নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ৪স

0
1589

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#Written_by_Tarin_jannat
#পার্ট০৪

কটেজে ফিরেই ব্লেজার খুলে ছুড়ে মারে ফাহান।আজকের মতো ইনসাল্ট কখনো হয়নি সে।ইভেন কখনো ভাবেনি এভাবে সবার সামনে নিজেকে ছোট হতে হবে।তার দোষটায় বা কোথায়??সে তো রাহার ফোনটা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলো দেখা হয়েছিলো বলে। দেখা না হলে হয়তো ফোনটা নিজের কাছেই রেখে দিতো।

–“এই ফোনের জন্য সব হয়েছে” (বলেই ছুড়ে মারতে গিয়েও থেমে যায় কারন চাপ পরে স্ক্রিনের লাইট জ্বলে উঠে,,এবং রাহার হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে,,ফেলতে গিয়েও ফেলে না কারন হাত আর সামনে আগাচ্ছিলো না)

ফোনটা আগের ন্যায়ায়ে রেখে দিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে যায়। বের হতেই দেখে আবির আর নোভা দাড়িয়ে আছে। তাদের চেহেরার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেনো ফাহান কোনো অপরাধ করেছে।আর তারা সেই অপরাধের কারন জানতে এসেছে।

–“হুয়াট”? (ফাহান)

–“মেয়েটা কে?? “এভাবে পেছনে ছুটেছিলি কেন”??(সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে)

–“আমারও সেম প্রশ্ন?? ” Who is she fahan”??

ফাহান তাদের কথা আর কানে না নিয়ে ব্যাগ থেকে নীল রঙের একটা টি-শার্ট নিয়ে দুজনের সামনে গিয়ে দাড়ায় তারপর হালকা ধাক্কা দিয়ে দুজনকে দু’দিকে সরিয়ে দেয়।

–“”Keep your questions to yourself”!!

বলেই টি-শার্ট গায়ে জরিয়ে বেরিয়ে যায় কটেজ থেকে।
!
!
!
!

মিয়ান : দেখ রাহা,, স্যাররা প্রত্যেক বাসে চেকিং দিচ্ছে কেউ বাদ পরেছে কি না জানতে..এখন তুই না গেলে তোর সিট খালি থেকে যাবে,,তখন কিন্তু…

–“স্টপ” (বলেই নিজের ফোনটা নিয়ে কাউকে যেনো কল দেয়?)

{চিটাগং এর ভাষা ইউস করছি কারো সমস্যা না হওয়ার জন্য ট্রান্সলেট করে দিয়েছি}

–“হ্যালো! রাহান তুই হনডে?? জলদি আয়ছুনা! বাস এহন ছাড়ি দিবু! “(হ্যালো রাহান তুই কোথায়?? জলদি আয় না!বাস এখন ছেড়ে দিবে)

–“আইর আপু! আরেক্কানা থিয়ে!! (আসছি আপু আরেকটু দাড়াও)

–‘”দেরি নগরিস সরে আয় যা..(দেরি করিসনা শীগ্রই এসো)

বলেই রাহা ফোনটি কেটে দে।তাকিয়ে দেখে মিয়ান হা করে এবং অবাক হয়ে ওর কথাগুলো শুনছিলো।

-“”মুখ হাটট মাছি ডুকিবো!! (মুখ বন্ধ করো মাছি ডুকবে)

সাথে সাথে মিয়ানের হা বন্ধ করে ফেলে। এই মাঝে মাঝে রাহার মুখে অদ্ভুদ ভাষাগুলো শুনে মিয়ানের মাথা হ্যাং হওয়ার উপক্রম! তবুও নিজেকে সামলে নেই মিয়ান।

–“”তুই তো চিটাইংগা না,,তাই আমাদের ভাষাও বুঝবি না,তাই এই ছোট মাথায় এতো চাপ নিস না”!!

–“”রাহা আপু আঁয় আইস্সি!!(রাহা আপু আমি আসছি,,[রাহার ভাই রাহান কথাটা বলে])

রাহানের কথা শুনে রাহা এবং মিয়ান দুজনের ওর দিকে তাকায়। “একি বোরকা পরা কেন তোর ভাই”?? মিয়ানের প্রশ্ন।

–“তোকে এক্সপ্লেইন করার সময় আমার হাতে নেই”যা বাসে গিয়ে উঠে পর আর কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে রাহানকে দেখিয়ে দিবি” [মিয়ানকে রাহা কথাটা বলে]

-“এবার যা আমি আসছি,”রাহান মিয়ানকে ভালোভাবে বেন্ডেজ করিয়েই আমাদের বাসায় নিয়ে যাবি।বাকিটা ওই বলে দিবে সবাইকে,,আর তুই সাবধানে থাকিস,,তোর বাপ কী করে না করে তার খবর দিবি আমায় “!!!

পটাপট কথাগুলো বলেই রাহা নিজের মুখ ডেকে রাস্তা থেকে সোজা জুমুরের ভেতরে চলে যায়।যাওয়ার সময় রাতের খাবার ও সাথে করে নিয়ে যায়।

যেতেযেত আবারও আচমকা ফাহানকে দেখতে পায়। এবার আশেপাশে যাওয়ার আর পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না। ফাহান ক্রমস সামনের দিকে এগিয়ে আসছিলো।এবার হয়তো রাহার আর শেষ নিস্তার নেই। তাৎক্ষণিক রাহার নিজের বোধশক্তিকে কাজে লাগায়,,উল্টো দিক মুখ করে নিচে বসে যায় কিছু খুঁজার বান করতে লাগলো।

ফাহান ধপাধপ পা চালিয়ে রাহার পাশে কেটে চলে যায়। ফাহান যেতেই রাহা হ্রাসকরণ হয়। দেড়ি না করে দ্রুত পা চালিয়ে সেই জায়গাটা প্রস্থান করে।




অসহ্য মাথা ব্যাথা করছিলো ফাহানের।এটাই তার সমস্যা অতিরিক্ত রাগ তার মাথায় পাহাড় সমান যান্ত্রনা এনে দিতে দুর্দম!! এই মুহুর্তে স্ট্রং ব্ল্যাক কফি খুবই হেল্পফুল হবে ফাহানের জন্য। তাই সেও কাঠের রেস্টোরেন্টে যায়।

“”জুম রেস্তোরা” মাত্র একটায় রেস্টোরেন্ট। সকল প্রকার খাবার,পনীয়,স্ন্যাকস, মূলত যা অর্ডার করবেন তাই পেয়ে যাবেন অনায়াসে!

ফাহান একটা ব্ল্যাক কফি অর্ডার করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। উপরে অসম্ভব সুন্দর ছাউনি আর চারপাশে সচ্ছিদ্র!! ঠান্ডা বাতাস সবার চুল উড়ে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ফাহান বসা থেকে উঠে কোনায় চলে যায়। সেখান থেকে নিচে তাকাতেই অদ্ভুদ অনুভতির বিচরন হয় তার মাঝে। উপর থেকে নিচে রাতের আধারের সাথে লাইটিং দেখা যাচ্ছে যা নদীতে পরে নদীর সুন্দর্য্যকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলে। ফাহানের কাছে বেশ আকর্ষনীয় লাগছে। ওর হাইটের ফোবিয়া নেই বলেই ওর কাছে সুশোভন লাগছে!!!

কফি আসতেই কফি নিয়ে বসে পরে চেয়ারে।পকেটে হাত দিয়ে নিজের ফোন বের করতে গিয়ে দেখে ফোনটা সেই মেয়েটির। মানে “মিস নীলরঙের”

হঠাৎই কৌতূহল জন্মায় ফাহানের ফোনটি দেখার। নিজের কৈাতূহল আটকাতে না পেরে ফোনটি আনলক করে। করেই দেখে একটা নাম্বার থেকে দশটার মতো কল আসে বিকালে এখন তো সন্ধ্যা। যখন ফোন দিয়েছিলো তখন কনসার্টে মিউজিকে সাউন্ডের কারনে শুনতে পায়নি হয়তো।

কফি শেষ করে কটেজে ফিরে যায়।গিয়ে দেখে আবির নেই হয়তো নোভার সাথে।দরজা আটকিয়ে বিছানায় বসে ভাবছিলো ফোন দিবে কী না??

পনেরো মিনিট যাবত ভাবার পর সিদ্ধান্ত নেই ফোন দিবে সেই নাম্বারে।যেই ভাবা সেই কাজ দিয়ে দেয় কল।



রাহা বিছানায় বসে ব্যাংক থেকে তুলে আনা টাকা গুলো প্রাক্কলন করছিলো। যা তুলেছে তাতে আগামী ছয়মাস ভ্রমন করতে পারবে ভিন্ন জায়গায়।তাছাড়া কার্ডতো আছেই। ব্যাঘাত ঘটায় একটা ফোনকলে বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাম্বারটা ওর নীলরঙের ফোনটির। সাথে সাথে ফোন রিসিভ করো।সালাম দেয়।

-অপরপাশ থেকে ফাহানের বুক ধক করে উঠে এতো মিষ্টি কন্ঠ শুনে।কন্টে কোনো উদারা নেই। কী নিখুতভাবে শুনাচ্ছিলো ফাহানের কানে।অদ্ভুদ এক শিহরণ ভয়ে যায় শরীর দিয়ে অথচ তার রাগ করার কথাছিলো। বিকালের সেই কান্ডটার জন্য।

–“এই যে কে আপনি!! ফোন দিয়েছেন অথচ চুপ করে আছেন।তো আমার মোবাইল যেহেতু আপনার কাছে আছে।ফোনটা নিশ্চয় আমার ফোন আমাকে ফেরত দেওয়ার জন্য করেছেন। তো এড্রেস দেন আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”(ঝাঁঝালো কন্ঠে)

এতোক্ষন মিষ্টি কন্ঠ শুনলেও ঝাঁঝালো কন্ঠে ফাহানের ধ্যান ভাঙে।বেশ ঝাঁঝালো হলেও ফাহানের শুনতে বেশ ভালো লাগছিলো। এবং আরো চমকিত হয় শেষের কথাটি শুনে”এড্রেস দেন আমি গিয়ে নিয়ে আসবো””
তারমানে ফোনটা সেই মেয়েটির।আরেকটু সিউর হওয়ার জন্য আবারো নিরবতা পালন করে।

–“”এই যে আপনি আমার ফোন ফেরত দিবেন কী না? “”

এবার ফাহান চট করে ফোন কেটে দেয়।এবং মোবাইলে প্লাইট মোড অন করে দেয়।বাঁকা হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোনায়।!!




সকাল ছয়টায় রাহা ব্যাগপত্র গুছিয়ে কটেজের বিল পে করে কটেজ থেকে বেড়িয়ে যায়।উদ্দেশ্যে “চিৎমৌরম”যাবে।যাওয়াটা খুব সহজ হলেও আসাটা খুবই কঠিন সেখান থেকে। কারন ২৫১+ থাক সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা ইজি বাট উঠে আসা অনেক টাফ।

“”চিৎমৌরম”” উপভোগ করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বাংলা শুভনববর্ষের দিন।সেদিন বিরাট এক মেলা বসে।কিন্তু রাহার কাছে জনমানবহীন সময়েই “”চিৎমৌরম।” ভালো লাগে। নদাী পার হয়ে সেখানে গিয়ে সর্বপ্রথম দোলনায় উঠে দোল খাওয়ার জন্য।

এরপর সেখান থেকে পাশে একট ফুড-কর্নারে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। সাড়ে সাতটা ভেজে যাওয়ার ওর অনেক কষ্টে উঠে আসে। উঠতেই সামনে দু’জনকে দেখে ভয়ে আতকে উঠে রাহা।

রাহা এখানে কীভাবে এলো?? এদের রাহার খুঁজ কে দিয়েছে ভাবতেই রাহার মাথার ঝিমঝিমানি বেড়ে যায়।

–“”বাহ একা একা ঘুরাফেরা করছো।বেশ ভালোই তো কিন্তুর আমার জন্য সেটা ভালো নয়। “তাই তো তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।আফটার-অল ইউ আর মাই পার্সনাল প্রপার্টি..(বলেই বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো)

যেই রাহাকে ধরার জন্য হাত বাড়ায় রাহা পেছন থেকে হাত সামনে এনে মরিচের ঘুড়া ছুড়ে মারে তাদের চোখে এবং মুহুর্তে দৌড় দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।তবুও তারা থামেনি চোখ হাত দিয়ে অসহ্য যান্ত্রনা সহ্য করেও রাহার পেছনে দৌড় লাগায় রাহাকে ধরতে।ততক্ষনে রাহা অনেকটা দূর চলে গেছে।জায়গাটা বেশ নিরিবিলি বলেই তাদের দৌড়াতে সমস্যা হচ্ছে না।

রাহা দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় একটা গাড়ির সাথে।ধাক্কা লাগে এবং সেখানেই সেন্স হারায়।

আর গাড়ি থেকে দ্রুত বের হয়….

??(চলবে)??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে