পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-১১

0
701

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ১১

এভাবেই দেখতে দেখতে তিন দিন চলে গেলো। ওদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে হয়ে গেলো। এই কয়েকদিনে অনিক তার কাজে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। প্রায় শুভ্রাকে পটিয়েই ফেলেছে। আর অন‍্যদিকে আদিলের সঙ্গে শুভ্রার সারাদিন ঝগড়া লেগেই ছিলো। সামান্য বিষয় নিয়ে তারা বড়সড় ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলেছিলো। সবাই ওদের উপর বিরক্ত। সবাই এখানে এসেছে আনন্দ করতে আর এরা সারাক্ষণ ঝগড়ায় করে গিয়েছে।

ওরা নিজেদের বাড়ি ফিরে আবার নিজেদের মতোই ব‍্যস্ত হয়ে পরলো।

তিনমাস চলে গেলো। এই তিনমাসে আদিল অনেকবার চেষ্টা করেছে শুভ্রার সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিন্তু পারেনি। মাঝখানে সে জানতে পারে শুভ্রা নাকি অনিকের সঙ্গে রিলেশনে জরিয়েছে। কথাটা শুনে যেনো ওর বুক কষ্টে ফেটে যাচ্ছিলো। ও যে শুভ্রাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। অনুভব কল করে ওর বড় বোনের বিয়েতে যাওয়ার কথা বললে আদিল না করে। কিন্তু পরে অনুভবে জোর করতে সে শুধু বিয়েতে যাবে বলে। হলুদের অনুষ্ঠানে সে যাবে না।

বিয়ের দিন…

আদিল একটা নেভি ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পড়ে উপস্থিত হলো অনুভবের বিয়েতে। ওকে দেখেই অনুভব ওকে জরিয়ে ধরে বলল,

“ভাই কতোজনকে ঘায়েল করতে আসছিস। তোকে ছেড়ে তো কোনো মেয়েই আমাদের দিকে তাকাবে না।”

রাজিব পাশ থেকে বলে উঠলো,- “শালা নিজে মেয়ে পটাইতে আসছে। আমাদের আগে বলবি না। আমরা আরো একটু সাজুগুজু করে আসতাম। এখন তো আর আমাদের কেউ পাত্তায় দিবে না।”

আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল,-” রাখ তোদের ফাউ কথা।”

অভ্র পিছনে থেকে বলে উঠলো “কি ফাউ কথা বলছিস তোরা আমি ও একটু শুনি।”

অভ্রের কন্ঠ শুনে আদিল পিছু ফিরতেই ওর চোখ আটকে গেলো। শুভ্রাও নেভি ব্লু রঙের একটা শাড়ি পরেছে। হালকা মেকাআপ,হালকা গহনায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। আদিল হা হয়ে গিয়েছে পুরো।

অনুভব আদিলকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল- “হা টা বন্ধ কর শালা। মশা ঢুকে যাবে।”

অনুভবের কথায় আদিল তাড়াতাড়ি করে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।

অভ্র আবার বলল,-“কিরে কি কথা।”

আদিল বলল, -“কিছু না।” ওদের কথার মাঝখানেই অনিক এসে হাজির। অনিক এসে বলল,

“কি অবস্থা তোদের। সবগুলো একসঙ্গে কি করছিস?”

অনুভব বলল,-“আমাদের আর অবস্থা। সবারই প্রায় গতি হয়ে গেছে দেখছি। তারমধ‍্যে কিছু কিছু অসহায় পরে পরে খাবলি খাচ্ছে।”

অনিক কপাল কুচকে বলল “মানে”

অনুভব বলল “কিছু না। তুই বুঝবি না। তো আদিল নুসরাতকে তো দেখছিনা ও কোথায়?”

নুসরাত পাশ থেকে হাউ করে উঠতেই অনুভব লাফিয়ে উঠলো। পাশে নুসরাতকে দেখে অনুভবে রেগে বলে “শয়তান মাইয়া এখনই তো আমি ভয়ে খেয়ে টপকে যেতাম। তখন আমার ফিউচার বউয়ের কি হতো? সে তো বিধবা হয়ে যেতো।”

নুসরাত বলল “চিল ব্রো। কিছু হতো না। আমি আছি না নো টেনশন।”

অনুভব বলল “তুই আছিস এটাই বড় টেনশন। ওই অভ্র, আদিল, নুসরাত,শুভ্রা তোরা কি মিলিয়ে মিলিয়ে জামা পরছিস নাকি।”

শুভ্রা এতক্ষণে খেয়াল করলো তার আর আদিলের ড্রেস মিলে গিয়েছে। সে তো অনিককে বলেছিলো মিলিয়ে পরতে কিন্তু অনিক তো সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। আর আদিল কেমনে কি!

অভ্র বলল “না তো আমি তো কারো সঙ্গে মিলিয়ে পড়ি নি।”

অনুভব বলল “বুঝি বুঝি। যাইহোক চল তোরা আপুর সঙ্গে দেখা করিয়ে নিয়ে আসি।” অনুভবের পিছু পিছু ওরা সবাই যেতে লাগলো।

শুভ্রা অনিককে খোচা দিয়ে বলল “এই তুমি আমার কথা মতো পাঞ্জাবি পড়নি কেন?”

অনিক বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলল, -“ধুরু ওই রঙের পাঞ্জাবি পরলে খেতখেত লাগতো আমাকে।”

শুভ্রা অনিকের কথা শুনে মন খারাপ করলো। কারণ এই বিয়ে উপলক্ষে সে অনিককে ওই পাঞ্জাবিটা গিফট করেছিলো। শুভ্রা অনিককে উদ্দেশ্য করে বলল “আচ্ছা বাদ এই পাঞ্জাবি তে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। এখন বলো তো আমাকে কেমন লাগছে।”

অনিক শুভ্রার কথা পাত্তা না দিয়ে শুভ্রাকে এরিয়ে অন‍্যজায়গায় চলে গেলো। এতে শুভ্রার অনেক মন খারাপ হলো। শুভ্রা অনুভবের আপুর সঙ্গে দেখা করে চুপ করে এক নিরিবিলি জায়গায় দাড়িয়ে রইলো। সে দেখলো অনিক একটা মেয়ের সঙ্গে অনেক ফ্রি হয়ে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। অনিকের শুভ্রার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।

আদিল অনেকক্ষণ যাবত ওদের খেয়াল করছে। শুভ্রার কাদো কাদো মুখ দেখে শুভ্রার কাছে যেতে নিবে তখনই রাজিব ওর হাত ধরে আটকিয়ে ধরে বলে, -“যাস না অনিক আর শুভ্রার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আগামী সপ্তাহে ওদের বিয়ে।”

রাজিবের কথা শুনে আদিলের যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। এই প্রথম সে কাউকে ভালোবাসলো। আর তার বিয়ে হবে তারই প্রাণপ্রিয় এক বন্ধুর সঙ্গে। কষ্টগুলো সব দলা পাকিয়ে আসছে যেন ওর। ও মুখে মিথ‍্যা হাসি নিয়ে বলল “ও তাই নাকি। এ তো অনেক ভালো একটা খবর। শালা বিয়ে করছে আর আমাকে বললও না।”

অনুভব বলল, -“ও অনেক বার বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শুভ্রার কথা উঠতেই তুই ওকে থামিয়ে দিয়েছিলি।”

আদিল বলল “ও আচ্ছা।” আদিল অনিকের কাছে গিয়ে ও গলা জরিয়ে ধরে বলল “অভিনন্দন দোস্ত। দোয়া করি তোদের মেরেজ লাইফ অনেক ভালো ও আনন্দে কাটুক। ট্রিট দিস কিন্তু আবার ভুলে যাস না।”

অনিক বলল, -” কিরে ভাই তোর চোখে পানি কেন?”

আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল, -“আসলে চোখে যেন কি একটা পরেছে তেমন কিছু না। আচ্ছা তাহলে আমি আসি আমার একটা জরুরি কাজ পরে গিয়েছে।”

অনিক বলল- “আর একটু থেকে যা।”

আদিল বলল, -“না ভাই আর থাকা হবে না।”

অনুভব বলল, -“ওই আদিল থেকে যা বলছি।”

আদিল বলল, -“সোনা ভাই আমার যেতে দে আমাকে। অনেক জরুরি কাজ পরে গিয়েছে।”

অনুভব বলল, -“অন্তত কিছু খেয়ে যা। আপু শুনলে কিন্তু মন খারাপ করবে।”

আদিল পাশের টেবিলে থাকা একটা শরবতের গ্লাস নিয়ে শরবত খেয়ে বলল, -“এখন যাই।” বলেই আর কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

সে বাহিরে বের হয়ে তার বাবা ইমরান সাহেবকে কল দিলো। দুইবার রিং হতেই ইমরান সাহেব কল রিসিভ করলেন।

আদিল বলল, -“আব্বু তুমি যে আমাকে বিদেশ যাওয়ার কথা বলছিলে তার ব‍্যবস্থা করো। আমি যাবো দুই তিনদিনের মধ্যেই।”

ইমরান সাহেব বললেন, -“আদিল তোমার কি কিছু হয়েছে?এমন শোনাচ্ছে কেন তোমার কথা!”

আদিল বলল, -“না আব্বু কিছু হয়। তুমি তাহলে ব‍্যবস্থা করো। আমি এখন তাহলে রাখি।” বলেই কট করে কল কেটে দিলো।

———————-

আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব। বৃষ্টি সুমিষ্ট সুগন্ধ দিয়ে চারিপাশ মো মো করছে। আকাশের ও হয় তো মন খারাপ তাই তো সে তার মনকে হালকা করতে বর্ষণ হিসেবে বয়ে পরতে চাচ্ছে। রাস্তার মানুষজন সবাই নিরাপদ স্থানের উদ্দেশ্য ছুটছে যাতে বর্ষণ তাদের স্পর্শ না করতে পারে। ইতোমধ্যে বর্ষণের ধারা শুরু হয়ে গিয়েছে। আদিল একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার মাটির দিকে তাকিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরলো। তার চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে। তার সঙ্গেই কেন এমনটা হতে হলো। দীর্ঘ দুইঘন্টা পর বিষন্নভাবে ঢুলু ঢুলু পায়ে বাড়িতে পৌঁছলো সে। আদিলের মা তার ছেলের এই অবস্থা দেখে আতকে উঠলেন। এ কি অবস্থা তার হাসিখুশি ছেলেটার। যার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে এমন বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন? আদিলের মা বললেন,

-“বাবা তোর কি হয়েছে, তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

আদিল অনেক কষ্ট নিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল, -“আম্মু আমার আবার কি হবে কিছুই হয় নি। আমি তো একদম বিন্দাস আছি। আচ্ছা আম্মু আব্বু আসে নি।”

আদিল মা ছলছল নয়নে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, -“তুই আমাকে আমাদের সবাইকে রেখে বিদেশ চলে যাবি।”

আদিল বলল, -“আম্মু আমি তো একবারের জন‍্য যাচ্ছিনা এই ধরো বছর দুয়েক এর মতো থাকবো তারপর তো আবার চলে আসবো। তা আমি কবে যাচ্ছি আব্বু কিছু বলে নি।”

আদিলের মা বললেন, -“কাল সকালে ছাড়া নাকি এইমাসে যাওয়ার আর সুযোগ নেই।” তাই কালকে বলে হু হু করে কেঁদে উঠলেন।

আদিল মুচকি হাসি দিয়ে ওর মাকে জরিয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকলো আর মনে মনে বলল……

( চলবে )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে