প্রতারক part 2

0
2020

প্রতারক part 2
#Roja_islam

কথা শেষ হতেই ছেলেটা আমার কাছে এসে দু হাতে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো। পেটে কোমরে হাত বুলাতে লাগলো। ঘটনা আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে গেলেও পেটে ছেলেটার হাতের স্পর্শ পেটে পেয়ে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
— ছাড়ুন কি করছেন!! ছাড়ুন বলছি অসভ্য ছেলে কোথাকার!!!
.
দু হাতে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টায় আমি বারবার ব্যর্থ।ক্রমশ নড়াচড়া করে যাচ্ছি তাতেও লাভ হচ্ছেনা।আমি এবার শব্দ করে কেঁদে দেই। আর সাথে সাথেই ছেলেটা আমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। আমি ছাড়া পেয়ে ১ সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিচে এসে পড়ি।রুমে ঢুকে কাঁদতে থাকি। মা আমায় রুমে এভাবে ঢুকতে দেখে দৌড়ে আসে লাইফে ফার্স্ট টাইম আমি মাকে ধরে কেঁদে দেই।
— কি হয়েছে হীর বল আমাকে। কাঁদছিস কেনো কই গিয়েছিলি তুই??
— মা আমার সাথেই কেনো এমন হয়??
— কি হয়েছে বলবি তো!!
— এই বিল্ডিং এ নতুন কেউ এসেছে মা!
— কেনো কেউই তো আসেনি!! কেনো রে মা!
— এমনি!! তুমি যাও।
.
মাকে রুম থেকে জোর করেই বেড় করে দিলাম। সারা সন্ধ্যা কেঁদেই কাটিয়ে দিলাম। ছেলেটার আচরণ এ কিছু বলতে না পারলেও মেনে নিতে পারছিলাম না। আবারো দু দিন বাসা থেকে রুম থেকে বেরুলাম না। কিন্তু সামনে ফাইনাল এক্সাম তাই ভার্সিটি যেতেই হবে।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমরা ৪ তালায় থাকি।বাড়ীটায় লিফট সিরি দুটাই আছে। আমি লিফটে উঠে পড়লাম ৩০ সেকেন্ড পরে ৩ তালায় লিফট থামলো। আর সাথে সাথে সেই ছেলেটা লিফটে ঢুকে পড়লো। চরম অসস্তি আর ঘৃণা আমাকে ঘিরে ধরলো। খুব রাগ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো কটা কড়া কথা শুনিয়ে দেই কিন্তু আমি!! আমার ধারা এসব সম্ভব না। আড়চোখ এ একনজর ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখি ছেলেটা আমার দিকে সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কেমণ যেনো সেই চাহনি আমার ভয় ভয় লাগে। রাগ হলো কিছু বললাম না এসব থার্ডক্লাস ছেলেদের কিছু বলেও লাভ নেই। এদের যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া ভালো!!! লিফট নিচ ফ্লোরে থামলে আমি যেই বেরুতে নিবো ওমনি ছেলেটা আমার হাত ছ্যাঁচকা টেনে তার বুকে উপর ফেললো। তারপর দু হাত আমার গালে রেখে শব্দ করে কপালে চুমু খেলো।তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো জেনো সে কিছুই করে নি!! বিষণ রাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম লিফট থেকে।কে এই ছেলে জানতেই হবে বিচার দিতে হবে ভাইয়ার কাছে। এভাবে তো আর চলে না। কে জানে ফাজিল ছেলে কখন কি ক্ষতি করে বসে।
.
ভার্সিটি চলে এলাম কোনো মতে। ৪ তালায় আমাদের ক্লাস আমিও ধীরেসুস্থে হেটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার মুখচোখ লাল হয়ে গেলো।দ্রুত শ্বাস ফেলছি হাত পা চলছে না। শিহাব কিছুদূর সামনে দাঁড়িয়ে চোখে পানি চলে আসছিলো। কোনোমতে আটকিয়ে উপড়ে আসলাম। ক্লাসে আর মন দিতে পারছিলাম না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিলো। ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে গেলেও আমি বসে রইলাম চিন্তা করলাম এক্টু রিলেক্স হয়ে তারপর বের হবো। দু হাতে বেঞ্চে রেখে মুখ ঢেকে বসে ছিলাম। কাউর কথায় সামনে তাকালাম।
.
— অনেক তো হলো হীর এবার একটা চ্যান্স দেওয়া যায় না আমায়??
— তুমি কেনো আমার পিছন পড়ে আছো লনি?? প্লিজ স্টে আওয়ে ফ্রোম মি!
— নেভার হীর নেভার!! তুমি টাইম চেয়েছিলে আমি দিয়েছি!! বাট এখন এসব বলে আমায় রাগাচ্ছো তুমি এর ফল তুমি পাবে!!
— তুমি যা খুশী করো আই ডোন্ট ক্যায়ার লনি। জাস্ট আমার পিছু ছাড়ো। আমি কোনো দিন তোমার সাথে কোনো রিলেশন এ যাবো না কেনো বুঝতে চাও না তুমি??
— আর একবার জিজ্ঞেস করছি!! ক্যান ইউ এক্সসেপ্ট মি??
— মরে গেলেও না!!
— ওকে ফাইন এবার তুই আমার আসোল রুপ দেখবি। তোর মতো মেয়েকে কি করে বস করতে হয় আমি তা ভালো করেই জানি।খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে!!
.
.
লনি চলে যায়।আমি ঐ ছেলের কাজে আর লনির কথায় রেগে এতো গুলী কথা বললেও আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে। প্রচণ্ড ভয় করছে। শিহাব কে খুব মনে পড়ছে আজ শিহাব আমার সাথে এমন না করলে লনি এসব করতে পারতো না কখনোই।শিহাব সব সময় আমাকে হেল্প করেছে লনির পাগলামো থেকে বাচতে কিন্তু আজ একা করে অন্য কাউকে নিয়ে সুখেই আছে।আচ্ছা প্রতারক রা এতো সুখি হয় কি করে?? আমি কোনো রকম চলে আশি। আসার সময় ও আমি শিহাব কে দেখতে পাই ছুটে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু শিহাব আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি!! কতো নিষ্ঠুর শিহাব ভাবতেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।
.
আজ এক্টু বেশী অসহায় লাগছে নিজেকে। ফোন হাতে নিয়ে কল দিলাম শিহাব কে তুললো না। সারারাত ই কলের উপর কল দিলাম তুললো না!!
.
.
— নিতু?
— বলো!!
— হীর ফোন দিচ্ছে আমাকে ধরবো??
— একদম না।
যত্তসব ছ্যাঁকা খেয়ে হয়নি এখন বকা খেতে মন চাইছে এই ফালতু মেয়ের।
— দেখোনা ডিস্টার্ব করছে!!
— বল্ক করে দাও!!
— ওকে!!
.
.
কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি একসময়। সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় ঐ ছেলেটা দেখি বাইকে বসে আমার দিকে সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেনো এই ছেলে তাকিয়ে থাকে এভাবে মাথায় আসেনা।চরম বিরক্তি হয়ে ভার্সিটি চলে এলাম ক্লাস শেষ করে করে বাসায় ফিরবো কোনো রিকশা পাচ্ছিনা।তাই হাটছিলাম একা একা হঠাৎ কই থেকে এক মাইক্রো থামলো একদম আমার গা ঘেসে আর আমি পাশ ফিরে তাকানোর আগেই। কেউ আমার হাত টেনে তুলে নিলো গাড়ীতে। আমি চিৎকার করতে যাবো। মুখে কি স্প্রে করলো আর আমি সিটে লুটিয়ে পরলাম। আর কিছু মনে নেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো।
.
জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম হাত পা বাধা একটা বেডে পড়ে আছি।বুঝতে বাকী নেই কেউ ইচ্ছে করে তুলে এনেছে।কিন্তু এই জঘন্য কাজ কে করবে?? ভয়ে আমি চিৎকার করতে লাগলাম।
— কেউ আছেন এখানে?? প্লিজ হেল্প করুণ….!
.
আমি আর কিছু বললার আগেই কেউ ঝড়ের বেগে এসে আমার গালে ঠাশ করে পাঁচ আঙুল এর ছাপ বসিয়ে দিলো। এতো জোরেই ছিলো থাপ্পড় যে আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে গেলো। কানে ঝিনঝিন করতে লাগলো। আমি অনেক কষ্টে মাথা তুলে দেখি লনি!! ওকে দেখে আমি কেঁদে দিলাম।
— ছিঃ লনি এই জঘন্য কাজ টা তাহলে তোমার?? আমি ভাবতে পারছি নাহহ!!
— হ্যাঁ আমি বলেছিলাম না। এবার আমার খারাপ রুপ টা দেখতে পাবি তুই??
— প্লিজ লনি আমাকে দেতে দাও। ভালো হবে না বলছি এর ফল!!
— কি করবি তুই তোর আশিক ও এবার তোকে বাঁচাতে আসবে না। আর এখানে তোকে বাঁচানোর মতো আপাদত কেউ আসবে না।যতক্ষণে আসবে তোতক্ষনে আমি যা চাই তা ঠিক আদায় করে করে নিবো তোর থেকে।
.
লনির এসব কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।বুঝতে পারছি আরো জঘন্য কাজ করতে চাইছে লনি আমার সাথে। কি করে বাঁচবো লনির হাত থেকে মাথায় আসছেনা। তাই মিনুতির স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
— প্লিজ লনি ছেড়ে দাও। আম সরি!!
— নো নো….নো সরি! আজ কেনো সরি বলছিস?? কম ঘুরিনি আমি তোর পেছনে। কিন্তু আজ আর কোনো ঘুরাঘুরি নেই তোর রুপের অহংকার আজ আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিবো।
— প্লিজ….
.
আর কিছু বললার আগেই লনি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।ঠিক তখনি ঠাশ করে দরজা খুলার শব্দ হলো। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছি। লনি আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দেখার জন্য কে দরজা খুলেছে। আমিও সুযোগ পেয়ে উঠে বসে হাত পা গুটিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই। আমি অবাক সেই ছাদের ছেলেটা দরজায় এক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আপন মনে সিগেরেট খাচ্ছে মাথা নুইয়ে।আমি এক্টু ভরসা পেলাম ছেলেটাকে দেখে নিশ্চয় আমাকে বাঁচাতে এসেছে। লনি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো ছেলাটাকে দেখে। তারপর বললো।
— তুই কে এখানে কি করে এলি? যা এখান থেকে ইঞ্জয় টাইম নষ্ট করবিনা।?
.
এবার ছেলে মাথা তুলে যা বললো। তা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আর জীবনে কাউকে ভরসাও করবোনা বলে মুহূর্তেই ঠিক করে নিলাম। কারণ ছেলে টা আমার ভরসায় পানি ঢেলে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
— আরে তারিয়ে দিচ্ছো কেনো?? এসেছি তোমার সাথে ইঞ্জয় করতে দু জন মিলে ইঞ্জয় করি?? কি বলো!!
.
ছেলেটা কথার জবাবে লনি বিস্রি একটা হাসি দিলো তারপর দুজনি আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি চিৎকার করে কাঁদছি।
.
.
চলবে?
[কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবা সবাই।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন এডিট করিনা আমি গল্প তাই ভুল এক্টু বেশীই হয়।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে