দুপাতার পদ্ম পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0
1002

#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_২৯(শেষ পর্ব-প্রথমাংশ)
#Writer_Fatema_Khan

বসার ঘরে সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। মেহের তাদের সামনে বসে এক হাত দিয়ে অন্য হাত কচলাতে থাকে। কিছু সময় ব্যয় হবার পর আয়াতের বাবা বলেন,
“কি বলবে নিঃসংকোচে বলে ফেল মা৷ আমরা তোর কথা কখনো ফেলি নি।”
আয়াতের মা ভাবছে অন্যকিছু। তার ভাবনা জুড়েই আছে তার ছেলের ভবিষ্যৎ। মেহের এমন কিছু না বলে ফেলে যাতে তার ছেলের জীবনে আবার অন্ধকার নেমে আসে। দুইটা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে মেহের তাকায় সবার দিকে। সবাই তার দিকেই কিভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। মেহের আবার নিচের দিকে তাকায়।
“বাবা, চাচা তোমরা আমাকে ছোট থেকেই খুব যত্নে বড় করেছো। সত্যি বলতে অভাব, অপূর্ণতা কি জিনিস তা হয়তো আমি কখনোই বুঝি নি। সবসময় যা চেয়েছি তাই দিয়ে এসেছো আমাকে। কখনো কোনো কিছু নিয়েই মানা নেই। এমনকি জীবনের সবচেয়ে বড় সীদ্ধান্তটাও আমি নিজেই নিয়েছি। তোমাদের জানানো প্রয়োজন ছিলো তাই জানিয়েছি এমনটাই দেখায়। মা, চাচী তোমরা আমার মা আর চাচী কম বন্ধু বেশি ছিলে। স্কুল কলেজে কি হত না হত সব যেনো তোমাদের না বলে আমার শান্তি হতো না। সেই আমি কিনা কাউকে পছন্দ করি সেটা তোমাদের থেকে লুকিয়ে গেছি। যখন সবাই এই ব্যাপারটা জানে তখন যেকোনো মা ই তার নিজের সন্তানের খুশি টাই চাইবে। সেখানে চাচী তুমি আমার সুখ টা চেয়েছো। আয়াতের অনুভূতি জানা সত্ত্বেও কাউকে বুঝতে দাও নি। হাসি মুখেই আমার বিয়ের সব কিছুতে অংশ নিয়েছো৷ যেখানে তোমরা সবাই আমাকে এতটা সাপোর্ট করেছো সেখানে আমি শুধু নিজের স্বার্থ দেখে এসেছি। যখন সব বুঝতে পেরেছি তখন সব আমার হাতের বাইরে চলে গেছে। আয়াত! আয়াত মানুষটাই অন্যরকম। মেয়ে মানুষের আলাদা একটা ক্ষমতা থাকে। কেউ তাদের পছন্দ করলে তারা চট করে বুঝে ফেলে৷ আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। আয়াতের অনুভূতি তার চোখে ভাসতো। আমি ইচ্ছে করেই বুঝেও না বুঝার ভান ধরতাম। কিন্তু আমিই বা কি করতাম আয়াতের জন্য আমি তো কখনো সেভাবে ভাবি নি। আমি তো একজনকেই ভালোবেসেছিলাম। আর সে আমাকে খুব নির্মম ভাবে ঠকিয়ে গেলো। ঠকে গিয়েও থাকতে চেয়েছিলাম বেঈমান মানুষটার সাথে। কিন্তু সে তো অন্য একজনের উপর এতটাই মুগ্ধ ছিলো যে নিজের বউ বাচ্চার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। নিজের কষ্ট গুলো অনেক কষ্টে চাপা দিয়ে রেখে আসছি। আবার তখন আগমন ঘটে আয়াতের৷ তার আচার আচরণে আমি বুঝতে পারি তার অনুভূতি আগের মতোই আছে। কিন্তু আমি যে তাকে আমার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে জড়াতে চাই নি। তবে তার ভালোবাসা আমাকে তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে৷ বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করলে আয়াত নিজের জীবনে এগিয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই করতে পারি নি আমি। যতই আয়াতের থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলাম ততই তার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি৷ আমার এভাবে আয়াতকে এড়িয়ে যাওয়া শুধু আয়াতকে না সাথে আমার ভালোবাসার পরিবার টাকেও অনেক কষ্ট দিচ্ছে। তাই আমি একটা সীদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আয়তের মা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
“কি সীদ্ধান্ত নিয়েছিস মা?”
“আমি নিজেকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাই। তোমাদের সীদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে, মাহির কথা ভেবে, আমার প্রতি আয়াতের অসীম ভালোবাসার জন্য আর নিজের জন্যও আরেকবার সুযোগ দিতে চাই আমি। কারো জীবন তো কারো জন্য থমকে নেই৷ যার জন্য আমি রোজ শোক করি, সে তো দিব্যি সুখেই আছে। তবে কেনো আমি নিজের ও নিজের মেয়ের সুখ পায়ে ঠেলে দিব। আর যে এত বছর আমাকে ভালোবেসে গেছে, আমি ডিভোর্সি সাথে একটা মেয়েও আছে, এসব জেনেও আমাকে আপন করতে চায় তাকে কি করে আর কষ্ট দেই চাচী৷ বাবা, চাচা, চাচী আর মা তোমাদের সবার উদ্দেশ্যেই বলছি আমি আয়াতকে বিয়ে করতে রাজি।”
আয়াতের মা আর মেহেরের মা এক মুহূর্ত দেরি না করে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। আর কপালে মুখে চুমু খেতে থাকে। বাবা আর চাচার মুখেও তৃপ্তির হাসি। যেনো এমন একটা সংবাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তারা। মেহের মুচকি হেসে বসার ঘর থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো৷

“কিরে এখানে একা একা দেবদাসের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
আহনাফের ডাকে পেছনে ফিরে আয়াত। আজ তিনদিন হলো আয়াত বাসার বাইরে। সবাই কল করে তার খোঁজ নিলেও মেহের একটা কলও দেয় নি। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“জানিস সবাই কল দিয়ে আমার খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু যার কলের অপেক্ষায় আমি আছি সে একটা কল তো দূর একটা টেক্সটও করে নি।”
“মন খারাপ করে না। আজ করবে দেখিস।”
আহনাফের বলতে দেরি হলো কিন্তু আয়াতের ফোনে কল আসতে দেরি হয় নি। হাতে থাকা ফোনটির দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। মেহেরের নাম্বার স্ক্রিনের উপর।
“এই দেখ বললাম না ভাবি কল দিবে, ঠিক দিয়ে ফেলেছে। কথা বল আমি ওইদিকে যাই।”
আহনাফ চলে যেতেই আয়াত কল রিসিভ করতে যায়। কিন্তু কল রিসিভ করার আগেই কল কেটে যায়। আবার সাথে সাথে কল আসে। দেরি না করে আয়াত কল রিসিভ করে। ওপাশের কণ্ঠ শুনে আয়াত কিছুটা হতাশ হয়৷ মেহের না কাসফি কল করেছে। তবুও হাসিমুখেই কাসফির সাথে কথা বললো আয়াত।
“ভাইয়া তুমি কবে আসবে?”
“কেনো রে পিচ্চি ভাইয়াকে খুব মিস করছিস বুঝি?”
‘এইতো একটু। তবে আমি বেশ আনন্দে আছি এই মুহূর্তে। আমাদের সব আত্মীয় স্বজনরা আমাদের বাসায় আসতে শুরু করেছে। কি মজা অনেক আনন্দ করছি আমরা।”
“হুট করে সব আত্মীয় স্বজনরা বাসায় আসছে কেনো? কিছু হয়েছে বাসায়?”
‘ওইটা তো বলা যাবে না তোমাকে। আচ্ছা আচ্ছা রাখি তাহলে। তুমি তোমার ট্যুর এনজয় করো। আল্লাহ হাফেজ।”
আয়াতকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কাসফি কল কেটে দিলো। সেই সময় আহনাফ আসলো। আয়াতকে এমন অন্যমনস্ক দেখে কাধে হাত রেখে বললো,
“কিরে ভাবি কি বলেছে যে তুই এমন স্ট্যাচু হয়ে আছিস?”
“আমরা কাল সকালেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হব। বাসায় কি যেনো হচ্ছে, কিন্তু কি হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। আর মেহের না আয়াত কল করেছে। সে কিছুই বললো না শুধু বললো আমাদের সব আত্মীয়রা নাকি আমাদের বাসায় আসছে।”
“আর কেউ কল করেছে?”
“না।”
“ঠিক আছে আমরা কাল সকালের ভেতর বের হব। তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিকই থাকবে বাসায়।”
আয়াত মুচকি হেসে তাকায় আহনাফের দিকে তবে ভেতরে ভেতরে টেনশন হচ্ছে খুব।

সকাল থেকেই বসার ঘরে বাচ্চাদের ছুটাছুটি চলছে৷ মেহের সোফায় বসে আছে। আজ কেউই অফিস যায় নি সবাই বাসায় উপস্থিত। রান্নাঘর থেকে মহিলাদের গল্প গুজব আর হাসির শব্দ আসছে। ডেকোরেশনের লোকেরা বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। মেহের চারদিকের সাজসজ্জা দেখছে খারাপ লাগছে না তার। বরং এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে। বাচ্চাদের সাথে কাসফিও বাচ্চাদের মতো ছুটাছুটি করছে। তার পেছনে আস্তে আস্তে হেটে চলছে মাহি। তার ছোট ছোট পা দিয়ে পুরো বসার ঘরে বিচরণ করছে। বাড়ির সকল কাজ শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে এলো। কিছু মেয়েরা কাসফি আর বাকি সব মেয়েরা মেহেরের ঘরে তৈরি হতে ব্যস্ত। আনিকা মেহেরের ঘরে বসেই তৈরি হচ্ছে। সাজার পর যেনো আনিকার রূপ উপচে পরছে। মেহের তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আনিকা মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি দেখছো আপু?”
“তোমায় খুব মিষ্টি লাগছে।”
“কি যে বলো আপু, সত্যি বলতে আজ তোমায় অন্যরকম লাগছে। ঠিক কোনো অপ্সরিদের মতো। ঠিক অনেকগুলো বছর পর তোমাকে সাজতে দেখেছি তাই হয়তো। আচ্ছা আপু তুমি কখনো সাজো না কেনো?”
“সাজ আমার কখনোই পছন্দ নয়। সাদামাটা ভাবটাতেই যেনো একটা মেয়ের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তাই সাজগোছ থেকে দূরে থাকি।”

সেই সকাল থেকে আয়াত একের পর এক সবাইকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করার সময় কারো কাছেই নেই। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে আয়াতের। আহনাফ আয়াতের এই অবস্থা দেখে বললো,
“তুই খামখ চিন্তা করছিস। দেখবি বাসায় গিয়ে কিছুই না কাসফি তোর সাথে মজা করছে।”
বাস থেকে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে বের হলো আয়াত। আয়াতের এমন ফ্যাকাসে মুখ দেখে আয়াতকে একা ছাড়ে নি আহনাফ। সেও তার সাথে আয়াতদের বাড়িতে যাচ্ছে। গাড়ি এসে গেইটের সামনে থামে। ভাড়া মিটিয়ে দুইজনেই গেইটের ভেতর ঢুকে। ঢুকেই চমকে যায়। দোতলা বিশিষ্ট বাড়িটি যেনো আজ বউ সেজেছে। চারপাশে আলো আর আলো। ঝারবাতি আর কাচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়িটি। আয়াতের সাথে সাথে আহনাফও বেশ অবাক হয়েছে। এমন কিছু চিন্তায় আসে নি দুইজনের। তারা তো খারাপ কিছুই চিন্তা করছিলো। আহনাফ আয়াতকে ডেকে বলে,
“ভেতরে চল। দেখি ভেতরে কি অবস্থা।”
আহনাফের কথা মতোই আয়াত আর আহনাফ বাসার দিকে এগিয়ে যায়। বাসায় অনুষ্ঠান বলে সদর দরজা খোলাই রাখা। তাই তারা দুইজনে নির্দিধায় ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরে ঢুকে দেখে সবাই উপরে মানে ছাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তবে বাসার কাউকেই আয়াত দেখতে পাচ্ছে না। তবে যাদের দেখা যাচ্ছে কাউকে আয়াত চিনে আবার কাউকে চিনে না৷ কিন্তু বেশিরভাগ তাদের আত্মীয় এটা সে দেখেই বুঝতে পারছে। আয়াত আর আহনাফও এগিয়ে যায়। আয়াত তার নিচের ঘরেই ব্যাগ পত্র রেখে দেয়৷ আহনাফও ব্যাগ রেখে আয়াতের সাথে উপরে চলে যায়। ছাদের দরজা খুলতেই আয়াতের পা থমকে যায়৷ গায়ে হলুদের সাজে স্টেজে বসে আছে মেহের। আয়াতের চোখে শুধু সুন্দর বললে কম হবে অপরূপের উপরে কোনো ব্যাখায়া থাকলে সেটাই গিয়ে পরতো আজ মেহেরের উপর। মেহের সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেই যাচ্ছে৷ স্টেজের সামনে আবার কেউ কেউ নাচ গান এসব করছে। আয়াতের এসব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ কয়েকদিন বাসাত ছিলো না বলে কি সবাই এভাবে তার পেছনে মেহেরকে বিয়ে দিয়ে ফেলবে নাকি। আহনাফ বলে,
“আগে ভেতরে চল তোর মা বা বাবা কাউকে খুঁজে বের কর। তারপর না হয় তাদের জিজ্ঞেস করিস কি হচ্ছে এসব৷”
আহনাফের কথা শুনে আয়াত এক মুহূর্ত দেরি করে না। আহনাফকে ছাদে রেখেই নিচে চলে গেলো। এদিকে আহনাফ হা হয়ে থাকলো আয়াতের কার্যকলাপে। আহনাফ কিছুটা এগিয়ে যায় স্টেজের দিকে৷ মেহেরের একপাশে কাসফি বসে আছে৷ মাহি ঘুরঘুর করছে৷ আর অন্যপাশে তাকিয়ে দেখে আনিকা বসে আছে। পা দুটো যেনো থমকে যায় আহনাফের। আজ কত বছর পর আনিকাকে দেখছে আহনাফ। সেদিন জানার পর সে আয়াতকে পছন্দ করে তারপর আর আনিকার সামনে আসে নি। আসে নি বললেও ভুল হবে, আনিকা ঢাকায় আসে নি হয়তো আয়াত দেশে ছিলো না বলে।

চলবে,,,,,
#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_২৯(শেষ পর্ব-শেষাংশ)
#Writer_Fatema_Khan

আয়াত নিচে তার বাবার ঘরে গিয়ে দেখে তার মা আর চাচী কি যেনো কাজ করছে৷ তারা আয়াতকে দেখে একটা সৌজন্য মূলক হাসজ দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে৷ আয়াত আবার অবাক হয়৷ এতদিন পর এসেছে কিন্তু তাদের কোনো হেলদোল নেই। মনে হচ্ছে সে কোথাও যায় নি৷ আয়াত নিজেকে সংযত করে তার মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“মা আজ কি হচ্ছে বাসায়?”
“তুই ছাদ থেকে এসেছিস না? তাহলে তো জানিসই কি হচ্ছে। এত জিজ্ঞেস করার কি আছে?”
“মানে!”
“মানে আজ আমাদের মেহেরের গায়ে হলুদ হচ্ছে। এক কাজ কর এই নে ধর এই পাঞ্জাবিটা পরে রেডি হয়ে নে আর এটা তোর সাথে আহনাফ এসেছে না ওকে এটা পরতে বলিস। গায়ে হলুদের সময় কেউ টি-শার্ট পরে থাকে নাকি?”
“কার সাথে বিয়ে ঠিক করেছো মা? যেখানে তোমরা সবাই জানতে আমি মেহেরকে কি পরিমাণ ভালোবাসি।”
কার সাথে বিয়ে ঠিক করেছো মা? যেখানে তোমরা সবাই জানতে আমি মেহেরকে কি পরিমাণ ভালোবাসি।”
আয়াতের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে তা আয়াতের মায়ের দৃষ্টি এড়ালো না। তিনি আয়াতের গালে হাত রেখে বললেন,
“যা তৈরি হয়ে নে।”
আয়াত আর কিছু না বলে রেগে নিজের ঘরে চলে এলো৷ বাসাভর্তি তাই আয়াত আর কিছু না ভেবে তৈরি হয়ে নিলো আর আহনাফকেও কল করে নিচে আসতে বললো৷ দুই বন্ধু তৈরি হয়ে ছাদের উপর গেলো। স্টেজের কাছে যেতেই সব মেয়েরা আয়াতকে টেনে নিয়ে মেহেরের পাশে বসিয়ে দিলো। আয়াত তো অবাকের শেষ সীমায়। মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মাথা নিচু করে বসে আছে। কি হচ্ছে তা বুঝতে দুই মিনিট সময় লাগলো আয়াতের৷ আহনাফ এগিয়ে গিয়ে বললো,
“ভাই তোরই বিয়ে এত ভাবিস না আর।”
“মানে তুইও জানতি এসবকিছু। তাহলে আমাকে বললি না কেনো? তুই নিজেও দেখলি আমি কাল থেকে কতটা টেনশনে ছিলাম।”
“এসব আমি জানি না। এসব ওই পিচ্চি কাসফির প্ল্যান।”
আয়াত চুপ করে যায়। কিছুক্ষণ পর মেহেরের কিছুটা কাছে ঘেষে মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,
“তোমাকে কি কেউ জোর করছে এই বিয়ে নিয়ে?”
“আমি নিজে থেকেই জীবনে এগিয়ে যেতে চাই তাই এই সীদ্ধান্ত।”
আয়াত মুচকি হেসে সামনে তাকায়৷ একে একে সবাই আয়াত আর মেহেরকে গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। আহনাফ গিয়ে আনিকার পাশে বসেছে। ভনিতা না করেই বললো,
“কেমন আছো আনিকা?”
পাশে আহনাফকে দেখে আনিকা হেসে জবাব দেয়,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া, আপনার কি অবস্থা?”
“কোনোরকম ছিলাম। তোমাকে দেখে এখন পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছি।”
আনিকা হাসে নিচের দিকে তাকিয়ে। তারপর আসছি বলে স্টেজের সামনে নাচের জন্য চলে যায়। আহনাফ আনিকার হাসির কারণ কিছুটা হলেও বুঝতে পারে৷ এই হাসিতে ছিলো লজ্জা৷ তারমানে আনিকা আহনাফের মনের কথা জানে। ভেবেই আহনাফ হেসে পেছনের চুলগুলো খামছে আনিকার দিকে তাকায়। সে নাচে ব্যস্ত আর আহনাফ তার নাচ দেখায়।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে৷ কেউ কেউ তো ছাদেই বিছানা পেতেছে৷ মেহের ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসলে আয়াতকে নিজের বিছানাত দেখতে পায়৷
“আয়ার এত রাতে আপনি এখানে? যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন অনেক রাত হয়েছে।”
“তুমি বিয়েতে রাজি হলে কেনো? আমার প্রতি কি তোমার ভালোবাসা কাজ করে?”
“এখন কি এসব কথার সময়?”
“তুমি বলবে?”
“ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে আপনার প্রতি আমার অনুভূতি কাজ করে। এখন সেটা কি ভালোবাসা নাকি জানা নেই৷ তবে এতটুকু জানি আপনার সাথে থাকলে আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য আমি। আমাকে কি সেই সুযোগটা দিবেন না আপনাকে ভালোবাসার?”
আয়াত আর কথা না বাড়িয়ে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে৷ মেহেরও আয়াতের পিঠে আলতো করে হাত রাখে। জীবনে প্রথম হয়তো মেহের আয়াতকে জড়িয়ে পিঠে হাত রেখেছে। আয়াতের তো একের পর এক সারপ্রাইজ পাওয়ার দিন।

৬ মাস পর,
মেহের আয়নার সামনে বসে তৈরি হচ্ছে৷ আজ তারা চট্টগ্রাম যাবে। আহনাফ আর আনিকার বিয়ের কথা চলছে৷ কথা পাকাপাকি হলে আজই আংটি পরিয়ে দিয়ে আসবে। মেহেরের গায়ে হলুদের পর থেকেই দুইজনের ফোনে যোগাযোগ হয়৷ তারপর দুইজন ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়। এবার প্রণয়কে পরিণয়ে রূপান্তর করার পালা৷ এদিকে আয়াতের এখনো কোনো খোজ নেই বাসায় আসার৷ একটু পর তাড়াহুড়ো করে ঘরের ভেতরে ঢুকলো আয়াত৷ আয়াতের হাতে একটা বিড়াল ছানা৷
“এই বিড়াল ছানা কোত্থেকে আনলেন?”
“কেনো কিনে আনলাম। কাল আমাদের কাসফির রেজাল্ট দিলো আর সে এ+ পেয়েছে তুমি কি জানো না! ওকে তো আমি কথা দিয়েছিলাম অনেক আগে দিব। কিন্তু রেজাল্ট ভালো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন সেটাও হয়ে গেছে। তাই আর ওকে অপেক্ষা করানো ঠিক হবে না৷ তাই কিনে আনলাম।”
“আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমাদের দেরি হচ্ছে।”
“তুমিও কিছু ভুলে যাচ্ছ।”
“কি?”
“তোমার সাথেও আমার চ্যালেঞ্জ ছিলো কাসফি রেজাল্ট ভালো করলে আমি যা চাই তাই দিবে।”
“খুব মনে আছে আমার। তা কি চাই আপনার?”
“আসলে আবদারটা আমার না মাহির।”
“মাহির!”
“হুম।”
“তা কি সেটা?”
“মাহি চায় তার একটা খেলার সাথী আসুক। একটা ছোট্ট ভাই বা বোন আসুক। তা তুমি কি তাকে সেই উপহারটা দিবে না।”
“তৈরি হয়ে নিন। চট্টগ্রাম থেকে এসে না হয় মাহির জন্য খেলার সাথী আনার ব্যবস্থা করা যাবে৷”
বলেই মেহের ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। আয়াত জোরে হেসে দিয়ে বলে,
“পালাচ্ছো কোথায়, তুমি চাইলে কিন্তু আমি চট্টগ্রাম যাওয়ার আগেও ট্রাই করে দেখতে পারি।”
“অসভ্য লোক একটা। কিছুই মুখে আটকায় না মুখে।”

চট্টগ্রাম এসেছে তিনদিন হলো। এর মাঝে আনিকা আর আহনাফের আংটি বদল হয়ে গেছে। বিয়ের তারিখও তারা ঠিক করে যাবে কিছুদিনের ভেতর। মেহের বারান্দার ফ্লোরে বসে আছে তার পাশে আয়াত বসে মেহেরের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“আয়াত।”
“হুম।”
“আপনি আমার জীবনের সেই প্রাপ্তি যাকে আমি কখনো পাত্তা দেয় নি। আমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে ছিলাম। আপনার ভালোবাসা অবহেলা করেছি। যাকে আকড়ে ধরতে চেয়েছি সেতো আমায় ভালোই বাসে নি কখনো।”
“এখন কি এসব পুরোনো কথা বলে মাহির খেলার সাথী আনতে বেঘাত ঘটাতে চাও? তাহলে এটা তোমার ভুল ধারণা। এসবে এখন আমি কান দিচ্ছি না। আমার তো এখন অন্যকিছু মন আছে।”
“আপনি এত অসভ্য কেনো আয়াত?”
“নিজের বউয়ের কাছেই তো অসভ্য তাই না, অন্য কোথাও তো যাচ্ছি না।”
“যান তো আপনার সাথে আমার কথাই নেই। কই আমি আপনাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি সেই কথা বলছি আর আপনি আছেন কি নিয়ে।”
“সরি বউ। আমি তো জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো৷”
বলেই মেহেরকে জড়িয়ে ধরে গালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। তারপর দুইজনে নিকশ কালো অন্তরীক্ষে চাঁদ তারাদের দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে