প্রজাপতির রং পর্ব-০২

0
1357

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_02
#Writer_NOVA

প্লেট হাতে নিয়ে গপগপিয়ে খেতে লাগলাম। খুব খিদে পেয়েছে। কয়েক লােকমা ভাত মুখে দিতেই বাইরে মানুষের পায়ের আওয়াজ পেলাম।আমার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসছে।যেই মুহুর্তে চাচী জিজ্ঞেস করলো কে তখুনি বাইরের থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠের মানুষ বললো “আমি”।

আলেয়াঃ কেডায় নয়নের আব্বায়?

—- হো, দরজা খোলো।

আমি ভয়ার্ত চোখে চাচীর দিকে তাকালাম।চাচী আমাকে আশ্বস্ত হওয়ার চোখে বললো।

আলেয়াঃ ভয় পাইয়ো না।আমগো নয়নের আব্বায় আইছে।নয়ন হইলো আমার পোলার নাম।বিদেশে থাহে।আমি দরজা খুইলা দেই।

নাভানকে খাটে বসিয়ে দিয়ে তিনি দরজা খুলতে গেলেন।নাভান বসা থেকে উঠে আমার কোলে এসে ঘাপটি মেরে রইলো।আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাকালাম।ততক্ষণে ও আমার লেহেঙ্গার স্টোন নিয়ে খেলা শুরু করেছে।

আলেয়াঃ কহন থিকা জিগাইতাছি কেডা, কথা কোন না কে? কথা কইলেই তো বুঝতাম আপনে আইছেন।যান গিয়য় কলপাড় থিকা হাত-পা ধুইয়া আহেন।আমি ভাত বাড়তাছি।

রমিজ সাহেব কোন কথা বললেন না।চুপচাপ ঘরে ঢুকলেন।সামনে চোখ পরতেই কপাল ভাঁজ করে ফেললেন।নোভা আর নাভানকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আলেয়া বেগমের দিকে তাকালো।

আলেয়াঃ মাইয়াডা বিপদে পরছে।তাই আইজকের রাতডা আমগো বাড়িতে থাকবো।রাত হইয়া গেছে, কই থাকবো, কই যাইবো।আমিও ভাবলাম একলা একটা মাইয়া এত রাতে বাচ্চাডা নিয়া কই যাইবো।ঢাকার মাইয়া,এদিকের কিছু চিনে না।

আমি ভাতের প্লেটে হাত দিয়ে বসে আছি। ভীষণ লজ্জা করছে।আল্লাহ মালুম চাচা কি ভাবছে? আমি লজ্জায় তাদের দিকে তাকাতেও পারছি না।কিন্তু চাচা কিছু বললো না।ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।সম্ভবত কলপাড়ে হাত-পা ধুতে গেছে।

আলেয়াঃ আহো দাদুভাই, আমার কাছে আহো।মা- রে ভাত দুগা খাইতে দেও।

নাভান তার কোলে চলে গেল। আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে ভাতের প্লেটে আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম।চাচী বোধহয় আমার বিষয়টা ধরতে পারলেন।তাই গলা উঁচিয়ে বললেন।

আলেয়াঃ আরে মাইয়া লজ্জা পাইয়ো না। তোমার চাচা এহন ঘরে আইবো না।সিগারেট ধরাইয়া উঠানে বইছে।তুমি লজ্জা না পাইয়া খাও।

আমি লজ্জাকে সাইডে ফেলে খেতে লাগলাম।প্রচুর খিদে পেয়েছে। খাওয়া শেষ করে বাইরে গিয়ে হাত ধুয়ে আসলাম।চাচী গামছা এগিয়ে দিয়ে বললেন।

আলেয়াঃ এই ভারী জামায় কতক্ষণ থাকবা? আমি একটা শাড়ি দেই।পাল্ডায় ফালাও।এমনি যেই গরম তার মধ্যে এই জামায় তো অস্থির হইয়া যাইবা।

আমিঃ আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো তার ভাষা আমার জানা নেই। আপনি আমার সবদিকে খেয়াল রাখছেন।আমি যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে আমি এই ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করবো।

চাচী মুচকি হেসে ঘরের কোণা থাকা স্টিলের আলমারি খুলে একটা লাল তাঁতের শাড়ি, ব্লাউজ,পেটিকোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।

আমিঃ চাচী লাল রঙের শাড়ি ছাড়া অন্য কোন শাড়ি নেই। এটা তো পুরো নতুন। আমাকে পুরাতন একটা শাড়ি দিন।নতুন শাড়িতে তো বেশি গরম লাগে।তাছাড়া লাল রঙ আমার জন্য অভিশাপ।সাদা রঙের কোন শাড়ি হবে?

সাদা শাড়ির কথা শুনে চাচী কিছুটা চমকে আমার দিকে তাকালো।তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে মাথা নামিয়ে নিচুস্বরে বললাম।

আমিঃ আমি বিধবা চাচী🙂।

আলেয়াঃ এই বাচ্চার বাবা বাঁইচা নাই?(বিস্ময় চোখে)

আমিঃ না, ও ছয় মাসের পেটে থাকতে মারা গেছে।

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে দুই ফোঁটা পানি গরিয়ে পরলো।বুক ফেটে চিৎকার আসছে।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমার স্বামী মারা যায়নি।ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার কাছ থেকে ওকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ও বেঁচে আছে। হ্যাঁ, আমার অস্তিত্বে ও বেঁচে আছে। নাভানের মাঝে ও বেঁচে আছে।

আলেয়াঃ কান্দিস না মা, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখ।এত কম বয়সে বিধবা হয়ছিস।দেহিস আল্লাহ ঠিক তোর মুখের দিকে চাইবো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উনি লাল শাড়িটা নিয়ে আবার আলমারির কাছে গেল।সেখানে থেকে অনেক খুঁজে একটা অব হোয়াইট কাপড় নিয়ে এলো।

আলেয়াঃ এইডা ছাড়া আর কোন সাদার মধ্যে শাড়ি নাই।আমি তো এইসব কাপড় পরি।কিন্তু এইডা একটু পুরান।এর লগে ব্লাউজ, পেটিকোট আছে।তুমি ঐ ঘরে গিয়া দরজা লাগাইয়া পইরা আহো।তারপর তোমগো মা-বেটারে এই পাশে বিছনা কইরা দিমু নে।অপরপাশে আমরা থাকমুনে।কোন অসুবিধা হইবো না তো।

আমিঃ এক রাতের ব্যাপারই তো।কোন সমস্যা নেই।

ঘরের মাঝখানটায় টিনের পাটিশন দেওয়া।যার কারণে দুটো রুমের মতো হয়ে গেছে। আমি অপরপাশের চৌকাঠে গিয়ে আবার ফিরে এলাম।

আলেয়াঃ আর কিছু লাগবো?

আমিঃ চাচী, আপনাদের মোবাইল আছে? আমার মোবাইল বাসায়। খালাতো ভাইকে কল করে বলতাম, সকালে যাতে আমাকে এসে নিয়ে যায়।

আলেয়াঃ আমার তো নাই।তবে তোমার চাচার আছে। আমি নিয়া আইতাছি।

উনি বাইরে গিয়ে চাচার থেকে মোবাইল নিয়ে এলো।আমি আমার খালাতো ভাইকে কল করে জায়গার নাম,ঠিকানা,চাচার বাড়ির সন্ধান দিয়ে দিলাম।তারপর লেহেঙ্গা পাল্টে কাপড়টা পরে এলাম।আমাদের জন্য বিছানা করে দিয়ে অন্য পাশে চাচাকে ভাত বেড়ে দিলো।আমি মশারীর ভেতরে ঢুকে ছেলেকে নিয়ে শুয়ে পরলাম।নাভানকে ব্রেস্ট ফিডিং করিয়ে এক হাতে পিঠে আলতো চাপড় মেরে ঘুম পারানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।নাভান কিছু সময় পর ঘুমিয়ে পরলো।একসময় আমার চোখও লেগে এলো।তলিয়ে গেলাম অতল ঘুমের রাজ্যে।

🦋🦋🦋

নিজস্ব ডেরায় অগ্নিচোখে তার লোকের দিকে তাকিয়ে আছে রোশান।এই মুহুর্তে প্রত্যেকটাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু রোশান ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে পছন্দ করে।তমাল,নাঈম,আরাফাত আরো অনেকে মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।রোশানের এই শান্ত ভঙ্গি দেখে ওদের ভয়টা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

রোশান দেওয়ান একজন নামকরা পলিটিশিয়ান।তাদের নিজস্ব জেলার ১ আসনের এমপি সে।পলিটিক্স আর রাগ দেওয়ান বংশের রক্তে মিশে আছে। দেওয়ান বংশের নাম শুনলেই তাদের এলাকার মানুষ ভয়ে কাঁপে।কারণ এই বংশের ছেলেরা দিনে দুপুরেও মানুষকে রাম দা নিয়ে কুপিয়ে মারতে পারে।মারামারি, খুনাখুনি এদের জন্য সামান্য হাতের ময়লা।কথার আগে হাত চলবে।এই দেওয়ান বংশকে ডাকাত বংশ বললেও কম হয়ে যাবে। পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালায় এরা।সেই বংশের মেজো ছেলে রোশান।কিন্তু রোশান হুটহাট করে রেগে যাওয়ার ছেলে নয়।তবে মাঝে মাঝে নিজেকে সামলাতে পারে না।

রোশানের এই শান্ত ভঙ্গিতে বসে থাকায় তমাল ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছে। তমাল,নাঈম,আরাফাত একজন আরেকজনকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে ইশারায় রোশানের সাথে কথা বলতে বলছে।কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না। এক সময় তমাল কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো।

তমালঃ বস, আমরা আসলে বুঝতে পারি নি।এবারের মতো আমাদের মাফ করে দিন।

নাঈমঃ এবারি লাস্ট, আর হবে না। আমরা আবার ঐ মেয়েকে বাচ্চাসহ তুলে আনবো।

আরাফাতঃ বস শেষ সুযোগটা দেন।এই কানে ধরছি।এবার মিস্টেক হলে আপনার যা খুশি করেন।ঐ মেয়ে এই সপ্তাহের মধ্যে আপনার কাছে থাকবে।

রোশান এতক্ষণ হাত মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলো।এবার যেনো তমলরা সেই রাগে ঘি ঢাললো।সামনে থাকা কাঠের চেয়ারটা নিয়ে দেয়ালে জোরে বারি দিতেই সেটা ভেঙে এদিক সেদিক ছিটকে পরলো।সবাই চমকে উঠলো।

রোশানঃ ঐ মেয়ে, ঐ মেয়ে কি হ্যাঁ? ভাবী বলতে কি কষ্ট লাগে? আমার পাখিকে এভাবে সম্বোধন করার সাহস তোদের কে দিয়েছে?

তমালঃ সসসসরররি ববববস।

রোশানঃ তোর সরির মায়রে বাপ।তুই সরি বললে কি এখন আমার নোভা আমার কাছে ফিরে আসবে? রাত ১২ টা বেজে ৪৭ মিনিট। এর মধ্যে তোরা আমার পাখিকে খুজে আনতে পারলি না।তোরা না বলেছিস নোভা এই গ্রামে আছে। তাহলে সারা গ্রাম চিরে ফেলেও কেন নোভা আর নাভানকে পেলাম না আমি।আর একটু সময়ের মধ্যে নোভার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যেতো।আর সারাজীবনের জন্য আমি পাখিকে খাঁচায় পুরতে পারতাম।কিন্তু তখন পার্টি থেকে কল আসায় আমাকে তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে হলো।এই এমপি হয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা।বিয়ের সময়ও বিয়ে ফেলে পার্টির কাজ করতে হয়।আর তোদের মতো গাধার হাতে আমি আমার পাখি ও পাখির বাচ্চা দেখে রাখতে গিয়েছিলাম।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো এই বেকুবগুলো ওদের দেখে রাখতে পারবে না। তাইতো পাখি তার বাচ্চা নিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে পালিয়েছে।

কথাগুলো বলে রোশান নিজের চুলগুলো জোরে খামচি দিয়ে ধরে হাঁটু মুরে বসে পরলো।ওর মাথা কাজ করছে না।এতদিনের কষ্ট যেই সফল হতে যাবে তখুনি সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো।সারা গ্রাম খুঁজলেও গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা রমিজ সাহেবের বাড়ি রোশানের লোক যায়নি।নয়তো নোভাকে পেতে এক মিনিটও লাগতো না।আসলে ঐ বাড়িটা গাছ-গাছালিতে ঘেরা বলে বাড়িটা দূর থেকে দেখা যায় না। মনে হয় জঙ্গলের মতো।তাই সেদিকে পা বাড়ায়নি কেউ।

রোশান নিজেকে কিছুটা শান্ত করে অপরপাশের চেয়ারে বসে পরলো।ভেঙে পরলে চলবে না। তাকে আবার ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সাজাতে হবে। নোভাকে যে তার চাই।বিরবির করে বলে উঠলো।

রোশানঃ কতদিন পালিয়ে বেড়াবে পাখি?তোমায় তো এই রোশানের খাঁচায় বন্দি হতেই হবে।তোমার স্বামী নেই তো কি হয়েছে? আমি তো আছি।যা আমার তা আমি জোর করে হলেও আদায় করে নেই। তাহলে তোমাকে কি করে ছেড়ে দেই।আমার যদি তোমার বাচ্চাসহ তোমাকে মেনে নিতে অসুবিধা না হয় তাহলে তোমার এতো অসুবিধা কেন? কত আদর-যত্ন করে বলেছিলাম, তোমার ছেলেকে আমার পরিচয়ে বড় করবো,কিন্তু তুমি মানলেই না।তোমার স্বামীর শেষ চিহ্ন নাকি তোমার ছেলে,তাকে তার পরিচয়ে বড় করবে।আমিও দেখবো তুমি সেটা কিভাবে করো?এবার এমন গুটি চালবো নিজে এসে আমার পায়ে লুটিয়ে পরে আমাকে বিয়ে করতে চাইবে।

বিরবির করে নিজের মনের সাথে কথা বলে শয়তানি হাসি দিলো রোশান।এত সহজে হার ছাড়ার ছেলে রোশান নয়।যদি হতো তাহলে তো এমপি পদে পাস করতো না।তমাল, নাঈম,আরাফাত একে অপরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে রোশানের মনে আসলে কি চলছে।

🦋🦋🦋

সূর্যি মামা তার লাল কুসুমের আভা নিয়ে পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারছে।চারিদিকে পুরো ফাঁকা। রাস্তাঘাটে কোন মানুষ নেই। গ্রামের বাড়ির মানুষ যদিও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে। তবুও আশেপাশে পুরো নির্জন।যতদূর চোখ যায় শুধু ফসলের মাঠ।প্রকৃতির এই রূপটা যেনো আল্লাহ নিজ হাতে সবুজ রঙে সাজিয়েছে।গাছের মধ্যে পাখি কিচিরমিচির করছে।শান্ত পরিবেশে হালকা হাওয়ায় দুলছে গাছের পাতা।

আলাকান্দি যাওয়ার তিন রাস্তার মোড়ে বাইকের ওপর সানগ্লাস পরিহিত এক যুবক বসে আছে।হাতে হেলমেট ধরা।বয়স ৩০ এর উর্ধ্বে।তবে তাকে দেখে এখনো ২৫ বছরের যুবক মনে হয়। পরনে তার ফুল ব্লাক।প্যান্ট, শার্ট, সানগ্লাস, বাইক,হেলমেট, হাতের ব্যাসলাইট সবকিছু ব্লাক।এক কানে একটা টপ আছে। সেটাও কালো। যে কেউ দেখে তাকে ব্লাক লাভার বলে খেতাব দিবে।ফর্সা শরীরে ব্লাক রংটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ছেলেটার নাম তানভীর রহমান।ডাকনাম তায়াং।

তায়াং আশেপাশে তাকিয়ে মানুষ খুজতে খুজতে পকেট থেকে বেনসন সিগারেটের পেকেট-টা বের করলো।তারপর গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সিগারেটে টান দিলো।সিগারেটের প্যাকেটটা আবার পকেটে রেখে বাইকে আরাম করে বসলো।
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কাউকে পাওয়া যায় কিনা তাই দেখতে লাগলো।মিনিট দশ ধরে এই তিন রাস্তার মোড়ে বসে আছে। কিন্তু কোন মানুষের টিকিও দেখেনি।এবার সে বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো।সামনে একটা ইটের রাস্তা আর বাকি দুটো মাটির কাঁচা রাস্তা। পাশেই বাঁকা হয়ে পরে আছে একটা সাইনবোর্ড। যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে “আলাকান্দি এই দিকে”।কিন্তু বাঁকা হয়ে পরে থাকায় তায়াং বুঝতে পারছে না আসলে কোনদিকে।এক সময় ওর বিরক্তির অবসান হলো।এক মধ্য বয়স্ক লোককে ঘাসের বোঝা নিয়ে এদিকেই আসতে দেখলো তায়াং।চট করে বাইক থেকে নেমে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

তায়াংঃ চাচা,আলাকান্দি যাওয়ার রাস্তাটা কোন দিকে?

লোকটা ঘাসের কারণে ভালো মতো চোখেও দেখছে না।চোখের সামনের থেকে কিছু ঘাস সরিয়ে তায়াংকে জিজ্ঞেস করলো।

—– কার বাইতে(বাড়িতে) যাইবেন?

তায়াংঃ রমিজ ব্যাপারীর বাড়িতে।

—- আপনে কি হোন তার?

তায়াং-এর রাগ উঠলো।এখন কি এই লোককে তার কুন্ডলী বলতে হবে। আচ্ছা ঝামেলা তো।অন্য কেউ হলে রাগটা ঝেড়ে ফেলতো।কিন্তু অচেনা মানুষের সাথে রাগারাগি করা ঠিক হবে না। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বিষয়টা হজম করে নিলো।

—- কি কথা কন না কে?কি হোন তার?

তায়াংঃ আপনি কি বলবেন তার বাসাটা কোনদিকে? আমার একটু তাড়া আছে।জলদী যেতে হবে।

—- দেহেন, এত সকাল সকাল কারো বাড়ি যাইবেন। তা ভালা কথা।কিন্তু দেইখেন চোর -ডাকাত কইয়া কেউ জানি ধোলাই না দেয়।

কথাগুলো বলে হো হো করে হেসে উঠলো লোকটা।তায়াং-এর মনে হচ্ছে এই লোকের মাথায় নির্ঘাত সমস্যা আছে। নয়তো এমন পাগল-ছাগল কথা বলতো না।তায়াং বিরক্ত হয়ে চলে যাওয়ার জন্য পথ ধরলো।ফালতু লোকের সাথে কথা বলে ওর মেজাজ পুরো বিগড়ে গেছে। তিন ঘন্টা লাগিয়ে ঢাকা থেকে এখানে এসেছে। গতকাল রাতে নোভার চিন্তায় ঘুম আসেনি।অপেক্ষার প্রহর গুণেছে।কখন সকাল হবে আর কখন এখানে থেকে নোভাকে নিয়ে যাবে।রাতে রমিজ ব্যাপারীর মোবাইল দিয়ে কল করে আলাকান্দি গ্রামে এই তায়াংকেই আসতে বলেছে নোভা।তায়াং তো পারলে তখুনি চলে আসে।কিন্তু নোভা বারণ করায় আসেনি।ফজরের নামাজ পরে এক মিনিটও দেরী করেনি।অর্ধেক রাস্তায় যাওয়ার পর লোকটা তায়াং কে ডাকলো।

—– আরে খাড়ান (দাঁড়ান)।

তায়াংঃ কি বলবেন জলদী বলেন? আপনার ফালতু কথা শোনার কোন টাইম আমার নেই। আর আমি কাউকে কৈফিয়ত দিবো না। (কড়া গলায়)

—– আরে মিয়া চেতেন কে? আমি তো আপনেরে পরীক্ষা করতাছিলাম।এই উত্তরের কাঁচা রাস্তা দিয়া গেলেই শেষ প্রান্তে দুইডা ঘর দেখবেন।হেইডাই (সেটাই) রমিজ ভাইয়ের বাড়ি।

তায়াংঃ থ্যাংন্কস।

ছোট করে ধন্যবাদ জানিয়ে তায়াং বাইকে উঠে চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিলো।পেছন থেকে লোকটা চেচিয়ে বলে উঠলো।

—- সাবধানে যাইয়েন।রাস্তা বেশি ভালা না।গাড়ি উল্টাইয়া পরতে পারেন।

লোকটা সম্ভবত আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু ততক্ষণে তায়াং বহুদূরে চলে এসেছে। অনেক কষ্ট করে একসময় কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে গেল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে