নীলাময়ীর প্রেমে পর্ব ২

0
1090

#নীলাময়ীর_প্রেমে

#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০২

ফাহানের জবাবে ফাহানের মা প্রচুর ক্ষেপে যায়।ছেলেটা যা মন চায় তাই করে কারো কথা শুনবে না…

-ক্ষিদে পেলে খেয়ে নিস ফ্রিজে রেখে দিবো খাবার।(ফাহানের মা)

বলেই ফাহমিদা বেগম রেগে হন হন করে চলে যায়..নিচের খাবার টেবিলে স্বামী মেয়ে আর,বড় ছেলে বসে ডিনার করছে।

ফায়ান : ফাহান আসছে না ছোট মা??

“না আসবে না ক্ষিদ নেই বোধহয়।তোরা খেয়ে নে..(ফাহমিদা)

— ক্ষিদা নেই মানে,, সেই দুপুরে হঠাৎ করে গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়েছে।এখনো খুলেনি,খেয়েছাটা কি ভাইয়া?? মানে আমি তো দেখিনি।
(ফাহানের বোন ফানহা)

–হয়তো কোনো কারবে বিরক্ত বা চিন্তায় আছে। তাহলে তো কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। এখন ফাহানকে একা থাকতে দাও দেখো মাথা ঠিক হলে আমাদের কিছু বলে কিনা….(ফায়ান)

সবাই ফায়ানের কথায় সায় দেয়…!!

নিরবতা ভেঙে এবার ফায়ানের বাবা বলে উঠ….

“তা মেয়েটাকি তোর বেশি পছন্দ?? না মানে তাহলে অন্য কোনো মেয়ে খুঁজতাম আরকি কারন মেয়েটার নামে যা…..”(ফায়ানের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন)

– না বাবা আর কোনো মেয়ে দেখতে হবে না!(ফায়ান)

ফায়ানের দ্রুত এবং গম্ভীর উত্তর দেওয়া দেখে তিনি বুঝলেন তার ছেলে মেয়েটাকেই বিয়ে করবে!গত একমাস ধরে বিড়ালের মতো মেউ মেউ করছিলো ফায়ান যে কোন মেয়েকে নাকি তার বেশ পছন্দ হয়েছে..!

তাই মেয়ে যেমনই হোক তার সাথেই এবার বিয়ের কথা পাকা করবেন বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন!

!
!
!
!

ফাহান তার মা ডেকে চলে যাওয়ার পর ওয়াসরুমে গিয়ে ঝাপটে মুখ ধুইয়ে নেয়।মুখ মুছতে মুছতে বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নেয়..!!

ফোন বের করেই ‘#নীলাময়ী’ নামে নাম্বারটা ভেসে উঠে..কাল রাতে কথা বলার পর ফোন আর হাতে নেওয়া হইনি যার কারনে এখনো নাম্বারটা থেকে গেছে।

কিছুক্ষন চুপ করে কিছু একটা ভেবে তারপর ‘নীলাময়ী’ নামে সেভ করা নাম্বারটিতে ডায়াল করে!

দুইবার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হয় কিন্তু কথা শুনা যাচ্ছে না! বরং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার শব্দ কানে আসে।

ফাহানের বুঝতে সময় লাগে নি যে তার ‘নীলাময়ী’ কান্না করছে..বুকে বেশ ব্যাথা করছে ফাহানের কান্নার শব্দে!

তবুও নিজেকে সামলে নেই..কারন এখন এভাবে ভেঙে পরলে হবে না…!!

— আপনি কান্না করছেন??

“”তো কি করবো?? এটাই যে আমার নিত্যদিনের সাথী!! “(নীলাময়ী)

-আপনি না ব্রেভগার্ল?? ব্রেভগার্লরা কখনো কান্না করে না জানেন না??

“”নিশ্চুপ” ~~~ নীলাময়ী!!

–চুপ করে আছেন কেন?? আমি কি বললাম??

“”না….

–তাহলে..?? আচ্ছা আপনার কান্না করার কারন বলেন??

–“”বলবো না…(কান্না মিশ্রত কন্ঠে)

—ওকে তাহলে আপনার সাথে ফ্রেন্ডশীফ শেষ!! রাখছি….

“” না না রাখবেন না প্লিজ…বলছি! (নীলাময়ী)

–ওকে দেন টেল মি!!

“”ওই রিনা খান(বড় আম্মু) আমাকে তাপ্পর মেরেছে..আর ঘাসেটি বেগম (ফুফি) আমার হাত মুছড়ে দিয়েছে..আমাকে অনেক গালি দিয়েছে,,,আমি কাউকে বুঝাতে পারছি না, ওরা আমার ব্যাপারে যা জানেন তা সত্যি না…আমি সত্যি রে……

ফাহান এতক্ষন খুব মন দিয়ে রাহার কথাগুলো শুনে,হ্যাঁ রাহাই হচ্ছে ফাহানের #নীলাময়ী,,,,কপালে রগ ফুলে উঠে রাগে..শেষের কথাটা আর শুনতে চায়ছে না ফাহান,,তাই বলে উঠে……

— আচ্ছা তো ব্রেভগার্ল!! কাল আমি আসবো আপনার সাথে মিট করতে বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন??আমি জানি আপনি অনেক সাহসী তাই নিশ্চয় পারবেন!! আমি এখন রাখছি! ঘুমান গুডনাইট!!
(শান্ত গলায় কথাটা বলে ফাহান)

ফাহান ফোনটা কাটার পর রেগে খুব জোরে পাশের টেবিল পা দিয়ে লাথি দেয়,,,এ মুহুর্তে রাগটা তার ঝারতেই হবে..নাহলে মাথা ব্যাথা উঠে যাবে….

এতক্ষন নিজেকে কান্ট্রোল করে রেখেছে রাহার সাথে কথা বলছিলো বলে.রেগে কথা বলা,,আর ধমক এই দুটো জিনিসে বিষণ ভয় পায় রাহা….

–নিজেকে খুব অসহায় লাগছে রাহা,, আমি চায়লেই কিছু করতে পারবো না।আমি নিরুপায়….(ফাহান)

কিছুক্ষন চুপ থেকে ফাহান আবার মনে মনে কিছু বুলি আওড়ে নিলো!! শুতে যাবে সে সময় আবারো দরজায় টুকা! শব্দটা হালকা হওয়াই ফাহান বুঝতে পেরেছে দরজার ওপারে যে আছে সে চায়না বাকিরা দরজার টুকা পরা শব্দটা শুনোক।

ফাহান গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে রুমে চলে আসে।বিছানায় শুয়ে পরে।

-ফাহান সোনা দেখ বাবা সারাদিন কিছুই খাসনি আমি জানি।দয়া করে খাবার গুলো খেয়ে নে।
নাহলে বস আমি খাইয়ে দিচ্ছি!(ফাহানের মা)

ফাহান উঠে বসে পরে সত্যি ক্ষুদা পেয়েছে সারাদিন কিচ্ছুটি খাওয়া হয় নি।ফাহান হা করলেই তার মা এক লোকমা ভাত মুখে পুরে দেয়।

উনি ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন এবং ভালোভাবে মুখটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,,ফর্সা গাল দুটো কেমন লাল হয়ে আছে..চোখ দুটো ও লাল হয়ে আছে। উনি কারনটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। তারপর বলে উঠেন….

–একটা কথা কি জানিস?? যেটা তোর সেটা যেকোন উপায়ে তোর কাছেই ফিরে আসবে ।আমি বলছি না তোকে তোর প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে।বরং নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে ছেড়ে না দিয়ে আঁকড়ে ধরতে শিখ। (ফাহমিদা)

ফাহান তার মায়ের মুখের দিকে বিস্ময় চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে।বুঝার চেষ্টা করছে উনি কেন কথাটা বললেন…?? শুধু চেয়ে থেকে লাভ নেই কারনটাও তো জানতে হবে তাই ফাহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই উনি বলে উঠেন….

— আমার জীবনেও তোর মতো দুটানায় পড়তে হয়েছিলো। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনি প্রথমে। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম ভবিতব্য ভেবে।কিন্তু আমার ভাগ্য খারাফ হয়নি আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমার ভা…..(বলতে গিয়েও থেমে যান)

আচ্ছা যাইহোক আশা করি এখন তুই আমার কথাটি বুঝতে পেরেছিস…না বুঝলে ভাববো সেটা তোর ব্যার্থতা…( ফাহমিদা কথাটা বলেই চলে যায়)

–এতোক্ষনে মায়ের কথাটা আমার মাথায় ডুকলো!ওহ নো! (ফাহান)

তারপর ফাহান উঠে ব্যাগ প্যাক করে নেই।কাল রাহার সাথে মিট করবে। তাই এখনি রওনা না হলে মিট করতে পারবে না সময়মতো। প্রয়োজনীয় বাকি জিনিসগুলো ও নিয়ে নিয়েছে। ফাহান চট্রগ্রামে যাবে নিজের বাড়িতে যেটা সে নিজই বানিয়েছে,,এবং রাহাও সেখানে….

ফাহান ঢাকাইয়া হলেও পড়াশোনার জন্যে চট্রগ্রামেই থেকেছে! সেখান থেকেই মাস্টার্স কম্পলিট করেছে গত বছর। এখন একটা নিজের বড় বিজন্যাস ও রয়েছে,,ফেমেলি বিজন্যাস জয়েন করেনি…এ নিয়ে পরিবারে অনেক অশান্তি হয়েছে তাই চট্টগ্রামে থাকে বেশিরভাগ সময়।কিন্তু ফাহান তো একঘেঁয়ে স্বভাবের!

কার ড্রাইভ করে যে যাবে সে মনমানসিকতাও নেই! তাই ড্রাইবার সাথে নিয়ে রওনা দেয় তার #নীলাময়ীর’
উদ্দেশ্যে!!

–এবার হয়তো তোমার জন্য আমার গানটা ছাড়তে হবে…!!যদিও বা নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গানকেই আপন করে নিয়েছিলাম..(ফাহান)

!
!
!
!

রাহা অনেক্ষন ধরে ফাহানের একটা স্কেচ আঁকার চেষ্টা করছে,,প্রতিবারই হাত কাঁপছে….গানের পাশাপাশি ছবি আঁকতে বিষন পটু রাহা…কিন্তু গানটা তো…….

–কাল আপনি আসবেন আপনার জন্য কিছুই নিবো না,,তা কিভাবে হয়..আমি এটাই নিবো..ইয়েস!!(রাহা)

তখনি দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ার শব্দ আসছে..রাহা দ্রুত সব গুছিয়ে এবং কাঠের নিচে রেখে দেয়,,তারপর নিজের চুল এলোমেলো করে চারপাশে ছড়িয়ে দেয়…দরজা খুলতেই রাহার বড় চাচার মেয়ে রেভী রুমে প্রবেশ করে…সাথে দুই ফুফাতো বোন ইমা, আর জিমা…

–ওই ধর ওকে ইনজেকশনটা পুস করতে হবে।(রেভী)

রেভী যেই ইনজেকশন পুস করতে যাবে তার আগেই..অন্ত চলে আসে রেভীকে ধরে ঘুড়িয়ে তাপ্পর বসিয়ে দেয়…

–ছাড় আমাকে অন্তু আমি ওকে…(রেভী)

—ওর মেডিসিন অলরেডি চলছে তুই কী ওকে কিসের ইনজেকশন দিচ্ছিস..(অন্তু)

–এই তোরা যা এখান থেকে নাহলে আমি তোদের কামড় দিবো..??(রাহা)

অন্তু রাহার দিকে এক পলক তাকিয়ে রেভীদের নিয়ে বেরিয়ে যায়….

তারপর রাহা আবারও দরজাটা লক করে দেয়……মনে মনে কিছু বলে আবার বিছানায় শুয়ে পরে…অতীতের কিছু কথা মনের দরজায় এসে উঁকি দেয়…

তাই অতীতেই ডুব দেয় আবারও….

!
!
!

ফাহান গাড়িতে বসে নিজের ফোনটা বের করে রাহার ছবিগুলো দেখতে লাগে..

–যা হবে তার জন্য জানি না কে দায়ী থাকবে??তোমাকে রক্ষা করার পুরুটা দায় এখন আমার(ফাহান)

♣ আমি আর আমার আমিতে নেই…

♣ হারিয়েছি নিজেকে তোমাতে অনেক আগেই…

কথাটা বলে ফাহানও অতীতের স্মৃতীতে ডুব দেয়..সেই স্মৃতী না চায়লেও বার বার মনে পরে যায়…!!

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে