পারফেক্ট কাপল পর্ব-০৫

0
1191

#পারফেক্ট_কাপল
#পর্বঃ৫
#ইনান

পাত্র পক্ষের সামনে অবাক হয়ে পাত্রের দিকে তাকিয়ে আছি । পাত্র প্রথম অবাক হলেও এখন ওর দৃষ্টি শান্ত । আমি এখন ও অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি । পাত্র যে আর কেউ না অগ্নি । আমি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিই তখন অগ্নির মা বলে উঠে ।

“যাও তোমরা আলাদা কথা বলে আসো

আমি শুধু মাথা নাড়ালাম ।যাক একটা বিষয় নিশ্চিন্ত এই বিয়েটা হবে না কারণ অগ্নি তো আমাকে পছন্দই করে না ।

আমি অগ্নিকে নিয়ে নিজের রুমে আসলাম । অগ্নি গিয়ে আরামসে আমার বিছানায় বসল । আমি দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একদমে বলতে শুরু করলাম ।

“আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না । আমি জানি আপনিও আমাকে পছন্দ করেন না আমি আপনাকে সিনিয়র ছাড়া আর কিছু ভাবি না তাই প্লীজ নিচে গিয়ে বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয় নি

কথা গুলো একদমে বলে অগ্নির দিকে তাকাতেই আমার আত্মা কেপে উঠলো । উনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে । দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি খুব রেগে আছেন । উনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেন ।

“এই মাত্র কী বললে ?
“কে কেন আ.আপনি শু নতে পান নি
“তুতলাও কেন ? কিছুক্ষণ আগে যেভাবে বলছিলে ঐভাবে বলো
“দেখুন ভালো হচ্ছে না
“কী ভালো হচ্ছে না ?
“আমাকে ছাড়ুন ।
“ছাড়বো একটা শর্তে
“কী শর্ত ?
“নিচে গিয়ে সবাইকে বলতে হবে তুমি বিয়েতে রাজি
“আমি কখন ও রাজি হব না
“ওকে তাহলে আমিও ছাড়ছি না তোমায়
“মানে কী ?
“আচ্ছা তুমি কী চায়ছো আমি তোমায় কিস করি

অগ্নির কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে । এই ছেলে পাগল নাকি । আমার ভয় লাগলো আমি বললাম

“না না এরকম করবেন না । আমি রাজি
“গুড এখন নিচে যাই চলো
“হুম

নিচে এসে বললাম আমরা রাজি বিয়েতে । সবাই খুব খুশি সবার মুখেই হাসি লেগে আছে শুধু আমার মুখে নেয় । আমার তো ইচ্ছে করছে এই অগ্নির বাচ্চাকে পানি ছাড়া ধুয়ে দিতে ।

ডেইট ঠিক করা হলো । ৯ দিন পর বিয়ে । আমার কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে । কোন কিছু ভালো লাগছে না
.
.
.
পরের দিন ,
ভার্সিটির মাঠে বসে আছি । ইশা আর রিমি গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যা আমার জন্য খুব বিরক্তিকর কিন্তু কিছু বলছি না । এখন ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না । হঠাত্‍ রিমি বলে উঠে

“অগ্নি ভাইয়া তোকে পছন্দ করে ?
“আমি জানি না

তখন পিছন থেকে অগ্নি বলে উঠে
“আমি জানি গো শালিকারা
“আরে হবু জিজু যে

ইশা বলে উঠে । ইশার কথা শুনে মুচকি হেসে অগ্নি আমার পিছনে এসে দাড়িয়ে বলে
“আমি আমার হবু বউকে নিয়ে যাচ্ছে তোমাদের কোন আপত্তি নেই তো
তখন দুজন একসাথে বলে উঠে
“কোন আপত্তি নেই
“আমার আপত্তি আছে
“এখানে তোমার মত কেউ জানতে চায় নি ।

আমার রাগ লাগলো অগ্নির কথা শুনে । ও নিজেকে ভাবে কী ? আমি যাবো না হুহ ।

“বউ চলো
“আমি যাব না
আমার কথা শুনে অগ্নি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে
“তুমি কী চাও আমি তোমাকে সব স্টুডেন্টদের মাঝে কোলে তুলে নিয়ে যায়

আমি ওর দিকে তাকাতেই ও আমাকে চোখ টিপ দেয় । আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে উঠে গেলাম । রিমি আর ইশাকে টাটা বলে আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে অগ্নি
.
.
.
১ ঘন্টা ধরে গাড়িতে বসে আছি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বলছে না । আর কিছু বলতে গেলে এমন ভাবে তাকায় পরে আর সাহস পাই না কিছু বলার মতো ।

“বলছিলাম কী
“হুম বলো
“আমরা কোথায় যাচ্ছি
“গেলেই দেখতে পাবে
“কেন এখন বললে কী হয়
“চুপ করে বসতে পারো না তুমি
“না পারি না
“তোমাকে চুপ করানোর পদ্ধতি আমার জানা আছে জান

বলেই গাড়ি থামিয়ে আমার খুব কাছে চলে আসে । আমি ভয় পেয়ে দরজার সাথে মিশে যাই । যদি পারতাম ভিতরে ঢুকে যেতাম

“এখন কী ঘটতে পারে ভাবতে পারছো ?
“মা নে
“যেমন কিস
“না! আমি চুপ থাকবো । একটা কথাও বলবো না । একদম চুপ হয়ে থাকবো ।
“হুম গুড ।

অগ্নি আমার কাছ থেকে সরে যেতেই একটা লম্বা শ্বাস নিলাম । হার্ট খুব দ্রুত বিট করছে । এই ছেলেটার কারণে নির্ঘাত কোন একদিন হার্ট এট্যাক করবো আমি ।

আমি অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি ও খুব মনযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে । ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি । আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি । হঠাত্‍ করে গাড়ি থেমে যেতেই আমি অগ্নির দিকে তাকালাম । সে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে

“নামো
“কেন
আমার প্রশ্নে সে দাতে দাত চেপে বলে
“নামলেই দেখতে পাবে

আমি আর কিছু না বলে ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নামলাম । অগ্নি এসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে । সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমরা নদীর তীরে আসলাম ।

“আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলেন ?
“রোমান্স করতে
“আ মি বাসায় যা বো
“এই তুমি তুতলাও কেন
“কিছু না । আমি বাসায় যাবো এখনি
“বলছি না কিছুক্ষণ পর গিয়ে দিয়ে আসবো । এখন আমরা নৌকায় উঠবো

আমার নৌকা জিনিসটায় উঠতে প্রচুর ভয় লাগে । সেই ছোট থেকেই নৌকায় উঠতে আমার ভয় লাগে । আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে মাথা ঘোরাচ্ছে এরপর আর কিছু মনে নেই চোখ বন্ধ হয়ে এলো ।
.
.
.
চোখ খোলে দেখি আমি হাসপাতালের বেড এ শুয়ে আছি । আমার পাশে চেয়ার টেনে আমার হাত ধরে অগ্নি বসে আছে । চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে । কেবিন এর বাইরে আব্বু আর আম্মু দাড়িয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে । আম্মু কেবিনে এসে বলে

“চল মা বাসায় যাবো
“হুম চলো
“হুম আন্টি চলুন । আমি আপনাদের দিয়ে আসছি

তারপর অগ্নি গাড়ি করে এসে আমাদের বাসায় দিয়ে যায় । অগ্নি কেমন অপরাধীর মতো ছিল । আমার দিকে সে তাকায় নি । ওর চোখ দুটো লাল হয়ে ছিল মনে হচ্ছিল কান্না আটকানোর চেষ্টা করছিল
.
.
.
রাত ১২ টা
ঘুমের মাঝে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল । আমি চোখ খোলেই নিজেকে একটা ছেলের বাহুতে আবদ্ধ পেলাম । চিত্‍কার করতে যাবো তখনি ছেলেটা আমার মুখ চেপে ধরে বলে

“আমি অগ্নি
উনি এটা বলে মুখ ছেড়ে দেন । আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
“আপনি এখানে কী করছেন ?
“নিধি আমি সরি । আমি জানতাম না যে তুমি নৌকায় উঠতে এতো ভয় পাও তাহলে কখন ও নৌকায় যেতাম না

আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে অগ্নি । আর এদিকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে । এই কচ্ছপটার এভাবে জড়িয়ে ধরতে হয় নাকি । তবু মুখে হাসি টেনে বলি

“আচ্ছা ঠিক আছে
এটা বলাতে আমাকে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । আজকে মনে হয় আমি ওয়াক্কা হয়ে যাবো । আজকের পর থেকে নিধি নামক আমিটা থাকবো না । বিদায় পৃথিবী ভালো থেকো ।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে