যাপারটা ভাবলো তখন মনে হলো শুধু শুধু মোহ’র পেছনে দৌঁড়ে লাভ নেই ইশান তো তাকে ভালোই বাসে না আর বাসবেও না কোনো দিন। হয়তো‌ উপরওয়ালা তার জন্য আরো ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন। তাই লিনা এখন সবটা উপরওয়ালার হাতেই ছেড়ে দিছে।

রাত সাড়ে দশটা তীর পড়ার টেবিলে বসে চুপচাপ পড়ছে। ইশান অফিস থেকে এসেছে দেখেএও কোনো কথা বলছে। ইশানও তেমন পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে ঘরে এসে দরজা লক করে তীরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।

–কি করা হচ্ছে?

তীর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে।

–দেখতে পাচ্ছেন না কি করছি? কানা নাকি!

ইশান মুচকি হাসে তীরের কথা শুনে। মূলত তীরের রাগটা ইশানের উপরে আজকে সকাল থেকে। ইশান আজকে সকাল বেলা বলে দিয়েছে তীরকে এডমিশন নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে। আর ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স যে করেই হোক পেতেই হবে। এমনিতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে এই বিয়ের চক্করে তাই তাড়াতাড়ি করে সব পড়া শেষ করতে হবে। ইশান এমন ভাবে কথাটা বলেছে তীরকে মনে হচ্ছে যেন ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া হাতের মোয়া চাইলাম আর চান্স পেয়ে গেলাম। তীর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিশ্ববিদ্যালয় পড়তে চায় না। ও একটা সরকারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আর্নাস কমপ্লিট করতে চায়। কিন্তু ইশান আর হতে দিলো কই তাকে জোর করে পড়াতে বসিয়েছে।

কিন্তু এবার তো ইশানকে তার রাগ কুমারীর রাগ ভাঙাতে হবে। সারা দিনে দু তিন ফোন করেছিলো ইশান তীরকে কিন্তু বার বার একই কথা বলে ফোন কেটে দিছে যে “আমার এখন পড়া আছে আপনার সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো কোনো মুড নেই আমার”। ইশান নিঃশব্দে হেসে তীরের সামনে থাকা বইটা বন্ধ করে দেয়। তীর তা দেখে রাগী গলায় বলে।

–এটা কি করলেন আপনি? দেখতে পাচ্ছেন আমি পড়তে বসেছি আর আপনি আমার বইটা বন্ধ করে দিলেন কেন?

–আর পড়তে হবে না জান সারা দিন বহুত পড়েছিস। এখন ঘুমাবি চল।

তীর বই মেলাতে মেলাতে বলে।

–আপনার কথায় নাকি, আমি সারা দিন সারা রাত পড়বো। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি ঘুমান গিয়ে।

বলেই বইয়ের দিকে নজর দিয়ে নাক ফুলিয়ে বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলে। ইশানও কম কিসে তীরের পাশে এসে চুপটি করে দাঁড়ায়। কয়েক মুহূর্ত পেরিয়ে যাবার পর তীর ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি হয়েছে এভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

তীর কথাটা বলার সাথে সাথে ইশান কোমড় বাঁকিয়ে তীরকে পাজাকোলে তুলে নেয়। ব্যাপারটা এতো জলদি ঘটেছে তীর বুঝতে পারলো না তার সাথে কি হয়েছে কিন্তু যখন বুঝতে পারলো তখন ইশানের কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করতে লাগলো। ইশান তীরের ছটফটানি দেখে বলে।

–ছটফটানি বন্ধ কর আর অনেক পড়াশোনা করেছিস জান। এবার চল একটু স্বামী সেবা কর।

–এই ছাড়ুন আমাকে না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।

–কর বাড়ির সবাই ভাববে ইশান হয়তো তার পিচ্চি, রাগী বউকে একটু বেশি আদর করছে আজকে।

তীর নাক ফুলিয়ে বলে।

–অসভ্য।

–এখনও সন্দেহ আছে নাকি।

তীর দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–ছাড়ুন আমাকে।

–নো ছাড়াছাড়ি এখন শুধু রোমান্স হবে।

তীরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কোলে রাখা অবস্থায় তীরের মুখ বন্ধ করে দিলো ইশান। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ইশান তীরকে বিছানায় শুয়ে দিতেই তীর বলে উঠে।

–আপনি জানেন আপনি যে একটা সুবিধাবাদী লোক।

ইশান বাকা হেসে ঘরের লাইট অফ করে তীরের কাছে এসে তীরের গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে।

–সত্যিই কি আমি সুবিধাবাদী লোক জান! কিন্তু যদি সুবিধাবাদী লোক হয়েও থাকি সেটা শুধু তোর কাছে আর কারো কাছে না।

বলেই তীরের গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। তীর ব্যথায় আর্তনাত করে উঠলে ইশান মুচকি হেসে কামড় দেওয়া জায়গাটাতে গভীর ভাবে চু’মু খায়। ইশান আবারো তীরকে সাথে নিয়ে ডুব দেয় ভালোবাসার এক আতল সাগরে। যেখানে শুধু রয়েছে পবিত্রতা আর গভীর ভালোবাসা।

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৮

ইশার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে ডাক্তার। ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ড আর ফেমেলি ব্যাকগ্রাউন্ড ইশান আর ইহান যাচাই করেছে কোনো রকম বাজে ইনফরমেশন পাওয়া যায় নি। যেহেতু তীরের ক্ষেত্রে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই ইশান খুব সতর্কতার সহিত ছেলের বিষয়ে সব তথ্য যাচাই বাছাই করেছে। একমাত্র বোন বলে কথা বোনকে কেমন ছেলের কাছে বিয়ে দিবে সেটা তো ভালো করে জানতে হবে যেখানে বিয়ের বন্ধনটা সারা জীবনের ব্যাপার। ছেলের তথ্য জানার পর ফরাজী পরিবারের সবাই মোটামুটি রাজি। কিন্তু এবার ইশার কাছ থেকে জানা দরকার সে কি চায়? তাই সোহেল ফরাজী বসার ঘরে মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইশা এই প্রস্তাবের বিষয়ে কিচ্ছু জানে না। এমনকি তীরও জানে না। ইশা গুটি গুটি পায়ে বসার ঘরে আসে। বসার ঘরে পরিবারের সকল সদস্যকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। কারণ এ সময় ইশান থাকে অফিসে আর ইহান থাকে হসপিটালে তাহলে আজকে কি এমন হলো যে সবাই এক সাথে এমন সময়ে। মনের ভেতরে অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো ইশার। মেয়েকে আসতে দেখে সোহেল ফরাজী বলে।

–বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

–কি কথা বাবা?

–আগে বসো তারপর বলছি।

ইশা বসতেই সোহেল ফরাজী বলা শুরু করেন।

–তুমি এখন বড় হয়েছো ইশা। তোমার নিজস্ব একটা সিদ্ধান্ত আছে। তাই তোমার সিদ্ধান্তটাই আমরা সবার আগে গুরুত্ব দিবো। কিন্তু এটাও মনে রাখবে পরিবারের কেউ তোমার খারাপ চাইবে না তারা সবসময় তোমার ভালোই‌ চাইবে।

ইশা অবাক হয়ে বলে।

–কিসের সিদ্ধান্ত বাবা?

–তোমার বিয়ের।

ইশার বুকটা ধ্বক করে উঠে। তার বিয়ে মানে! কি বলছে বাবা এসব? হঠাৎ করে বিয়ের কথা উঠছে কেন তার? ইশা তীরের দিকে তাকায়। তীরের মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝতো পারলো তীর এ বিষয়ে কিচ্ছু জানে না। ইশা নিজেকে সামলে বলে।

–হঠাৎ করে।

–দেখো মা আজ হোক বা কাল তো‌মাকে বিয়ে দিতেই হবে। আমি তো সারা জীবন মেয়েকে আমার ঘরে আটকে রাখতে পারবো না। মেয়েকে পরের ঘরে যেতেই হবে এটাই নিয়ম। ভালো একটা প্রস্তাব এসেছে তোমার জন্য ছেলে‌ ডাক্তার। ছেলে আমাদের সকলের পছন্দ হয়েছে। এখন তুমি যদি চাও তাহলে কালকে তারা আসবে তোমাকে দেখতে।

ইশা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না। সে এখন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। সব যেন কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে চোখের সামনে। বুকের বা পাশটা অদ্ভুদ এক যন্ত্রণা অনুভব করছে। বাবাকে মুখ ফুটে কি করে বলবে সে যে রিফাতকে ভালোবাসে। এতোটাও সাহস নেই ইশার এই কথাটা বলার তার বাবাকে।

ইশাকে মৌন থাকতে দেখে ইহান বলে।

–ইশু কিছু বল?

ভাইয়ের কথায় ইশার ধ্যান ভাঙ্গে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে।

–তোমরা যা ভালো মনে করবে তাই করো।

–ভেবে বলচ্ছিস তো?

এতক্ষণ পরে ইশান তার মুখ খুলে। ইশান এতক্ষণ বসে শুধু বোনকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে গেছে। বোনের চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বিয়ের কথাটা শুনার পরপরেই বেদনার চাপ। ইশা ভাইয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে সাথে সাথে নিচের দিকে নজর দিয়ে বলে।

–হুম।

–ঠিক আছে যা। আর কালকের জন্য নিজেকে তৈরি কর।

ইশা উঠে দাঁড়ায়। এতোটুকু জায়গা মনে হচ্ছে যেন হাজার হাজার মাইল। পা দুটো ভেঙ্গে আসছে। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। তীর ইশার অবস্থা বুঝে নিজেই এগিয়ে এসে ইশাকে নিয়ে ঘরে যায়। ইশার ঘরে আসতেই তীর দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে।

–রিফাত ভাইয়াকে কল কর এক্ষুনি।

ইশা ধপ করে ফ্লোরে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে। তীর দ্রুত পায়ে ইশার পাশে বসে বলে।

–যেটা বলছি সেটা কর রিফাত ভাইয়াকে সবটা খুলে বল। এখন একমাত্র ভাইয়াই ভরসা। ওনি এই বিষয়টা জানলে নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারবে।

–মানবে না কেউ আমাদের এই সম্পর্কটা আমি জানি।

–মনে হচ্ছে তুই ভবিষ্যৎ দেখে নিয়েছিস। আর মানবে না কেন রিফাত ভাইয়ার মতো একটা ভালো ছেলে তোর জন্য খুজে পাবে না কেউ। আর ওনার মতো তোকে কেউ ভালবাসবে না।

–কিন্তু ভাইয়া যখন জানতে পারবে এই বিষয়টা তখন ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়ার মাঝের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যদি নষ্ট হয়ে যায়।

–এমনটা কিচ্ছু হবে না আমি বুঝাবো ইশান ভাইয়াকে। তুই রিফাত ভাইয়াকে বল সবটা আগে।

–খুব ভয় করছে তীর।

তীর ইশার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে।

–এখানে ভয় পাওয়ার কিচ্ছু হয় নি। মনকে শক্ত করে রিফাত ভাইয়াকে কলটা কর আর আমি ওনার সাথে কথা বলবো। ওনি অবশ্যই বুঝবে বিষয়টা।

–হুম।

______

তীর রুমে এসে দেখে ইশান মুখ গম্ভীর করে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো একটা কারণে প্রচুর বিরক্ত হয়ে আছে। কিন্তু তীরকে যে করেই হোক রিফাত আর ইশার ব্যাপারটা বলতে হবে না হলে যে তিন তিনটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।‌ তীর ভয়ে ভয়ে ইশানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে।

–আপনার সাথে কিছু কথা আছে?

ইশান কাজ করতে করতে বলে।

–এখন না পরে শুনবো এখন বিজি আছি ।

–খুব ইম্পর্টেন্ট কথাটা যেটা আপনাকে এক্ষুনি বলতে হবে আমায়।

–বলচ্ছি তো পরে শুনবো।

–এখন শুনলে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে আপনার।

ইশান হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে রেগে বলে।

–একটা কথা তোকে কত বার বলতে হয় হুম দেখতে পারছিস না আমি এখন বিজি আছি।

তীর বিস্মিত নয়নে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে সে কি এমন বলল যে ইশান এতে এতো রেগে গেলো। জাস্ট একটা কথাই তো বলতে চেয়েছে তার জন্য এতো রাগার কি আছে। ইশান জোর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–যা এখান থেকে আমাকে একটু একা থাকতে দে প্লিজ।

তীর কিছু না বলেই ঘর থেকে চলে যায়। তার সাথে অযথাই রাগ দেখলো তো ইশান। ঠিক আছে আজকে আর এই ঘরে সে আসবে না কিছুতেই না থাকুক সে একা পারলে সারা জীবন একা থাকুক কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। তীর চলে যেতেই ইশান সোফাতে বসে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে দুহাত দিয়ে ঘামছে ধরে মাথার চুল। মাথাটা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।

ইশান সবটাই জানে ইশা আর রিফাতের সম্পর্কের ব্যাপারে। প্রথম দিকে সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু সবটা নিজের মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু যখন বুঝতে পারলো এটা তার মনের ভুল নয় বরং এটা সত্যি তখন প্রচুর রাগ হয়েছিলো। কিন্তু যখন গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখলো এই ভালোবাসা নামক অনুভতি কারো হাতে নেই তখন রাগটা কমলো রিফাতের প্রতি। কিন্তু ইশান এটা চায় না অন্য কারোর মাধ্যমে সে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানতে। ইশান চায় রিফাত নিজে এসে ওর কাছে সবটা স্বীকার করুক যে রিফাত ইশাকে ভালোবাসে। এতো দিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কি রিফাতের এতো টুকু বিশ্বাস নেই ইশানের উপরে। এতোটা অবিশ্বাস করে ইশানকে যে এই কথাটা লুকিয়ে গেছে। তাই ইশানও দেখতে চায় রিফাত কি করে ইশার বিয়ের খবরটা জানার পর।

_____

তীর থমথমে মুখ নিয়ে ইশার ঘরে ঢুকে দেখে ইশা‌ বেলকনিতে আর কান্না করতে করতে ফোনে কথা বলছে রিফাতের সাথে। তীরের খুব খারাপ লাগছে ইশার জন্য বেচারির অবস্থা এখন তার মতো হয়ে গেছে। আহারে ভালোবাসা সত্যি খুব অসহায়। ইশা ভাঙ্গা গলায় বলে।

–আমি এই বিয়ে করবো না কিছুতেই না।

ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে রিফাত বুঝানোর স্বরে বলে।

–করতে হবে না তোমাকে এই বিয়ে। তোমার বিয়ে আমার সাথেই হবে ইশা।

–কিন্তু কি করে? কেউ যদি মেনে না নেয় তখন।

–তখন এটা তখন দেখা যাবে। এখন শান্ত হও আর কান্না বন্ধ করে আমার কথাটা শুনো মন দিয়ে।

–হুম।

–কালকে আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে আসবো তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

–ভাইয়া যদি রাগারাগী করে।

–করুক রাগারাগী কিন্তু আমি এই জীবনে তোমাকে ছাড়ছি না।আমার জীবনে তোমরা দুজনেই অনেক ইম্পর্টেন্ট। এই দুজনকে ছাড়া সত্যি আমি থাকতে পারবো না। আমি ইশানকে বুঝাবো আমার সর্বস্ব দিয়ে ওকে বুঝাবো। এই‌ কাজটা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিলো। কিন্তু উপরওয়ালা হয়তো তখন চান নি কিন্তু এখন চেয়েছেন এটা সামনে আসুক।

–সত্যি কালকে আপনি আসবেন।

–হুম আসবো আর নিজেকে প্রস্তুত করেও রেখো এই রিফাত সিকদারের স্ত্রী হওয়ার জন্য।

বলেই কেটে দেয় রিফাত কলটা। ইশা ফোনটা বুকের মাঝে চেপে ধরে। কালকে তার ভাগ্যে কি আছে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না কেউ না। নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে দেখে তীর অসহায় মুখ নিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। তীর তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–ওনি আমার কথা শুনতে চায় নি। উল্টে অযথা রাগারাগি করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।

ইশা নিঃশব্দে হেসে বলে।

–সমস্যা নেই। ভাগ্যে যা লিখা আছে তাই হবে। তোরও তো বিয়ে হয়ে যাবে হয়ে যাবে অন্য জনের সাথে কিন্তু ভাগ্যের চাকা কি করে উল্টে গেলো দেখ আর তুই এখন ভাইয়ার বউ হয়ে গেলি। হয়তো আমারও ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতে পারে।

হঠাৎ করেই ইশানের কন্ঠস্বর ভেসে আসে। ইশান এসেছে আর এসেই তীরকে ডাকছে। তীরকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশা বলে।

–ভাইয়া এসেছে যা।

তীরের কোনো হেলদোল নেই। ইশা আবারো বলে।

–কি হলো যা? ভাইয়া ডাকছে তোকে।

তীর ইশার দিকে এক পালক তাকিয়ে হনহন করে ঘরের বাইরে যেতেই ইশানের মুখোমুখি হয়। তীরকে দেখে ইশান বলে।

–রুমে চল।

–কেন? একটু আগে আপনিই তো ঘর থেকে বের করে দিলেন এখন রুমে যেতে বলছেন কেন?

–এতো কথা না বলে চুপচাপ ঘরে চল।

–যাবো না কি করবেন?

–তীর রাগাস না আমাকে। তাই চুপচাপ ঘরে চল কোনো সিনক্রেট না করে এই রাতবিরাতে।

তীর নাক ফুলিয়ে কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলে না। এই‌ লোককে এখন তার অসহ্য লাগছে। দু চোখের বি*ষ লাগছে। তাই কিছু না বলেই হনহনিয়ে চলে যায়। ইশানও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেও ঘরে চলে যায়।

ঘরে ঢুকে দেখে তীর ঘরে নেই বুঝতে পারলো বেলকনিতে তার অভিমানি প্রেয়সী আছে। ইশানও বেলকনিতে গিয়ে তীরের পেছনে ছুঁইছুঁই হয়ে দাঁড়ায়। তীর ইশানের আভাস ঢের পেয়েও কিচ্ছু বলে না, মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশান গলা‌ খাকারি দিয়ে বলে।

–খুব রাগ আমার উপরে।

তীর নিশ্চুপ। কোনো কথা বলছে না। কেন বলবে সে এই‌‌ লোকের সাথে কথা? সবসময় ইশান তার উপরে রাগ দেখায়। এবার না হয় ও একটু রাগ দেখাক ইশানের উপরে। ইশান পুনরায় বলে।

–কি হলো কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো‌‌ আমি।

তীর রাগী গলায় বলে।

–আমি কারোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।

ইশান মুচকি হেসে তীরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই‌ তীর তড়িৎ বেগে বলে।

–এই ছাড়ুন আমাকে একদম টাচ করবেন না।

তীরের কথা শুনে ইশান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তীরকে। ইশান তীরের কানের কাছটায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–সরি।

তীর ইশানের পেটে কুনই দিয়ে গুতো মেরে বলে।

–আপনার কলার ছড়ি‌ আপনার কাছেই রাখুন সযত্নে। আমাকে দিতে হবে না।

–তোর রাগের কারণটা কিন্তু‌ আমি জানি আর একটু আগে কি বলতে চেয়েছিলি সেটাও‌ জানি।

–কচু জানেন আপনি। যদি জানতেন তাহলে এভাবে বসে থাকতেন না কিছু একটা করতেন।

–কি করতে বলছিস তুই আমাকে?

তীর ইশানের দিকে ফিরে বলে ইশানের পেটের উপরে দু হাত রেখে বলে।

–সত্যি আপনি জানেন রিফাত ভাইয়া আর ইশুর ব্যাপারে।

ইশান মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝায়। তীর তা দেখে বলে।

–কি করে জানলেন?

–সেটা তোর না জানলেও চলবে।

–যদি জেনেই থাকেন তাহলে এভাবে চুপ করে আছেন কেন? বাড়ির সবাইকে বলে দেন কথাটা। ইশা কষ্ট পাচ্ছে খুব।

–তুইও কি কষ্ট পাচ্ছিস ইশুর পাশাপাশি।

–হুম।

–কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।

–আপনি চাইলেই কেষ্টটা মিলে যাবে। আর রিফাত ভাইয়া তো কত্ত ভালো একজন মানুষ। ইশুকে খুব ভালোবাসে। আর দেখতেও কত্ত সুন্দর আর হ্যান্ডসাম।

ইশান ভ্রু কুচকে সরু চোখে তাকালো তীরের দিকে। তীর ইশানের এমন চাওনি দেখে বুঝলো সে বেফাস কথা বলে দিয়েছে‌ এবার এর থেকে নিস্তার কি করে পাবে? কেন যে মুখটা এতো বেশি চলে তার। যেখানে যেই কথাটা বলা দরকার নেই সেখানেই সেটা বলে দেয়। তীর মেকি হাসি দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান মুখে হাসি রেখে বলে।

–রিফাত খুব সন্দর আর হ্যান্ডসাম তাই না।

–নাহ…. মানে…. আমি এভাবে বলতে চাই নি।

ইশান তীরের কোমড় ধরে নিজের কাছে এনে বলে।

–নেক্সট টাইম তোর মুখে অন্য কোনো পর পুরুষের প্রশংসা যেন না শুনি আমি‌ বুঝতে পেরেছিস।

–হুম।

–আর রইলো ইশু আর রিফাতের ব্যাপারটা। চাইলেই আমি সবাইকে সবটা বলে দিতে পারতাম কিন্তু না আমি দেখতে চাই‌ রিফাত কি করে? কত দূর পর্যন্ত রিফাত যেতে পারে? কি করে সবাইকে হ্যান্ডেল করে। ও যেহেতু আমাকে‌ এই বিষয়টা আগে জানানোর প্রয়োজনবোধ করে নি তাহলে‌ আমি কেন ওকে হেল্প করবো। তাই যা করার ওকে নিজেই করতে হবে। তবে ওদের দু জনের পাশে আমি থাকবো অলওয়েজ।

তীর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ইশান যে ওদের পাশে আছে এটা শুনে। কিন্তু আগামীকাল যে ফরাজী ভিলাতে একটা ভয়াবহ টর্নেডো আসতে চলেছে সেটা খুব ভালো করেই জানে।

#চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে