পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৯

0
992

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৯
#লেখিকাTasneem Tushar

স্টেজে বউ সেজে অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে বসে আছে আলিয়া। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে তাকে রানী গোলাপি রঙা বেনারসি শাড়িতে, ঠিক যেন রানীই বসে আছে। চোখ জোড়া অপেক্ষারত তার হবু বরের পথের দিকে চেয়ে। কখন আসবে সে? কখন নিজের করে নিবে আলিয়াকে তার মনের রানী করে? এই মধুর অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চায়না। হঠাৎই বিস্তৃত হাসি দেখা দেয় আলিয়ার চাঁদ মুখে। ঐতো তার প্রাণভ্রমরা তার দিকেই হেঁটে আসছে। অপলক দৃষ্টিতে মনোমুগ্ধ নয়নে এই অবাধ্য মন শুধু তাহাকেই দেখিবার চায়। আচ্ছা, আলিয়া কি জানে ক্ষণিক পরে কি ঘটতে চলেছে?

আলিয়ার ধ্যানভঙ্গ হয় কারো ডাকে। লাজুক হেসে তাকিয়ে হঠাৎই ক্ষেপে যেয়ে দিয়ে দুই হাত দিয়ে দুজনের কান ধরে আচ্ছা মতো কানমলা দিয়ে বলে,

“ওরে শয়তানের দল। কোথায় ছিলি আজ সারাদিন?”

ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, “আজ তোদের বোন চলে যাচ্ছে আর আজই তোরা সারাদিন ফাঁকি দিলি আমায়?”

বোনের মায়ামাখা মুখটি দেখে দুজনের চোখের কোণে পানি জমে। পাছে আলিয়া দেখে ফেলে, তাই মুখ সরিয়ে চোখ মুছে হেসে আদনান বলে,

“তোকে যদি আজ যেতে না দেই?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আলিয়া মজা করে বলে,

“তাহলে তো ভালোই হয়। সারাজীবন জ্বালাবো তোদেরকে।” পরক্ষনেই মলিন হেসে বলে,

“তাকি আর হয় বল? যেতে তো হবেই রে।”

আদিল আলিয়ার হাত ধরে বলে,

“তোকে রেখে দিব।”

“ওরে আমার দরদী ভাইয়েরা, সারাদিন খোঁজ নেই, এখন আসছে আহ্লাদ দেখাতে তাইনা?”

“আপা, শোন তোর সাথে খুব জরুরি কথা আছে। একবার এদিকটায় আয়।”

“কি বলিস এখন আমি কিভাবে স্টেজ থেকে উঠে আসি?”

পেছন থেকে নাদিম মুজদাহীর আদিল ও আদনানকে ডেকে রাগত কণ্ঠে বলে,

“তোমাদের কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই? সারাদিন উধাও। বিয়ের সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছ মেহমানের মতো। এদিকে আমি একা সামাল দিয়ে পারছিনা। যাও ওদিকটায় কি লাগবে দু’ ভাই মিলে একটু দেখাশোনা করো।”

আদিল ও আদনান দুজনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে এবার ধমক দিয়ে বলে উঠেন,

“কি হলো? কথা কানে যাচ্ছেনা? যাও।”

তাদেরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নাদিম মুজদাহীর সেখান থেকে চলে যায়। আদনান ও আদিল এখন কি করবে বুঝতে পারছেনা। বাবার কথা শুনবে না আলিয়ার সাথে কথা বলে সব জানাবে? এদিকে নাদিম মুজদাহীর যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের মা নওরীন মুজদাহীর এসে হাজির। তিনিও বেশ ক্ষেপে আছেন বোঝা যাচ্ছে। তিনিও বেশ ঝেড়ে কথা বললেন তাদের সাথে।

বর ও কনে পাশাপাশি বসে স্টেজে। ছবি তোলা হচ্ছে। সামনে শ’খানিক লোক বিয়ের দাওয়াতে এসেছে। সবার চোখ বর ও কনের দিকে। কাজী সাহেব চলে এসেছেন, বিয়ে পড়াতে। আদিল ও আদনান অসহায়ের মতো মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে, কিভাবে বিয়ে বন্ধ করবে? এদিকে তিয়াশারাও এসে পৌঁছায়নি। প্রমাণ তো তাদের সাথেই। জোড়ালো প্রমাণ ছাড়া যে বিয়ে ভাঙা সম্ভব হবেনা।

এখনো তিয়াশারা আসছে না কেন? আর দেরী করলে তো বিয়ে পড়ানো হয়ে যাবে। চিন্তায় পড়ে যায় আদিল আর আদনান। আদনান ফোন করে তিয়াশাকে,

“কিরে তোরা কোথায়? এত দেরী করছিস কেন?”

তিয়াশা উত্তর দেয়,

“আর বলিস না, আমরা তো আরো অনেক আগেই পৌঁছে যেতাম। বের হয়েছি সেই কখন। কিন্তু কপাল খারাপ। সামনে একটা সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে, রাস্তা ব্লক করা। সামনে এগোতে পারছিনা। সামনে অনেক গাড়ির জ্যাম হয়ে গেছে।”

“হায় হায়। কি বলিস। আর বেশিক্ষন তো বিয়ে থামিয়ে রাখতে পারবো না। আর কিছুক্ষণ পরেই তো বিয়ে পড়ানো হয়ে যাবে।”

“এই থাম থাম, এই মাত্র পুলিশে সব গাড়ি ডাইভার্ট করে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। আমরা ঠিক পৌঁছে যাবো, তুই চিন্তা করিস না। বিয়ে পড়ানোটা শুধু আরো কিছুক্ষণ একটু থামিয়ে রাখ।”

“আচ্ছা দেখি কি করা যায়। জলদি আয় তোরা।”

আদনান ফোন রেখে দিয়ে আদিলকে তিয়াশাদের আপডেট জানায়। দুজনেই বেশ টেনশনে পরে যায়। কী করা যায় এখন।

অন্যদিকে নাদিম মুজদাহীর কাজী সাহেবকে ডেকে বিয়ে পড়ানোর আয়োজন শুরু করার কথা বলেন। কাজী সাহেব বলেন,

“জী, আপনারা মুরুব্বিরা সবাই একসাথে আসেন। আমরা বিয়ে পড়ানোর আয়োজন করছি। শুভ কাজে দেরী না করাই তো ভালো, তাই না।”

আদনান আদিল একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। দুজনের চোখেই একই প্রশ্ন, এখন কী হবে?

আদনান আদিলকে বলে,

“আচ্ছা, কী করা যায় এখন বলনা। আর তো দেরী করানো যাচ্ছে বলে মনে হয় না।”

“আমার মাথায় তো কিছু আসছে না, তোর মাথায় তো দুষ্টু বুদ্ধি ভরা, কিছু একটা বের কর না।”

“আচ্ছা, দাঁড়া। আমি আসছি একটু।”

বলেই আদনান দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চিৎকার শোনা যায় ঐদিকে।

দৌড়ে সবাই ছুটে যায় সেখানে। গিয়ে দেখে, আদনান তার হাত চেপে ধরে চিৎকার করছে, আর হাত থেকে একটু রক্ত ঝরছে।

আদিল দৌড়ে কাছে যায়,

“কিরে, এই মাত্র না আসলি, কিভাবে হাত কাটলো?”

আদনান কানে কানে ফিসফিস করে বলে,

“কেন, তুই না বললি বিয়ে পড়ানোর দেরী করার জন্য কিছু করতে। এখন কিছু সময় তো হাতে পাবি তোরা, নাকি? আর আমার আশেপাশে এতজন ডাক্তার, এইটুকু হাত কাটার চিকিৎসা করা তো কোনো ব্যাপারই না।”

আদিল মুচকি হাসে। আর সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“এই, জলদি আমার ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আসো। আপাতত বিয়ে পড়ানো একটু থামাও, আগে ওর হাতের অবস্থা একটু দেখে নেই আমি।”

আদনান আদিল একটু স্বস্তি পায়। আদনানের হাত কেটে হলেও, নিদেনপক্ষে এখন কিছু সময় তো পাওয়া গেলো। এখন তিয়াশাদের আসার অপেক্ষা।

*

বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে, আলিয়াকে কবুল বলতে বলছে, আর আলিয়া কেঁদে চলেছে।

আলিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে, “আলহামদুলিল্লাহ, কবুল” বলবে প্রায় ঠিক তখনই একটা কণ্ঠ বেশ উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“থামুন। এই বিয়ে হবেনা। এই বিয়ে বন্ধ করুন।”

সবার চোখ ঘুরে এখন চেঁচিয়ে ওঠা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে যে কিনা এখন সোজা স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে সাথে যাচ্ছে আরও দুজন। নাদিম মুজদাহীর ভীষণ ক্ষেপে গেছেন, নওরীন মুজদাহীর বাকরুদ্ধ। আলিয়া বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে, কিন্তু একজোড়া রক্তচক্ষু তখন ভস্মিত হচ্ছে তিয়াশার দিকে। আদিল ও আদনান তিয়াশাকে নিয়ে স্টেজে উঠে এবং অর্কেস্ট্রা থেকে মাইক হাতে নিয়ে আদিল ও আদনান সমস্বরে বলে উঠে,

“অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এই বিয়েটা হচ্ছেনা।”

নাদিম মুজদাহীর ও নওরীন মুজদাহীর কিছু বলার আগেই, আলিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং সামনে এগিয়ে যেয়ে সজোরে থাপ্পর দেয় আদিল ও আদনানের গালে।

“ফাজলামি পেয়েছিস? এসবের মানে কি?”

তারপর তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই মেয়েটা এখানে কি করছে? আহনাফ আমাকে বারবার সতর্ক করেছিল এই মেয়েটার ব্যাপারে। বলেছিল মেয়েটা ভালো নয়, দুরভিসন্ধি আছে কোনো। আমি পাত্তা দেয়নি। এখন দেখছি আহনাফের কথাই ঠিক।”

আদিল ও আদনান তখন সবার সামনেই আলিয়াকে আহনাফের আসল পরিচয়, তার অতীতে তিয়াশার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সহ সবকিছু খুলে বলে। আলিয়া কোনভাবেই বিশ্বাস করতে চায়না যে আহনাফ আর আফরান একই ব্যক্তি। প্রমাণ স্বরূপ দেখানো হয় তিয়াশা ও আফরানের ছবি, বিয়ের কাবিন নামা, এছাড়া গায়ে হলুদের দিনে তিয়াশাকে ধরে হুমকি দেয়ার ভিডিও। স্বীকারোক্তি দেয় তিয়াশার মা নীলিমা হাবিবও যে এই হচ্ছে আহনাফ ওরফে আফরান তিয়াশার প্রতারক প্রাক্তন স্বামী, যে কিনা নিজের অতীত লুকিয়ে, পরিচয় গোপন করে আরেকটা মেয়ের জীবনও ধ্বংস করতে যাচ্ছিল।

আলিয়ার কান গরম হয়ে গেছে, এসবের পরেও সে বিশ্বাস করতে চায়না যে আহনাফ একটা লোভী, প্রতারক। তখন আদনান আলিয়াকে বলে,

“আপি আমাদের কথা, এত এত প্রমাণ যখন তুই বিশ্বাস করছিস না, তুই নিজেই আহনাফকে জিজ্ঞেস কর। সে স্বীকারোক্তি দিলেই তো সব প্রমাণ হয়ে যায়, আমরা ঠিক বলছি কিনা।”

আলিয়া এবার স্টেজের যেখানে আহনাফ বসেছিল সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায় আহনাফ নেই। আরে গেল কোথায় সে? এখানেই তো ছিল? সবাই যখন ঘটনা শুনতে ব্যস্ত ঠিক সে সময়েই সুযোগ বুঝে আহনাফ ওরফে আফরান কেটে পরে। আদনান অবস্থা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

“আমরা ঠিকই বুঝেছিলাম এই ব্যাটা ঠিক পালাবে।”

তারপর জোরে বলে উঠে,

“প্যাট, ম্যাট তোমরা সামনে আসো।”

ভিড় ঠেলে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ স্টেজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, দুহাতে শক্ত করে ধরে আছে আরফান নামক শয়তান টাকে। আলিয়া সামনে যেয়ে ওর গালে চড় দিয়ে, কলার চেপে জিজ্ঞেস করতেই আরফান সব স্বীকার করে সব ঘটনা সত্য বলে। এত সব প্রমাণ সামনে হাজির করার পর, স্বীকার করা ছাড়া আফরানের আর কোনো উপায় ছিল না।

আর এখানেই সমাপ্তি ঘটে বিয়ের সব আয়োজন।

*

তিনমাস পর এক সন্ধ্যায় মুজদাহীর পরিবারে আবারও বেজে উঠেছে বিয়ের সানাই। পুরো বাড়ি সজ্জিত হয়েছে সোনালী আলোক সজ্জায়। বাড়িতে বসেছে চাঁদের হাঁট। মুজদাহীর পরিবার ভাসছে যেন আজ খুশির জোয়ারে।

কিভাবে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে