দখিনের জানলা পর্ব-১৫

0
516

#দখিনের_জানলা (পর্ব-১৫)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

৩০.
ক্রিং ক্রিং শব্দ তুলে ফোনটা সেই কখন থেকেই বেজে চলেছে। সেদিকে আব্রাহামের হুশ নেই। সে কিচেনে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে কফির সকল উপকরণ নিয়ে সময় লাগিয়ে কফি তৈরি করল। তারপর মৃদু পায়ে লিভিং এ এসে ডেস্কের সামনে দাঁড়ায়। ফোনটা হাতে তুলে নিতেই দেখল আয়মানের মেসেজ। মা কথা বলতে চাইছে। আব্রাহাম ল্যাপটপটা অন করল। আর সাথে সাথেই কল এসে পড়ল। মুঁচকি হেসে কলটা রিসিভ করতেই দেখতে পেল তার মা চিন্তিত মুখ করে বসে আছেন। আব্রাহাম চেয়ার টে’নে বসল। হেসে বলল,

-‘কেমন আছো মা?’

-‘আমি কেমন থাকব আর! এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আমি ভালো তো নিশ্চয়ই থাকতে পারব না। সারা বিশ্বে এমন এক মহামা’রী এর মধ্যে ছেলেটাও কাছে নেই। আমার তো মনের মধ্যে সারাক্ষণ চিন্তা আসে। আর ছেলেকে দ্যাখো! একটা কল পর্যন্ত দেয় না। এমন পা’ষ’ণ্ড পেটে ধরছি আমি?’

-‘পেটে ধরেছ কিনা সেটা তুমিই ভালো জানো।’

আব্রাহাম মৃদু হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিল। নিগার খানম হ’তা’শ চোখে তাকিয়ে রইলেন। বললেন,

-‘কোনো ভাবেই কি আসা যায় না?’

আব্রাহাম মগটা টেবিলে রেখে মায়ের দিকে সম্পূর্ণ নজর দিয়ে বলল,

-‘শোনো মা! এই মুহূর্তে আমার কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি হাতের বাহিরে। আর কয়বার বোঝাবো তোমায়? সবকিছু স্বাভাবিক হলে তো আমি অবশ্যই দেশে ফিরব।’

নিগার খানমের চোখ ছলছল করে উঠল। বলল,

-‘সব কি আদৌ স্বাভাবিক হবে? যে হারে সবাই মা’রা যাচ্ছে। আমার তো ভ’য় হয়। তোকে আমি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ আর পাবো কিনা!’

-‘মা! মনের জোর বাড়াও। ভ্যাক্সিন তৈরি হয়ে গেছে অলরেডী। দেখবে সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে আর সা’ব’ধা’নে থাকতে হবে।’

নিগার খানম চোখটা শাড়ির আঁচলের কোণা দিয়ে মুছে বলল,

-‘তোর কাকার পুরো পরিবার আ’ক্রা’ন্ত হয়েছে। তোর কাকির অবস্থা বেশি ভালো না। জানি না কখন কি খবর শুনতে হয়। পরশু সাদের বাবা মা’রা গেছেন। তিনিও ক’রো’না আ’ক্রা’ন্ত ছিলেন। কি পোঁ’ড়া কপাল! দা’ফনটা পর্যন্ত ঠিক ভাবে করতে পারল না। কাছের লোকজনকে ছুঁতেও দেওয়া হয়নি। সাদ জোর করে ছিল দা’ফ’ন কাজে। ওকেও এখন কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে। দুই ঘন্টা আগে খবর এলো চমচমটারও পজিটিভ এসেছে। একা একা থাকে মেয়েটা। কেউ নেই সাথে। তারউপর এখন ক’রো’না পজিটিভ। কি যে করছে মেয়েটা! কীভাবে চলছে!’

নিগার খানম হুহু করে কেঁ’দে উঠলেন। আব্রাহামও শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। খট করে কলটা কে’টে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। অনেকদিন পর নামটা শুনেছে। আব্রাহামের সামনে কেউ কখনো চমচমকে নিয়ে আলোচনা করে না। উহু! সে চমচমের কথা শুনতে চায় না ব্যাপারটা এমন নয়। কেউ তাকে চমচমের ব্যাপারে কিছু জানাতে চায় না। তার কৃতকর্মের ফল হিসেবেই এমন চলে আসছে। আজ হঠাৎ করেই তার মা চমচমের কথাটা বলে ফেলেছেন। সে জানে চমচম মায়ের কত আদরের ছানা। মা আসলে বলার সময় এত কিছু ভাবেননি। মুখ দিয়ে হুট করে বেরিয়ে এসেছে চমচমের কথা। আব্রাহাম চোখ বন্ধ করল। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে চমচমের চেহারা তার মনে নেই। সুইডেন আসার প্রথম এক বছরও মনে ছিল চমচমের চেহারা। কিন্তু দিন যত পার হয় সেও চমচমের চেহারাটা ভুলে যেতে থাকে। চমচমের কোনো ছবিও তার কাছে নেই যে একটু দেখবে। দেখে মনে রাখবে। এমনকি সে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নেই। আব্রাহামের কাছে কোনো পথই খোলা নেই চমচমের সাথে যোগাযোগ রাখার। আব্রাহাম হাসে। সেই হাসিতে আছে দুঃ’খ, আ’ক্ষে’প, অনুতাপ বোধ! আব্রাহামের চমচমের চেহারা মনে না থাকলেও এটা মনে আছে চমচমের সাথে শেষ দেখা হওয়ার পরের দিন গুলোর কথা।

৩১.
শেষ যেদিন তাদের দেখা হয়েছিল সেদিন আব্রাহাম তার জীবনের অন্যতম একটা ভুল কাজ করেছিল। চমচমের সুন্দর, কা’টা’কা’টা মুখটায় একটা থা’প্প’ড় মে’রে’ছি’ল সে। শুধু তাতেই ক্ষ্যা’ন্ত হয়নি। যা না তা বলে ভরা লোকের মাঝে অ’প’মা’ন করেছে। এরপর চমচম যে দৌঁড়ে চলে গেল আর দেখা দিলো না। আব্রাহাম সেদিন সারা রাত বারান্দায় নির্ঘুম কা’টিয়ে দিয়েছিল চমচমের দখিনের জানলার দিকে চেয়ে। কিন্তু না! প্রতিদিন রাত বারোটার মতো সেদিন জানালা খুলে চমচম জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। চমচম প্রতিরাতে বারোটায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত নিশ্চুপ। সেই সময় আব্রাহাম বারান্দায় তার বিন ব্যাগে হাত পা ছড়িয়ে বসে চমচমকেই দেখত। চমচমদের বিল্ডিং এর বাম পাশে রাস্তায় বড় ল্যাম্পপোস্ট ছিল। সেখান থেকে একটু হালকা আলো আসত চমচমের জানালা বরাবর। সেই আবছা আলোয় চমচমের স্নিগ্ধ মুখটা মন ভরে দেখত আব্রাহাম। চমচম দশ মিনিটের বেশি দাঁড়াতো না। আব্রাহামও সেই দশটা মিনিট চমচমের থেকে চোখ সরাতো না। অথচ হুট করেই সব বদলে গেল। পরপর তিন দিন যখন চমচমের দেখা মিলল না আব্রাহাম সোজা তাদের বাসায় চলে গেল। ঠিক করল ক্ষমা চাইবে। দরকার পড়লে হাতে পায়ে ধরবে। কিন্তু চমচম তাকে সে সুযোগই দেয়নি। আব্রাহাম যখন চমচমদের বাসায় গেল দরজা খোলে চিনি। আব্রাহামকে দেখে প্রশস্ত হাসে। তারপর ভেতরে আসতে বলে। আব্রাহাম অ’স্ব’স্তি নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে। চিনি তাকে বসতে বলে কিছু খাবারের আয়োজন করে ফেলে। কফি খেতে খেতেই চিনি আব্রাহামকে বলে,

-‘বাবা-মা শপিং এ গেছে বুঝলেন ভাইয়া। বাসায় আমি একা ছিলাম। ভালো হলো আপনি এসেছেন। আমি একটু গল্প করতে পারব আপনার সাথে।’

চিনির কথা শুনে আব্রাহাম চমকে যায়। আমতা আমতা করে বলে,

-‘চমচম বাসায় নেই?’

চিনি কফিতে চুমুক দিয়ে মুঁচকি হেসে বলে,

-‘শুধু বাসা নয় চমচম ঢাকা শহরেই নেই।’

আব্রাহামের হঠাৎ করেই গায়ে কাঁ’প’ন ধরে। বিস্মিত স্বরে জানতে চায়,

-‘তাহলে কোথায়?’

-‘কোথায় আছে সেটা বলব না। আমি এখন অন্য কথা বলতে চাই। আপনি কি শুনতে আগ্রহী?’

আব্রাহাম চুপ করে রইল। চিনি বলল,

-‘কথাটা চমচমকে নিয়েই।’

আব্রাহাম সরু চোখে চিনির দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘বলো।’

চিনি এতক্ষণের গা ছাড়া ভাব থেকে বের হয়ে এক কাঠি’ন্য রূপ ধারণ করল। আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলতে লাগল,

-‘আমার যখন দুই বছর বয়স তখন আমার আম্মু কনসিভ করেন। কিন্তু দু’ভার্গ্যক্রমে আমার সেই ভাই অথবা বোনটি আমার মায়ের পেটে তিনমাসের মধ্যেই মা’রা গেল। মি’স’ক্যা’রেজ হয় আর কি! এরপর আরো দুই বছরেও আমার আম্মু কনসিভ করতে পারেননি। আমার তখন পাঁচ বছরে পা পড়েছে সবে হঠাৎ একদিন সকালে আমার বাসায় আনন্দ উৎসব শুরু হলো। কি জন্যে? আমার একটা ছোট ভাই বা বোন আসবে এই খুশিতে। আমি তো খুব খুশি! ক্লাসের বাকিদের মতো আমারও ছোট ভাই, বোন হবে এবার। আমি যদিও ভাইয়ের সাথে সাথে বোনেরও আশা করেছিলাম কিন্তু আমার পরিবার, বলতে গেলে পুরো চৌদ্দ গোষ্ঠী আশায় ছিল কেবল একটা পুত্র সন্তানের। কিন্তু তাদের সবাকে আশাহত করে জন্ম নেয় আমার ছোট বোন চমচম। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম আমার এত আদরের বোনটার জন্মানোতে পরিবারের লোকদের মধ্যে সেই আনন্দ নেই যা তারা তার হওয়ার আগে দেখিয়েছিল। আমার নানুকে দেখা গেল মুখ কালো করে বসে আছেন। জন্মের আগে তখন আলট্রা করায়নি। আসলে আমাদের দেশের বাড়িতে তখনও আলট্রা সোনো গ্রাফী পরিচিত হয়নি। তাই তো কেউ আগে থেকে জানতে পারল না যে আসলে পুত্র নয় একটা কন্যা সন্তান আসছে। জানলে হয়তো আরো আগেই হৈ হুল্লোড় বন্ধ করত। আমার চমচমের নামকরণ নিয়েও কারো মধ্যে তেমন কোনো ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আমাদের ছোট মামা! চমচম মিষ্টি নিয়ে এসেছিল বোনের বাচ্চা হওয়ার সংবাদ শুনে। এসে তো চমচমকে দেখে মামা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। সবার প্রথম আপনজনদের মধ্যে ছোট মামাই কোলে তুলল চমচমকে। আমি ছোট বলে আমাকে এর আগে কেউ দেয়নি কিন্তু নিজেরাও তোলেনি। ওহ ভালো কথা! বাবা তখন ঢাকা ছিলেন। সেইসময় উপস্থিত থাকলে হয়তো বাবা প্রথম কোলে নিতেন। যাই হোক! ছোট মামা তখন সাথে সাথেই নামকরণ করে ফেললেন। ফুঁটফুঁটে সুন্দর মেয়েটাকে দেখে সে চমচম মিষ্টির উপাধি দিয়ে দিলেন। তারপর থেকেই চমচম একটা অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর নাম পায়। সবাই ভাবে আমার নামের চিনির চ মিলিয়ে চমচম রেখেছে। তা নয়! মামা চমচম মিষ্টি থেকেই চমচমের নাম রেখেছিলেন। যদিও সেদিন সবাই একটু অখুশি ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই চমচমকে আদর করতে লাগল। আসলে চমচমের উপর তাদের অখুশি থাকার কারণ একটা নয় দুটো ছিল। চমচম মেয়ে হয়েছে সেটা তো একটা কারণ ছিল তারই সাথে আরেকটা বড় কারণ ছিল আমার মায়ের শরীরে বড় ধরনের একটা রো’গ বাসা বাঁ’ধে। যার ফলে চমচমের জন্মের পর মায়ের আর কোনো বাচ্চা হবে না এটাও বলে দিলেন ডাক্তার। খুব ইম্পোর্টেন্ট একটা পার্ট মায়ের শরীর থেকে কে’টে ফেলা হয়। সেটি ছিল সবার মন খা’রা’পের আরেকটা কারণ। এসব অবশ্য আমি যখন একটু বড় হই, বুঝতে শিখি তখনই জানলাম। ওহ! আমি মূল কথা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। এত পাস্টে যাওয়া বোধ হয় উচিত হয়নি। তবে কি করব? মন চাইছিল একটু বলতে। তাই বলে ফেললাম। রা’গ করেননি তো?’

আব্রাহাম মন দিয়েই সব শুনছিল। চিনির প্রশ্ন নেতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়তেই চিনি আবারও বলতে শুরু করে,

-‘এই যে যার জন্ম থেকেই এত এত সমস্যা তার জন্মের পরেও সমস্যা শেষ রইল না। অন্য মেয়েদের তুলনায় সে পুরো আলাদা হয়ে গড়ে উঠল। ছোটবেলায় মেয়েদের পুতুল খেলার শখ হয় আর তার হলো ব্যাট বল খেলার শখ। সাইকেল নিয়ে ঘোরা, হুট করে ব্যাট হাতে বেরিয়ে পড়া, ফ্রকের বদলে শার্ট প্যান্ট পরার আবদার করা সহ অনেক কিছু তার চরিত্রে মিশে গেল। হয়তো শারীরিক গঠনে সে মেয়ে কিন্তু তার মধ্যে বিন্দু মাত্র মেয়েলি স্বভাব ছিল না। অবাধ্য আর পড়ালেখায় অমনোযোগী মেয়েটাকে কেউ তেমন পছন্দ করত না। কোনো সভায় গেলে আমাকে নিয়ে সবাই যতটা ব্যস্ত থাকত চমচমকে ঠিক ততোটাই উপেক্ষা করত। আমার, মা-বাবার এসব দেখে ক’ষ্ট হতো। অথচ চমচম দিব্যি হেসে খেলে বেড়াতো। ক’ষ্ট বলতে কিছু আছে তাকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারত না। চমচম প্রায় সময় এটা সেটা ঘটিয়ে চ’র’ম মা’র খেতো। কিন্তু! কখনো এক ফোঁটা পানি পড়েনি তার চোখ বেয়ে। ক’ঠি’ন তম মা’র খেয়েও ‘উফ’ শব্দটা বের হয়নি তার মুখ দিয়ে। সবাই অবাক হয়ে বলতো চমচমের ব্যথা নেই। চমচমের ক’ষ্ট নেই! কিন্তু কেউ কখনো জানতে পারল না চমচমেরই সবচেয়ে বেশি ক’ষ্ট। আমার ছোট মামা চমচমের এগারো তম জন্মদিনে চমচমের জন্মের সব ঘটনা জানান। সেদিন! সেদিন প্রথম চমচমকে আমি কাঁদতে দেখেছিলাম। নিজের জন্মের এমন কু’ৎ’সি’ত বৃত্তান্ত শুনে সে খুব কেঁদেছিল। বাবা-মায়ের সাথে অ’ভি’মা’ন করল। এরপর আবারও সব স্বাভাবিক। চমচম আগে যতটা শ’ক্ত মনের ছিল এরপর সে আরো বেশি শ’ক্ত হলো। মা বাবা চমচমকে ভালোবাসে না যে ব্যাপারটা তেমন নয়। তারা চমচমকে নিয়ে খুব চিন্তিত। তাই একটু শা’স’ন করে বেশি। চমচমও সেটা বুঝতে পারে। তারপরেও স্বভাব সুলভ কাজ করে। হয়তো এ জন্যেই তোমার তাকে পছন্দ না। শুধু তুমি না, অনেকেই পছন্দ করে না চমচমকে। আর সেও এসব নিয়ে মাথা ঘামায়না। একদিন কি হলো, বাবার কাছে চমচমের টিচার নালিশ করলেন। বাবা এত এত নালিশ ওর নামে সইতে পারলেন না। বাসায় ফেরার সময় গাব গাছের বেত নিয়ে আসেন। এসেই চমচমকে কিছু বলতে না দিয়ে খুব মা’র’লেন। বে’হা’য়া মেয়েটা এতগুলো মা’র খেয়ে হাসে। বাবা হয়রান হয়ে যখন থামে তখন চমচম ফ্রীজ থেকে আইসক্রিম নামিয়ে মজা করে আইসক্রিম খেতে থাকে। তাকে এভাবে মা’র খেতে দেখে আমি আর মা নিজেই কেঁদে দিয়েছিলাম আর সে কিনা আরাম করে হাসতে হাসতে আইসক্রিম খাচ্ছে! বাবা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজের ঘরে চলে গেলেন। বাবা আসলে কাঁদছিলেন নিজের রুমে গিয়ে। এরপর আরেকদিন আরেকটা কাজ করল। আমাকে বাথরুমে ব’ন্ধী করে রেখেছিল। মা যখন দেখলেন চমচমকে খুব মা’র’লেন। চমচমের নাক ফেঁ’টে গিয়েছিল খাটের কোণায় বাড়ি খেয়ে। তারপরেও ব’দ’মা’ই’শটা হাসে। তার হাসি দেখে মায়ের রা’গও বাড়ে। কেন কাঁদেনা? একটু কাঁদতেও তো পারে মেয়েটা! সে কি স্বাভাবিক না? তার কি ক’ষ্ট হয়না! মা এত বা’জে ভাবে আ’ঘা’ত করল! শেষে জ্বর এসে দশ দিন বিছানায় পড়েছিল। বিছানায় পড়ার পরও ব’দ’মা’ই’শ’টা কাঁদেনি বরং টিভিতে নিয়ম করে অগি, ডোরেমন দেখত। একসময় বাবা-মা ওর গায়ে হাত তোলা বন্ধ করে দিলো। তবে স্কুল কলেজে ঠিকই চলতো তার পা’নি’শ’মে’ন্ট। সেসব নিয়েও তার দুঃখ নেই। চমচমের চোখে আমি কখনো পানি দেখিনি। কিন্তু! তুমি সেদিন যখন আমার বোনকে মা’র’লে সেখানেই তার চোখ ছলছল করে উঠল। বাসায় ফিরে সে খুব কাঁদল। আমার বোন যে কাঁদতে পারে আমি সেটাই বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। যে মেয়ে এর থেকেও বেশি আ’ঘা’ত পেয়ে হেসেছে সেই মেয়ে তোমার হাতের একটা চ’ড় খেয়েই কেঁদেছে। এর পেছনে কারণ কী জানো?’

আব্রাহাম কিছ বলতে পারল না। চিনি হাসল। তার চোখটাও ছলছল করছে। সে বলল,

-‘প্রথম কারণ! আমার বোন যখন দো’ষ করে তখন সে সবরকম শা’স্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। কিন্তু দো’ষ না করে, বিনা অ’প’রা’ধে সে কোনো আ’ঘা’ত হজম করতে পারে না। চমচম প্রথম যখন আকুল হয়ে কেঁদেছিল তখন সে কেন কেঁদেছে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। একটা শিশু! যার নিজের হাতে এটা ছিল না যে সে ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। অথচ তাকে সেই কাজের শা’স্তি পেতে হয়েছে। তার জন্মের পর সে অ’ব’হে’লা পেয়েছে। সেটা ছিল তার প্রথম বিনা অ’প’রা’ধে শাস্তি পাওয়া। আর এরপর তুমি তাকে মা’র’লে। তার কোনো দো’ষই ছিল না কিন্তু তুমি তাকে মা’রলে। আর দ্বিতীয় কারণটা কি জানো? দ্বিতীয় কারণটা হলো চমচম তার আপনজনের থেকে পাওয়া আ’ঘা’ত সইতে পারে না। বাবা-মা হয়তো অন্যসময়ে তাকে বকতো, মা’রতো কিন্তু তখন সেটা চমচমের ভালোর জন্যই। আর সেগুলোর পেছনে চমচমের দো’ষও ছিল। তাই তার উপর সেটার প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ওই যে! দো’ষ না করেও শা’স্তি পাওয়ার ব্যাপারটা! আমার চমচম এই একটা জিনিস সইতে পারে না আব্রাহাম ভাইয়া।’

সেদিন এক বুক হাহাকার নিয়ে আব্রাহাম ফিরে আসে। তার দুই সপ্তাহ পরই সে দেশ ছাড়ে। একটা অ’প’রা’ধবোধ এখনও তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না।

আব্রাহামের শরীরটা কাঁ’প’ছে। তারও করোনা পজিটিভ এসেছে পাঁচদিন হলো। সে জানায়নি। চাইছে এই করোনাতেই ম’রে যেতে। এত পা’প নিয়ে বাঁ’চা যায় না।

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে