দু মুঠো বিকেল পর্ব-৬+৭+৮

0
1982

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৬
Writer-Afnan Lara
.
স্পর্শ পকেট থেকে ২০টাকার একটা নোট নিয়ে নড়াচড়া করছে রিমকে দেখিয়ে দেখিয়ে
রিম বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে হাত জোর করে বললো”ভাই আপনি ২মিনিট একটু দাঁড়ান, আমি টাকার ব্যবস্থা করছি”
.
এটা বলেই রিম দৌড়ে গেলো ভার্সিটির দিকে,তারপর ২মিনিট পর এসে রিকশাআলাকে তার টাকা দিয়ে বিদায় করলো
তারপর স্পর্শের দিকে এক নজর তাকিয়ে সে চলে গেলো
.
এই মেয়েটা আমার থেকে টাকা নিলে মনে হয় মরে যাবে!
.
স্পর্শ চুপচাপ বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো,এরপর একটা দোকানে আসলো আঁখির কিসের যেন কাগজপত্র ফটোকপি করবে বলে
.
রিম চুপচাপ ভার্সিটির ক্লাসরুমের এক কোণে বসে আছে,তমা তো আসার নামই নিচ্ছে না
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বললো”রিম?”
.
আরে অনু যে,কি খবর তোমার?
.
ভালো,,,আচ্ছা একটা কথা বলবো?? যদি কিছু মনে না করো
.
কি হয়েছে বলো
.
তোমাকে প্রায়ই প্রতিদিনই দেখি ভার্সিটিতে ঢুকার সময় একটা ছেলের সাথে কথা বলতে,আর ছেলেটা তুমি আসার সময় এবং যাওয়ার সময় ভার্সিটিতে এসে ওয়েট করে,সে কে রিম?
.
রিম মুখটা ফ্যাকাসে করে কাগজে নোটস তুলতে তুলতে বললো”কেউ না”
.
কেউ না?তাহলে তুমি ওর সাথে কথা বলো কেন যদি কেউ না হয়ে থাকে
.
সে এমন একজন মানুষ যে আমাকে ভালোবাসে আর আমি তা জানার পরেও তাকে ভালোবাসতে পারি না
তার পাগলামি গুলো আমার অসহ্যকর লাগে
সে অতিরিক্ত আমাকে ডিস্টার্ব করে,এ কয়েকদিন না ৩বছর হয়ে গেছে আমার এমন বন্দি জীবনের
.
কি হয়েছিল ৩বছর আগে??
.
আমার বাবার অফিসের কাজের জন্য আমাদের বারবার বাসা পাল্টাতে হতো,শেষমেষ বাবা লাস্ট বারের মতন বাসা পাল্টিয়ে ঢাকায় আসে,সেদিন আমরা রাত করেই বাসাটায় উঠেছিলাম
রোজ ভোরবেলায় উঠা আমার অভ্যাস এবং খালি পথে একা হাঁটার অভ্যাস,আমি ঠিক পরেরদিন ভোর ৫টা ৫মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম একটু হাঁটতে
.
হাঁটতে হাঁটতে এই লোকটার বারান্দার নিচ দিয়েই যাচ্ছিলাম আমি,সেই লোকটা তখন বারান্দায় ছিল,আমি জানতাম না
সে এক বালতি পানি এনে বারান্দায় দাঁড়ানো অবস্থায় নিজের গায়ে সম্পূর্ন বালতির পানি ঢেলে দিলো
আমি নিচে থাকায় সব পানি তার গা চুইয়ে আমার গায়ে এসে পড়লো
একে তো সময়ে মাঘের শীত ছিল,আমার চাদরটাও ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিলো
রাগে -ক্ষোভে আমি চিৎকার করে বললাম”কোন বেয়াদব এই কাজ করলো,অসভ্য,ইতর,”
এটা বলে আমি উপরে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা উদম শরীরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে
পরনে শুধু জিন্স ছিলো আর সম্পূর্ন খালি গা তার
আমি ওড়না দিয়ে মুখ মুছে মাথার ঘোমটা ঠিক করে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললাম”আপনার কি চোখ নাই?রুমে বাথরুম নাই?গোসল করার জায়গা পান নাই?খাটাশ কোথাকার!
ব্যস সেদিন গালি ছাড়া আর কিছুই দিই নাই আমি
না হাসছিলাম!!! না ঢং দেখিয়েছিলাম!! না ন্যাকামি করছিলাম
সম্পূর্ন কঠোর একটা পরিবেশে আমার আর তার প্রথম দেখা হয়েছিলো
আমি জানতাম না কাউকে গালি দিলে সে আজীবনের জন্য প্রেমে পড়ে যায়,আগে জানতাম গালি দিলে মানুষ রেগে প্রতিশোধ নিতে চায় কিন্তু আমার বেলায় হলো এর উল্টোটা
সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত লোকটা আমাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করছে
এমন ডিস্টার্ব যেটাকে ইভটিজিং ও বলে পুলিশে দিতে পারি না
.
এখন সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়?
.
সেটা চায় না,কেন চায় না সেটা জানি না তবে শুধু শুধু পিছনে লেগে আছে,আমি সাফ সাফ বলে দিয়েছি আমি ওরে কখনও ভালোবাসবো না,বিয়ে তো দূরে থাক
.
এরকম লাভার পেলে আমার আর কিছু লাগতো না
.
তুমি পাওনি বলে এটা বলতেছো,আমার জায়গায় তুমি হলে তোমার ও ঠিক একই কষ্ট হতো আমার মতন,এখন একটা বন্দি জীবন যাপন করছি আমি
.
কিরে দোস্ত আমি তো এসে গেছি
.
তমা!আগে শুন আমার কথা,পিন্টু স্যারকে ২০টাকা দিয়ে দিবি,স্যার হাতে টাকা নিলে বলবি রিম দিয়েছে তারপর এক দৌড় দিবি স্যার যাতে টাকা ফেরত দিতে না পারে
স্যার থেকে টাকা নিয়ে রিকশা ভাড়া দিয়েছি আমি,আসার পথে টাকা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম
.
আচ্ছা সেটা নাহয় দেবো,স্পর্শ ভাইয়ার থেকে নিয়ে তো দিতে পারতি
.
ওমা তমা তুমি রিমের কাহিনী জানো?
.
কি বলে এই মেয়ে,আমি তো অক্ষরে অক্ষরে ওদের কাহিনী সম্পর্কে অবগত
.
বাহ,তা রিম ছেলেটা এতদিন অপেক্ষা করছে যখন এবার মেনে নাও,এমন ভালোবাসা কজনে পায়?
.
আমি ক্যান মেনে নিব?সে কি জব করে?আমার বাবা ওকে পছন্দ করে না,তাই আমিও করি না
.
তমা ব্রু কুঁচকে রিমের পাশে বসে বললো”তার মানে আঙ্কেল রাজি হলে তুই রাজি?”
.
বাবা জীবনেও রাজি হবে না,রিহাব ভাইয়াও না
.
তারা রাজি হলে তুই রাজি হবি কিনা সেটা বল আগে
.
রিম বিরক্ত হয়ে উঠে ক্লাস থেকে বেরিয়ে চলে গেলো,করিডোরে দাঁড়িয়ে গেটের দিকে তাকাতেই দেখলো স্পর্শ সিগারেট টানছে বসে বসে
রিম আরেকদিকে ফিরে দাঁড়াতেই এবার দেখলো তমা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে আসতেছে
.
এসেই বললো”কিরে বল!উনারা রাজি হলে তুই রাজি হবি কিনা?”
.
না আমি রাজি হবো না,এই বেয়াদব ছেলেটাকে আমি পছন্দ করি না,একটুও না
.
করবি করবি!আরেহহহ ওটা স্পর্শ ভাইয়া না??আমি যাই একটু কথা বলবো
.
তুই যদি উনার সাথে কথা বলিস তো তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ খতম
.
তুইও না,পুরাই আনরোমান্টিক একটা মেয়ে,স্পর্শ ভাইয়াকে দেখ কত রোমান্টিক একটা লোক,এমন আর কোথাও পাবি?
.
আমি খুঁজতেছিও না
.
অনু তমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো”যার অলরেডি আছে, সে আর কেন খুঁজবে??”
.
তমা দাঁত কেলিয়ে বললো”ঠিক বলেছিস অনু”
.
রিম মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো,এদের সাথে কথায় পারা যাবে না
.
আচ্ছা একটা কথা বল তো রিম
.
কি?
.
স্পর্শ ভাই জানে কি করে যে তুই কবে কেন রঙের জামা পরে বের হস??উনি দেখি সবসময় সেম জামা পরে সবসময় তোর সাথে আসে,ব্যাপারটা বুঝলাম না
.
রিম একটু নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে বললো”আমারও ঘটকা লাগলো,কিন্তু বুঝলাম না কি করে জেনে যায়”
.
অনু দাঁত কেলিয়ে বললো”তোমার রুমে ক্যামেরা লাগায়নি তো আবার??
.
রিম চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ,এরই মাঝে চলে যাওয়ার সময় ও হয়ে গেছে

রিম ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে স্পর্শের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো,প্রতিদিন মিলিয়ে কি করে জামা পরে সেটার রহস্য আমি আজই বের করবোই করবো
রিম একটু এগিয়ে এসে স্পর্শের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
স্পর্শ সিগারেটটা সাথে সাথে ফেলে দিয়ে রিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”হঠাৎ???”
.
রিম হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বললো”আমি প্রতিদিন যে রঙের জামা পরি আপনি মিলিয়ে সেই রঙের জামা কি করে পরেন?”
.
স্পর্শ রোডে পড়ে থাকা অর্ধেক সিগারেটটা পা দিয়ে মাড়াতে মাড়াতে বললো”সেটার উত্তর তুমি নিজেই না হয় বের করো,চেঞ্জ করার আগে দেখো তো দরজা জানালা খোলা কিনা??”

রিম চোখ বড় করে বললো”আমি খুব ভালো করে দরজা জানালা দেখে তারপর চেঞ্জ করি,আপনি তারপরেও কি করে জানেন??”
.
খুঁজে দেখো তোমার রুমেই উত্তর আছে
.
রিম রেগে গিয়ে স্পর্শের গালে চড় বসিয়ে দিলো একটা
স্পর্শ মুচকি হেসে গালে হাত দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে
.
রিম কাঁপতে কাঁপতে বললো”কতটা বেয়াদব হলে মানুষ এতটা নিচ হতে পারে,আপনি শেষমেষ আমার রুমে ক্যামেরা লাগিয়েছেন?আপনার লজ্জা করে না একটুও?আমাকে ইউস করতে চান আপনি?এত বছর ধরে হাত করতে পাচ্ছেন না বলে এবার এমনটা করলেন?কতদিন ধরে এরকম বেয়াদবি চলছে আপনার??”
.
রিম কাঁপতেছে অনবরত,চিৎকার করে কথা বলার অভ্যাস তার নেই, কিন্তু যখন খুব রাগ হয় তখন ওর কাঁপুনি উঠে যায়
.
স্পর্শ গাল থেকে হাত সরিয়ে দুহাত দিয়ে রিমের হাত দুটো ধরে বললো”শান্ত হও রিম”
.
হাত ধরবেন না আমার, হাত ছাড়ুন!
.
রিম পিছিয়ে গেলো,তারপর পিছন ফিরে হাঁটা ধরলো আবার
বাসায় গিয়ে এর একটা বিহিত সে করবে,আপাতত তামিমকে আনতে হবে,ওর স্কুল ছুটি হয়ে গেছে এতক্ষণে
.
রিম হেঁটে হেঁটে তামিমের স্কুলে এসে ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো একটা রিকশা ধরে তারপর মায়ের থেকে ভাড়া নিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগালো,হাতে একটা টর্চ লাইট,যেখানেই ক্যামেরা লুকিয়েছে আজ আমি খুঁজে বের করবোই
রিম প্রায়ই ২ঘন্টা ধরে তার রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো ক্যামেরা পেলো না,এখন সে মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে,ক্যামেরা যে লাগায়নি তা তো সিউর হলাম
কিন্তু উনি যে বললেন আমার প্রশ্নের উত্তর আমার রুমেই আছে??
রিম হাঁপিয়ে গেছে অনেক তাই বারান্দার দরজাটা খুললো হাওয়া আসার জন্য
একটা জড়ো হাওয়া এসে রিমের রুমের জানালার পর্দাটায় গিয়ে পড়লো,বাতাসে পর্দাটা হেলছে দুলছে
.
রিম এক দৃষ্টিতে পর্দাটার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে পড়লো
পর্দাটা ভালো করে টেনে দেওয়ার পরেও একটু ফাঁক রয়ে যায়,কিন্তু আমি তো এই জায়গায় চেঞ্জ করি না যে এই ফাঁক দিয়ে দেখবে,তাহলে?
ধুর!কিছুই বুঝতেছি না আমি!
.
রিম টেবিলের উপরে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে চেয়ারে বসে পড়েছে,পর্দার ফাঁকটা দিয়ে স্পর্শের রুমের দিকে তাকালো সে,স্পর্শ নেই,ওর বাথরুমের থেকে পানির আওয়াজ আসছে,গোসল করতেছে মনে হয়
.
রিম আপু!দেখে যাও তোমার জন্য আবারও গিফট এসেছে
.
গিফট?কিসের গিফট?
.
রিম উঠে এসে দেখলো তামিম একটা ঝুড়ি নিয়ে হেলেদুলে এদিকে আসতেছে
.
কে দিলো এটা?
.
জানি না,কলিংবেল বাজতেই দরজা খুললাম তারপর এটা পেলাম নিচে,কাউকে পেলাম না আর
.
রিম ঝুড়িটার উপর থেকে একটা রেশমি কাপড় সরিয়ে দেখলো ২০ডজন চুড়ি,সবগুলোতে একটা করে চিরকুট আটকানো
তামিম এত চুড়ি দেখে দৌড়ে মাকে গেলো বলতে
রিম খয়েরী রঙের চুড়ির মুঠোটা নিয়ে তার থেকে চিরকুটটা নিয়ে খুললো পড়ার জন্য
তাতে লেখা আছে”খয়েরী রঙের জামার সাথে নিশ্চয় খয়েরী রঙের চুড়িই পরো??জানি আমি!
যখনই দেখি পর্দার ফাঁকে তোমার ঐ হাতদুটো,এক হাতে চুড়ি নাও টেবিলে থাকা চুড়ির আলনাটা থেকে আরেক হাত পাশে শুইয়ে ৩টে করে চুড়ি ঢুকাও
আমি তখনই সেই রঙটা দেখে জামা পরে নিই
বিশ্বাস করো!!তোমার হাতদুটো ছাড়া ঐ ফাঁক দিয়ে আমি তোমার দেহ দেখিনি কখনও,চাইলেই আমি দেখতে পারতাম কিন্তু আমি তা করি না,চুড়ি কিন্তু তুমি সবসময় টেবিলের কাছে এসেই পরো,আর টেবিল বরাবরই কিন্তু পর্দার ফাঁক
যাই হোক চড় মারতে গিয়ে তুমি কিন্তু নিজ থেকে আজ আবারও আমাকে ছুঁয়েছো,মনে রেখো কিন্তু রিম, একটা কথা বলি তোমায়,যেদিন তোমার আমাকে ছোঁয়ার সেঞ্চুরি পার হবে সেদিন আমি তোমাকে ছুঁবো,সেই ছোঁয়াতে তুমি বাধা দিতে পারবে না রিম!
.
চিরকুট টা রিমের হাত থেকে পড়ে গেলো,সে পিছিয়ে গেলো,মা এসে বললেন”বাহ এত চুড়ি,আমাকে দে এবারের গুলা,তুই এত গুলো দিয়ে কি করবি?”
.
রিম চুপ করে আছে দেয়ালের সাথে লেগে
তারপর শক্ত গলায় বললো”মা!”
.
মা চুড়িগুলো হাতে নিয়ে দেখছিলেন,রিমের কথা শুনে রিমের দিকে না তাকিয়েই তিনি বললেন”হুম বল”
.
মা!এই লোকটা আমাকে এত কেন ভালোবাসে বলতে পারো!??এত ঘৃনার পরেও সে কেন বেহায়ার মতন পড়ে আছে,আজ পর্যন্ত কতবার হাত তুলেছি আমি তার পরেও কেন!?
.
মা চুড়িগুলো রেখে রিমের কাছে এসে ওর হাতটা ধরে বললেন”আমি কি বলবো রিম,সব তোর উপরে,তুই মানলে সব মানা যাবে”
.
রিম কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে,এর জবাব তার কাছে নেই

তামিম এতক্ষণ ভদ্রলোকের মতন সোফার মাঝখানে বসে চুড়িগুলো দেখছিলো হঠাৎ সে চুড়িগুলোর নিচে একটা কিটকাট চকলেট দেখতে পেলো এবং সেটার সাথেও আছে একটা চিরকুট
.
তামিম ঠিকমত পড়তে পারে না এখনও, তাই স্পর্শ চিরকুটটায় লিখেছে”তামিম এর এটা”
.
তামিম চিরকুটটা নিয়ে গভীর মনযোগ দিলো তাতে
তারপর গলা কঠিন করে পড়তে লাগলো
ত আকার তা,ম ই-কার মি,তারপর ম =তামিম
মানে আমার নাম,পরের এটা পরে পরবো,আমার নাম মানে এটা আমার
তামিম তো খুশিতে গদগদ হয়ে চকলেটটা বুকে ধরে পালালো
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৭
Writer-Afnan Lara
.
রিম বিছানার মাঝখানে বালিশ কোলে নিয়ে বসে আছে,চোখ তার স্পর্শের রুমের দিকে
জানালার পর্দাও লাগায়নি,কিসের একটা রাগ নিয়ে সে স্পর্শের রুমটা দেখছে
স্পর্শ সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছে,তোয়ালে দিয়ে পিঠ মুছতে মুছতে বিছানার কোণায় এসে বসলো সে,তারপর মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিলো দেখার জন্য
ফোনে দু সেকেন্ড চোখ রেখেই সাথে সাথে সে তার জানালায় চোখ রাখলো
রিম চমকে চোখ আরেক দিকে ফিরিয়ে নিয়েছে ততক্ষণে
এরকম পর্দা সরিয়ে রিম কখনও তার রুমে বসে থাকে না
স্পর্শ রীতিমত অবাক হলেও এবার তার মাথায় আসলো এমনটা করার কারণ কি,রিম কি কিছু বলতে চায় আমাকে?নাকি সে আমার অপেক্ষা করছিল
স্পর্শ চুল মোছা বাদ দিয়ে এক দৃষ্টিতে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে,রিম এবার বিরক্ত হলো,বিছানা থেকে নেমে এসে মুখের উপর আবারও পর্দা টেনে ফিরে আসলো সে
.
স্পর্শর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব,কি হয়েছে মেয়েটার?এমন বিহেভ করছে কেন?
.
কিছু বুঝতে না পেরে স্পর্শ আবারও চুল মুছতে লাগলো
বসে বসে

উফ!আজ অফিস থেকে ফিরতে এত দেরি কেন করছে সেটাই বুঝতেছি না আমি,৫টা বেজে গেছে এখনও ফেরার নাম নাই তার,আর কতক্ষণ নুডুলস রান্নার ভান ধরে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকবো,না জানি কখন এসে আম্মু বলে”দে তোর রান্না করা নুডুলস খাওয়া”
.
আঁখি টমেটো হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে এদিক সেদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়ার সময় হঠাৎ রিহাবের রুমের জানালা খোলার আওয়াজ পেয়ে সোজা আবারও সেদিকে তাকালো সে
রিহাব জানালা খুলে শার্টের বোতামে হাত দিয়ে সেটা খুলতেছে বিছানায় বসে বসে
আঁখি লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে,মুচকি হেসে সে হাতের টমেটোটা রিহাবের গায়ে মেরে দিলো
রিহাব চমকে পিছন ফিরে তাকাতেই আঁখিকে দেখে রেগে গিয়ে বললো”আবার???কি সমস্যা তোর?এবার কি মেরেছিস”
রিহাব নিচ থেকে একটা টমেটো নিয়ে বললো”ধন্যবাদ,এখন এটা দিয়ে আমি নুডুলস বানিয়ে খাবো”
.
আপনাকে কষ্ট করতে হবে না,আমি নুডুলস বানিয়ে আনতেছি
.
তুই আর আমার বাসায় পা রাখলে তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো
.
রিহাব কথা শেষ করার আগেই আঁখি নুডুলস রান্নায় মন দিয়ে দিয়েছে,এখন কথা হলো গিয়ে বাসায় টমেটো একটাই ছিলো আর সে এখন সেটা রিহাবের গায়ে মেরে দিয়েছে তাহলে এখন নুডুলস রাঁধতে টমেটো কই পাবো,ভাবতে ভাবতে আঁখি চললো স্পর্শের রুমের দিকে
.
স্পর্শ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে
আঁখি চোরের মতন অবস্থা দেখছে,তারপর অবস্থা বুঝে সে ব্যবস্থা নিবে
স্পর্শ রুমের দরজা খোলার হালকা আওয়াজ পেয়ে সেদিকে না তাকিয়েই বললো”কি চাই?”
.
ভাইয়া তোমার এবারের হেয়ার স্টাইলটা না অনেক কিউট,দেখতে হেব্বি লাগে
.
কি আনতে হবে?
.
আঁখি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো”খুব মন চাচ্ছিলো টমেটো দিয়ে নুডুলস রেঁধে খাবো কিন্তু একটা টমেটোও নাই,শেষ হয়ে গেছে,এক কেজি এনে দাও না প্লিস প্লিস”
.
স্পর্শ ফোন নিয়ে আরেকদিকে ঘুরে বললো”এর বদলে কি দিবি?”
.
আমি যে পমপমের ওড়নাটা নতুন কিনেছি সেটা ঠিক কোন দোকান থেকে কিনেছি তার হদিস দেবো তোমায়
.
স্পর্শ উঠে বসে মুচকি হাসলো তারপর বললো”ঠিক আছে”
.
আঁখি প্রথমে দাঁত কেলালেও পরে ভাবতে থাকলো স্পর্শ ওড়না দিয়ে কি করবে,আমাকে তো আর গিফট করবে না কারণ আমার অলরেডি এমন ওড়না আছে,মাকেও তো দেবে না কারণ মা শাড়ী পরে,তাহলে কাকে দেবে??থাক আমার এত জেনে কাজ নেই,পরে ডিটেক্টর হতে গেলো ভাইয়া আমার আর রিহাবের পিছে লাগবে শেষে,থাক যেমন আছি তেমনই ভালো

একটা টমেটো দিয়ে নুডুলস বানাবো??মা খাবে,আমি খাব,তামিম তো ৬০% খাবে,টমেটো তো আরেকটা লাগবে রিহাব ভাইয়া
.
আমি অনেক টায়ার্ড, নে ধর টাকা,এক কেজি টমেটো নিয়ে আয় না প্লিস
.
আমি??এ সময়ে?
.
হুম,সামনেই তো ভ্যান কতগুলো এক কাতারে,গিয়ে ওখান থেকে নিয়ে আয়
.
রিম টাকা নিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো”চল আমার সাথে”
.
সাথে গেলে কি কিনে দিবা আমাকে?
.
এমন একটা ফুল কিনে দিব তোকে যেটা খাওয়াও যায়
.
কোন ফুল খাওয়া যায়?
.
ভাব ভালো করে
.
কথাটা বলে রিম ওড়না মাথায় জড়িয়ে তামিমের হাত ধরে ওকে নিয়ে বের হলো বাসা থেকে,বাসা থেকে হাফ কিলোমিটার পথ হাঁটলেই একটা ছোটখাটো সবজির বাজার নজরে আসে,বিকালে এসময়ে টমেটো পাওয়া যাবে কিনা তাই ভাবতেছে রিম
দূর থেকে লাল রঙ চোখে পড়তেই মুখে হাসি ফুটলো তার,
তার মানে টমেটো আছে,তামিমকে নিয়ে সে সেদিকেই গেলো
স্পর্শ সিগারেট খেতে খেতে একই দোকানে এসে হাজির
.
দুজনেই একসাথে বলে উঠলো”টমেটোর কেজি কত করে?”
.
রিম চমকে পাশে তাকালো,স্পর্শ ও চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
.
তুমি এখানে কি করছো?
.
আপনার তাতে কি?
.
রিম তামিমের হাত ধরে একটু সরে দাঁড়ালো
তারপর দোকানদারকে বললো”দাদা আমাকে এক কেজি টমেটো দিন”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর ওর চোখ গেলো তামিমের দিকে,তামিম ইশারা ইঙ্গিতে ওকে থ্যাংকস জানাচ্ছে চকলেট দেওয়ার জন্য
.
স্পর্শ হাত বাড়িয়ে নিয়ে তামিমের গাল টেনে দিলো,রিম ব্রু কুঁচকিয়ে টমেটো নিয়ে তামিমকে টানতে টানতে চললো বাসার দিকে

এ বাসায় রিম নুডুলস বানাচ্ছে আর ঐ বাসায় আঁখি নুডুলস বানাচ্ছে
স্পর্শ খাটে শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে,আঁখি এক বাটি নুডুলস ওর পাশের টেবিলে রেখে চলে গেলো,তারপর সেজেগুজে আরেক বাটি নুডুলস হাতে নিয়ে এবার সে চললো রিহাবকে দেবে বলে
.
এই আঁখি,কোথায় যাচ্ছিস তুই?তাও হাতে নুডুলস নিয়ে?
.
আঁখি সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার পথে থেমে গেছে মায়ের কথা শুনে,মা দেখে ফেললো শেষমেষ?? এবার কি জবাব দেবো?
.
আঁখি পিছন ফিরে হেসে দিয়ে বললো”রিপন ভাইয়াকে নুডুলস দিতে বললো স্পর্শ ভাইয়া,তাই তাকে দিতে যাচ্ছি”
.
আসমার হাতে দিয়ে দিলেই পারতি,ঠিক আছে যা এখন
.
আঁখি খুব বাঁচা বাঁচলো,হাঁপ ছেড়ে এবার সে এক দৌড় মেরে দিলো রিমদের বাসার দিকে
.
রিম টেবিলের উপর নুডুলস বাটিতে নিয়ে সাজিয়ে রেখেছে,তারপর গেলো মাকে আর তামিমকে ডাকতে,মা তামিমের চুল আঁছড়ে দিচ্ছেন তার রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে,আবার পাউডার ও মাখছেন
.
আঁখি কলিংবেলে চাপ দিয়ে চোরের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো
রিহাব সবে রুম থেকে বের হয়েই কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে গেলো দরজা খুলতে
দরজা খুলতেই দেখলো ঘোমটা দেওয়া নীল রঙের জামা পরা একটা মেয়ে একবার একদিকে তাকাচ্ছে,হাতে একটা বাটি
.
রিহাব বেশ বুঝতে পেরেছে এটা আঁখি,সে দাঁত কেলিয়ে বললো”খালাম্মা! ভিক্ষাতে চাল নিবেন নাকি টাকা নিবেন?”
.
আঁখি চোখ বড় করে রিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো”কিহহহ,আমি ভিখারি?আমি আঁখি,ভালো করে দেখেন”
.
তো বাটি নিয়ে আমাদের বাসায় আসছিস কি করতে?
.
নিন ধরুন,আপনার জন্য নুডুলস বানিয়ে এনেছি আমি
.
রিম ও বানিয়েছে,আমি সেটা খাব এখন
.
রিম আপুরটা নাহয় আমি খাবো,আপনি আমার বানানো টা খান,নাহলে কিন্তু রাতে জ্বালাবো,লাইট মেরে মেরে জানালা দিয়ে
.
রিহাব কপাল কুঁচকে ভাবলো”এই মেয়েটা জ্বালাতে এক নাম্বার এওয়ার্ড প্রাপ্ত!”তারপর কিছু একটা ভেবে সে আঁখির হাত থেকে নুডুলসের বাটিটা নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো,আঁখি পাশে চেয়ার টেনে বসে গালে হাত দিয়ে রিহাবের দিকে চেয়ে রইলো
.
রিম আর তামিম আসতেছে এদিকে,রিম আঁখিকে দেখে খুশি হয়ে বললো”ভালো সময়ে এসেছো,নুডুলস খেয়ে যাবা”
.
রিম বাটিতে হাত দিতেই দেখলো রিহাব অন্য একটা বাটি থেকে নুডুলস খাচ্ছে
.
এটা কার বাটি?
.
আসলে আমি নুডুলস এনেছিলাম তামিমের জন্য,উনি নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলেন
.
এমন ডাহা মিছা কথা শুনে রিহাবের কাশি উঠে গেছে,আঁখির হাত থেকে পানি নিয়ে খেয়ে সে তামিমের দিকে তাকালো,তামিম ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,মানে টা হলো তার জন্য আনা নুডুলস রিহাব নিজে খাচ্ছে,অথচ তামিম জানে না নুডুলসটা রিহাবের জন্যই আনা
রিম যে বাটি রিহাবের জন্য রেখেছিল সেটা সে এখন আঁখিকে দিলো খাওয়ার জন্য
মা ও এসে পড়লেন ততক্ষণে,সবাই একসাথে বিকালের নাস্তা শেষ করলো
.
স্পর্শ সেই কখন থেকে রিমের অপেক্ষা করছে, রিম আসছে না কেন সে বুঝতেছে না
আঁখি রিমের সাথে হাসা হাসি করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো,রিম আঁখির চলে যাওয়া দেখছে,হঠাৎ রোডের কিনারায় সে স্পর্শকে দেখতে পেলো,স্পর্শ শার্টের হাতা উঠাতে উঠাতে এদিকেই আসতেছে
রিম ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে থাকলো এক জায়গায়,নড়ছে না
সে শুধু জানতে চায় কয়টা বাজে এখন,স্পর্শ কাছে এসে বললো”আমার সময় করা সময়ে দেখা করতে ইদানিং তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে??বলো!”
.
ধমক শুনে রিম কেঁপে উঠলো তারপর কিছু বলার আগেই স্পর্শ আরেকটু এগিয়ে এসে বললো”আমার সাথে যেমন বিহেভই করো আই ডোন্ট কেয়ার,জাস্ট আমি যে সময়টায় তোমার সাথে দেখা করতে বলেছিলাম সেই সময়ে প্রতিদিন ঠিকমত দেখা করবা,এর ৭/৫হলে আমি কেমন রুপ ধারণ করি তা তো জানা আছে তোমার?নাকি নতুন করে জানাতাম?”
.
রিম চুপ করে রোডের দিকে তাকিয়ে আছে,স্পর্শ আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপাশ থেকে রিহাব সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো”রিম!!এত সময় এখানে কি?যা ভেতরে!”
.
রিম স্পর্শের দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো,রিহাব নেমে এসে স্পর্শের সামনে দাঁড়ালো
স্পর্শ স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
আমার বোনকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করবা?নাকি হাত চালাতাম?
.
স্পর্শ হাসলো তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো”ডিস্টার্ব?? কিসের ডিস্টার্ব? ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসা,শাসন করাকে ডিস্টার্ব করা বলে?”
.
হ্যাঁ বলে,ফের যদি আমার বোনকে তুমি ডিস্টার্ব করেছে তো খুব খারাপ হয়ে যাবে
.
স্পর্শ রিহাবের চোখে চোখ রেখে বললো”তুলে নিয়ে যাই নাই এটা তোমার ১৪গুষ্টির ভাগ্য”
.
রিহাব রেগে গিয়ে স্পর্শের শার্টের কলার টেনে ধরে বললো”তোর সাহস কত দেখা শুধু,আমি দেখি তোর সাহস কতদূর যেতে পারে”
.
রিম বারান্দার দরজা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে,রিপন আর আশিক দৌড়ে এসে রিহাবকে সরালো স্পর্শর থেকে
.
স্পর্শ শার্ট ঠিক করতে করতে রিমের বারান্দার দিকে তাকালো,রিম মুখটা নিচু করে দরজা লাগিয়ে ফেললো সাথে সাথে
.
রিহাব স্পর্শকে ওয়ার্নিং দিয়ে ফেরত গেলো বাসার দিকে
.
মা দরজার কাছে এসে বললেন”কিরে??কি করতেছিলি তুই?তোকে বলছি না এই ছেলেটার সাথে লাগতে যাবি না?”
.
আমাকে বলে রিমকে সে তুলে নিয়ে যায়নি এটা নাকি আমার ১৪গুষ্টির ভাগ্য,কতটা বেয়াদব ছেলে চিন্তা করো তুমি
.
তোকে কে বলেছিল লাগতে যেতে??পাত্তা না দিলেই পারিস
.
পাত্তা দিব না??রিমকে এমন ডিস্টার্ব করে আর আমি কিছুই বলবো না?
.
বাড়াবাড়ি তো আর করে না,, তাহলে যেচে লাগতে গেলি কেন?
.
বাবা বাসায় ফিরলেন সবেমাত্র,রিহাব আর ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন”কি ব্যাপার?কি হয়েছে?”
.
রিহাব নিজের রুমে চলে গেলো বাবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,কিছু বললো না আর
মা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন”আবারও রিহাব আর স্পর্শের ঝগড়া লেগেছে”
.
রিমকে নিয়ে?
.
হুম,থাক ওসব বাদ দাও,বসো আমি চা আনতেছি

রিম নিজের রুমে বসে ছটফট করছে,তার এখন কি করা উচিত??স্পর্শ তখন এমন করলো কেন?
অবশ্য এর জন্য দায়ী আমি!কারণ আমি যদি ঠিক সময়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াতাম আজ এত কিছু হতো না,আমি এর ভয়েই তার কথা মেনে চলি সবসময়
আমার কারণেই আজ বিষয়টা এতটা গভীর হয়ে গেছে
স্পর্শ কড়া কথা বললো আর ভাইয়াও রেগে গেলো,রিপন আর আশিক না আসলে এতক্ষণে তুলকালাম বেধে যেতো,এর একটা শেষ পরিণতি কবে হবে?
আমি স্পর্শকে বিয়ে করতে রাজি হলেও দোষ হবে আমার
না হলেও দোষ হবে সেই আমারই
আসলে আমি কি করবো??
.
রিম মাথার চুল টেনে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসলো,কাঁধে মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে রিম মাথা তুলে তাকালো আবার
.
মা বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন”রিম রে পরিস্থিতি তো আরও বিগড়ে যাচ্ছে”
.
মা আমি কি করবো তুমি বলে দাও,আমি আর এসব দেখতে পারছি না,কদিন বাদেই ভাইয়ার আর ঐ লোকটার ঝগড়া লাগে

স্পর্শের বারান্দা থেকে ওর মায়ের চেঁচামেঁচি শুনা যাচ্ছে,আজ রিহাব যখন স্পর্শের শার্টের কলার টেনে ধরেছিল তখন তিনি সব দেখেছেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৮
Writer-Afnan Lara
.
এই রিহাবের এত বড় সাহস কে দিয়েছে যে আমার ছেলের শার্টের কলার ধরে হুমকি দেয়
বেয়াদব কোথাকার,,তোমার মা বাবা তোমাকে এসব শিখিয়েছে?আমার ছেলে তো তোমাকে একটা টোকাও দেয়নি,কড়া কথা বললে তুমিও কড়া কথা বলতে!তাই বলে গায়ে হাত দিবা তুমি?অসভ্য ছেলে কোথাকার!
.
মা প্লিস,বাদ দাও ওসব
.
কি বাদ দিব?আর তুই ও বলিহারি কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এত দিওয়ানা গিরি দেখাচ্ছিস কি জন্যে?তোর জন্য কি মেয়ের অভাব পড়েছিলো??আমার বোনের বড় মেয়ে নিহা তো বেস্ট তোর জন্য,ওকে আর তোকে কত মানায়,আর নিহাকে আমার ও অনেক ভাল্লাগে,তার পরেও কেন তুই এই মেয়েটার পিছে পড়ে আছিস যে তোকে দু টাকার দাম ও দেয় না,আর তার পরিবারকে দেখ তারা তো তোর দিকে তাকাতেও ঘৃনা বোধ করে,তার উপর তার ভাই তো গায়ে হাতই তুলে ফেলে,এমন একটা পরিবারের সাথে তো আমি জীবনেও আত্নীয়তা করবো না,দরকার হলে আমার ছেলে আজীবন কুমার থেকে যাবে
.
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে,মা আরও যত গালি আছে ওসব ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন,কারণ এখন তার প্রিয় সিরিয়াল “আলো ছায়া “শুরু হবে
.
রিহাব গাল ফুলিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ,রোকসানা বেগমের সব কথা সে শুনেছে,এখন তার ও বলতে ইচ্ছে করছে এতই ভদ্র ঘরের ছেলে যখন যেচে আমার বোনকে ডিস্টার্ব করতে আসে কেন,ঐ নিহাকে নিয়ে থাকলেই পারে,যত্তসব!
.
এদিকে আঁখি চোরের মতন স্পর্শের বারান্দার এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ
যা এতদিন ধরে রিহাব কে নিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখছিল সে,১০/১২টা বাচ্চাকাচ্চার স্কুল কলেজের নাম ও ঠিক করে ফেলেছিল সে, এখন সেটাও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো
এর পরে তো মনে হয় না আর রিমদের বাসায় যাওয়া যাবে,রিহাব তো আমাকে পেলে জুতো পেটা করবে,স্পর্শ ভাইয়ার উপরের রাগ আমার উপর দিয়ে ঝাড়বে
!
একটু একটু করে মন জয় করি আর কদিন বাদেই দুটোই মিলে একটার কলার একটা টেনে আমাকে আগের জায়গায় দিয়ে আসে,আবারও রিহাবকে ইম্প্রেস করতে হবে নতুন করে,তবে এবার কষ্ট হবে একটু
রিহাব অনেক ক্ষেপে আছে,ধুরধুর!

আজ রিম ডিনার করতে আসে নিই,তার মন প্রচণ্ড রকম খারাপ,স্পর্শর সাথে সামনা সামনি তাকে কথা বলতেই হবে
এসব ভেবে রিম ওড়না মাথায় জড়িয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো,তারপর বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে পর্দা সরালো,স্পর্শর গোটা রুমটা খালি পড়ে আছে,ফ্যান ও অফ,মানুষটা গেলো কোথায়,সারাদিন এখানে বসে থাকে আর আজ যখন আমার দরকার পড়লো তখন তিনি উধাও!
.
রিম অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে,ঠিক রাত ১২টায় চোখ খুললো আবার
উঠে এসে স্পর্শের রুমে একবার উঁকি দিলো,তার রুম অন্ধকার,মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন
রিম এবার রান্নাঘরে এসে এক কাপ চা বানালো,কড়া লিকারের চা,মাথা ব্যাথা ঠিকঠাক যাবে
রিম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আরেক হাতে টুল নিলো তারপর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে স্পর্শের বারান্দাটার দিকে এক নজর তাকিয়ে টুলে বসলো সে
চায়ে এক চুমুক দিচ্ছে আর বারান্দাটার দিকে তাকাচ্ছে
স্পর্শ ল্যাম্পপোস্টের পিছনে থাকা ভ্যানটাতে বসে আছে সেই ১১টা থেকে,মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে শুনতে অতীষ্ঠ হয়ে আজ একটু আগেই সে এখানে চলে এসেছে,সাথে করে এনেছে ৫টা সিগারেট আর একটা কয়েল,রিমকে দেখে এবার তার মনে হলো কয়েলটা জ্বালানো দরকার,কারণ স্পর্শ যখন রিমকে দেখতে থাকে মুগ্ধ হয়ে তখন সে কারোর কোনে ডিস্টার্ব পছন্দ করে না,মশার ও না
তাই লাইটার দিয়ে কয়েল জ্বালিয়ে একপাশে রেখে গালে হাত দিয়ে সে রিমকে দেখতে থাকলো,মাঝে মাঝে সিগারেটেও এক টান দেয় সে
নিস্তব্ধ একটা এলাকা,সবাই যার যার বাসায়,কেউ ঘুমায় কেউ না জেগে জেগে স্বপ্ন বুনে,রিম চা খাচ্ছে আর স্পর্শ প্রেমে ডুব দিয়ে তার রিমকে দেখা নিয়ে ব্যস্ত পড়ে আছে
কিন্তু সে খেয়াল করলো আজ রিম বারবার তার বারান্দার দিকেই তাকাচ্ছে,ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না সে,আবার ভাবলো হয়ত মা আসার ভয় পাচ্ছে,মেয়েটা আমাকেও ভয় পায়,আমার মাকেও ভয় পায়,অবশ্য মাকে ভয় পাওয়ার কারণ আছে
কিন্তু আমাকে কেন ভয় পায়?দু একটা ধমক ছাড়া তো আর কিছু করি না
.
রিম চা শেষ করে এবার একটু কিনারায় দাঁড়িয়ে স্পর্শের বারান্দায় উঁকি দিলো
নাহ!!আজ আর এর চাঁদমুখ খানা দেখবো না তাহলে,কাল সকালেই নাহয় কথা বলবো যা বলার
.
রিম টুলটা নিয়ে যাওয়ার সময় ওর চোখ গেলো সেই ল্যাম্পপোস্টটার দিকে,যার পিছনের ভ্যানটায় স্পর্শ বসে আছে,স্পর্শ সেই মূহুর্তে লাইটার জ্বালিয়ে তার ৫তম সিগারেটটা ধরাচ্ছিলো,রিম ব্রু কুঁচকে একটু এগিয়ে গিয়ে সেদিকে দেখতে লাগলো
“মনে হলো কিসের যেন আলো জ্বললো??ওখানে কি কেউ আছে?”
স্পর্শ যখন দেখলো রিম সরাসরি এদিকেই দেখছে তার আর বুঝতে বাকি নেই রিম সন্দেহ চোখেই দেখছে,না জানি টের পেয়ে যায়
স্পর্শ কিছুটা ভয় পেয়ে যাওয়ায় ওর হাত থেকে ফসকে সিগারেটটা ওর আরেক হাতে গিয়ে পড়লো
কিছুটা পুড়েও গেলো তাও স্পর্শ কোনো শব্দ করলো না চুপচাপ সিগারেটটা আরেক পাশে ফেলে দিলো,হাত জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তাও সে রিমের দিকে তাকিয়ে ভাবতেছে রিম তাকে চিনলো কিনা
রিম চিনলো না,টুল নিয়ে চলে গেলো,তার মাথায় একবারের জন্য ও আসেনি যে এই জায়গায় এ সময়ে স্পর্শ থাকতে পারে
.
স্পর্শ ল্যাম্পপোস্টটার সামনে এসে হাতের দিকে তাকালো এবার,দাগ হয়ে গেছে তারপর সেটা মুছে সে রিমের বারান্দার দিকে তাকাতে তাকাতে বাসায় ফিরে গেলো
পরেরদিন সকাল সকাল রিম বারান্দার নিচে এসে হাজির
স্পর্শ শার্ট পরতে পরতে সবে নিচে নেমে রিমের বারান্দার দিকে এক নজর তাকিয়ে তার বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিচে এক নজর তাকাতেই দেখলো রিম ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
স্পর্শ রীতিমত অবাক,রিম?নিচে?তাও ওর সামনে?
.
স্পর্শ মুচকি হেসে বললো”কি ব্যাপার?আজ এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিলা,তাও সকাল সকাল,আজ মনে হয় আমার দিনটা ভালো যাবে”
.
রিম এগিয়ে এসে বললো”আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে”
.
“কি কথা শুনি?”
স্পর্শ হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো এবার কথা শুনার জন্য
.
রিম ঘোমটা ঠিক করে বললো”আপনি কি চান বলুন তো,একটু খোলসা করে বলুন”
.
তোমাকে!
.
সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করেছি
.
ওকে,আমি সিরিয়াসলিই তোমাকে চাই
.
দেখুন,মজা করার সময় নাই আমার,আপনি কোন সাহসে আমার ভাইয়াকে কড়া কথা বললেন?১৪গুষ্টির ভাগ্য! এসব কেমন কথাবার্তা?
.
তোমার ভাইয়া যে আমার কলার টেনে ধরলো সেটা কিছু না?
.
আপনি কড়া কথা না বললে ভাইয়া এমনটা করতো না
.
আগে তোমার ভাইয়াই কথা বাড়িয়েছে,আমি তোমাকে কখনও টিজিং করেছি??জাস্ট ২বেলা তোমাকে আমার সামনে পাঁচ মিনিটের জন্য দেখতে চাই আমি,এটা আমার দোষ?
.
হ্যাঁ দোষ,আপনার একটু ভাবা উচিত এসব করে কি লাভ?
.
ভালোবাসার মানুষকে নিজের চেখে প্রাণভরে দেখতে পাওয়াতে লাভ লোকশান কি আবার?
.
আবার সেই ফিল্মি,আমি সিরিয়াসলি কথা বলতেছি
.
স্পর্শ একটু এগিয়ে গেলো রিমের দিকে তারপর ফিসফিস করে বললো”আমিও কিন্তু সিরিয়াস রিম!!!!”
.
রিম ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”আপনি আর কখনও আমার ভাইয়ার সাথে এমন বিহেভ করবেন না”
.
তোমার ভাইয়ার পা ধরলে খুশি হবা?
.
রিম কপাল কুঁচকে বললো”আমি তো বলিনি পা ধরেন,জাস্ট সুন্দর বিহেভ করবেন,দরকার পড়লে কোনো কথা বলারই দরকার নাই,জাস্ট ইগনর”
.
তাহলে তুমি খুশি?
.
রিম এবার কিছু না বলেই চলে যেতে নিতেই স্পর্শ ওর হাতের কব্জি ধরে ফেললো
রিম চোখ বন্ধ করে থেমে গেছে,হাত কাঁপছে ওর,স্পর্শ সাথে সাথে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো”আমাকে কি কোনোদিন বলবা না যে আমাকে ভালোবাসো?”
.
রিম স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো”পছন্দই করি না আবার ভালেবাসা?”
.
“দুটোই করো,জাস্ট বলতে গেলে তোমার ইগোতে লাগে,যাও এখন”
কথাটা বলে স্পর্শ মুখ গোমড়া করে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়ালো
.
রিম ও মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো সোজা বাসার দিকে,,স্পর্শ আজ মহা খুশি,রিম কি বললো না বললো তা সে মাথায় নেয়নি,মাথায় নিয়েছে রিম আজ নিজ থেকে ওর সাথে কথা বললো,তাও নিচে নেমে,স্পর্শ বুকে হাত দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,তারপর বাইকের দিকে চেয়ে বললো”জন্টু বাবু রাগ করিস না,একদিন তোকে নিয়ে আমি আর রিম লং ড্রাইভে যাবো”
.
স্পর্শ হাসতে হাসতে বাইকে উঠে বসতেই দেখলো বাবা জগিং করতে বেরিয়েছেন মাত্র,স্পর্শকে হঠাৎ এসময়ে দেখে তিনি তাচ্ছিল্য করে একটা হাসি দিয়ে বললেন”কি ব্যাপার নবাবজাদা?? এই সাত সকালে এখানে দাঁড়িয়ে কি করো?”
স্পর্শ বাইক থেকে নেমে বললো”আজ আসমা আপা আসবে না,তাই হোটেল থেকে নাস্তা আনতে যাচ্ছিলাম,শেষমেষ তো বাড়ির ছেলেরাই কাজে লাগে”
.
বাবা কোমড়ে হাত দিয়ে মাথা একটু ঝাঁকিয়ে বললেন”কবে থেকে এমন দায়িত্ববান হয়ে গেলি??
.
সবসময় আমিই বাজার করি,সবসময় দায়িত্ববান ছিলাম,থাকবো ও
.
“ভালো!!”
কথাটা বলে স্পর্শের বাবা জগিং করতে চলে গেলেন,স্পর্শ গেলো বাজারের দিকে,এখানকার মিজান মিয়ার হোটেলে এ সময়ে নাস্তা পাওয়া যায়,বাবা অফিসে তাড়াতাড়ি যান বলে কাল রাতে রোকসানা বেগম স্পর্শকে বলে রেখেছিলো সে যেন সকাল সকাল নাস্তা এনে রাখে
.
স্পর্শ এক প্যাকেট লজেন্স কিনবে ভাবলো রিমের জন্য,কিন্তু সমস্যা হলো ম্যাংগো ফ্লেভারের নেই,যা আছে তা হলো স্ট্রভেরি ফ্লেভারের,আঁখি চকলেট পছন্দ করে না বলে স্পর্শ এক প্যাকেটই নিলো,এটা তো রিম ও খাবে না,এটা বরং তামিমকেই দেবো,তামিম একটা গরুর মতন,,প্রিয় খাবার দিলে না করে না,চকলেট জাতীয় যা দেবে তাই সে খাবে
.
স্পর্শ রিমের বারান্দার কাছে এসে বাইক থামালো তারপর নিচ থেকে একটা কঙ্কর নিয়ে রিমের বারান্দায় ছুঁড়ে মারলো
রিম তখন চুল আঁছড়াচ্ছিলো,তার বারান্দায় কঙ্কর মারা মানে এটা স্পর্শেরই কাজ
তাই আর কিছু না ভেবে সে ওড়না মাথায় দিয়ে দরজা খুলে সামনে এসে কিছু বলার আগেই স্পর্শ বললো”ক্যাচ ইট!!!”
রিম ও বোকার মত ওড়না ধরলো আর স্পর্শ চকলেটের প্যাকেটটা ছুঁড়ে মেরে দিলো
.
রিম গোলাপি রঙ দেখেই বুঝেছে এটা স্ট্রভেরি ফ্লেভার
.
তারপর সে বললো”এসব কি??আমাকে চকলেট দিলেন কেন?নিব না এটা আমি,ধরেন এটা!
.
স্পর্শ বাইক থেকে নেমে চলে যেতে যেতে বললো”ওটা তামিমের”
.
রিম থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মূহুর্তেই হাতে গিফট ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়, ফেরত ও দেওয়া যায় না,অবশ্য এই লোককে আর রাগানো যাবে না,আবার কি তুলকালাম করে বসবে কে জানে
.
রিম পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো তামিম ঘুম থেকে উঠে এসে চোখ ডলতেছে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
আর হাতে সেই পানির বোতল,ক্যাকটাস গাছে দেওয়ার জন্য সে প্রস্তুত
.
রিম ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে বললো”তোকে না বললাম ক্যাকটাস গাছে প্রতিদিন পানি দিতে হয় না,গাছ কতগুলো মরেছে সে হিসেব আছে তোর?”
.
বাবা বলেছে গাছে পানি দিলে গাছ দোয়া দেয়
.
ক্যাকটাস গাছে বেশি পানি দিলে গাছ বদদোয়া দেয় সেটা বলে নাই?
.
আমি পানি দেবো!
.
তোর সাথে ত্যাড়ামি করার সময় নাই আমার,নে ধর চকলেট
.
“স্পর্শ ভাইয়া দিসে?”
কথাটা বলে তামিম পানির বোতল নিচে রেখে চকলেটের প্যাকেটটা বুকে জড়িয়ে ধরলো
.
হুমম,পারে খালি তোরে ইম্প্রেস করতে,আমার ভাইয়া আর বাবাকে ইম্প্রেস করা তার সাধ্যে নাই
.
মা ভাজি করার জন্য পেঁপে কাটতে কাটতে বললেন”ওদের কথা বাদ দে,তোরে আজ পর্যন্ত ইম্প্রেস করতে পারলো না সেটা বল”
.
পারবেও না,আমি বড় কঠিন জিনিস!
.
তাই তো ওর দেওয়া গিফট ওর ভয়ে ফেলতে পারিস না,চুপচাপ গ্রহন করিস,তবে একটা কথা বলতে হয় জিনিসগুলো বেছে বেছে দেয়,কোয়ালিটি এত ভালো রে কি বলবো
.
তুমিই রাখো,আমার প্রয়োজন নেই
.
তামিম চকলেটের প্যাকেটটা নিয়ে লুকালো তারপর আবার পানির বোতল নিয়ে ছাদে গেলো পানি দিতে
“আমি বুঝি না ক্যাকটাস গাছে পানি দিলে মরে যায় কেন??মনে হয় পানি কম দিই আমি,এখন থেকে ২বোতল করে পানি দেবো তাহলে মরবে না হুমমম!
এক কাজ করবো প্রতিদিন দুবার করে দেবো
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে