ধূসর অনুভূতি পর্ব-০৭+০৮

0
725

#ধূসর অনুভূতি
পর্ব:০৭+০৮
লেখক-শাপলা

অনেক ক্ষন ধরে ঝিম মেরে বসে আছি আমরা তিনজন। ঝিনুক আপু বললো,ও কি তাহলে গাধা নয়?
পরী আপু বললো,আরে গাধাই।তবে,আমরা যতটা ভাবছি তার চেয়ে একটু কম। ঐদিন চিঠি না দিলে বুঝতেই পারতো না যে এই কাজ তোর।চিঠি দিয়ে বাড়াবাড়ি টা করছিস।
ঝিনুক আপু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পরী আপু বললো,ঐ স্কেচ ওর ঘরেই থাকুক।আমরা এমন একটা ভাব করবো যেন আমরা ওর ঘরে ঢুকিই নি।জানবো কি করে ও কি ছাতার মাথা আঁকছে।
ঝিনুক আপু বললো, হুম। একটু থেমে বললো, কিন্তু ছবিটা অনেক সুন্দর আঁকছে তাই না?
পরী আপু হেসে বললো, মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছে সুন্দর তো হবেই।
ঝিনুক আপু হাসতে লাগলো। বললো, চুপ থাক। বেশি ফালতু কথা বলবি না!
এরপর হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,কিরে যুথি কি হইছে?মেন্দি পাতার রুমে চিঠি পাওয়ার পর থেকেই দেখছি তুই কেমন মন মরা হয়ে আছিস..
আমি মৃদু হেসে বললাম ,কই না তো।মনমরা হইনি তো, ভীষণ অবাক হয়েছি।
ঝিনুক আপু বললো, আসলেই অবাক হওয়ার মতোই বিষয়।গাধাটা আমাদের সবাইকে চমকে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আমরা ছাদ থেকে নেমে পরলাম।
বাসায় ফিরে দেখি মা পোলাও রাঁধছে।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম কারণ মায়ের মেজাজ সবসময়ই তেঁতে থাকে,মা হঠাৎ পোলাও করছো কেন?
মা আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসলো।হেসে বললো,তিশি মনি আসবে তো তাই।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।তিশিমনি মানেটা কি….
আপু বললো, তুই জানিস না? আমাদের মাতা তিশিকে ডাকে তিশিমণি আর তিশি তাকে ডাকে মামণি।
মা ঝিনুক আপুকে একটা ধমক দিলেন। বললেন,সর ভাগ তো…
তিশি আর মা বসে বসে খুব হাসাহাসি করে গল্প করছে।তিশি দেখছি আবার মায়ের সাথে পানও খাচ্ছে।
এমন সময় ভাইয়া বাসায় এলো।
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,সেই মেয়ে আবার এসেছে?
আমি বললাম, আসবেই তো। তোমার বউ হয়েই ছাড়বে সে।
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর,মায়ের রুমে ঢুকলো।
আমিও পিছুপিছু ঢুকলাম। ভাইয়ার চাহনি হঠাৎ বদলে গেল। সেইদিন অফিসে যেমন লাগছিল ঠিক তেমন লাগছে ভাইয়াকে আবার। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাইয়া কি আবার সব ভুলে গেলো?
মাও আমার মতো ভয় পেয়ে গেল।
বললো, বাদশাহ তুই এখন এখান থেকে যা।
ভাইয়া বললো,কাকে যেতে বলছেন? এখানে তো কোনো রাজা-বাদশাহ দেখছি না।
মা চোখ বড়বড় করে বললো,যুথি ওকে নিয়ে যা এখান থেকে।
তিশি আবাক হয়ে বললো,উনার কি হয়েছে মামণি?
বাদশাহ ভাইয়া বললো,এই যে খুঁকি তুমি সব কিছু তে এতো নাক গলাও কেন?নাক গলাতে গলাতে একদিন দেখবা তোমার নাক গায়েব হয়ে গেছে বুঝছো?যাও বাসায় গিয়ে বই নিয়ে বসো।সামনে এসএসসি না?পরে তো ১১ বিষয়ের মধ্যে ১০ টাতেই ফেইল করবা।
তিশি উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।
মা বললো,তিশি ওর কথায় কিছু মনে করো না।ও মজা করছে।
বাদশাহ ভাইয়া বললো,না মজা করছি না তো।এই খুঁকি তোমার কি মনে হয় আমি মজা করছি?
আমি বললাম, ভাইয়া চলো।
ভাইয়া বললো, আপনি কে ইয়ং লেডি?একটু পরিচয় বলুন।অপিরিচিত মানুষের সাথে কোথাও গেলে আমার মা বকবে।
তিশি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। এরপর ছুটে বেরিয়ে চলে গেল।মা পিছু পিছু গেলো।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া হাসছে স্বাভাবিক মানুষের মতো।
আমি বললাম, ভাইয়া তার মানে তুমি এতক্ষণ অভিনয় করেছো?
ভাইয়া হেসে বললো,বড় ঝামেলা থেকে মুক্তির শর্টকাট টেকনিক।তোরা তো বলিস আমি নাকি হঠাৎ হঠাৎ সব ভুলে যাই। আমার তো সেসব মনে থাকে না।তাই,আজ সজ্ঞানে সব ভুলে গিয়ে দেখলাম কেমন লাগে।
ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেল।
মা ফিরে এল একটু পর ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে।
আমি বললাম,কি হয়েছে মা?
মা বললো,তিশি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে বাদশাহ বদ্ধ পাগল।এর জন্যই নাকি বাদশার বউ পালিয়ে গেছে।
মায়ের করুণ মুখটা দেখে আমার মায়াই হলো।
মা বললো, বাদশাহ কই?
আমি বললাম, ঘুমিয়ে পড়েছে।
-ঘুমিয়ে পড়েছে না?এত বড় প্যাঁচ লাগিয়ে নাক ডাকছে হারামজাদা।
আমি বললাম, তোমার ছেলে অসুস্থ সেই চিন্তা না করে তুমি কি বলছো এইসব?
মা চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ইশু ভাবী আমাদের বাসায় এলেন।
বললেন,আন্টি আপনি মন খারাপ কইরেন না। একবার তো আমাকে বলতে পারতেন বাদশাহ ভাইয়ের সমস্যার কথা।তাহলে,এতো বড় ঝামেলা হতো না।যাকগে তিশি গেছে যাক।এর চেয়েও ভালো মেয়ে আমার হাতে আছে।আর শোনেন বাদশাহ ভাইকে ঘরে লুকিয়ে না রেখে পাবনা পাঠিয়ে দেন। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে। পাগল হওয়াটা দোষের কিছু না।
মা চিৎকার করে বললো,যাও তো তুমি। বেরিয়ে যাও।
রাত্রে বেলা আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,আপু মেহেদী ভাইয়াকে কি তুমিও ভালোবাসো?
আপু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।বললো,তুই এতো করুন গলায় কথা বলছিস কেন?
আমি বললাম,তাই নাকি? খেয়াল করি নি তো!
বলেই হাসলাম।আপু বললো,ঐ হাবলাকে ভালোবাসার জন্য কি আমার দায় পরেছে?
– না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে…….
– আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে?
– তুমি উনাকে একটু হলেও পছন্দ করো।
-ছাই করি।দেখ না আমি ওর কেমন বারোটা বাজাই।কি করি শুধু দেখ…
আমি বললাম,আপু আবার?
– তো?তুই কি মনে করেছিস আমি একবার ব্যর্থ হয়েছি দেখে থেমে যাবো। একবার না পারিলে শত বার চেষ্টা করিতে হয় জানিস না?

……..
…….
ফারহান হাসি হাসি মুখ করে ঘরে ঢুকলো।বললো,শুনছো মালিহা খবর শুনছো?
মালিহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,কিসের খবর?
ফারহান হাসিটাকে আরো বিস্তৃত করে বললো, তোমার প্রাণপতি বাদশাহ সাহেব আবার বিবাহ করছেন এই কয়েকদিনের মধ্যেই খবর পেলাম।হা…হা।
মালিহার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।সে বললো,এই খবর আমাকে শোনাচ্ছো কেন তুমি?যাও গিয়ে ফ্রেশ হও।
– তোমাকে শোনাবো না তো কাকে শোনাবো? তুমি তো বাদশার কথা ভেবে সারাক্ষন অশ্রুবিসর্জন করো।হাহা।
মালিহার বিরক্ত লাগছে খুব।সে উঠে চলে যেতে চাইলো।
ফারহান বললো,পাত্রীটা কে শুনে যাও।পাত্রীর বয়স সবে ষোলো। একদম কচি মেয়ে। বাদশার ই তো সময় এখন হাহা…
-ফারহান তুমি মদ খেয়ে এসছো?
– না তো খাইনি তো।পান করেছি।হা…হা….
মালিহা দ্রুত পায়ে হেঁটে অন্য রুমে চলে গেল।দরজা আটকে কাঁদলো কিছু ক্ষন।তার কোনো কিছুই শান্তি লাগছে না।বুকের মধ্যে সাগরসম কষ্ট।
পরদিন শুক্রবার ছিল।মালিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে ফারহান নেই।ও তো এতো সকালে কখনো ঘুম থেকে ওঠে না…
মালিহা ড্রইং রুমে এসে দেখে ফারহান কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে।
মালিহা বললো, কোথায় যাচ্ছো ফারহান?
ফারহান বললো, বাড়িতে যাচ্ছি। বাবা অসুস্থ।
মালিহা বললো,আমি কি এই অপরিচিত জায়গায় একা থাকবো?আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে চলো…
ফারহান মালিহার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। বললো,মালিহা তোমার একেকটা কথা শুনলে আমার গা জ্বলে যায়। আমার বাবা অসুস্থ হয়েছে তো তোমার জন্যেই।এখন আবার তোমাকেই যদি সাথে নিয়ে যাই তাহলে তো কথাই নেই।
– আমার জন্য অসুস্থ হয়েছে মানে?
– এই যে আমি অবিবাহিত হয়ে বিবাহিত এক মেয়ের সাথে পালিয়ে গেলাম।এই খবর কি কোনো বাবা-মা সহ্য করতে পারে?বাবা আমার জন্য মেয়ে পছন্দ করে রেখেছিলেন।মেয়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ছিলো।নাম সারাহ। আমার দুঃসম্পর্কের ফুপুর মেয়ে। বাবার মনের সমস্ত ইচ্ছায় আমি জল ঢেলে দিয়েছি।বাবাকে সবাই অপমান করছে ,তার ছেলে আরেক জনের বউ নিয়ে পালিয়ে গেছে।এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে। আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মালিহা। আমার বাবা খুব কষ্ট করে আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে পড়াশোনা করিয়েছে।দিনে কৃষিকাজ করেছে,রাতে নাইট গার্ডের চাকরি করেছে। আমাদের কথা ভেবে তিনি নিজের সব আনন্দ বিসর্জন দিয়েছে।আর, আমি বাবার রক্ত পানি করা টাকায় বড় হয়ে নিজের সুখের কথা ভেবে বাবার মনে কষ্ট দিয়েছি… বাবা স্ট্রোক করেছে।যদি মারা যায় আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
মালিহা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সে চাইলেই জবাব দিতে পারে কড়া ভাষায়।কারণ, ভালোবাসার কথাটা সর্বপ্রথম ফারহান ই বলেছে,সে নয়।ক্ষতি ফারহানের চেয়েও তার বেশি হয়েছে। এখন ফারহান তার ঘাড়েই দোষ দিচ্ছে। কিন্তু,মালিহা কিছুই বলতে পারলো না।
ফারহান কাঁদছে।মালিহা বললো,যাও চিন্তা করো না।বাবার কিছুই হবে না।
ফারহান চলে গেলো। পিছন ফিরে তাকালো না।
মালিহার কেন জানি মনে হলো ফারহান আর ফিরবে না।যত সুখ স্বপ্ন নিয়ে ফারহান এর হাত ধরেছিল সে তার কিছু ই বাস্তবিকই হয় নি।
নরকের মতো মনে হতো যেই বাড়িটাকে ,ছেড়ে আসার পর সেখানেই মনটা পরে ছিল মালিহার।খালি তিতলির কথা মনে পরে কান্না পাচ্ছিল।তিতলিকে যে এতো ভালোবাসে আগে কখনোই বুঝতে পারেনি। তখন মনে হচ্ছিল তিতলির জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডেও সে হাসিমুখে থাকতে পারবে। ফারহানকে বলেছিল,তিতলি কে কবে আনবে আমাদের কাছে?
ফারহান খুব রেগে গিয়েছিল। ফারহানের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ফারহানের সাথে মন খুলে কথা বলতেও মালিহার ভালো লাগতো না।কিভাবে লাগবে;তার তো পিছুটান রয়ে গেছে। ফারহান সারাক্ষন রাগারাগী করতো। গালাগালি করতো কুৎসিত ভাবে।বলতো, বাদশার জন্য এতো টান হলে ওখানেই থাকতি।আর মেয়ের জন্য এতো দরদ হইলে পালাইছিস কেন?তুই যদি এতোই ভালো মেয়ে হতিস তাহলে পালিয়ে আসতি না। এখন আমি কেন তোর মেয়েকে পালবো? দুইদিন পর তো বলবি তিতলির সাথে বাদশাহ কেও নিয়ে আসতে এই বাড়িতে।
মালিহা চোখের পানি মোছে। কিছু মানুষের জন্মই হয় বোধহয় কষ্ট পেতে। আচ্ছা, তার জীবনটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। বাবা-মা যথেষ্ট ধনী ছিল।না চাইতেই সব ইচ্ছা পূরণ করে দিতো বাবা।কত আদরে মা রেখেছেন,চুলার কাছেও যেতে দেননি। বলতেন, আমার মেয়ের হাত পুড়ে যাবে। খুব ফীল করতো মালিহার কষ্ট মা।
মালিহার বুকটা যে এখন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে মা কি ফীল করে না?
আচ্ছা, ফারহান কি সেই সারাহ নামের তার কাজিনকে বিয়ে করবে? ফারহানের বাবা নিশ্চয়ই মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বলবে মালিহাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।
আর বাদশা?সে কি সত্যিই ষোলো বছরের একটা মেয়ে কে বিয়ে করছে? বিচিত্র কিছু নয়। করতেই পারে।
তিতলি কি সেই মেয়েটিকেই মা ডাকবে? বাদশাহ আর তার পরিবার কি বলবে ,তিতলি তোর মা ডাইনী ছিল। তোর মায়ের কথা মনেও আনিস না। কষ্ট পাস না।
একসময় তিতলি তাকে ভুলে যাবে?তিতলি সত্যিই ভাববে তার মা একটা ডাইনী?
মালিহা আর ভাবতে পারে না।
চিৎকার করে বলে,আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও।আর,কিছুই আমি চাইনা।
মালিহা অনেক ক্ষন কান্নাকাটি করে।
এরপর, কাঁপা কাঁপা হাতে তার মায়ের নম্বরে ডায়াল করে।
দুইবার রিং হওয়ার পর মা ফোন উঠায়। জিজ্ঞেস করে,কে?
মালিহা নিজেকে সামলাতে পারে না। বাঁধভাঙা কান্না থামতেই চায় না।
মালিহার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,কেন আমাকে ফোন করেছিস? লজ্জা করে না তোর?কি দোষ করেছিলাম আমি আর তোর বাবা?তোকে জন্ম দিয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় দোষ? তোর বাবা কতটা সৎ মানুষ তার দিকে চোখ তোলার সাহস কোনোদিন কেউ পায়নি।আজ, তোর কর্মকান্ডের জন্য সবাই আঙুল তুলছে আমাদের দিকে।বলছে,কি শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে,মেয়ে এতো বড় চরিত্রহীন হলো কিভাবে?যেদিন তুই বাদশাহ কে বিয়ে করতে চেয়েছিলি সেদিনও আমি মানা করেছিলাম তুই শুনিস নি।কত ভালো পাত্র হাতছাড়া করেছি।সবাই সেদিনও কথা শুনিয়েছিলো,কেন একটা বেকার ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি।তবুও, তোর কথা ভেবে সব হজম করেছি।স্বামী-সংসার,সন্তান সব হয়েছে। এরপর তুই এমন একটা কাজ কিভাবে করলি?এতো বড় একটা পাপ কাজ করার আগে তো মাকে ফোন করিস নি… তাহলে আজ করেছিস কেন? আমার কোনো মেয়ে নেই মালিহা।আশা করি,এতো ক্ষন যা বলেছি তার সারমর্ম বুঝেছিস।আমাকে আর ফোন করবি না।
মালিহা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,মা…. কোনো মানুষ যখন অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যায় তখন সবার আগে তার যে মানুষটার কথা মনে পরে সে হলো মা।কারণ,সে জানে তার দুঃখের সময়, বিপদের সময় সুসময়ের সঙ্গীরা কেউ পাশে দাড়াবে না শুধু মা ছাড়া।
মা বললেন,হ্যাঁ কিন্তু যে বারবার নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনে তার পাশে মায়েরও দাঁড়ানো উচিৎ না।
ফোন রেখে মালিহা সারারাত কাঁদলো।
ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
দেখতে দেখতে চারদিন হয়ে গেল। ফারহান ফিরে এলো না।কোনো ফোনকল-ও করেনি।মালিহাও করেনি।কি দরকার যে আসতে চায় না তাকে বিরক্ত করেই। ফারহান হয়তো বুঝতে পেরেছে আবেগের বসে সে অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মালিহা অনেক সময় নিয়ে গোসল করলো।তারপর, বারান্দায় বসে রইলো।কি করতে চায় সে?সে কি নিজেকে শেষ করে দিতে চায়?
নাহ!এতো অসীম সাহসী তো সে নয়। হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে।
মালিহা দরজা খুলে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে।
মালিহা কেমন অনুভূতি শূন্য হয়ে যায়। তার কি খুশি হওয়া উচিত ছিল না ফারহানকে দেখে?
ফারহানের চোখ টকটকে লাল।
মালিহা বললো, তুমি মদ খেয়েছো? চোখ এতো লাল কেন?
মালিহা প্রস্তুত হয়েই ছিল ফারহানের ধমক শোনার জন্য। কিন্তু, ফারহান ধমক দিলো না।
খুব নিচু গলায় বললো, আমার বাবা মারা গেছে মালিহা।
ফারহান মালিহাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে।
মালিহা যন্ত্রের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
ফারহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, বাদশাহ মনে হয় অভিশাপ দিয়েছে তাই না?
মালিহা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,না ফারহান বাদশাহ অভিশাপ দেয়ার মতো ছেলেই না।ও কারো খারাপ চায় না,কাউকে ও অভিশাপ দেয় না।
ফারহান হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠে।মালিহার গালে সজোরে একটা থাপ্পর দেয়। চেঁচিয়ে বলে, বাদশার মতো ভালো মানুষ দুনিয়ায় নাই তাই না? তাইলে বাদশাহকে ছেড়ে আসছিস কেন? সারাক্ষন কেন ওর গুনগান করে আমাকে কষ্ট দিস?কেন?
মালিহা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো,তার চোখে পানি আসছে
আজ মায়ের জন্মদিন।আমরা মাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি। মায়ের মন এমনিতেই খারাপ তিশির জন্য।আর,বাবাও বললো তোর মা ইদানীং বেশি খ্যাটখ্যাট করে।ওকে কোনো উপহার-টুপহার দেওয়া উচিৎ। তখন, ঝিনুক আপু বললো, মায়ের তো সামনে জন্মদিন আসো আমরা মাকে সারপ্রাইজ দিই।প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে সবাই রাজি হলো। একটা উপলক্ষ্য আসলেই দরকার।যাতে সবাই আনন্দ করতে পারি।তিতলির মতো ছোট একটা বাচ্চা গম্ভীর ভাবে ঘুরে বেড়ালে ভালো লাগে না।ওর দাদির জন্মদিন দেখলে ও হয়তো অনেক মজা পাবে।
তিতলি আমাকে এসে বললো,দাদির জন্মদিনে তো সবাই আসবে।ফুপি আজ কি আমার মামনি আসবে?
কথাটা বলেই ও এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।সেই দৃষ্টিতে মিশে আছে ভয়; আমি “না” বলবো এই ভয়। আমার খুবই মায়া লাগলো।আমি বললাম,হ্যাঁ আসবে তো।
তিতলি খুব সুন্দর করে হেসে দিলো।এরপর প্রজাপতির মতো উড়তে লাগলো ঘরময়।কি আনন্দ ওর চোখে মুখে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বিকালের দিকে সারাঘর সাজানো হয়ে গেছে।আর্টিফিশিয়াল ফুল,লতা-পাতা দিয়ে।বাসার সবাই কে দাওয়াত করা হয়েছে।মায়ের থেকে বিষয়টা বেশি ক্ষন লুকিয়ে রাখা গেলো না।বাবাই বলে দিলো সব,বাবার পেটে কোনো কথা থাকে না।মা এমন ভাণ করছে যেন তিনি খুবই অখুশি। কিন্তু,আসলে তিনি অনেক খুশি। রান্নাঘরে এসে আমাদের বলতে লাগলেন,কি ছেলেমানুষী শুরু করেছিস তোরা?এই বুড়ি বয়সে জন্মদিন… লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।
ঝিনুক আপু বললো,মাথা কাটা গেলে সুপার গ্লু দিয়ে জোরা লাগাও যাও। এখন কিচেনে এসো না।বার্থডে গার্লের কিচেনে আসা বারণ।মা বললো,তাহলে আমি কি করবো?আপু বললো, গিয়ে সাজগোজ করো।
মা বিরক্ত হয়ে বললেন, চুপ থাক ছাগল। কিন্তু,সত্যি সত্যিই মা একটা নতুন শাড়ি পরলেন।একটু বোধহয় সেজেওছেন।কেমন অন্যরকম লাগছে…বাবা বললেন, তোর মাকে আজকে মায়াবী লাগছে খেয়াল করেছিস?আমি কিছু বলার আগেই মা বললো, কেন আগে কেমন লাগতো?বাবা বললো, জাঁদরেল জাঁদরেল লাগতো।
মা রাগী চোখে বাবার দিকে তাকালো।
আমি হেসে প্রস্থান করলাম। কিছুক্ষণ পর মেহেদী ভাইয়া এলো।আমি দরজা খুলে দেখি তার হাত ভর্তি টকটকে লাল গোলাপফুল এর তোড়া। মেহেদী ভাইয়াকে দেখেই ঝিনুক আপু ছুটে এলো দরজার সামনে। কিন্তু,ভাব করতে লাগলো অন্য কারণে এসেছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো,নীল রঙের ফ্রাই প্যান টা দেখছিস?
নীল রঙের কোনো ফ্রাইপ্যান আমাদের বাসায় আছে বলে তো আমার মনে হয় না। কাজেই, আমি চুপ করে রইলাম।
মেহেদী ভাইয়া বললো, ঝিনুক…
আপুর চোখে মুখে হাসির রেখা ঝলমল করছে তবুও সে হাসি চেপে রেখে গম্ভীর হয়ে বললো,কি?
মেহেদী ভাইয়া বললো, তোমাদের সারা ঘর তো নকল ফুল দিয়ে ভরিয়ে ফেলছো।এই নাও কয়েকটা আসল ফুলও রাখো। জন্মদিনের মতো শুভ দিনে কিছু আসল ফুল রাখা উচিৎ।
ঝিনুক আপু বললো,আমার বয়েই গেছে আপনার আসল ফুল রাখতে।
এটা বলেই চলে গেল দৌড়ে। দৌড়ে যাওয়ার কি আছে বুঝলাম না।অগ্যতা মেহেদী ভাইয়ার আমার হাতেই ফুল গুলো দিতে হলো।
আমি রুমে এসে দেখি আপু গান গাচ্ছে গুনগুন করে।
আমি বললাম,আপু তুমি সাজবা না?
আপু বললো,আমি পরে সাজবো।তুই আগে সাজ।
এর মধ্যে পরী আপু এসে পরেছে।ইশিতা ভাবী আর তার দুই ছেলে-মেয়েও চলে এসেছে।ইশু ভাবীর বাচ্চারা তিতলির থেকে ২-ত বছরের বড় হবে। কিন্তু,ওরাই তিতলির খেলার সাথী।আমি লক্ষ্য করলাম তিতলি ওদের কাছেও বলছে,জানো আজকে আমার মা আসবে।
আমার খুবই মায়া লাগলো।চোখে পানি চলে আসলো।
পরী আপু বলতে লাগলো,কিরে তুই সাজবি না ঝিনুক?
ঝিনুক আপু বললো,সাজবো তো ঘোড়ার ডিম।
আমি বললাম, আসলেই আপু তুমি দেরী করছো কেন?
সবাই তো চলে এসেছে।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,সবাই এসেছে?
আমি বললাম, হুম।
পরী আপু বললো, শুধু মেহেদী গাধাটা আসে নাই।
ঝিনুক আপু বিচলিত হয়ে বললো,আসে নাই কেন?
পরী আপু বললো,কিরে তুই এতো বিচলিত হচ্ছিস কেন?বাই এনি চান্স তুই কি ওর সাথে ম্যাচ করে ড্রেস পরতে চাইছিস?এর জন্য রেডি হতে দেরী করছিস?
আপু খুব রেগে গেলো।বললো,কেন যে ওর জন্য অপেক্ষা করছি সেটা পরে বুঝবি।
এরপর, আমাদের পীড়াপীড়িতে রেডি হলো।একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরলো।মাথায় মেহেদী ভাইয়ার দেয়া গোলাপ ফুল লাগালো।
এরপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো, আবার ওর গোলাপ ফুল চুলে দিছি দেখে নেগেটিভ ভাবে নিস না।
পরী আপু হাসলো।বললো,দেখলি যুথি একেই বলে চোরের মন পুলিশ পুলিশ।আমরা কি ওকে এই বিষয়ে কিছু বলছি?
আমরা তিনজন রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি সবাই চলে এসেছে হাতে গিফট বক্স নিয়ে।সবাই বলতে আমাদের বিল্ডিং এর সবাই। কিন্তু,মা এখনো আসেননি।
আমি মায়ের রুমে গেলাম।দেখি মা চুপ করে বসে আছে।আমি বললাম,চলো মা।
মা বললো,সরতো। আমার লজ্জা লাগছে।
বলেই মা হেসে ফেললো। অনেক দিন পর মাকে এইভাবে হাসতে দেখলাম।
মাকে নিয়ে বাইরে আসতেই সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…..
মা লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানালো। আমাদের পাশের বাসায় আরমান আংকেল আর তার টেনে পড়ুয়া ছেলে আকাশ থাকে। আকাশ বলে উঠলো,আন্টি আপনার জন্মদিন হচ্ছে শুনে যে কি খুশি লাগছে। আপনার জন্যই আমার মাথায় সুন্দর একটা আইডিয়া এসেছে। সামনের মাসে আমার বাবার জন্মদিনটাও সেলিব্রেট করবো।
মা হেসে ফেললো।কেইকের উপর ৫২ লেখা মোমবাতি দেখে বাবার দিকে কটমট করে তাকালো।আস্তে আস্তে রাগী কন্ঠে বললো, তোর বাপ আমার বয়স কেমন ২ বছর বাড়ায় দিছে দেখছিস?নিজে বুড়া দেখে আমারেও বুড়ি বানাতে চায়।
এরপর কেইক কাটা হলো।সবাই হাসাহাসি করলেও মেহেদী ভাইয়ার মুখটা একদম চুপসানো বেলুনের মতো হয়ে আছে।আমি অবাক হয়ে গেলাম। মেহেদী ভাইয়া এতো মনমরা হয়ে আছে কেন? ঝিনুক আপু বললো,আরে নীল পাঞ্জাবী পরেছে দেখে এমন লাগছে। নীল হলো বিষন্নতার রঙ।
পরী আপু বললো,হইছে ফিলোসফি কপচাবি না। নিশ্চয়ই তুই কিছু একটা করছিস….
ঝিনুক আপু বললো, ভুলে যাস কেন আমি দর্শনের স্টুডেন্ট।
আমি বললাম, বলোনা আপু কি করছো?
ঝিনুক আপু বিরক্ত হয়ে বলল,ধুর ছাই।কিছু একটা হলেই বলবে আমার দোষ।ট্রাম্প কেন হারছে বাইডেন কেন জিতছে সেইখানেও আমার হাত আছে।
পরী আপু বললো, আচ্ছা বাদ দে।একটা ব্যাপার দেখে হাসি পাচ্ছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,কি আপু?
পরী আপু বললো,সবার বেলায় হয় হলুদ হিমু, নীল রূপা।আর আমাদের ঝিনুক এর বেলায় নীল হিমু, হলুদ রূপা।হা..হা।
ঝিনুক আপু নিজের হলুদ শাড়ির দিকে তাকালো এরপর মেহেদী ভাইয়ার নীল পাঞ্জাবীর দিকে তাকালো।
তাকানোতেই মেহেদী ভাইয়া কেমন করুন চোখে আপুর দিকে তাকালো।
এরপর, এগিয়ে এলো আমাদের দিকে।
ঝিনুক আপুর দিকে তাকিয়ে বললো, ঝিনুক তুমি অনেক বড় অন্যায় করেছো। তোমার শাস্তি পাওয়া উচিৎ।
ঝিনুক আপু বললো,জ্বি।শাস্তি স্বরূপ আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত কচুগাছে।
পরী আপু বললো,না… মেহেদী গাছে।
এরপর হাসতে লাগলো।
মেহেদী ভাইয়া সরু চোখে তাকিয়ে চলে গেল।
আমি বললাম,কি করেছো আপু তুমি?
ঝিনুক আপু বললো,দেখবি একটু পরে।অতি চালাকি করার জন্য ছোট্ট শাস্তি। আমার স্কেচ বানানো না?
আমি ভাবতে লাগলাম,আপু কি এমন করতে পারে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হবার পর ইশু ভাবী বললো,আন্টি গিফট গুলো খোলেন।
মা রাজি হলেন না।
ঝিনুক আপুও রিকুয়েস্ট করতে লাগলো।
এরপর সবার সামনেই মা গিফট খুলতে বসলো। মেহেদী ভাইয়া বললো,আমি আসি আন্টি।
মা বললো, কেন বাবা। গিয়ে কি করবে?ঐ যুথি ওকে আরেক গ্লাস শরবত দে। ছেলেটা এতো ঘামছে কেন?
মা গিফট খুলতে লাগলেন।সবাই শাড়ি,টিপট-কাপ এর সেট অথবা অন্যান্য গৃহস্থালি জিনিস পত্র এসবই দিয়েছে।
সবার শেষে মা মেহেদী ভাইয়ার গিফট টা হাতে নিলেন।
সেটা খুলে মায়ের চোখ ছানাবড়া।বেশ কয়েকটা পুতুল,আর বাচ্চাদের রান্নাবাটি খেলার সেট। ছোট চুলা,হাড়ি-পাতিল এইসব।
মা চোখ বড়বড় করে মেহেদী ভাইয়ার দিকে তাকালো।ঘর ভর্তি সবাই অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।
মা নিজেও হেসে ফেললো। আকাশ বললো,আন্টি মেহেদী ভাইয়ের গিফটের মধ্যে একটা চিরকুটও আছে দেখেন। নিশ্চয়ই ভাইয়া কারণ টা লিখেছে সেখানে এই উপহার দেয়ার।
মা হাসি মুখে চিঠি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো,প্রিয়:টুনটুন মা, জন্মদিনে তোমাকে অনেক আদর। তুমি কি জানো তুমি একটা টুনটুনি, ঝুমঝুমি,ময়না পাখি?একটা কিউট বার্বি ডল।
সবাই আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সবচেয়ে বেশি হাসছে ঝিনুক আপু।
মেহেদী ভাইয়া মাথানিচু করে বললো, আমি ভেবেছিলাম তিতলির জন্মদিন।
আমি বললাম,সেকি ভাইয়া?আমি না নিজে গিয়ে আপনাকে বলে আসলাম মায়ের জন্মদিন।
মা এসে মেহেদী ভাইয়ার হাত ধরলেন। বললেন, তুমি মন খারাপ করছো কেন বাবা? তোমার গিফট ই আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে। ছোট বেলার কথা মনে পরে গেছে।
মেহেদী ভাইয়া বললো,স্যরি আন্টি।
এরপর, ঝিনুক আপুর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
আমি বুঝতে পারলাম,আপুই মেহেদী ভাইয়া কে বলছে আজকে তিতলির জন্মদিন।আপু সবসময় এমন প্যাচ লাগিয়ে কি মজা পায় কে জানে..
আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো।আমি ভাবলাম,মা হয়তো এখন মেহেদী ভাইয়া সম্পর্কে কিছু বলবে।যে ছেলেটা একটা বোকার হর্দ।
কিন্তু,মা বললো, জানিস যুথি। ছোট বেলায় আমাদের পাশের বাড়ির একটা মেয়ের বাবা অনেক বড়লোক ছিল।আমরা তো ছিলাম দিন আনি দিন খাই।তো,ঐ মেয়ের বাবা মেয়েটার এভাবে জন্মদিন করতো। একবার আমি গিয়েছিলাম ওর জন্মদিনে, ওদের বাসায়,ওকে ওর বাবা এমন একটা গিফট বক্স দেয়।ও খুলে দেখে এমনি পুতুল, কিচেন সেট।
আমার এতো মন চাইছিল সেদিন যে,ইশ আমাকেও যদি কেউ এমন দিতো। ছোট মানুষ ছিলাম,খেলার জিনিস এর প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। অনেক দুয়া করতাম। কিন্তু,বাবাকে ভয়ে বলতাম না।যেখানে খাওয়া ই পাই না ঠিক মতো। আবার, জন্মদিন.. উপহার।
এরপর,আশা করতে করতে একসময় ভুলেও গেলাম।আজ হঠাৎ মনে হলো, আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। চোখের পলকেই সময় চলে যায় দেখছিস…মনে হচ্ছে এইতো সেদিনের কথা সব…
মা থেমে বললো,যা মেহেদী কে বলে আয় তো।৯ টার সময় আমাদের বাসায় এসে যেন খাওয়া দাওয়া করে যায়।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
তিতলি বেচারি সবচেয়ে মনমরা হয়ে রয়েছে।তার মা এলো না।আহারে!আমি বললাম, সোনামনি তোমার মা একটা কাজে আটকে গেছে।
তিতলি ব্যথিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার ছলছল চোখ দুটো যেন বলছে,ফুপি তোমরা বড়রা এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হও?
……….
মালিহার মা মালিহাদের বাসায় এসেছে।একথা মালিহার বাবা জানে না। তিনি বলেছেন,তার বোনের বাসায় যাবেন।মিথ্যা কথা না বললে আসাই হতো না।
মালিহার মা বললেন, এখানে এসেছি বলে ভাবিস না,তোকে আমি মাফ করে দিয়েছি।তোর মতো কুলাঙ্গার কে মাফ করা অসম্ভব।
মালিহা মাথা নিচু করে বসে রইলো।
মা বললো,তোকে কয়েক টা উপদেশ দিতে এসেছি। হাজার হোক আমি তো মা।মা তো খুনী সন্তানের জেল হলে সেটাও সইতে পারে না।
মালিহা চোখ তুলে তাকালো।মা বললেন,যেহেতু পালিয়ে চলে এসেছিস। বাদশাহর সাথে ছাড়াছাড়িও হয়ে গেছে তাহলে সেই অধ্যায় ভুলে যা।তিতলিকে যেহেতু ফেলে আসতেই পেরেছিস সেহেতু ওকে নিয়ে তোর আর ভাবতে হবে না।তিতলিকে ওর বাবা-দাদারাই দেখবে। বুঝেছিস? এখন আগের সংসারের কথা ভেবে কাঁদলে দেখবি এই সংসারও টিকবে না। এরপর কই যাবি?তোর বাবা তো তোকে বাড়ি ঢুকতে দিবে না।
মালিহা কেঁদে উঠলো। বললো,মা আমি ভুল করে ফেলেছি। অনেক বড় ভুল। ফারহান নেশা করে, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে অনেক। সারাক্ষন বলে, আমার জন্য নাকি তার বাবা মারা গেছে।আমি ওকে যেমন দেখেছিলাম ও আর তেমন নেই।ওর সাথে কথা বলতেও আমার ভয় লাগে।কথায় কথায় খালি খোঁটা দেয়,মনে করিয়ে দেয় আমার আগেও বিয়ে হইছে, বাচ্চা আছে।
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,মালিহা তুই এতো বোকামি কিভাবে করলি? আমাদের জানাতি বাদশাহর সাথে তোর কি সমস্যা হচ্ছে..আমরা বাদশাহ আর তার পরিবারের সাথে বসতাম। বলতাম তাদের যে আমাদের মেয়ে আপনাদের এই এই ব্যবহারে কষ্ট পাচ্ছে। আপনারা এমন করবেন না।এরপরেও তারা তোকে অতিমাত্রায় কষ্ট দিলে আমরাই তোকে নিয়ে আসতাম। তখন তো বাদশাহ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে তোকে ফিরিয়ে নিতো।অথবা, দরকার পরলে আমরা উপস্থিত থেকেই তোদের ডিভোর্স করাতাম। এরপর,তুই যা করার করতি। বাদশাহ যে যে অন্যায় গুলো করছে তোর সাথে সেগুলো ক্ষমার যোগ্য এবং চাইলে শোধরানো যায়। কিন্তু,তুই যেই অন্যায়টা করছিস এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, কখনোই শোধরানো যাবে না।কখনো না।
মালিহা তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে…..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে