ধূসর অনুভূতি পর্ব-০৯+১০

0
819

#ধূসর অনুভূতি
পর্ব:০৯+১০
লেখক-শাপলা

মালিহা সবকিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইছে। তার মা তাকে বুঝিয়েছে,কোনো কিছুর জন্যই জীবন থেমে থাকেনা।মালিহাও ভাবে একটা ভুল করে সেটার জন্য যদি সারাজীবন আফসোস করে কাটে তাহলে আর জীবনের কি বাকি থাকে।
ফারহান যদিও তার সাথে তেমন ভালো ব্যবহার করে না। তবুও মালিহা সবটা মেনে নিয়েছে। মেনে না নেওয়া ছাড়া আসলে তার করার কিছু ছিলও না।সকালে আর বিকালে রান্না-বান্না করে।ঘরের মেঝে পরিষ্কার থাকলেও আবার মোছে। অর্থাৎ,কোনো কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা আরকি। সবশেষে বারান্দায় বসে থাকে।অলস-ক্লান্তিকর একেকটা দিন।কথা বলার কেউ নেই।মালিহার ফোন নষ্ট হয়ে গেছে।একটা ফোন কিনবে;এই কথা সে ফারহানকে বলতে পারে না ভয়ে।
দিনের বেলা তার ঘুমও আসে না। ফারহান অনেক রাত করে বাড়িতে আসে।এতো রাত পর্যন্ত তো অফিস থাকে না।ও কোথায় থাকে কে জানে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় হয়তো।মালিহা জিজ্ঞেসও করে না। ফারহান বলেও না।তবে,কোনো কোনো দিন বাসায় এসে গল্প করে মন ভালো থাকলে।মালিহার ভীষণ ভালো লাগে।
আর, বেশিরভাগ দিনই কোনো কথা বলে না দরকার ছাড়া।
এইতো এভাবেই একটা অদ্ভুত জীবন কাটাচ্ছে মালিহা।
ইদানিং মালিহা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে,কারো কাছাকাছি থাকলে সেই মানুষটার দোষগুলোই শুধু আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু,যখন দূরত্ব সৃষ্টি হয় তখন অনেক সুন্দর স্মৃতি মনে পড়ে,গুন গুলো মনে পড়ে।মনে হয়,মানুষটা তো এতোটাও খারাপ ছিল না।
যেমন: ইদানীং যেই ঝিনুক,যুথিকে মালিহার অনেক অসহ্য লাগতো তাদের কথাও খুব মনে পড়ে।ওরা, ক্লাস থেকে এসেই ভাবী ভাবী করে মাথা ব্যথা বানিয়ে ফেলতো। সারাদিন কলেজে কি কি করেছে সব তার সাথে গল্প করতো। কোনো কোনো দিন হয়তো মালিহার মন থাকতো না এইসব গল্প শোনার।তাই,মালিহা বলতো, এখন ভাল্লাগছে না।পরে শুনবো।
ওরা বলতো,না…না দুই লাইন শোনো আর।
এইভাবে কত কথাই না বলে ফেলতো।কেমন অদ্ভুত ধরণের ছিল ওরা।কিছু কিনলেই ভাগ বসাতো।আমাকে দাও-বলার জন্য এক মূহুর্ত ভাবতে হতো না ওদের।
যখন তিতলি হবে তখন তার শ্বাশুড়ি আরো কয়েকজন বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে আসলো,বললো,ঘরেই বাচ্চা হবে কোনো হাসপাতাল যাওয়া যাওয়ির দরকার নেই। আমাদের সব বাচ্চা তো ঘরেই হইছে।আমরা কি মরে গেছি।মালিহার তখন কি অসহ্য যন্ত্রনা।মনে মনে ভয়ও লাগছে;মৃত্যুভয়…. কিন্তু, তার শ্বাশুড়ি তো হাসপাতালে যাওয়ার ঘোর বিরোধী।গেলেই বস্তা বস্তা টাকা দিতে হবে।
তখন, ঝিনুক আর যুথির সেকি কান্না।ভাবীকে হাসপাতালে নিতেই হবে।নাহলে ভাবী মরে যাবে।
ওদের কান্নাকাটির জন্য অবশেষে হাসপাতালেই তিতলি হলো।
ওরা সম্ভবত খারাপ ছিল না। হিংসুটে তো আরো আগে ছিল না। তবুও ওদের তখন কেনো ভালো লাগতো না?মালিহা ভালো লাগা-না লাগার কারণগুলো বের করে ঘরে বসে বসে।তার তো অফুরান সময় এখন,ভাবনা-চিন্তা ছাড়া কিইবা করার আছে।
যুথি মেয়েটা অনেক ভালো ছিল।মালিহা কত বার যে যুথির কাছে, বাদশার নামে আজেবাজে কথা বলেছে।বলেছে, তোমার ভাই অমানুষ, জানোয়ার আরো কত দূর্নাম। কিন্তু,যুথি কখনোই এসব কথা তার ভাই বা মাকে বলে ঝগড়া বাঁধাতো না। চুপ করে শুনতো।
ঝিনুক অবশ্য এতোটাও সহনশীল ছিল না।খালি কথায় কথায় ভুল ধরতো,ভাবী তোমার এই কাজটা ভুল….
তবে,মালিহা ঘুরিয়ে জবাব দিলে ঝগড়া করতো না।
এটা ভালো অভ্যাস ছিল। ওদের ভালো না লাগার কারণ হলো,ওরা মালিহার সব জিনিস নিজের ভাবতো।মালিহার কত শখের জিনিস যে ওরা নষ্ট করে ফেলেছে হিসাব নেই।এতো সুন্দর আয়না যেটা মালিহার মামা মালদ্বীপ থেকে এনে দিয়েছে সেটা দুই দিনের মধ্যে ওরা ভেঙে ফেললো।”কি সুন্দর..কি সুন্দর”- বলে দেখতে গিয়ে হাত থেকে ফেলে দিলো।
ইচ্ছা করে তো আর ভাঙে নি তাই কিছু বলাও যায় না। ভেঙেই স্যরি স্যরি বলতে লাগলো।মালিহা দাঁতে দাঁত চেপে বলেছিল,স্যরি বললেই কি এখন আমার জিনিস টা ফেরত আসবে?
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে অবাক হয়ে বললো,ভাবী তুমি কি রাগ করেছো?
যেন রাগ করাটাই অনুচিত।মালিহা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলেছিল,নাহ করিনি।
এরপর, ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল, চিন্তা করো না ভাবী… তোমাকে নিউ মার্কেট থেকে এর চেয়ে সুন্দর একটা এনে দিবো।
মালিহার যে কি রাগ লেগেছিল তখন।এরা এমন নির্বোধ কেন?মন চাইছিল চড় মেরে দাঁত ফেলে দিতে।
কি পরিমান অধিকার যে এরা ফলাতো।রাত ১২টার সময় বলতো,ভাবী একটু চা বানিয়ে দেও তো।
মালিহা বিরক্ত হয়ে বাদশাহকে বলতো, তোমার বোন কি সামান্য একটু চা-ও বানিয়ে খেতে পারেনা?
বাদশাহ বলতো, সামান্য চা ইতো।বানিয়ে দিলেই পারো।আর নাহয় বলে দেও নিজেই যেন বানায়।এটা নিয়ে এতো কথা বাড়াও কেন?
মালিহা বলতো,কোন আক্কেলে এতো রাতে চা বানাতে বলে?
বাদশাহ বলতো,ওরা এমনই। ছোট তো ,বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
মালিহার কি প্রচন্ড বিরক্তি লাগতো।এরা নাকি ছোট….
অবশ্য মালিহা না বানিয়ে দিলে কোনো অভিযোগ করতো না। কিন্তু,বানাতে বলবেই বা কেন? নিজের কি হাত নেই….
মালিহা পুরানো কথা আর ভাবতে চায় না। কিন্তু, তবুও মনে পরে।মালিহার শ্বশুর অবশ্য ভালোই ছিল। মাটির মানুষ।কোনো কিছুতেই থাকতেন না।
মালিহাকে তুই করে বলতো।ঠিক যেভাবে ঝিনুক,যুথিকে বলে সেভাবে।”এই মালিহা এদিকে আয়।” “তোর মা কই? জাঁদরেল মহিলাকে কোথাও দেখছি না যে আজ..” “একটু পত্রিকা টা পড়ে শোনাবি? ঝিনুক কে বললাম, ফাজিল মেয়ে বলে, তুমি কি নিরক্ষর?নিজে পড়ো।”
লোকটা একদম সহজ সরল ছিলো। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হতো শ্বাশুড়ি কে নিয়ে।এই মহিলা সর্বক্ষন শুধু ভুল ধরতো। ভুল ধরে যে কি আনন্দ পেতো।খালি কথা শোনাতো।এটা করোনা,ওটা করোনা। এখানে যেও না, সেখানে যেও না।
আর, বাদশাহ কে বললে তো কোনো লাভ নেই। তার বউ আরো অপমানিত হলেও সে বলবে,মা একটু এমনই।রাগ বেশি।দেখো না, আমাকে,ঝিনুক-যুথিকেই সারাক্ষন ধোলাই এর উপর রাখে।তাও তো তোমাকে কমই বলে।আমাকে কলেজে পড়াকালীনও ঝাড়ুর বারি দিতো…হাহা!
মালিহার রাগে শরীর জ্বালা করতো।এ কেমন কথা… তিনি রাগী বলে যা নয় তাই বলবে,আর সেটাকে সহ্য করতে হবে?
বাদশাহ বলতো, তোমাদের বউ, শ্বাশুড়ির বিষয় তোমরা মিটাও।আমি যদি ইন্টারফেয়ার করি মা ভুল বুঝবে।ভাববে,ছেলে তাকে পছন্দ করে না।বউয়ের পক্ষ নেয়। মায়েরা এইসব বিষয়ে খুব সেন্সিটিভ। তুমি ই ভালোর সময় বুঝিয়ে বইলো যে,মা আপনি যে আমাকে এতো কথা শোনান, আমার কষ্ট হয়।
মালিহা বিরক্ত হতো।এই কথা বললে তার শ্বাশুড়ি আরো বেশি কথা শোনায় দিবে।
অন্য সবাই যেমনই ছিল এই মহিলা একটু বেশি ই ছিল।
কিন্তু,সবার কথা ভুলা গেলেও তিতলিকে তো ভোলা যায় না কিছুতেই। গোলগাল মুখ,নরম তুলতুলে গাল। সবসময় গালে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বুঝাতো তাকে চুমু খাওয়ার জন্য।
ইশ কতদিন মেয়েটাকে চুমু খাওয়া হয় না! গল্প বলার সময় চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকতো।কি তার মনোযোগ….
ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে মাকে ঝাপটে ধরে রাখতো।একটা পুতুলের মতোই লাগতো মেয়েটাকে।
মালিহা চলে আসার দশ-পনেরো দিন আগে তিতলি একদিন রাতে জেগে ওঠে।তাকে ডেকে বলে,মা আমি স্বপ্নে দেখলাম তুমি আমাকে ফেলে চলে গেলা।
সেকি কান্না মেয়েটার। এরপর, ঘুমানোর সময়ও মায়ের লম্বা চুল ধরে ঘুমায়।তার ধারণা, চুল ধরে থাকলে মা আর যেতে পারবে না। ঘুম ভেঙে সকালে উঠেই মাকে খুঁজতো।
মালিহার বুকটা ফেটে যায়।ইশ! সে কিভাবে পারলো তিতলিকে ফেলে চলে আসতে।
মালিহা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।তিতলি রে….তিতলি। তুই কই মা?
তিতলি কিছু কিছু শব্দ ঠিক ভাবে বলতে পারতো না।আঙুর কে বলতো আংগুল।বলতো,মামনি আংগুল খাবা?
মালিহার খুব হাসি আসতো।সে সত্যিই আস্তে করে তিতলির ছোট্ট আঙুলে কামড় দিয়ে দিতো।
তিতলি চেঁচিয়ে উঠতো,আরে এই আংগুল না গাছের আংগুল।
আর, মোমবাতি কে বলতো বোমবাতি।এমনি ম উচ্চারণ করতে পারতো। শুধু মোমবাতি পারতো না। অন্ধকার খুব ভয় পেতো। কারেন্ট গেলেই চেঁচাতো,বোম জ্বালাও….বোম জ্বালাও।
বাদশাও অন্ধকার ভয় পেতো। ওদের রুমে রাতেও বাতি জ্বলতো।একটু কম পাওয়ারের।মালিহার ভালো লাগতো না।সে সবসময় নিকষ অন্ধকারে ঘুমিয়েছে।
গরম কালে ঘনঘন ইলেকট্রিসিটি চলে যেতো, বিশেষ করে রাতে।এই প্রচুর গরমের মধ্যেও বাদশাহ তাকে জড়িয়ে ধরে রাখতো।মালিহা বিরক্ত হলে বলতো, ইলেকট্রিসিটি আসুক। আমার অন্ধকার ভয় লাগে।
এক সাইড দিয়ে বাদশাহ আরেক সাইড দিয়ে তিতলি জড়িয়ে ধরে রাখতো। কাউকেই ছাড়ানো যেতো না এমন শক্ত করে ধরতো….!!
এখন কই সেই শক্ত বাঁধন?

……..
……..
আমি ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে দেখি ঝিনুক আপু কোথাও নেই।
মা কেমন থমথমে মুখে ঘরের কাজ করছে ‌।
মাকে জিজ্ঞেস করায় মা বললো, ঝিনুক আপুর নাকি এক্সট্রা ক্লাস আছে,যাওয়ার সময় বলে গেছে।
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,কেন তুই জানিস না।ও তো তোর গুরু…
আমি বললাম,ইয়ে মানে জানতাম, ভুলে গেছি।
এরপর ভাবতে লাগলাম আপু কই গেল? বাসায় যদি না আসে। হঠাৎ মনে পড়ল,ছাদে?এই রোদের মধ্যে।
ছাদে উঠে মেহেদী ভাইয়ার রুমের জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আপু উনার রুমে। খাটের উপর বসে বসে কি যেন খাচ্ছে।
আমি বললাম,আপু তুমি এইখানে?
ঝিনুক আপু বললো, ভালো লাগছে না রে তাই এসে বসে আছি।গাধাটা এখন ঘরের চাবি ঐ গাছটার টবের নিচে রেখে যায়।
আমি বললাম, কিন্তু তুমি এখন এখানে বসে আছো কেন?
ঝিনুক আপু বললো,ঘরে গিয়ে মায়ের চেঁচামেচি শুনতে ভাল্লাগে না।
আমিও রুমে ঢুকে আপুর পাশে বসলাম।আপুকে কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছে।
আমি বললাম,কি হইছে তোমার আপু?
আপু কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,আচার খাবি?
বলেই তার হাতে থাকা কাঁচের শিশিটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
আমি বললাম,আপু তুমি এটা মেহেদী ভাইয়ার ঘর থেকে নিছো?উনি তো বুঝে যাবে কেউ উনার ঘরে ঢুকছে।
ঝিনুক আপু বললো,জানিস আমি ওকে অনেক গুলো চিঠি দিয়েছি ডাকিনী সেজে।ঐ যে ও আমার স্কেচ আঁকলো।এরপর আমি ওকে আরেকটা চিঠি দিছিলাম। তোদের কে বলিনি।ঐ চিঠিতে লিখছিলাম,আমি আসলেই ভূত… কেন সে এই শামুক-ঝিনুক মেয়ের ছবি আঁকছে এর জন্য আমি রাগ করছি।
এরপর,ও আমাকে একটা চিঠি লিখছে।আর, অনেক গুলো চকলেট ঘরে রেখে গেছে আমার জন্য।আর,লিখছে এরপর থেকে রুমের চাবি গোলাপ গাছের টবের নিচে রাখবে। খাটের উপর চাবি রাখা সেইফ না।
আর, আমি প্রতিদিন এই রুমে আসি। তোদের কে বলিনি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,কি করতে আসো আপু?
আপু যেন আমার প্রশ্ন শুনতেই পেলো না।বলতে লাগলো,
– আমি প্রতিদিন ওকে ডাকিনী সেজে চিঠি লেখি….লিখি, আঁমাঁর জঁন্য চকঁলেটঁ আনঁবিঁ….
আর,ও সত্যি সত্যি আমি যা লিখি তাই এনে ঘরে রেখে যায়। যেমন,কালকে লিখেছি আচার আনতে।ও এই আচারের শিশিগুলো কই থেকে যোগাড় করেছে কে জানে?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, রুমে আসো আপু।
ঝিনুক আপু বললো,দাড়া যাওয়ার আগে ওর রুমটা অগোছালো করে দিয়ে যাই।তাহলে ভাববে আমি আসলেই ভূত।
সত্যি সত্যিই আপু বিছানাটা অগোছালো করে ফেললো।বইগুলো এনে খাটের উপর রেখে দিলো।
আমি বললাম,আপু তুমি কেন এসব করো? তুমি নিজেও বুঝছো মেহেদী ভাইয়া জানে তুমি ই ভূত সেজেছিলে ‌।আর,এখনো যে তুমি উনার ঘরে আসো সেটাও উনি জানে।এবং, উনি যে সব জানে সেটা তুমিও জানো।তাহলে, কেন সবকিছু অগোছালো করলে?
ঝিনুক আপু হেসে ফেললো।বললো,ওকে জ্বালাতে আমার ভাল্লাগে…
এরপর, রুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ পরে যাচ্ছিল।
আমি আপুকে ধরলাম। দেখলাম আপুর গায়ে জ্বর।
আমি বললাম , তোমার কি হইছে আপু?
আপু বললো, আমাদের অনেক দুঃখ রে!
– কি হয়েছে বলো না…
– জানবি সবই। দুঃখের খবর যত দেরীতে জানা যায় ততই ভালো। একটা কাজ করতে পারবি যুথি…
– কি আপু?
– তুই তোর মেহেদী ভাইয়া কে বলবি কাল যেন ও ক্লাস না করে আর আমাকে নিয়ে ঘুরে সারাদিন। আমার বলতে লজ্জা লাগে। তুই বলিস। আবার,এটা বলে দিস না যে আমি তোকে শিখিয়ে দিছি।এমন ভাবে বলবি যেন আমার মন খারাপ দেখে তুই নিজে থেকেই উনাকে বলছিস কেমন?ক্লাস তো সারাজীবন করতে পারবে,আমাকে নিয়ে কি আর সারাজীবন ঘুরতে পারবে বল…..
বাসায় ফিরে আপু ঘুমিয়ে পরলো।
মা আজকে একদম চেঁচামেচি করছে না।কেমন যেন হয়ে আছে। হঠাৎ বললো,জানিস যুথি বাদশার চাকরিটা চলে গেছে।

মা বললো, বাদশাহ ভাইয়ার চাকরি চলে গেছে।কথাটা আমার কানে পৌঁছেও যেন পৌঁছালো না।ভাইয়াই আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।বাবা আগে ছোট খাটো ব্যবসা করতো কিন্তু,ভাইয়া চাকরি পাওয়ার পর থেকে আর কিছু করে না। শারীরিক ভাবেও তিনি ততো সুস্থ নন। ভাইয়া মোটামুটি একটা ভালো অঙ্কের টাকাই বেতন পেতো।যদিও চাকরি টা সরকারি নয়।তবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও হুটহাট করে কর্মীদের ঝেড়ে ফেলা হয় না সেখানে।আর, ভাইয়া তো ভালো পোস্টে ছিল,কাজের প্রতিও তার যথেষ্ট সিনসিয়ারিটি ছিল।
আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু ভাইয়ার দোষ টা কি মা?
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তোর ভাইয়া নাকি পাগল হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে। অফিসে বেশ কয়েকটা কম্পিউটার ভেঙে ফেলেছে সে। ডিসথমনিয়া না কি যেন বললো একটা মেন্টাল ডিসঅর্ডার….
আমার বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছেই না।আমি বললাম, ভাইয়া কোথায় এখন মা?
মা বললো,ক্লিনিকে আছে।অফিস থেকে পাঠাইছে।
আমি অবাক হয়ে রইলাম। ভাইয়ার একি অবস্থা।না চাইতেও চোখের জল গড়িয়ে পরলো।
আমি বললাম,মা..আমি ভাইয়ার কাছে যাবো।
মা বললেন,যা।আমি কি ধরে রাখছি?
কি নির্লিপ্ত ভাবে কথা বলছে মা।যেন আমি কোন বান্ধবীর বাসায় যেতে চাইছি।
মায়ের থেকে জেনে আমি চলে গেলাম হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দেখি বাবা আছে, মেহেদী ভাইয়া আর আরমান আংকেলও আছে।বাবা কাঁদছে আস্তে আস্তে। মেহেদী ভাইয়া বাবাকে শান্তনা দিচ্ছে।
আমাকে দেখে বাবা আরো জোরে কান্না করে ফেললো।উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি বললাম,বাবা ভাইয়ার কিছুই হবে না।
ভাইয়াকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।ডাক্তার বলেছেন, ভাইয়া অত্যাধিক মানসিক কষ্ট পেয়েছে যেটা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। এরপর, তিনি ঠিকমতো না ঘুমিয়ে, নিজের যত্ন না নিয়ে রোগটাকে ডাল-পালা গজাতে সাহায্য করেছে।
যখন কেউ মানসিক কষ্টের মাঝে দিয়ে যায় তখন সবার উচিৎ সেই মানুষটাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা,সময় দেওয়া।বড় কষ্ট পাওয়ার পরও যখন মানুষ হাসে, স্বাভাবিক জীবন যাপন করে নিজে থেকেই তখনি বুঝতে হবে ঘাপলা আছে। শরীরের যেমন যত্ন নিতে হয় মনেরও তেমন যত্ন নিতে হয়।
আমি ডাক্তারকে থামিয়ে বললাম, আমার ভাই কি পাগল হয়ে গেছে?
ডাক্তার বললো,হয়নি। তবে,কিছুদিন ভর্তি থাকতে হবে। পর্যবেক্ষনে রাখা হবে তার আচার আচরণ সবকিছু।
আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন চারপাশ অন্ধকার দেখছি। দরজার উপরে থাকা কাঁচের অংশ দিয়ে তাকালাম। দেখলাম, ভাইয়া নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে।
রুমের মধ্যে ঢুকতে আর মন চাইলো না।
ক্লিনিকের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
একসময় দেখি মেহেদী ভাইয়া এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে।
মাথা নিচু করে বললো,মন খারাপ করো না যুথি। বাদশাহ ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।
আমি বললাম,ঠিক যদি হয়েই যাবে তাহলে চাকরি চলে গেল কেন?
মেহেদী ভাইয়া বললো,কারণ ঠিক হওয়াটা একটু সময়ের ব্যাপার তাই। প্রাইভেট কোম্পানির কি এতো সময় আছে…তবে ঠিক যে হবে এইটা শিওর।
আমি বললাম,একটু সময় বলতে কত সময় সত্যি করে বলবেন প্লীজ….
মেহেদী ভাইয়া করুন চোখে তাকালো।বললো,হয়তো একমাস হয়তো বা একবছর।
আমি মুচকি হেসে বললাম, ধন্যবাদ ভাইয়া।সত্যিটা বলার জন্য।
এরপর বললাম, ঝিনুক আপু বলেছে আপনি যেন তার সাথে কালকে একটু ঘুরতে যান। তিনি খুশি হবে।
লক্ষ্য করলাম, ঝিনুক আপুর নাম শুনে মেহেদী ভাইয়ার বিষন্ন মুখে এক মুহুর্তের জন্য আনন্দের রেখা ঝিলিক দিলো।
পরক্ষনেই বললো, কিন্তু বাদশাহ ভাইয়ের এই অবস্থা….
আমি বললাম,এক ঘন্টার জন্য যাইয়েন। আপুর মনটাও খারাপ।মনটা ফুরফুরে হবে একটু।
মেহেদী ভাইয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।হ্যা ঠিকই বলেছো।
জানি না কেন একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আমার বুক থেকে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এলো।খানিকটা ধমকের স্বরে বললো, মানসিক রোগীর সাথে আত্মীয়দের দেখা করানো হয় না।তাই, দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।
আমরা যেন বাসায় যাই। তিনদিন পর আসি।উনারা তিন দিন রোগীর কাছে কাউকে এলাউ করবেন না।
আমি বাড়ি ফিরে এলাম ভগ্ন হৃদয় নিয়ে।
বাবা ক্লিনিকের বাইরে বসেই রইলো।আসলো না কিছুতেই। মেহেদী ভাইয়া তার সাথে রইলো।
আমি চলে এলাম। হাসপাতাল আমার দোজখের মতো লাগে।উফ কি কষ্ট…কি ভীষন অসহ্য আহাজারি-আর্তনাদ মানুষের।ডাক্তার-নার্স গুলো কি হৃদয়হীন। আমাদের মতো ভাঙা হৃদয়ের মানুষদের ধমক দিয়ে কথা বলে…
বাসে করে বাসায় ফিরছি।এক উগ্র ধরণের লোক আমার পাশের সিটে বসলো। চুল খানিকটা বড়, হাতের দশ আঙুলে দশটা আংটি।লাল চোখ আর পরণে কেমন ধরণের ছিড়াফাড়া পোশাক। এইগুলো তো আবার আজকালকার যুগের ফ্যাশন।লোকটা সিগারেট ফুঁকছে আর ফোনে কার সাথে যেন ঝগড়া করছে।
আমি বললাম,ভাই পিছনের সিট খালি ওখানে বসেন।
লোকটা প্রচুর বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকালো। তার,লাল চোখ দু’টো যেন বলছে,এতো সমস্যা হলে প্রাইভেট কারে চলাফেরা করবেন।আমি উঠবো না।
কত ধরণের হ্যারাসমেন্টের স্বিকার হয়েছি এইরকম বাসে।আহ!এতো কষ্ট কেন আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জীবনে? সিটের আরো কোনায় চলে গেলাম আমি।
এসব ভাবার সময় না এখন। আমার ভাইয়াকে নিয়ে ভাববো শুধু। আমাদের সব আবদারের কথা ভাইয়াকে বলতাম নির্দ্বিধায়। তখন ভাইয়া চাকরিও করতো না।টিউশনি করতো।সেই টিউশনির এক টাকাও নিজের জন্য খরচ করে নি।সব আমার আর ঝিনুক আপুর পিছনে খরচ করেছে।যা খেতে মন চাইতো,যা কিনতে মন চাইতো,যেখানে যেতে মন চাইতো সব বলতাম ভাইয়ার কাছে।আর,ভাইয়াও সব ইচ্ছা পূরণ করে দিতো।আর,কার কাছে আমরা আবদার করবো?
কে আমাকে আগলে রাখবে?কে বলবে,যুথি কাউকে ভয় পাবি না। রাস্তাঘাটে কোনো পোলাপান কিছু বললে আমারে বলবি একদম ঠ্যাঙ ভেঙে দিবো ঐ পোলাপানের। নিজের অজান্তেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম। অনেক চেষ্টা করলাম কান্না থামানোর। কিন্তু, পারলাম না।
আমার পাশে বসা অসভ্য লোকটা হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে খুব উতলা হয়ে গেলো।”কি হইছে আপা কাঁন্দেন কেনো? আইচ্ছা আমি উইঠা যাইতাছি কান্দা থামান”…
উনি উঠে গেলেন সিট থেকে। চলন্ত বাসে দাঁড়িয়েই গেলেন বাকিটা পথ।
আমি বললাম বসতে। কিন্তু,উনি আর বসলেন না।
বলতে লাগলো, সমস্যা নাই বইন সমস্যা নাই।দশমিনিটের রাস্তা।
আমি মন থেকে উনাকে ভাইয়া ডাকলাম। বললাম, ভাইয়া আপনি অনেক ভালো মানুষ।
উনি হেসে বললেন,আরে না..না।আমি ভালা না।

বাসায় ফিরে দেখি মা চিৎকার করে কাঁদছে। কিছুক্ষণ আবার চুপ রইলো। আবার চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর মালিহা ভাবীকে গালিগালাজ করতে লাগলো। আবার কিছু ক্ষন চুপ থাকেন আবার চেঁচামেচি করেন। চক্রাকারে এটাই চলছে।
আমি মাকে বললাম,মা ভাইয়া কি মরে গেছে? তুমি এমন করছো কেন?ডাক্তার তো বলেইছে ঠিক হয়ে যাবে।
মা বললো,তুই বুঝবি না.. বাদশাহ আর ঠিক হইতো না।মা’র মনের চেয়ে কি ডাক্তার বেশি জানে? মায়ের মনে যেইটা বারি খায় ঐটাই হয়।
ঝিনুক আপু পাশের ঘর থেকে বললো,মা তোমার মন কোন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করছে?

আমি পাশের ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি ঝিনুক আপু শুয়ে আছে তখনো। চোখ গুলো ছোট হয়ে গেছে কান্নার কারণে।তবুও আমার সামনে হাসি দেওয়ার ভাণ করে আছে।
কপালে হাত দিয়ে দেখি গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।
নিজের শরীরেও কোনো রকম শক্তি পাচ্ছি না।
কিন্তু, কিছু রান্নাবান্না তো করতে হবে।সবাই খাবে কি… কিচেনে যেতে যেতেই মেহেদী ভাইয়া বাবাকে নিয়ে ফিরে এলো।
মেহেদী ভাইয়া রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়ার জন্য অনেক কিছু কিনে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু, কারোরই খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। মেহেদী ভাইয়া জোর করে আমাকে আর বাবাকে খাওয়ালো।
মাকে অনেক জোর করতে লাগলো খাওয়ার জন্য।মা তো কিছুই খাবে না।আমি বললাম,থাক ভাইয়া জোর কইরেন না।মা যেটা না করে সেটা সবসময় না ই থাকে।
মেহেদী ভাইয়া তবুও মাকে জোর করতে লাগলো।বলতে লাগলো, আপনি তো আমার মায়ের মতোই, আমার একটা কথাও কি শুনবেন না? বাদশাহ ভাইয়া বললেও কি আপনি না খেয়ে থাকতেন? আমিও আজ সকাল থেকে কিছুই খাইনি। আপনি যদি না খান এখনো আমার খাওয়া হবে না।
মা বললো, তোমার খাওয়া তুমি খাও.. আমার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?আমি খাবো না বলছি না।
মেহেদী ভাইয়া বললো,প্লীজ খেয়ে নেন না মা!
মা অবাক চোখে মেহেদী ভাইয়ার দিকে তাকালো। মেহেদী ভাইয়া বললো,আমার মা নেই আন্টি। আমি কাউকে মা ডাকলাম দীর্ঘ একযুগ পর। আপনি আমার কথা শুনবেন না?
মেহেদী ভাইয়া চোখের পানি মুছলো। মায়ের চোখেও পানি চলে আসলো।
মা খেতে রাজি হলেন। খাওয়া দাওয়া করে বাদশাহ ভাইয়ার রুমে গিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে রইলেন।
আমি তিতলিকে খাওয়ালাম। হঠাৎ মনে পরলো,আপু তো খায়নি।
তিতলিকে ওর দাদার রুমে রেখে আমি আমাদের রুমে গেলাম।দরজায় দাঁড়িয়ে দেখি মেহেদী ভাইয়া খাবার নিয়ে বসে আছে আপুর মাথার কাছে।
– ওঠো খেয়ে ওষুধ খাও ঝিনুক। একজন অসুস্থ হইছে ঐটাই যথেষ্ট। আবার, তুমি কেন অসুখ বাঁধাতে চাইছো?
ঝিনুক আপু বললো, চুপ থাক গাধা ভূত কোথাকার। আমাকে খাইয়ে দিতে বললাম ঐটা শুনছিস না কেন?
কান নেই তোর?
– তুমি আমাকে তুই তুকারি করছো কেন?
– তো?এই ডাকিনী কি তোর মতো গাধা ভূত কে আপনি আজ্ঞে করবে?শখ কত হুহ….
– তাহলে স্বীকার করছো তো তুমি ই ডাকিনী?
আমি দরজার আড়াল থেকে ওদের দুজনকে দেখছিলাম। মেহেদী ভাইয়া ঝিনুক আপুকে খাইয়ে দিচ্ছিলো।কি সুন্দর লাগছে দুইজনকে… আমার ভাল্লাগলো,কেন জানি একটু কষ্টও হলো।
খাওয়ার পর আপুকে ওষুধ খাইয়ে মেহেদী ভাইয়া চলে যেতে লাগলো।আপু উনার হাত ধরে বললো,যাইস না রে প্লিইজ…
মেহেদী ভাইয়া বললো, কেন?
আপু বললো,কারণ একবার যেতে দিলে এমন মেন্দি পাতা আরতো পাবো না।
বলেই আপু হাসলো।
মেহেদী ভাইয়াও হেসে ফেললো। আবার, ঝিনুক আপুর পাশে বসলো।
ঝিনুক আপু মেহেদী ভাইয়ার কোলে মুখ গুঁজে ফেললো।
মেহেদী ভাইয়া বললো, ঝিনুক জ্বরের ঘোরে কি করছো?কেউ যদি এই খানে এখন আসে?
ঝিনুক আপু বললো, চুপ গাধা ভূত…আমি কালকে ঘুরতে যাবো ঠিকাছে…
– তোমার তো অনেক জ্বর ঝিনুক..
-আমার হলো ভালুকের জ্বর।কাল সকালেই গায়েব হয়ে যাবে।
আমি হঠাৎ আমার ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি,মা….
আমার হৃৎপিণ্ড থেমে যাওয়ার উপক্রম হলো।আজকে মা তান্ডব বইয়ে দিবেন।
মা ঠান্ডা চোখে কিছু ক্ষন দেখে চলে গেলো। কিছুই বললো না।এ যেন অষ্টম আশ্চর্য।
পরদিন সকালে খুব ভালো একটা ঘটনা ঘটলো।ক্লিনিক থেকে ফোন আসলো।আমি ধরলাম। একজন নার্স বিরস মুখে বললো,নিন রোগীর সাথে কথা বলুন।
হঠাৎ, বাদশাহ ভাইয়ার গলা শুনতে পেলাম।
– কিরে যুথি আমাকে এখানে রেখে গেছিস কেন?
আমি ভাইয়ার সাথে কথা বললাম। মা-বাবাও বললো। ভাইয়া একদমই স্বাভাবিক।
পরে,ডাক্তার বললো, চিন্তা করবেন না। তিন-চার দিনের মধ্যেই উনি ঠিক হয়ে যাবে।
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।সত্যিই আমাদের ভাগ্য এতো ভালো?নাকি…….
……..
……..
ঝিনুক ঠিকই বলেছে।ওর জ্বর আসলেই ভালুক জ্বর।রাতে কি ভীষণ জ্বর ছিল, এখন আর নেই।
মেহেদী আর ঝিনুক ঘুরতে এসেছে।কি সুন্দর ছবির মতো একটা জায়গা….আসলে এটা একটা নার্সারি। শহরের সবচেয়ে বড় নার্সারি এটা। চারপাশে শুধু গাছ গাছ আর গাছ। ফুল,ফল,ঔষধি,মশলা,কাঠ সব ধরনের গাছই আছে।
লাল রঙের জামা পরেছে বলেই ঝিনুক কে কেমন বউ বউ মনে হচ্ছে। বিশেষ করে, মাথায় ঘোমটা দেয়ার কারণে।
মেহেদী তাকিয়ে থাকে ঝিনুকের দিকে।একদিনের জ্বরেই কেমন রোগা আর দূর্বল লাগছে মেয়েটাকে।অবশ্য এর জন্য আরো বেশি মায়াবী লাগছে….
ঝিনুক হঠাৎ বললো, তাকিয়ে আছেন কেন? জীবনে মেয়ে দেখেন নি?
মেহেদী কি বলবে ভেবে পেলো না।
ঝিনুক বললো, আপনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন কোন মতলবে বলবেন?
– তুমি ই তো আসতে চাইছো।
– কখন?জ্বরের ঘোরে কি না কি বলেছি আপনি সত্যি ধরে বসে আছেন?জ্বর এলে আগে আমি আমার মাকে ভাবী ডাকতাম। আমার মাথা আউলায় যায় বুঝলেন?
– কিন্তু,আমাকে তো যুথি বললো তুমি নাকি আমার সাথে ঘুরতে যেতে চাও।
ঝিনুক বিরক্ত হয়ে যায়।এই গাধা যুথিটাও না….
নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,আমি বললেই আমাকে নিয়ে আপনি আসবেন কেনো?কোনো মেয়ে বললেই আপনি তাকে নিয়ে ঘুরতে যান?
– কোনো মেয়ে আর তুমি কি এক?
– ওমা আলাদা হবো কেন? আমার মাথায় কি শিং আছে?
মেহেদী হাসলো।
~তুমি নিজেই বুঝো ঝিনুক কেন তুমি আলাদা?
– না তো আমি তো বুঝি না। বলেন কেনো?
~তুমি যে বুঝো সবকিছু আমি জানি।স্বিকার করলেই হয়, আমার মুখ থেকে শুনতে চাও….
……….
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে