পূর্ণিমা সন্ধ্যায় পর্ব ০১

0
3568

পূর্ণিমা সন্ধ্যায় পর্ব ০১
লেখিকা_তাসনীম_তুষার

আজ আবহাওয়াটা ভীষণ ভালো, সূর্য উজ্জ্বল দিন। ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, খুব গরম অথবা খুব ঠান্ডা ও না, সাথে মৃদুমন্দ বসন্ত বাতাস। লস এঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাস এর সুবিশাল সবুজ ঘাসে আবৃত লন, চারপাশে প্রচুর গাছগাছালি আর তাতে ধরেছে নান রঙের ও বর্ণের ফুল। এছাড়া লন এর চারপাশে ল্যাম্পপোস্ট এর মত খাম্বা গুলোতে ঝাড়বাতির মতো করে নানা রকম ফুলের ঝাড় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আরও আছে টিউলিপ এর সমারোহ প্রত্যেকটি গাছের গোড়ায়। তার সাথে যোগ হয়েছে ছোট ছোট প্রজাপতি দের আনাগোনা যা জানান দিচ্ছে বসন্ত এসেছে বলে।

সেই সুবিশাল লন এর এক কোনে গাছের পাশে বসে আছে তিয়াশা। সাথে আছে ম্যাথিউ আর প্যাট্রিসিয়া। একটু আগেই ক্যালকুলাস ক্লাস শেষ করে এসেছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ক্লাস শুরু হবার আগে হাতে আছে এক ঘন্টা, এই সময় টাতে গ্রুপ স্টাডি করার উদ্দেশ্যে তিয়াশা ও তার বন্ধুরা মাঠে এখন।

তিয়াশা হাবিব, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার লস এঞ্জেলেসে এসেছে যখন, তখন তার বয়স ১২। ৫ ফিট ২ ইঞ্চি উচ্চতার শুকনা পাতলা শ্যাম-ফর্সা বর্ণের মেয়ে তিয়াশা। লাজুক প্রকৃতির মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে তিয়াশার মায়াময়ী মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকে। সে আমেরিকা তে বড় হলেও মনে প্রানে সে একজন খাঁটি বাঙালি।

তিয়াশা ব্যাচেলর ইন সাইন্স এর ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্রী ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার। পড়াশোনার বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স। বেশ সিরিয়াস সে তার পড়াশোনায়, সময় নষ্ট করতে একদম ই পছন্দ করেনা। তাইতো ক্লাস শেষ করে মাঠে এসেই বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“Guys, let’s finish the calculus home work professor Christopher gave us.” (চলো প্রফেসর ক্রিস্টোফার এর দেয়া ক্যালকুলাস হোম ওয়ার্ক গুলো শেষ করে ফেলি)

প্যাট্রিসিয়া একটু অধর্য্য হয়েই বলে উঠলো,

“Oh come on Tee (তিয়াশা কে সংক্ষেপে টি বলে ডাকে), we just finished the class. Let’s refresh our mind first.” ( টি, মাত্রই ক্লাস শেষ করলাম। আগে আমাদের মাইন্ড রিফ্রেশ করি)

ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া কে সমর্থন জানিয়ে বললো,

“Tee, we still have an hour in our hand. So relax, we will finish it in no time.” (টি, আমাদের হাতে এখনো ১ ঘন্টা সময় আছে। রিলাক্স, আমরা এটা দ্রুতই শেষ করে ফেলবো)

তিয়াশা একটু কিছু ভেবে বললো,

“Ok, dear friends. Since the weather is spring like, let’s listen to a music. But it will be in my choice.” (ঠিক আছে বন্ধুরা, যেহেতু আবহাওয়া টা বসন্তের মতো, চলো একটা গান শুনে ফেলি। কিন্তু গানটি হবে আমার পছন্দের।)

ম্যাথিউ কে বলল,

“Matt (ম্যাথিউ কে সংক্ষেপে ম্যাট), give me your portable speaker.” (ম্যাথিউ, তোমার পোর্টেবল স্পিকার টা দাও তো।)

ম্যাথিউ জোন্স সাদা মার্কিন নাগরিক। তিয়াশা ও প্যাট্রিসিয়ার হাইস্কুল এর বন্ধু। একসাথে হাইস্কুল শেষ করে একই বিষয়ে একই ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করছে। গান শুনতে ভালোবাসে, কানে সবসময় হেডফোন পরে ঘুরে বেড়ায়। আর যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে, তার স্পিকার টা দারুন কাজে লাগে, মূহুর্তগুলোকে আরো আনন্দ ঘন করতে।

সবার পরিচয় যখন দিলাম, আসুন একটু জেনে নেই প্যাট্রিসিয়া সম্পর্কেও। প্যাট্রিসিয়া উইলিনস্কি একজন আফ্রিকান আমেরিকান। প্যাট্রিসিয়া আর তিয়াশা প্রতিবেশী তাই তাদের বেড়ে উঠা ছেলেবেলা থেকেই একসাথে। সেই থেকে দুজনের মাঝে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক যা আজ অব্দী বিদ্যমান।

যাই হোক, ম্যাথিউ তার ব্যাগ থেকে স্পিকার টা বের করে তিয়াশার হাতে দিলে সে তার ফোন ব্লুটুথ এর মাধ্যমে সংযোগ করে একটি বাংলা গান ছাড়ে।

“বসন্ত বাতাসে সইগো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে
সইগো বসন্ত বাতাসে।

বন্ধুর বাড়ির ফুলবাগানে
নানান বর্ণের ফুল।
ফুলের গন্ধে মন আনন্দে
ভ্রমর হয় আকুল।
সইগো বসন্ত বাতাসে।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ, তিয়াশার সাথে থেকে বাংলা গান শুনে কিছুটা অভ্যস্ত এবং বাংলা ও বুঝে কিছু কিছু তাই তারাও গানটি বেশ উপভোগ করতে থাকে। মাথার নীচে হাত দিয়ে ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। আর তিয়াশা তাদের মাঝে বসে এক পা সোজা ছড়িয়ে দিয়ে, আরেক পায়ের হাটু ভাঁজ করে হাটু জড়িয়ে তার উপরে থুতনি লাগিয়ে গানটি শুনতে থাকে একমনে। বসন্তের মৃদু মন্দ বাতাসে, তিয়াশার অবাধ্য সিল্কি লম্বা চুলগুলো ও যেন গানের তালে তালে খেলছে এবং তিয়াশার চোখে মুখে এসে লাগছে বারংবার।

বসন্তের এই গানটি বাতাসের সাথে পুরো লন জুড়ে যখন ভেসে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখন লন এর অন্য প্রান্ত থেকে দুইজোড়া চোখ স্থির হয়ে যেন তিয়াশাকেই দেখছিল।

পর্ব ০২ আসছে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে