দুষ্টু মেয়ের মিষ্টি সংসার পর্ব-০৭ | বাংলা নতুন গল্প

0
2877

#গল্পঃ_দুষ্টু_মেয়ের_মিষ্টি_সংসার_
#লেখকঃ_Md_Aslam_Hossain_Shovo_(শুভ)
#পর্বঃ__৭_

√-রিতুঃ হি হি, আমি তখনো আম্মাকে ডাক দিবো..

আমিঃ তুমি না হানিমুনে যাওয়ার জন্য পাগল, তাই তখন আম্মাকে কোথায় পাবে? তখন তো কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

রিতুঃ আচ্ছা দেখা যাবে…

আমিঃ তখন দেখবে কেনো? তাহলে এখনি দেখো…

~ বলে রিতুর হাত ধরে আমার দিকে টান দিলাম। রিতু “আম্মা” বলে খুব জোরে চিৎকার করে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলাম। বিয়ে করেও শান্তি নেই। সুন্দরী বউ সামনে দিয়ে ঘুরে, কিন্তু একটু দুষ্টুমি করতে গেলেই মা কে ডাক দেয়। না বুঝে পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করলে এমনি হয় এখন বুঝতে পারছি। মনে মনে চিৎকার করে বলি, আমি আর বিয়ে করতে শান্তি পেলাম না গো। খুব কষ্টে আছি গো, না পারি কাউকে বলতে, না পারি সইতে।

আমার চিন্তা এখন একটাই, পিকনিকে গেলে রিতুকে বুঝাবো কেমন মজা। একদিন দুইদিন করে পিকনিকের তারিখও চলে এলো। আজ বুধবার, আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাস ছাড়বে সিলেটের উদ্দেশ্য। সেই ছাগল বিক্রির টাকা পুরোটা আমার কাছে ছিলো, সেই টাকা দিয়েই সব খরচ করবো ভাবছি। সুযোগ বুঝে অনেক শপিং ও করিয়ে নিলো রিতু তার জন্য। রিতু অনেক খুশি প্রথম বার এতো দূরে ঘুরতে যাচ্ছে তাই।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো রিতুর ডাকে ~

রিতুঃ এই উঠো, উঠো…আর কত ঘুমাবে।

আমিঃ এতো ভোরে ডাকাডাকি কেনো শুনি?

রিতুঃ ভুলে গেলে নাকি আজ হানিমুনে যাবো।

আমিঃ এই পিচ্চি হানিমুন না, বলো পিকনিকে যাচ্ছি।

রিতুঃ ইশশশ, যাচ্ছি হানিমুনে তাহলে বলবো কেনো পিকনিকে যাচ্ছি?

আমিঃ হানিমুন শুনলে সবাই হাসাহাসি করবে, লজ্জায় পড়তে হবে তো।

রিতুঃ তাই বলে হানিমুনে গিয়ে পিকনিক বলবো, এটা আমাকে দিয়ে সম্ভব না। তারাতাড়ি উঠে তৈরি হও…

আমিঃ এই ভোরে তৈরি হয়ে কি হবে, যাবো তো বিকালে।

রিতুঃ তোমার চুলের অবস্থা দেখে তোমায় একদম হনুমান হনুমান লাগছে। যাও গিয়ে চুল কাটিয়ে আসো তারাতাড়ি।

আমিঃ সকাল বেলায় স্বামীকে হনুমান বলে দিলে?

রিতুঃ যেমন লাগছে, তেমন বলছি। যাও চুল কাটিয়ে আসো তারাতাড়ি।

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি, তাহলে একটু আদর করো আগে।

রিতুঃ আদর আবার কিভাবে করে?

আমিঃ এই মনে করো আমায় জরিয়ে ধরে…

রিতুঃ তোমার শুধু সব সময় পঁচা কথা। তুমি থাকো, আমার অনেক কাজ আছে।

~ বলে রিতু রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল ৯ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখি রিতু মুখে আটা-ময়দা লাগিয়ে বসে আছে ~

আমিঃ এই তুমি গত কয়েকদিন তো অনেক আটা-ময়দা মাখালে মুখে, তাই আজও নিতে হলো নাকি?

রিতুঃ কি বলো এগুলো তুমি? আজতো আরো বেশি নিতে হবে। আজ যাবো আর আজ নিবো না বললেই হলো।

আমিঃ কি হয় এগুলো লাগিয়ে?

রিতুঃ তুমি এতো বুঝতে পারবে না। মেয়েদের বিষয়ে এতো মাথা না ঘাটলে হয় না বুঝি?? যাও তোমার কাজ করো।

আমিঃ সেটা ঠিক বলছো, পাগলীদের বিষয়ে এতো মাথা খাটানো উচিত না।

রিতুঃ এই তুমি কি আমার সাথে এখন ঝগড়া করতে চাচ্ছো নাকি?

আমিঃ কই না তো।

রিতুঃ তাহলে যাও আব্বা-আম্মার ঝগড়া করা দেখে আসো।

~ বড় ঘরের থেকে বাবা-মায়ের ঝগড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মা খুব রেগে আছে কন্ঠ শোনে বুঝতে পারা যাচ্ছে ~

আমিঃ মা-বাবার মধ্যে আবার ঝগড়া লাগলো কি নিয়ে?

রিতুঃ আমি লাগিয়ে দিয়েছি, হি হি…

আমিঃ মানে?

রিতুঃ তোমার ওখান থেকে বের হয়ে বড় ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি আব্বা ভাত খাচ্ছে আর আম্মা ভাতে বেড়ে দিচ্ছে। আমি গিয়ে আম্মাকে একটা হাসি দিয়ে বললাম, “আম্মা আপনাকে কোনোদিন আব্বা হানিমুনে নিয়ে গিয়েছে”

আমিঃ হেএএ, তারপর?

রিতুঃ আম্মা আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে বললো, “না রে মা, বাপের বাড়িই নিয়ে যায় না। আবার হানিমুন”

আমিঃ তাহলে এর মধ্যে ঝগড়া লাগার মতো কি কথা হলো?

রিতুঃ তারপর আমি বললাম, আম্মা আমার মনে হয় আব্বা আপনাকে ঠকিয়েছ। নাহলে দেখুন, আপনার ছেলের সাথে আমার কয়দিন হলো বিয়ে হয়েছে, আর এর মধ্যে সে আমায় জোর করে হানিমুনে নিয়ে যাচ্ছে। সে তো কোনো কথায় শুনতে চাইলো না, বললো “বউয়ের মন খুশি রাখতে একটু ঘুরাঘুরি করা উচিত বউকে নিয়ে”

আমিঃ হায়রে মিথ্যুক, এগুলো আমি তোমায় কখন বললাম আবার। তারপর কি হলো?

রিতুঃ তারপর আম্মা বললো, “তোরা না পিকনিকে যাচ্ছিস” আমি উত্তরে বললাম, ‘না তো, পিকনিক হলো নাম। আর আমাদের মেন উদ্দেশ্য হলো হানিমুন”

আমিঃ শেষে মা কেও বলে দিলে। আচ্ছা তারপর?

রিতুঃ তারপর আবার কি! আম্মা আব্বাকে খুঁচা দিয়ে কথা বলতে লাগলো, “কিপ্টে লোক” সহ অনেক কিছু বললো। আরো বললো এমন লোকের সাথে বিয়ে হয়ে তার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেলো। সারাজীবন শুধু কষ্ট করলো, কিন্তু আব্বা নাকি তার মনের কষ্ট কখনো বুঝলো না। তারপর আব্বা শুধু বললো, সবাইকে নিয়ে কি হানিমুনে যাওয়া যায় নাকি, তেমন যোগ্য হতে হয়। আর আম্মা রেগে গিয়ে আব্বার সাথে ঝগড়া শুরু করলো। ওই দেখো গত একঘন্টার বেশি সময় ধরে চলছে, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে মারামারিও হবে, হি হি…

আমিঃ তোমার যে কয়টা তার ছ্যারা মাথার আল্লাহ জানে।

~ রিতু আমার কথা শুনে হাসতে রইলো। আমি তারাতাড়ি বড় ঘরে গেলাম বাবা-মায়ের ঝগড়া থামাতে। গিয়ে দেখি আমার সাহসী বাবা মায়ের ভয়ে চেয়ার নিয়ে রুমের এক কোনে বসে আছে। আর মা হাতে খুনতি নিয়ে বাবার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে বড় বড় ঝারি দিয়ে বাবার মনে আঘাত দিচ্ছে, আর বাবা সেগুলো চুপ করে সহ্য করছে ~

আমিঃ কি হয়েছে তোমাদের মা, এই ভাবে চিৎকার করছো?

মাঃ আমার আবার কি হবে, আমার তো পোড়া কপাল। আমার কপালে এমন স্বামী জুটছে যে একটু ঘুরতে তো দূরের কথা, একটু বাপের বাড়ি নিয়ে যেতে চাই না। এমন কিপ্টে মানুষ হয় কোনোদিন…

~ আরো মনের যত কষ্ট, অভিমান, অভিযোগ ছিলো সব খুলে বললো মা। মা কিছু ভুলও বলে নাই, স্বামী এমন কিপ্টে আনরোমান্টিক হলে তো বলবেই। সব স্ত্রীই তো কত স্বপ্ন থাকে স্বামী নিয়ে। কিন্তু মা এখন বাবাকে যেই ভাবে বলছে, কিছু একটা বলে বাবাকে এই কথার আঘাত থেকে বাঁচাতে হবে দেখছি। তাই অনেক ভেবে বললাম ~

আমিঃ দেখো মা, তোমাদের যখন বিয়ে হয়েছে তখন কি আর এমন গাড়ি ছিলো নাকি যে কোথাও দূরে নিয়ে যাবে বলো। আমিতো গল্প শুনছি কাঁদার মধ্যে গোসল করেও তোমাদের বাড়ি তোমায় নিয়ে যেতো বাবা। তাহলে এটা কি কম হলো বউয়ের জন্য বলো?

~ আমার কথা শোনে বাবা পয়েন্ট খুঁজে পেলো। চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো ~

বাবাঃ তাহলে বলো এবার, তোমায় নিয়ে বিয়ের পর তোমার বাড়ি যেতে গেয়ে তিন দিন আচার খায়ছি কাঁদার মধ্যে আবার একদিন সাঁকো থেকে খালের মধ্যে পড়ছিলাম, তাও তোমায় নিয়ে গিয়েছিলাম তোমার বাপের বাড়ি। এই যুগের ছেলেরা কি এমন করতো হুম? (মায়ের দিকে তাকিয়ে)

~ মা চুপ করে আছে ~

বাবাঃ শোনো শুভর মা, তখন যদি গাড়ি থাকতো তাহলে আমিও তোমায় নিয়ে অনেক দূরে দূরে ঘুরতে নিয়ে যেতাম বুঝলে।

আমিঃ ঠিকই মা, গাড়ি ছিলো না এতে বাবার কি দোষ। তুমি চাইলে বাবা কালকেই তোমাকে নানা বাড়িতে নিয়ে যাবে তাই না বাবা.? (বাবার দিকে তাকিয়ে)

বাবাঃ আবার এখন যাওয়ার কি দরকার ছিলো!

মাঃ এখনি আবার শুরু হয়ে গেলো পিছন টান..? (বাবার দিকে তাকিয়ে)

বাবাঃ আচ্ছা আচ্ছা কালকেই যাবো কেমন।

আমিঃ তাহলে তো ঝামেলা আর রইলো না, হা হা…

~ বাবা-মায়ের ঝগড়া থামিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। রিতু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ~

রিতুঃ হঠাৎ করে আব্বা-আম্মা যে চুপ হয়ে গেলো?

আমিঃ আমার মা তো তোমার মত পাগলী না যে, না বুঝে শুধু ঝগড়া করবে হুম। আমি একটু বুঝিয়ে বললাম, তারপর সব ঝামেলা শেষ।

রিতুঃ আমি বুঝি পাগলী?

আমিঃ পাগলী না হলে কি স্বামীর বুকের উপর উঠে বসে হানিমুনে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারে?

রিতুঃ একটু পাগলামি না করলে অনেক কিছু মিস করতে হয় জীবন থেকে বুঝলে।

আমিঃ হুমম বুঝলাম। তুমিও বুঝবে হানিমুনে যাওয়ার পর.. হা হা..

~ রিতু কপাল, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো ~

রিতুঃ তোমার মতলব কি বলো তো?

আমিঃ সেটা নাহয় পরে দেখবে।

রিতুঃ এই রিতু কাউকে ভয় পায় না। তোমাকেও না বুঝলে…

আমিঃ আচ্ছা তৈরি থেকো…(হাসি দিয়ে)

~ রিতু আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো কয়েকবার। আমি শুধু হেসেই গেলাম ওর মুখ ভেংচি কাটা দেখে।

দুপুরে গোসল করে, খাওয়া দাওয়া করে, বাবা মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে, ছোট ভাই বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে পিকনিকের গাড়ির কাছে গেলাম। এতো দূরে মা-বাবা রেখে যাচ্ছি খুব খারাপ লাগছে নিজের কাছে, কিন্তু তারা যাবে না এতো দূরে তাই নিয়ে যেতেও পারলাম না। মনটা একটু খারাপ এই জন্য। কিন্তু রিতু অনেক খুশি।

আমি আর রিতু বাসের মধ্যে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আমার বন্ধু ফয়সাল বাসের মধ্যে উঠলো ~

রিতুঃ ফয়সাল ভাই আপনিও যাচ্ছেন নাকি?

আমিঃ শুধু সে যাচ্ছে নাকি, সাথে তার নতুন বউও যাচ্ছে (হাসি দিয়ে)

~ ফয়সাল তো দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাজুক ভাবে হেসে যাচ্ছে ~

রিতুঃ ফয়সাল ভাই বিয়ে করলো কবে?

আমিঃ তোমার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার দুই দিন পর ফয়সাল তো ওর খালাতো বোন স্বর্ণা কে বিয়ে করার জন্য পাগলামি শুরু করে। না খেয়ে অনশন করে তিনদিন। তারপর আর কি তার বোনের সাথে বিয়ে করিয়ে দেন ওর বাবা ।

রিতুঃ এই তুমি ফয়সাল ভাইয়ের খালাতো বোনের নাম জানলে কি করে..? (ভ্রু কুঁচকে)

আমিঃ এখানেও সন্দেহ শুরু করলে। হানিমুনে যাচ্ছো নাকি গোয়েন্দা গিরি করতে?

রিতুঃ পুরুষ মানুষ নিয়ে বিশ্বাস নেই বুঝলে হুম। তাই ফয়সাল ভাই আপনার বউ কোথায়?

ফয়সালঃ এক মিনিট দাঁড়ান নিয়ে আসছি…

~ ফয়সাল গিয়ে ওর বউ স্বর্না কে নিয়ে আসলো। রিতুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমার সাথে ওর বউয়ের এর অনেক আগেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সেই জন্য এমনিতেও ওর বউ আমায় চিনে। ওদের সিট আমাদের সিটের পাশাপাশি পড়ছে।

সন্ধ্যা ৬ টায় সিলেটের উদ্দেশ্য গাড়ি ছাড়লো। সামান্য জানালা খুলা থাকায় হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস আসছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। রিতু আমার সাথে মিশে বসে আছে। বিভিন্ন ধরনের গল্প করছি। অনেক সুন্দর একটা রোমান্টিক মূহুর্ত বলা চলে। শুধু টেনশন একটা, রিতু বমি না করে। মেয়েদের তো একটায় সমস্যা থাকে, বাসে উঠলেই বমি করে।

রাত ৮ টার পর পর ফেরি পার হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য বাস চলছে। তার ১১ টার দিকে ঢাকা সাভারে একটা তেলের পাম্পে গিয়ে বাস দাঁড়ালো। ওখানেই রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিলো সবাই। খাশির মাংসের সাথে ভুনা খিচুড়ি। ভরপুর খাওয়া দাওয়া শেষ করা শেষ হলে আবার গাড়ি সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হলো।

বাসের মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। রিতুও আমার কাঁধে মাথা রেখে আমার বুকের দিক দিয়ে হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ছে। আমি একটা চাদর দিয়ে রিতুকে ঘিরে নিয়ে আমার শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখছি। রিতু গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে হয়ে আছে। আমার চোখে কোনো ঘুম নেই, এমনিতেও জার্নিংয়ে ঘুম আসে না আমার। বাসের মধ্যে লাইফ অফ করা থাকায় অন্ধকার হয়ে আছে। বাস তার নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

রাত ২ টার সময় গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী জেলা পার হয়ে বিঃবাড়িয়া জেলায় পৌঁছালো বাস। সবাইকে বললো চা-বিস্কুট খেলে খেয়ে আসতে। রিতু তখনো আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। আমি রিতুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম ~

আমিঃ এই পিচ্চি উঠো…

~ কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর “হুমম” বলে জবাব নিলো ~

আমিঃ এই পিচ্চি উঠো…

রিতুঃ এই ঘুমাতে দেও তো। আমি সকালে উঠবো।

আমিঃ চা-বিস্কুট কিছু খাবে তুমি?

রিতুঃ ধুর, আমি পারবো না এখন চা বানাতে (ঘুম চোখ)

আমিঃ এই পিচ্চি তোমাকে চা বানাতে হবে না। চায়ের দোকান থেকে চা খাবে নাকি?

~ বলে হেসে দিলাম। রিতু চোখ ডলতে ডলতে হেসে দিলো ~

রিতুঃ আমরা এখন কোথায়?

আমিঃ চলো বাস থেকে নেমে দেখে আসি।

~ তারপর আমরা দুই জন বাস থেকে নেমে চায়ের দোকানে গেলাম। ফয়সাল ও তার বউ স্বর্না ও নেমেছে চা পান করতে।

আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু দূরে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালাম। রিতুও আমার পাশেই শরীরে চাদর পেচিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার হাতে গরম চায়ের কাপ দিলাম।
রাস্তা দিয়ে বড় বড় গাড়ি যাচ্ছে খুব দ্রুত। গাড়ি দ্রুত যাওয়ার কারনে ঠান্ডা বাতাস আসে আমাদের শরীরে লাগছে। মোবাইলে দেখলাম রাত ৩.০৫ বাজে তখন।

এতো গভীর রাতে, এক অচেনা জায়গায়, অচেনা এলাকায় দাঁড়িয়ে নিজের জীবন সঙ্গীর সাথে সময় কাটানো কতটা আনন্দের ব্যাপার ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

আমি আমার চায়ের কাপ প্রথমে রিতুর হাতে দিয়ে বললাম তার ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে দিতে। রিতু মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে ঠোঁটের ছোঁয়া লাগিয়ে দিলো। অবশ্য ছোয়া লাগাতে গিয়ে একটু লিপস্টিকও লাগিয়ে দিয়েছে। আমি সেই স্থানে ঠোঁট লাগিয়ে চা পান করছি। রিতু আমার কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসি দিচ্ছে। অবশ্য একটু বেশি বেশি করে ফেলছি, কিন্তু অনেক সময় প্রিয় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে একটু বেশি বেশি নিজের থেকে করা উচিত। মোট কথায় এই রোমান্টিক মুহূর্তের অনুভূতি ছিলো এক কথায় অসাধারণ।

সবাই আবার বাসে উঠার পর আবার বাস ছাড়লো। রিতু জানালার পাশে বসে আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে চাদর দিয়ে ঘিরে আমায় জরিয়ে ধরলো। আমি রিতুর পিঠের পিছন দিয়ে হাত দিয়ে রিতুর অপর পাশের হাত ধরে আমার সাথে মিশিয়ে ধরলাম। আর আরেক হাত দিয়ে রিতুর মাথায় হাত বুলাচ্ছি ~

আমিঃ এখন বুঝি আমাকে আর ভয় লাগে না?

রিতুঃ তোমায় ভয় লাগবে কেনো?

আমিঃ আগে তো আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে, কাছে গেলে চিৎকার দিতে।

রিতুঃ সেটা তো অন্য কারনে বাবু..

আমিঃ আমি বুঝি বাবু?

রিতুঃ হুম, তুমি তো আমার ইয়ে ইয়ে বড় একটা বুড়ো-দাদু বাবু.. হি হি…

আমিঃ পাগলী একটা। তাই এখন যে চিৎকার দিচ্ছো না, এখন যদি দুষ্টুমি করি?

রিতুঃ এখন পারবে না তো। এখানে কত মানুষ।

আমিঃ তার মানে এখনো আমার কাছে থাকতে ভয় লাগে, হা হা।

রিতুঃ একদম না। তুমি যতক্ষন আমার সাথে থাকো, আমি ততক্ষণ আরো বেশি ভরসা পায় নিজের থেকেও বেশি।

আমিঃ খুব ভালোবাসো আমায় তাই না তুমি?

রিতুঃ কচু। একটুও তোমায় ভালোবাসি না।

আমিঃ তাই নাকি?

রিতুঃ হুম বুড়ো দাদু। তোমায় একটুও ভালোবাসি না। তুমি খুব পঁচা..

আমিঃ তাহলে একটু পঁচা ছেলেকে ভালো করে দেও।

রিতুঃ কিভাবে?

আমিঃ একটা মিষ্টি দিয়ে।

রিতুঃ আবার শুরু করলে সেই পঁচা কথা। তোমায় নিয়ে আর পারবো না।

আমিঃ এতো কিপ্টে বউ আগে কখনো দেখি নাই।

রিতুঃ এই বাবু, পঁচা কথা বাদ দিয়ে ঘুমাও। আমিও ঘুমাবো…

আমিঃ এই না, আমরা সারারাত গল্প করবো।

রিতুঃ গল্প করবো কাল সারাদিন ইনশাআল্লাহ। এখন ঘুমাও তো বাবু…

~ বলে রিতু আমার বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দিয়ে আমার শক্ত করে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমিও দুই হাত দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলাম রিতুকে। বাসের যাত্রী বেশির ভাগ আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে। কয়েকজন স্বামী স্ত্রী আস্তে আস্তে ফিসফিস করে গল্প করছে।

প্রায় ঘন্টা খাটের পর, তখন রাত প্রায় ৪ টার কাছাকাছি তখন রিতু আমার বুকে হালকা করে কামড় দিলো ~

আমিঃ কি হলো ঘুমের মধ্যে আমার বউ আমায় কামড় দিচ্ছে কেনো?

রিতুঃ এই সয়তান হাত সরাও বলছি।

আমিঃ হা হা, পিচ্চি দেখি এখনো জেগে আছে।

রিতুঃ সয়তান, আমি যখনই ঘুমাবো তখন দুষ্টুমি করার চিন্তা তাই না তোমার?

আমিঃ তোমায় বলবো কেনো?

রিতুঃ বলতে হবে না। আগে সয়তান বর তোমার হাত সরাও বলছি।

আমিঃ আমার বউয়ের কোমরে আমি হাত রাখছি, কেউ বললেই সরাবো নাকি (হাসি দিয়ে)

রিতুঃ তোমার বউয়ের যে সুরসুরি লাগছে।

আমিঃ লাগলে লাগবে, তাতে আমার কি! আমার কাছে তো ভালোই লাগছে।

~ বলে রিতুকে আরো শক্ত করে ধরলাম। রিতু আমার গলার সাথে মুখ মিশিয়ে রেখে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে। রিতুর চুল গুলো আমার মুখের সাথে মিশে আছে। চুলের ঘ্রাণ যেনো আমায় পাগল করে দিচ্ছে।

মনে হচ্ছে রিতুকে একদম বুকের ভিতরে নিয়ে নিতে। রিতুর কপালে ছোট একটা চুমু দিলাম। রিতুর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। বুঝতে পারলাম রিতু খুশি হয়েছে। এবার রিতুর দুই চোখে দুইটা চুমু দিলাম। রিতু আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো ~

রিতুঃ কি করছো তুমি, কেউ দেখবে তো।

আমিঃ কেউ দেখবে না। লাইফ অফ তো।

রিতুঃ কিন্তু..

আমিঃ একদম চুপ…

~ বলে আঙ্গুল দিয়ে রিতুর মুখ আটকিয়ে ধরলাম। জানালা দিয়ে যেই টুকু চাঁদের আলো আসছে তাতে রিতুর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।

আমি রিতুর মুখের দুই দিকে হাত দিয়ে হালকা চেপে ধরলাম। রিতু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ এগিয়ে নিতেই রিতু মুখে সরিয়ে নিলো। রিতুকে আবার বুকের মধ্যে চেপে ধরলাম। ১০-১৫ মিনিট পর আবার বুকের মধ্যে থেকে রিতুর মুখ বের করে তার মুখটা ধরে আস্তে আস্তে আমার মুখ এগিয়ে নিয়ে তার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিল করে দিলাম।

— তারপর বুঝে নিন—

বাকি রাত টুকু মাঝে মাঝে চোখে চোখে তাকিয়ে থাকা ও পাপ্পি দিয়ে কেটে গেলো। সকাল বেলা বাস গিয়ে সিলেটের একটা আবাসিক হোটেলের সামনে থামলো।

আমরা বাস থেকে নেমে সরাসরি যার যার রুমে চলে গেলাম। রুম আগেই রিজার্ভ করা ছিলো…………….. (..#চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে