নিয়তি পর্ব-১৭

0
1001

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৭

ছাদের রেলিংয়ে বসে খুশীমনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে বিভোর।পাশেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হৃদি।আল্লাহই জানে মানুষ এই ধোঁয়া টেনে কী এমন স্বর্গীয় সুখ পায়।টাকা নষ্ট,স্বাস্থ্যের ক্ষতি,পরিবেশের ক্ষতি।সিগারেটের গন্ধ হৃদির সহ্য হয় না।গা গোলাচ্ছে কিন্তু সেদিকে বিভোরের কোনো খেয়ালই নেই।এক রাশ বিরক্তি নিয়ে হৃদি ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।ঠিক তখনই পেছন থেকে হৃদির হাত টেনে ধরে বিভোর,,,

-কই যাও?
-ঘরে।আর তো কথাও যাওয়ার জায়গা নাই আমার।জানেনই ত।
-আর একটু থেকে যাও না!
-ছাড়ুন।ভাল্লাগছে না আমার।

কথাটা বলেই হৃদি হ্যাঁচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।হনহনিয়ে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।ঠিক তখনই বিভোর পেছন থেকে বলে,,

-হায়রে মেজাজ মেডামের!কী করলাম আমি?আমায় মেজাজ দেখাইতেছো কেন?

বিভোরের কথা শুনে হৃদি থেমে যায়।আবার হনহনিয়ে সে বিভোরের কাছে আসে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,

-সিগারেট ফেলেন
-মানে?এই মাত্র ধরাইলাম।আর দুই একটা টান দেই।
-ফেলেন বলতেছি
-আর একটু।

হৃদি আর কিছু বলে না।বিভোরের হাত থেকে সিগারেটটা এক ঝটকায় ফেলে দেয়।ছাদের রেলিংয়ের সাথে ধাক্কা লেগে সিগারেটটা নিচে পড়তেই হৃদি তা পা দিয়ে পিশিয়ে দেয়।হৃদির হঠাৎ এই রকম আচরণে বিভোর আকাশ থেকে পড়ে।যে মেয়ে দামি ব্র‍্যান্ডের এক প্যাকেট সিগারেট গিফট করলো বিভোরকে!সেই এখন সিগারেটটা পা দিয়ে পিশে নষ্ট করে দিলো?তা দেখে বিভোর,,

-সিগারেটটা নষ্ট করলা যে!জানো না অপচয় কারী শয়তানের ভাই!
-টাকা অপচয় করা কোন হাদিসে আছে শুনি!
-বুঝলাম না
-আপনি যে টাকা দিয়ে সিগারেট কিনেন ঐ টাকা দিয়ে ভালো কিছু কিনলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়?

আজব এই মেয়ে হঠাৎ এত গরম হলো কেন?ঝাড়ির ওপর ঝাড়ি দিচ্ছে বিভোরকে।

-ভালো কিছু?কি ভালো কিছু?
-অনেক কিছুই আছে।আপনারে বুঝানোর মুড নাই আমার।

কথাটা বলে হৃদি হনহনিয়ে ছাদের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়।বিভোরের ঐ আধ সিগারেটে মন ভরেনি তাই আরেকটা ধরায় সে।লম্বা টান দিয়ে হৃদির কাছে যায়।হৃদি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে না পেরে কাশতে লাগে। তা দেখে বিভোর সিগারেট নিয়ে দূরে চলে যায়।যাতে হৃদির কোনো অসুবিধা না হয়।দূর থেকে হৃদি বিভোরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মনে হচ্ছে এখনই বিভোরকে জ্যান্ত পুঁতে দেবে।বিভোরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে হৃদি বলে,,

-খান না খান!জন্মের খাওয়া খেয়ে নেন।আল্লাহ যদি চান ইনশাআল্লাহ পরে আপনার খবর আছে।সিগারেটের ‘স’ চিনবেন না।মরিচ লাগায় রাখবো ফিল্টার মুখে দিলেই লেগেছে লেগেছে আগুন!ধুম তা না না না!

মুখ ভেংচি কেটে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় হৃদি।মেয়ের এখন চরম ভাবে মেজাজ গরম আর কিছু বললেই মেয়ে সেই ক্ষেপা দেবে। অশান্তি যুদ্ধ থেকেও ভয়াবহ। মেয়েকে আর পেছন থেকে ডাক দিয়ে কাজ নেই।


ক্যাম্পাস থেকে সোজা হসপিটালে আসে হৃদি বিভোর।এসেই দেখে করিডোরে পাইচারি করছে সাম্য আর হৃদির মামা।চেয়ারে বসে আছেন সিঁথির মা আর সাম্যের মা।অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে সিঁথিকে।সালাম সাহেবের ফোন পেয়ে দৌড়ে আসে হৃদি।আগে থেকেই মামাকে বলে দিয়েছিলো হৃদি,যেনো সিঁথির সিজারের দিন তাকে খবর দেওয়া হয়।ভাগ্নির আবদার ফেলতে পারেন নি সালাম সাহেব।

কিছুক্ষণের মধ্যেই থিয়েটারের দরজার ওপাশ থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ আসে।হ্যাঁ নতুন সদস্য এসে গেছে।নার্স টাওয়েলে পেচিয়ে সিঁথি আর সাম্যের বাচ্চাকে আনে।সাম্য কোলে নিতে গেলে নার্স বলে,,

-মেয়ে হয়েছে।মিষ্টি আনুন আগে।
-যাও সাম্যদা।পরী এসেছে।মিষ্টি মুখ না করালে হয়!

সাম্য আর কিছু বলে না।পা বাড়ায় মিষ্টির দোকানের দিকে।নার্স বাচ্চাটাকে হৃদির কোলে দেয়।বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হৃদির খুশী দেখে কে?হালকা গোলাপী গায়ের রঙ। চোখ বন্ধ করে অনবরত চিৎকার করে যাচ্ছে নতুন সদস্য।তার মানে বাচ্চা সুস্থ।হৃদি চেয়ারে বসে আঙুল বাড়িয়ে দেয় নবজাতকের দিকে।নবজাতক হৃদির আঙুলটা শক্ত করে ধরে।হৃদি সালাম সাহেবের কোলে দেয় বাচ্চাটাকে।নাতনি পেয়ে সালাম সাহেব যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন।এরই মধ্যে সাম্য মিষ্টি নিয়ে হাজির।হসপিটালের সবাইকে দেওয়ার পর সাম্য মিষ্টির প্যাকেটা চেয়ারে রাখে।মিষ্টি দেখলে আবার সালাম সাহেব নিজেকে সামলাতে পারেন না।কোনো রকমে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে মিষ্টি হাতে নেন।মুখে দেওয়ার আগেই হৃদি তা দেখে ফেলে,,,

-মামু!
-এক্টু?
-নোহ।ডায়বেটিস আছে তোমার।মুখে না রক্তে বেশি মিষ্টি।তাই ছাড় দেওয়া গেলো না।

পরিবারে এই আনন্দের মধ্যে বিভোর যেন সম্পুর্ন একা হয়ে গিয়েছে।এক কথায় যাকে বলে কাবাব মে হাড্ডি।করিডোরের এক কণায় সে ফোন নিয়ে ব্যস্ত।হৃদি মিষ্টি নিয়ে গিয়ে বিভোরকে খাইয়ে দেয়।আর বলে,,

-ভালো কিছু তো গলা দিয়ে নামবে না।তাই জোর করে খাইয়ে দিলাম।

কথাটা বলেই হৃদি হেসে দেয়।সাথে বিভোরও।দূর থেকে দুজনের হাসি দেখে সাম্য।কেমন যেন অন্য রকম একটা ফিলিংস হচ্ছে সাম্যের।নার্সের ডাকে ধ্যান ভাঙে সাম্যের।সিঁথি ডাকছে।কেবিনে সিঁথির কাছে যায় সাম্য।

এরই মধ্যে সাম্যের মেয়ের নামও ঠিক করে ফেলেছে হৃদি। ‘সাবা’
ভালো নাম যাই হোক।ডাক নাম যেন সাবা হয়।বাড়ি ফেরার পুর্বে সিঁথির সাথে দেখা করে যায় হৃদি বিভোর।এক জোড়া কানের দুল সিঁথির হাতে দিয়ে বলে,,,

-এটা আপনার মেয়ের জন্য।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে