পাত্র বদল পর্ব-০৭

0
1993

#পাত্র_বদল
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক


মিতুর বাবা আসবেন আগামীকাল। তাকে নিতে আসবেন। সাথে তার বরকেও।মিতু না করতে যেয়েও পারলো না। বাবার মুখে মুখে কী করে বলবে তুমি এসো না! তাছাড়া তারও তো বাবাকে দেখার জন্য,ছোট ভাই,মা আর বাড়িটার জন্য মন খা খা করছে। ইচ্ছে করছে বাতাসের মতো তীব্র গতিতে ছুটে যেতে বাড়ির পানে!তাই সে বলে দিলো,’আসো বাবা।’
কিন্তু ফোন রাখার পর তার ভয় হচ্ছে। তার বাবা এখানে এসে যখন দেখবেন জুয়েল কথা বলতে পারে না তখন কেমন হবে?যদি তার বাবা এটা মেনে নিতে না পারেন?
ইয়াসমিন বেগম তাকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে কাছে এসে বসলেন। তারপর তার কাঁধে হাত রেখে বললেন,’কী হয়েছে মা,কী নিয়ে ভাবছো অতো?’
মিতু খানিক সময় চুপ করে থেকে বললো,’বাবা আসবেন আগামীকাল!’
ইয়াসমিন বেগম হাসলেন। হেসে বললেন,’
আলহামদুলিল্লাহ।এটা তো সুখবর!’
মিতুর মুখ তখনও মলিন। চোখের কাছে জল কিলবিল করছে।যেন আঙুলের টোকা দিলেই টুপ করে পড়ে যাবে সেই জল!
ইয়াসমিন বেগম আতঙ্ক গ্রস্ত গলায় বললেন,’ওমা, তোমার চোখে তো পানি!কী হয়েছে মা সত্যি করে বলতো?’
মিতু ভেজা ভেজা গলায় বললো,’বাবা আমায় নিতে আসবেন। সাথে আপনার ছেলেকেও। তিনি এসে যখন জানবেন সবকিছু তখন কী হবে!’
ইয়াসমিন বেগম বললেন,’সত্যিটা জেনে যাওয়ায় তো ভালো।সময় থাকতে জানা ভালো মা।পরে আরো কষ্ট বাড়বে।’
‘না মা।বাবা অসুস্থ হয়ে যাবেন এসব জানার পর। সহজে তিনি মেনে নিতে পারবেন না।আমি চাই না বাবাকে অতো বড় একটা আঘাত দিতে।’
ইয়াসমিন বেগম খানিক সময় চুপ করে থেকে মাথা চুলকে ভাবলেন কিছু একটা। তারপর ফট করে বললেন,’মিতু, তুমি কিছু ভেবো না।আমি সব ম্যানেজ করবো।উনি কিছুই আঁচ করতে পারবেন না!’
মিতু মুখ লম্বা করে বললো,’ মা আপনি তো এখনই ভুল করছেন পরে কীভাবে ম্যানেজ করবেন সবকিছু !’
কথাটা বলে মিতু হাসলো।
ইয়াসমিন বেগম তার ভুল খুঁজে বের করতে পারছেন না।
মিতু বললো,’মা, আপনি আজ থেকে আমায় বউমা বলে ডাকবেন। নয়তো আব্বার সামনেও ভুল করবেন।’
ইয়াসমিন বেগমের চোখে জল এসে গেল এই কথা শুনে।তার যে কত ইচ্ছে ছিল তিনি তার পুত্রবধূকে বউমা বলে ডাকবেন!
ইয়াসমিন বেগম চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তারপর জুয়েলের কাছে গেলেন। জুয়েল তখন বসে আছে উঠোনে পিয়ারা গাছটার তলে।ওর মন আজ খুব প্রফুল্ল।সে এখানে বসে থেকে মিতুর কথা ভাবছে। অবশেষে তবে মিতু তার প্রেমে পড়েছে!
জুয়েলের ভাবতে খুব ভালো লাগে। চোখ খোলা রেখেই সে যেন স্বপ্নের মতো করে দেখতে পায় মিতু এসে বসেছে তার পাশে।তার গায়ের সাথে গা মিশিয়ে রেখেছে। এবার তার হাত ধরছে। আঙুল নিয়ে খেলছে। চুলে চিরুনি করে দিচ্ছে। জুয়েলের শরীর আচমকা শিরশির করে উঠে।সে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে তখন।

ইয়াসমিন বেগম কাছে গিয়ে জুয়েলের ধ্যান ভেঙ্গে দেন। জুয়েল বিরক্ত হয়। এমন একটা সুন্দর মুহূর্ত তার মা এসে নষ্ট করে দিতে পারলো!
জুয়েল মনে মনে বলে,আজ যদি আমি কথা বলতে পারতাম তবে বলে দিতাম, মা, তোমরা কী সময় বুঝো না!
জুয়েল কথাটা ভেবে মিটিমিটি হাসে।
কিন্তু সেই হাসি নষ্ট করে দেন ইয়াসমিন বেগম। তিনি জুয়েলকে হাতেই ইশারায় বলেন, আমার সাথে চল। আমার পেছন পেছন আয়!
মা তো !তাই আর সবকিছু লিখেই বুঝাতে হয় না। ইশারায় কিছু বললেও সে বুঝতে পারে!
জুয়েলকে ইয়াসমিন বেগম নদীর পাড়ে নিয়ে গেলেন। ওখানে গিয়ে একটা কাগজ দিলেন ওর হাতে। সেই কাগজ ভর্তি লিখা। ইয়াসমিন বেগম ওখানে লিখেছেন,’বাবারে, ভাগ্য আমাদের সাথে অদ্ভুত এক খেলা খেলছে। সবকিছু পেয়েও যেন কিছুই আর পাওয়া হচ্ছে না। আগামীকাল মিতুর বাবা আসবেন।বিকেল বেলা তিনি মিতুকে নিয়ে চলে যাবেন। তবে মিতু আবার আসবে। মেয়েটা অনেক ভালো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তোকে আগামীকাল সারাদিন বাড়িতে থাকা যাবে না। তুই চলে যাবি তোর মামার বাড়ি। ওখান থেকে আসবি পরদিন।’
জুয়েল লিখাটা পড়ে স্তম্বিত হয়ে সবুজ ঘাসের উপর ধপাস করে বসে পড়লো। ইয়াসমিন বেগম ওখান থেকে টুপ টুপ করে হেঁটে বাড়িতে চলে এলেন। এখানে থাকলেই তার মন খারাপ হবে। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কাঁদবেন তিনি। জুয়েলও কাঁদবে। তিনি কোনদিন এমন টা করতেন না।কেউ আসতো তবুও তিনি ছেলেকে আঁড়াল করতেন না। কিন্তু এবার করতে হচ্ছে মিতুর জন্য।মিতুর বাবার যদি কিছু হয়ে যায়!
ইয়াসমিন বেগমের চোখ ভর্তি জল। সেই জল লুকিয়ে তিনি চললেন সোয়েলের ঘরের দিকে।

জুয়েল কাঁদছে। চুপিচুপি নদীর পাড়ে বসে কাঁদছে। এমন জীবন রেখে কী লাভ তার? আবার মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার! কিন্তু মরতে পারছে না একটা ক্ষীণ আশায়।আশাটা হলো মিতু একদিন এসে তার কাছে বসবে। তারপর তার আঙুলের ভেতর মিতুর আঙুল গুঁজে দিয়ে বলবে, জুয়েল,আমি তোমায় ভালোবাসি।
সেদিন খাতায় কিচ্ছু লিখতে হবে না। জুয়েল এমনিতেই বুঝে যাবে। বুদ্ধিমান ছেলেরা মেয়েদের চোখ দেখলেই বলতে পারে কে তার প্রেমে পড়ে গেছে!

ইয়াসমিন বেগম সোয়েলের কাছে গিয়ে বলেন,’শোন বাবা, আগামীকাল মিতুর বাবা আসবেন মিতুকে নিয়ে যেতে।ফেরত নাইওর।সাথে নাকি মেয়ের জামাইকেও নিবেন। কিন্তু তিনি তো আর জানেন না এখানে কী সব ঝামেলা হয়ে আছে।মিতু চায় না তার বাবা কোন ভাবেই জানোক এই বিষয়টা।তাই আগামীকাল তোকেই মিতুর বরের অভিনয় করতে হবে।ওর সাথে ওর বাবার বাড়িতেও তোকেই যেতে হবে।কী করবি বল বাবা!সব পরিস্থিতি!’
সোয়েল শোনে একেবারেই চমকে উঠে। সে বলে,’কী সব বলছো মা? এ কী করে সম্ভব!’
ইয়াসমিন বেগম বলেন,’বাবারে,মিতুর বাবা অসুস্থ মানুষ।মিতু চায় না তার বাবার কোন ক্ষতি হোক!’
‘কিন্তু সত্য?সত্য কতদিন আঁড়াল করে রাখবো আমরা এভাবে?’
‘যতদিন মিতু প্রকাশ না করবে ততদিন!’
‘বললেই হলো!এটা কী কোন পুতুল খেলা মা?’
‘হ্যা এটা পুতুল খেলাই। এবং ভুল করে হলেও এই খেলা শুরু করেছি আমিই। এবার এই খেলা খেলে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই! ‘
‘আমি পারবো না মা। এই খেলা আমি খেলতে পারবো না।’
ইয়াসমিন বেগম ছেলেকে বোঝ দেন। বলেন,’এই জগতের আসল কারিগরই তো পুতুল বানিয়ে খেলছেন। আমরাও পুতুল। আমাদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তিনি যেভাবে যা ইশারা করছেন সেভাবেই তা আমরা করে যাচ্ছি।’
মার কথা ফেলনা করা যায় না!সোয়েলও পারলো না।সে বললো,’মা আমি তোমার কথা যেভাবেই হোক রাখবো।’

রাতের বেলা ইয়াসমিন বেগম মিতুকে বলেন,’মিতু,আমি বলেছিলাম না সবকিছু ম্যানেজ করবো তা করে ফেলেছি।’
মিতু এবার ফিক করে হেসে উঠলো। হেসে বললো,’মা আপনি আবার ভুল করেছেন।’
ইয়াসমিন বেগম হেসে বললেন,’বউমা, আর ভুল হবে না।’
তারপর ইয়াসমিন বেগম মিতুকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন।মা যেমন তার সন্তানকে আদর করে দেয় তেমন ভাবে মিতুকে আদর করে দিতে দিতে তিনি বললেন,’শোন বউমা, আগামীকাল থেকে সোয়েল তোমার নকল বর সাজবে। আর তোমার সাথে সেই যাবে তোমাদের বাড়ি।’
মিতু অপারগ। পরিস্থিতি তাকেও ইচ্ছে মতো নাচাচ্ছে।সে বললো,’আচ্ছা মা।’

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে