প্রণয়িনীর হৃদয়কোণে পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
1564

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| পনেরো তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

” বাসর কাকে বলে তুমি জানো আয়মান?”

বাসর তো বাসরই। এর আবার পরিচিতি আছে নাকি? আমি ছোট ক্লাসে পড়ি তাই হয়তো জানি না। সাদা কইতরকে জিজ্ঞেস করতে হবে। পাল্টা প্রশ্ন করলাম,
” বাসর কি পুরো পৃথিবী ঘুরে ঘুরে করতে হয়?

সাদা কইতর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আহারে! চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে খায় না। পথশিশুদের মতো দাঁড়িয়ে খাবার চাইছে। আমার তো ইচ্ছে করছে দুইটা আলু নিয়ে সাদা কইতরের হাতে দিয়ে বলতে,
“কাঁদে না বাবু!
এই নাও আলু,
খাবে তুমি কদু
মশা হবে বন্ধু।”

পৃথিবী অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। আসমানও অন্ধকার কিন্তু তার বুকে তারকারাজিগুলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে জমিনে অবস্থিত মানুষদের আনন্দ দিচ্ছে। আমিও খুব আনন্দে আছি। সাদা কইতরের সাথে বিয়ে হয়েছে বলে জ্বালিয়ে মা’র’ছি। সাদা কইতর গ্লাসের পর গ্লাস পানি পান করছে। এদিকে আমি দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছি। সাদা কইতর পাশে এসে দাঁড়ায়। আমার হাতে হাত রেখে বলে,
” এভাবে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করা উচিত হয়নি। আমি জানি তোমার মনে এই নিয়ে কোন ভয় ভীতিও নেই। তবে একটা কথা আয়মান! আমাদের এই সম্পর্কের কথা কাউকে জানাতে হবে না। তুমি স্বাধীন, যেভাবে ইচ্ছে চলাফেরা করতে পারবে। আমি শুধু মনকে শান্ত করার জন্য তোমাকে আমার করে নিলাম।”

এই যে, এই যে সাদা কইতর আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। তারমানে নেশাও কেটে গেছে। এবার আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো। হুঁশে থাকলে সাদা কইতরের ডানা মেলবে না। মনের সংশয় দূর করার জন্য সাদা কইতরকে প্রশ্ন করলাম,
” সাদা কইতর তোমার নেশা দেখছি কেটে গেছে!”
সাদা কইতর ভ্রু যুগল কুঁচকে নিল। কিছু একটা ভেবে বলল,
” আমি কখন বেহুঁশ ছিলাম?”

যা ভেবেছিলাম তাই। নেশা চলে গেছে তাই সব ভুলে গেছে। এবার দেখা যাবে বিয়ের কথাও সাদা কইতরের মনে নাই। দেখা গেল আমার কিছু বলতে হয়নি সাদা কইতর আবারো বলছে, ” তুমি কি কোনভাবে আমাকে নেশাখোর মনে করছো?”

এবার সাদা কইতরকে উচিত জবাব দিব। প্রস্তুতি নিয়ে নিল। কিছু করতে আসলেই ব্যাটাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে দিব। সাহস করে বললাম,

” নেশাখোর মনে করিনি। চাক্ষুষ নেশা করতে দেখেছি। কয়েকঘণ্টা আগেই তো সাদা বাংলা মা’ল খেলেন।”

সাদা কইতর বোকার মতো আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জোরে জোরে হাসা শুরু করল। আমি বোকাপাখির মতো সেই হাসি দেখছি। সাদা কইতর কোনরকম হাসি থামিয়ে বলে,
” আমার চঞ্চলপাখি। উড়ন্ত মনে, দুরন্ত মস্তিষ্কে জোর দিয়ে ভাবতে থাকো। ততক্ষণে আমি মনে খুলে হেসে নেই।”

সব সময় বাড়াবাড়ি। এতো প্যাচানোর কি আছে? আমাকে সুন্দর করে বলে দিলেই তো হয় যে, সে সত্যি সত্যি নেশা করেছিল। কিন্তু না প্যাচাতেই হবে? আমি মুখ খুলে বললাম,

” এভাবে হাসছে কেন যা সত্যি তাই তো বললাম।”

” আমরা সব সময় চোখে যা দেখি তা সত্যি নয়। আমি নেশা করলে তোমার সামনে করতাম না। তোমার আড়ালে করতাম, আমার বোকা পাখি!”

“মানে?”

” বিগত দুই দিন বন্ধুদের সাথে থেকে খাবারের প্রতি কিছু অনিয়ম হয়ে গিয়েছিল যার জন্য পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। ট্যাবলেটের দ্বারাও ঠিক হচ্ছিল না। তাই আবরার লিকুইড ওষুধ টা নিয়ে আসে। তার ধারণা এ লিকুইড সাদা ওষুধ পান করলে গ্যাস্টিকের প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে।”

এই যাহ! ভাবলাম কি! আর হয়েছে কি। সাদা কইতর সবসময় সব দিক দিয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে ফেলে। এখন তো আমার ইচ্ছে করছে লজ্জায় টমেটোর মতন গোল হয়ে বসে থাকতে।

সাদা কইতর এখনো হাসছে। এদিকে আমি মুখ ঢেকে বিছানার উপর বসে আছি। এমন লজ্জা আমি অহরহ পেয়েছি সাদা কইতরের কাছ থেকে কিন্তু আজকের বিষয়টা অন্যরকম। আমি ভাবছি সাদা কইতরের কথা, তার মানে সাদা কইতর স্ব-ইচ্ছায় সজ্ঞানে আমাকে বিয়ে করেছে কিন্তু আমার বাবা এবং ভাইয়া! তাদের না জানিয়ে আমি বোকার মত এমন একটা কাজ করে আদৌ কি ঠিক করেছি?

” হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। তোমার দ্বারা যে এসব উল্টাপাল্টা কাজ এবং ভাবনা সম্ভব তা সকলেরই জানা আছে।”

আমার সামনে বসে সাদা কইতর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল এরপর হাতে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে মনে মন দিয়ে বলল,
” আমি জানি, আমি এখন যে কথাগুলো বলব সে কথাগুলো তোমার মস্তিষ্কে ধারণ করতেও পারবে না।তবুও বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়মান! কীভাবে ভালবেসেছি নিজেও জানিনা। আমি শুধু জানি, তোমার এই দুষ্টু মিষ্টি পাগলামি আমি প্রতিনিয়ত দেখতে চাই। অনুভব করতে চাই তোমার এক একটা কথার মর্মার্থ।”

” আমি সব বুঝি। ”

এই যে সাদা কইতর আগের ফর্মে চলে এসেছে। এখন শুরু হবে তার কঠিন কঠিন ভাষণ। যা আমার বুঝতে লাগবে হাজার, সহস্র সাল। মনের প্রশ্ন মনে রাখার মেয়ে আমি নই। উনার কাব্যকথনে একটু বাম হাত ঢুকিয়ে দিলাম,

” তুমি যে আমাকে বিয়ে করেছ, তোমার বাবা মা জানলে তোমাদের ছাদে সত্যি সত্যি এবার কবুতরের ঘর বানিয়ে তোমাদে সেখানে সাজিয়ে রাখবে। ঘরে আর ঢুকতে দিবে না।”

সাদা কইতর গা ছেড়ে আমার কোলে মাথা রেখে বলে,

” আপাতত জানাবো না। তুমিও জানাবে না। আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থাকব। সময় হলে জানিয়ে দেব।”

” আমি জানিয়ে দিব। বাবাকে কিছু না বলে আমি কোনদিনও থাকতে পারিনি।”

” জানালে তোমাকে ডাবল শাস্তি দিব আয়মান রানী! প্রতিদিন রাতে তোমার ঘরে এসে ভয় দেখাব। এরপর অকাজ করব যেগুলো তুমি আজ ভেবেছো সেগুলো করব।”

খচ্চর বেটা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে তাই না! একে যদি আমি নাকে মুখে চুবানো না খাওয়েছি তো আমার নাম আয়মান তুবা না। আমাকে ভাবতে দেখে সাদা কইতর আবারও বলে,

” এত কি ভাবছো মন পাখি! আমার মাথার চুলগোলো একটু টেনে দাও তো। মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে।”

” পাশের ড্রয়ার থেকে কে’চি এনে কে’টে দেই! তাহলেই তো আর চুল ধরে টানতে হয় না।”

কয়েক সেকেন্ডে সাদা কইতর অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেলল। আর সেই কাজটা কী জানতে চান তো? আয়মান তুবার মুখ বন্ধ করার জন্য সাদা কইতর কুটুস করে নাকে কামড় বসিয়ে দিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে চোখ বন্ধ করে রইলো। ভদ্র বাচ্চার মতো। আমি হতভম্ব হয়ে আছি। যতটুকু বুঝেছি, আজ আদেশ পালন করতে রাত পাড় করতে হবে।
——————————-

সারারাত সাদা কইতর ঘুমিয়েছে কি না জানি না। তবে আমি ঘুমিয়েছি। নরম তুলতুলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়েছি। এত ভাল ঘুম আমি কখনো ঘুমাইনি। ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই। তবে আরামের বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। উপুড় হয়ে শুয়ে পা নাচাচ্ছি মূলত শরীরের অলসতা দৃর করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু অসফল হচ্ছি। চোখের সামনে ভাসছে গতকালের ঘটনা। সাদা কইতর কত কিছু করল। আকস্মাত পায়ের তলায় সুড়সুড়ি লাগায় লাফিয়ে উঠি। সাদা কইতর নায়ক সেজে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসছে।

” শরীরের অলসতা এবার দূর করেন মহারাণী। সারারাত এত বড়ো বিছানা দখল করে ঘুমিয়েছেন। আমি বেচারা সোফায় রাত কাটিয়েছি। ইতিহাসে রেকর্ড থাকবে এমন বাসরের।”

” লাউয়ের সাথে কচু মিলিয়ে তোমাকে খাওয়ানো উচিত সাদা কইতর। ”

” বাসায় যেতে চাইলে উলটা পালটা ভাবনা বাদ দিয়ে তৈরি হও। বাহির থেকে সবকিছু ঠিকঠাক করে আসছি।”

সাদা কইতর চলে গেল। বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে পুরা ঘরে নজর ঘুরালাম। দুইজন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আমি ভাবছি, এক রাতও ভালভাবে থাকা হলো না। অথচ রিসোর্টের লোকেরা এত এত টাকা রাখবে! ফ্রি ফ্রি দিতে এই তুবা রাজি না। কলেজের ব্যাগে একটা একটা করে জিনিসপত্র ঢুকিয়ে নিচ্ছি। যেমন: ব্রাশ, টুথপেস্ট, কফির পাতা, টিস্যু, সাবান। এখন আমাকে অনেকেই লোভী মেয়ে বলবে তাতে আমার কী? আমি বাবা ফ্রি ফ্রি টাকা দিতে চাই না। এখন থেকেই জামাইয়ের টাকা বাঁচিয়ে রাখি।
বিছানার উপর কিছু জিনিস অবশিষ্ট ছিল। ব্যাগে ভরবো তখনই সাদা কইতরের আগমন ঘটে।

” এসব কী আয়মান? সাবান, শ্যাম্পু ব্যাগে ঢুকাচ্ছো কেন?”

সাদা কইতরের আখমনে ভয় পেয়েছি। বুকে থু থু দেওয়ার ভঙ্গি করে বলি,

” এক মুঠোয় তো হাজার হাজার টাকা দিয়ে আসলে। বলি টাকার কী কোন হিসাব আছে? আমি হিসাব করে চলি। তাই যেসব পণ্য ব্যবহার করিনি সেগুলো নিয়ে যাচ্ছি।”

সাদা কইতর রেগে গেল কেন? আমার কাজে সাদা কইতরের খুশি হওয়ার কথা। আমার কাছে এসে কান মলে দিয়ে বলল,
” এক্ষুনি সব পণ্য ব্যাগ থেকে নামাবে। তোমার কীসের অভাব শুনি? বাবার অঢেল আছে আর এখন তো জামাইও হয়ে গেছে। যখন যা লাগবে কিনে দিব।”

” আরে ধুর মিয়া, রাখেন তো আপনার কিনা কিনি। আগে আমি এগুলো নিয়ে নেই। একটুও রেখে যাব না।”

” রেখে দাও আয়মান। আমি ভীষণ রেগে যাচ্ছি।”

” তুমি রাগো বা জ্বলো। তাতে আমার কী? আমি এগুলো না নিয়ে এক পাও যাচ্ছি না।”

অবশেষে সাদা কইতর আমার জিদের কাছে হার মানে। এক এক করে সব পণ্য নিয়েই ক্ষান্ত হয়েছি। বেচারা কর্মচারীরা আমাদের ঘরে ঢুকে দেখবে সব ফাঁকা। হি হি হি আমি খুব চালাক।

রিকশায় আমি আর সাদা কইতর পাশাপাশি বসে আছি। আজ আমি চুপচাপ। উড়না দিয়ে বারবার মুখ ঢাকছি। অপরাধ করেছি তো! যদি বাপ ভাইয়ের কাছে ধরা পড়ে যাই? সিনেমায় দেখেছি। নায়িকার বাপ ভাইয়েরা সবসময় পালিয়ে বিয়ের বিপক্ষে থাকে। অনেক সময় তো মেরেও ফেলে। আমাকেও কী মেরে ফেলবে?

” সাদা কইতর, আমি বাড়ি যাব না।”

” কেন?”

” বাপ ভাইয়েরা যদি বি’ষ খাইয়ে মে’রে ফেলে?”

সাদা কইতর আমার মাথা তার কাঁধে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

” কিছুই হবে না।”
আমাদের বাড়ির আগের গলিতে সাদা কইতর রিকশা থামাতে বলে। রিকশা ওয়ালা মামাকে ভাড়া পরিশোধ করে আমার হাত ধরে জনশূন্য স্থানে নিয়ে আসে। এদিকে আমি কিছু বলতে যাব সেই সময়টুকু দিল না। আমাকে একদম সাদা কইতরের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মাথায় পরপর অধর ছুঁয়ে বলে,

” সবার সাথে দুষ্টুমি করার প্রয়োজন নেই। তোমার এই সাদা কইতর সব সময় তৈরী আয়মানের দুষ্টুমি সহ্য করার জন্য। ফলের পাশাপাশি ফুলকে ভালোবাসতে শিখে নিও তাহলে তোমার এই সাদা কইতরের মর্মও বুঝে নিবে।”

কয়েক ঘণ্টা সাদা কইতরের পাশে ছিলাম। সাদা কইতরের কথায় বিরহের আভাস পাচ্ছি। আমার মনে বিশেষ কোন অনুভূতি নেই। যা আছে সব দুষ্টুমি। রাতের প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি। এখনই মোক্ষম সুযোগ। সাদা কইতরের লোমবিহীন বুকে কুটুস করে কামড় বসিয়ে দিশাম। বেচার আহ বলে আমাকে দূরে সরিয়ে দিল।
” এটা কী করলে আয়মান?”

” ঘরে বন্দি রাখার চেষ্টা সাদা কইতর। এবার বাড়ি থেকে একবার ছাদে যাবে আরেকবার ঘরে। বাহিরে আর বের হতে পারবে না।”

অকাজ করে তুবা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবে তা তো হবে না! সাদা কইতরকে ফেলে আমি ভোঁ দৌড়। এদিকে পিছন থেকে সাদা কইতর থামতে বলছে। আমি শুনছি না। সাদা কইতরের দৃষ্টির বাহিরে এসে থামি। পিছনে ফিরে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বিড়বিড় করে বলি,

” এবার আর ধরা দিব না,
সাদা কইতরের কান মলাও খাব না।
পালিয়ে বেড়াবো সবখানে
যেথায় সাদা কইতর আমায় না পাবে।”

চলবে……….

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| ষোল তম পর্ব | +|সতের তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

“পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে।”

মিথ্যা নয়, সত্য। আমি মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছি। সামনে যে টেস্ট পরীক্ষা। সারা বছর মুরগির ডিম পেড়ে এখন ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছি। সারা বছর কলেজ ফাঁকি দিয়ে টাকা জরিমানা দেওয়ার মতো ছাত্রী আমি। কতবির তো বাবা ভাইয়াকে যে কতবার প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে হিসেব নাই। প্রতিবার বাবা,ভাইয়া বলে এসেছে,
” আগামীকাল থেকে তুবা কলেজে আসবে। আপনাদের আর বিচার দিতে হবে না।”
আফসোস তাদের কথার মান রাখা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। কেননা আমি পরদিনই কলেজ ফাঁকি দিয়ে দিতাম। আমার পিছু পিছু শিক্ষকরা দৌঁড়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। যত দুষ্টুমি করি না কেন। পরীক্ষায় এফ কখনো আসেনি টেনেটুনে পাশ করেই এসেছি। তাই তো শিক্ষকরা পড়াশোনার বিষয়ে অজুহাত দেখিয়ে কথা শোনাতে পারতো না।
বর্তমানের পরিস্থিতি আলাদা। শুনেছি বয়েজ কলেজের শিক্ষকরা প্রশ্ন করবে। তাই তো এত মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছি। মাথা থেকে সব কইতরদের ভুত সরিয়ে ফেলেছি। মাথায় থাকবে পড়া আর পড়া। ভাইয়া আজ বাসায়। সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে সে। আমি জানি একটু পরেই আমার ঘরে আসবে তারজন্য দরজা খোলা রেখেছি। হলোও তাই। ভাইয়ার হাতে দুইটা বাটি। মুখে হাসির রেখা। কেন যেন মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে পটাতে এসেছে।
” পড়ছিস?”
” না! বই খাতার সাথে প্রেম করছি।”
” আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি তো এমনি এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। এই নে নুডলস খা।”

গপগপ করে গোগ্রাসে গিলছি। পড়ার মনোযোগ এসেছে এখন সময় নষ্ট করা যাবে না। ভাইয়ার দিকে লক্ষ করলাম আস্তে ধীরে সময় নিয়ে খাচ্ছে। এবার আমি নিশ্চিত ভাইয়া কিছু বলতে এসেছে। আমার খাওয়া শেষ এমন ভাব ধরছি যে আজ পড়াশোনা করে দুনিয়া উল্টিয়ে ফেলবো। আমার হাবভাব বুঝে ভাইয়া গলা পরিষ্কার করে নিল,
” তোর কষ্ট হয় না?”
” যা বলার সোজাসাপটা বলো। আমি তোমার কাকী না যে ভয়ে, লজ্জায় বলতে পারবে না।”

ভাই নড়েচড়ে বসলো। অর্ধেক খাওয়া বাটি বিছানার উপর রেখে বলল,

” নিপা ফোন করেছিল। বলল, আজকাল পাত্র পক্ষের আসা যাওয়ার প্রকট। যে কোন সময় কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।”

চিন্তার বিষয়। ভাইয়ার হবু বউয়ের বিয়ে আর আমি সেখানে মজা মাস্তি করতে পারব না সেটা হয় না। ভাইয়াকে একটু বাজিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। আর আমি এই সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করব না। অন্তরে দুঃখ মুখে হাসি এনে বললাম,

” ভালো কথা। বিয়ে ঠিক হলে দাওয়াত পাব। তোমাকেও নিয়ে যাব।”

ভাইয়ার মুখশ্রী করুণ। বুঝতে পেরে নিশ্বাস ত্যাগ করলাম। পৃথিবীতে তুবা একপিস। আমার মতো কেউ নেই। এদের এতো ইমোশন কেন বুঝি না। চেয়ার ঘুরিয়ি পড়তে বসার ভাব ধরে সুখবর বরাতা ভাইয়ার কানে পৌছেই দিলাম,
” বাবাকে নিপা ভাবীর কথা বলেছি। এতক্ষণে হয়তো বাবা শুভ কাজের আলাপ আলোচনাও শেষ করে ফেলেছে।”

ভাইয়া অবাক সাথে খুশি যা তার চেহারা দেখেই বুঝেছি। আমাকে এক প্রকার পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” তোর কি চাই বোন?”
” আপাতত পড়তে চাই। তোমার কাজ শেষ। যাও ভাবীর সাথে প্রেম করো। আমাকে পড়তে দাও।”

আমার মাথায় আদরের পরশ বুলিয়ে ভাইয়া চলে গিয়েও কী ভেবে যেন ফিরে আসে। আমার কাছে দাঁড়িয়েই বলে,

” তোর শিক্ষা সফর কেমন কাটলো। কিছু বললি না যে!”

এই নেও। যা ভুলতে চাই তাই আমার সামনে ঘুরে ফিরে চলে আসে। ভাইয়াকে কোনরকম বুঝিয়ে বললাম, “অনেক ভালো কেটেছে। এমন ভাল যে এখন পড়তে পড়তে তার মাশুল দিতে হচ্ছে।”

ভাইয়া হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছে। আলগোছে দরজা আটকে চলে গেছে ঘর থেকে।

আমি পড়ছি খুব মনোযোগ সহকারে। পড়তে পড়তে কখন নয়টা বেজে গেছে খেয়ালই নেই। তুবাকে অস্কার পুরস্কার দেওয়া উচিত এতক্ষণ সময় ধরে পড়াশোনা করছে কোন ব্রেক ছাড়াই।
এখন আমার ঘুম পাচ্ছে। তবে তার আগে আমার একটা কাজ আছে। ঝটপট শেষ করে ঘুমাতে যাব। ঠিক ঐদিনের মতো একটা খাতা কলম নিয়ে লিখতে বললাম,

প্রিয় সাইয়া,

আকাশ পরিমান কালি তোমার মুখে পড়ুক। রাতের আধারের পেত্নিদের নজর লাগুক। ঘার মটকে দিক ভূতের নানারা। প্রতিদিন তোমার পেট খারাপ হোক। পা ভেঙে পড়ুক। আজীবন ল্যাংড়া হয়ে ঘরে বসে থাকবে। মুখ বেঁকে যাবে, মাথার চুল উঠে যাবে। রাস্তায় বের হলেই মানুষ টাক বলে ডাকবে। তোমার নখ উপড়ে যাবে, গলা খুশখুশ করবে, নাকে পোকা ধরবে।
তুবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করার শাস্তি এভাবেই পাবে হুহ।

ইতি
ভোলাভালা নিরহ তুবা

সাদা কইতর ভাল না। অনেক পঁচা। আমি আগামী সত্তর বছর সাদা কইতরের সামনে যাব না। আর না কথা বলব। আমার ভাবনার মাঝেই বাবার ডাক শুনতে পেলাম। গলা ফাটিয়ে আমাকে ডাকছে। বুঝতে পারলাম খাবারের জন্য ডেকেছে। আজ না খেলে রক্ষা নাই।
——————————

একজন মেয়ে বিস্তৃত মাঠে দৌড়াচ্ছে। পিছন থেকে কেউ একজন তাকে ধাওয়া করেছে। মেয়েটি নাখোশ নয় বরঞ্চ চমৎকার হাসিতে পিছনে ফিরে বার বার দেখছে। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখতে পাচ্ছি মেয়েটা আমি। এতো স্বচ্ছল প্রাণবন্ত লাগছে, মনে হচ্ছে আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী। পিছনের মানুষটা এক সময় আমাকে ধরে ফেলে। নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় একদম। তার শরীরের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসছে। আকস্মাত শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। নিশ্বাস গ্রহন করতে কষ্ট হচ্ছে। ধ্যান,জ্ঞান, চেতনা ফিরে এসেছে। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। আর এত কষ্ট হওয়ার কারণ এবার বুঝতে পারছি। আমি ছাড়াও কেউ একজন আমার ঘরে উপস্থিত আছে। শুধু উপস্থিত থাকলেও হতো। ভয়ংকর কাজ করেছে। আমাকে নিজের সাথে জাপটে ধরে শুয়ে আছে। কত বড়ো স্পর্ধা দেখেছেন? তুবাকে ধরে রাখে কার এত বড়ো সাহস? নড়াচড়া করছি। একবার ছাড়া পাই ব্যাটা তোর ব্পের নাম ভুলিয়ে ফেলব।

” নড়ছো কেন মনপাখি?”

সর্বনাশ হো গায়া। সাদা কইতর এখানে, আমার ঘরে কীভাবে? অহ ভুলেই গিয়েছিলাম, এই লোক তো সুপারম্যান। উড়ে উড়ে আমার গরে চলে আসতে পারে। তবে আমি ভাবছি, আজ এভাবে আসার কারণ কী? আমি কোন দোষ করেছি? মনে পড়ছে না। ফিসফিসিয়ে বলছি,
” সাদা কইতর, এখানে কী?”

উত্তর পেলাম না। উলটো সাদা কইতর সেই অবস্থায় উঠে বসলো। আমার নাকে নাক ছুঁয়ে দিল। এরপর আমার মাথার কাকের বাসা ঠিক করে একটা পাঞ্চক্লিপ আটকে দিল। কপালের উপর কোঁকড়ানো কিছু চুল এনে চুপটি করে বসে রইলো। আমি সারাজীবন এমন একজন জীবনসঙ্গী চেয়েছিলাম যে আমার মাথার কাকের বাসা গোছগাছ করার দায়িত্ব নিবে। সাদা কইতরের এহেন আচরণে শুকনো ঢোক গিললাম কেননা আমার এখনো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।
” তুমি তো ভালো চিঠি লিখতে পারো মনপাখি! কিন্তু স্বামীকে কী কেউ বদ দোয়া দেয়?”

স্টার জলসা সিরিয়ালের মত কি বলে উঠলাম। টেবিলের উপর দৃষ্টিপাত করেও আবছায়া আলোতে কিছুই দেখতে পেলাম না। আমাকে অবাক করে দিয়ে সাদা কইতর বলল,

” তোমার ওই সুন্দর চিঠি এখন আমার পকেটে। খুঁজেও লাভ নেই। যার উদ্দেশ্যে লিখছো সে এখন তোমার পাশেই আছে। এখন যত পারো বদ দোয়া দিলে শুরু করো আমি বসে বসে শুনবো।”

” সাদা কইতর বাসায় যাও বলছি। নয়তো আমি আঙ্কেল আন্টিকে বলে দেব।”
” একজন গোছালো মানুষ তোমার প্রেমে পুরোপুরি অগোছালো হয়ে গেছে। দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখা মেয়েটাকে মন দিয়েছে। ”

পিটপিট করে সাদা কইতরের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে নাক টেনে বলল,
” যা মনে আসছে সব ঝেড়ে ফেলে দাও। আজ লুকিয়ে এসেছি, খুব শীঘ্রই সবার সামনের দরজা দিয়ে তোমাকে নিয়ে যাব।”

ওরে সেয়ানা। বলে কী? আমি গেলে তো? এখন কিছু বলা যাবে না। যা করার আগামীকাল করব। আপাতত তালে তাল মিলিয়ে চলতে থাকি।
” পেট মোটা আনারস আঙ্কেল আর সুন্দরী আন্টিকে সব বলে দিব।”

” শ্বশুর বলো শ্বশুর! তোমার জামাইয়ের বাপ আর তুমি যদি শ্বশুর না ডাকতে পারো সমস্যা নেই। আমি আমার শ্বশুরকে শ্বশুর ডাকতে পারব। কীভাবে ডাকব দেখাই! ও শ্বশুর আব্বা!

এই কি করে! সাদা কইতরের মুখ চেপে ধরলাম। বাবা, ভাইয়া জানতে পারলে আমার স্বাধীনতা শেষ। সাদা কইতরের চোখে দুষ্টুমি। আমাকে হেনস্তা করার জন্যই এত তালগোল পাকাচ্ছে। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করলাম,

” আমাকে এত জ্বালাতন করছো কেন?”

আমি ভেবেছি সাদা কইতর দমে যাবে। আগের ণতো ক্ষিপ্ত হয়ে শাস্তি দিবে। কিন্তু না, সে এমন কিছুই করছে না। পাল্টা উওর দিল,
” এত জীবন তুমি জ্বালিয়েছ তাই।”

সাদা কইতরের সাথে কথায় পাড়া অসম্ভব। আমি খুব করেই বুজতে পেরেছি এই ড্রামা আজ সারারাত চলবে। আমার চঞ্চলতাও ফিরে আসছে না। আলাদা অনুভূতি তৈরি হচ্ছে মনে। খানিকটা লজ্জা, খানিকটা ভয় গ্রাস করছে অন্তরে। সাদা কইতরখে কী আমা ভালবাসতে শুরু করেছি? এটা অসম্ভব। সাদা কইতর আমার শত্রু। এখন সাইয়া শত্রু।
————————–

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি। ভাইয়ার পরিবর্তে নিজেই নাশতা বানিয়েছি। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিলাম। ৭:৫০ বাজে। এখনই কলেজে চলে যাব। সাদা কইতরকে উচিত শিক্ষা দিব। কত বড়ো স্পর্ধা সাদা কইতরের আমাকে ছুঁয়ে দিয়েছে! ছোঁয়া পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু কাতুকুতু? আমার মুখ আটকে ধরে কাতুকুতু দিয়েছে যেন মন খুলে হাসতে না পারি।
তুবা প্রতিশোধ নিবে না তা তো হয় না! সাদা কইতরের শাস্তি হবে, আমি তার সামনে আর পড়বোই না।
ব্যাগ কাঁধে ফেলে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। আশেপাশে গোয়েন্দার অভাব নেই। আমাকে একা পেলেই গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিবে।

বাড়ির পাশেই একটা মুদির দোকান রয়েছে। চা বিক্রি ব্যতীত সব বিক্রি করে। আমার পছন্দের চিপ্স এখানেই পাওয়া যায়। তবে আজ মনে হয় কপালে কিছুই জুটবে না। কেননা মইনুল আঙ্কেলকে দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি দোকানের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন দোকানের সব খাবার এক বসায় সাবার করে ফেলবে। কি আর করার, খালি পেটে হাঁটছি। দোকান পাড় হতেই কিছু কথা কানে ভেসে আসলো যা শুনে না হেসে পারলাম না। মইনুল আঙ্কেলের নতুন বউ আদেশ করছে তাকে,

” এই ভোটকা, আর কত খাবি রে! এদিকে আমার নরম তুলতুলে শরীরটা যে শুকিয়ে গেছে সেদিকে তোর খেয়াল আছে? নিজেই গিলতে থাকিস। এবার তুই উপোস থাক আমি খাই। খবরদার! ভাগ বসাতে আসলে খাবার চু’রি’র মা’ম’লা’য় জে’লে ঢুকিয়ে দিব।”

“সারাদিন তো তুই ই খাইতে থাকোস রে রাক্ষসী। আমার না খাইয়া পেট কমতাছে। আর তুই আমার নামে কস মা’ম’লা দিবি? কেন যে তোরে বিয়া করছিলাম। আমার আগের জমেলাই ভালা ছিল।”

মইনুল আঙ্কেলের সাথে দুঃখজনক ঘটনাই ঘটে আহারে মইনুল আঙ্কেল। কপালটা এই বয়সেই পুড়েছে।

কলেজের কাছাকাছি আসতেই কোথায় থেকে আবরারের ডাব্বা এসে আমার সামনে উপস্থিত হয়। মুখশ্রীর শয়তানি হাসি শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সামান্য বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ি,
” মাথার রগ কয়টা বেঁকেছে? ঘুষি খেতে ইচ্ছে করছে?”
” আরে ভাবী, মাথা গরম করছেন কেন? দেবর এসেছে কই যত্নআত্তি করবেন তা না করে দুষ্টুমিভরা কথা বলছেন?”

আবরারের ডাব্বা আমাকে বাজাতে এসেছে আমিও কম যাই না। রসিকতা আমার র’ক্তে মিশে আছে। আবরারের ডাব্বার কথা হেসে উড়িয়ে বললাম,
” আরে দেবরজি, কি যে বলেন না! আপনাকে যত্নআত্তি করব না তো কাকে করব। আপনি একটু দাঁড়ান আমার ব্যাগে খাবার আছে, শুধুমাত্র আমার দেবর সাহেবের জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছি।”

চোখে লোভ, জিভে জল, দুই হাতের ঘর্ষণে আমাকে বুঝাচ্ছে তাড়াতাড়ি খাবার বের করতে। সারা ব্যাগ খুঁজে কাঁটা কম্পাস বের করে হাতের তালুতে ঢুকিয়ে দিয়ে ভোঁ দৌড় দিলাম। আমাকে এখানে আর পাওয়া অসম্ভব। পিছন থেকে আবরারের ডাব্বার আ করে আর্তনাদ শুনতে পেলাম। যা ইচ্ছে করুক তাতে আমার কী! আমাকে ক্ষ্যাপাতে এসেছিল কেন।
—————————

আজকাল লিজা একটু বেশিই আমার সাথে মেলামেশা করতে চাইছে। শিক্ষা সফর থেকে আসার পর থেকেই জোঁকের মতো আমার পিছু লেগেই থাকে। কিছু বলতে চায় সে। ভাইয়া যেমন আমার সাথে মিল দিয়ে কাজ করায় ঠিক তমন লিজাও মিল দিচ্ছে কিন্তু আসল কথা লছেই না। এই যে আমাকে আজও অক্ষত অবস্থায় দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সামনের বেঞ্চিতে জায়গা রেখেছে।
” লিজার বাচ্চা পিজ্জার মনে কী রং ধরেছে? আমাকে মাথায় তুলে রাখার করাণ কী শুনি?”

চুরি করে ধরা পড়ে গেছে লিজা। মিনমিন করে কি যেন বলে বোকা হাসলো সে।
” তুই তো আমার জানের প্রিয় বান্ধবী।”
” কবে থেকে?”
” উফ এতো প্যাঁচাচ্ছিস কেন? চল আজ তোকে ট্রিট দিব।”

বিরতির ঘণ্টা পড়েছে সাথে আমার মন ছটফট করছে পালিয়ে যেতে। কতদিন হয়েছে সুন্দরী আন্টিকে দেখি না! আজ দেখতে যাব। সাদা কইতর জার্সিটি থেকে ফেরার আগেই দেখা করে চলে আসবো। তুবা কিছু ভেবেছে আর সেটা করবে না তা তো হবে না! বিরতির সময়ে বাহিরে যাওয়ার নিয়ম আছে। ব্যাগ নিয়ে বের হলে দারোয়ান ভাইয়ার কাছে ধরা পড়ে যাব। কোকাকোলায় চুমুক দিয়ে আশেপাশে নজর ঘুরিয়ে নিলাম। সকলের চোখের আড়ালে কলেজের ছাদে আসি নিদ্দির্ষ্ট স্থানে এসে ব্যাগ নিচে ফেলে দিলাম। এবার পরের স্টেপে যাব। বিরতির সময় শেষের পথে দারোয়ান ভাইয়া পানি খেতে পাশ ফিরে তাকিয়েছে মাত্র। এদিকে সুযোগে সৎ ব্যবহার করে আমি প্রাণপণে দৌড়ে কলেজের বাম প্বার্শে চলে এসেছি। আহা শান্তি এবার সুন্দরী আন্টিকে দেখতে যাব।

আসমান থেকে কি কোন পরী নেমে এসেছে যার নজর আমার ব্যাগের উপর পড়েছে! এই মাত্রই না ব্যাগ নিচে ফেললাম, কই ব্যাগের কোন চিহ্ন নেই। আশেপাশে ভালো করেই খুঁজেছি কিন্তু ব্যাগ নেই। কোথায় গেল? কোমড়ে হাত দিয়ে ভাবছি তখনই পিছন থেকে কারো স্বর ভেসে আসে,

” কলেজ থেকে পালাচ্ছে বুঝি?”

‘অভাগা যেদিকে যায় বিপদ সেদিকেই যায়’ কথাটা মিথ্যা নয়। যার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সেই আমার আশেপাশে চলে আসে বারবার। হ্যাঁ! আপনারা ঠিকই ভাবছেন, সাদা কইতর আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমি নিশ্চিত তার হাতে আমার ব্যাগ আছে
এখন আমার মুখ ঢাকার খুবই প্রয়োজন কিন্তু কিভাবে ঢাকবো আমার কাছে কোন মাক্স নেই না আছে রুমাল। পোড়া কপাল! চিন্তা করছি তার দিকে ফিরবই না। এদিকে ফিরে কথা বলব।

” কথা বলছো না কেন? সামনে না তোমার টেস্ট পরীক্ষা?”

” ইশশশ গোয়েন্দাগিরি করা হচ্ছে! তোমার না ফাইনাল পরীক্ষা! তুমি এখানে কি করতে এসেছ?”

” বউয়ের সাথে প্রেম করতে এসেছি।”

বউয়ের কথা শুনে খুক খুক করে কাশি উঠলো। সাদা কইতর খুব ভালোভাবেই জানে কি করলে আমি জব্দ হব। নাহ, এবার সাদা কইতরের ফাঁদে পা ফেলা যাবে না। বুকে সাহস এনে উত্তর বললাম,

” যেখানে রমনীরা বসে আছে সেখানেই যাও। আমার পিছনে কি? আমি এখন বাসায় যাব। আমার পড়া আছে।”

” বাসায় গিয়ে যে আপনি কতটুকু পড়বেন তা আমার জানা আছে। এখন বলুন আপনি আমার বন্ধুকে কেন আঘাত করেছেন?”

এই যা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আবরারের ডাব্বার কথা। আর সাদা কইতর যে এত তাড়াতাড়ি আমাকে শাস্তি দেবে তা কল্পনা করতে পারিনি। এখন কি বলি? ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এল। সাদা কইতরের দিকে কোণাচোখে তাকিয়ে বললাম,

” ওই আবরারের ডাব্বার চরিত্র ঠিক করতে বলো সাদা কইতর। আমার এক ভোলা ভালা বন্ধুকে প্রেমপত্র দিয়ে বসেছিল। মেয়ে হলে ঠিক ছিল কিন্তু ছেলেকে! ভাবতে পারো?”

” কি বললে আয়মান! তোমার মাথা ঠিক আছে? আবরার কখনো এমন কাজ করবে না।”

” হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো আমারই দোষ! বন্ধু বেশি হয়ে গিয়েছে বউ তো এখন পর হয়ে গেছে। থাক থাক লাগবে না। আমি জানতাম সাদা কইতর আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তাইতো তাইতো! আমি কলেজ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলাম যেন কলেজ শেষে আমাকে শাস্তি দিতে না পারো। কিন্তু বলে না! কপালে যা আছে তাই হবে। সাদা কইতর টিফিন টাইমে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। আজ কোথাও যাব না এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। দাও তুমি শাস্তি দাও। আমি অপেক্ষা করছি তোমার শাস্তির জন্য।”

আমার ইমোশনাল কথা হয়তো কাজে লেগেছে। সাদা কইতর ভাবুক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সুযোগ পালানোর। সাদা কইতরের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে দৌঁড় দিলাম। প্রায় বিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে বললাম,

” ও আমার বোকা স্বামী,
কেন করো পাগলামি।
পারবে না কখনো বউয়ের সাথে,
সুযোগ খুঁজবে কাছে আসতে।
পাবে না তুমি তুবাকে
তুবা সবসময় পালিয়ে বেড়াবে।”

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে