নীরবে_নীরবে পর্ব ৫..

0
875

নীরবে_নীরবে পর্ব ৫…

দিলু বাকি দু’জনের পেছন পেছন তার শ্বশুরবাড়ির সামনে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বড় একটা বাড়ি। কিন্তু ভেতরের মানুষগুলোর মন বড় নয়। কিশোরগঞ্জে কাটানো একটি মাস অন্তত এখানে কাটানো বছরগুলোর চেয়ে খুব ভালো ছিল। অন্তত সে সাখাওয়াতের সান্নিধ্যে থাকতে পেরেছে। তাছাড়া তাকে অবহেলা করার মতো মানুষ কমই ছিল।
ভেতরে ঢোকার আগ মুহূর্তে দিলু তার প্রতিবেশী ভাবি জাহানারার দেখা পায়। দিলুর মনে হয়, এখানে চলাফেরা করা স্বচ্ছ মনের একমাত্র মানুষ তিনি। জাহানারা অন্তরঙ্গের মতো করে তার সাথে কুশলাদি বিনিময় করল।
“তোমাকে দেখে খুব খুশি লাগছে। আমার মনেও হয়েছিল, এত বছর ধরে তোমার শুকনো থাকা মুখটা স্বামীর ভালোবাসা পেলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি সুখি আছ তো?”
“হ্যাঁ।” অর্ধেক সত্য, অর্ধেক মিথ্যা বলল দিলু।
“তো কী কারণে একমাস না হতেই চলে এসেছ?”
“তুমি সম্ভবত জানো না। রাগীব ভাই বিয়ে করবেন।”
“ওহ্, তাইতো বলি ফিরে কেন এসেছে। তোমার কি মনে হয়, এতদিন পরই হঠাৎ বিয়ে করার পেছনে ওর কোনো কারণ আছে?”
“আমি জানি না। জানতেও চাই না। এসব জেনে কী হবে?”
“তবু নিজের সংসারকে ছোট করে দেখো না।”
দিলু মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকল। তার মায়ের জেঠাতো বোনের মুখে অসন্তুষ্টির ছাপটা চিরাচরিতভাবে রয়েছে। এসব গায়ে না মেখে দিলু তার শাশুড়ির কাছে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে। বাসায় বড় ভাবি, রাগীব ভাইসহ অনেকেই আছে। কিন্তু কারও সাথে তার চোখাচোখি হচ্ছে না। সে আশাও সে রাখে না। সে নিজ ঘরে ফিরে এলো, যেটা আসলে সাখাওয়াতের কিন্তু বিয়ের পর তারও হয়েছে। দিলু ঘরের চারিদিকটা দেখতে লাগল। সাখাওয়াত এখনও বাইরে আছে। তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। হয়তো বা এত বছর পর নিজ বাড়ি দেখছে বলেই এমনটা হয়েছে। তার সাথেও কেউ অতিরিক্ত কথা বলে না।
দিলু বিছানায় বসে পড়ে। এই বিছানায় তার প্রথম রাতটির কথা তার মনে পড়ছে। সাখাওয়াত তীব্রভাবে চাইছিল অন্য ঘরে থাকতে। কিন্তু কাউকে কিছু বলার সাহসটা তার মাঝে ছিল না। বাসর রাতে এই ঘরে ঢোকার পর সে কিছুক্ষণ পায়চারি করছিল। একসময় অধৈর্য হয়ে দিলু তাকে বিছানায় বসতে বলল। কিন্তু পরক্ষণে সে সাখাওয়াতের চোখে আগুন দেখতে পায়, যখন সে পায়চারি থামিয়েছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

দিলুর দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ছোটে এসে তার চুল ধরে ফিসফিস করে সে বলল, “এসবকিছু তোর কারণে হয়েছে। আমার জীবনকে নরক করে ফেলেছিস। কেউ আমার দিকে চোখে চোখে তাকাছেও না। আই হেট ইউ।” বলে সে তাকে বিছানায় ফেলে দেয়। দিলুর খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এই বাক্যটা সে আজ মন থেকে বলেছে প্রচুর ঘৃণা নিয়ে। দিলু ছলছল চোখে গলা উঁচিয়ে বলল, আমি কিছু করিনি।
“এই চুপ। একদম গলা উঁচিয়ে কথা বলবে না।”
“বলব একশবার। সবাই ভুল বুঝলেও আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না।”
সাখাওয়াত ফোঁস করে হাতের নাগালে যে বইগুলো পেল তা দিলুর দিকে ছুঁড়ে মারল।
“আমি তোমাকে আগে থেকেই ভুল বুঝেছিলাম। তুমি তোমার মায়ের মতোই লোভী। রোমেনাকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে পারেননি। এখন তোমাকে বাকি ছেলেদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। আর তুমি এমন কাজ করে বসলে যার জন্য এই বাড়িতে তোমাকে নিয়ে আসা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
দিলু হা করে রইল। অবিশ্বাস্য! এই ছেলেটিকে সে ভালোবেসেছে? এই ছেলেটি তার সম্বন্ধে এই ধারণা রাখে? দিলুও ফোঁস করে উঠে হাতের নাগালে পাওয়া ফুলদানিটা সাখাওয়াতের দিকে ছুঁড়ে দিলো।
সাখাওয়াতের আসায় দিলুর চিন্তায় ছেদ পড়ল। সে ভাবলেশহীন হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বুঝাই যাচ্ছে, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ক্লান্তির চেয়ে বেশি অন্যকিছুও হতে পারে। হতে পারে সে অনেকটাই হতাশ হয়েছে। দিলু বলতে চায়, সে নিজেও অনেক হতাশ হয়েছে এখানে এসে। কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা এলো না। স্যুটকেস থেকে দিলু তাদের কাপড় বের করে আলনায় রাখতে রাখতে বলল, “বিয়ে কবে হবে? ডেট কিছু ফিক্সড হয়েছে?”
সাখাওয়াত নড়েচড়ে শুল। একটা প্রসঙ্গ আসায় সে স্বস্তি বোধ করছে। সিলিঙের দিকে তাকিয়ে সে বলল, “পরশু হয়ে যাবে। এরপর দিন চলে যাব।”
সে নিঃসন্দেহে শেষের কথাটা বলার সময় জিভ চেটেছে, যেন ওটা সুস্বাদু একটি খাবার। পরক্ষণে তার চোখ নিবদ্ধ হলো দিলুর উপর। দিলুরও তার চোখাচোখি হতেই সে বুঝতে পারল, তাদের মাঝে এক বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। একজন শাস্তি দেওয়ার এবং আরেকজন শাস্তি পাওয়ার। তার মাঝে এখন কিছুই ঠিক নেই। কাজেই দিলু বুঝতে পারছে, তাকে শাস্তি দিয়ে সে শান্তি পাবে। কিন্তু এখানে কোনো সরঞ্জাম নেই। সাখাওয়াতের চোখে আগুন দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। আসার সময় তার খুব ভালো লেগেছিল। সাখাওয়াত তার পাশাপাশি বসেছে। সাখাওয়াতের পাশে আমজাদ। তাঁকে অতিরিক্ত জায়গা করে দিতে দিলুর সাথে সে গা ঘেঁষে বসেছিল। তার গন্ধ সবটাই দিলুকে টালমাটাল করে ছাড়ল। দিলুর সে সময় অনেক অনুভূতিই মনে জেগেছে, যা যে-কাউকে বলা সম্ভব নয়। নিজেই নিজের ভাবনাতে লজ্জা পেয়েছিল। মনে মনে হেসে সে ঠোঁট কামড়ে বাইরের দিকে তাকায়।
দিলু স্বেচ্ছায় তার কাছে এগিয়ে যেতেই দিলুর ডাক পড়ে। সাখাওয়াতের দৃষ্টি নিরুত্তাপ হয়ে গেল। দিলু দরজা বেঁধে ঘরের বাইরে চলে যায়।
সিলিঙের দিকে তাকিয়ে সাখাওয়াত ছোট একটা শ্বাস ফেলল। সে এইবার দিলুকে শাস্তি দিতে চায়নি। আজ যখন দিলুর পাশে সে বসেছিল, তখন কেন যেন মনে হয়েছিল এই মেয়েটিই তার স্ত্রী। কিন্তু এই মেয়েটিই তার জীবনে যত অশান্তির মূল। সে ভালোবাসার যোগ্য নয়। পরক্ষণে মাথা থেকে এসব চিন্তা সে দূর করে দেয়। নিজের ভেতর যে পশুটা বাঘের মতো গর্জন করছে, তাকে দমিয়ে রাখতে হবে। এখানেও তাই হবে, যা ওই বিল্ডিং-এর তৃতীয় ফ্ল্যাটে হতো। সাখাওয়াত বেরিয়ে অন্যের অজ্ঞাতসারে রশি খুঁজতে লাগল। রান্নাঘরে আসার পর সে দিলুকে কাজ করতে দেখেও কাউকে না দেখার ভান করে রান্নাঘরের পাশের দরজাবিহীন ছোট স্টোর রুমের মতো জায়গাটাতে জিনিস ঘাঁটতে লাগল।
“শুনুন,” পেছন থেকে দিলু ডাকলে সে ফিরে তাকায়, “ছাদে আছে। আমি নিয়ে যাব।”
সাখাওয়াত অপ্রস্তুত বোধ করল, “আমিই যাচ্ছি।” সে ছাদে গিয়ে রশির চেয়েও বেশিকিছু পায়। হুম.. কাজে লাগতে পারে।
রাত হলে ঘুমোতে এসে দিলু দেখতে পায়, নিচে কোথাও বিছানা পাতানো নেই। তাহলে সাখাওয়াত বিছানায় শুবে। তার মানে দিলুকে জেগে থাকতে হবে। কিন্তু তারচেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সাখাওয়াত কিছু একটা ভাবছে। তার ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারছে কিছু একটা প্ল্যান করছে লোকটা। সেই প্ল্যানটা যাই হোক না কেন, সাখাওয়াতের মুখে তা অনেকখানি উজ্জ্বলতা এনে দিয়েছে। নিশ্চয় এটা তাকে দেওয়া শাস্তিগুলোর মধ্যে কিছু একটা হতে পারে না। তার চোখগুলো এতটা কালো, এতটা গভীর সে কখনও দেখেনি।
“আপসোস। আমার রুম দ্বিতীয় তলায় থাকলে ভালো হতো।” সাখাওয়াতের এটুকু বলাই যথেষ্ট।
“আমার কোথায় বসতে হবে?”
“জানালার পাশে।”
সে আচ্ছন্নের মতো সেখানে যাচ্ছে। এর পরের ঘটনাগুলো সে জানে। কিন্তু এই অন্ধকার রাত তাকে নিয়ে গেছে অন্য এক জগতে।
দিলুর মামার বিয়ের শেষে বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমজাদ জোর করলেন তাদের বাসায় আসার জন্য। এখানে কখনও তাদের আসার উপলক্ষ হয় না বলেই প্রস্তাবটা দিয়েছেন। সবাই এখন একত্রেও আছে। কাজেই ওই বিয়ে শেষে সরাসরি তারা এই বাড়িতে আসে। দিলুর প্রথম দেখার মতোই এই জায়গা। এলেও খুব ছোটবেলায় আসা। কিচ্ছু চেনে না সে। খাবার সারার পর দিলু বাথরুমে যায়। এসে দেখে সবাই শুতে চলে গেছে। ঝামেলা বেঁধে গেল। মায়েরা কোথায় শুয়ে থাকবে? সে যেটুকু জানে, লাভলীর সাথে এই বড় বাড়ির এক রুমে থাকার কথা। কোথায় সেই রুমটা? এখানে কাজের লোকও থাকে না। হলের বাথরুমেই কেন গেল সে? ঘুমে ঢুলো ঢুলো হয়ে সে হলে কিছুক্ষণ বিচরণ করার পর একটা অবয়ব দেখে দাঁড়িয়ে যায়। ইনি একজন পুরুষমানুষ।
অবয়বটা অন্ধকারের ভেতর থেকে উদয় হয়। “কী করছ এখানে?”
“আমাকে আর লাভলীকে যে রুমটায় শুতে বলা হয়েছে সেটা পাচ্ছি না।”
লোকটা নীরবে একটা আঙুল তোলে নিচের একটা ঘর দেখিয়ে দেন। দিলু লজ্জা বোধ করে মাথা নেড়ে চলে আসে। রুমটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। জানালা পর্যন্ত খোলা নেই। এসব নিয়ে লাভলীর প্রতি সে খুব আগে থেকেই বিরক্ত। দিলু ক্লান্ত হয়ে দরজায় হুক লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। তার অবচেতন মনের কাছে খুব করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, সাখাওয়াত কোথায় শুয়েছে, কীভাবে সে ঘুমায়। অথচ সে জানতই না পাশেই ঘুমন্ত আছে ছেলেটি।
সকালে দরজার উপর পড়া ধুমধাম বাড়িতে দিলুর ঘুম ভেঙে যায়। কী হলো? অগোছালো অবস্থায় পড়িমরি করে সে উঠে দরজা খুলে দেয়। সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মা। তাকে এক ঝটকায় তিনি ঘর থেকে বের করিয়ে আনলেন। কোনো কথা ছাড়াই তিনি তার গালে বেশ কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে এদিক-ওদিক তাকায়। লাভলীকে দেখে তার চোখ কপালে উঠল। ততক্ষণে পেছন থেকে আবারও চড়ের আওয়াজ শোনে। সাখাওয়াতকে চড় খেতে দেখে তার যেন দ্রুততর হয়ে কয়েকটা হৃদস্পন্দন বাদই পড়ল।
দিলুর মনে পড়ছে, মা’কে সে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল, সে ভুলবশত রুমটিতে গিয়েছে। কিন্তু যা ঘটে গেছে, তাতে আর কিছুই ঠিক হওয়ার নয়। সবাই ভুল বুঝবেই। এসবকিছু হওয়ার দরুন শেষমেষ তাদের বিয়ে হয়ে যায়। কি বিভীষিকাময় সময় না ছিল। চারিদিকে কথাটা ছড়াতে দেরি লাগেনি। অপমানের হাত থেকে বাঁচতে তার বিয়ে দিতেই হয়েছিল। দিলুর মাও তার তেমন খোঁজ-খবর রাখেনি। কারণ রোমেনাকে প্রত্যাখ্যান করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে এই পরিবারের প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল। তবে জেঠাতো বোনের কারণেই কিছু প্রকাশ করেনি।
.
দিলু জানালার কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। পেছন থেকে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস আসছে। সেদিকে সে পরোয়া করল না। পেছনের দিকে হাতগুলো জড় করল। খাটের নিচ থেকে সাখাওয়াত রশি বের করে নিল। এরপর এসে দিলুর সামনে দাঁড়ায়।
“দাঁড়াও।”
দিলু দাঁড়ায়। তাকে সে খোলা জানালার সাথে লাগিয়ে দেয়। তার দুই হাত দুইদিকে নামিয়ে রডে বাঁধতে থাকে। সাখাওয়াত এতো কাছে হওয়ায় তার শ্বাস-প্রশ্বাসও দিলু অনুভব করতে পারছে। অজান্তেই এখনও মুক্ত থাকা একটি হাত তার দিকে অগ্রসর হলো। সাখাওয়াত ঝট করে সরিয়ে দেয়। আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। দিলু ভাবে, কেউ না কেউ কোনো না কোনোকিছুতে পারদর্শী। সাখাওয়াত শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত করায় পারদর্শী। দিলুকে বেঁধে ঠান্ডায় জমতে দিয়ে সে ঘুমোতে চলে যায়। মুক্তি!
সাখাওয়াত কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পরও তার ঘুম এলো না। বারবার চোখগুলো জানালার দিকেই যেতে চাইছে। সে বুঝতে পারল, ভেতরে বাঘটা এখনও ওই নিঃসঙ্গ বনে গর্জন করছে। সে উঠে বসে। দিলু বুঝতে পারছে, কেন সে ঘুমোতে পারছে না। তবে তাকে পরাজিত দেখাচ্ছে না।
দিলুকে অবাক করিয়ে দিয়ে সে খাটের নিচ থেকে একটা প্যাকেট বের করল। প্যাকেট ভর্তি রয়েছে বালি! সাখাওয়াত তার কাছে এসে স্থির চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এই সুযোগে দিলু বলে ফেলল, “সম্পর্কটা ঠিক করে ফেলুন। সবকিছুই চুকে যাবে।”
“আমি সম্পর্কটা ঠিক করতে চাই না।”
দিলু জানে, এই চেষ্টাগুলো নিজের চেয়ে তিনগুণ বড় পাথরকে সরানোর প্রচেষ্টার মতোই। দিলু চোখ বন্ধ করলে সাখাওয়াত দীর্ঘ সময় নিয়ে বালিগুলো তার গায়ে ঢেলে দেয়। হয়ে গেলে দিলু বুঝতে পারে, তার নিজেকে নোংরা মনে হচ্ছে। চারিদিকে বালি গিজগিজ করছে। সবচেয়ে বেশি চুলের ভেতর। সাখাওয়াত স্বাচ্ছন্দ্যে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। অল্পক্ষণ পর ঘুমিয়েও যায়। দিলু একসময় খেয়াল করল, সাখাওয়াত রশিগুলো খুলে দিয়েছে। এগুলোর তো আর প্রয়োজন নেই। সেও ঘুমানোর পাট চুকাচ্ছে। সে জানে, দিলু তাকে স্পর্শ করার দুঃসাহস করবে না। তারা কত কম সময়ে একে অপরকে কতটুকুই না জেনেছে। দিলু ভালোভাবে গোসল সেরে নেয়। চুল নিয়ে খুব কষ্ট হয়। সে এসে জানালা বন্ধ করে একটা কাঁথা মেঝেতে বিছিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ দ্বিতীয়বারের মতো এখানে এমন একটা রাত এসেছে। তাদের প্রথম রাতেও তারা এভাবে মেঝেতে ঘুমিয়েছে। দিলু খাটের একপাশে, সাখাওয়াত আরেক পাশে, যেন একজনকে আরেকজন দেখতে না পায়।
(চলবে…!)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে